শঙ্খতেও ফাটল ধরে পর্ব-০৪

0
132

#শঙ্খতেও_ফাটল_ধরে
পর্ব-৪
লেখনীতে-সঞ্চিতা

শুভমের কথায় লিখির ভেতরটা পুরা ছারখার হয়ে গেলো।
বাক শক্তি হারিয়ে ফেললো সে। কেন জানি তার নিজেকে অনেক অসহায় মনে হচ্ছে। লিখির আপনাআপনি নিজের হাত পেটে চলে গেলো।
তা দেখে শুভম খানিকটা হাসলো। তাচ্ছিল্যর কণ্ঠে বলে উঠলো,,

-“পেটে হাত দিয়ে মায়া বাড়িয়ে কোনো লাভ নেই। তোমাকে এবোর্শন তো করতেই হবে সেই সাথে আমার খাঁচাতেই বন্দি থাকতে হবে। আমার আগেই জানা ছিল থাকলে তুমি এবাড়িতেই থাকবে! দিব্যর টানে! (তাচ্ছিল্যর স্বরে)

লিখি কষ্টের মাঝেও অবাক হলো। শুভম কিভাবে জানলো সে দিব্যর বাড়িতে আছে। লিখি বুঝতে পারলো শুভমের কথা,, শুভম তাকে আর দিব্যকে মিলিয়ে ফেলছে। কিঞ্চিৎ রাগ লাগলো তার,,

-“আমাকে তোমার চরিত্র এর মতো ভেবোনা। আমি তোমার মতো নাহ যে বিবাহিত থাকা কালীন আরেকটা বিয়ে করে বছরের পর বছর প্রথম পক্ষের সাথে নাটক করে! আর দিব্যর টান মানে কি? শুনো দিব্যর সাথে আমার কোনোদিন সম্পর্ক ছিলোনা যে তার টানে এখানে আসবো। তোমার মতো লোকের থেকে বাঁচতে এখানে আমাকে আশ্রয় দিয়েছে দিব্য।(শক্ত স্বরে)

শুভম হাসলো, মুখ বেকিয়ে বলল,,

-“জানি জানি সবটা জানা আছে আমার। তোমাদের মাঝে সেই বহু বছর আগে সম্পর্ক ছিল। তোমার প্রেমে পাগল ছিল দিব্য তাইতো, তোমাকে দিব্যর প্রেমে পাগল হওয়ার আগে আমার প্রেমে পাগল করলাম আর দিব্য বেচারা কট খেয়ে গেলো। জানো দিব্যকে আমি আমার দুই চক্ষে দেখতে পারিনা! কারণ একটাই সম্পর্কতে সে আমার সৎ ভাই হয়, সে থাকতে আমি কোনোদিন বাবার থেকে ভালো কিছু পাইনি। তাই তোমাকে ও পাওয়ার আগেই নিজের ব্যবহারের করে নিলাম। সে বেচারা আজও কাঁদে তোমার জন্য, প্রতিটা মুহূর্ত তোমার উপরে নজরও রাখে তাইতো তোমার অবস্থা জানা মাত্রই তোমাকে এইবাড়িতে নিয়ে আসলো!(মুখ বেকিয়ে)

লিখি অবাক হলো, তার বুকে ক্রমশ ডিপ ডিপ আওয়াজ হচ্ছে। লিখি থমকাল এখানেই দিব্য আর শুভম সৎ ভাই একে অপরের। কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো সে, কিছু বলতে নিবে ওই মুহূর্তে শুভম তার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠলো,,

-“কোনো বাহানা নাহ,তোমাকে আমার সাথেই যেতে হবে, চাইলেও ওই দিব্য তোমাকে নিয়ে যাওয়া থেকে আটকাতে পারবেনা। এখানে থেকে তোমাকে আগে আমি হসপিটালে নেবো তোমার এবোর্শনের জন্য। চলো,,

শুভম আর কিছু বলতে পারলোনা তার আগেই কেউ দরজায় খট খট শব্দ করলো। শুভম সেদিকে তাকিয়ে দিব্যকে দেখতে পারলো। দিব্য চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। শুভম ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে লিখির হাত শক্ত করে টান দিলো।
দিব্যকে দেখে প্রমিলা দেবী কিছুটা চমকালেন, তিনি খোঁজ নিয়েছিলেন আজ দিব্য বাড়িতে থাকবেনা। তাই সবটা জেনে এখানে এসেছিলেন লিখিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু এখানে এসে যে এভাবে দিব্যর মুখোমুখি হবে তিনি ভাবেন নি।
প্রমিলা দেবী আড়ালে বললো,,

-“শুভম তাড়াতাড়ি লিখিকে নিয়ে চল দিব্য কিছু বলার আগেই!

শুভম লিখির হাত ধরে দিব্যকে উপেক্ষা করে যেতে নিলেই দিব্য বলে উঠলো,,

-“আপনার নিজের চরিত্র তো ঠিক নেই,, অন্তত ছেলেকে তো চরিত্র বান বানাতে পারতেন! আপনি বারবার কেন প্রমান করেন যে আপনার শিক্ষা-দীক্ষায় রয়েছে সবসময় অন্যের জিনিস নিয়ে টানা টানি করা, সেই শিক্ষা আবার ছেলেকেও দিয়েছেন। আপনি এতোদিনেও বুঝলেন নাহ কেন বাবা আপনাকে এবাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন! (শান্ত স্বরে)

দিব্যর কথায় ভরকালেন প্রমিলা দেবী।মায়ের অপমানে শুভম ধমকে উঠলো,,

-” ঠিক করে কথা বল দিব্য! আমার মাকে নিয়ে যদি আরেকটা বাজে কথা বলেছিস তো ভালো হবেনা বলছি। (ধমকে)

দিব্য চোখে মুখে কিঞ্চিৎ বিরক্ততা বোধ আনলো,
-“সত্যি কথায় সবসময় খারাপটাই হয়। সেটা বাদ দে, আমার বাবা তোর মাকে সেই কবেই বের করে দিয়েছে এবাড়ি থেকে তো আজ হঠাৎ এতো বছর পর আসলি, চা টা না খেয়েই চলে যাচ্ছিস! ভাই কিন্তু মানবোনা। (বিরক্ত সহকারে)

শুভম আরও রাগলো। কাট কাট গলায় উত্তর করলো,,
-“কেন এসেছি ভালো করেই জানিস! শুন যেটার জন্য এখানে আসতে হয়েছে, সেটা না তোর নাহ। সেটা আমার, তো এভাবে আমার পথ আটকানোর কোনো মানেই হয়না।(কাট কাট গলায়)

দিব্য ভাবলেশহীন ভাবে বললো,

-“তোর আবার কি জিনিস এবাড়িতে রয়ে গেলো! তোর সাথে সাথে তো সব কিছুই পু”ড়িয়ে ফেলেছিলাম তো তোর আবার কি জিনিস? (ভাবলেশহীন কণ্ঠস্বরে)

দিব্যর কথায় শুভমের প্রচুর রাগ উঠলো। রাগটা তার অনিয়ন্ত্রীত হয়ে পড়ছে। শুভম লিখির দিকে তাকালো, লিখি মলিন মুখে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। নড়ছেওনা কোনো শব্দও করছেনা।

-“সামনে থেকে সরে দারা বলছি ভালো ভাবে।

-“আর হাইপার হচ্ছিস কেন ভাই? শুন এই বাড়িতে কে এলো কে গেলো তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসেনা। তবে তু্ই যখন এসে পড়েছিস এখানে, আমার পারমিশন না নিয়ে আর যেতে পারবিনা। যতই হোক ভাই লাগিস একটু আহ্লাদ তো করতেই হয় তাইনা বল!(চোখ বন্ধ করে)

লিখি নীরব দর্শক হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। রীতিমতো তার ব্রেইন কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে! একদিকে সে ভাবছে শুভম তখন ঐরকম কথা কেন বললো আর অন্যদিকে সে ভয়ে আছে যদি শুভম তাকে জোড় করে নিয়ে যায় তাহলে তার মাতৃত্ব নষ্ট হয়ে যাবে। চিরদিন তাকে নরকে থাকতে হবে।
শুভম তার এবোর্শন করাবে ভাবতেই লিখির ভেতরটা ভেঙে যাচ্ছে।

-“হাতটা এতো শক্ত করে ধরিস নাহ, দেখ কেমন লাল হয়ে গেছে। বললাম তোকে চা খেতে তাও খাবিনা!ধুর (আড়চোখে)

শুভম ব্রু কুচকালো। মুখ গম্ভীর করে ফেললে সে।

-“আমি আর কোনো নাটক দেখতে চাইনা লিখি! চলো এখানে থেকে ভালোই ভালোই।

লিখির গায়ে শিহরণ বয়ে গেলো। মনে মন আওড়ালো যে করেই হোক সে যাবেনা শুভমের সাথে।

-“আমি তোমার সাথে যেতে চাইনা, আমার হাত ছাড়ো। (শক্ত গলায়)

শুভম রাগান্নিত চোখে তাকালো লিখির দিকে। বদলে লিখি তাকে ঘৃণার দৃষ্টি উপহার দিলো। শুভম যদি পারতো লিখিকে এখানেই কিছু করে ফেলতো, কিন্তু শুভম জানে সে এখানে দিব্যর সামনে লিখিকে কিছুই করতে পারবেনা।
শুভম ভালো করেই জানে যে দিব্য লিখিকে কতটা ভালোবাসে। লিখিকে কিছু করলে শুভমের এইবাড়ি থেকে বের হতেও সমস্যা হয়ে যাবে আজ। শুভমের পাশে প্রমিলা দেবী হাঁসফাঁস করছেন বাহিরে যাওয়ার জন্য।

-“দেখো আমরা এখানে লিখিকে নিয়ে যেতে এসেছি, তাই কোনো ঝামেলা করো নাহ। আমরা তোমার বাড়িতে থাকতে আসিনি ওকে নিতে আসছি। এখন সরো!(নিচু স্বরে)

দিব্য খানিকটা হাসলো, ধীরে ধীরে বলে উঠলো,,

-“নিয়ে গিয়ে কি করবেন? ওনার এবোর্শন করাবেন? আপনাদের হাতের পুতুল বানিয়ে নাচাবেন? মিথ্যা মায়ার জালে এতদিন ওকে বন্দি করে রেখেছিলেন, তাও উনি খুশি ছিলেন। তাই কিছুই বলিনি, এখন উনি অখুশি তাই না বলে পারছিনা ওনাকে ওনার মতো ছেড়ে দিয়ে চলে যান এটাতে আপনারও ভালো থাকবেন উনিও ভালো থাকবেন আর ওনার ভালো থাকা মানে আমার ভালো থাকা। (ধীরে ধীরে)

প্রমিলা দেবী এই শান্ত স্বরের মানেটা ভালো ভাবে বুঝলেও শুভম বুঝলোনা। রাগান্নিত স্বরে বলে উঠলো,,

-“আমার স্ত্রী আমাকেই বাকিটা বুঝতে দে, তোর এতো নাক না গলালেও চলবে। তোর সাথে এখানে আমি তর্ক করতে আসিনি ওকে নিতে আসছি। তু্ই সামনে থেকে সরলে এখন আমরা যেতে পারি। (রাগান্নিত স্বরে)

-“ভাই আমার কথার মানে মনে হয়ে বুঝতে পারোনি। বিয়ে তো আরেকটা করেছো সেখানে আমার বাচ্চাও আছে, তো হ্যাপি থাকোনা। যেচে আরেকজনের জীবন কেন নষ্ট করার ট্রাই করছো? (গম্ভীরতার সাথে)

চলবে,,