শঙ্খতেও ফাটল ধরে পর্ব-০৫

0
127

#শঙ্খতেও_ফাটল_ধরে
পর্ব- ৫
লেখনীতে- সঞ্চিতা

-“লিখি ওনাকে বিয়ে করার ছয় মাসের মাথায় তু্ই আরেকজনকে বিয়ে করেছিস। ওনার বিশ্বাস ভেঙেছিস। এতদিন কত্ত সুন্দর করে নাটক করলি বেচারি বুঝতেও পারেনি কোনোদিন তোর এই রূপ দেখবে! গত আট বছর তোকে বিশ্বাস করে একটু একটু করে একটা স্বপ্নের সংসার সাজিয়েছে যা তু্ই নিমিষেই ভেঙে দিলি! সব মেনে নেওয়া গেলেও, এটা উনি কিভাবে মানবেন যে তু্ই এখন ওনার এবোর্শন করাতে চাচ্ছিস। (গম্ভীর স্বরে)

দিব্যর কথায় শুভম প্রতিক্রিয়া করলোনা, মুখশ্রীতে রাগের আভাস বিদ্যমান রাখলো। লিখি চুপচাপ শুনেই যাচ্ছে কোনো কথা তার মুখ দিয়ে বের হচ্ছেনা। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছেনা কারণ তার কাছে এইরকম পরিস্থিতির পর্যাপ্ত ভাষা নেই। জীবনেও সে কোনোদিন এইরকম পরিস্থিতিতে পড়েনি বা কোনোদিন যে পড়বে কল্পনাও করেনি।
লিখির প্রচুর মাথা ব্যাথা করছে। আর নিতে পারছেনা কিছু।

-“বাহিরে যাওয়ার রাস্তাটা তো জানিসই, আমি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার আগে এখান থেকে চলে যা। পাঁচ মিনিট সময় দিচ্ছি, আর শোন লিখি তোর সাথে যাবেনা। উনি এখানেই থাকবেন। (কাট কাট গলায়)

প্রমিলা দেবী শুভমের হাত টেনে ধরলেন, শুভমকে চোখের ইশারায় লিখির হাত ছেড়ে দিয়ে চলে যাওয়ার কথা বললেন। শুভম কিছু বলতে যাবে, কিন্তু কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসি দিয়ে লিখির হাত ছেড়ে দিয়ে বলল,,

-“আচ্ছা চলে গেলাম না হয়, কিন্তু একটা কথা মনে রাখিস দিব্য এতোদিন তোর থেকে যা নেয়ার চেষ্টা করিনি এখন থেকে সেটাই নেয়ার চেষ্টা করবো। সুখ তোকে আগেও পেতে দেইনি এখনো দিবোনা।

শুভম কথাটা বলেই হনহন করতে করতে বেরিয়ে গেলো প্রমিলা দেবীকে নিয়ে।
দিব্য একটা দীর্ঘ শ্বাস ত্যাগ করলো। লিখির দিকে একনজর তাকালো। দেখলো লিখি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

-“জানেন লিখি মেয়ে মানুষ না কোনোদিন কাঁদেনা অতি দুঃখে, কাঁদলে তাঁদের মন নাহয় চোখ কাঁদে। আমি জানি আপনি কাঁদছেন নাহ। বরংচ খুশি হয়েছেন মরীচিকা থেকে বেঁচে। আমার একান্ত চাওয়া আপনি খুব খুশি থাকুন নিজের জীবনে। (হালকা হেসে)

দিব্য আর কিছু বললোনা, লিখির দরজার সামনে থেকে চলে গেলো। লিখি তখনো সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। কিছু ক্ষন পর সে ধীরে ধীরে নিজের বিছানার দিকে গেলো। চুপচাপ সেখানে বসে পড়লো।
~~

-“বলে ছিলেনা উঁচু গলায়, যে লিখির এবোর্শন করাবে! কই এখনো পারলেনা আজ এতদিনের মধ্যে। শুনো আমার কোনো এক্সকিউজ চাইনা আমি যেটা বলেছি সেটা করতে পারলে করো না পারলে আমাকে ডিভোর্স দাও! (রাগান্নিত গলায়)

মণির রাগান্নিত স্বরের বাক্য গুলো শুভম চুপচাপ শুনলো। কিন্তু কোনো জবাব দিলোনা। প্রমিলা দেবী মণিকে শান্ত হতে বললেন,,

-“দেখো বউমা এভাবে রেগে বলোনা। শুভম তো চেষ্টা করছেই লিখিকে ভাগে আনার জন্য। কিন্তু লিখি এখন দিব্যর কাছে, বুঝতেই পারছো ওকে আমাদের কাছে এনে আঙুলে নাচানো কতটা কঠিন হবে। তুমি একটু বুঝার চেষ্টা করো। (আমতা আমতা করে)

মণি প্রমিলা দেবীর কথায় আরও ক্ষিপ্র হলো। রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বলে উঠলো,,

-” আমি কোনো এক্সকিউজ শুনতে চাইনি! যদি কাজটা করে দেখাতে পারো তাহলেই আমাকে তোমাদের মুখ দেখাবে। গেলাম আমি!

বলেই মণি রাগে গিজ গিজ করতে করতে চলে গেলো। শুভম মুখে হাত দিয়ে বসে আছে, প্রমিলা দেবী চুপ করতে গেছেন।

-” আপাতত বাড়িতে চল শুভম বাকিটা পরে দেখা যাবে। ( থম থমে স্বরে)
শুভম মায়ের কথায় উঠে দাঁড়ালো এবং হাটা শুরু করলো সাথে প্রমিলা দেবীও।
~~

-” দি একসাথে দুইটা বর সামলাচ্ছ কিভাবে? ( হাস্য উজ্জল মুখে)

স্রোতের কথায় ব্রু কুঁচকালো মণি। এমনিতেই তার মাথায় গরম হয়ে আছে, মেয়েটা আরও গরম করে দিচ্ছে। মণি এক প্রকার ধমকে বলে উঠলো।

-” আপাতত আমাকে খোঁচানো বন্ধ কর। আমাকে কি মনে হয়? দুইটা বর সামলাচ্ছি মানে!

-” তোমার দুইটা বর আছে, কত্ত কষ্ট করে তোমাকে টাইম বের করতে হয় এদের জন্য। তুমি কি চালাক দি! এদের একজনও বুঝতে পারেনা তুমি কি খেলে খেলছো এদের সাথে। একসাথে দুই জনকে চালাচ্ছ। বিগত আট বছর ধরে। কি সুন্দর নাটক করতে পারো তুমি উফফ।

স্রোতের কথায় থামলো মণি। কি জানো ভাবলো সে, এরপর বলে উঠলো।

-” তু্ই আমার সৎ বোন হলেও আমি তোর এই এতদিন ধরে সব চাহিদা পূরণ করেছি। তোর এতো খারাপ বিহেভিয়ারের পরও। তবে এখন থেকে বলে দিচ্ছি, আবার যদি উল্টো পাল্টা কথা বলিস তো ভালো হবেনা। (শক্ত কণ্ঠতে)

স্রোত তাচ্ছিল্যর হাসলো,

-” আমার খারাপ বিহেভিয়ারের কারণটা অবশ্যই জানো। তোমার চরিত্র আমার একদম পছন্দ নাহ, টাকার পিছে ছুটো তুমি। তোমার এই টাকার লোভ না জানি কবে যাবে। একসাথে দুই জনের সাথে বেইমানি করছো তুমি। ভেবে দেখো এখন তো তোমার একটা বাচ্চাও আছে, অন্তত তার জন্য হলেও এইসব বাদ দাও। একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করে দিতে চাইছো তার স্বামীকে দিয়ে। (তাচ্ছিল্যর হেসে)

থমকালো মণি, জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো। তার চোখের মণিটা স্থির থাকতে পারলোনা। স্রোতের কথা সে বুঝতে পারলেও সিরিয়াসলি নিলোনা। সে জানে সে আগুন নিয়ে খেলছে, একটা সময় হয়তো তাকে পুড়*তেই হবে।
স্রোত বেশি কিছু বল্লোনা আর, শিষ বাজাতে বাজাতে চলে গেলো সে।

মণি ভাবতে থাকলো কতগুলো বছর ধরে সে নিখুঁত নাটক করছে দুজন মানুষের সাথে, তারা তাকে এতটাই বিশ্বাস করে যে কোনোদিন সন্দেহ করেনি। ভাবতেই মিথ্যা হাসলো সে। তার জীবনে কিছু প্রশ্নের উত্তর লাগবে। জীবনটা প্রথমে সহজ সরল থাকলেও একটা সময় কিছু মানুষ তার দিকে একরাশ প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে যার খোঁজ করতে করতে সে গোলক ধাঁধায় আটকা পরে গেছে, জীবনের এই গোলক ধাঁধা থেকে বের হতে সে “শুভম – “মিহালকে বেছে নিয়েছে।
জীবনটাকে রঙিন থেকে বেরঙিন করে উড়ে বেড়াচ্ছে দম আটকানো আকাশে।
মণি আনমনেই বললো,,

-” যদি কিছু প্রশ্নের উত্তরে জীবনে রং, সুখ, শান্তি ফিরে আসে তাহলে সেই প্রশ্নের উত্তরের জন্য চরিত্রহীন হতেও আমি রাজি। হয়তো আমার এই মন্তব্য অনেকে মেনে নিবে, আবার অনেকে মানবেনা। তবুও আমি বলবো আমি আমার কাঙ্খিত প্রশ্নের উত্তর চাই। (আনমনে )

দীর্ঘশ্বাস ফেললো মণি। তার উপলব্ধি হচ্ছেনা যে বর্তমানে পৃথিবী নামক নাটকে সে কি চরিত্র তে অভিনয় করছে। তবে সে এটুকু বুঝছে যেভাবেই হোক কিছু প্রশ্নের উত্তর চাই তার।
~~~

-” আপনাকে বারণ করা হয়েছে কারণে অকারণে আমার বই, ডায়েরিতে হাত দিবেন নাহ। এই ঘরেই আপনার প্রবেশ নিষেধ তাও কেন এসেছেন? (গম্ভীর স্বরে)

বিনা বাক্য মাথা নোয়ালো লিখি, তার কাছে কোনো শব্দ নাই বলার মতো। কি বলবে সে ভেবে পাচ্ছেনা। দিব্য তাকে কড়া ভাবে নিষেধ করেছে সেদিন যে তার রুমে ঢোকা যাবেনা। তবুও সে নিধির বলাতে আজকে দিব্যর ঘরে ঢুকেছে তার ডায়েরি নিধিকে নিয়ে দেওয়ার জন্য।

-“আপনার শাড়ির আঁচল দিয়ে যে আমার ডায়েরি লুকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তা আমি দেখে ফেলেছি, ঐটা আমার টেবিলেই রেখে দিন। (ব্রু কুঁচকে)

-” আসলে কি, নিধি উনি আমাকে এটা নিয়ে ওনাকে দিতে বলেছেন। উনি এতো করে বলছিলেন তাই,,

লিখি আর বলতে পারলোনা, দিব্য দিলো এক তাকে ধমক।

-“নিধি বললো আর আপনি আমার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আমার রুমে ঢুকে পড়েছেন। দিন ডায়েরিটা আমাকে দিয়ে দিন।(হাত এগিয়ে)

লিখি একটু পিছিয়ে গিয়ে বলে উঠলো,,

-“ডায়েরিতে কি এমন আছে যে এটা এতো দরকার আপনার, নিধি দি তো একটু পড়তেই চেয়েছেন। পড়লে কি হয়?

দিব্য এগিয়ে আসলো লিখির দিকে, খানিকটা নিচু স্বরে বলে উঠলো,,

-” সবার তো আর জানার অধিকার নেই এক “মায়াবিনী হরিণী চোখের মেয়েকে নিয়ে লেখা কত শত আমার অনুভূতি!

চলবে,,