শর্তনামা পর্ব-০১

0
379

#শর্তনামা
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ১

ভার্সিটি থেকে ক্লান্ত নিশালা বাসায় আসতেই মায়ের কিচিরমিচির শব্দে মেজাজ গেল খারাপ হয়ে। মা আবারও ওর পিছনে লেগেছে কারণটাও আবার যেই সেই না বিরাট বড় একটা কারণ আর তা হলো আজ ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে তাকে। এর আগেও এ নিয়ে কথা কাটাকাটি করছে নিশালা মায়ের সাথে। ওর কথা মাত্রতো ভার্সিটি উঠলো জীবনটা একটু উপভোগ করুক একটু নিজের, মতো বাঁচুক, একটু ফ্রীডম পাক সবার মতো কিন্তু না ওর নিজের মা এই সব কিছুতে বড় মাপের বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার ভাষ্য মতে,
” পড়াশোনা বিয়ের পরও করা যাবে। তুই যখন পেটে তখন আমি অনার্সে পরিক্ষা দিয়েছি।”

এই এক কথা মায়ের তবুও নিশানা মানতে নারাজ। ও নিজের অনেক বান্ধবীদের দেখেছে যাদের বিয়ের সময় শর্ত দিয়েছিলো যে মেয়েকে পড়াশোনা করাবে কিন্তু বিয়ের পর শশুড় বাড়ী লোকের তা নিয়ে কোন হেলদুল নেই। সংসার সামলাতে সামলাতেই তারা ক্লান্ত হয়ে যায়। শেষ মেষ স্বামীও তেমন একটা কেয়ার করে না পড়াশোনা নিয়ে। এ নিয়েই নিশালার ভয়। সবাই তো ওর বাবার মতো না যে পরিবারের বিপক্ষে যেয়ে বউকে পড়াবে। কিন্তু ওর মা মানতে নারাজ। তার কথা, ” মেয়েদের বিয়ের একটা নিদিষ্ট সময় থাকে এরপর আর ভালো প্রস্তাব আসে না।” দুঃখে কষ্টে নিশালা আর মায়ের সাঙ্গে একটা কথাও বললো না। রুমে ডুকে লক করে ধুপ করে শুয়ে পরলো। ও জানে বাবাকে বলেও তেমন একটা লাভ নেই। মায়ের কথার উপর দিয়ে বাবা যায় না। তাই নিজে নিজেই ফন্দি আঁটতে লাগলো নিশালা। কিছু একটা ভেবে খুশি হয়ে গেল। কতক্ষণ খুশিতে বিছানায় গড়াগড়ি করলো। এরপর উঠে সাওয়ার নিয়ে বের হলো।
এমন সময় দরজায় ধুপ ধাপ বারি মারতে লাগলো নিশান আর চেচিয়ে ডাকতে লাগলো,

— আপি এই আপি? কি করছিস তুই? আল্লাহ আম্মু আপি মনে হয় সুইসাইড করতে যাচ্ছে। আপি তোর বিয়ে দিব না তো তবুও এমন করিস না। জাহান্নামে যাবি তো আত্নহত্যা করলে। পরে আবার ভুত হয়ে কার ঘাড়ে চড়ে বসবি?

নিশানের অহেতুক মার্কা আজিরা চিল্লানিতে মাথা গেল গরম হয়ে নিশালার। দরজা খুলেই দিলো ধারাম করে একটা কিল। নিশান একটু আর্তনাদ করে বললো,

— আমি বাঁচালাম আর তুমি আমাকেই মারো? দুনিয়ায় ভালোর দাম নেই গো দাম নেই।

— চুপ কর ফালতু পোলাপান। তোর মা কই?

— তোমার মা তোমাকে রেডি হতে বললো।

— যেয়ে বল আমি রেডি।

নিশান বোনের পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করতে করতে বললো,

— আপি তুই এভাবে গেলে তো ছেলে পক্ষ পালিয়ে যাবে।

নিশালা ক্ষিপ্ত হয়ে বললো,

— তুই কি যাবি?

— আহা রাগো কেন এই তো যাচ্ছি।

বলেই দিলো ভো দৌড়। যেই খাতারনাক বোন ওর কখন না জানি আবার মে’রে বসে। বিরক্তিতে মুখ কুচকে এলো নিশালার তবুও কোন মতে একটা লং ওয়ান পিস পড়ে কাধ সামান স্ট্রেট চুলগুলো আচরে নিলো। আয়নায় নিজেকে ঘুরে ফিরে দেখলো কতক্ষণ। এমন সময় ওর মা রুমে এলো হাতে খাবার নিয়ে। নিশানার দিকে তাকিয়ে বললেন,

— খেয়ে রেডি হ। মেহমান আসবে যে কোন সময়ে। আমার কাজ আছে ঐ দিকে। তোকে খায়িয়ে যাই তারাতাড়ি।

— আমি তো রেডি।

ওর মা ওর পুরো শরীরে নজর বুলিয়ে বললেন,

— এগুলো পরে ছেলেপক্ষের সামনে যাবি?

— তো তুমি কি মনে করছো, সেলিম আসছে যে আমি আনারকলি সেজে যাব?

— বেশি পকপক না করে তারাতাড়ি হা কর এরপর শাড়ী পড়বি।

— দেখ মা এ নিয়ে যদি কিছু বলছো আই সোয়ের আমি তাদের সামনে আব্বুর লুঙ্গি আর ঘড় মুছার গেঞ্জি পড়ে যাব।

বিরক্তি প্রকাশ করে ওর মা নিজের মেয়ের মুখের সামনে খাবার ধরলেন। যেই ঘাড় ত্যারা মেয়ে ওনার। একবার যেই ঘাড় ত্যারামীটা করলো মনে পড়লে এখনও লজ্জায় মুখ ভার আসে ওনার।

তখন কতই বা বয়স হবে নিশালার এই তো ৮/৯ বছর। পরিক্ষায় ইংরেজিতে প্লাস পায় নি তাই ওর মা রেগে বলেছিলো তুই যদি এরপর প্লাস না পাস তাহলে তোকে আমি রিকশা ওয়ালার সাথে বিয়ে দিব। ওর মা তো ব্যাপারটা স্বাভাবিক ভাবেই বলেছিলো কে জানতো এই ঘাড় ত্যারা মেয়ে ওনার মান ইজ্জতের ফালুদা বানাবে তাও চিনি ছাড়া। যেই না স্কুল থেকে বাসায় আসলো ওর মা নামলেও নামলো না নিশালা। ওর মা নামতে বললেই ও উত্তর দিলো,

— আমি আমার জামাইয়ের সাথেই যাব। তুমি যাও তোমার শশুড় বাড়ী আমি আমার জামাইয়ের সাথে আমার শশুড় বাড়ী যাব।

রিকশা ওয়ালা বেচারা ভয় পেয়ে যায়। ওর মা ও লজ্জায় পড়ে যায়। মেয়েকে কত করে বললো তবুও নামলো না। ওর কথা মা বলেছে রিকশা ওয়ালার সাথে বিয়ে দিবে তাহলে কেন এখন যেতে দিচ্ছে না? শেষ মেষ ওর বাবা এসে আদর করে মেয়েকে নামিয়ে বাসায় নিয়ে আসে। কি সাঙ্ঘাতিক মেয়ে তার?

এসব ভাবতেই ওর মা ওকে খায়িয়ে বললেন,

— একটু লিপস্টিক আর পাউডার তো লাগা।

— পারবো না।

বলেই ফোন ঘাটতে লাগলো। ওর মা ও দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বের হলেন।

___________________

আপাতত ছেলেপক্ষের সামনে খুবই স্বাভাবিক ভাবে বসে আছে নিশালা। ওর বাবা কত করে ইশারায় বললেন,

— মা একটু তো লজ্জা পা।

নিশানাও ফিসফিস করে বাবাকে বললো,

— বাবা লজ্জা তো আসছে না মনে হচ্ছে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে জ্যামে আটকা পড়লো।

ওর বাবা থতমত খেয়ে আর কিছুই বললো না। ছেলে বাড়ী থেকে একগাদা লোক এসেছে। ছেলে, মা,বাবা,দুই ভাই, তাদের বউ, তাদের তিনটা বাচ্চা, ফুপি, ফুবা সহ ছেলের দুই বন্ধু। এ যেন হাটে কুরবানীর গরু দেখতে এসেছে। ভাবতেই বিরক্তিতে “চ” উচ্চারণ করলো নিশালা। ওর হবু শাশুড়ী শুনে বললেন,

— কি হয়েছে মা? কোন সমস্যা?

নিশালা একটু হেসে বললো,

— না আন্টি। এমনিতেই একটু গরম লাগছে।

— আম্মু ওকে একটু স্পেস দাও।

হঠাৎ করো পুরুষনালী মিষ্টি কন্ঠে চমকে তাকালো নিশালা৷ এমন সুন্দর কন্ঠের মালিকও কোন ছেলে হয় বুঝি? ভাবতেই নিশালা তাকালো। সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট এর ফর্মাল লুক এ আছে জনাব। চুল গুলো গুছিয়ে রাখা, মুখ চাপ দাঁড়ি চোখা নাক, ঠিক ঠোঁটের নিচে কালো কুচকুচে তিল। এ কেমন ছেলে? ভাবলো নিশালা। অসম্ভব সুন্দর এই ছেলে। পরক্ষনেই নিজের ভাবনায় বিরক্ত বোধ করলো। এই ছেলে তো বিবাহিত ও হতে পারে।

ওর ধ্যান ভাঙলো ছেলের বাবার কন্ঠে। তিনি বললেন,

— ছেলে মেয়ে কিছুক্ষন একা কথা বলুক। ততক্ষণে আমরাও নিজেদের আলোচনা সেরা ফেলি।

সবাই সম্মতি প্রকাশ করলো। নিশানা নিজের অজান্তেই চোখ দিলো সুদর্শন সেই ছেলের দিকে যার মুখটা আপাতত ভিমবার দিয়ে পাতিল মাজার পর যেমন চকচক করে ঠিক ওমন চকচক করছে। উঠে দাঁড়িয়ে গেল নিশালা। সোজা ছাঁদে হাটা দিলো। পেছনে কে আসছে না আসছে তাতে ওর তেমন ধ্যান নেই। সোজা দোলনায় বসে পরলো। পেছন থেকে সেই মিষ্টি কন্ঠে কেউ ডাকলো,

— নিশু।

এমন ডাকে হৃদপিণ্ডটা চারশত বোল্টের ঝটকা খেল নিশালার। এত সুন্দর করে কেউ কাউকে ডাকে? ভাবতেই পিছনে তাকালো। সেই ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটাও সামনে এসে বললো,

— বসতে পারি?

দোলনা এটা যথেষ্ট বড় এই এক সাইডে চেপে বসে নিশালা বললো,

— বসুন।

— ধন্যবাদ।

নিশালা বুঝলো ইনিই পাত্র। তাই আবেগে না ভেসে সোজা হয়ে বসে বললো,

— শুনুন।

— বলো নিশু।

দিলো তো নিশালার সব এলোমেলো করে। এভাবে কেউ বলে?এই যে নিশালার বুকটা ধুক ধুক করছে এর দায়ভার কে নিবে? তবুও নিজেকে যাথাসম্ভব কঠোর করার চেষ্টা করলো যদিও তেমন একটা হলো না তাও বললো,

— আমি এখন বিয়ে করতে চাই না। আপনি না করে দিন।

— কিন্তু কেন না করবো?

— বলুন যে আপনার আমাকে পছন্দ হয় নি।

— কিন্তু আমার তো তোমাকে অনেক পছন্দ হয়েছে নিশু।

আবারও সঞ্চিত সকল কঠোরতা গায়াব হয়ে গেল এই কথা শুনে তবুও বললো,

— আমি এখন বিয়ে করতে চাই না।

— কারণ টা বলো। আমাকে পছন্দ হয় নি নাকি আমার পরিবারকে? তোমার কি কোন পছন্দ আছে নিশু? থাকলে বলতে পারো।

এর উত্তর কি দিবে ভাবতে লাগলো নিশালা। ওর তো এমন কোন কারণ নেই। তাই শান্ত কন্ঠে বললো,

— দেখুন আমি এখন নিজের লাইফ ইনজয় করতে চাই, ফ্রীডম চাই। সংসার টংসারে জড়াতে চাই না। আপনি বুঝতে পারছেন?

— হুম বুঝলাম।

— কি বুঝলেন?

— এই যে তোমার আমার বিয়ে হবে।

— মানে?

— বিয়ের পর তোমার স্বাধীনতা কেউ কেড়ে নিবে না। তুমি লাইফ ইনজয় করবে। সংসারের দায়িত্ব ও নিতে হবে না। রাস্তা ক্লিয়ার, বিয়ে হবে।

— আমি করব না।

— আর কোন কারণ? বিয়ে একটা সহজ জিনিস নিশু। এটা পবিত্র একটা সম্পর্ক। আমরা হারাম সম্পর্কে জড়ানোর আগে এতটা ভাবি না, এতটা ভয় পাই না যতটা পাই হালাল বিয়েকে। অথচ আমাদের উচিত বিয়েকে সহজ করে দেখা কারণ ইসলাম এটাকে সহজ করেছে। আমরাই জটিল করে ফেলি সব।

নিশানা থেমে গেল আর তো কোন কারণ নেই তবুও বললো,

— সবাই এমন বলে কিন্তু পরে উল্টোটা করে।

— ইউ ওয়ান্ট গ্যারান্টি?

— ইয়েস।

— ডান।

এরপর কোন কথা না বলে নেমে গেল নাম না জানা ছেলেটি। নিশানা তাকিয়েই রইলো। এই ছেলে তো কোমড় বেঁধে এসেছে বিয়ে সে করবেই। কিন্তু নিশালাও কম না সে শর্তনামা সাইন করিয়ে বিয়ে করবে।

_________________

“ওয়াসিফ চৌধুরী” নামটা বারকয়েক উচ্চরণ করলো নিশালা বিছানায় শুয়ে শুয়ে। বিয়ের কথা আজ পাকাপোক্ত হয়ে গিয়েছে। ঐ বাড়ীর সবাই উঠে পড়ে এসেছে বিয়ের জন্য। বুড়ো মা কে নিয়ে হজে যেতে চান ওয়াসিফের বাবা। কিন্তু তার আগে দাদীর ইচ্ছে ছোট নাতীর বউ দেখে যাবেন। তাই এতো তাড়াতাড়ি করতে চাচ্ছেন। নিশালার বাবা-মা ও আপত্তি করেন নি। পরিবার ভালো,ছেলে ভালো আর কি চাই? কিন্তু নিশালা সেই থেকে মুখ ভার করে রুমে ঘাপটি মেরে বসে আছে। ও দ্বিধায় পরে আছে। ওয়াসিফ চৌধুরী লোকটাকে না করার কোন কারণ পাচ্ছে না ও আবারও বিয়ে এতো তাড়াতাড়ি ও করতে চাচ্ছে না। ঝট করে ফোন দিলো নিজের দুই মাত্র বন্ধু রাহামকে। কথা বার্তা মধ্যে রাহাম বুদ্ধি দিলো প্রিয় বান্ধবীকে। নিশানাও খুশি হয়ে গেল। অপেক্ষা কাল বিকেলের। কাল ওয়াসিফের সাথে দেখা করতে যাবে ও একটা ক্যাফেতে। সেখানেই না হয় সব ফয়সালা হবে।

এমন সময় নিশাল রুমে ডুকলো দুই বাটি ভর্তি ম্যাগি নিয়ে। বিছানায় গোল হয়ে বসে এক বাটি বোনকে এগিয়ে দিলো৷ নিশালাও নিয়ে খাওয়া শুরু করলো। নিশাল বোনকে বেশ কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে বললো,

— আপি?

— হু।

— কাল যাবি দুলাভাইয়ের কাছে?

— হু।

— আল্লাহহহহহহহ।

হঠাৎ এমন চিৎকারে চমকে গেল নিশালা। নাকে মুখে উঠে গেল ওর। নিশান তারাতাড়ি বোনকে পানি দিয়ে পিঠে আলত করে চাপড় দিতে দিতে বললো,

— আপি ঠিক আছিস তুই?

নিশানা একটু শান্ত হলো। ধুম করে দিলো এক কিল ভাইয়ের পিঠে। নিশান আর্তনাদ করে বললো,

— মারো কেন?

— তুই চিল্লালি কেন মুরগীর ডিম?

— আমিতো খুশিতে আল্লাহকে ডাকলাম। তুমি ই তো বললা দুলাভাইয়ের সাথে দেখা করতে যাবে।

— ওই কে তোর দুলাভাই। যা এখান থেকে। ফট।

নিশান তারাতাড়ি বেরিয়ে গেল নাহলে বোন যে কোন মুহূর্তে হামলে পরবে।

___________

সকাল সকাল নিশালার বাবা মেয়ের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে আর ইনিয়ে বিনিয়ে বুঝাচ্ছে,

— মা শুনো নরম স্বভাব নিয়ে কথা বলো কেমন। আর চেষ্টা করো ভালোভাবে কথা বলার। মানে জানোই তো একটু আরকি…

বাবাকে থামিয়ে দিয়ে নিশান তারাতাড়ি বললো,

— আপি আব্বু বলতে চাইছে তুই লজ্জাবতী হয়ে মাথা নিচু করে কথা বলবি,কোন রকমের তর্কে যাবি না, যা অর্ডার করবে তাই খাবি ভুলেও বিরিয়ানি চাবি না আর ছেলেকে কান পরা দিয়ে ভাগিয়েও দিবি না। আর লাস্ট…

বলার আগেই ওর মা দিলো এক ধমক। একদম চুপ হয়ে গেল নিশান। মুখে খাবার চিবুতে চিবুতেই নিশালা বললো,

— একদম ঠিক হয়েছে। টিকটিকির ডিম।

নিশান ধমক খেয়ে আপাতত কলায় কামড় দিলো যদি আবার মা মাইর টাইর দেয়? এরমধ্যেই নিশানা উঠে দাঁড়ালো। ব্যাগ নিয়ে বের হতেই ওর মা ডেকে উঠলো,

— নিশা?

— কি আবার?

— কি মানে কোথায় যাচ্ছিস তুই?

— অবশ্যই প্রেম করতে না তার মানে ভার্সিটি।

— দিন দিন বেয়াদব হচ্ছিস তুই। আজ যেতে হবে না। আয় একটা ফেসপ্যাক লাগিয়ে দেই।

— মা আমি কিন্তু আজ যাব না যদি ভার্সিটি যেতে না দাও। এখনই আমার পড়া বন্ধ করার ধান্দা তোমার। বুঝি না আমি?

ওর বাবা বুঝলো মেয়ে রেগে আছে তাই গলা ঝেরে বললেন,

— নিশা আম্মু তুমি যাও। তারাতাড়ি এসো।

— আমি আর আসবো না। একে বারে তোমার না হওয়া মেয়ের জামাইয়ের সাথে দেখা করে আসব।

বলে আর দাঁড়ালো না সোজা বেরিয়ে গেল।

___________________

গুলশানের একটা ক্যাফেতে বসে আছে ওয়াসিফ। অফিস থেকে এসেছে ডিরেক্ট। প্রায় আধঘন্টা হবে ও এসেছে কিন্তু যার অপেক্ষায় আছে তার কোন আতা পাতা নেই। না জানি আবার কার মাথা ফাটাচ্ছে এই মেয়ে যেই ঘাড়ত্যাড়া। আল্লাহ জানে কি ভাবে ওয়াসিফ। তবে যাই হোক ওকে ছাড়বে না ওয়াসিফ চৌধুরী। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার কাউকে দেখে ওর হৃদপিন্ড লাফিয়েছে, চিতার বেগে ছুটেছে সারা শরীরের র*ক্ত। প্রথম প্রেম ছিলো ক্লাস নাইনের বায়োলজি ম্যাডাম। কিন্তু ভাগ্য সহায় ছিলো না তাই তো ওই ম্যামের দুই বছরের একটা মেয়ে ছিলো যে কিনা ওয়াসিফকে ভাই বলে ডেকেছিলো। পুরো ৩ ঘন্টা ভাবা যায় পাক্কা ৩ ঘন্টা কেঁদেছিলো ওই দিন ওয়াসিফ। তারপর থেকে ওয়াদা করেছিলো আর যাই হোক কাউকে মন, প্রাণ, হৃদপিণ্ড, ফেপরা, গুরদা যাই দিবে আগে তার ব্যাকগ্রাউন্ড জেনে নিবে। নিশালা সম্পর্কেও সব জানা আছে ওয়াসিফের। হয়তো একটু ঘাড়ত্যাড়া তবুও ওয়াসিফের ভাবতেই ওয়াসিফের নাড়ী ভুরী পেচিয়ে উঠলো আনন্দে।

— কি মিস্টার? আর কতক্ষণ বসে থাকবো?

কারো তীক্ষ মেয়েলী কন্ঠে ধ্যান ভাঙলো ওয়াসিফের। সামনে তাকাতেই দেখলো স্বয়ং নিশাদা বসে আছে। ক্লান্ত চেহারায় শ্যামলা মুখটায় বিরক্তিতে ভরে আছে। ওয়াসিফ ভেবে পেল না কবে এই মেয়ের চেহারায় বিরক্তি দেখে নি ও। সব বাদ দিয়ে গলা পরিষ্কার করে বললো,

— কেমন আছো নিশু?

যাহ্। গেল তো সব উল্টো পাল্টা হয়ে। এই লোকের কন্ঠে নিশু ডাকটা কেন জানি ওর সব কিছু এলোমেলো করে দেয়। তবুও নিজেকে সামলে বললো,

— আলহামদুলিল্লাহ। আপনি?

— আলহামদুলিল্লাহ। কি অর্ডার করবো?

নিশালার বেশি কিছু মন চাইলো না শুধু মন চাইলো একটু বিরিয়ানি, এক বাটি ফিরনি, একটা হাফ লিটারের সেভেন আপ অথবা বোরহানি খেতে। কিন্তু এখানে তো এগুলো নেই তাই বললো,

— কফি হলেই চলবে। যা খেতে মন চাইলো তা এখানে নেই।

ব্যাস্ত হয়ে ওয়াসিফ বললো,

— আরে বল কি খাবে। যেখানে পাওয়া যাবে সেখানে যাই চলো।

— না লেট হচ্ছে কাজের কথায় আসি।

অগত্যা ওয়াসিফ দুটো কফি সাথে কিছু খাবার অর্ডার করলো। অর্ডার আসতেই নিশালা কফিতে চুমুক দিয়ে একটা রোল হাতে নিয়ে কামড় দিলো। ওয়াসিফ একটু হাসলো। তার নিশুটা আলাদা। একদম ভিন্ন। যেখানে অন্য কোন মেয়ে হলে এতোক্ষণে লজ্জা, ভয়, জড়তায় আরস্ঠ হয়ে থাকতো সেখানে নিশালা নিজের মতো শান্ত। এই মেয়েটার ভেতর বাহির এক। কোন লুকোচুরি নেই। রোল শেষ করে নিশালা বললো,

— আমি শর্তনামা এনেছি। আমার সকল শর্ত এতে লিখা আছে। আপনি আজ নিয়ে ভালোমতো করে পড়ে পরে সাইন করবেন।আর যদি মনে হয় শর্ত পুরোন করতে পারবেন না তাহলে আর কি? আপনারও শান্তি আমারও মুক্তি।

একদমে বলে কফিতে চুমুক দিয়ে ব্যাগ থেকে একটা কাগজ বের করে দিলো। ওয়াসিফ শুধু খেয়াল করলো কাগজে একটা স্টাম্প লাগানো উপরে। আর কিছু না দেখেই বললো,

— দাও এখনই করে দিচ্ছি।

— এই না না। আগে পড়বেন।

— আচ্ছা।

— আমি যাই এখন।

— দাঁড়াও বিলটা দিয়ে নেই। আমি দিয়ে আসছি।

— আমি একাই যেতে পারবো। আপনাকে লাগবে না।

— এমন করে না নিশু। আমি দিয়ে আসছি বল্লাম তো।

ব্যাস নিশালা আর কিছুই বলতে পারলো না। কে জানে কেমন হবে তাদের এই শর্তনামার ভিত্তিতে জীবন।

#চলবে….