#শর্তনামা
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ২
রাত প্রায় ১২টা। নিশালা ল্যাপটপে এতক্ষণ একটা কনজিওরিং মুভি দেখছিলো। শেষ হতেই তা অফ করে ওয়াসরুমে ডুকে ব্রাশ করে লাইট অফ করে দোয়া পড়ে শুয়ে পরলো। ভুতের ভয় কোন কালেই পায় না নিশালা মূলত ভুতে বিশ্বাসী না ও কিন্তু এটা যতক্ষণ আলো থাকে ঠিক ততক্ষণ। এখন ওর মনে হচ্ছে যেন ফার্নিচার গুলো ওর দিকে তাকিয়ে আছে। নিজের উপরই মেজাজ খারাপ হলো ওর। কোন দুঃখে হরোর মুভি দেখতে গেল। ভাবতেই কাথার নীচে মাথা ডুকিয়ে দিলো। এখন নিজেকে সেফ মনে হচ্ছে ওর। প্রত্যেকটা বাঙালির এটা জাতিগত বিশ্বাস যে কাথার নীচে ভুত ধরতে পারবে না। নিশালার ও ঠিক তাই। নিজেকে যখন পুরো পুরি সেফ করে ঘুমাবে ঠিক ঐ মুহূর্তে বিকট শব্দে ফোন বেজে উঠলো। একটা লাফে উঠে বসলো নিশালা। হাতিয়ে হাতিয়ে ফোনটা ধরতেই দেখলো আননোন নাম্বার। বিরক্ত হলেও তেমন ভাবলো না। রিসিভ করে নিজের গলার স্বরটা মোটা ও ভারী আওয়াজ করে বললো,
— কে বলেছেন?
অপর পাশের ব্যাক্তিটি ভয় পেয়ে ভরকে গেল। কাকে কল দিলো ও? এটা আর যাই তার নিশুর কন্ঠ হতে পারে না। নিজেকে ধাতস্থ করে ওয়াসিফ বললো,
— আসসালামু আলাইকুম। এটা কি মিস.নিশালার নাম্বার?
চমকে গেল নিশালা। এটা তো ওয়াসিফ। নিশালা এমন আওয়াজ করেই কথা বলে আননোন নাম্বার থেকে কল আসলে যাতে ছেলে ভেবে কেউ ডিসটার্ব না করে। নিজেকে স্বাভাবিক করে নিশালা বললো,
— ওয়ালাইকুম আসসালাম। আমি নিশালা বলছি।
এতক্ষণে যেন বুকে পানি এলো ওয়াসিফের। চটজলদি বললো,
— কে ছিলো তোমার রুমে নিশু? আঙ্কেল নাকি নিশান?
— কেউ না।
— তাহলে প্রথমে কল কে রিসিভ করলো?
— আমিই করেছিলা৷ আননোন নাম্বার ছিলো তাই তেমন করে কথা বলেছি।
নিঃশব্দে হাসলো ওয়াসিফ। এই ছোট্ট ছোট্ট এমন হাজার ও গুনের প্রেমে পড়ে ও। ছোট করে বললো,
— ওহ্।
— কেন কল করেছেন?
— তোমার শর্তনামা….
আর কিছু বলার আগেই নিশালা বললো,
— ও হ্যাঁ বুঝতে পেরেছি। আপনি এখন না করবেন তাই তো? আমি জানি তো। ব্যাপার না। দোয়া করে দিলাম আপনাকে যাতে ভালো একটা ঢিংচেক বউ পান আপনি। আর হ্যাঁ হ্যাঁ আপনি চাইলে আমি আপনাকে হেল্প ও করতে পারি। “বিয়ে ডট কম” এ আপনার প্রোফাইল বানিয়ে দেই? দেখবেন সিরিয়ালে একেকটা পাত্রী দাঁড়িয়ে আছে। ঝট করে আপনার বিয়ে আর পট করে বাচ্চা। কি বলেন???
ওয়াসিফ যেন কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। এই মেয়ে কিছু না শুনেই কত্তো দূরে এগিয়ে এলো। বহু কষ্টে ওয়াসিফ বললো,
— আমি শর্তনামা সাইন করে দিয়েছি। আর ঝট করে বিয়ে আমি তোমাকেই করব আর পট করে বাচ্চাও তোমার সাথেই করব।
— এই ছিঃ কিসব কথা এগুলো?
— তুমিই তো বল্লা সব নিশু। কাল দেখা হবে। রাখি। আল্লাহ হাফেজ।
ওয়াসিফ একটু হাসলো। এই মেয়ে একটা পাগল আর এর প্রেমেই আবার কি না ওয়াসিফ পাগল।
এদিকে নিশালা আছে মহা টেনশনে। কি বললো এই লোক। কাল কেন আসবে? আর ঝট বিয়ে তাও আবার পট বাচ্চা তাও আবার কিনা নিশালার সাথে? ভাবতেই অস্পষ্ট আওয়াজে নিশালা বললো,
— অসভ্য মার্কা লোক।
____________
সকাল সকাল নিশান এসে বোনের দরজায় নক করতে লাগলো কিন্তু নিশালার কোন সাড়া নেই। থাকবে কিভাবে? বেচারী কাল রাত ৩ টা অবদি টেনশনে ছিলো। প্রিয় বন্ধু রাহামকে ও কল দিয়েছিলো বাঁচানোর জন্য কিন্তু ভাগ্য সহায় ছিলো না তাই তো কাল রাহাম নিজেই কাঁদছিলো কারণ ছিলো ওর গার্লফ্রেন্ড রাগ করে না খেয়ে ওকে বল্ক করে দিয়েছে। নিশালা কত বললো,
— কাঁদিস কেন? দুই মিনিট ওয়েট কর। একটু পরই কল দিয়ে বলবে,”বেবি আই মিস ইউ। ”
রাহাম গেল রেগে। একেতো ওর গার্লফ্রেন্ড জুটে না কপালে। কত কষ্ট করেই না এটাকে জুটিয়েছে ও। আর নিশালা কি না সিরিয়াসলি নিচ্ছে না ওকে। ভাবতেই রেগে বললো,
— দেখ নিশি একদম উল্টো পাল্টা বলবি না। তুই জানিস ও কতটা পসেসিভ আমাকে নিয়ে? আমার সব কিছু ও পছন্দ করে দেয়।
— হু হু জানি তো এক কাজ করিস এরপর থেকে আন্ডার ওয়ারের কালারও ওকে জিজ্ঞেস করে কিনিস।
আর কিছু না শুনেই ধুম করে কল কেটে দিলো নিশালা। এই লুতুপুতু প্রেম দেখতে দেখতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছে ও।
বর্তমানে নিশান চিল্লাতে চিল্লাতে দরজা ধাক্কাতে লাগলো আর বলতে লাগলো,
–অ্যাই আপি? আপি? দরজা খুল। কয়টা বাজে দেখ। আম্মু আসছে ডাল ঘুটনি নিয়ে তোকে মারতে।
নিশালা বিরক্ত হলো। ও কি এখন আর ভয় পায় নাকি ডাল ঘুটনির মারকে? তবুও উঠে দরজা খুললো ওমনি হুরমর করে নিশান ঘরে ডুকে বিছানায় গড়িয়ে পরলো। শুয়ে বললো,
— আপি আর মাত্র কয়দিন। এরপর এই রুমে আমার রাজত্ব। শুন এই কালো পর্দা বদলে আমি গেলাপী পর্দা লাগাবো আর বেড ও চেঞ্জ করব সাথে ওয়াল পেপারও।
নিশালা বোকার মতো তাকিয়ে বললো,
— কিসের কয়দিন?
— ও আল্লাহ বোইন আমার বলে কি? এই মাসের শেষ দিকেই তো ডেট ফিক্স হলো।
— ডেট?
— তোমার আর একমাত্র ওয়াসিফ ভাইয়ার। উপস দুলাভাই।
নিশালা চুপ করে গেল। ও ভাবতেও পারে নি এই ওয়াসিফ নামক লোকটা এতটা চালাক আর অধৈর্য হয়ে যাবে। এখনতো বাসায় ও কিছু বলা যাবে না। তাহলে কি শেষমেশ এই শর্তনামার ভিত্তিতে বিয়েটা হয়েই যাবে?
এত বড় ধামাকা নিউজটা দিয়ে চিপা দিয়ে কেটে পরলো নিশান। তখনই কল আসলো রাহামের। নিশালা রিসিভ করে চুপ করে রইলো। অপর পাশ থেকে রাহাম বললো,
— দোস্ত জানিস ও সকাল সকাল আজ আমাকে চা খায়িয়েছে।
নিশালা জানে এই “ও” টা হলো রাহামের রঙ্গিলা গার্লফ্রেন্ড। নিজের কষ্ট ভুলে প্রশ্ন করলো,
— কিভাবে খাওয়ালো তোকে চা? বিয়ের আগেই কি তুলে নিয়ে এলি নাকি?
— আরে কি যে বলিস। সকালে হোয়াটসঅ্যাপে কড়া করে চা বানিয়ে ছবি পাঠিয়ে বললো,” জানু এটা তোমার জন্য বানিয়েছি।”
— এরপর তুই কি করলি? ছবি চেটে চেটে খেলি নাকি?
— আরে ধুর। আমি টেক্স করলাম,”সুড়ুৎ সুড়ুৎ।”
— ওহহ। সাথে কিছু দেয় নি?
— হ্যাঁ ও বললো,” জানু পরটাতে তো ওয়েল বেশি তাই তুমি বিস্কুট নাও।”
— হুমমম।এরপর বিস্কুট কিভাবে খেলি?
— আমি টেক্সট করলাম,”মুচুড় মুচুড়।”
এতক্ষণ চুপচাপ সব শুনে এই ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলো নিশালা। এতক্ষণের সব চাপা কষ্ট যেন নিমিষেই ভুলে গেল ও। ওর হাসির ঝংকারে রাহাম অপর পাশ থেকে বললো,
— কিরে কি হলো তোর? হাসিস কেন?
— দোস্ত তোমাদের নিব্বা-নিব্বি প্রেম দেখে আমি শিহরিত এবং পুলকিত। আপাতত আর কিছু বলতে পারছি না।
বলে আবার ও হেসে উঠলো। রাহাম বিরক্ত হয়ে বললো,
— হাসিস কেন ছাতার মাথা। তোর কপাল পুরা জামাইয়ের খবর কি?
— ওই হারামি তুই আমার জামাইকে কপাল পুরা কেন বল্লি?
— ও মাই আল্লাহ। বইন এর মানে তুই বিয়েতে রাজি?
এতক্ষণে যেন নিশালার মনে পরলো। কন্ঠে বিশাদ মিশিয়ে বললো,
— ওই শ্যা*লা শর্তনামা সাইন করে দিয়েছে রে। বিয়ে নাকি এই মাসের শেষ দিকে।
— ইয়া হুউউউউ। বিয়ে খামু এইবার তাহলে। আমি কিন্তু জুতা চুড়ী করুম রে। তোর জামাইর পকেট খালি করুম আমি।
নিশালা এবার ভয়ানক বিরক্ত হলো। কয়েকটা ধমকি দিয়ে কল কেটে দিলো।
মায়ের সাথে একচোট ঝগরা চলছে নিশালার। নিশানা শুধু বলেছিলো,
— আম্মু আমি কিন্তু হলুদে বাইক নিয়ে এনট্রি করব।
ওর মা তো গেল ক্ষেপে। রেগে বললো,
— ফাইজলামি বাদ দে নিশা। এগুলো কিছুই হবে না।
নিশালা দ্বিগুণ তেজে বাবাকে বললো,
— আব্বু আমার একটাই বিয়ে, আমি সব করব। তোমার বউ যাতে নিজের এতে টাং না ডুকায়।
ওর মা ও ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,
— মেয়েকে না কর। আমার কিন্তু মেজাজ খারাপ লাগছে।
ওদের সব কথার মাঝেই নিশান ফোন নিয়ে দৌড়ে এসে বললো,
— আব্বু আপির শশুর বাড়ী থেকে ফোন।
_______________
বিবর্ন মুখ করে রুমে ঘাপটি মেরে বসে আছে নিশালা। হুট করে কি হয়ে গেল কেউ ই ভাবতে পারলো না। ওয়াসিফের দাদির অবস্থা ভালো না। হসপিটালে ভর্তি আছেন। ঙ্গান ফিরার পরই প্রথম যে কথা বলেছেন তা হলো,
— আমার ওয়াসিফের বউ দেখে মরতে চাই আমি।
ব্যাস হলো তো সব শেষ। ঐ বাড়ীর লোকজন অনেক আকুতি মিনুতি করে জানালো নিশালার বাবাকে। নিশালার বাবা ও মানা করার কোন কারণ পেল না যেহেতু বিয়ে অলরেডি ঠিক হয়ে আছে সেখানে না করার কোন কারণই নেই। কিন্তু বেঁকে বসে আছে নিশালা। ও এত তারাতাড়ি কিছু করতে চাইছে না আবার না ও করতে পারছে না। অনেক ভেবেও কুল পেল না এটা ভেবে যে কালই নাকি বিয়ে ওর। ঘরয়া ভাবেই আপাতত কাবিন করা হবে। নিশালার ভাবনার মাঝেই ওর বাবা দরজা ধাক্কা দিয়ে বললো,
— নিশা মা আমার দরজা খুলো।
নিশালা দরজা খুলে আবারও বিছানায় বসলো। ওর বাবা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
— নিশা তুমি কি রাজি না? আমি কি না করে দিব?
— এমন কিছু না বাবা।
— তাহলে আমি হ্যাঁ করে দেই?
নিশালা একটু রেগে বললো,
— হ্যাঁ তো করেই দিয়েছে নানুর মেয়ে।
— নিশা মা না ভালো। তোমার আম্মু তোমার ভালো চায়।
— জানি।
নিশালার বাবা আর মেয়েকে তেমন একটা ঘাঁটলেন না। না জানি কখন আবার বেঁকে বসে। আল্লাহ আল্লাহ করে বিয়েটা হলেই বাঁচে।
আজ রাতে কেন জানি নিশালা অপেক্ষা করলো ওয়াসিফের ফোনের। “নিশু” ডাকটা শুনার জন্য মনটা আকুপাকু করছে। নিজে আগ বাড়িয়েও কল দিতে পারছে না যদি আবার নিশাকে হ্যাংলা ভাবে। এতশত ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে গেল।
______________
সকাল সকাল উঠতেই সব যেন হাওয়ার বেগে ছুটতে লাগলো। এই তো ওর মা এসে খায়িয়ে দিয়েই ফুস। কই যে গেল নিশালা আর পেল না। বাবাকে তো সকাল থেকে পেলই না। নিশানও কাছে নেই। কাজিন সহ কাছের আত্মীয় দিয়ে বাড়ী ভরা। ওয়াসিফের বাড়ী থেকে তত্ত্ব এসেছে। তাই সবাই দেখতে ব্যাস্ত। রাহামকেও জাস্ট দুই পলক দেখা গিয়েছে। এরমধ্যেই যেন বিকেল হয়ে গেল। নিশালাকে সাজাতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো কাজিনরা। একটা সুন্দর ক্রিম কালারের জামদানী শাড়ি সাথে স্বর্নের গয়না। সুন্দর করে পরিপাটি করে নিশালাকে বসিয়ে রাখলো সবাই। এরমধ্যেই ছেলেরাও হাজির। পরিবার সহ কয়েকজন বন্ধু এসেছে ওয়াসিফর। সন্ধ্যার পরপরই বিয়ে সম্পূর্ণ হয়ে গেল। এরমধ্যে একবারও ওয়াসিফ তাকায় নি তার নিশুর দিকে। নিশালা তো বেহায়ার মতো কয়েকবার তাকালো কিন্তু ওয়াসিফ এই যে মাথা নিচু করলো আর সোজা করে নি।
দেখতে দেখতেই বিদায়ের সময় হয়ে গেল। যেই নিশান বোনের বিদায়ের জন্য উতলা হয়ে ছিলো সে আজ কেঁদে কেটে একাকার করে দিলো। বারবার বললো,
— আপি আমি তোর রুম দখল করবো না। প্লিজ থেকে যা।
নিশালা বাবা-মাকে দেখলো তাদের চোখও টলমলে। নিজেকে কোন মতে সামলালেও চোখ দিয়ে কয়েকফোটা পানি গড়িয়ে পরলো। নিশালার বাবা ওকে ওয়াসিফের হাতে তুলে দিলো ওমনি যেন ভদ্রলোক নিয়ন্ত্রণ হারালেন। কেঁদে উঠতেই ওয়াসিফ জড়িয়ে ভরসা দিলো। গাড়ি ছুটে চললো নিজের গতিতে। পেছনে রয়ে গেল নিজের পরিবার।
পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় ১০ টা বেজে গেল। সবাই ক্লান্ত তাই খেয়ে দেয়ে রুমে ডুকে গেল। নিশালাকে বসিয়ে দিলো ওয়াসিফের রুমে যেটা খুবই যত্ন করে গুছানো। কোন ছেলের রুম যে এতটা পরিপাটি হয় তা জানা ছিলো না নিশালার। অল্প ফুল দিয়ে সাজানো রুমটা। বুঝাই যাচ্ছে তারাহুরোয় ওতটা সময় পায় নি। পুরো রুম জুরে পাইচারি করতে করতে ভাবলো নিশালা। ওর এখন ক্ষুধা লাগছে। তখন ভালো করে খেতে পারে নি ও। তাই রুমের সব ড্রয়ার খুজতে লাগলো যদি কিছু পায় কিন্তু আফসোস কিছুই পেল না। বিরক্ত হয়ে নিশালা বললো,
— আরে ভাই মানুষ রুমে কিছু তো রাখে। চাটনি নাহয় চকলেট। বান্দার ক্ষুধা লাগলে কিছু তো খেতে পাক। নিজের বিয়ের বিরিয়ানি ও খেতে পারলাম। হাহ কি ভাগ্য।
নিশালার ভাবনার মাঝেই কেউ ডাকলো,
— “নিশু।”
নিশালার যেন লোমকূপ গুলো কাটা দিয়ে উঠলো। শীতল কণ্ঠে এই ডাকের মালিক যে ওয়াসিফ তা আর ভাবতে হলো না। ঘুরে দাঁড়াতেই শক্ত বুকের সাথে ধাক্কা খেল নিশালা। মুখ কুচকে তাকাতেই ওয়াসিফ বললো,
— ব্যাথা পেয়েছো?
— না।
— নাও।
একটা খাম এগিয়ে দিয়ে বললো ওয়াসিফ। নিশালা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই বললো,
— মোহরানা।
— আমি কি করব?
— এটা তোমার হক। যা খুশি করতে পার।
— লাগবে না আমার।
— কোন কথা না।
নিশালা ওটা পাশে টেবিলে রেখে দিলো। ওমনি হাতে কারো স্পর্শ পেল। কেঁপে উঠল নিশা। ওয়াসিফ ওর হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরালো। নিশালার যেন সব উলোট পালোট হয়ে গেল। ওয়াসিফই বললো,
— সরি নিশু।
— কেন?
— তারাহুরোয় সব হয়ে গেল।
— আরে সরি বলতে হবে না। দাদী কেমন আছেন এখন।
— আলহামদুলিল্লাহ।
— তুমি রেগে নেই?
— উহু।
— আমাকে মেনে নিয়েছো?
— হুম।
— তাহলে কি আমি?
— শর্তন….
নিশার কিছু বলার আগেই ওয়াসিফ তা বন্ধ করে দিলো। আপাতত ঐ শর্তনামা নামক ফালতু কিছু মনে করতে চাইলো না ওয়াসিফ। নিশালাও কোন বাঁধা দিলো না। ছাড়া পেতেই নিশা মুখ ঘুরিয়ে নিলো। লজ্জায় অবস্থা টাইট ওর। ওয়াসিফ পেছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরে বললো,
— ভয়ংকর সুন্দর লাগছে তোমায় নিশু তাই আমারও একটা চুমুতে কিছু হবে না ভয়ংকর কিছু লাগবে।
নিশা কোনমতে নিজেকে ছাড়িয়ে বললো,
— আমি চেঞ্জ করব।
বলেই ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে মাথার দোপাট্টা খুলতে লাগলো। পার্লারে না সাজলেও কাজিনগুলো পিন টিন মেরেছে শখানেক। ওয়াসিফ নিজেও এগিয়ে এসে খুলতে সাহায্য করতে লাগলো। নিশা আবার গয়না খুলতে মনোযোগ দিলো। ওয়াসিফ সব খুলে বিরক্ত হয়ে বললো,
— এত পিন কে লাগায় নিশু?
— সবাই লাগায়। এই এই আপনি কি বিরক্ত হচ্ছেন? শর্তনামায়..
আর কিছু বলার আগেই নিশাকে কোলে তুলে নিলো ওয়াসিফ। কানে মুখ লাগিয়ে বললো,
— আজ তোমার শর্তনামার খেতা পুড়ি।
নিশাও আর কিছু বলার সুযোগ পেল না। সময়টা থমকে গেল ওয়াসিফের প্রেমের উন্মদনায়।ভালোবাসাময় কেটে গেল দু’জনের প্রহর। কোন শর্ত ছাড়াই জড়িয়ে গেল দুটো প্রাণ।
#চলবে……