শুধু তুমি আমার পর্ব-১৮+১৯

0
562

#শুধু_তুমি_আমার
#পর্ব_১৮
#Fariba_Ahmed

মেঘ গালে হাত দিয়ে ছল ছল চোখে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।মেঘ অবাক হয়ে গেছে।নোনাজল চোখ বেয়ে টপটপ করে পড়ছে।মেঘ ভাবতেও পারেনি তার মা তাকে মারবে।তার মা কখনো তার গায়ে হাত তুলেনি।আজ প্রথম তাকে মারলো।কষ্টে মেঘের ভিতরটা পুড়ে যাচ্ছে।

–আম্মু তুমি আমাকে মারলে?(কান্না করে)

–হুম মারলাম।এই কাজটা আমার আগে করা উচিত ছিলো।তোমাকে কত আদর করে আমি মানুষ করেছি তার এই প্রতিদান দিলে তুমি?

–আম্মু তুমি ভুল বুঝছো।

তারপর মেঘের মা মেঘকে সেই ছবিটা দেখিয়ে বলে,

–তাহলে কি এই ছবিটা মিথ্যে?

–না আম্মু এই ছবিটা মিথ্যে না কিন্তু…

–ব্যাস মেঘ।অনেক বলেছিস তুই।এই ছেলেটাই ওই ছেলেটা যে সেদিন তোকে বাসায় দিয়ে গিয়েছিলো।আমি তোকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম ছেলেটা কে হয় কিন্তু তুই বলেছিস ফ্রেন্ড হয় তোর।মিথ্যে বলেছিলি আমাকে তুই।

–আম্মু আমার পুরো কথাটা একবার শুনো তুমি।

ওদের কথার মাঝে মিসেস খান বলে উঠে,

–মেয়েকে আপনি মানুষ করতে পারেননি ভাবী।নাহলে এই দিনটা আপনাকে দেখতে হতো না।কালকে আমি আমার বাসার থেকেই দেখেছিলাম এই ছেলের সাথে বসে থাকতে।আপনার মেয়ের চরিত্রের ঠিক নেই।

এই কথা শুনার পর মেঘের কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেলো।এমন একটা পরিস্থিতির স্বীকার তাকে হতে হবে সে কখনো ভাবতে পারেনি।কেউ তার চরিত্র নিয়ে কথা বলবে এটা সে কল্পনাও করেনি।এর চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো ছিলো।তার নিজের মাও তাকে বিশ্বাস করছে না।

এই কথা শুনে মুক্তা মিসেস খানকে বললো,

–আপনি এসব কি বলছেন?আপনি না জেনে শুনে এসব কথা বলতে পারেন না।

–তুমি চুপ থাকো।ছোট হয়ে বড়দের মাঝে কথা বলতে এসো না।নিজের মেয়েকে ভালো শিক্ষা দিলে এসব করতো না ভাবী।এজন্য বলে পরের মেয়েকে যতই করো পর কখনো আপন হয় না।কার না কার রক্ত….

মিসেস খান আর কিছুই বলতে পারলেন না।মেঘের মা চিৎকার করে বললেন,

–ভাবী।

উনার কথা শুনে মেঘ তার মা কে জিজ্ঞাসা করলো,

–উনি কি বলছেন এসব মা?

মিসেস খান বুঝলেন মুখ ফসকে অন্য কথা বলে ফেলেছেন।তাই তিনি মেঘকে বললেন,

–কিছু না।কি বলতে কি বলে ফেলেছি।মেঘ তোমার এই কাজটা করা একদম ঠিক হয়নি।তোমার মায়ের কথা তোমার ভাবা উচিত ছিলো।

–আপনারা সবাই আমাকে ভুল বুঝছেন।মানলাম আপনি কালকে দেখেছেন কিন্তু আমাদের মধ্যে এসব কিছুই নেই।

মেঘের মা মেঘকে বললো,

–এই খবর সবাই জেনে গেছে।তোকে কে বিয়ে করবে এখন?এই ছেলে কি করবে তোকে বিয়ে?

–আমি মেঘকে বিয়ে করবো।

কারো গলা শুনে পিছনে ফিরে তাকায় সবাই।দেখে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।ছেলেটাকে দেখে অবাক হয়ে গেলো মেঘ।কারণ তার সামনে শুভ্র দাঁড়িয়ে আছে।শুভ্রকে দেখে মুক্তা অনেক খুশি হলো।কারণ মুক্তাই শুভ্রকে কল করে সব বলেছে।শুভ্র এসব জানার পর তাড়াতাড়ি করে চলে এসেছে।মুক্তার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।এখন শুভ্রই পারে মুক্তাকে এই বিপদ থেকে বাঁচাতে।শুভ্র মুক্তার দিকে তাকিয়ে ইশারায় বলে,

–চিন্তা করো না,আমি এসে গেছি।মেঘের আমি কিছুই হতে দিবো না।

শুভ্র মেঘের দিকে তাকালো।মেঘের চোখে পানি দেখে শুভ্রের বুকে কষ্ট হতে লাগলো।শুভ্র মনে মনে বললো,

তোমার চোখে পানি মানায় মেঘ।যার কারণে তোমাকে আজ এই পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে তাদেরকে আমি ছাড়বো না।তোমার চোখের পানির মূল্য তাকে দিতেই হবে।তোমাকে আর কোনো কষ্ট পেতে দেবো না মায়াবিনী।তোমার শুভ্র এসে গেছে।

শুভ্রকে দেখে মেঘের মা বললো,

–তুমি?তুমিই তাহলে সেই ছেলেটি।

–হুম। আমি।আর আমি মেঘকে বিয়ে করবো।

শুভ্রকে দেখে মিসেস খাম বলে উঠলো,

–ভাবি এই সেই ছেলে যাকে আমি কালকে দেখেছি।

–আমার মেঘকে বিয়ে করতে কোনো আপত্তি নেই।

মিসেস খান শুভ্রের কথা শুনে ঘাবড়ে যান।উনি যা করতে চেয়েছিলেন তার উল্টো হচ্ছে।ঠিকমতো কাজ না করতে পারলে রাহুল খান উনাকে ছাড়বে না।রাহুল ই এই কাজটা করিয়েছে উনাকে দিয়ে।রাহুলের প্লান ছিলো উনাকে দিয়ে মেঘের মা কে এই ছবিগুলো দেখাবে।তারপর কোনোভাবে ম্যানেজ করে মেঘের মা কে বুঝিয়ে রাহুলের সাথে মেঘের বিয়ে দিয়ে দিবে।শুভ্র আসার আগে মিসেস খান রাহুলকে মেসেজ করে এখানে চলে আসতে বলেছে।শুভ্র এসে সব গোলমাল করে দিয়েছে।মিসেস খান ঘামতে শুরু করলেন।কি করবেন উনি বুঝতে পারছেন না।

পরিস্থিতি বদলাতে মিসেস খান শুভ্রকে বললো,

–তুমি ওকে বিয়ে করবে তার কি গ্যারান্টি আছে?এখন বলছো বিয়ে করবে,পরে তো তুমি মত পাল্টাতে পারো।

–আমি এরকম কিছুই করবো না।আর আপনাদের যদি আমার উপর বিশ্বাস না থাকে তাহলে আমি এক্ষুনি এই মুহূর্তে মেঘকে বিয়ে করবো।

এটা শুনে মেঘ অনেক অবাক হয়ে যায়।মেঘ মনে মনে ভাবছে মিস্টার শুভ্র এসব কি বলছেন?পাগল হয়ে গেলেন নাকি?উনি আমাকে কেনো বিয়ে করবে?

মেঘের মা বলে উঠলেন,

–ঠিক আছে তাই হবে।আমি আমার মেয়েকে তোমার হাতে তুলে দেবো।

শুভ্র বললো,

–আপনারা ওয়েট করুন আমি কাজিকে ফোন দিচ্ছি।

মুক্তা শুভ্রকে ফোন করেছিলো পরিস্থিতি সামলাতে।কিন্তু ও ভাবতে পারেনি শুভ্র মেঘকে বিয়ে করে নিবে।মুক্তা জানে মেঘ মিস্টার আর্টিস্টকে ভালোবাসে।নিজেকে নিজের কাছে এখন অপরাধী মনে হচ্ছে মুক্তার।মেঘের ভালো করতে গিয়ে ও আবার খারাপ করে দিলো না তো?

শুভ্র কাজিকে ফোন করলো।কিছুক্ষণ পরে কাজি চলে আসলো।মেঘের মা মেঘকে সুন্দর একটা শাড়ি পড়িয়ে রেডি করে দিলো।মেঘ অনেকবার তার মা কে বলেছে সে এই বিয়ে কর‍তে চায় না কিন্তু মেঘের মা মেঘের মেঘের কথা শুনেনি।মেঘের মা মেঘকে বলেছে সে এই বিয়ে না করলে তার মাকে যেন কোনোদিন মা বলে না ডাকে।মেঘ আর তার মায়ের মুখের উপর কথা বলেনি।সে রাজি হয়ে যায় বিয়ে করতে।

কিছুক্ষণ পর মেঘকে নিয়ে মুক্তা নিচে আসে।মেঘকে দেখে শুভ্র যেন চোখ সরাতে পারছে না।তার চোখ আটকে আছে মেঘের দিকে।নীল শাড়ি আর চোখে কাজল,ঠোঁটে লিপস্টিক।এই সামান্য সাজে তার মায়াবিনীকে যেন পরীর মতো লাগছে।শুভ্র মেঘের থেকে চোখ সরাতেই পারছে না।দূর থেকেই একবার শুভ্রের দিকে তাকালো মেঘ।তাকিয়ে দেখলো শুভ্র তার দিকেই তাকিয়ে আছে।শুভ্রের তাকানো দেখে মেঘের বুকটা ধুক করে উঠলো।এক ঝাঁক লজ্জা এসে ভিড় করলো।

শুভ্রের পাশে এনে মেঘকে বসিয়ে দিলো মুক্তা।মেঘের চোখ বেয়ে অশ্রু পড়েই যাচ্ছে।সে চায় না শুভ্রকে বিয়ে করতে।তার মনে যে একজনেরই বাস,আর সে হলো মিস্টার আর্টিস্ট।মেঘের চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে এই বিয়ে সে করবে না।কিন্তু কোনো উপায় নেই।শুভ্রের উপর রাগ হচ্ছে মেঘের।কাল শুভ্র না আসলে এসব কিছুই হতো না।

কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন।শুভ্র তাড়াতাড়ি করে কবুল বলে দিল।কিন্তু মেঘকে কবুল বলতে বললে মেঘ চুপ করে থাকে।অনেকক্ষণ পার হয়ে যাবার পর মেঘ কবুল বলে।মেঘ আর শুভ্রের
বিয়ে পড়ানো শেষ হয়।

ওদের বিয়ে পড়ানো শেষ হতেই রাহুল সেখানে এসে উপস্থিত হয়।এসব দেখে অবাক হয় রাহুল।মিসেস খানের দিকে তাকায় সে।ইশারায় জিজ্ঞাসা করে কি হচ্ছে এসব?মিসেস খান চুপ করে থাকে।ইশারায় মিসেস খানকে বাইরে আসতে বলে রাহুল।

রাহুল মিসেস খানকে বলেন,

–এসব কি হচ্ছে এখানে?শুভ্র এখানে কি করছে?

–বিয়ে।

–বিয়ে মানে?

–ওই শুভ্র ছেলেটার সাথে মেঘের বিয়ে হয়ে গেলো।

–হোয়াট?আমি এজন্য আপনাকে এইগুলো করতে বলেছি?এজন্য টাকা দিয়েছি?আমি বলেছিলাম মেঘের সাথে আমার বিয়ে হবে তার জন্য আপনি মেঘেত মা কে ইমোশনালি ব্লাক মেইল করে রাজি করাবেন।

— সেই সুযোগতো আমি পাইনি।তার আগেই এই শুভ্র ছেলেটা এসে সব ভেস্তে দিলো।

–শিট।শুভ্র এখানে কি করে আসলো?

— আমি জানি না।

–যান আপনি,আর শুনুন আপনি কারো কাছে মুখ খুলবেন না।কেউ যেন জানতে না পারে এইসব আমি আপনাকে করতে বলেছি।

–ঠিক আছে।

রাহুল মনে মনে বলে উঠলো,

তুমি এটা একদম ঠিক করো নি মিস্টার শুভ্র।মেঘ আমার শুধু আমার।ওকে আমি নিজের করে নিবোই।তোমাকেও এর মাসুল দিতে হবে মিস্টার শুভ্র।জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।

তারপর রাহুল সেখান থেকে চলে যায়।

চলবে…..

#শুধু_তুমি_আমার
#পর্ব_১৯
#Fariba_Ahmed

মেঘ আর শুভ্রের বিয়ে পড়ানোর পরে সবাই চলে যায়।বাসায় এখন শুধু মেঘ,শুভ্র,মুক্তা আর মেঘের মা।মেঘ অঝোরে কেঁদেই যাচ্ছে।মেঘের কান্না শুভ্রের সহ্য হচ্ছে না।শুভ্র অনেকবার মেঘকে কাঁদতে না করেছিলো।কিন্তু মেঘ শুনেনি।আর শুনবেই বা কি করে।মেঘের চোখেত অশ্রুকণা যে আজ মেঘের কথাও শুনছে না।শুভ্র মেঘের মা কে বললো,

–আন্টি মেঘ আর আমার মধ্যে কোনো রিলেশন ছিলো না।আপনি ভুল বুঝছেন মেঘকে।

মেঘের মা শুভ্রকে থামিয়ে বললো,

–আমি এসব বিষয়ে আর কিছুই শুনতে চাই না।মেঘ এখন আর আমার মেয়ে নয়।ও তোমার বিয়ে করা বউ।তোমরা এখন আসতে পারো।তোমার বউকে নিয়ে চলে যাও।

এ কথা শুনে মেঘের খুব কষ্ট হচ্ছে।তার মা এভাবে কঠোর কেন হলো?কেন একবারের জন্যও তার কথা বিশ্বাস করছে না?মেঘ তার মায়ের সামনে গিয়ে কান্না করতে করতে বললো,

–আম্মু এভাবে বলো না।আমাকে বিশ্বাস করো।ওরা সবাই মিথ্যে বলছে।আমার সাথে মিস্টার শুভ্রের কোনো সম্পর্ক ছিলো না।

–মেঘ এখন শুভ্র তোমার বর।ওর সাথে ওর বাসায় চলে যাও।

–আম্মু আমি যাবো না।তোমাকে একা রেখে আমি যাবো না।

–আমার চিন্তা তোমাকে করতে হবে না মেঘ।

বলে মেঘের মা ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়।মেঘও আম্মু বলে ছুটে যায়।দরজার সামনে গিয়ে বার বার বলে দরজা খুলতে কিন্তু তার মা খুলে না।মেঘ কান্না করতে করতে দরজার সামনে বসে পড়ে।মুক্তা আর শুভ্র মেঘের কাছে যায়।মুক্তা মেঘকে বলে,

–মেঘু এরকম করিস না।তুই অসুস্থ হয়ে যাবি।কান্না করিস না

–মুক্তা আম্মু আমার কথা শুনছে না।আমাকে বিশ্বাস করছে না।তুই তো জানিস আমি সত্যি বলছি।আম্মুকে বল না মুক্তা।

শুভ্র বলে উঠে,

–মেঘ চলো।

–না আমি যাবো না।

মেঘ উঠে শুভ্রের কাছে গিয়ে বললো,

–সব আপনার জন্য হয়েছে মিস্টার শুভ্র।আপনি সেদিন দেখা করতে না আসলে এসব কিছুই হতো না।আপনার জন্য আজ আম্মু আমাকে ভুল বুঝছে।আপনি দায়ী মিস্টার শুভ্র।আমি আপনাকে ঘৃণা করি,ঘৃণা করি আমি….

মেঘ আর বলতে পারলো না।অজ্ঞান হয়ে গেলো।মেঘকে পড়ে যেতে দেখে শুভ্র ধরে নিলো।বুঝতে পারলো মেঘ অজ্ঞান হয়ে গেছে।মেঘকে কোলে নিয়ে চলে গেলো শুভ্র।মুক্তাও শুভ্রের পিছনে গেলো।গাড়ির পিছনের সিটে মেঘকে শুইয়ে দিলো শুভ্র।মুক্তা গিয়ে মেঘের পাশে বসলো।শুভ্র গাড়ি চালিয়ে ওর বাসায় চলে গেলো।

শুভ্র গাড়ি থেকে নেমে মেঘকে নিয়ে বাসার ভিতরে চলে যায়।মুক্তাও শুভ্রের পিছনে পিছনে যায়।ইয়ান ড্রয়িং রুমেই বসে ছিলো।শুভ্র আর মেঘকে এভাবে দেখে অনেক বড় ঝাটকা খায় ইয়ান।শুভ্রকে জিজ্ঞাসা করে,

–শুভ্র মেঘের কি হয়েছে?আর তোরা এই পোশাকে কেন?

–আমি পরে সব বলছি।আগে মেঘকে নিয়ে যেতে দে।

–আচ্ছা।

শুভ্র মেঘকে নিয়ে উপরে শুভ্রের ঘরে চলে গেলো।মেঘকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে পানি আনতে গেলো শুভ্র।

ইয়ান পিছনে তাকিয়ে দেখে মুক্তা দাঁড়িয়ে আছে।মুক্তাকে এতক্ষণ খেয়াল করেনি ইয়ান।মুক্তাকে দেখে ইয়ান জিজ্ঞাসা করে,

–মুক্তা তুমিও এখানে?কি হয়েছে আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।শুভ্রও কিছু না বলে চলে গেলো।

–আমি আপনাকে সব বুঝিয়ে বলছি,তাহলে বুঝতে পারবেন।

তারপর মুক্তা ইয়ানকে সব খুলে বলে যা যা হয়েছিল।সব শুনে ইয়ান অবাক হয়ে যায়।শুভ্র মেঘকে বিয়ে করেছে এটা যেনো ইয়ানের বিশ্বাসই হচ্ছে না।

শুভ্র পানি এনে মেঘের মুখে ছিটিয়ে দিলো।শুভ্র মেঘের হাত ধরে বসে আছে।কিছুক্ষণ পানির ছিটা দেওয়ার পর মেঘের জ্ঞান ফিরে আসে।মেঘ চোখ মেলে দেখে সে অচেনা একটা ঘরে শুয়ে আছে।পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে শুভ্র বসে আছে।মেঘের জ্ঞান ফিরতে দেখে শুভ্র যেন জীবন ফিরে পেলো।আরেকটু হলে ডাক্তারকেই ফোন করতে যাচ্ছিল শুভ্র।শুভ্র মেঘকে বললো,

–এখন কেমন আছো মেঘ?

–আমি ঠিক আছি।

বলে মেঘ উঠে বসতে নিলো।মেঘের উঠতে সমস্যা হচ্ছে দেখে শুভ্র মেঘকে ধরতে নিলে মেঘ বললো,

–আমাকে ছোঁবেন না মিস্টার শুভ্র।আপনি না আসলে কিছুই হতো না।প্লিজ আপনি চলে যান।আমাকে একা থাকতে দিন।

মেঘের কথায় শুভ্র কষ্ট পায়।শুভ্র মেঘকে বলে,

–ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি।আলমারিতে শাড়ি রাখা আছে।তুমি ফ্রেশ হয়ে নিও।

বলে শুভ্র চলে যায়।

শুভ্র রুম থেকে বের হয়ে নিচে চলে যায়।মুক্তা আর ইয়ানকে গিয়ে বলে মেঘের জ্ঞান ফিরেছে।মুক্তাকে উপরে মেঘের কাছে পাঠিয়ে দেয় শুভ্র।এখন মেঘের মনের যা অবস্থা মুক্তার সাথে কথা বললে ওর ভালো লাগবে।মুক্তা গিয়ে দেখে মেঘ বিছানায় বসে আছে।মুক্তাকে দেখে মেঘ জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।মুক্তা আর মেঘ নিজেরা কথা বলতে থাকলো।একটু পর মেঘ গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়।মেঘ শাড়ি পড়তে পারে না।তাই মুক্তা ওকে সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দেয়।কিছুক্ষণ পর শুভ্র এসে খাবার দিয়ে যায়।মেঘ প্রথমে না করলেও পরে মুক্তার জোরাজোরিতে খেয়ে নেয়।

রাত হয়ে যাওয়ায় মুক্তা চলে গেছে।ইয়ান মুক্তার সাথে গিয়েছে মুক্তাকে দিতে।মুক্তা যাওয়ার আগে মেঘ বলে দিয়েছে ওর মাকে যেন মুক্তা দেখে রাখে।শুভ্র কিছু কাজ সেরে ঘরে আসলো।ঘরে মেঘকে না দেখে শুভ্রের বুকটা ধুক করে উঠলো। বারান্দার দিকে গেলো শুভ্র।সেখানে মেঘকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো শুভ্র।শুভ্র দেখলো মেঘ বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে।মেঘ বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আজকের ঘটে যাওয়া সব ঘটনা ভাবছে।

–মেঘ।

শুভ্রের ডাকে নিজের চোখ মুছে পিছনে ফিরে তাকায় মেঘ।

–আপনি আমার সামনে আসবেন না মিস্টার শুভ্র। আমি আপনার এখানে থাকবো না।আমি কালই চলে যাবো।

মেঘের মুখে চলে যাওয়ার কথা শুনে রেগে যায় শুভ্র।নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করে বলে,

–মেঘ আমি তো কিছু করিনি।

–কিন্তু আপনি না আসলে তো কিছুই হতো না।(কান্না করে)

মেঘকে আবার কান্না করতে দেখে শুভ্র মেঘকে জড়িয়ে ধরে শান্ত করার জন্য।মেঘ নিজেকে ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।শুভ্রের বাহু থেকে নিজেকে সরাতে না পেরে রেগে শুভ্রের পিঠে কিল,খামছি বসিয়ে দেয়।শুভ্র কিছুই বলে না।কিছুক্ষণ পর মেঘ নিজেই শান্ত হয়ে যায়।শুভ্র মেঘকে ছেড়ে মেঘের চোখের পানি মুছিয়ে দেয়।মেঘ কিছ বলে না।শুভ্র মেঘের দুই গালে হাত রেখে বলে উঠে,

–আমি জানি মেঘ আজ যা হলো তাতে তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছো।তোমার মা তোমাকে ভুল বুঝেছে।আমি তোমাকে প্রমিস করছি তোমার মাকে আমি তোমার কাছে ফিরিয়ে দেবো।তার সব ভুল ধারণা আমি দূর করে দেবো।দেখবে সব আগের মতো হয়ে যাবে।আর যে তোমাকে কষ্ট দিয়েছে তাকেও খুঁজে বের করবো। তার অনেক বড় শাস্তি পাওনা রয়েছে।

শুভ্রের কথায় মেঘ যেন ভরসা খুঁজে পায়।মেঘ শুভ্রকে বলে,

–আপনি সত্যি বলছেন তো?আপনি আম্মুর সাথে আমার কথা বলিয়ে দিবেন?

–হুম,আই প্রমিস।

–সরি আমি আপনাকে অনেক খারাপ কথা বলেছি।

–ইটস ওকে।

–আর একটা কথা।আপনার জানা দরকার।

— কি কথা বলো?

–আমি একজনকে খুব ভালোবাসি মিস্টার শুভ্র। তাই আমি আপনার আর আমার বিয়েটা মেনে নিতে পারছি না।

মেঘের এই কথা শুনে শুভ্রের বুকটা কেঁপে উঠলো।মনে হাজারো প্রশ্ন এসে ভিড় জমিয়েছে।কাকে ভালোবাসে তার মায়াবিনী।তার মায়াবিনী শুধু তার।কেউ তাকে নিতে পারবে না।

শুভ্র মেঘকে জিজ্ঞাসা করলো,

–কাকে ভালোবাসো তুমি মেঘ?

–আমি যাকে ভালোবাসি তাকে কখনো দেখিনি।তার আসল নামটাও আমি জানি না।কখনো তাকে নিজের করে পাবো কিনা তাও জানি না।মিস্টার আর্টিস্ট,আমি তাকে এই নামেই ডাকি।তার আঁকা ছবিগুলোর প্রেমে পড়েছি আমি।একটা মানুষের মন মানসিকতা কতটা ভালো হলে তার আঁকা ছবি এতো সুন্দর আর প্রাণবন্ত হয়।খুব ভালোবাসি তাকে।

মেঘের মুখে এই কথা শুনে শুভ্র কিছুই বললো না।মেঘ শুভ্রের দিকে তাকালো।শুভ্র তাকে কি বলবে তা শোনার জন্য তাকিয়ে আছে।শুভ্র মেঘকে বললো,

–ঠিক আছে।আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি তোমাকে তোমার মিস্টার আর্টিস্ট এর সাথে দেখা করিয়ে দেবো।তাকে খুব কাছ থেকে তুমি দেখতে পারবে।তাকে ছুঁতে পারবে।তার সাথে কথা বলতে পারবে।

চলবে….