শুধু তুমি আমার পর্ব-১৬+১৭

0
489

#শুধু_তুমি_আমার
#পর্ব_১৬
#Fariba_Ahmed

এসএন তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হতে চলে যায়।এখনি তাকে ভার্সিটি যেতে হবে।আরো অনেক প্লান করা বাকি।রাহুল খান যত চাল চালুক না কেনো সে কখনো জিততে পারবে না।

মুক্তা ভার্সিটি এসে বসে আছে ক্লাসে।কিন্তু আজ ক্লাসে টিচার আসেনি।কিছুক্ষণ পর বাইরে অনেক চেঁচামেচির আওয়াজ শোনা গেলো।একটা ছেলে ক্লাসে এসে বললো বাইরে নাকি অনেক লোক। আর্ট কম্পিটিশন নিয়ে কিছু একটা হয়েছে।মুক্তাসহ ক্লাসের সবাই বাইরে চলে গেলো।মুক্তা বাইরে গিয়ে দেখলো একটা পোস্টারের সামনে ভার্সিটির সবাই ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে।মুক্তা ভিড় ঠেলে ভিতরে গিয়ে দেখলো পোস্টারে লেখা আর্ট কম্পিটিশন কয়েকদিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।সবাই এটা নিয়েই কথা বলছে।সবাই অবাক হয়েছে।কেননা প্রতি বছরই এই আর্ট কম্পিটিশন হয়ে থাকে।ত্রিশ বছর ধরে এই আর্ট কম্পিটিশন হয়ে আসছে।কখনো ডেট পালটানো হয়নি।আজ প্রথমবার এটা হলো তাই সবাই অবাক।রাহুল খান তার ক্ষমতা দিয়ে এই কাজটা করিয়েছে।কারণ রাহুল খান ভয় পাচ্ছে এসএন তার পথের কাঁটা হতে পারে।
_ _ _ _
তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে ভার্সিটিতে চলে আসলো এসএন।উদ্দেশ্য তার রাহুল খানের সাথে কথা বলা।রাহুল আর্ট কম্পিটিশনের লোককে টাকা দিয়ে আর্ট কম্পিটিশনের ডেট পিছিয়ে দিয়েছে।এসএন পুরো প্রস্তুতি নিয়ে নিয়েছিলো,এখন এসএন এর সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেলো।এসএন ভার্সিটির মাঠে দাঁড়িয়ে ছিলো।তখন সেখানে রাহুল আসে।পিছন থেকে এসএন কে দেখে এগিয়ে যায় তার দিকে।এসএন এর কাছে গিয়ে বলে,

–হ্যালো মিস্টার এসএন।

রাহুলের গলা শুনে পিছনে ফিরে তাকায়।রাহুলকে উদ্দেশ্য করে বলে,

–হ্যালো মিস্টার রাহুল।

–কেমন আছেন?মনে তো হয় না ভালো আছেন আপনি।

–আপনার কেনো হলো আমি ভালো নেই?

–ভালো কি করে থাকবেন?আপনার প্লানে যে আমি পানি ঢেলে দিলাম।

–যতই চেষ্টা করুন না কেনো আপনি কখনোই জিততে পারবেন না মিস্টার রাহুল।আপনি হয়তো ভাবছেন আপনি জিতে গেলেন।সময় বলে দেবে কে জিতবে আর কে হারবে।আর আপনিও ভালো করে জানেন আর আমিও ভালো করে জানি কে ফেক।

রাহুল এসএন এর কথায় রেগে যায়।রাহুল মাথা ঠান্ডা করে এসএন কে বলে,

–আপনি চাইলে আমরা একটা ডিল করতে পারি।

–লাইক সিরিয়াসলি?তা মিস্টার রাহুল কি ডিল করতে চান আপনি?

–আমি জানি যে আপনি বুঝে গেছেন এই ছবিগুলো আমার আঁকা নয়।আর আমার মনে হয় এই ছবি আপনারো আঁকা নয়।

–রিয়েলি?তা কে আপনাকে বললো যে এই ছবি আমার আঁকা নয়?

–দেখুন মিস্টার এসএন আপনার আর আমার উদ্দেশ্য এক।এই ছবি বিক্রি হয়ে যে টাকা পাওয়া যায় পুরো টাকাটাই কয়েকটা অনাথ আশ্রম আর বৃদ্ধাশ্রমে দেওয়া হয়।আমরা যদি এই টাকাগুলো পাই তাহলে আমরা অনেক বড়লোক হয়ে যাবো।এই ছবিগুলো নিজের দাবি করে সব টাকা আমার কাছে আসবে।তারপর সেই টাকা আমরা দুজন ভাগ করে নিবো।ফিফটি আপনার আর ফিফটি আমার।আপনিও এই টাকার জন্যই ছবিগুলোকে নিজের বলছেন,আমার পথে অনেক সমস্যা তৈরি করছেন।এজন্য আমি আপনাকে এই প্রস্তাবটা দিলাম।এখন বলুন আপনি রাজি কিনা?

রাহুলের কথা শুনে এসএন উচ্চস্বরে হেসে উঠলো।এসএন কে হাসতে দেখে রাহুল ভ্রু কুঁচকে তাকালো।এসএন বললো,

–প্রস্তাবটা একটু কম হয়ে গেলো না?আই মিন আমি জিতলে তো পুরো টাকাটাই আমি পাবো।

–কম কেনো হবে?

–কম হোক বা বেশি আমি আপনার এই ডিলে রাজি নই।আপনি কি করে ভাবলেন এতো জঘন্য একটা প্রস্তাবে আমি রাজি হবো?আপনার মতো নিচ মানুষেরা এসব কাজ করতে পারে।আমার এসব ছবি বিক্রি করার পর যে টাকা পাওয়া যায় তা আমি এদেশের মানুষের জন্য ব্যয় করি।আপনি কি করে ভাবলেন আমি এই ডিলে রাজি হবো?(রেগে চিৎকার করে বললো এসএন)

–খুব বড় ভুল করছেন আপনি মিস্টার এসএন।আমার ডিলে রাজি হলে আপনার জন্যই ভালো হবে।আমরা অনেক কিছু করতে পারবো।

–সো সরি মিস্টার রাহুল।আমি আপনার সাথে ডিলটা করতে পারছি না।

-ওকে।সি ইউ মিস্টার এসএন। খুব সাবধানে থাকবেন।

–ইয়াহ।

তখনই রাহুলের ফোনে একটা কল আসে।রাহুল ফোনটা ধরে।

–হুম বল।সব রেডি তো।ঠিক আছে,কালকে ধামাকা হবে।বাই।

রাহুলের এই কথা শুনে এসএন ভ্রু কুঁচকে তাকায়।ভাবতে থাকে রাহুল খান কি করার কথা বলছে।কি করবে সে।কি ধামাকা করবে?

তারপর এসএন ভাবলো হয়তো আর্ট নিয়ে কিছু একটা করতে পারে।তাই এসএন তেমন একটা গুরুত্ব দিলো না।কারণ এসএন সব ব্যবস্থা করে রেখেছে।রাহুল কোনোভাবেই মিথ্যাকে সত্য প্রমাণ করতে পারবে না।তাই এই বিষয় নিয়ে কোনো কিছু না ভেবে চলে গেলো এসএন।

ফোনটা কেটে রাহুল রহস্যজনক একটা হাসি দেয়।মনে মনে বললো,

–মেঘরানি,আমাকে রিজেক্ট করার ফল তুমি পাবে।তুমি জানো না কাকে তুমি রিজেক্ট করেছো।আজ ভার্সিটি আসোনি তো কি হয়েছে।কালকে তো আসবে।কালকে তোমার জন্য অনেক বড় সারপ্রাইজ ওয়েট করছে মেঘরানি।বি রেডি মেঘরানি।তোমাকে তো আমার চাই ই চাই।একদিনের জন্য হলেও তোমাকে আমার চাই।
_______
মুক্তা ভার্সিটিথেকে সোজা মেঘের বাসায় চলে গেলো।মেঘ তখন বসে ছিলো।মুক্তাকে দেখে মেঘ বসা থেকে উঠে মুক্তাকে জড়িয়ে ধরে।

–কেমন আছিস মেঘ?

–ভালো আছি,একদম জোস আছি।তোর খবর বল?আজকের পড়াটা দে তো।আজকে আমার ক্লাসটা মিস হয়ে গেলো।

–সিরিয়াসলি মেঘ?তুই পড়া নিয়ে পড়ে আছিস?জানিস আজকে ভার্সিটিতে কি হয়েছে?

–কি হয়েছে মুক্তা?

–আজকে একটা ক্লাসও হয়নি।

–কেনো?আজ তো কোনো প্রোগ্রামও ছিলো না।আর্ট কম্পিটিশন তো কাল।তাহলে কি হয়েছে?

–আর্ট কম্পিটিশন কাল না রে মেঘ।

–মানে?তাহলে কবে?

–কয়েকদিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।

–কি বলছিস তুই?কিন্তু কেনো?এরকম তো আগে কখনো হয়নি।

–হুম আগে হয়নি।তাই সবাই অবাক হয়েছে।আমার মনে হয় রাহুল করাতে পারে।ওকে আজকে অনেক খুশি খুশি লাগছিলো।

–হতে পারে।রাহুল নিজেকে মিস্টার আর্টিস্ট প্রমাণ করতে চায়।বাট মিস্টার আর্টিস্ট তা হতে দেবে না।

–তাই যেনো হয়।

মেঘ আর মুক্তা কথা বলছিলো তখন সেখানে মেঘের মা আসে।উনি এসে বলেন এসএন মেঘের সাথে দেখা করতে এসেছে।এটা শুনে মেঘ আর মুক্তা নিচে চলে যায়।এসএন ভার্সিটি থেকে সোজা মেঘের বাসায় এসেছে মেঘকে দেখার জন্য।মেঘকে দেখে এসএন বলে,

–হাই মেঘ।কেমন আছো তুমি?

–জ্বি ভালো।

–এইপাশ দিয়েই যাচ্ছিলাম তাই ভাবলাম তোমাকে একবার দেখে যাই।

মুক্তা বলে উঠে,

–আপনি কিন্তু এটা একদম ঠিক করেননি মিস্টার এসএন।

–আমি আবার কি করলাম?

–কালকে মেঘের মেডিসিন তো দিয়ে যাননি।রাতে ও মেডিসিন খেতে পারেনি।

–হুম আমি ভুলে গিয়েছিলাম কিন্তু পরে তো আমি আবার এসে দিয়ে গিয়েছিলাম।

–হুম জানি,একটু মজা করলাম আরকি।মেঘ আমি আসি রে।মা নয়তো বকবে।রাতে একবার আসবো আমি।

–ঠিক আছে।সাবধানে যাস।

–আচ্ছা বায়।

মুক্তা চলে যায়।মুক্তা চলে যেতে এসএন বলে উঠে,

–আমাকেও যেতে হবে।আজ তাহলে আসি।

–মিস্টার এসএন একটা কথা বলুন?

–কি কথা?

–আপনি মুক্তাকে মিথ্যে কেন বললেন?কেন বললেন যে মেডিসিন গুলো আপনি আমাকে দিয়ে গেছেন?

–আমিই তো…

–মিস্টার শুভ্র আমাকে মেডিসিনগুলো দিয়ে গেলো।

–না মানে আমি মিস্টার ইয়ানের কাছে মেডিসিন দিয়ে দিয়েছিলাম,তারপর আর কিছু জানি না।আমি যাচ্ছি,লেট হয়ে যাচ্ছে।বাই।

–মিস্টার এসএন শুনুন,আপনি কিন্তু কিছু লুকাচ্ছেন।মিস্টার এসএন।

মেঘের ডাকে সারা না দিয়ে এসএন চলে যায়।একবারের জন্যও পিছিনে ফিরে তাকায় না।

চলবে…..

#শুধু_তুমি_আমার
#পর্ব_১৭
#Fariba_Ahmed

মেঘের ডাকে সারা না দিয়ে এসএন চলে যায়।একবারের জন্যও পিছিনে ফিরে তাকায় না।পিছন থেকে অনেকবার ডাকার পরও এসএন একবারের জন্যও পিছনে ফিরে না তাকানোর কারণে মেঘের সন্দেহ আরো বেড়ে যায়।মেঘ মনে মনে ভাবতে থাকে হয়তো ওর ধারণাই ঠিক।শুভ্র আর এসএন একই মানুষ।

এসএন সেখান থেকে তাড়াতাড়ি করে চলে এসে গাড়িতে বসে গাড়ি চালিয়ে চলে আসে।আজ একটুর জন্য ধরা পড়া থেকে বেঁচে গেলো।
——
রাতে মেঘ খাওয়া দাওয়া করে বারান্দায় বসে আছে।তার নিত্যদিনের কাজটাই করছে।দূর আকাশের মেঘেঘেরা চাঁদকে দেখছে।দূর থেকে একজোড়া চোখ যে তাকে দেখছে সেদিকে তার খেয়াল নেই।শুভ্র এসেছে আজকেও।শুধুমাত্র তার প্রিয়দর্শনীকে দেখার জন্য। শুভ্র গাড়ি নিয়ে এমন জায়গায় বসে আছে যেখান থেকে শুভ্রকে মেঘ এর চোখে পড়বে না।মেঘকে দেখার জন্য শুভ্রের মনটা আনচান করছিলো।বার বার শুধু তার মায়াবিনীকে দেখার ইচ্ছা জাগছিলো।নিজের ইচ্ছাটাকে আর কন্ট্রোল করতে পারলো না শুভ্র।তাই তাড়াতাড়ি করে চলে এলো মেঘকে এক পলক দেখার জন্য।

অনেকক্ষণ ধরেই বসে ছিলো শুভ্র মেঘকে দেখার জন্য। কিন্তু মেঘ আসছিলো না।হতাশ হয়ে যখন ফিরে যেতে নেয় তখন শেষবারের মতো একবার তাকায় বারান্দার দিকে।তাকিয়ে একটা ছায়া দেখতে পায়।গাড়ি থেকে বের হয়ে সামনে এগিয়ে দেখে ছায়াটা মেঘ এর।তা দেখে প্রশান্তির হাসি হাসে শুভ্র।ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে।শুভ্রের ছটফট করা মন মেঘকে একবার দেখে শান্ত হয়ে গেলো।

মেঘকে দেখতে তাকে শুভ্র।মেঘকে দেখে শুভ্রের মনে হাজারো সুখপাখি উড়ে যাচ্ছে।কিছুক্ষণ পরে শুভ্রের ফোনে কল আসে।শুভ্র ফোনে কথা বলতে থাকে।মেঘের হঠাৎ চোখ যায় দূরে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।ছেলেটাকে অনেক চেনা চেনা লাগছে।শুভ্র কথা বলতে বলতে সামনের দিকে ঘোরে।মেঘ ভালো করে দেখে বুঝতে পারে ছেলেটা শুভ্র।কিন্তু শুভ্র এখানে কি করছে তা বুঝতে পারছে না মেঘ।শুভ্র কথা বলা শেষ করে বারান্দার দিকে তাকায়।ততক্ষণে মেঘ লুকিয়ে পড়েছে।মেঘ দেখতে চায় শুভ্র কি করবে।ঘুরে মেঘকে না দেখে হতাশ হয় শুভ্র।গাড়ি থেকে একটা জ্যাকেট আর মুখে মাস্ক পড়ে নেয় শুভ্র।মেঘ সামনে আসতে গিয়ে কপালে বারি খায়।তাই সে শুভ্রের মাস্ক আর জ্যাকেট পড়াটা দেখতে পায়নি।কপাল ডলতে ডলতে সামনে তাকিয়ে দেখে শুভ্র কোথাও নেই,সেখানে এসএন দাঁড়িয়ে আছে।তা দেখে মেঘের চোখ বড় বড় হয়ে যায়।মেঘ ভাবতে থাকে, এসএন এখানে থাকলে শুভ্র কোথায় গেলো।তার মানে কি আমার ধারণাটাই ঠিক।শুভ্র গাড়িতে উঠে গাড়ি চালিয়ে চলে যায়।মেঘও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চলে যায়।তার মাথায় কিছুই ঢুকছে না।সব গুলিয়ে যাচ্ছে।

পরেরদিন সকালে মেঘ রেডি হয়ে ভার্সিটি চলে গেলো।ক্লাস শেষ করে মেঘ আর মুক্তা মাঠে বসে ছিলো।

মেঘ আর মুক্তা বসে আছে।মুক্তা কথা বলেই চলেছে আর মেঘ কিছু একটা ভাবছে।মুক্তার কথা মেঘের কানেই যাচ্ছে না।মুক্তা কথা বলতে বলতেই কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলো মেঘ তার কথা শুনছে না।নিচের দিকে তাকিয়ে গভীরভাবে কিছু ভাবছে।মুক্তা মেঘকে ধাক্কা দিয়ে বললো,

–কি রে মেঘু?কি হয়েছে তোর?

–হুম বল।আমার তো কিছুই হয়নি।

–বলতো আমি কি বললাম?

–কি বলেছিস তুই?

–তার মানে তুই কিছুই শুনিসনি?(কাঁদো কাঁদো মুখ করে)

–সরি জানু।আর এমন হবে না।

–ইটস ওকে।এবার বল কি ভাবছিলি?

–একটা বিষয় কি তুই খেয়াল করেছিস?

–তুই আমাকে বলেছিস আমার মেডিসিন এসএন এর কাছে ছিলো,ইয়ানের কাছে ছিলো না।কিন্তু আমাকে মেডিসিনগুলো শুভ্র দিয়েছেন।

–কি বলছিস তুই?

–হুম রে মুক্তা।কিছুতো একটা কাহিনি আছে।

–হতেও তো পারে মিস্টার এসএন মিস্টার শুভ্রকে চিনেন।

–হুম হতে পারে,কিন্তু যদি মতো মিস্টার এসএন শুভ্রকে চিনেন তাহলে কাল যখন আমি উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম আমার মেডিসিন মিস্টার শুভ্রর কাছে কি করে এলো তিনি আমাকে কিছু না বলেই চলে গেলেন। আমি এতো বার ডাকার পরেও সারা দেননি।

–আমার তো সব গুলিয়ে যাচ্ছে মেঘ।

–আরেকটা জিনিস হয়েছে?

–কি?

–কালকে রাতে আমি শুভ্রকে….

পুরো কথাটা বলার আগেই মেঘের ফোনে একটা মেসেজ আসে।মেঘ ফোনটা বের করে দেখে আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে।মেসেজ দেখে মেঘের হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেলো।মেঘের চোখ পানিতে ছলছল করছে।হঠাৎ এমন হওয়ায় অবাক হয়ে যায় মুক্তা।মেঘকে বলে উঠে,

–এই মেঘু কি হয়েছে?ফোন ফেলে দিলি কেনো?কি মেসেজ এসেছে?

মেঘ মুক্তার কথা শুনে কিছুই বলছে না।মুক্তা মেঘের ফোন নিয়ে মেসেজটা দেখে অবাক হয়ে যায়।একটা ছবি পাঠানো হয়েছে।ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে শুভ্রের বুকে মাথা রেখে বসে আছে মেঘ।মুক্তা বললো,

–মেঘ এই ছবি,এটাতে তুই আর শুভ্র।তুই কি মিস্টার শুভ্রের সাথে রিলেশনে আছিস?কি রে মেঘ?(মেঘকে ধাক্কা দিয়ে)

–মুক্তা আমি আর মিস্টার শুভ্র কোনো রিলেশনে নেই।আমি জানি না এটা কিভাবে হলো।কে এই ছবি দিলো।

–মেঘু ভাব তুই কি মিস্টার শুভ্রের সাথে ছিলি?না থাকলে এই পিক কিভাবে আসবে?

–হ্যাঁ মনে পড়েছে।কালকে শুভ্র আমার বাসায় এসেছিলেন।উনার সাথে গল্প করতে করতে আমি একসময় ঘুমিয়ে যাই।ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি উনার বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছি।কিন্তু তখন তো কেউ ছিলো না।তাহলে এই ছবি কে তুললো?(কাঁদো কাঁদো গলায় বলে উঠলো)

–মেঘু চিন্তা করিস না।আগে আমাদের দেখতে হবে কে এই কাজটা করলো।

–হুম ঠিক বলেছিস।

তখনই মেঘের ফোনে কল আসে।মেঘ ফোন নিয়ে দেখে ওর মা কল দিয়েছে।মেঘ চোখ মুছে গলাটা ঠিক করে ফোনটা ধরে।

–হ্যালো আম্মু।

–মেঘ তুই কোথায়?

–আমি ভার্সিটিতে আম্মু।

–এখনি বাসায় আয়।

–কেনো আম্মু?কিছু হয়েছে?

–তোকে যা বললাম তাই কর।এখনই বাসায় আসবি তুই।

–আচ্ছা আম্মু আসছি।

মেঘ ফোন রেখে দেয়।মুক্তা মেঘকে জিজ্ঞাসাবাদ করে,

–আন্টি কি বললো মেঘু?

–বাসায় যেতে বললো।

–কেনো?

–জানি না।

–আচ্ছা চল যাই।

–ঠিক আছে চল।

মেঘ আর মুক্তা মেঘের বাসায় সামনে এসে দেখে বাসায় অনেক ভিড়।অনেক মানুষ এসেছে।তা দেখে মেঘ ভয় পেয়ে গেলো।হাজার প্রশ্ন এসে ভিড় জমিয়েছে মেঘের মাথায়।মেঘ ভাবতে লাগলো তার মায়ের কিছু হলো না তো।তখন মেঘের মা কেমন করে যেনো কথা বলছিলো।মেঘ আর মুক্তা তাড়াতাড়ি করে বাসার ভিতরে ঢুকে।বাসার ভিতরে গিয়ে দেখে মেঘের আম্মু সোফায় বসে আছে মাথায় হাত দিয়ে।ওর আম্মুকে সুস্থ দেখে জান ফিরে পায় মেঘ।পাশে তাকিয়ে দেখে কালকের সেই মহিলাটি বসা যে মেঘের বাসায় এসেছিলো।নাম তার মিসেস খান।মেঘ তার মায়ের সামনে গিয়ে বললো,

–আম্মু।

মেঘের ডাকে মেঘের মা ওর দিকে তাকায়।

–কি হয়েছে আম্মু?তোমার মুখ এরকম লাগছে কেনো?

–আমার কিছুই হয়নি।

–তাহলে এইভাবে ডেকে পাঠালে?আর বাসায় এতো মানুষ কেন?

–তোমাকে আমি সঠিক শিক্ষা দিতে পারিনি মেঘ।আমি ব্যর্থ।আমি ভালো মা হতে পারিনি।

–কি বলছো এসব তুমি আম্মু?কেন বলছো এসব?(কান্না করে)

–আমি মিথ্যে বলছি না মেঘ।

তারপর মেঘের মা মেঘকে ফোন থেকে সেই ছবিটা দেখায় যেটা মেঘের ফোনেও এসেছিল।শুভ্র আর মেঘের ছবি।সেটা দেখে মেঘ বলে,

–আম্মু তুমি আমাকে ভুল বুঝছো।একবার আমার কথাটা শুনো।এসব মিথ্যে। আমি এরকম কিছুই করিনি।

এটা শুনে মেঘের মা জোড়ে মেঘের গালে থাপ্পড় মারে।

চলবে…..