শুধু তুমি আমার পর্ব-২৩

0
656

#শুধু_তুমি_আমার
#পর্ব_২৩
#Fariba_Ahmed

মেঘ শুভ্রকে শার্ট পড়িয়ে দেয়।মেঘের খুব লজ্জা লাগছিলো।শুভ্র মেঘের লজ্জা মাখা মুখটা দেখছিলো।মেঘ লজ্জায় লাল হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,

–কি দেখছেন?

–তোমাকে।(আনমনে)

–মানে?

–না মানে কিছু না।

–আপনি কোথায় যাবেন?

–আর্ট কম্পিটিশনে।আজ হবে।

–আপনি সেখানে গিয়ে কি করবেন?ওওও….বুঝেছি,আপনি মিস্টার আর্টিস্ট এর সাথে আমার দেখা করাবেন তাই তো।আমি এক্ষুনি আসছি রেডি হয়ে।

–ঠিক আছে যাও।

মেঘ রেডি হতে চলে যায়।শুভ্র আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করতে থাকে তখন ইয়ান আসে।ইয়ান এসে বলে,

–শুভ্র আয় তোকে চেঞ্জ করিয়ে দেই।

–করাতে হবে না?

–কেন?

–আমাকে ভালো করে দেখ আমি রেডি।

–কিন্তু তুই একা একা,

–মেঘ হেল্প করেছে।

–ও আচ্ছা।আচ্ছা শুভ্র মেঘ শুধু হেল্প করেছে নাকি অন্য কিছু ও

–সাট আপ ইয়ান।

–জাস্ট কিডিং ইয়ার।

–কাজটা কমপ্লিট?

–হুম।

–আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

–ঠিক আছে।

–জিজু আসতে পারি?

শুভ্র আর ইয়ান পিছনে তাকিয়ে দেখে মুক্তা দাঁড়িয়ে আছে।

–হুম শালিকা এসো।

মুক্তা ইয়ানের দিকে তাকিয়ে লজ্জা মাখা একটা হাসি দিলো।

–কেমন আছেন জিজু?

–আগের থেকে ভালো।

–আপনাকে দেখতে আসলাম।মেঘ কোথায়?

–মেঘ রেডি হতে গেছে।

–কোথাও যাবেন আপনারা?

–হুম,আর্ট কম্পিটিশনে।

–ওওহ।আমিও যাবো ভাবছিলাম।

ইয়ান বললো,

–তাহলে চলো সবাই মিলে যাবো।

এতক্ষণে মেঘ চলে এসেছে।মেঘ বললো,

–জিজু ঠিকই বলেছে মুক্তা।চল আমাদের সাথে।

–আচ্ছা।

মেঘ আর মুক্তা নিচে চলে যায়।শুভ্র আর ইয়ান বেরুতে যাবে তখন শুভ্রের ফোন্র কল আসে।শুভ্র ফোন রিসিভ করে।

–হ্যালো মিস্টার এসএন কেমন আছেন আপনি?

–আমি ভালো আছি মিস্টার রাহুল।

–শুনলাম আপনার উপর নাকি অ্যাটাক হয়েছে?

–হুম।

–কে করেছে এমন একটা খারাপ কাজ?

–জানি না।এখনো জানতে পারিনি।

–আপনার জন্য আমার কষ্ট হচ্ছে মিস্টার এসএন।

–কেনো?

–আপনার ডান হাতে যেভাবে আঘাত করা হয়েছে আপনি আজকে আর্ট কীভাবে করবেন?

–আপনি কিভাবে জানলেন আমার ডান হাতে আঘাত করা হয়েছে?

–ইয়ে মানে ওই তো হসপিটালে গিয়েছিলাম আপনাকে দেখতে,তখন ডাক্তার বললো।

–আমি কিভাবে আর্ট করবো সেটা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না।আপনি ভাবুন আজকে আপনি বাঁচবেন কীভাবে?

–মানে?

–কিছু না।জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।

–কি বলতে চাইছেন আপনি?

–নাথিং।বি রেডি।তাহলে দেখা হচ্ছে আজ।

–ইয়াহ।

–বাই মিস্টার রাহুল।

–বাই।

ইয়ান জিজ্ঞাসা করলো,

–রাহুল কেনো ফোন করেছিলো?

–আমার খোঁজ নিতে।আমার ধারণাই ঠিক।আমাকে আঘাত রাহুলই করেছিলো।

–কি করবি এখন?

–যা করার আর্ট কম্পিটিশনেই করবো।

–ঠিক আছে চল।

–হুম।

শুভ্র আর রাহুল নিচে গিয়ে দেখে মেঘ আর মুক্তা গাড়িতে বসে আছে।মেঘ এতক্ষণ মুক্তাকে বলছিলো আজকে ও ওর ভালোবাসা মিস্টার আর্টিস্টকে দেখতে পারবে।আজ মেঘ খুব খুশি।ইয়ান আর শুভ্র এসে সামনে বসে।ইয়ান গাড়ি ড্রাইভ করে।কিছুক্ষণ পরেই ওরা আর্ট কম্পিটিশনের ওইখানে পৌঁছে যায়।শুভ্র বলে,

–মেঘ তুমি,মুক্তা আর ইয়ান ভিতরে যাও।আমি একটু পরে আসছি।

–কোথায় যাবেন?

–আমার একটা কাজ আছে।

–না আপনার কোথাও যাওয়ার দরকার নেই।আর এখানে রাহুলও আসবে।

–ডোন্ট ওরি। আমি আমার বডিগার্ডকে সাথে করে নিয়ে যাবো।

–কিন্তু,

–আর কোনো কথা নয়।যাও তোমরা।

–ঠিক আছে।

মেঘ,মুক্তা আর ইয়ান চলে যায়।ওরা গিয়ে বসার জায়গায় বসে পড়ে।শুভ্র গাড়িতেই নিজের বেশ পাল্টিয়ে ফেলে।এসএন সেজে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে।

রাহুল আর্ট করার জায়গায় বসে ছিলো।শুভ্র সোজা সেখানে চলে যায়।শুভ্রকে দেখে ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা খায় রাহুল।বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়ে।শুভ্রকে দেখে বলে,

–আপনি এখানে মিস্টার এসএন?

–হুম।আমার তো আসার কথাই ছিলো।কিন্তু আপনি আমাকে দেখে ঘাবড়ে গেলেন কেন?

–না কিছু না।আপনার হাতে তো ব্যাথা আপনি আর্ট করবেন কিভাবে?

–সেটা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না।

–হুম।

–বসুন।কিছুক্ষণ পরেই তো কম্পিটিশন শুরু হয়ে যাবে।

–হ্যাঁ বসছি।

রাহুল বসে বসে ভাবতে থাকে শুভ্রের এখানে আসার কারণ কি।ভয় পেতে থাকে।পরো ক্ষণ এ আবার ভাবে যে শুভ্রের তো হাতে ব্যাথা,শুভ্র কোনোভাবেই জিততে পারবে না।

মেঘ সব প্রতিযোগীদের দেখে যাচ্ছে।তার চোখ দুটো শুধু মিস্টার আর্টিস্টকে খুঁজছে।হঠাৎ মেঘের চোখ যায় শুভ্রের দিকে।শুভ্রকে কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ করতে দেখে অবাক হয়ে যায় মেঘ।বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।ইয়ানকে জিজ্ঞাসা করে,

–জিজু মিস্টার শুভ্র ওখানে কি করছেন?এসএন সেজে কেন গিয়েছেন?

–আরেকটু অপেক্ষা করো মেঘ।তুমি তোমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে।

–ঠিক আছে।

আর্ট কম্পিটিশন শুরু হয়ে গেছে।প্রতিযোগীদের মাঝে সাদা কাপড় দিয়ে দেওয়া হয়েছে যাতে কেউ কারো আর্ট না দেখতে পারে।শুভ্র নিজের মতো আর্ট করেই চলেছে।আর রাহুল তো চুপ করে বসে আছে।কিন্তু তাকে তো বসে থাকলে চলবে না।কিছু একটা হলেও আর্ট করতে হবে।নয়তো সবাই বুঝে যাবে।রাহুল নিজের মতো কিছু আর্ট করতে থাকে।মেঘ এখনো তার মিস্টার আর্টিস্টকে খুঁজে যাচ্ছে।শুভ্র তাকে বলেছিলো মিস্টার আর্টিস্ট আসবে।কিন্তু মেঘ যাকেই দেখছে তাকে দেখে মেঘের মন সায় দিচ্ছে না।তার মন বলছে না যে এদের মধ্যে কেউ তার মিস্টার আর্টিস্ট।কিন্তু শুভ্রকে দেখে মেঘের ভালো লাগা কাজ করছে।মেঘ তার মিস্টার আর্টিস্টকে খুঁজে না পেয়ে চুপ করে বসে থাকে।সে আসলে শুভ্র অবশ্যই তার সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দিবে।

আর এদিকে মুক্তা ইয়ানকে খুঁজে যাচ্ছে।মুক্তার অবাধ্য চোখ দুটি ইয়ানকে খুঁজে চলেছে কিন্তু পাচ্ছে না।মুক্তার খুব রাগ হচ্ছে ইয়ানের উপর।মুক্তা ভেবে চলেছে লোকটা এমন কেন?তাকে বসে থাকতে বলে কোথায় চলে গেলো আর আসার নাম নেই।ইয়ান তাকে বলেছিলো একটু পরেই ফিরে আসবে কিন্তু এখনো আসছে না।একটা চাপা অভিমান কাজ করছে ইয়ানের উপর মুক্তার।

সব মানুষের ধারণা রাহুল খানই এই কম্পিটিশনে ফার্স্ট হবে।সবাই রাহুল খান এর পক্ষে।সব ছেলে মেয়েরা বলাবলি করছে রাহুল খান এই কম্পিটিশন জিতবে।মেঘের এসব বিরক্তিকর লাগছে।রাহুল খান কখনোই এই কম্পিটিশনে জয়ী হতে পারবে না।

কিছুক্ষণ পর সবার ছবি আঁকা শেষ হয়।শুভ্র মেঘের কাছে চলে আসে।শুভ্রকে দেখে মেঘ বলে,

–মিস্টার শুভ্র আপনি ওখানে এসএন সেজে কেন গেলেন?আর্ট কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ করলেন কেন?আচ্ছা মিস্টার আর্টিস্ট কোথায়?আপনি তো বলেছিলেন উনি আসবেন,তাহলে কোথায় উনি?

–মেঘ তুমি তোমার মিস্টার আর্টিস্টকে খুঁজে পাওনি?

–নাহ।এদের মধ্যে যাকেই দেখেছি তাকে আমার মিস্টার আর্টিস্ট মনে হয় নি।আমার মন সায় দেয়নি।

–মেঘ

–বলুন

–আমার দিকে তাকাও।

–হুম বলুন।

–সত্যিই কি এদের মধ্যে কাউকে তোমার মন বলেনি যে এটাই আমার মিস্টার আর্টিস্ট?

–মনে হয়েছে।

–কাকে?

–কাউকেই না।

আমার তো কেন জানি আপনাকেই আমার মিস্টার আর্টিস্ট মনে হচ্ছিলো।কিন্তু আপনি তো আর্ট পারেন না।আমার ভুল ধারণা এটা।(মনে মনে)

–তুমি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে মেঘ।একটু সবুর করো।তোমার মিস্টার আর্টিস্ট তোমার সামনেই আছে মেঘ।তোমার খুব কাছে।তোমার আশেপাশেই।তাকে তুমি দেখছোও।তাকে তুমি খুব কাছে থেকেও দেখেছো।তোমার মনও হয়তো বলেছে যে এটাই আমার মিস্টার আর্টিস্ট, আমার ভালোবাসা।কিন্তু তোমার ব্রেন বলেছে না এটা আমার মিস্টার আর্টিস্ট নয়।বুঝেছো আমার মায়াবিনী?

শুভ্রের কথা শুনে মেঘের ভিতরে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে।কি বলছে এসব শুভ্র?শুভ্রের কথাগুলোও কেমন অন্যরকম ছিলো।নেশা লাগানো আর ভালোবাসা ভরা ছিলো।উনি আমাকে মায়াবিনী কেন বললেন?উনার মায়াবিনী তো অন্য কেউ।যতবার আমি মায়াবিনী কথাটা শুনি আমার অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে।খুব ভালো লাগে।কিন্তু কেন?

–নিজের ছোট ব্রেনকে এতো চাপ দিও না মায়াবিনী।বললাম তো সবুর করো সব জানতে পারবে।আমি আসছি।

বলে শুভ্র চলে যায়।মেঘ শুভ্রের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।মুক্তা এসে মেঘকে ডাক দেয়।মুক্তার ডাকে মেঘের হুশ ফিরে।

চলবে…..