শুধু তুমি আমার পর্ব-২৪

0
474

#শুধু_তুমি_আমার
#পর্ব_২৪
#Fariba_Ahmed

–কি রে মেঘু,কি হয়েছে?

–কিছু না।

–জিজু কি বললো?কোথায় গেলো?

–জানি না।

–আচ্ছা মেঘু ইয়ানকে দেখেছিস?

–কেন রে মুক্তা?

–এমনি।

–কুছ কুছ হোতা হে?

–এরকম কিছুই না।মার খাবি কিন্তু।

–একটু আগেই তো এখানে দেখেছিলাম।

–হুম।কোথায় যেন গেলো।

–চিন্তা করিস না চলে আসবে।আয় আমরা একটু ঘুরাঘুরি করি।

–চল।আচ্ছা মেঘু এদের মধ্যে মিস্টার আর্টিস্ট কে তুই জানিস?

–না।শুভ্রকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম উনি বললো সবুর করো।

–তোর কি কাউকেই মনে হয়নি যে এটা তোর মিস্টার আর্টিস্ট হতে পারে?

–নাহ।

–জানিস মিস্টার এসএন কে দেখলাম।আর্ট কম্পিটিশনে উনিও নাম দিয়েছেন দেখি।

–উনি শুধু এসএন নন।উনার আসল নাম শুভ্র।

–শুভ্র মানে?

তারপর মেঘ মুক্তাকে সব খুলে বললো।সব শুনে মুক্তা অনেক অবাক হয়ে গেলো।

–কি বলছিস এসব তুই?

হুম রে।আমিও প্রথমে অবাক হয়েছিলাম।এসব বাদ দে।একটু পর আমি আমার মিস্টার আর্টিস্টকে দেখতে পারবো।

–আমারও অনেক ভালো লাগছে যে শুভ্র তোকে তোর মিস্টার আর্টিস্ট এর সাথে দেখা করিয়ে দিবে।

–হুম।
______
শুভ্র ইয়ানের কাছে চলে গেছে।তাদের প্লান অনুযায়ী সব কিছু ঠিক আছে কিনা তা দেখতে গেছে।শুভ্র ইয়ানকে জিজ্ঞাসা করলো,

–সব রেডি তো?

–হুম শুভ্র।আমি সব রেডি করে রেখেছি।

–ঠিক আছে।চল তাহলে।

–হুম।
_____

–ড্যাড প্লান মোতাবেক সব কিছু করেছো?

–হুম রাহুল।ডোন্ট ওরি।এই কম্পিটিশন তো তুমিই জিতবে।আর এসব ছবি থেকে যা যা টাকা পাওয়া যাবে সব আমাদের হবে।আমরা অনেক বড়লোক হয়ে যাবো।

–হুম ড্যাড।কিন্তু ওই এসএন এর কি করবো?ওকে আঘাত করার পরেও ও আর্ট কম্পিটিশনে এসেছে।ডান হাত দিয়ে ছবি আকা তো দূরের কথা পেন্সিলও ধরতে পারবে না।

–ওটা নিয়ে চিন্তা করো না।তুমিই জিতবে রাহুল।ওই এসএন কিছুই করতে পারবে না।এখন তুমি ওখানে যাও।একটু পরেই ফলাফল ঘোষণা করবে।

–ওকে ড্যাড।

ইয়ান মেঘ আর মুক্তার কাছে চলে যায়।মুক্তা ইয়ানকে দেখে ভেঙচি কাটে।ইয়ান ইশারায় কানে ধরে সরি বলে।তাও মুক্তার অভিমান গলে না।

ইয়ানের কাজ থাকায় দেরি হয়ে যায়।মুক্তার কথা একদম মাথা থেকে বের হয়ে গিয়েছিলো।তার ভালোবাসার মানুষ যে তার উপর অনেক অভিমান করেছে তা বুঝতে বাকি রইলো না আর।

সেই প্রত্যাশিত মুহূর্তটা এসে গেছে যার জন্য এতদিন ধরে সবাই অপেক্ষা করেছে।এখন প্রতিযোগীদের মধ্যে কে বিজয়ী হয়েছে তা জানার জন্য সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।সবাই রাহুল রাহুল বলে চিৎকার করছে।তা দেখে রাহুলের মুখে বাঁকা হাসি।রাহুল এসএন এর দিকে তাকিয়ে হাসলো।তার ধারণা এসএন কখনোই এই কম্পিটিশনে জিততে পারবে না।এসএন রাহুলকে নিজের দিকে তাকাতে দেখে রহস্যময় হাসি দিলো।তা দেখে রাহুল কিছুটা ভ্রু কুঁচকে তাকালো।মেঘ খুব আনন্দের সাথে বসে আছে।যাকে দেখার জন্য সে এতো ব্যকুল,যাকে এতো ভালোবাসে না দেখেই আজ তাকে দেখবে মেঘ।মেঘের বিশ্বাস যে তার মিস্টার আর্টিস্ট এই প্রতিযোগীতায় প্রথম হবে।জিতবে সে।

এখনই প্রতিযোগীতায় বিজয়ীদের নাম বলা হলো।কিন্তু যার নাম শোনা গেলো,যে বিজয়ী হলো তার নাম শুনে সবাই অবাক।তাদের ধারণা ছিলো রাহুল যে নিজেকে মিস্টার আর্টিস্ট দাবি করেছে সে এই কম্পিটিশনে জিতবে।কিন্তু কম্পিটিশনে বিজয়ী হয়েছে মিস্টার এসএন।

রাহুল বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।আরিফ খানও বিশ্বাস করতে পারছে না।মিস্টার এসএন কি করে বিজয়ী হতে পারে।সবচেয়ে বড় কথা উনার ডান হাতে আঘাত এখনো রয়েছে।রাহুল আর আরিফ খান অনেক ঘাবড়ে গিয়েছে।

মেঘ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে শুভ্রের দিকে।মেঘের মনে হাজারো প্রশ্নেরা ভিড় জমিয়েছে।শুভ্রও তাকিয়ে আছে তার মায়াবিনীর দিকে।তাকিয়ে দেখলো তার মায়াবিনী তার দিকেই তাকিয়ে আছে।মেঘ মনে মনে ভাবছে,

–মিস্টার শুভ্র কম্পিটিশন কিভাবে জিতলো?উনি জিততে পারেন না।আমার মিস্টার আর্টিস্ট তো এখানে আছে।আর শুভ্রও তো বলেছিলেন আমার মিস্টার আর্টিস্টই এই কম্পিটিশন জিতবে।তার মানে কি শুভ্রই আমার….না না এ কি করে হতে পারে?

মুক্তা মেঘকে জিজ্ঞাসা করলো,

–মেঘ এসব কি হচ্ছে?শুভ্র কম্পিটিশনে জিতলো।শুভ্র কি আর্টিস্ট?

–আমি জানি না মুক্তা।আমি কিছুই জানি না।শুভ্র তো আমাকে কখনো বলেননি উনি ছবি আঁকতে পারে।

মুক্তা ইয়ানকে জিজ্ঞাসা করলো,

–ইয়ান আপনি কিছু জানেন?শুভ্র কিভাবে?

–শুভ্র একজন আর্টিস্ট,খুব ভালো ছবি আঁকে।আমি জানতাম আমার ফ্রেন্ডই জিতবে।আরেকটু ধৈর্য ধরো।শুভ্রই সব ক্লিয়ার করে দিবে।

সেকেন্ড আর থার্ড যে হয়েছে তার মধ্যেও রাহুলের নাম নেই।রাহুল খুব ভয় পেয়ে গেলো।ও ওর ড্যাডের দিকে তাকালো।ইশারায় জিজ্ঞাসা করলো এসব কি হলো।আরিফ খানও বললো সে কিছু জানে না।

সবাই কানাকানি করছে যে এখানে দূর্নীতি করা হয়েছে।কারণ সবার ধারণা রাহুলই মিস্টার আর্টিস্ট। শুভ্র জিতেছে তাই তাকে কিছু বলার জন্য আবেদন করা হলো।শুভ্র বললো,

–আপনারা অনেকেই বিশ্বাস করছেন না যে আমি এই কম্পিটিশনটা জিতেছি।কারণ আপনাদের সবার ধারণা রাহুল খানের জয়ী হওয়ার কথা।কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে মিস্টার আর্টিস্ট রাহুল নন।উনি ইচ্ছে করে মিস্টার আর্টিস্ট এর আঁকা ছবিগুলো নিজের বলে দাবি করেছে।কারণ উনার একটাই উদ্দেশ্য এই ছবি থেকে যা টাকা পাওয়া যা তা নিজে ভোগ করা।

–এটা মিথ্যে কথা।আমার এরকম কোনো উদ্দেশ্য নেই।আপনি মিথ্যে বলছেন।আমিই মিস্টার আর্টিস্ট।আপনি নিজে এই টাকা গুলো পাওয়ার জন্য এসব বলছেন।আর আপনার ডান হাতে ব্যান্ডেজ করা।আপনি ছবি কি করে আঁকলেন মিস্টার এসএন?

–আমার কাছে সব প্রমাণ আছে মিস্টার রাহুল।আমি প্রমাণ করে দেবো যে কে মিথ্যে বলছে।

এই কথা শুনে সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।একজন রিপোর্টার বললো,

–তাহলে আসল আর্টিস্ট কে?আপনি কে?আপনি এতো কিছু কি করে জানলেন?আপনি যেহেতু জিতেছেন তাহলে কি আপনিই কি মিস্টার আর্টিস্ট।আর রাহুল খান বললো আপনার ডান হাতে আঘাত রয়েছে।তাহলে কীভাবে ছবি আঁকলেন আপনি?

–আপনাদের সব প্রশ্নের উত্তর দিবো আমি।হ্যাঁ আমিই মিস্টার আর্টিস্ট।আমি এতোদিন ছদ্দবেশে ছবি এঁকেছি।আমার আঁকা ছবি থেকে যেসব টাকা পাওয়া যেত তা বিভিন্ন অনাথাশ্রম আর বৃদ্ধাশ্রমে দেওয়া হতো।আমি কখনো সামনে আসতেও চাইনি।তবে যখন শুনলাম মিস্টার রাহুল খান নিজেকে এসব ছবির মালিক বলছে তখন আমি সুইজারল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে চলে আসি।খোঁজ নিয়ে জানতে পারি মিস্টার রাহুল খান টাকার জন্য এসব করছেন।আমি উনাকে মানাও করেছিলাম এসব করতে কিন্তু উনি শুনেননি।আমি যেন এই কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ না করতে পারি তাই দুইদিন আগে উনি আমার উপর অ্যাটাক করেছিলেন।আমার ডান হাতে ছুঁড়ি দিয়ে আঘাত করেছেন যেন আমি ছবি আঁকতে না পারি।কিন্তু মিস্টার রাহুল খান একটা ছোট্ট ভুল করে ফেলেছেন।উনার ভুলটা হলো উনি না জেনেই আমার হাতে আঘাত করেছেন।আমি ডান হাতে নয় বাম হাতে আর্ট করি।আমি দুই হাতেই লিখতে পারি।উনার সামনে আমি একবার ডান হাত দিয়ে কাগজে সাইন করেছিলাম।তাই হয়তো উনি ভেবেছেন আমি ডান হাতেই আর্ট করি এজন্য আমার ডান হাতেই আঘাত করেছেন।

আমি আপনাদের রাহুল খানের আঁকা ছবি দেখাচ্ছি।এই দেখুন উনার আঁকা ছবি।শুধু পেন্সিল দিয়ে দাগিয়েছেন।উনার সাথে উনার বাবাও জড়িত,আরিফ খান।রাহুল খান আপনি হয়তো ভাবছেন এসব কি করে হলো?আপনাদের করা প্লান কি করে ভেস্তে গেলো?

তাহলে শুনুন।যখন আপনার বাবা আপনার আঁকা ছবি সরিয়ে আমার আঁকা মানে মিস্টার আর্টিস্ট এর আঁকা অন্য একটা ছবি রাখতে গিয়েছিলো সেখানে আমার রাখা একজন লোক ছিল।আমি জানতাম আপনারা জেতার জন্য এরকম কিছু করবেন।তাই আগে থেকেই সতর্ক ছিলাম।আপনার বাবা মানে মিস্টার আরিফ খান ছবি পাল্টে যখন চলে গেলেন তখন আমার রাখা লোকটা আবার ছবি ঠিক করে দেয়।

শুভ্রের এসব কথা শুনে মিস্টার আরিফ খান আর রাহুল দুজনেই ভয় পেয়ে যায়।ঘামতে থাকে।এখন সবার কাছে সব পরিষ্কার।

ওখানে থাকা একজন রিপোর্টার বললো,

–এখন তো সবাই সব জেনে গেছে।রাহুল খানের চক্রান্তও সবার সামনে চলে এসেছে।আপনার আসল নাম,পরিচয়,আপনার চেহারা কি আমরা দেখতে,জানতে পারি?

–ইয়াহ অবশ্যই।আমি এতোদিন ছদ্দবেশে ছিলাম যাতে রাহুল খানের চক্রান্ত খুব সহজেই ধরতে পারি।আমার নাম শুভ্র,শুভ্রনীল চৌধুরী।বিখ্যাত বিজনেসম্যান সোভন চৌধুরীর ছেলে।

বলে মুখ থেকে মাস্কটা খুলে ফেললো।রাহুল আর আরিফ খান শুভ্রকে দেখে অবাক হয়ে গেলো।শুভ্রই যে এসএন তা তারা বুঝতেই পারেনি।রাহুল আর আরিফ খান একের পর এক ঝাটকা পেয়েই চলেছে।শুভ্রের বাবার নাম শুনে চমকে উটলো আরিফ খান।

শুভ্র আবার বললো,

–এখন আপনারাই ডিসাইড করুন রাহুল খান আর আরিফ খানের কি শাস্তি হওয়া উচিত।আমি এই কম্পিটিশনে জিতে যা টাকা পেয়েছি তা আমি সব অনাথ আশ্রম আর বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে দিবো।এই টাকার আমার কোনো প্রয়োজন নেই।আপনাদের সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।

বলে শুভ্র স্টেজ থেকে নেমে যায়।বিভিন্ন রিপোর্টার এসে শুভ্রের সাথে কথা বলতে থাকে।শুভ্রকে জিজ্ঞাসা করে,সে বিবাহিত নাকি?শুভ্র হ্যাঁ বলে।এটা শুনে হাজারো মেয়ের মন ভেঙে যায়।শুভ্র যে শুধু মেঘের স্বপ্নের রাজকুমার তা নয়।তবে মেঘ প্রচন্ড ভালোবাসে তার মিস্টার আর্টিস্টকে।শুভ্র মেঘকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিয়ে আসে।সবার সাথে মেঘের পরিচয় করিয়ে দেয়।সব মেয়েদেরই জেলাস ফিল হচ্ছে।মেঘকে তারা সহ্যই করতে পারছে না।

মেঘ এতো বড় কথা শুনে শকড হয়ে গেছে।মেঘের মিস্টার আর্টিস্ট তার এতো কাছে ছিলো তাও মেঘ বুঝতে পারলো না।বার বার তার মন বলেছে শুভ্রই হয়তো তার মিস্টার আর্টিস্ট কিন্তু মেঘ তাও চিনতে পারে নি।শুভ্র মেঘকে রেখে রাহুল খানের কাছে যায়।

–তো মিস্টার রাহুল খান কেমন লাগলো আমার সারপ্রাইজ?

–আপনি এটা একদম ঠিক করেননি মিস্টার এসএন ওরুফে মিস্টার শুভ্র।

–এটা তো কিছুই না।আপনাদের জন্য আরো অনেক কিছু অপেক্ষা করছে। বি রেডি।

বলে সানগ্লাসটা চোখে দিয়ে বাঁকা হেসে চলে গেলো শুভ্র।রাহুল শুভ্রকে আটকাতে গেলে বাঁধা দেয় আরিফ খান।মেঘকে যেখানে রেখে এসেছিলো সেখানে গিয়ে শুভ্র দেখলো মেঘ নেই।ইয়ান আর মুক্তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো মেঘ কোথায়।ওরাও বললো জানে না মেঘ কোথায় আছে।শুভ্র অনেক ভয় পেয়ে গেলো।ভাবতে লাগলো তার মায়াবিনী কোথায় গেলো?পেয়েও আবার হারিয়ে ফেললো না তো সে তার মায়াবিনীকে?

চলবে…..