শুধু তুমি আমার পর্ব-২৫

0
479

#শুধু_তুমি_আমার
#পর্ব_২৫
#Fariba_Ahmed

শুভ্র মেঘকে পাগলের মতো এদিক ওদিক খুঁজতে থাকে।কিন্তু পায় না।শুভ্র অনেক ভয় পেয়ে যায়।মুক্তা আর ইয়ানও শুভ্রকে খুঁজে যাচ্ছে।কোথাও পাচ্ছে না।শুভ্র সারা রাস্তা মেঘকে খুঁজেছে।এমন কোনো জায়গা নেই যে খোঁজা বাকি আছে।এমনকি মেঘের মায়ের কাছেও গিয়েছে শুভ্র মেঘকে খুঁজতে।কিন্তু সেখানেও মেঘ যায় নি।শুভ্রের এখন নিজেকে অনেক অসহায় মনে হচ্ছে।শুধু এক পলকের মধ্যে তার মায়াবিনী তার চোখের আড়ালে চলে গেলো।

–তুমি কোথায় গেলে মায়াবিনী?বারোটা বছর তুমি আমার থেকে দূরে ছিলে।হারিয়ে ফেলেছিলাম আমি তোমাকে।এতো বছর পর তোমাকে পেয়ে আমি আর হারিয়ে ফেলতে চাই না মায়াবিনী।ফিরে আসো আমার কাছে।তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।কেন না বলে চলে গেলে?

হঠাৎ শুভ্রের মনে হলো তার বাসায় খোঁজা হয়নি।শুভ্র গাড়ি চালিয়ে নিজের বাসায় চলে এলো।ঘরে গিয়ে দেখলো মেঘ ঘরে নেই।বারান্দাতেও নেই।পুরো বাড়ি খুঁজে ফেললো শুভ্র।মেঘের দেখা পেলো না।

শুভ্রের খেয়াল হলো ও বাগানটা খুঁজে দেখেনি।শুভ্রের মনে পড়লো মেঘের যখন মন খারাপ হতো তখন সে কাঠগোলাপ গাছের নিচে গিয়ে বসে থাকতো।শুভ্র তার বাগানের কাঠগোলাপ গাছের কাছে দৌঁড়ে গেলো।সেখানে গিয়ে দেখলো মেঘ সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।ছুটে গিয়ে মেঘকে জড়িয়ে ধরলো শুভ্র।আচমকা এমন হওয়ায় চমকে গেলো মেঘ।কি হলো সেটা বুঝতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো মেঘের।শুভ্র মেঘকে ছেড়ে দিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলো,

–তুমি কোথায় গিয়েছিলে মেঘ?জানো আমি কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।পাগলের মতো খুঁজেছি তোমাকে।এমনকি তোমার মায়ের কাছেও গিয়েছিলাম।তোমাকে খুঁজে না পেয়ে আমার পুরো দুনিয়াটা অন্ধকার লাগছিলো।আমার মনে হচ্ছিলো আমি তোমাকে পেয়েও আবার হারিয়ে ফেললাম।চিৎকার করে কান্না করতে মন চাচ্ছিলো।

শুভ্রের চিৎকার করে কথা বলায় মেঘ ভয় পেয়ে যায়।শুভ্র খেয়াল করে মেঘ খুব ভয় পেয়ে গেছে।শুভ্র আচমকা মেঘের ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট চেপে ধরে।মেঘ অনেক অবাক হয়ে যায়।মেঘ নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও শুভ্র ছাড়ে না।সে নিজের রাগ কমাতে ব্যস্ত।কিছুক্ষণ পর মেঘকে ছেড়ে দিয়ে মেঘের দুই গালে হাত রেখে কোমল কন্ঠে বললো,

–তুমি আমাকে না বলে কেন চলে এলে মায়াবিনী?জানো আমার মনে হচ্ছিলো তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেছো।খুব কষ্ট হচ্ছিল।আমাকে না বলে আর কখনো কোথাও যাবে না।খুব ভালোবাসি তোমাকে মায়াবিনী।খুব ভালোবাসি।

মেঘ শুভ্রের এসব কথা শুনে অবাক হচ্ছে।মেঘ ভাবতেও পারেনি শুভ্র তাকে এতোটা ভালোবাসে।তার জন্য এতো পাগল।শুভ্র নিজের মতো কথা বলেই চলেছে।মেঘ শুধু কথাগুলো শুনছে।শুভ্রের কথার মাঝেই মেঘ বলে উঠলো,

–মিস্টার আর্টিস্ট।

মেঘের এই কথা শুনে শুভ্র মেঘের দিকে তাকালো।মেঘ হাত বাড়িয়ে শুভ্রের গাল ছুঁলো।আজ মেঘ ভালো করে দেখছে তার মিস্টার আর্টিস্টকে।মন ভরে দেখছে।মেঘের চোখ বেয়ে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।মেঘ বললো,

–আপনিই তাহলে আমার মিস্টার আর্টিস্ট শুভ্র।

–হুম মায়াবিনী।আমিই তোমার মিস্টার আর্টিস্ট।তোমার ভালোবাসার মানুষ।যাকে না দেখেই তুমি এতো ভালোবেসেছো।যার জন্য তুমি শুভ্রকেও রিজেক্ট করেছে।

–এজন্যই যখন আমি আপনাকে বলেছিলাম আমি মিস্টার আর্টিস্টকে ভালোবাসি তখন আপনি অনেক সহজেই রাজি হয়ে গিয়েছিলেন।

–হুম মায়াবিনী।এখন চলো তোমাকে দিয়ে আসি।

–কোথায়?

–তুমি তো আমার সাথে থাকতে চাও না মেঘ।তাই তোমাকে দিয়ে আসবো।

মেঘ ছলছল চোখে শুভ্রের দিকে তাকালো।মেঘ ভাবছে তাহলে শুভ্র এতক্ষণ যা বললেন সব মিথ্যা।উনি তো আমায় ভালবাসেন।আমি তো উনাকে বলছিলাম আমি আমার মিস্টার আর্টিস্টকে ভালোবাসি।আর আমার মিস্টার আর্টিস্ট তো উনি।তাহলে উনি কেন আমাকে দিয়ে আসিতে চাইছেন?

–কি হলো মেঘ যাবে না?

–না।

–কেন?

–আমি আপনার সাথে থাকবো না মিস্টার শুভ্র।

মেঘের কথায় অবাক হয় শুভ্র আর কষ্টও পায়।সে তো তার মায়াবিনীর সাথে মজা করছিলো।

–মানে?

–আমি আমার মিস্টার আর্টিস্টকে ভালোবাসি আর তার সাথেই থাকতে চাই।

মেঘের কথা শুনে শুভ্রের ভুল ধারণা ভেঙে গেলো।তার মায়াবিনী তারই রয়েছে।শুভ্র মেঘকে জড়িয়ে ধরে বললো,

–ভালোবাসি মায়াবিনী।তুমি আমার শুধু আমার।মেঘ শুধু তার মিস্টার আর্টিস্ট এর।

মেঘও শুভ্রকে জড়িয়ে ধরলো।শুভ্র মেঘকে ছেড়ে দিয়ে গাছ থেকে একগুচ্ছ কাঠগোলাপ ফুল নিয়ে এলো।তারপর মেঘের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলে উঠলো,

–মায়াবিনী।ভালোবাসি।সেই ছোটবেলা থেকে শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।বারোটা বছর তোমার থেকে দূরে ছিলাম।প্রতিটা মুহুর্ত শুধু তোমাকেই চেয়েছি।মিস করেছি।আমি জানতাম তুমি আছো,তোমাকে একদিন ঠিক আমি খুঁজে পাবো।তোমাকে কতটা ভালোবাসি তা বলে বুঝাতে পারবো না।আমার ভালোবাসার গভীরতা অনেক।তোমাকে ভালোবাসি বলে অন্য কোনো মেয়েকে কখনো কাছে আসতে দেই নি।মেয়েদের থেকে সব সময় দূরে থাকতাম।সবাই বলতো তুমি হয়তো নেই।কিন্তু আমার বিশ্বাস ছিলো তুমি আছো।তুমি ছাড়া তোমার মিস্টার আর্টিস্ট এর কোনো অস্তিত্ব নেই মায়াবিনী।তোমাকে কতোটা ভালোবাসি ঠিক জানিনা।শুধু এইটুকু জানি,আমার মতো করে কেউ তোমাকে ভালোবাসবে না।

মায়াবিনী,

ঠিক সন্ধ্যে নামে যখন
নীল পথের পাড়ে
নীল কমলের সুঘ্রাণ ছড়ালে বালিকা
চলে যেতে গিয়েও থমকে দাঁড়ায় বিকেলের রঙ
আর আমার হাতের কাঠগোলাপেরা খোঁজে ভালোবাসা। (সংগ্রহিত)

ভালোবাসি মায়াবিনী।নিজের থেকেও বেশি।কথা দিচ্ছি মায়াবিনী কখনো তোমার চোখে পানি আসতে দিবো না।কখনো তোমাকে কষ্ট পেতে দিবো না।

মেঘ মুঘ হয়ে তাকিয়ে আছে শুভ্রের দিকে।শুভ্র যে তাকে খুব ভালোবাসে তা বুঝতে আর বাকি নেই মেঘের।মেঘ মনে মনে ভাবছে শুভ্র এসব কি বলছে?বারো বছর দূরে ছিলো মানে কি?আর আমাকে কেন মায়াবিনী বলে ডাকছে?মেঘকে তার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শুভ্র জিজ্ঞাসা করলো,

–মায়াবিনী,শুধু কি দাঁড়িয়ে থাকবে?ফুলগুলো নিবে না?আমার প্রশ্নের উত্তর দিবে না?

মেঘ শুভ্রের হাত থেকে কাঠগোলাপ ফুলগুলো নিলো।তারপর শুভ্রকে বললো,

–ধন্যবাদ মিস্টার আর্টিস্ট।(মুচকি হেসে)

–স্বাগতম আমার মায়াবিনী।আর আমার উত্তর?

–সবুর করুন মিস্টার আর্টিস্ট।আপনি তো নিজেই বলেন সবুরের ফল মিষ্টি হয়।

–আচ্ছা সবুর করবো।কিন্তু বেশি দিন নয়।আমার উত্তর খুব তাড়াতাড়ি চাই।

–হুম পেয়ে যাবেন।আমার কিছু প্রশ্ন আছে মিস্টার আর্টিস্ট।

–আমি জানি মায়াবিনী তোমার কি কি প্রশ্ন আছে।আস্তে আস্তে তোমার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে।
তুমি তো আমার আজকের আঁকা ছবিটা না দেখেই চলে এলে মায়াবিনী।একটা কথা বলো তুমি এভাবে কেন চলে এলে?

–আমি অনেক অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।নিজের উপর অনেক রাগ হচ্ছিলো।আপনি আমার এতো কাছে ছিলেন তারপরও আমি আপনাকে চিনতে পারিনি।আপনি অনেকবার আমাকে অন্যভাবে বলেও ছিলেন তাও আমি বুঝতে পারিনি।

–যাই হোক।এভাবে আর কখনো আমাকে না বলে আসবে না।আরেকটু হলে তো আমি মরেই যেতাম।

–না।এসব কি বলছেন।আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি কখনো আপনাকে না বলে কোথাও যাবো না।

–আসো তোমাকে আমি আমার আঁকা ছবিটা দেখিয়ে আনি।

–চলুন।
_______
–ড্যাড এখন কি করবে?তুমি আমাকে কিছু বলতে কেন দিলে না?মিস্টার শুভ্র তো সব শেষ করে দিলো।আর ও যেন কি বলছিলো আমাদের জন্য আরো সারপ্রাইজ আছে।মানে কি?

–সোভন চৌধুরীর কথা কি ভুলে গেছো রাহুল?ছোটবেলার কথা কি ভুলে গেছো?

–মানে শুভ্র ওই শুভ্র।

–হ্যাঁ। ওর বাবার নাম শুনে আমি বুঝতে পেরেছি।শুভ্র আমাদের থেকে প্রতিশোধ নিতেই এসেছে।আমার আগেই বোঝা উচিত ছিলো।এই ছবি গুলো দেখে আমি বুঝতেই পারিনি যে এসব শুভ্রনীল চৌধুরীর আঁকা ছবি।ও প্রতিশোধ নিবেই রাহুল।আমাদের জন্য শুভ্র ওর ভালোবাসা হারিয়েছে।ওর মামা মামিকে হারিয়েছে।তোমাকে সাবধানে থাকতে হবে রাহুল।

–কিন্তু ড্যাড,

–কোনো কিন্তু নয় রাহুল।

–এই শুভ্রনীল চৌধুরী আমার পছন্দের জিনিস সব সময় নিয়ে যায়।ছোট থাকতে কে আমার কাছ থেকে নিয়ে গিয়েছিলো আর এখন মেঘকে।শুভ্রকে তো আমি ছাড়বো না।বারো বছর আগে যেভাবে কে শুভ্রের হতে দেই নি এখনো মেঘকে শুভ্রের হতে দেবো না।যা আমার হবে না তা শুভ্রকেও আমি পেতে দেবো না।

চলবে….