শুধু তোমারই জন্য পর্ব-০৯

0
750

#শুধু_তোমারই_জন্য
#পর্ব_৯
#Ornisha_Sathi

পরদিন সকালে কলেজ থেকে ফিরেই আনিতা ঘুমিয়ে পড়ে। কাল অত রাত অব্দি জেগে থাকার ফলেই আজকে এই অবস্থা। কলেজ থেকে এসে কোনোরকমে বোরখাটা খুলেই শুয়ে পড়ে ও। গোসলও করেনি। পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছে সে। আনিতার আম্মু বেশ কয়েকবার ডেকে গিয়েছে আনিতাকে কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। তাই তিনিও হাল ছেড়ে দিয়েছেন।

আসর আজানের সময় আনিতার ঘুম ভাঙে। ঘুম থেকে উঠে কাবার্ড থেকে জামা নিয়ে গোসল করতে চলে যায় ও। গোসল সেরে রুম থেকে বেরুতেই ওর আম্মু কিছুক্ষণ বকাবকি করে। এভাবে ঘুমানোর জন্য। আনিতা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে কিচেনে গিয়ে প্লেটে করে খাবার নিয়ে আবার রুমে চলে যায়।

খাওয়া শেষে আনিতা অনলাইনে গিয়ে দেখে আদৃত আজকে একবারের জন্যও অনলাইনে আসে নি। আনিতার মন কিছুটা খারাপ হয়ে যায়। সেই যে কলেজ থাকা অবস্থায় একবার ফোন করেছিলো আদৃত। তাও বেশি কথা হয়নি একটু কথা হয়েছিলো। কলেজে ছিলো বলে বেশি কথা বলল না। বলল বাসায় আসার পর কথা বলবে। অথচ দেখো অনলাইনে আসেনি। আর না একটা ফোন/ম্যাসেজ করেছে।

আধ ঘন্টা পর আনিতা আবার অনলাইনে যেতেই দেখে আদৃতকে অনলাইনে দেখাচ্ছে। আনিতা সাথে সাথেই ম্যাসেজ করে আদৃতকে। কিন্তু আদৃত সিন করছে না। বেশ কিছুক্ষণ পর আদৃত ম্যাসেজ সিন করলেও রিপ্লাই করছে না। তা দেখে আনিতা অনেকগুলো ম্যাসেজ করে। আদৃত সবগুলো ম্যাসেজই সিন করে রেখে দিচ্ছে কোনো রিপ্লাই করছে না। তা দেখে আনিতা মেসেঞ্জারে ফোন করলো আদৃতকে। কিন্তু এবারো ফলাফল শূন্য। রিসিভ করলো না ফোন উলটো কেটে দিলো।

আনিতার এবার বেশ রাগ লাগছে। ও আবারো ফোন করলো আদৃতকে। এবারে রিসিভ হলো। ফোন রিসিভ করতেই আনিতা রেগে বলে,

–“সমস্যা কি তোমার? ম্যাসেজ সিন করে রেখে দিচ্ছো আবার ফোনও রিসিভ করছো না। এসবের মানে কি আদৃত?”

–“আদৃত নেই।”

মেয়ের কন্ঠস্বর শুনে আনিতা অবাক হলো। তবে কি আদৃতের বাসার কেউ ফোন রিসিভ করেছে? মনে মনে একটু ভয়ও পেলো আনিতা৷ যদি ওর বাসার কেউ ফোন রিসিভ করে তাহলে কি একটা অবস্থা হবে। আনিতা একটু সাহস নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

–“কে বলছেন আপনি?”

–“আদৃতের গার্লফ্রেন্ড শবনম। বার বার ফোন ম্যাসেজ করছো কেন? আর বিরক্ত করবা না বলে দিচ্ছি।”

এই বলে শবনম লাইন কেটে দিলো। শবনমের কথাটা শুনে আনিতা চমকে উঠলো। তবে কি এই শবনম যা বলছে তাই সত্যি? আদৃত রাতুল ওরা দুজনেই আনিতাকে মিথ্যা বলল? এসব ভেবে আনিতার চোখ দিয়ে দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। আনিতা চোখের পানি মুছে নিয়ে ম্যাসেজ করে আবার,

–“আদৃতের আইডিতে আপনি কিভাবে?”

–“আদৃতের গার্লফ্রেন্ড আমি। ওর আইডি আমার কাছে থাকতেই পারে এটাই স্বাভাবিক। আদৃত পাসওয়ার্ড দিয়েছিলো আমাকে।”

–“মিথ্যে বলছেন আপনি। ও আপনাকে ভালোবাসে না।”

–“আদৃতের সাথে আমার চারমাস ধরে রিলেশন। আর তুমি বলছো ও আমাকে ভালোবাসে না? ভালো না বাসলে ওর আইডির পাসওয়ার্ড আমাকে দিলো কেন ও? অবশ্য গত তিন মাস ধরে একটু অবহেলা করছে আমাকে। আমার ম্যাসেজ সিন করছে না ফোন ধরছে না। তাই বাধ্য হয়েই ওর আইডিতে লগ ইন করেছি আমি।”

–“বিশ্বাস করি না আমি।”

–“তাতে আমার কিছু যায় আসে না। তুমি প্লিজ আদৃতকে আর ফোন ম্যাসেজ কিচ্ছু করবা না। তোমার জন্যই আদৃত আমাকে ইগনোর করছে। কথা বলতে চাইছে না আমার সাথে।”

কান্না করার ফলে আনিতা কিছুই বলতে পারছে না। শুধু শবনমের ম্যাসেজগুলো দেখে যাচ্ছে। আনিতার কোনো উত্তর না পেয়ে শবনম আবারো ম্যাসেজ করে,

–“নেক্সট টাইম যাতে তোমার আর কোনো কল/ম্যাসেজ কিচ্ছু না দেখি আমি। আদৃতকে আর একটা ম্যাসেজও করবে না তুমি। আদৃত আমাকে ভালোবাসে।”

এই বলে শবনম আর কোনো ম্যাসেজ করেনি। আনিতা কান্না করেই যাচ্ছে। আনিতা শুধু ভাবছে আদৃত ওকে মিথ্যা কীভাবে বলতে পারলো? এভাবে ঠকালো ওকে? এত ভালোবাসার প্রতিদান এভাবে দিলো আদৃত? আর রাতুল? রাতুলও মিথ্যে বলল? আনিতা আর কিচ্ছু ভাবতে পরছে না।

বা হাতের উপর ব্লেড চেপে ধরে বসে আছে আনিতা। ব্লেড চালাতে ঠিক সাহস করে উঠতে পারছে না আনিতা। চোখ বন্ধ করতেই আবারো শবনমের বলা কথা আর ম্যাসেজ গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছে। আনিতার গাল বেয়ে আবারো অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। চোখ বন্ধ রেখেই নিজের হাতে একের পর এক ব্লেড চালিয়ে যাচ্ছে আনিতা। কিছুক্ষণ বাদে আনিতা ব্লেড চালানো বন্ধ করে চোখ খুলল। আনিতা হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে কম হলেও দশ বারোটা পোঁচ হবে লেগেছে। কাটা দাগগুলো থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। চাদরে রক্তের দাগ লাগার আগেই আনিতা একটা খাতা এনে তার উপরে হাত রাখলো। ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত পরে সম্পূর্ণ পেজটা রক্তে লাল হয়ে গেলো। কেউ দেখে ফেলার আগেই আনিতা টিস্যু দিয়ে হাত মুছে নিলো। আর রক্তমাখা খাতাটা ওর কলেজ ব্যাগে রেখে দিলো।

প্রত্যকেটা কাটা দাগ ফুলে উঠেছে। হাতটা প্রচন্ডরকম ব্যাথা করছে। কিন্তু আনিতার কাছে শবনমের বলা কথার কাছে এই ব্যথা অতি তুচ্ছ মনে হচ্ছে।

রক্তাক্ত হাত নিয়েই ছাদে দাঁড়িয়ে আছে আনিতা। হাতের রক্তগুলো শুকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ বাদেই আরোহী এসে দাঁড়ালো আনিতার পাশে। আরোহী বুঝলো কোনো কারনে হয়তবা আনিতার মন খারাপ। আরোহী বলে,

–“কেন আসতে বললি বল।”

আনিতা কিছু না বলে আরোহীকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো। আনিতাকে কাঁদতে দেখে বেশ অবাক হলো আরোহী। আরোহী আনিতাকে ওর থেকে ছাড়িয়ে ভালো করে দাঁড় করিয়ে বলে,

–“কি হয়েছে? এভাবে কাঁদছিস কেন?”

আনিতা কাঁদতে কাঁদতে সব বলল আরোহীকে। কাল রাতে কি হয়েছিলো আর আজকে কি হয়েছে। আরোহী সবটা শুনে বলে,

–“আরেহ পাগল এইজন্য কাঁদার কি আছে? আগে আদৃতের সাথে কথা বল। জিজ্ঞেস কর ওকে সবটা। না আগেই কেঁদে কেটে অস্থির।”

এই বলে আরোহী আনিতার বা হাতটা চেপে ধরে। আরোহীর কাছে কেমন যেন লাগছে হাতটা। আনিতার হাত জোরে চেপে ধরাতে কেমন যেন ভেজা ভেজা লাগছে। আর আনিতাও হাত চেপে ধরাতে মৃদু চিৎকার করে উঠে। সাথে সাথেই আরোহী আনিতার হাত ছেড়ে দেয়। আনিতার হাত উঁচু করে ধরে দেখে আনিতার হাত অনেকটা কাটা। রক্তগুলো শুকিয়ে আছে। আরোহী জোরে চেপে ধরাতে সেই কাটা স্থান থেকেই রক্ত বেরোচ্ছে হালকা। আরোহী রেগে গিয়ে বলে,

–“পাগল হইছিস তুই? কি করেছিস এসব? চেনা নাই জানা নেই একটা ছেলের জন্য নিজের এই হাল করেছিস।”

–“ভালোবাসি ওকে আমি। আর মাথা ঠিক ছিলো না আমার। প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছিলো তাই করে ফেলেছি এসব।”

–“মানলাম ভালোবাসিস তো ওর কথা না শুনেই একটা অচেনা মেয়ের কথা শুনেই কেন এই হাল করলি? চিনিস না জানিস না কোত্থেকে একটা মেয়ে এসে বলল আমি আদৃতের গার্লফ্রেন্ড আর তুই সেটা বিশ্বাস করে নিলি। কেন আদৃতকে তো আর একবার জিজ্ঞেস করতে পারতি। বিশ্বাস নেই তোর ভালোবাসার উপর?”

–“নাহ বিশ্বাস করি আমি আদৃতকে। বললাম তো আমার মাথা ঠিক ছিলো না। শবনমের কথা শুনে নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি। প্রচন্ডরকমের কষ্ট হচ্ছিলো আমার। তাই এসব করে ফেলেছি।”

–“আর এই যে নিজেকে রক্তাক্ত করলি এতে কষ্ট হয়নি বুঝি?”

–“ওই কষ্টের থেকে এই হাত কাটার কষ্ট অতি সামান্য।”

–“যা খুশি কর। আর কিচ্ছু বলবো না।”

আনিতা কিছু বলল না। এখনো কাঁদছে। কেমন যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে আনিতার। আদৃতকে বড্ড বেশি ভালোবাসে কিনা। আনিতাকে চুপ থাকতে দেখে আরোহী আবারো বলে,

–“আদৃতের সাথে কথা হয়েছে আজ?”

–“কলেজে থাকতে ও নিজেই ফোন দিয়েছিলো। কয়েক মিনিট কথা বলেই রেখে দেয় কলেজে ছিলাম বলে। এরপর আর কথা হয়নি।”

–“ওকে ফোন দিয়ে কথা বলে দেখ। শুরুতেই শবনমের কথা জিজ্ঞেস করিস না। সত্যিই হয়তো শবনমের সাথে কোনো রিলেশন নেই ওর। পরে শবনমের কথা বলাতে রেগে যেতে পারে। তুই তো বলিস আদৃত খুব রাগী।”

আনিতা আবার অনলাইনে যায়। আদৃতের ইনবক্সে যেতেই দেখে ব্লক করা। আনিতার চোখ আবারো পানিতে চিকচিক করে উঠে। আরোহী কিছু বলবে তার আগেই আনিতার ফোন বেজে উঠে। আনিতা তাকিয়ে দেখে আদৃতের ফোন। আরোহী আনিতাকে বলে,

–“একদম স্বাভাবিক ভাবে কথা বল। কান্নাকাটি করিস না। সত্যিই হয়তো আদৃত এসব কিছুই জানে না।”

আনিতা আরোহীর কথায় সহমত প্রকাশ করে। ততক্ষণে আদৃতের ফোন কেটে গিয়েছে। আনিতা ব্যাক করার আগেই আদৃত আবারো ফোন দেয়। আনিতা ফোন রিসিভ করতেই আদৃত বলে,

–“বিজি আছো? প্রথম বারে রিসিভ করলে না যে।”

–“নাহ ব্যস্ত থাকবো কেন? রিসিভ করার আগেই কেটে গিয়েছে। বলো কি বলবে।”

–“কন্ঠ এমন শোনা যাচ্ছে কেন? আবার কাঁদছো তুমি?”

–“না নাহ কাঁদবো কেন?”

–“আনিতা সত্যিই শবনমের সাথে আমার কিচ্ছু নেই। আগে ফ্রেন্ডলি কথা বলতাম ম্যাসেজ করতাম কিন্তু তোমার সাথে রিলেশনে আসার পর আর কথা বলিনি ওর সাথে। তাই মেবি তোমাকে উল্টাপাল্টা বোঝাচ্ছে ও।”

–“আমি আর কিছু বলেছি তোমাকে?”

–“আইডিতে যেতে পারছি না আমি।”

–“কেন? কি হয়েছে?”

–“জানি না। একটু আগে আইডিতে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু যেতে পারলাম না। বারবার লগইন ফেইল্ড লেখাটা আসছে।”

–“আধ ঘন্টা আগেই ম্যাসেজ করেছিলাম তোমাকে। আর রিপ্লাই ও এসেছিলো।”

–“আমি তো ছিলাম না আর আমি রিপ্লাইও করিনি।”

–“জানি আমি। তুমি রিপ্লাই করোনি তোমার গার্লফ্রেন্ড শবনম রিপ্লাই করেছিলো।”

–“মানে কিসব বলছো তুমি? সত্যি শবনমের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।”

আনিতা একে একে সব কিছু বলল আদৃতকে। আদৃত সবটা শুনে রাগে ফুঁসছে। এই শবনম মেয়েটা পেয়েছে কি? কেন এভাবে ওর আনিতার মাঝে ঝামেলা ক্রিয়েট করার চেষ্টা করছে? আদৃত নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,

–“তুমি সত্যিই ভেবেই নিয়েছো শবনম আমার গার্লফ্রেন্ড? শবনমকে ভালোবাসি আমি তোমাকে ভালোবাসি না? ওর সাথে চার মাস ধরে আমার রিলেশন চলছে। ওকে আমি আমার আইডির পাসওয়ার্ড দিয়েছি। শবনম যা বলছে সব সত্যি আর আমি যা বলছি সব মিথ্যে তাই না?”

আদৃতের কথায় আনিতা ডুকরে কেঁদে উঠে। আর এদিকে আদৃতের মাথা রাগে গরম হচ্ছে। আনিতা কিছু না বলে কান্না করেই যাচ্ছে। আনিতার চুপ করে থাকাটা যেন আদৃতের জন্য ঠিক আগুনে ঘী ঢালার মতো ব্যাপার হলো। আদৃত কিছুটা চিৎকার করেই বলে,

–“শবনমের সব কথা বিশ্বাস করে নিয়েছো তুমি? এজন্যই বুঝি কাঁদছো? কথা বলছো না কেন ড্যাম ইট।”

আদৃতের চিৎকারে আনিতা কেঁপে উঠলো। আরোহী আনিতার হাত চেপে ধরে ওকে ইশারা করলো আদৃতের সাথে কথা বলার জন্য। আনিতা ভাঙা ভাঙা গলায় বলে,

–“আ্ আমি___”

–“আচ্ছা আনি তোমার মাথায় কি একটুও সেন্স নেই? আমার যদি সত্যি শবনমের সাথে রিলেশন থাকতো আমি যদি সত্যি ওকে ভালোবাসতাম তাহলে কি তোমার সাথে রিলেশন করতাম?

আদৃতের কথা শুনে আনিতা চোখের পানি মুছে নিলো। আনিতাকে চুপ থাকতে দেখে আদৃত আবারো বলে,

–“আচ্ছা মেনে নিলাম ওর সাথে আমার রিলেশন আছে ওকে আমি আমার আইডির পাসওয়ার্ড দিয়েছি। কিন্তু যদি সত্যিই ওকে আমি আমার আইডির পাসওয়ার্ড দিয়ে থাকি তাহলে সেই একই আইডি দিয়ে তোমার সাথেও আমি রিলেশন কেন করবো? আমি তো জানিই শবনমের কাছে আমার আইডির পাসওয়ার্ড আছে তাহলে সেই একই আইডি দিয়ে তোমার সাথে রিলেশন করার বোকামিটা আমি কেন করবো বলতে পারো?”

আনিতা এবারেও চুপ। আদৃত তো ভুল কিছু বলছে না। আদৃতের কথায় যুক্তি আছে। আনিতা এখনো কাঁদছে মাঝে মাঝে আবার নাক টানছে। আদৃত আবারো বলে,

–“আনি ট্রাস্ট মি। শবনমের সাথে আমার না ভালোবাসার সম্পর্ক আগে ছিলো আর না এখন আছে। শবনম আমার এফবি একাউন্ট হ্যাক করেছে। আমি যেতে পারছি না আমার আইডিতে। বিলিভ করো।”

–“হ্যাঁ বিশ্বাস করি আমি তোমাকে। কিন্তু একটা কথা আদৃত___”

–“হ্যাঁ বলো।”

–“কোনোদিন যদি জানতে পারি না তুমি আমাকে কোনোরকম মিথ্যে বলেছো। আমাকে ধোকা দিচ্ছো ঠকিয়েছো আমাকে সেদিনই তোমার লাইফে আমার শেষ দিন। তখন হাজার আকুতি মিনতি করেও আমাকে আর ফেরাতে পারবে না তুমি।”

–“আনিতা এ্ এমন কিচ্ছু হবে না প্ প্রমিস।”

আনিতা কিছু বলবে তার আগেই আরোহী আনিতার থেকে ফোনটা নিয়ে নেয়। আরোহী ফোন কানে নিয়ে বলে,

–“হ্যালো আদৃত ভাইয়া?”

–“কে বলছেন?”

–“আরোহী।”

–“ওহ আরোহী, হ্যাঁ বলো। কি খবর তোমার?”

–“আমার কথা ছাড়ুন। আনিতা কি করেছে জানেন আপনি?”

–“মানে।”

আনিতা বার বার ফোন নেওয়ার চেষ্টা করছে। আনিতা আদৃতকে হাত কাটার বিষয়টা জানাতে চাচ্ছে না। কিন্তু আরোহী কিছুতেই ফোন দিচ্ছে না। ওদিকে আদৃত হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে। আরোহী আবার ফোন কানে নিয়ে বলে,

–“ভাইয়া আনিতা ব্লেড দিয়ে ওর হাত কেটেছে অনেকটা। কাটা দাগগুলো ফুলে ফেঁপে উঠেছে। রক্ত শুকিয়ে আছে। কাটা স্থান এখনো ড্রেসিং করেনি ও।”

–“কি বলছো এসব। আনিতা হাত কেটেছে?”

–“আমাকেও দেখায়নি ভাইয়া। আমি ওর হাত ধরাতে দেখতে পেয়েছি। এখন আপনাকেও জানাতে চাইছিলো না কিছু। আমিই জোর করে বললাম।”

–“আচ্ছা আনি কি পাগল? এমন কেউ করে?”

–“পাগল না হলে কি এমন করে নাকি?”

–“আনিতার কাছে ফোনটা দাও তো।”

–“হুম দিচ্ছি।”

এই বলে আরোহী আনিতার দিকে ফোন এগিয়ে দিলো। আনিতা ফোন কানে নিয়ে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে রাগী গলায় আদৃত বলে,

–“আরোহী কি বলল এসব?”

–“ওর কথা বাদ দাও তো। বিশ্বাস করো না ওর কথা।”

–“একদম মিথ্যে বলবি না বলে দিলাম। আরোহী যা বলেছে তা কি সত্যি?”

–“না মানে___”

–“একদম মিথ্যে বলার চেষ্টা করবি না। আমি যা জানতে চেয়েছি তার উত্তর দে।”

আদৃত খুব রেগে গিয়েছে। আনিতা কিছু বলছে না ভয়ে। আনিতার চুপ করে থাকাতে আদৃত আরো বেশি রেগে যাচ্ছে। আদৃত রেগে চিৎকার করে বলে,

–“চুপ করে আছিস কেন? আন্সার মি আনি।”

–“হ্যাঁ হাত ক্ কেটেছি আ্ আমি।”

–“কেন কেটেছিস?”

–“মাথা ঠিক ছিলো না। কষ্ট হচ্ছিলো খুব।”

–“এখন হাত কেটে খুব ভালো লাগছে তাই না? সব কষ্ট লাঘব হয়ে গিয়েছে তাই না?”

–“আদৃত আমার কথাটা____”

–“তোর আর একটা কথাও আমি শুনবো না। আমার কথা শুনেছিলি তুই? আমাকে বিশ্বাস করেছিলি? আমাকে যদি বিশ্বাস করতি তাহলে শবনমের একার কথা শুনেই এভাবে নিজেকে রক্তাক্ত করতি না।”

–“আদৃত আমি__”

–“পাগল তুই? তোর মাথায় কি সমস্যা আছে? একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ কখনো এমন কাজ করতে পারে না আনি।”

–“ভালোবাসি____”

–“ভালোবাসা মাই ফুট। ভালোবাসিস বলেই কি নিজেকে রক্তাক্ত করতে হবে? কেন ভরসা নেই আমার উপর? বিশ্বাস নেই তোর ভালোবাসার উপর? আদৃতের উপর আস্থা নেই তোর তাই তো এই কাজ করেছিস।”

–“বোঝার চেষ্টা করো ওরকম সিচুয়েশনে___”

–“কি বোঝার চেষ্টা করবো আমি হ্যাঁ? তোকে কাছে পেলে এখন আমি জিন্দা___”

এইটুকু বলে আদৃত থেমে গেলো। ওদিকে আনিতা ডুকরে কাঁদছে। আনিতার আর সহ্য হচ্ছে না। আদৃতের বেশ রাগ লাগছে শবনমের উপরও আর আনিতার উপর। সাথে নিজের উপরও বেশ রাগ হচ্ছে আদৃতের। কেন যে ও শবনমের সাথে ফ্রেন্ডলি মিশেছিলো। ও যখন বুঝতে পেরেছিলো শবনম ওকে ভালোবাসে তখনই শবনমের সাথে সব যোগাযোগ যদি বন্ধ করে দিতো তাহলে আজকে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না। এসবই ভাবছে আদৃত।

আবারো আনিতার হাত কাটার বিষয়টা মাথায় আসতেই রেগে দেয়ালের সাথে জোরে পাঞ্চ মারে আদৃত। ওদিকে আনিতা কেঁদেই যাচ্ছে। আদৃত নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে বলে,

–“কাঁদবি না আনিতা। কাল রাতেও বলেছি আর এখনও বলছি তোর কান্না সহ্য হয় না আমার।”

–“আদৃত শোনো না__”

–“প্লিজ আনি। অনেক হয়েছে আর কতো? দেখ আমার মাথা এখন একদম ঠিক নেই। কখন কি বলে ফেলবো পরে তুই নিজেই কষ্ট পাবি। রাখছি আমি।”

–“আদৃত প্লিজ।”

–“আর ফোন দিবি না।”

–“আদৃত শোনো না___”

ততক্ষণে আদৃত ফোন কেটে দিয়েছে। আনিতা আবারো ফোন দিচ্ছে আদৃতকে কিন্তু আদৃত কেটে দিচ্ছে বারবার। আবারো ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো আনিতা। আনিতা আরোহীকে বলে,

–“কেন বললি ওকে কথাটা?”

–“আদৃতের জানা দরকার ছিলো। এখানে একটা মেয়ে ওকে ভালোবেসে কষ্টে মরে যাচ্ছে। নিজেকে রক্তাক্ত করছে এটা আদৃতের জানা দরকার। আর তাছাড়া এবার আদৃত না হয় কিছু করেনি ও কিচ্ছু জানে না। যা করেছে শবনম করেছে। নেক্সট টাইমও যাতে এমন কিছু না হয় সেজন্য জানানোটা উচিত ছিলো। ওর বুঝা উচিত তুই ওকে কতটা ভালোবাসি। নেক্সট এমন কিছু করার আগে ও একবার হলেও তোর কথা মাথায় আনবে। তোকে ভালোবেসে থাকলে তোর কথা ভেবে ও এমন কিচ্ছু করবে না যাতে তোর কষ্ট হয়।”

আনিতা চোখের পানিটা মুছে নিলো। আনিতা তো জানে আদৃত ওকে কতটা ভালোবাসে। ওর কষ্ট হয় এমন কিছু আদৃত করতেই পারে না। আনিতা আবারো আদৃতকে ফোন করে। বেশ কয়েকবার আদৃত ফোন কেটে দেয়। তারপরও আনিতা ফোন দিচ্ছে। শেষ বারে আদৃত ফোন রিসিভ করে ঝাঁজালো কন্ঠে বলে,

–“এক কথা একবারে কানে যায় না? বললাম না ফোন দিবি না আমাকে। ফোন কেটে দেওয়ার পরও কেন বারবার ফোন দিচ্ছিস? বুঝতে পারছিস না আমি তোর সাথে কথা বলতে চাইছি না।”

–“আদৃত রাগ করো না। আমার কথাটা__”

–“রাগ করিনি আমি। রাখছি। আর একটা ফোনও যাতে না আসে বলে দিলাম।”

এই বলে আদৃত আবারো ফোন কেটে দেয়। আনিতা বুঝলো আদৃত অনেক রেগে আছে। আদৃত প্রচন্ড রাগী একটা ছেলে। সহজে রাগে না কিন্তু একবার রেগে গেলে আর রক্ষা নেই। এর আগেও একবার এমন রাগ করেছিলো আদৃত। ওর রাগ ভাঙাতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়। কিন্তু আদৃত তো ফোনই তুলছে না। রাগটা ভাঙাবে কি করে? আনিতা আবারো ফোন দেয় এবারেও আদৃত কেটে দেয়। পরপর আনিতা আরো কয়েকবার ফোন করে কিন্তু আদৃত ততক্ষণে ওর নাম্বার ব্লক করে দিয়েছে। আনিতার চোখ বেয়ে আবারো দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। আরোহী আনিতার কাঁধে হাত রেখে বলে,

–“কাঁদিস না পাগলী। রাগ কমলেই দেখবি নাম্বার আনব্লক করেছে। রাগটা একটু কমতে দে আদৃত নিজেই তোকে ফোন করবে।”

আরোহীর কথায় আনিতা আর কিছু বলল না। শুকনো মুখে ক্ষানিকটা হাসলো শুধু। আনিতা জাস্ট আর নিতে পারছে না এসব। আদৃত যদি আর কখনো আনব্লক না করে? তাহলে আনিতা কিভাবে থাকবে আদৃতকে ছাড়া? ও তো সত্যিই আদৃতকে ভালোবাসে। ও কিছুতেই আদৃতকে হারাতে পারবে না। কিছুতেই না। কান্নাগুলো আবার সব দলা পাকিয়ে গলায় এসে আটকে আছে।



চলবে।

[ ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। আর গল্পটা কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন। হ্যাপি রিডিং🥰 ]