শুধু তোমারই জন্য পর্ব-০৮

0
710

#শুধু_তোমারই_জন্য
#পর্ব_৮
#Ornisha_Sathi

কেটে গিয়েছে আরো দুটো মাস। এর মাঝে আহিয়ানের সাথে আর আনিতার কথা হয়নি। সেদিন আহিয়ানের বলা লাস্ট কথাটা নিয়ে আনিতা অনেক ভেবেছে কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। সেই কথাটার মানে আনিতা খুঁজে পায়নি। আনিতা সেই কথার মানে আর খোঁজার চেষ্টাও করেনি।

আদৃতের সাথে আনিতা বেশ ভালোই সময় কাটাচ্ছে। রাগ কষ্ট অভিমান ঝগড়া সব মিলিয়ে ভালোই যাচ্ছে আদৃত আর আনিতার সম্পর্ক। রাতুল আর জেরিনও দুজন দুজনকে ভালোবাসে। কিছুদিন আগেই ওরা দুজনে সম্পর্কে জড়িয়েছে।

রাতুল আর আনিতার সম্পর্ক এখন আরো একধাপ এগিয়ে। আনিতা তো একেক সময় একেক নামে ডাকে রাতুলকে। কখনো ভাইয়া কখনো বন্ধু কখনো দেবর আবার কখনো জিজু। আর রাতুল আনিতাকে প্রায়শই হাফ গার্লফ্রেন্ড বলেই ডাকে।

আনিতা আর আদৃত ফোনে কথা বলছে। এগারোটা থেকে এখন অব্দি দুজনে ফোনে কথা বলেই যাচ্ছে। কথা বলার সময় আদৃত বারবার হাই তুলছে। আনিতা একবার কান থেকে ফোন নামিয়ে ঘড়ির টাইম দেখে নিলো। বারোটা বাজাতে আর ছয় মিনিট বাকি আছে। আনিতা আবার ফোন কানে তুলে বলল,

–“অনেক রাত হয়েছে ঘুমোবে না?”

–“হ্যাঁ ঘুমোবো তো।”

–“কখন?”

–“তোমার সাথে কথা বলা শেষ হলেই।”

–“আচ্ছা তাহলে ঘুমোও সকালে তো আবার অফিস আছে নাকি?”

–“অফিস তো আছেই। কথা বলি আরো সমস্যা নেই তো।”

–“একদম না। এমনিতেই অনেকটা রাত হয়েছে। এখন যদি আরো রাত জাগো পরে সকালে উঠতে পারবে না। ফলে অফিস মিস যাবে।”

–“তুমি ঘুমোবে কখন?”

–“আমিও ঘুমিয়ে যাবো।”

–“আচ্ছা তাহলে তাড়াতাড়ি ঘুমোবে কিন্তু।”

–“হুম।”

–“আনি_”

–“বলো।”

–“ভালোবাসি।”

–“আমিও খুব ভালোবাসি।”

–আচ্ছা তাহলে রাখছি।”

–“ওকে।”

এই বলে আনিতা নিজেই ফোন কেটে দিলো। সত্যি অনেকটা রাত হয়েছে। আদৃত যদি এখন না ঘুমোতো তাহলে সকালে সত্যি সত্যিই উঠতে পারতো না।

ঘুম আসছিলো না আনিতার। তাই অনলাইনে গেলো একবার। অনলাইনে গিয়ে একজন লেখিকার পেইজে গিয়ে আজকের আপলোড করা গল্পের পার্ট পড়তে লাগলো। গল্প পড়া শেষে যখন অনলাইন থেকে বের হয়ে যাবে তখনই একটা ম্যাসেজ আসে। আনিতা মেসেঞ্জারে গিয়ে দেখে “শবনম চৌধুরী” এই আইডি থেকে ম্যাসেজ করেছে ওক। এতরাতে একটা মেয়ে ওকে নক করায় ও কিছুটা অবাক হলো। আনিতা ম্যাসেজ সিন করে। সেখানে লিখা ছিলো,

“আপু তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো। বলা যাবে কি?”

ম্যাসেজটা দেখে আনিতা বেশ অবাক হলো। এতরাতে একটা মেয়ের ওর সাথে কি কথা থাকতে পারে? সেটাই ভাবছে আনিতা। আনিতা কৌতুহল বশত শবনমের ম্যাসেজ এর রিপ্লাই করে,

–“হ্যাঁ বলুন কি বলবেন।”

আনিতা ম্যাসেজ সেন্ড করার সাথে সাথেই শবনম ম্যাসেজ সিন করলো। সিন করার কয়েক মূহুর্তেই শবনম রিপ্লাই করে,

–“আদৃত কে চেনো তুমি?”

শবনমের মুখে আদৃতের নাম শুনে বেশ অবাক হলো আনিতা। শবনম আদৃতকে চিনে? কিন্তু কিভাবে? আর এতরাতে আনিতাকে ম্যাসেজ দিয়ে আদৃতের কথা কেন জিজ্ঞেস করছে ও? মনে মনে এসব ভাবছে আনিতা। ভাবনাটা মনের মাঝেই চেপে রেখে রিপ্লাই করলো আনিতা,

–” হ্যাঁ চিনি কেন বলুন তো?”

–“আপু একটা রিকুয়েষ্ট করবো?”

–“হ্যাঁ করুন।”

–“আপু আদৃত না বেশ কয়েকদিন ধরে আমার সাথে ভালোভাবে কথা বলছে না। ফোন দিলে ফোন রিসিভ করছে না। ম্যাসেজ এর রিপ্লাই করছে না।”

শবনমের ম্যাসেজ দেখে আনিতার এবার ভয় লাগতে শুরু করলো। অজানা ভয়! আদৃতকে হারানোর ভয়! আদৃতকে হারিয়ে ফেলার কথা চিন্তা করতেই আনিতার বুক কেঁপে উঠলো। আনিতার এসব ভাবনার মাঝেই শবনম আবারো ম্যাসেজ করে,

–“আপু তুমি একটু আদৃতকে বলবে আমার ফোন রিসিভ করতে আমার সাথে কথা বলতে।”

–“এসব আমাকে বলার কারন কি আপু?”

–“তুমি আদৃতের ফ্রেন্ড লিস্টে আছো তাই তোমাকে বলছি।”

–“কিন্তু আপু আদৃতের ফ্রেন্ড লিস্টে তো আরো অনেকেই আছে। তাদের রেখে আমাকেই কেন বলছেন?”

–“আমার মনে হলো তোমার আর আদৃতের মাঝে ভালো একটা সম্পর্ক আছে।”

–“এমন মনে হওয়ার কারন কি?”

–“তোমার আর আদৃতের পোস্ট একে অপরের পোস্টে কমেন্টস রিয়্যাক্ট এসব দেখলে যে কেউই বুঝবে তোমাদের দুজনের মাঝে ভালো একটা সম্পর্ক আছে।”

শবনমের কথা আনিতার কাছে বেশি একটা ভালো লাগলো না। আনিতার মনের মাঝে কেমন যেন একটা অজানা আশংকা হচ্ছে। আনিতা কাঁপা-কাঁপা হাতে রিপ্লাই করলো,

–“আচ্ছা আপু আদৃত কি হয় আপনার?”

–“বিএফ। ভালোবাসি আমরা দুজন দুজনকে।”

ম্যাসেজটা দেখে আনিতার বুকটা ধক করে উঠলো। কি বলে মেয়েটা? আদৃতের গার্লফ্রেন্ড ও? আদৃত ওকে ভালোবাসে? তাহলে আমি কে? এসব ভাবছে আনিতা। আনিতার হাত পা কাঁপছে। চোখ বেয়ে কয়েক ফোঁটা নোনাজল গড়িয়ে পড়লো। আনিতা আর ম্যাসেজ এর রিপ্লাই করলো না। এর মাঝে শবনম একটা পিক সেন্ড করেছে। আনিতা পিকে ক্লিক করে দেখে সেটা একটা স্ক্রিনশট। আদৃত আর শবনমের ম্যাসেজ এর স্ক্রিনশট পাঠিয়েছে ও। স্ক্রিনশট টাতে শবনম বলেছে,

–“আজকে সারা রাত কথা বলবো আমরা কেমন?”

–“আজকে না। এখন ঘুমোবো আমি। কালকে অফ ডে আছে। কাল সারা রাত তোমার সাথে কথা বলবো কেমন?

শবনমের ম্যাসেজ এর রিপ্লাই তে আদৃতের আইডি থেকে উপরের এই ম্যাসেজটা পাঠানো হয়েছে। আবার শবনম আদৃতের আইডির নিকনেইম “মাই লাভ” দিয়ে রেখেছে।

ওই ম্যাসেজ এর পর আর কোনো ম্যাসেজ আদৃত করেনি। শবনম অনেক ম্যাসেজ করেছে কিন্তু আদৃত সিন করে রেখে দিয়েছে। রিপ্লাই করেনি কোনো।

আনিতা স্ক্রিনশট টা দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। আনিতা এখন কাকে বিশ্বাস করবে? এই স্ক্রিনশট নাকি আদৃতকে? দু চোখ বেয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। কান্না করতে করতে আনিতার দম প্রায় বন্ধ হয়ে আসছে।

আনিতা আর শবনমের ম্যাসেজ এর রিপ্লাই করে নি। শবনম আরো দুটো ম্যাসেজ করেছে আনিতা সেগুলো সিন অব্দি করেনি। আনিতা রাতুলকে অনলাইনে দেখে মেসেঞ্জারে কল করলো। দু/তিন বার রিং হওয়ার পর রাতুল রিসিভ করে,

–“রাতুল কিছু কথা ছিলো।”

–“হ্যাঁ বলো কি বলবে।”

–“সত্যি কথা বলবে তো?”

–“আনিতা কিছু কি হয়েছে? কন্ঠ এমন শোনা যাচ্ছে কেন তোমার? ঠিক আছো তুমি?”

–“আগে বলো আমি যা জিজ্ঞেস করবো সত্যিটা বলবে।”

–“আচ্ছা বলবো।”

–“শবনম কে রাতুল? শবনমের সাথে কি আদৃতের রিলেশন আছে?”

–“এসব কি বলছো তুমি? মাথা ঠিক আছে? আর এভাবে কাঁদছো কেন তুমি? আদৃতের সাথে কি কিছু হয়েছে?”

–“আমি যা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দাও। বলো না আদৃত কি শবনমকে ভালোবাসে?”

–“আদৃত তো তোমাকে ভালোবাসে, শবনমকে ভালোবাসতে যাবে কেন?”

–“ক্ কিন্তু শবনম যে বলল আ্ আদৃত ওকে ভ্ ভালোবাসে।”

–“ধুর কি যে বলো না। কেউ একজন এসে মাঝরাতে তোমাকে উল্টাপাল্টা কিছু বলল আর তুমিও সেটাই বিশ্বাস করে নিলে। এমন কিচ্ছু নেই ওদের মাঝে।”

–“কিন্তু স্ক্রিনশটটা?”

–“আবার কিসের স্ক্রিনশট?”

–“শবনম দিয়েছে ওর আর আদৃতের ম্যাসেজ এর একটা স্ক্রিনশট।”

–“সেন্ড করো তো দেখি।”

আনিতা রাতুলকে স্ক্রিনশট টা ফরওয়ার্ড করে। সাথে সাথেই রাতুল সিন করে। রাতুল স্ক্রিনশট টা ভালো করে দেখে আবার ফোন কানে নিয়ে আনিতাকে বলে,

–“ওর একটা ম্যাসেজ দেখেই আদৃতকে অবিশ্বাস করছো?”

–“আমি আদৃত অবিশ্বাস করছি না। কিন্তু স্ক্রিনশটটা?”

–“আহ আনিতা! বাচ্চা তুমি? ওই ম্যাসেজটা তো আর অনেকদিন আগের। হয়তো বা ফ্রেন্ডশিপ ছিলো ওদের। কিন্তু এরপর আদৃতের আর একটা ম্যাসেজও দেখেছো তুমি? আদৃত তো আর রিপ্লাই করেনি। সিন করেই রেখে দিয়েছে।”

–“কিন্তু নিকনেইম টা?”

–“শবনম মেবি ভালোবাসে আদৃতকে আর শবনমই ওটা সেভ করেছে। কেন অযথা এত চিন্তা করছো?”

–“আচ্ছা মানলাম শবনম দিয়েছে নিকনেইম টা কিন্তু আদৃত কিছু বলল না কেন? বা নিকনেইম টা ক্লিয়ার কেন করলো না?”

–“তুমি কি সন্দেহ করছো আদৃতকে?”

–“আমি আদৃতকে সন্দেহ করছি না রাতুল। কিন্তু আমার না খুব ভয় হচ্ছে। আদৃতকে হারিয়ে ফেলবো না তো আমি?”

–“আরেহ পাগলী কাঁদছো কেন? আদৃত তোমারই আছে। ও শুধু তোমাকেই ভালোবাসে। কান্না অফ করো প্লিজ।”

আনিতা কিছু না বলে কেঁদেই যাচ্ছে। আনিতার কান্না দেখে রাতুলের কিছুটা খারাপ লাগছে। আনিতা কিছু বলছে না বলে রাতুল আবারো বলল,

–“আচ্ছা তোমার যদি আমার কথা বিশ্বাস না হয় তুমি আদৃতকে ফোন করে সবটা জিজ্ঞেস করো। তবুও প্লিজ কান্না অফ করো। এভাবে কেঁদো না। ভালো লাগছে না এভাবে।”

রাতুল আরো কিছুক্ষণ আনিতাকে বুঝায়। আনিতা আর কিছুই বলেনি। কান্না করছিলো খুব। এ তিন মাসে বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছে ও আদৃতকে। রাতুল আনিতাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ফোন রেখে দেয়। আনিতা তবুও কান্না করেই যাচ্ছে। ওর কেমন যেন লাগছে। ও ঠিক সহ্য করতে পারছে না।

আনিতা বিছানা ছেড়ে উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। এখনো চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আনিতা আদৃতকে ফোন দিবে কিনা ভেবে পাচ্ছে না। শেষমেশ আদৃতকে ফোন দিয়েই বসে। রিং হয়ে কেটে গেলো। আদৃত ফোন তুলছে না। আনিতা নিজের কান্নাটাকে কিছুতেই আটকে রাখতে পরছে না। আবারো ফোন করলো আদৃতকে। এবার তিন/চার বার রিং হবার আদৃত ফোন রিসিভ করে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে,

–“হ্যাঁ আনি বলো।”

–“আদৃত তুমি আমাকে ভালোবাসো তো?”

আনিতার এমন কথায় আদৃত বেশ অবাক হলো। ঘড়ির টাইম দেখে নিলো একবার। রাত দুটো বাজে। এসময় ফোন দিয়ে এসব কি বলছে আনিতা সেটাই ভাবছে আদৃত। আদৃত ঘুম কাতুরে কন্ঠেই বলে,

–“রাত দুটো বাজে তুমি আমাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করছো আমি তোমাকে ভালোবাসি কিনা?”

–“বলো না আদৃত।”

–“হ্যাঁ ভালোবাসি তো। তোমাকেই ভালোবাসি আমি।”

–“তাহলে শবনম কে আদৃত?”

কথাটা বলেই আনিতা আবারো কেঁদে দেয়। আদৃত বেশ অবাক হলো। আনিতার কাঁদার শব্দ পেয়ে তো রীতিমতো চমকে গেলো আদৃত। এই তিন মাসে মেয়েটাকে কখনো কাঁদতে দেখেনি আদৃত। আর আজকে কিনা সেই মেয়েটা ওর জন্য কাঁদছে? মূহুর্তেই আদৃতের চোখের ঘুম উধাও হয়ে গেলো। আদৃতকে চুপ থাকতে দেখে আনিতা আবারো বলে,

–“বলো না শবনম কে? ভালোবাসো তুমি শবনমকে তাই না?”

–“আহ আনিতা! কি শুরু করলে তুমি? মাঝরাতে ফোন দিয়ে এসব কি শুরু করলে তুমি? কান্না অফ করো বলছি।”

আদৃতের কথায় আনিতা আবারো কেঁদে উঠে। আনিতা কিছু না বলে নিঃশব্দে কান্না করতে থাকে। আদৃতের নিজেরও এবার খারাপ লাগছে। ইশ্ মেয়েটাকে ধমক না দিলেই বুঝি ভালো হতো। কিন্তু কি করবে ও? এতরাতে ফোন দিয়ে কিসব বলছে আর কান্না করছে তাই তো কন্ট্রোল করতে পারলো না নিজেকে। আনিতার কান্না আদৃতের একদমই সহ্য হচ্ছে না। আনিতার কান্না শুনে আদৃতের খুব কষ্ট হচ্ছে। আদৃত আনিতাকে থামানোর চেষ্টা করে বলে,

–“আনিতা কান্না অফ করো প্লিজ। আচ্ছা কি হয়েছে বলো আমাকে।”

আনিতা চোখের পানি মুছে একে একে সব বলতে থাকে আদৃতকে। আনিতার কথা শুনে আদৃতের বেশ রাগ লাগছে এবার শবনমের উপর। আদৃত সব শুনে বলে,

–“আরেহ পাগলী ওর সাথে আমার কিচ্ছু নেই বিশ্বাস করো। আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। আর তাছাড়া ওর ম্যাসেজ এর আর কোনো রিপ্লাই দিতে দেখেছো আমাকে? আগে যাই কথা হতো ফ্রেন্ডলি বাট তোমার সাথে রিলেশনে আসার পর আর কথা বলিনি ওর সাথে। শুধু ও কেন? আর কোনো মেয়ের সাথেই কথা বলিনি। আর ও কি না কি বলল তা শুনেই তুমি এভাবে কাঁদতে শুরু করে দিলে?”

–“ও যে বলল তোমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসো।”

–“হয়তোবা ও ভালোবাসে আমাকে। কিন্তু আমি তো না। ওর মুখের কথা শুনেই এই অবস্থা। আমাকে একবার আগে জিজ্ঞেস তো করতে পারতে? তা না আগেই কেঁদে কেটে একেবারে নাজেহাল অবস্থা করে ফেলেছো নিজের।”

আনিতা কিছুই বলল না। এখন কাঁদছে না কিন্তু নাক টেনে যাচ্ছে বার বার। আদৃত আবারো বলে,

–“এক্ষুনি ওই মেয়েকে ব্লক করে দাও। ও আবার কখন কোন উল্টাপাল্টা কথা বলবে তুমি আবার ওর কথা শুনে কাঁদতে শুরু করে দিবে। তার থেকে ভালো ব্লক করে দাও।”

–“থাক ব্লক করার কি দরকার?”

–“হ্যাঁ আবার উল্টাপাল্টা বলুক তোমাকে তারপর আবার তুমি আমাকে ফোন করে কান্নাকাটি শুরু করে দাও তাই না? তোমার কান্না একদম সহ্য হয় না আমার। নেক্সট টাইম একদম কাঁদবা না বলে দিলাম। সো ব্লক করো শবনমকে।”

–“আচ্ছা ব্লক করে দিবো।”

–“দিবো না। এখনই ব্লক করো। ব্লক করে আমাকে নক করো। আমি অনলাইনে যাচ্ছি।”

–“আচ্ছা।”

এতটুকু বলেই আনিতা ফোন কেটে দিলো। তারপর শবনমের প্রোফাইলে গিয়ে আইডি ব্লক করে দিলো আনিতা। সেটার স্ক্রিনশট আদৃতকে আবার সেন্ড করলো আনিতা। আদৃত সাথে সাথেই ম্যাসেজ সিন করে তারপর আবার অফলাইন হয়ে গেলো। আনিতার বেশ খারাপ লাগলো এতে। কিছু না বলেই কিভাবে অফলাইন হয়ে গেলো৷

কিন্তু আনিতার মন খারাপ ভাবটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। অফলাইন হওয়ার কিছুক্ষণের মাঝেই আদৃত আনিতার নাম্বারে ফোন করলো। আনিতা ফোন রিসিভ করতেই আদৃত বলে,

–“এবার এসব চিন্তা মাথা থেকে একদম ঝেড়ে ফেলে দাও। আর এসব উল্টাপাল্টা বিষয় নিয়ে চিন্তা করবা না বলে দিলাম। আর কান্নাও করবে না। আদৃত শুধু তোমাকেই ভালোবাসে। আদৃত শুধু তোমারই বুঝেছো?”

–“হ্যাঁ।”

–“তাহলে এখন লক্ষী মেয়ের মতো ঘুমাও তো।”

–“আর তুমি কি করবে শুনি?”

–“আমিও ঘুমোবো। সকালে অফিস আছে তো। আর তোমারও তো কলেজ আছে তাই না?”

–“হুম।”

–“সো আর একটা কথাও না বলে ফোন রেখে ঘুমাবা ওকে?”

–“আচ্ছা।”

–“তো রাখি?”

–“আদৃত শুনো__”

–“হ্যাঁ বলো।”

–“ভালোবাসি আদৃত।”

আনিতার কথায় আদৃত ঠোঁট কামড়ে ধরে হেসে ফেলল। মেয়েটা সত্যিই পাগলী। শুধু আদৃতের পাগলী। ওদিকে আদৃতের হাসি শুনে আনিতার মুখেও হাসি ফুটে উঠলো। আনিতার এখন চোখে পানি মুখে হাসি। আদৃত মুচকি হেসে বলে,

–“আমিও খুব ভালোবাসি আমার পিচ্চিটাকে বুঝলে? ঘুমাও এখন।”

আনিতাও সম্মতি জানিয়ে ফোন রেখে দিলো। ফোন রাখার কিছুক্ষণের মাঝেই আদৃত ঘুমিয়ে যায়। আর আনিতাও এপাশ ওপাশ করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে যায়।



চলবে।

[ ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। আর গল্পটা কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন। হ্যাপি রিডিং।🥰 ]