শুধু তোমারই জন্য পর্ব-১৮+১৯

0
766

#শুধু_তোমারই_জন্য
#পর্ব_১৮
#Ornisha_Sathi

বুশরা এগিয়ে আসলো আনিতার দিকে। আনিতার পা থেকে মাথা অব্দি আগাগোড়া দেখে নিলো বুশরা। আনিতা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বুশরা একবার আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। তারপর আনিতাকে বলে,

–“তুমিই তাহলে আনিতা? তুমিই সেই মেয়ে যে কিনা আহিয়ানের লাইফে উড়ে এসে জুড়ে বসেছো। দেখো, আহিয়ান শুধু আমার। ওকে ভালোবাসি আমি।”

আনিতা মাথা তুলে একবার আহিয়ানের দিকে তাকালো। আহিয়ান অলস ভঙ্গিতে বসে আছে। আনিতা ঠোঁটের কোনে তাচ্ছিল্যের হাসি টেনে বুশরাকে বলে,

–“এসব আমাকে কেন বলছেন? আমি কি করতে পারি?”

–“তোমাকে বলছি কারন, তুমি আহিয়ানের লাইফ থেকে সরে যাবে।”

–“যার লাইফে কোনোদিন ছিলামই না তার লাইফ থেকে আর কিভাবে সরে যাবো?”

–“মানে? ভালোবাসো না তুমি আহিয়ানকে? সম্পর্ক নেই তোমাদের দুজনের?”

চুপ হয়ে গেলো আনিতা। কি উত্তর দিবে ও? সেটাই ভেবে পাচ্ছে না। তন্ময় রাতুল আহিয়ান জেরিন ওরা চারজনেই আনিতার উত্তরের অপেক্ষায় আছে। সাথে বুশরা আর আহিয়ানও। আনিতাকে চুপ থাকতে দেখে বুশরা বলে,

–“কি হলো বলছো না কেন? ভালোবাসো না ওকে? সম্পর্ক নেই তোমাদের?”

–“ন…না কোনো স…সম্পর্ক নেই আ…আমাদের।”

–“ওহ তাহলে তো ভালোই। আমার আর আহিয়ানের মাঝে আর কোনো কাটা রইলো না।”

আনিতা কিছু বলল না। জেরিনের কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে রুম থেকে বের হয়ে আসতে নিচ্ছিলো। আনিতাকে চলে যেতে দেখে আহিয়ান বলে,

–“আমাকে দেখতে আসলে অথচ না দেখেই চলে যাচ্ছো?”

–“দেখতে এসেছিলাম, দেখা হয়ে গিয়েছে তাই চলে যাচ্ছি।”

–“সাহস থাকে তো বের হয়ে দেখো হসপিটাল থেকে তোমার পা ভেঙে আমি হাতে ধরিয়ে দিবো।”

–“আপনার ভাঙা হাত-পা নিয়ে আর আমার কি করবেন? এর থেকে বরং আমার কথা ভাবা বাদ দিন। বুশরার কথা ভাবুন আপনি। বুশরার সেবাযত্নে অতি শীঘ্রই সুস্থ হয়ে উঠুন আই প্রেয়ার ফর ইউ।”

এই বলে আনিতা আবার উলটো ঘুরে জেরিনের হাত ধরে দরজা খুলতে যাচ্ছিলো। তখনই আহিয়ান বুশরা ওরা সকলেই উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। আনিতা জেরিনের হাত ছেড়ে পিছু ঘুরলো। আহিয়ান হাসি থামিয়ে বুশরাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

–“বুশরা তোর ভাবীকে জিজ্ঞেস কর তো আমাকে যদি ভালো না বাসে তাহলে আমার পাশে তোকে দেখে ও জেলাসি ফিল করছিলো কেন? আবার রাগ দেখিয়ে একা একা চলে যাচ্ছিলো ওর সাহস কত বড়। মুখে বলে ভালোবাসি না কিন্তু ওর কাজে কর্মে তো বোঝাই যায় ও আমাকে ভালোবাসে। সেটা কি ও বুঝতে পারে না?

আনিতা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো আহিয়ানের দিকে। ও কি বলল আনিতা ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না৷ তন্ময় রাতুলের দিকে তাকিয়ে দেখে দুজনেই মুখ টিপে হাসছে। সাথে বুশরাও হাসছে। কিছু বুঝতে না পেরে আহিয়ানকে জিজ্ঞেস করলো,

–“মানে কে ভাবী কার ভাবী?”

আহিয়ান কিছু বলার আগেই বুশরা এসে দাঁড়ালো আনিতার সামনে। একটু আগে যে মেয়েটা আনিতাকে এত কঠিন কঠিন কথা শুনালো এখন সেই মেয়েটাই হাসি হাসি মুখ করে আনিতার সামনে দাঁড়িয়ে। আনিতার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বুশরা বলে,

–“মানে তুমি হলে আমার ভাবী আর আমি তোমার ননদিনী রায় বাঘিনী বুঝলে? এই আহিয়ানকে আমি ভালো-টালো বাসি না। তুমি তো আমার ভাবী হও তাই একটু মজা করলাম। কিন্তু তুমি তো একেবারে সিরিয়াস নিয়ে নিলে সবকিছু।”

–“আমি আবার আপনার কোন ভাইয়ের বউ? আপনার কোনো ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে বলে তো আমার মনে হচ্ছে না।”

–“আহ ভাবী! তুমি বুঝতে পারছো না।”

–“আচ্ছা তাহলে আপনি আমাকে বুঝিয়ে দিন।”

–“এখানে আমার ভাই একমাত্র আহিয়ানই আছে রাইট?”

–“হুম।”

–“তুমি আর আহিয়ান এক বছরের বেশি সময় ধরে সম্পর্কে আছো রাইট?”

–“হুম।”

–“আহিয়ান তোমায় ভালোবাসে তাই না?”

–“হ্যাঁ।”

–“তুমিও আহিয়ানকে ভালোবাসো।”

–“হুম।”

–“তাহলে তুমি আমার ভাই মানে আহিয়ানের গার্লফ্রেন্ড। আর ইন ফিউচার আমার ভাই যখন বিয়ে করবে নিশ্চয়ই তার ভালোবাসার মানুষকেই আই মিন তোমাকেই বিয়ে করবে। তাহলে তুমি তো আমার ভাবীই হলে তাই না?”

–“হুম_____এই না না। আমি আপনার ভাইকে ভালোবাসি না। আর ওকে কোনোদিন বিয়েও করবো না। সুতরাং আপনি আমাকে ভাবী ডাকবেন না।”

আনিতার কথায় সবাই হেসে উঠলো। এতক্ষণ যাবত বুশরার কথার প্যাঁচে পরে সবকিছুতেই আনিতা হ্যাঁ হ্যাঁ করে যাচ্ছিলো। যখনই ব্যাপারটা বুঝলো সাথে সাথেই “না না” বলে ক্ষানিকটা চিৎকার করে উঠে। আনিতা সবার দিকে তাকিয়ে দেখে সবাই এখনো মুখ চেপে হাসছে। আর আহিয়ান? সে তো সে-ই। এতক্ষণ মুচকি হাসলেও আনিতা তাকানোর সাথে সাথেই ঠোঁট কামড়ে ধরে ক্ষানিকটা শব্দ করেই হেসে ফেলল। আনিতা কপাল কিছুটা কুঁচকে রাগী চোখে তাকায় আহিয়ানের দিকে। আহিয়ান হাসি থামিয়ে ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বসে। একজন নার্স এসে সবাইকে ধমকে গেলেন এভাবে রোগীর কেবিনে বসে হাসাহাসি করার জন্য আর বললেন কেবিন ফাঁকা করতে। তন্ময় রাতুল দুজনেই বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। বুশরা দরজা অব্দি গিয়ে আবার আনিতার সামনে এসে বলে,

–“আমার ভাইটাকে একা পেয়ে আবার বকা দিও না কিন্তু। বেচারা ভাইটা আমার তোমাকে কিন্তু খুব ভালোবাসে। একটু আধটু পাপ্পি-ঠাপ্পি দিয়ে সুস্থ করে তুলো তো ওকে।”

বুশরার কথায় আনিতা মাথা নিচু করে নিলো। বুশরা আর জেরিন দুজনেই মৃদু হাসলো। আনিতা ইতস্তত করে বলে,

–“এটা কি কোনো মেডিসিন নাকি? যে দিলাম আর অমনি সুস্থ হয়ে গেলো।”

–“আরেহ তুমি আজকালকার রিলেশনগুলোতে দেখো না প্রেমিকের জ্বর হলে প্রেমিকা একটা কিসসি দিলেই প্রেমিক সুস্থ হয়ে যায়? তাইলে আমার ভাইটা কেন তোমায় কিসসি পেয়ে সুস্থ হবে না?”

কথাটা বলেই বুশরা ফিক করে হসে দিলো। সাথে জেরিন আর আহিয়ানও হেসে দেয়। এদিকে আনিতা বেচারি লজ্জায় চোখ-মুখ লাল করে ফেলছে। ভাগ্যিস নিকাব বাঁধা তা না হলে তো সবাই বুঝে যেতো আনিতা লজ্জা পাচ্ছে। আহিয়ান আনিতার দিকে তাকিয়ে বলে,

–“আনিতা যদি রাজি হয় তাহলে তো আমি বারবার অসুস্থ হতে রাজি ওর কিসসি পাওয়ার জন্য।”

আনিতা চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই আহিয়ান আবারো মুখে আঙুল দিয়ে চুপ হয়ে গেলো। বুশরা হাসতে হাসতে কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো। জেরিনও আহিয়ানের সাথে দু/একটা কথা বলে আনিতাকে বলে,

–“আমি বাইরে আছি। তুই তাড়াতাড়ি কথা বলে আয়। আবার বাসায় ফিরতে হবে কিন্তু।”

আনিতা মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিতেই জেরিন বের হয়ে গেলো কেবিন থেকে। যাওয়ার আগে দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে গেলো। আনিতা এখনো আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে। এক দৃষ্টিতে আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। মাথাটা ব্যান্ডেজ করা ডান পা-টা ভেঙে যাওয়ার ফলে পায়েও ব্যান্ডেজ। আর পিচ ঢালা রাস্তায় পড়ে দু হাতের কুনইতে বেশ ক্ষানিকটা ছিলে গিয়েছে। আনিতাকে একইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আহিয়ান বলে,

–“কাছে আসবা না? ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকবা?”

আহিয়ানের কথায় আনিতা ওর মুখের দিকে তাকালো। আহিয়ানও আনিতার দিকেই তাকিয়ে আছে। আনিতা গুটিগুটি পায়ে বেডের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। আহিয়ান আনিতার হাত ধরে টেনে বেডের একপাশে বসিয়ে মুখের মাস্কটা নিচে নামিয়ে দেয়।

চুপচাপ বসে আছে আনিতা। কি দিয়ে কথা শুরু করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। নিরবতা ভেঙে আহিয়ানই প্রথমে বলল,

–“চোখ-মুখের এই অবস্থা কেন?”

–“কই ঠিকই তো আছে।”

–“আনি তুমি মিথ্যে বলবে আর আমি ধরতে পারবো না এটা ভাবলে কি করে?”

আনিতা কিছু না বলে চুপ করে রইলো। মাথা নিচু করে নিঃশব্দে কান্না করছে। তা দেখে আহিয়ান আনিতার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,

–“আরে কাঁদছো কেন? আমি ঠিক আছি তো। দেখো কিচ্ছুই হয়নি আমার।”

–“যদি কিছু হয়ে যেতো আপনার? তখন আমার কি হতো? আপনাকে ছাড়া কিভাবে থাকতাম আমি?”

–“হলে হতো। তুমি তো আর আমাকে ভালোবাসো না। তাহলে আমার কিছু হলে তাতে তোমার কি যায় আসে?”

–“যায় আসে। যায় আসে আমার কারন, আমি ভালোবাসি আপনাকে।”

কথাটা বলেই আনিতা আহিয়ানকে জড়িয়ে ধরলো। আহিয়ানও মুচকি হেসে আনিতাকে বুকে আগলে নেয়। আনিতা তখনো আহিয়ানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলো। আহিয়ান আনিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

–“আরেহ পাগলী কাঁদছো কেন এভাবে? জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিলো মরে তো আর যাইনি।”

কথাটা শুনেই আনিতা আহিয়ানকে ছেড়ে দিলো। আনিতা মুখ ফুলিয়ে বলে,

–“এরপর আর একবার যদি এসব উল্টাপাল্টা কথা বলেছেন তাহলে আমিই আপনাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাবো। আর কক্ষনো খুঁজে পাবেন না আমায়।”

আহিয়ান আনিতাকে কাছে টেনে নেয়। আনিতাও আহিয়ানের একহাত নিজের মুঠোয় নিয়ে আহিয়ানের বুকে মাথা রাখে। এই প্রথম আনিতা কোনো ছেলের বুকে মাথা রেখেছে। এই প্রথম আনিতা একটা ছেলের এতটা কাছে একটা ছেলের সাথে একদম মিশে আছে। কেমন যেন লাগছে আনিতার। কিছুটা অস্বস্তি কিছুটা ভয় আর কিছুটা ভালোলাগা। আহিয়ান একহাতে আনিতাকে জড়িয়ে নিয়ে বলে,

–“তোমাকে আমি যেতে দিলে তো যাবে।”

প্রতিত্তোরে আনিতা কিছু বলল না। চুপ করে রইলো ক্ষানিকটা সময়। আনিতা আহিয়ানের হাতটা ভালো করে ধরে বলে,

–“শুনুন এরপর থেকে আর জোরে বাইক চালাবেন না। আবার যদি শুনেছি না তো আপনার বাইক চালানোই বন্ধ করে দিবো আমি বলে দিলাম হুহ!”

–“আমি বাইক বেশি স্পিডে চালাই না তো ভুল শুনেছো তুমি।”

আহিয়ানের কথা শুনে আনিতা ওকে ছেড়ে দিয়ে বেডে থেকে নেমে দাঁড়ায়। রাগী চোখে আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,

–“একদম মিথ্যে বলবেন না। তন্ময় ভাইয়া, রাতুল ওরা আমাকে বলেছে আপনি অনেক স্পিডে বাইক চালান।”

–“অভ্যেস হয়ে গিয়েছে তো। এতে আমার কোনো দোষ নেই।”

–“চেঞ্জ করুন অভ্যাস। এখন থেকে ধীরে ধীরেই বাইক চালাবেন। নয়তো___”

–“আচ্ছা বাবা আর বেশি স্পিডে বাইক চালাবো না। এখন আপনার শাসন করা শেষ হলে এখানে এসে বসুন তো।”

আনিতা আবারো আহিয়ানের পাশে গিয়ে বসে। হঠাৎই আনিতার ফোনে ম্যাসেজ টোন বেজে উঠলো। আনিতা ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে শুভর ম্যাসেজ। ম্যাসেজটা ওপেন করতেই স্ক্রিনে ভেসে উঠলো,

–“এবার কিন্তু ফিরতে হবে। দেড় ঘন্টা পরই সন্ধ্যা হয়ে যাবে। তখন বাসায় কিছু বোঝানোটা কঠিন হয়ে যাবে। এখনো যদি হসপিটাল থেকে বের না হয়ে থাকিস তাহলে দ্রুত বের হো। আমরা কলেজেই আছি।”

শুভর ম্যাসেজ দেখে আনিতার বাড়ি ফেরার কথা মনে হলো। “এখনই আসছি” লিখে ম্যাসেজটা শুভকে সেন্ড করে ফোন ব্যাগে রেখে দিলো আনিতা। বাসার কথা মনে হতেই হাত-পা ঠান্ডা হয়ে এলো আনিতার। বাসায় গিয়ে কি বলবে? ভেবেই পাচ্ছে না। আহিয়ান আনিতাকে এভাবে দেখে প্রশ্ন করে,

–“কি ভাবছো?”

–“বাড়ি ফিরতে হবে এবার।”

আহিয়ান দেয়ালে টাঙানো ঘড়ির দিকে তাকালো একবার। আসলেই অনেকটা লেট হয়ে গিয়েছে। এখন বাসায় না পৌঁছাতে পারলে নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে আনিতাকে। তাই আনিতাকে বলল,

–“হ্যাঁ অনেকটা লেট হয়ে গিয়েছে। বেরিয়ে পড়ো এবার।”

–“আমি আবার আসবো কিন্তু।”

–“একদম না। এত রিস্ক নিয়ে তোমায় আর আসতে হবে না। সুস্থ হলে আমি নিজে যাবো তোমাদের কলেজে ওকে?”

–“আচ্ছা।”

আনিতা মুখ ভার করে বলল কথাটা। আহিয়ান মুচকি হেসে আনিতাকে বলে,

–“একটু এদিকে এসো।”

আনিতা এগিয়ে যেতেই আহিয়ান আনিতার কপালে আলতো ভাবে ঠোঁট ছুইয়ে দেয়। আহিয়ানের এমন স্পর্শ পেতেই আনিতা যেন জমে বরফ হয়ে গেলো। আহিয়ান আনিতার কপাল থেকে ঠোঁট সরাতেই আনিতা ওখান থেকে সরে আসে। পরপর কয়েকটা শ্বাস নিয়ে আনিতা বলে,

–“নিজের খেয়াল রাখবেন আর সাবধানে থাকবেন কিন্তু। ভাঙা পা নিয়ে একদম বেশি চলাফেরা করবেন না।”

–“যথা আজ্ঞা ম্যাডাম।”

–“আপনার চোখটা একটু বন্ধ করুন তো।”

–“কেন?”

–“আহ! করুন না।”

আনিতার কথায় আহিয়ান চোখ বন্ধ করে নিলো। আনিতা আহিয়ানের দিকে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে আহিয়ানের চোখের পাতায় একটা চুমু খেয়ে সাথে সাথেই সরে গেলো ওখান থেকে। আহিয়ান চমকে গিয়ে চোখ খুলে তাকালো আনিতার দিকে। আনিতার এবার বেশ লজ্জা লাগছে। আনিতা ইতস্তত করে বলে,

–“আসছি তাহলে।”

–“হুম সাবধানে যেও।”

আনিতাকে এভাবে লজ্জা পেতে দেখে আহিয়ান মুচকি হাসলো। আহিয়ান ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি টেনেই তন্ময় ওদের ভিতরে ডাকলো। আহিয়ানের ডাকে ওরা চারজনই ভিতরে আসে। আনিতা তখন আহিয়ানের থেকে দুই হাত দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে। তন্ময় ভিতরে আসতেই আহিয়ান বলে,

–“সাবধানে পৌঁছে দিস। আর বাইক আস্তে চালাবি কিন্তু।”

–“হ্যাঁ এটা নিয়ে তোর চিন্তা করতে হবে না। তুই রেস্ট নে ওদের পৌঁছে দিয়েই আসছি আমরা।”

তন্ময় এর কথায় আহিয়ান সম্মতি জানালো। জেরিন বুশরা আর আহিয়ানের থেকে বিদায় নিয়ে রাতুলের সাথে বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে। আনিতাও বুশরার কাছে গিয়ে ওর থেকে বিদায় নিলো। বুশরা আনিতাকে জড়িয়ে ধরে কিছুটা সময় বাদেই ছেড়ে দিয়ে বলে,

–“ইনশাআল্লাহ খুব তাড়াতাড়িই তোমাকে আমার ভাইয়ের বউ করে নিয়ে আসবো ওকে? তখন আর এভাবে চোরের মতো লুকিয়ে দেখা করতে হবে না।”

বুশরার কথায় আনিতার লজ্জাটা যেন দ্বিগুণ হলো। বুশরা বুঝতে পেরে টপিক চেঞ্জ করে বলে,

–“সাবধানে যেও ভাবী।”

প্রতিত্তোরে আনিতা মুচকি হাসলো। বেরিয়ে যাওয়ার আগে আর একবার আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,

–“আসছি।”

–“হুম, বোরখা ভালো করে সামলে নিও আর তন্ময়কে ভালো করে ধরে বসবা। টেক কেয়ার।”

–“হুম।”

এই বলেই আনিতা বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে। আনিতার পিছু তন্ময়ও চলে আসলো। লিফটে করে নিচে নেমে তন্ময় পার্কিং-এ চলে গেলো বাইক আনতে। ততক্ষণে রাতুল আর জেরিন বাইকে চড়ে বসেছে। তন্ময় এসে বাইক থামাতেই আনিতা বাইকে উঠে বসলো।



চলবে।

#শুধু_তোমারই_জন্য
#পর্ব_১৯
#Ornisha_Sathi

মাঝে কেটে গিয়েছে দেড়টা মাস। আজ সন্ধ্যা সাতটায় আনিতার ছোট চাচ্চুর ফ্লাইট। রাত এগারোটায় এসে নামবেন তিনি। এবার এসে বিয়ে করবেন তিনি। বয়স আনুমানিক ত্রিশ হবে তার। আনিতার ছোট চাচ্চুর বিয়ে ঠিক হয়ে গেলেই আনিতার আব্বু আসবেন দেশে ভাইয়ের বিয়ের জন্য। আর আনিতার মেজো চাচ্চু তো আগে থেকেই দেশে। তার ছুটি আর দুই আড়াই মাসের মতো আছে।

এখন সমস্যা হলো আনিতা ওর চাচ্চুকে রিসিভ করতে এয়ারপোর্টে যেতে চাচ্ছে। কিন্তু ওর আম্মু যেতে দিবে না। কারন একটাই ও গাড়িতে উঠতে পারে না। বমি বমি পায়। এমনকি ঔষধ খেলেও একই অবস্থা। অনেক বুঝিয়েও রাজি করাতে পারেনি। আনিতার চাচ্চুর জ্বর জ্বর ভাব তাই তিনি যাবেন না। ফাইয়াজকে আসতে বলা হয়েছে সাথে আহিয়ান আর তন্ময়কেও। এ দুজন ফাইয়াজের বন্ধু না মনে হয় এ বাড়ির ছেলেই। ফাইয়াজের সাথে আহিয়ান আর তন্ময়ের অনেক বছরের বন্ধুত্ব। অনেক আগে থেকেই আহিয়ান আর তন্ময়ের ফাইয়াজদের বাসায় আসা-যাওয়া। কিন্তু আনিতা আগে সেরকম ভাবে আহিয়ানকে দেখেনি কখনো।

আনিতার মেজো চাচ্চু যেহেতু যেতে পারছে না তাই ফাইয়াজকে ফোন করে বলা হয়েছে ওখান থেকেই আহিয়ান ওদের নিয়ে এয়ারপোর্টে চলে যেতে। এই শুনে আনিতার বেশ কান্না পাচ্ছে। কোথায় ভাবলো ফাইয়াজ বাসায় আসার পর ওকে বুঝিয়ে শুনিয়ে রাজি করাবে আম্মুর সাথে কথা বলতে তা আর হলো কই? আম্মু তো বলে দিয়েছে ওখান থেকেই চলে যেতে। ধুর ভাল্লাগে না!

সকাল সাড়ে এগারোটা বাজে। রাগ করে আনিতা সকালে কিছুই খায়নি। ফাইয়াজদের বাসায় চলে গিয়েছে। আনিতা ওর ফুপ্পির কোলে মাথা রেখে মুখ গোমড়া করে শুয়ে আছে। আনিতার ফুপ্পি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

–“রাগ করছিস কেন? তোর অসুবিধার কথা ভেবেই তো তোকে যেতে দিতে চাচ্ছে না।”

–“তো তোমার ছেলে কেন আসলো না বাড়িতে? ও আসলে আমি ওকে বুঝিয়ে শুনিয়ে আম্মুর কাছে পাঠাতাম। ভাইয়াই পারতো আম্মুকে ম্যানেজ করতে। কিন্তু হলো কি? এখানে নাকি আসবেই না।”

–“ফাইয়াজ আসলে খুউব করে বকে দিবো ঠিক আছে? এখন একটু উঠে বস আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসছি। সকাল থেকে নিশ্চয়ই খাসনি।”

আনিতা বার কয়েক বারন করেও কোনো লাভ হয়নি। জোর করে ওর ফুপ্পি কিচেনে গিয়েছেন খাবার আনতে। বালিশের সাথে হেলান দিয়ে বিছানায় বসে আছে। একহাত পেটে রেখে অন্যহাত উলটো ভাবে চোখের উপর দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে আনিতা। হুট করেই কেউ আনিতার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,

–“ভালোবাসি পিচ্ছি-পাখি।”

কথাটা শুনে কয়েক সেকেন্ডের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো আনিতা। আহিয়ানের মতো লাগলো কন্ঠস্বরটা। সাথে সাথেই আনিতা চোখ মেলে তাকালো কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলো না। পুরো রুম ফাঁকা। তখনই আনিতার ফুপ্পি খাবার প্লেট নিয়ে রুমে ঢুকে বলে,

–“কি হলো? কি খুঁজছিস এভাবে?”

–“কেউ কি এসেছে ফুপ্পি?”

–“নাহ তো।”

আনিতা আর কিছু বলল না। আনিতার ফুপ্পি পাশে এসে বসতেই আনিতা আসাম দিয়ে বসলো। আনিতার ফুপ্পি ভাত তরকারি দিয়ে মাখিয়ে লোকমা করে আনিতাকে খাইয়ে দিচ্ছে। তখনই ফাইয়াজ রুমে ঢুকে আনিতার অন্যপাশে বসে। আনিতার মাথায় গাট্টা মেরে বলে,

–“তোদের বাসায় খাবার নাই? বসে বসে আমাদের বাসায় খাবার গিলছিস যে।”

–“আহ ভাইয়া! ফুপ্পি তোমার ছেলেকে কিছু বলবা? নয়তো আমি কিন্তু ওরে মেরে একদম ভর্তা বানিয়ে দিবো।”

ফাইয়াজ কিছু বলবে তার আগেই ওর আম্মু ফাইয়াজকে ধমকে চুপ করিয়ে দিয়ে বলে,

–“এসেই ওর পিছু লাগা শুরু করেছিস? তোর কি আর কোনো কাজ নেই? শুধু শুধু আমার মেয়েটার পিছু লাগছিস এভাবে।”

–“আম্মু ওরে তুমি যেভাবে খাইয়ে দিচ্ছো আমাকে এভাবে কোনোদিন খাইয়ে দিয়েছো বলে তো আমার মনে পড়ছে না।”

–“তোকে খাইয়ে দেইনি? তুই তো এমনি এমনি বড় হয়েছিস তাই না? মেয়েটা রাগ করে সকাল থেকে কিচ্ছু খায়নি। আর এটা শুনেও আমি খাইয়ে দিবো না?”

ফাইয়াজ ওর আম্মুর কথা শুনে আনিতার দিকে তাকিয়ে মুখ বাকালো। আনিতা ফাইয়াজের হাত দুটো ধরে আহ্লাদী কন্ঠে বলে,

–“ভাইয়া আম্মু একমাত্র তোমার কথাই শুনবে। আম্মুকে একটু রাজি করাও না। আমিও যাবো চাচ্চুকে রিসিভ করতে।”

–“গাড়িতে উঠতে পারিস না আবার এয়ারপোর্টে যাবি। পারবো না আমি বলতে।”

–“প্লিজ প্লিজ ভাইয়া বলো না আম্মুকে।”

ফাইয়াজ কিছু বলল না। আনিতার থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চুপ করে রইলো। তা দেখে আনিতা মুখ গোমড়া করে বসে রইলো। ফাইয়াজের আম্মু ফাইয়াজকে বলে,

–“তুই কখন ফিরলি বাসায়? তোর তো ওখান থেকেই এয়ারপোর্টে চলে যাওয়ার কথা। তাহলে বাসায় আসলি কেন?”

–“তোমার ভাইজি কে দেখো। নিবো না বলেছি তাতেই এভাবে মুখ গোমড়া করে বসে আছে। আর যদি না নিয়ে যেতাম তাহলে তো আমার সাথে মনে হয় আর কোনোদিন কথাও বলতো না। আর তুমি তো জানো ওর সাথে কথা না বলে আমি থাকতে পারবো না। তাই আবার আমায় বাড়ি আসতে হলো।”

ফাইয়াজের কথা শুনে আনিতা খুশিতে একপ্রকার লাফিয়ে উঠলো। ফাইয়াজকে জড়িয়ে ধরে বলে,

–“এইতো আমার লক্ষী ভাইয়া। তোমারে এত্তগুলা ভালোবাসি।”

ফাইয়াজ হালকা ভাবে আনিতাকে জড়িয়ে ধরে তারপরই আবার ছেড়ে দিয়ে ওকে রাগানোর জন্য বলে,

–“এই ছাড় তো আমায়। আমি এমনিতেও লক্ষী আর তাছাড়া তোর ভালোবাসা আমার লাগবে না।”

আনিতা ফাইয়াজকে ছেড়ে মুখ ভেংচি দিয়ে দরজার দিকে তাকাতেই দেখে আহিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। দরজার সাথে হেলান দিয়ে বুকে দুহাত গুজে দাঁড়িয়েছে আহিয়ান। আহিয়ানকে দেখতেই আনিতার তখনকার কথা মনে পড়ে গেলো। তারমানে ও ঠিকই তখন আহিয়ানের গলা পেয়েছিলো? আহিয়ানই এসে ফিসফিস করে, “ভালোবাসি পিচ্ছি-পাখি” বলেছিলো? এসব ভেবেই আনিতার আবার তাকালো আহিয়ানের দিকে। আহিয়ান মুচকি হেসে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। মূহুর্তেই আনিতার বুক ধুকপুক করা শুরু হয়ে গেলো। আহিয়ানের থেকে চোখ নামিয়ে নিলো সাথে সাথেই।

ফাইয়াজের আম্মু দরজার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো আহিয়ান দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। তা দেখে ফাইয়াজের আম্মু বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলে,

–“আহিয়ান? তুই দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ভিতরে আয়।”

ফাইয়াজের আম্মুর কথা শুনে আহিয়ান রুমে প্রবেশ করে। ফাইয়াজের আম্মুকে সালাম দিয়ে খবরাখবর জিজ্ঞেস করে। ফাইয়াজের আম্মু ফাইয়াজের বাহুতে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলে,

–“ছেলেটাকে সাথে করে নিয়ে এসে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিস। একটুও কি কান্ড জ্ঞান নেই তোর?”

–“নাহ আন্টি আমি এতক্ষণ ফাইয়াজের রুমেই ছিলাম। ফ্রেশ হয়ে মাত্রই এখানে আসলাম।”

–“আচ্ছা বোস তোরা আমি আসছি।”

এই বলে ফাইয়াজের আম্মু আনিতার মুখ মুছে দিয়ে প্লেট নিয়ে চলে গেলো ওখান থেকে। মিনিট পাঁচেক বসার পর ফাইয়াজ বলে,

–“তোরা বসে গল্প কর আমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসছি। আর তন্ময়কেও এখানে পাঠাচ্ছি।”

এই বলে ফাইয়াজ উঠে চলে গেলো। আহিয়ান উঠে গিয়ে আনিতার পাশ ঘেঁষে বসলো। আনিতাকে একহাতে জড়িয়ে নেয় আহিয়ান। আনিতা আহিয়ানের বুকে মাথা রেখে বলে,

–“তখন আপনিই ছিলেন তাই না?”

–“কখন বলো তো?”

–“ওই তো আধ ঘন্টা আগে হবে। আমি চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলাম আর তখনই আপনি কানের কাছে এসে ফিসফিস করে ‘ভালোবাসি পিচ্ছি-পাখি’ কথাটা বললেন।”

–“নাহ তো আমি ছিলাম না। আমি মাত্রই আসলাম এই রুমে।”

–“আবার মিথ্যে বলছেন? আপনি যদি এখন এখানে না থাকতেন তাহলে আমি আমার মনের ভুল ভেবে নিতাম। কিন্তু এখন তো মনের ভুল ভাবার প্রশ্নই আসে না।”

–“কেন?”

–“কারন আপনি এখন এখানেই আছেন। তাই এর আগে আপনিই লুকিয়ে এসেছিলেন এই রুমে।”

–“বাহ! পিচ্ছিটা খুব বুঝে দেখছি।”

–“এই শুনুন আপনি আমাকে পিচ্ছি বলবেন না। আমি মোটেও পিচ্ছি না। এবার ক্লাস টুয়েলভে আমি। হুহ!”

–“ক্লাস টুয়েলভ? বাহ অনেক বড় হয়ে গিয়েছো তো। তা বয়স কত তোমার?”

–“সতেরো শেষের দিকে।”

–“বাহ আপনি তো দেখছি সতেরো বছরের বুড়ি।”

–“আমাকে দেখে কি আপনার কাছে পিচ্ছি মনে হয়?”

–“না তো। পিচ্ছি মনে হয়।”

–“উফস আবার? আপনি না___”

–“কি?”

–“কিচ্ছু না।”

এই বলে আনিতা মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো। আহিয়ান দুহাতে আনিতাকে জড়িয়ে নেয়। আনিতার ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছুতেই পারছে না। শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে আনিতা বলে,

–“ছাড়ুন তো আমায়।”

–“উঁহু। আগে তুমি করে বলো।”

–“নাহ আপনিই ঠিক আছে।”

–“আগে যে তুমি বলতে।”

–“তখন আদৃত ছিলেন আর এখন আহিয়ান।”

–“মানুষ তো একজনই শুধু নাম দুইটা।”

–“তা ঠিক। তবে আমি আদৃতকে তুমি বলে অভ্যস্ত আর আহিয়ানকে আপনি।”

–“একজনই তো। সুতরাং আদৃতকে তুমি বলতে পারলে আহিয়ানকেও তুমি বলতে পারবে।”

–“উহুম উহুম।”

কারো গলা ঝাড়ার শব্দ পেয়ে আহিয়ান আনিতাকে ছেড়ে দিলো। ছাড়া পেতেই আনিতা কিছুটা দূরে সরে বসলো। তন্ময় রুমে এসে বিছানার শেষ মাথায় বসে বলে,

–“তোর লজ্জা করে না আহিয়ান? এইটুকু একটা বাচ্চা মেয়েকে তুই জড়িয়ে ধরে বসে আছিস।”

–“তোকে তো আনিতা নিজের ভাই-ই মানে। দেখলি ছোট বোন এখানে তার ভালোবাসার মানুষকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে তারপরও রুমে আসলি তুই। তো তোর লজ্জা করে না? এত বড় নির্লজ্জ তুই? ছিঃ তন্ময় এটা কিন্তু ঠিক না। নেক্সট টাইম থেকে সাবধান ওকে?”

তন্ময় আর আহিয়ানের কথা শুনে আনিতা বিছানা থেকে নেমে এক দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। আনিতার এভাবে পালিয়ে যাওয়া দেখে তন্ময় আহিয়ান দুজনেই শব্দ করে হেসে দিলো।

একটু বাদেই গাড়ি এসে পড়বে। এয়ারপোর্টে যাওয়ার জন্য আনিতা রেডি হচ্ছে। ব্লু জিন্স আর একটা হলুদ কূর্তি পড়ে রেডি হয়ে নিলো আনিতা। চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া আর গলায় স্কার্ফ ঝুলানো। রেডি হয়ে দশ টাকার একটা বমির ট্যাবলেট খেয়ে নিলো।

আনিতা রুম থেকে বের হতেই দেখে তন্ময় ফাইয়াজ আহিয়ান ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছে। আহা কি খাতির যত্ন! মনে হচ্ছে এরা দুজন ফাইয়াজের বন্ধু না এই বাড়িরই ছেলে আহিয়ান আর তন্ময়। আনিতা মনে মনে বলে,

–“যখন জানতে পারবে তোমাদের এই এত আদরের ছেলে আহিয়ান তোমাদেরই বাড়ির মেয়ের সাথে প্রেম করছে তখন দেখবো এত আদর যত্ন কোথায় থাকে।”

আনিতার দিকে আহিয়ানের চোখ যেতেই আহিয়ান ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে,

–“কি হয়েছে?”

আনিতা চোখের ইশারায় ‘কিছু না’ বোঝায়। আনিতা ওর দাদুর পাশে গিয়ে বসার মিনিট পাঁচেক পরই গাড়ির হর্ন বেজে উঠলো। আনিতা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত নয়টা বাজে। ওর চাচ্চু নামবে এগারোটার দিক। ফাইয়াজ তাড়া দিতেই আহিয়ান আনিতা তন্ময় সবার থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে এলো বাসা থেকে। বড় গাড়ি ভাড়া করা হয়েছে। ফাইয়াজ গিয়েই ড্রাইভারের পাশের সিটে বসে পড়লো। আর তন্ময় মাঝের সিটে গিয়ে হাত-পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে বলে,

–“তোরা দুজন পিছনে যা ভাই। আমার আজ ঘুম হয় নাই তাই আমি পুরো সিটে ঘুমাতে ঘুমাতে যামু।”

–“তন্ময় ভাইয়া জানালার পাশের সিট লাগবে আমার। নয়তো পরে বমি চলে আসবে। তুমি পিছনে যাও প্লিজ।”

আনিতার কথা শুনে ফাইয়াজ পিছু ঘুরে বলে,

–“পিছনে বোস বা সামনে বমি করলেই ধাক্কা মেরে গাড়ি থেকে ফেলে দিবো।”

ফাইয়াজের কথায় আনিতা মুখ বাকালো। তা দেখে তন্ময় মৃদু হাসে। আহিয়ান একবার আনিতাকে দেখে তন্ময়কে উদ্দেশ্য করে বলে,

–“পিছনে গিয়ে ঘুমা নয়তো এখানেই চেপে বোস।”

তন্ময় আরো আরাম করে বসে বলে,

–“পারবো না। না মানে একদমই না।”

হাল ছেড়ে দিয়ে আনিতা আর আহিয়ান পিছনে গিয়েই বসলো। আহিয়ান তন্ময়ের দিকে রাগী চোখে তাকাতেই তন্ময় সিটের উপর হাটু দিয়ে ভর করে বসে আহিয়ানের কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,

–“সুযোগ করে দিলাম একসাথে বসে একটু সময় কাটানোর। তা আর সহ্য হলো না তাই না? ওয়েট আনিতাকে আমি আমার পাশে ডেকে নিচ্ছি।”

–“এই না না। থ্যাংকিউ সো মাচ ভাই। উম্মাহ, লাভ ইউ।”

আহিয়ানের কথা শুনে তন্ময় কিছুক্ষণ আহাম্মকের মতো তাকিয়ে থেকে উলটো ঘুরে ঠিকভাবে বসে পড়লো।

গাড়ি চলতে শুরু করেছে বেশ কিছুটা সময়। গ্রামের রাস্তাঘাট পেড়িয়ে এগিয়ে চলেছে শহরের দিকে। কিছু কিছু জায়গায় ঘুটঘুটে আঁধারে ছেয়ে আছে চারিপাশ। আবার কিছু কিছু জায়গায় খুবই আলোকিত। রাস্তার দুপাশে থাকা টং দোকানগুলোতে লাইট জ্বলছে। কিছুক্ষণের মাঝেই দোকানীরা দোকানপাট বন্ধ করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে।

আনিতা এদিক ওদিক তাকিয়ে রাতের রাস্তাঘাট দেখছে। আর আহিয়ান একদৃষ্টে তার আনিতাকে দেখছে। আহিয়ানের থেকে এক দেড় হাত দূরত্বে বসে আছে আনিতা। ঘুরেফিরে আনিতার চোখ আহিয়ানের উপর পড়তেই আনিতা চোখ সরিয়ে নিলো। আহিয়ান আনিতার কান্ডে ঠোঁট কামড়ে ধরে নিঃশব্দে হেসে দিলো। আহিয়ান আনিতার কোমড় চেপে ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলো। এক ইঞ্চিও দূরত্ব নেই এখন দুজনের। আহিয়ান এক হাতে আনিতাকে ওর বুকের সাথে একদম মিশিয়ে নিলো। আনিতাও নিশ্চুপ হয়ে আহিয়ানের বুকে মাথা রেখে বসে রইলো।



চলবে