শুধু তোমায় ঘিরে পর্ব-০৯

0
2455

?শুধু তোমায় ঘিরে?

#মেঘা আফরোজ…..?
#পর্ব-৯…..?

?

রাতে ছাদে বসে সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম। চারিদিকে বাতাস বয়ে চলেছে আজ মনে হচ্ছে যেনো প্রাণ খুলে নিশ্বাস নিতে পারছি। পরিবেশটা খুব সুন্দর ছিলো বাড়িটা একটু পুরোনো হওয়ায় যেনো আরো ভালো লাগছে। আশেপাশের গাছগুলো একই তালে বাতাসে দোল খেয়ে যাচ্ছে আর মাথার ওপরে রয়েছে পূর্ণ চাঁদ,সব মিলিয়ে জাস্ট অসাধারণ লাগছে।

এবাড়িটা আমার নানাভাইয়ের করা নানাভাই নানু বেচে নেই শুধু এ বাড়িটাই তাদের স্মৃতি হিসেবে রয়েছে। আমার একটাই মামা। এখানে মামা মামি আর ওনাদের ২ছেলেমেয়ে আয়ান ভাইয়া আর অর্পাকে নিয়ে থাকেন।
আয়ান ভাইয়া মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে তাসিনের সাথেই আর অর্পা নবম শ্রেণীতে পড়ে।

আমার পাশে তিশা বসে আছে অন্যপাশে অর্পা। তাসিন রোহান ভাইয়ার পাশে থেকে উঠে এসে আমার কানের কাছে মুখ এনে আস্তে করে বললো
..এই মেঘাপাখি আজ সারাদিনে তোমাকে একটুও একা পাইনি এবার তো এই আড্ডা মহল ভেঙে আমাকে একটু সময় দাও।
তিশা জোরেই বলে উঠলো
..ভাইয়া এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না। ওর কানে কানে কি বলছেন জোরে বলুন আমরাও শুনি।
আয়ান ভাইয়া বলে উঠলো
..তাসিন আমি না এখনো ভাবতে পারছি না মেঘ আর তোর ব্যাপারটা।
..তোর আমাদেরকে নিয়ে আর ভাবতে হবে না নিজের টা ভাব।

. ?

সারাদিন জার্নি করে এসে সবাই কিছুটা ক্লান্ত আপু আর ইমরান ভাইয়া আগেই নিচে চলে গিয়েছি অর্পা ও গিয়েছে। গ্রামে রাত ৮টা বাজতেই যেনো সব শান্ত হয়ে যায় এখন ১০:৪৩বাজে মনে হচ্ছে যেনো মধ্য রাত এখন। আমরাও নিচে চলে আসলাম রিশা আপু তিশা আর আমি একি রুমে থাকবো। রুমে এসে রিশা আপু শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লো হয়তো ক্লান্ত থাকায় ঘুমিয়ে পড়েছে। তিশা আর আমি শুয়ে শুয়ে গল্প করছি হঠাৎ আমার ফোন বেজে উঠলো তাসিন ফোন দিচ্ছে রিসিভ করে কিছু বলার আগে উনি বললেন

..মেঘাপাখি খুব মিস করছি তোমায়।
..আমরা অনেক দুরে আছি নাকি মিস করার কি আছে!
..মা ঠিকি বলে তুমি সত্যি এখনো বাচ্চাই আছো। কেনো যে এই বাচ্চাটার প্রেমে পড়তে গেলাম।
..ওওও আমি বাচ্চা তাইনা ঠিকআছে রাখুন কথা বলতে হবে না বাচ্চার সাথে।
..আরে আমি তো মজা…….যাহ কেটে দিলো! এখন কি করি আমি?

আমি ফোন কাটতেই তিশা খিলখিল করে হেসে উঠলো।
..ওই তুই হাসছিস কেনো?রেগে তাকিয়ে।
..হাসবো না! ভাইয়া তোকে বাচ্চা বলে ডাকলো। বলেই আবারো হাসতে লাগলো।
..তিশা হাসবি না বলে দিচ্ছি না হলে তোকে রুম থেকে বের করে দিবো।
..না না আর হাসবো না আমাকে বের করিস না মেঘা এমনিতে কেমন যেনো গা ছমছমে একটা পরিবেশ মনে হচ্ছে।
..হুমম ঘুমিয়ে পড় এখন তা হলে জানিস তো গ্রামে পুরোনো সব বাড়িতে…..
ব্যাস কাজ হয়ে গেলো তিশা ঝরের গতিতে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে চোখটা বুঝে নিলো,,,,,,আমারি তো এখন হাসি পাচ্ছে পুরোই বাচ্চাদের মতো গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়লো তিশা।

. ?

তাসিন বার বার ফোন দিয়েই চলেছে নিজে তো ঘুমাবেই না আমাকেও ঘুমাতে দিবে না। বিরক্তি নিয়ে ফোনটা ধরলাম
..কি হয়েছে কি আমাকে ঘুমাতে দিবেন না আপনি?
..আমার ঘুম কেড়ে নিয়ে নিজে ঘুমাবে এটা তো হতে পারে না।
..আমি আবার কি করলাম!!
..অনেক কিছু করেছো। এখন জলদি রুম থেকে বেড়িয়ে এসো তো।
..কেনো এতো রাতে বের হবো কেনো?
..এসোই না তারপর বলছি।
..ঠিকআছে আসছি।

রুম থেকে বেড়িয়ে একটু এগোতেই কেউ হুট করে আমাকে কোলে তুলে নিলো। আমি ভয় পেয়ে চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে নিলাম।
..মেঘা আমি ভয় পাওয়ার কিছু নেই তাকাও।
আমি আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাসিনের হাসি মুখটা দেখতে পেলাম। উনার বুকে কয়েকটা কিল মেরে বললাম
..এভাবে কেউ কোলে নেয় কতোটা ভয় পেয়েছিলাম জানেন! এমনিতে নতুন জায়গা।
..সরি মেঘাপাখি আমি বুঝতে পারিনি তুমি ভয় পেয়ে যাবে।
..হুম হয়েছে নামান আমাকে।
..উহু এখন নামাচ্ছি না,,, বলেই সামনে হাটতে লাগলো।
..তাসিনে শার্ট খামচে ধরে আছি,,,,পরে যাবো তো।
..আমার গলাটা ধরো তা না হলে তুমি পড়বে না আমি ফেলে দিবো।
আমি দুহাতে তাসিনের গলা জড়িয়ে ধরলাম। তাসিন আমাকে ছাদে এনে নামালো
..এখানে কেনো আনলেন?
..তোমায় সাথে নিয়ে গায়ে চাঁদের আলো মাখবো তাই। দেখো কি সুন্দর চাঁদ আকাশে,,,,অবশ্য আমার সামনে থাকা চাঁদটা তার থেকে বেশি সুন্দরী।
..এই আমি আপনার সাথে কথা কেনো বলছি তখন আমাকে বাচ্চা বলেছেন আমি এখানে থাকবো না গেলাম।
আমার হাত ধরে একটানে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলেন
..কোথাও যাওয়া চলবে না এখন আমার কাছেই থাকবে তুমি এমনিতে আজ সারাদিনে তোমাকে কাছে পাইনি।
উনার প্রতিটি গরম নিশ্বাস এসে পড়ছিলো আমার মুখে বার বার কেঁপে কেঁপে উঠছিলাম আমি। উনি আমার কোমড়টা জড়িয়ে আরো কাছে টেনে নিলো। এবার যেনো আমার দম বন্ধ আসার উপক্রম হয়েছে নিশ্বাসটাও ভারি হয়ে আসছিলো। নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করছি কিন্তু উনার শক্তির কাছে পেরে উঠছি না। উনি আমার ঘারে মুখ গুজে নেশা ধরা কন্ঠে বলতে লাগলো
..মেঘাপাখি এতো ছটফট করছো কেনো চুপচাপ থাকো না।
বলেই আমার ঘারে আলতো করে নিজের ঠোঁঠ ছোয়ালো। আমার কি হলো জানিনা আমি দুহাতে আকড়ে ধরলাম তাসিনকে। উনিও পরম আবেশে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। তারপর আমাকে ছেড়ে উনার দুহাতে আমার মুখটা ধরলেন। আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম খুব লজ্জা লাগছিলো আজ তাসিনের দিকে তাকাতে।
..এই মেঘা চোখ খোলো তাকাও।
আমি চোখ খুলে তাকিয়ে আবারো নামিয়ে নিলাম। উনি মুচকি হেসে আমার দুগালে চুমু খেলো। তাসিনের প্রতিটি ছোয়াতে আমি কেঁপে উঠছি। তাসিন নেশাময় কন্ঠে বলতে লাগলো
..কি আছে গো তোমার মাঝে নিজেকে যে হারিয়ে ফেলছি আমি। ইচ্ছে করছে সারাটি জীবন দুজন এভাবেই থাকি কেনো এতো পাগল করলে মেঘাপাখি!
তাসিনের কথার কোনো উত্তর দিলাম না আমি শুধু উনার চোখের দিকে তাকালাম। অন্য রকম এক নেশা দেখতে পেলাম উনার চোখে।
তাসিন আস্তে আস্তে আমার ঠোঁটের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো তারপর নিজের ঠোঁট দ্বারা আকড়ে ধরলো আমার ঠোঁট জোড়া ডিপলি কিস করতে লাগলো ঠোঁটে।
প্রায় ৫ মিনিট পর ছেড়ে দিলো আমি ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলতে লাগলাম উফ আর একটু হলে দমটাই হয়তো আটকে যেতো। আমি নিজেকে উনার থেকে ছাড়িয়ে কিছুটা দুরে এসে হাপাতে লাগলাম।

উনি এসে আমার পাশে দাড়িয়ে আমার হাত ধরে বললেন
.. সরি মেঘা,,,,আমি এমনটা করতে চাইনি কিন্তু কি যে হয়ে গেছিলো আমার সামলাতে পারিনি নিজেকে। এই মেঘা তুমি কি রাগ করেছো?
আমি উনার দিকে ঘুরে চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম।
..সরি কেনো বলছেন আমি রাগ করিনি তো।
..সত্যিই বলছো? বিশ্বাস করো মেঘা আমি….
ওনাকে থামিয়ে বললাম
..আমি সত্যিই রাগ করিনি।

. ?

ছাদের কার্নিশে হেলান দিয়ে বসে আছি তাসিন আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে আমার এক হাত উনার বুকের সাথে মিশিয়ে রেখেছে অন্য হাতে উনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
..মেঘা একটা কথা বলবো?
..হুমম বলুন।
..আমি যদি কখনো হারিয়ে যাই আমাকে খুজবে তুমি অপেক্ষা করবে আমার জন্য?
তাসিনের বলা কথা আমার বুকের ভেতরটা ধপ করে উঠলো
..আপনি এসব কি বলছেন কোথাও যাবেন না আপনি আমাকে ছেড়ে।
..যাবো না তো তারপরেও বলোনা কি করবে তুমি?
..জানিনা কি করবো তবে এটুকু বলতে পারি আপনাকে ছাড়া আমার জীবন টা অন্ধকার হয়ে যাবে। আমি কোনো ভাবেই হারাতে চাই না আপনাকে। ধরা গলায় বললাম।
তাসিন দ্রুত উঠে আমার গালে হাত দিয়ে
..এই পাগলি একদম কাঁদবে না আমি তো এমনি বলেছি।
আমার চোখ থেকে কয়েকফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। তাসিনের বুকে মাথা রেখে বললাম
..আমাকে একা করে কোথাও যাবেন না আপনি কোথাও না। আমি যে খুব ভালোবেসে ফেলেছি আপনাকে।
..যাবো না পাগলিটা কোথাও যাবো না আমিও যে ভীশন ভালোবাসি তোমাকে।
দেখি চোখ মুছো তো এমন একটা সময়ে কেউ কাঁদে! নাকি আরো আদর করতে হবে হুমম?
..ধেত কিসের মধ্য কি বলে আদর কে চেয়েছে?
..ভবিষ্যৎ এ আমাদের যে কিউট প্রিন্স বা প্রিন্সেস আসবে তাদের আম্মু চেয়েছে। হেসে বললো।
..আপনি না সত্যিই খুব দুষ্টু আগ বাড়িয়ে বলেন সব সময়।
উনি আমার কথায় জোরে হেসে উঠলো আমাকে একহাতে জড়িয়ে নিয়ে বললো
..আমার হবু বউ কেই তো বলি অন্য কাউকে তো বলছি না।

. ?

পরের দিন বিকেলে সবাই ঘুরতে বেড়িয়েছি। চারিদিকে সবুজের সমারোহ,নানা রকম পাখির ডাক ভেসে আসছে কানে। বিকেলের গোধুলি আলোতে ঝলমল করে উঠছে গাছের পাতাগুলো। তমা আপু ইমরান ভাইয়া কিছুটা সামনে আমাদের থেকে। রিশা আপু আগে কখনো গ্রামের এমন পরিবেশ দেখেনি এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে রিশা আপু আনন্দে আত্তহারা। এতোটাই লাফালাফি করেছে যে আকাবাকা রাস্তায় আনমনে হাটতে গিয়ে পরে গিয়ে পায়ে খুব ব্যাথা পেয়েছে। পরে রোহান ভাইয়া রিশা আপুকে নিয়ে একজায়গায় বসে আমাদের বললো ঘুরে আসতে।

আমি তিশা একসাথে হাটছি তিশা তো ওর ফোনের ম্যামরি টা ফুল করে ফেলেছে ছবি তুলতে তুলতে। তাসিন আয়ান ভাইয়া আমাদের পেছনেই হাটছে। তিশা বললো
..মেঘা ভাইয়া কি বলবে বলতো উনাকে রেখে তুই আমার সাথে হাটছিস।
..কিছুই বলবে না আর তোকে একা রেখে আমি উনার সাথে হাটবো নাকি।

আয়ান ভাইয়া তিশার পাশে এসে বললো
..এই যে ম্যাম ওদেরকে একটু আলাদা সময় কাটাতে দিন।
..আমি কি করবো মেঘাই তো শুনছে না।
..একটা কাজ করি আপনি আমার সাথে চলুন।
..আপনার সাথে যাবো কেনো আমি একা চলতে পারিনা নাকি।
..হুম অবশ্যই পারেন আমি তো বলিনি একা চলতে পারবেন না।
তাসিন আয়ান ভাইয়াকে মাথায় চাটি মেরে বললো
..আমার আর মেঘার তো ভালোই লাগছে তিশা আর তোর সাথে থাকতে। তাহলে তোর এতো প্রবলেম কিসের শুনি?
..শোন তাসিন আমার কোনো প্রবলেম নেই আমি তো জাস্ট তোদের দিকটা ভেবেই বলেছি।
আমি হেসে বললাম….আচ্ছা ভাইয়া আমার না একটু সন্দেহ হচ্ছে।
..কিসের সন্দেহ?
..এই যে কাল আসার পর থেকেই তোমার চোখটা ঘুরে ফিরে আমার বেস্টুর দিকেই যাচ্ছে। তুমি কি আমাদের প্রাইভেসি দিতে চাচ্ছো নাকি নিজে নিতে চাচ্ছো কোনটা হুমম??
তিশা আমার দিকে একটু রেগে তাকালো। তাসিন হেসে বলে উঠলো
..মেঘা ঠিক বলেছো তুমি। কি ব্যাপার আয়ান এমন কিছু নয় তো??
..এমন কিছু হলেও ক্ষতি নেই রে বরং ভালোই হতো। আড় চোখে তিশার দিকে তাকিয়ে।
তিশা এবার রেগে সামনে হাটতে লাগলো। আমি আর তাসিন আয়ান ভাইয়ার কথায় অবাক হয়েছি ঠিকি তবে তিশা এভাবে যাওয়া দেখে দুজনেই হেসে উঠলাম।
আর আয়ান ভাইয়া সেতো তিশার দিকেই তাকিয়ে আনমনে বলতে লাগলো…একে তো রাগলে আরো কিউট লাগে।

?

#চলবে. . . ?