শুভ্র নীলাভ আকাশে মেঘের আনাগোনা পর্ব-১৩

0
365

#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা(১৩)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)

রামিসা এক গাট্টি কাপড় হাতে করে নিয়ে যাচ্ছিল হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা লেগে হাতের সব গুলো কাপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফ্লুরে পরে গেল।
রামিসা হাঁ করে তাকিয়ে আছে ফ্লুরের দিকে। বিরক্তিতে “চ” উচ্চারণ করে।
সামনে তাকিয়ে তায়েস কে দেখতে পেয়ে চিৎকার করে বললো,
-“রাজা’কার,আলবদর বাহিনীর সদস্য কোথাকার! কি করলেন এটা? চোখ দুটো কি হাতে নিয়ে হাঁটেন?

তায়েস মাত্র‌ই কক্সবাজার থেকে ফিরেছে, ভিশন ক্লান্ত সে।তাই রামিসার এসব কথা পাত্তা না দিয়ে কাপড় গুলো ডিঙ্গিয়ে সামনে পা বাড়ায়!
তখন রামিসা আরো রেগে গিয়ে চিৎকার করে বললো,
-“বড় মা?বড় বাবা?তোমরা কোথায়? দেখে যাও তোমার রাজা’কার আলবদর ছেলে কি করেছে।

রামিসার এহেন চিৎকারে সবার আগে আলো রুম থেকে দৌড়ে এসে বললো,
-“কি হয়েছে রামিসা?

এ কথা বলতেই পাশে থাকা ব্যাক্তির দিকে নজর পরে আলো’র। সাথে চোখে ফুটে ওঠে ভয়ের ছাপ! সাথে সাথে নিজেকে আড়াল করতে ঘুড়ে দাঁড়িয়ে ওরনা দিয়ে মুখশ্রী ডেকে নেয় আলো।

কিন্তু তার উপর এখনো অবধি কারো নজর স্থির রয়েছে।
আয়েশা আর ফাহমিদা খাতুন ততক্ষণে দৌড়ে আসে।রিনু এসেই বললো,
-“ছোড ভাইজান আয়ে পরছেন?তয় আমাগো জন্যি আছার মাছার তো নিয়া আইতে পারতেন,শুনিছি ঐহানের আছাড় মেলা স্বাদ খাইতে।

ফাহমিদা খাতুন বললেন,
-“আছার মাছার আবার কি?

রামিসা রেগে গিয়ে বললো,
-“তোমরা আছার মাছার নিয়ে পরে আছো? এদিকে দেখ তোমাদের গুনধর ছোট ছেলে কি করছে। আমার আইরন করা সমস্ত কাপড় এলোমেলো করে দিয়েছে।
বড় মা তুমি যদি আজকে এর একটা বিহিত না করো তাহলে কিন্তু আমি কি করবো নিজেও জানি না কিন্তু।

রিনু হাসতে হাসতে বললো,
-“ছোড আফা আন্নে তো নিজেই জানেন না কিডা করবেন তাইলে..

রামিসা চিৎকার করে বললো,
-“রিনুর বাচ্চা রিনু তোমাকে বেশী কথা বলতে কে বলেছে এখানে?
-“আফা আমার তো কোন বাচ্চা..

এটুকু বলতে রামিসা ধমকে বললো,
-“একদম চুপ করে থাকতে বলছি আমি।

এমন ধমকে রিনু মুখে আঙ্গুল দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
আলো এখান থেকে চলে যেতে নিলে তায়েস আঙ্গুল তুলে আলো কে দেখিয়ে বলে উঠলো,মা উনি এখানে?

সবার নজর এখন আলোর দিকে পরে।
আয়েশা ছেলের কাছে এগিয়ে বললো,
-“তোকে বলেছিলাম না বাসায় ফিরলে সারপ্রাইজ আছে।এই সেই সারপ্রাইজ!

তায়েস সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-“মানে? তোমার কথা বুঝতে পারলাম না মা।

আয়েশা তায়েসের কাঁধে হাত রেখে বললো,
-“আমাদের ফয়জান এর ব‌উ আলো ইসলাম!

ফয়জান ভাইয়া বিয়ে করলেন কবে?

যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত হল!
তায়েসের ভিতরটা খানিকটা কেপে উঠলো। ফয়জান বিয়ে করেছে তাও আবার এই মেয়েটাকে?এটা যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না সে!
কাজের প্রেশারে ভুলেই গিয়েছিলো সে যে কাউকে পছন্দ করে! তাকে বিয়ে করার কিঞ্চিৎ স্বপ্ন দেখেছিল!
মস্তিষ্ক কেমন এলোমেলো লাগছে। কাউকে কিছু না বলে তায়েস নিজের রুমে চলে গেল। খানিকটা শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দিল।

সবাই তাকিয়ে আছে তায়েস এর যাওয়ার পানে।তায়েসের মতিগতি কারোই মাথায় ঢুকলো না।আলো স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করে রুমে চলে গেল।

রামিসা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ফ্লুরের কাপড় গুলো তুলে নিয়ে রুমের দিকে গেল।
আয়েশা আর ফাহমিদা খাতুন কিচেনের দিকে যেতে যেতে বললো,
-“এই রিনু তুই কি এভাবে থম মেরে দাঁড়িয়েই থাকবি?কত কাজ বাকি আছে জানোস না?

রিনু বললো,
-“মনে অ‌ইতাছে ডালমে কুচ কালা হ্যায়!

আয়েশা রেগে বললেন,
-“হিন্দি সিরিয়াল দেখে দেখে কি সব বলিস বুঝি না আগা মাথা আয় তাড়াতাড়ি?
.
.
খাবার টেবিলে রামিসা খেয়াল করলো,তায়েস অন্যান্য সময়ের থেকে একদম চুপচাপ, মনমরা হয়ে খাবার খাচ্ছে। আয়েশা ছেলেকে খাবার বেড়ে দিতে দিতে কক্সবাজার এর কাজের সম্পর্কে এটা ওটা নিয়ে প্রশ্ন করছে।তায়েস উত্তর দিচ্ছে তো আবার চুপ করে আছে।
ব্যাপারটা মোটেও ভালো লাগছে না রামিসার।তাই একটু ভেবে তায়েসের প্রতিক্রিয়া বুঝতে আয়েশা কে বললো,
-“বড় মা তুমি তোমার ছোট ছেলেকে সব দিয়ে দিচ্ছ, আমাদের ও একটু দাও?

সবাই হাসে এ কথা শুনে। আয়েশা বললো,
-“দিচ্ছি দাঁড়া।

ফাহমিদা খাতুন রামিসা কে ধমকে বললেন,
-“ছেলেটা কতদিন পর বাসায় ফিরেছে। ওকে দিবে না কি করবে?

রামিসা মুখে ভেংচি কেটে বললো,
-“তোমরা মায়েরা এতো দু-চোখা কেন বলোতো?তোমরা সব সময় ছেলেদের বেশি আদর করো।

তখন আয়েশা বললেন,
-“ঠিক তেমনি বাবা’রা মেয়েদের বেশি আদর করেন।
-“তোমরা এরকম করলে তো বাবা’রা মেয়েদের আদর করবেই। না হয় তারা আর কার কাছে যাবে বলো?

শফিক মাহমুদ আর রুহুল আমিন ও রামিসার পক্ষ নিয়ে বললেন,তাই তো তোমরা ছেলেদের বেশি আদর করবে আর আমরা মেয়েদের বেশি আদর করবো না? তোমাদের থেকে বেশি করবো।

সবার এতো কথার মধ্যে তায়েস একটি কথাও বললো না। অথচ অন্য সময় হলে রামিসার সাথে পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করতো।
সবটাই খেয়াল করলো রামিসা।

এদিকে কায়েস ও নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।তার‌ও কিছু একটা হয়েছে। না হয় রামিসার কথার প্রতিবাদ না করলেও পরিবারের সদস্যদের হাসিখুশি পরিবেশ দেখলে সেও প্রাণ ভরে হাঁসতো আর আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে সবার জন্য দো’আ করতো।যেন তার পরিবার এমনি করেই সারাজীবন হাসি খুশি জীবন পার করে।
কিন্তু সেও চুপচাপ খেয়ে চলেছে।

আর ফাইজা নিজের রুমে বসে আছে। ছেলেদের খাওয়া শেষ হলে ফাইজা,আলো, আয়েশা এবং ফাহমিদা খাবে।
রামিসার খিদে পেয়েছে বলে বাবাদের সাথে খেতে বসে পরে।
.
রামিসা খাবার খেয়ে এসে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে পড়তে বসে।
আজকে বাংলা বিষয় নিয়েছে। গ্রুপের সাবজেক্ট এর প্যারায় বাংলা বিষয় পড়া হয়ে উঠে না।তাই আজকে নেওয়া।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্প অপরিচিতা পড়ছে সে। গল্পটা খুবই সুন্দর।পড়ার ফাঁকে তায়েসের কথা মনে পড়ে।ভাবছে তায়েস কে জিজ্ঞেস করবে কিনা,যে তার কি হয়েছে? অফিসে কোন ঝামেলা হয়েছে কিনা।

আশেপাশে কাউকে দেখতে না পেয়ে রামিসা তায়েসের রুমের দরজা ধাক্কা দিতেই খুলে গেল। এতে একটু অবাক হলো। ভিতরে ঢুকে এদিক ওদিক খুঁজেও তায়েস কে দেখতে পেল না। তারপর বেড়িয়ে এসে ড্রয়িং রুমে দেখলো তাও নেই।

তাছাড়া সবাই সবার রুমে অবস্থান করছে।অন্য রুমেও যাওয়ার কথা নয়।তাই সিদ্ধান্ত নিল ছাদে যাবে। ওখানে থাকলেও থাকতে পারে।
যেই ভাবা সেই কাজ।
ছাদে চলে এলো রামিসা।পুরো ছাদে চোখ বুলিয়ে দক্ষিন দিকে দেখলো, রেলিং এ বসে আছে তায়েস। জোছনার আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।রামিসা এগিয়ে যেতে খেয়াল করলো তায়েস মুখে কিছু একটা ধরে রেখেছে।লাল রঙা দেখা যাচ্ছে।

যখন পুরোপুরি কাছে এগিয়ে গেল তখন বুঝতে পারলো তায়েস সিগা’রেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে‌!
এতে একটু আধটু নয় পুরো আকাশ সম বিষ্ময় ভাব ফুটে উঠেছে রামিসার মুখশ্রী জুরে।এই কয়েকমাসে একদিন ও এরকম সিন দেখেনি রামিসা। তাছাড়া আয়েশা কথায় কথায় বলেছিলেন তার দুই ছেলে কখনও সিগা’রেট খায় না মা শা আল্লাহ।

তাহলে এখন?
রামিসা পা টিপে টিপে গিয়ে হঠাৎ টান দিয়ে ফেলে দিল সিগারেট এর বাকি অংশটুকু।
তায়েস কিছুটা অবাক হল।
কিন্তু কিছু বললো না, পকেট থেকে সিগা’রেট এর পুরো বক্স বের করে ফের সিগারেটে আগুন ধরিয়ে মুখে দিল।

রামিসার ভিশন রাগ হলো বললো,
-“এসব বাজে জিনিস কেন খাচ্ছেন আপনি? ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর আপনি জানেন না?

তায়েস বললো,
-“তাতে তোমার কি? কেন এসেছো এখানে?

রামিসা কথা পাল্টে বললো,
-“এগুলো খাওয়া কিন্তু এক ধরনের অপচয় করা।আর ইসলামে কিন্তু অপচয় করা নিষিদ্ধ। তাছাড়া আমি বড় মা কে বলে দিব আপনি ধুমপান করেন।

রামিসা ফিরে আসতে নিলে তায়েস বললো,
-“আমার বন্ধুরা বলতো সিগারেট খেলে ডিপ্রেশন কমে তাই আজকে ট্রাই করছি।

রামিসা ফের ঘুড়ে দাঁড়িয়ে বললো,
-“কিসের এতো ডিপ্রেশন আপনার?

তায়েস বললো,
-“কাউকে কখনো পছন্দ করেছো?
-“না।
-“তাহলে তুমি বুঝবে না। অজথা বলে লাভ নেই।
-“আপনি বলেই দেখেন না? তারপর লাভ/ক্ষতির হিসাব নিকাশ করা যাবে।
-“একটা মেয়েকে ভালো লাগতো, মেয়েটাকে তার কলেজে প্রথম দেখেছিলাম।
-“তারপর? তারপর কি হয়েছিল?…

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।