শুভ্র নীলাভ আকাশে মেঘের আনাগোনা পর্ব-১৪

0
401

#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা(১৪)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)

আজকে আকাশে হাজারো তারার মেলা। ভারী সুন্দর লাগছে দেখতে। এতো সুন্দর্যোর মাঝেও রামিসা খুশি নয়। বিষন্ন মনে তাকিয়ে আছে ঐ দূর আকাশের দিকে।

তায়েস কে চুপ করে থাকতে দেখে, নজর সরিয়ে তার দিকে তাকালো।সে মনের অসুখে আক্রান্ত হয়ে সিগা’রেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে‌।

রামিসা এবারো টান দিয়ে সিগা’রেট ফেলে দিয়ে বললো,
-“তারপর কি হয়েছে বলুন?
-“তারপর কাজের প্রেশারে ভুলেই গিয়েছিলাম যে কাউকে পছন্দ করি আমি।যার ফলে একদিন হঠাৎ দেখলাম মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে।

তায়েসের এ কথা শুনে রামিসা হাসতে হাসতে পেট চেপে ধরে বললো,
-“সিরিয়াসলি?কেউ কাউকে পছন্দ করলে ভুলে যেতে পারে বুঝি? বছরের সেরা জোকস বললেন।

তায়েস রামিসার হাসি দেখে বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকায়।ক্ষীপ্ত গলায় বলে,
-“তোমার কি মনে হয় আমি পছন্দ করতাম না? শুধু শুধু এসব বকছি?

-“তোমারে যে চাহিয়াছে ভুলে একদিন
সে জানে তোমারে ভোলা কি কঠিন ”
“কাজী নজরুল ইসলাম”

এ কথাটি গভীর ভাবে উপলব্ধি করে দেখুন আপনার সাথে মিল পান কিনা? আসলে ভালোবাসা এমনি হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও মনে থাকে প্রিয়জনের কথা।যদিও আমি তেমন জানি না ভালোবাসার সংজ্ঞা। তবুও আপনার কথাতে মনে হচ্ছে ঐ মেয়েটা শুধু আপনার মোহ ছিল।আর কিছুই নয়।তাই এই দেবদাস’পনা ছেড়ে ভালো হয়ে যান বলছি।

তায়েস কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল। মনে মনে আওড়ালো সত্যি এটা আমার মোহ ছিল? মানুষ তো সুন্দর জিনিষের প্রতি মোহে আকৃষ্ট হয়। মেয়েটি ও তো ভিশন সুন্দর যার কোন তুলনা হয় না।
তাহলে আমি মোহে আকৃষ্ট হয়েছি? ছিঃ ছিঃ আমি তায়েস মাহমুদ কিনা??

মনে মনে এসব ভেবে পকেট থেকে সিগা’রেট এর পুরো বক্সটি ছুড়ে ফেলে দিল ছাদ থেকে।
রামিসা দৌড়ে রেলিং গেসে দাঁড়ায় কিন্তু রাতের অন্ধকারে কিছুই দেখতে পেল না।কি ফেলে দিল তায়েস?তাই বিচলিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
-“কি ফেলে দিলেন আপনি?

তায়েস নির্লিপ্ত কন্ঠে বললো,
-“সিগা’রেটের বক্স!

রামিসা নেত্রজোড়া সামান্য বড় করে তাকিয়ে বললো,
-“আর খাবেন না?
-“দূর এসব ভালো ছেলেরা খায় নাকি?ওয়াক কি ভিশ্রী গন্ধ।

রামিসা অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেছে!এ যে ভুতের মুখে রাম নাম!
ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“আপনি ভালো ছেলে?
-“কোন সন্দেহ আছে?

রামিসা ভ্যাঙ্গো করে বললো,
-“নাহ।
.
.
আজকে ফয়জান তার সাথে আলো কে নিয়ে কলেজে আসে। দুজনকে এক সাথে গাড়ি থেকে নামতে দেখে দারোয়ান থেকে শুরু করে সবাই বাঁকা চোখে তাকায়।

ফয়জান ঠিক করেছে আজকে সবাই কে বলবে তার আর আলোর বিয়ের কথা। দু’জনে কলেজে ঢুকলে সামনে সমির স্যার এর সাথে দেখা হয়।
আলো দ্রুত এখান থেকে তার ক্লাস রুম তিন তলায় চলে যায়।আর ফয়জান সমির স্যারের সাথে নিচ তলায় অফিস রুমে বসে।

কথায় কথায় উপস্থিত সকল শিক্ষক মহোদয় দের বলে তার বিয়ের ব্যাপারে।বিষ্ময় প্রকাশ হ‌ওয়ার সাথে সাথে একজন ব্যাতিত সবাই শুনে খুব খুশি হলো।
কারণ তারা তো জানে ফয়জান খুবই ভদ্র,নম্র একজন মানুষ।সে আলোকে নিশ্চ‌ই সুখী করবে।

সমির স্যারের মুখশ্রী জুরে অজস্র হিংস্রতা ফুটে ওঠে। সবার থেকে আড়ালে চলে যায় তিনি।

যথা সময়ে কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়।
এর মধ্যে পুরো কলেজে খবর ছড়িয়ে পরেছে যে ফয়জান স্যার বিয়ে করেছেন এবং সেকেন্ড ইয়ারের,কমার্সের ছাত্রী আলো ইসলাম কে। অনেক ছাত্র ছাত্রী এ কথা শুনে আলোকে দেখতে আসে।

দ্বিতীয় ক্লাসে ফয়জান আসে ক্লাস করতে।
সবসময়ের মতো মাথা নিচু করে বসে থাকে। ইসমত আরা ফিসফিস করে স্যার কে নিয়ে দুষ্টুমি করে। আর আলো লজ্জায় লাল রঙা হয়ে বান্ধবী কে বলে,
-“প্লিজ চুপ কর স্যার শুনতে পেলে বকা দিবেন।

এ কথা শুনে ইসমত আরা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার জোগাড়।আলো ফয়জান কে এখনো স্যার বলে সম্বোধন করছে,এ যেন সে খুব মজা পাচ্ছে।

ফয়জান ক্লাসে রোলকল করছে,এক পর্যায়ে ফয়জান এর চোখে পড়ে ইসমত আরা ক্লাসের পরিবেশ নষ্ট করছে।তাই ধমকে দাঁড় করায় ইসমত আরা কে।
ইসমত আরা কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে বললো,
-“স্যার আজকে অন্তত বকবেন না প্লিজ?

ফয়জান হাজিরা খাতাটা বন্ধ করে বললো,
-“কেন আজকে কি এমন দিন যে ক্লাসের রুলস পাল্টাতে হবে?
-“স্যার আজকে “স্যার আর বান্ধবীর বিয়ে উপলক্ষে” আড্ডা ক্লাস হলে অনেক মজা হবে!

ইসমত আরা’র এ কথা শুনে ক্লাসের সবাই হ‌‌ই হুল্লোড়ে মেতে উঠে। আলো বছচারির লজ্জায় অবস্থা করুণ। সবাই একমত হয়ে বললো,আড্ডা ক্লাস করার জন্য।
কিন্তু ফয়জানের এক ধমকে ক্লাস পুরো বরফের মতো শিথিল হয়ে গেল।

ফয়জান উচ্চ স্বরে বললো,
-“প্রিন্সিপাল স্যার সিসি ক্যামেরায় সব কিছু পর্যবেক্ষন করছেন,এ ব্যাপারে তোমরা অবগত ন‌ও?

সবাই মাথা নিচু করে বসে থাকে।
ফয়জান আবার বলে,
-“এখন চুপ করে বসে আছো কেন?বলো তোমরা অবগত ন‌ও? ভুলে যাও কেন এটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখানে এসেছো শিক্ষা গ্রহণ করতে আড্ডা দিতে নয়।

কিছুক্ষণ সবার দিকে তাকিয়ে ফয়জান বললো,ব‌ই বের করে সমস্যা দেখাও। তোমাদের টেষ্ট এক্সাম অতি নিকটে। আমার জানা মতে সিলেবাস কমপ্লিট। এখন থেকে তোমাদের কোথায় কোথায় সমস্যা আছে ঐগুলো আমাকে বলবে আমি সমাধান করে দিব ইনশা আল্লাহ।

তারপর কিছু অংকের সমাধান করা হলে ঘন্টা বেজে ওঠে। ফয়জান সব কিছু গুছিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়, আবার ফিরে এসে সবাই কে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“আগামীকাল আলো তোমাদের চকলেট ট্রিট দিবে ইনশা আল্লাহ।

এ কথা শুনে আলো মাথা তুলে তাকায় ফয়জান এর দিকে।আর বাকি সবাই “ইয়ে কি মজা” বলে হ‌ই হুল্লোড়ে মেতে ওঠে।

ফয়জান যাওয়ার আগে আলোকে বলে, টিফিন পিরিয়ডে আলো যেন ফয়জান এর সাথে দেখা করে।
তারপর ক্লাস থেকে বেড়িয়ে ফয়জান।
অফিসে এসে আনমনে হাসে তার স্টুডেন্টদের কথা মনে করে। তাছাড়া আলোর আশ্চার্যো চাহনিটা মন্দ ছিল না।ঘন কালো পাপড়ি গুলো ছুঁয়ে দিতে পারলে ভালো লাগতো বলে মনে হলো ফয়জান এর।
.
.
নূর‌আইন ঘুমে বিভোর হয়ে আছে। তহুরা বেগম সেই কখন থেকে ডেকে চলেছে কিন্তু তার ঘুম ভাঙ্গার কোন নাম গন্ধ নেই। শেষে না পেরে তহুরা বেগম নূর‌আইন এর মাথার নিচ থেকে বালিস টান দিয়ে নিয়ে নিল।

হঠাৎ এমন ঘটনায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে উঠে বসে নূর‌আইন। মুখশ্রী বাংলার পাঁচের মতো করে বললো,
-“মামনি সমস্যা কি তোমার? আমার এত্ত সুন্দর স্বপ্ন টার তেরোটা বাজিয়ে দিলে!
-“কি স্বপ্ন দেখছিলি তুই?
নূর‌আইন আড়মোড়া ভেঙে দাঁড়িয়ে বললো,
-“তোমার জামাই কে নিয়ে..!

এতটুকু বলে থেমে গেল। তহুরা বেগম সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-“কাকে নিয়ে?
-“ক কি কিছু না মামনি।

এই বলে দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে গেল।
মেয়ের কান্ড কারখানা দেখে তহুরা বেগম প্রথমে আশ্চার্যো হলেও পরে হেসে বললো,
-“মেয়ের নিশ্চ‌ই কাউকে পছন্দ হয়েছে। নূরের বাবাকে বলতে হবে।

নূর‌আইন কে সবাই নূর বলে ডাকে।
.
.
আজকে ফয়জান’রা তাদের এপার্টমেন্ট উঠবে। ইতিমধ্যে সমস্ত ফার্নিচার সেটিং করা হয়ে গেছে। এসবের তদারকি করছে কায়েস।কারণ যত তাড়াতাড়ি সবকিছু গুছানো যাবে তত তাড়াতাড়ি তার আর ফাইজার বিয়ে হবে।তাই সবকিছু দ্রুত শেষ করার জন্য সে এই দায়িত্ব নিজ কাঁধে নিয়েছে। সকাল বেলা থেকে এসব করছে। সাথে আছে রামিসা সে কিছু কিছু কাজে সাহায্য করছে কায়েস কে।

আয়েশা আর ফাহমিদা বাসায় টুকটাক যা জিনিষ পত্র লাগবে ঐগুলো ঘুরে ঘুরে শপিং মল থেকে ক্রয় করছে। কায়েস একটু পর পর কল করে জিজ্ঞাসা করছে তাদের শপিং শেষ হয়েছে কিনা? শেষ হলে কায়েস তাদের নিয়ে যেতে আসবে।
.
.
আলো টিফিন পিরিয়ডে অফিস রুমের সামনে আসলে, ফয়জান তাকে নিয়ে ক্যান্টিনে বসে খাবার অর্ডার করে। খাবার আসলে ফয়জান আলোকে বলে খাওয়ার জন্য। এদিকে আলো’র ডান হাতটা ব্যথা করছে খুব নাড়াতে পারছে না। কোন রকম হাতটা খাবারের উপর রাখে কিন্তু খাবার তুলে খাওয়ার শক্তি পাচ্ছে না।
ব্যাপারটা মোটেও এড়ায় না ফয়জান এর চোখে।তাই বললো,
-“খাবার রাখো, হাতটা এখানে দাও?
-“জ্বি?
-“বলছি হাতটা এখানে দাও?

আলো হাতটা ফয়জান এর দিকে বাড়িয়ে ধরে। ফয়জান আলো’র হাতটা নিজের হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো হাতে কি হয়েছে?
হাতটা কিছুটা লাল রঙা হয়ে আছে। ফয়জান টিপে দিতে আলো আহ্!করে শব্দ করে উঠে।

ফয়জান বললো,
-“কি হয়েছে হাতে? কলেজে আসা পর্যন্ত তো ভালোই ছিল। হঠাৎ এরকম হলো কিভাবে?

আলো চুপ করে বসে আছে, কি জবাব দিবে সে?তার তো জবাব দেওয়ার কোনো ভাষা নেই।
.
নিজের ক্লাস থেকে বেড়িয়ে অফিস রুমে যাওয়ার পথে সমির স্যার পথ আটকে দাঁড়ায়।সে দিকটায় সিসি ক্যামেরার আওতামুক্ত হ‌ওয়ায় আলোর হাত মুচড়ে ধরে সমির স্যার। এবং হুমকি দেয় ফয়জান স্যারকে বিয়ে করার দুঃসাহসী কাজের জন্য খুব বড় পস্তাতে হবে আলো’কে!…..

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।