শূন্যস্থানে তুমি পূর্ণতা পর্ব-০১+০২

0
629

#শূন্যস্থানে তুমি পূর্ণতা
#পর্বঃ০১+০২
#ফারজানা_আক্তার

এই কালো পরি বাসর করবো তোমার সাথে, দিবে কী একটা রাত? মিটাবে কী তৃষ্ণা এই প্রাণের?

সিয়ামের এই কথার প্রতিটি শব্দ রাইসার কর্ণগোচর হতেই যেনো গাঁয়ের সব লোম কাঁটা দিয়ে গেলো ওর। রাগে কান্নার ভাব আসছে রাইসার কিন্তু উচিত জবাব না দিয়ে কান্নায় ভেঙে পরার মতো মেয়ে রাইসা নয়। কিছুটা সামনে এগিয়ে চোখের কালো চশমা টা ঠিক করে রাইসা বলে উঠে “শিক্ষার বড্ড অভাব আপনার মাঝে, আপনার বাবা মা কী এতোটাই মূর্খ নাকি যে আপনাকে এইটুকু শিক্ষা দিতে পারেনি একটা মেয়ের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়? ছিঃ”

এইটুকু বলে নিজের ক্লাসের দিকে এগিয়ে যায় রাইসা। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে রাইসা। চট্টগ্রাম সিটি কলেজে পড়ার বড্ড স্বাদ ছিলো তাই অনেক খাটাখাটুনি করে এই কলেজেই ভর্তি হয়েছে সে। যদিও টাকা সংগ্রহ করতে কষ্ট হয়েছে অনেক। স্কুল জীবন পার করে মাত্র ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছে রাইসা। আজকে কলেজের প্রথম দিন আর আজকেই রাইসার মন খারাপ হয়ে যায় সিয়ামের এমন বাজে কথায়। খুব ছোটবেলা থেকেই পরিপূর্ণ পর্দা করে আসছে রাইসা, আজকেও কালো বোরকায় কালো নিকাবে কালো হাত-পা মুজায় নিজেকে সম্পূর্ণ ঢেকে এসেছে সে তবুও বাজে লোকের নজরের আঁড়াল হতে পারলোনা তাই রাগ হচ্ছে নিজের উপরই। সব স্বপ্ন পূরণ না হওয়ায় উত্তম আনমনা হয়ে ভাবছে রাইসা।

ক্লাসে মন খারাপ করে একা বসে আছে রাইসা। যেহেতু কলেজে নতুন তাই এখনো কোনো ফ্রেন্ড হয়নি ওর। স্যার চলে গেলে ক্লাস শেষে পাশ থেকে রিয়া নামের একটা মেয়ে হঠাৎ বলে উঠে “বন্ধু হবে আমার?”
রাইসা কি বলবে ভাবছে কারণ এতো সহজে কাউকে বিশ্বাস করা ঠিক না তবুও কিছু তো বলতে হবে নয়তো খারাপ দেখা যায় বিষয়টা। অনেক ভেবে রাইসা বলে “হুম কেনো নয়”। তারপর দু’জনে ক্যাম্পাসে বসে অনেকক্ষণ গল্প করে। মেয়েটার সাথে কথা বলে বেশ ভালো লাগে রাইসার। কথার এক ফাঁকে রিয়া বলে উঠে “রাইসা আমিও তোমার মতো এমনভাবে নিজেকে সম্পূর্ণ ঢেকে রাখতে চাই, কলেজের পাশেই একটা ভালো শপিংমল আছে। ”

“আলহামদুলিল্লাহ। তবে সেখান থেকেই কিনে নিও সব।”
কিছুটা মুচকি হাসির সাথে কথাটি বলে রাইসা যদিও রাইসার হাঁসিটা পর্দার আঁড়ালেই ছিলো তবুও কথার ভাজে লক্ষ করেছে রিয়া সেই হাসিটি।”

কপাল কুঁচকে রিয়া বলে “যাবে আমার সাথে শপিংমল প্লিজ?”
রাইসা প্রথমে রিয়ার প্রস্তাবে রাজি না হলেও পরে ওর অনেক জোরাজোরিতে রাজি হয়।
_____________

রাত ২টা পার হয়ে গেলেও সিয়ামের চোখে ঘুম নেই। সিয়ামের কানে যেনো বারংবার রাইসার বলা কথাগুলো বাজতে লাগলো। রাগে ফর্সা চেহারাটা লাল হতে থাকে সিয়ামের। অনেক চেষ্টা করেও যখন নিজের রাগ কমাতে পারেনি সিয়াম তখন ওয়াশরুমে যেয়ে শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে থাকে। ছোটবেলা থেকেই সিয়ামের অভ্যাস এটা কোনো কিছুর জন্য রাগ উঠলে সহজে রাগ কমেনা যতক্ষণ স্নান করবেনা। প্রায়ই এক ঘন্টা পর ওয়াশরুম থেকে বের হয় সিয়াম। এসি চালু করে দিয়ে শাওয়ার টাওয়াল পরেই বিছানায় গা এলিয়ে দেয় সে। রাইসা সিয়ামের প্রথম দেখা যে কিনা তার শরীরের একটা অংশও প্রকাশ্যে রাখেনি তাই রাইসাকে দেখার বড্ড স্বাদ হলো সিয়ামের। সিয়াম বখাটে হলেও মা বাবার খুব আদরের। এলাকায় ধ্বনির দিক দিয়ে সিয়ামরাই সবার উচ্চ স্থানে আছে। কিন্তু সমস্যা একটাই সিয়াম কারো কোনো কথা শুনেনা সে নিজের ইচ্ছেই চলাফেরা করে।

*
পরদিন সকালে নাস্তা শেষ করে সোফায় বসে অপেক্ষা করছে সিয়াম ওর বোনের জন্য একসাথে কলেজে যাবে বলে। সিয়াম বখাটে হলেও নিজের বোনের প্রতি যত্নের অভাব রাখেনা।
একটু পর এক বোরকা পরা মেয়ে সিয়ামের সামনে এসে দাঁড়াতেই আচমকা লাফিয়ে দাঁড়িয়ে যায় সিয়াম আর বলতে শুরু করে “এই কালো পরি তুমি এখানে কি করছো? আর আমার বাসা চিনলে কি করে?”

ভাইয়ের কথা শুনে চমকে যায় রিয়া, কি বলতেছে সিয়াম কিছুই বুঝতে পারছেনা রিয়া। রিয়া দ্রুত তার মুখের নিকাব টা সরিয়ে বলে “ভাইয়া তুমি আমাকে চিনতে পারছোনা? আমি রিয়া তোমার বোন। তুমি কাকে মেনশন করে কথাগুলো বললে বলো তো।”

সিয়াম কিছু না বলে বেরিয়ে যায় বাসা থেকে, রিয়াও ওর পেঁছনে যায়। প্রতিদিন রিয়া সিয়ামের সাথেই কলেজে যাওয়া আসা করে।
সিয়াম মনে মনে ভীষণ লজ্জিত হলো কিন্তু মুখে কিছু বলতেছেনা। সিয়ামের এমন হুট করে চুপ হয়ে যাওয়াটা কিছুটা সন্দেহ জন্ম দেয় রিয়ার মনে।

*
সিয়ামের ক্লাস শুরু হতে এখনো সময় আছে কিছুটা তাই সে প্রতিদিনের মতো ক্যাম্পাসে বসে আছে কিন্তু আজকে সিয়াম ভীষণ চুপচাপ। সিয়ামকে এভাবে চুপচাপ দেখে ওর বন্ধুরা জিজ্ঞেস করে চুপচাপ থাকার কারণ তখনই সিয়াম চোখ তুলে সামনের দিকে তাকাতেই দেখে রাইসা আসতেছে, রাইসাকে দেখে চিনতে একটুও ভুল হলোনা সিয়ামের কারণ রিয়ার হাত মুজাগুলো ছিলো নীলের মধ্যে আকাশি আর রাইসার হাতমুজা টা কালো যেটা গতকালও ছিলো। রাইসাকে দেখেই রাগে লাল হতে থাকে সিয়ামের কান দুটো। নিজে নিজেই কিছুটা শব্দ করে বলে উঠে সিয়াম “সাহস হয় কি করে এইটুকুনি মেয়ের আমাকে শিক্ষার খোঁটা দেওয়ার? এই মেয়ে কি জানে আমার সম্পর্কে? এই মেয়েকে কোনো একদিন আমি দেখবোই এবং আমার বিছানায় নিয়ে যাবোই যাবো দেখে নিস তোরা।”
সিয়ামের কথা শেষ হওয়ার সেকেন্ড কয়েক পর রাইসা ওদের সামনে দিয়ে হেঁটে যায় ক্লাসের উদ্দেশ্যে। আজকে আর ডিস্টার্ব করেনি সিয়াম রাইসাকে, এতে ভীষণ ভালো লাগা কাজ করছে রাইসার। আজ রাইসার মনটা ফ্রেশ, হেঁসে হেঁসেই কথা বলতেছে রিয়ার সাথে। কথার ফাঁকে রিয়া হুট করে বলে ফেলে “তোমাকে যদি ভাবি বাানাতে পারতাম জনম জনম তোমাকেই ভাবি ডাকতাম” আনমনা হয়ে কথাটি বলেই ঢুক গিলে ফেলে রিয়া, এতে কিছুটা লজ্জা লাগলো রাইসার কিন্তু কিছুই বুঝতে দিলোনা সে রিয়াকে।

ক্লাস শেষে রিয়া আর রাইসা এক সাথেই ক্যাম্পাসে এসে বসেছে। দূর থেকে সিয়াম দেখছে তাদের। ওদেরকে দেখে চিনতে কষ্ট হলোনা সিয়ামের কারণ এই কলেজে রিয়া আর রাইসা ছাড়া কেউ এভাবে পরিপূর্ণ পর্দা করে না। সিয়ামের মাথায় ঘুরছে অন্য বুদ্ধি কিন্তু সে বন্ধুদের কিছু বলছেনা এসব সম্পর্কে। বন্ধুরা কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছে ওদের দিকে তাকিয়ে সে কি ভাবছে কিন্তু সিয়াম কথা ঘুরিয়ে বলে এই কালো পরিটা আমার বোনকেও কেমন জানি অদ্ভুত ভাবে চেঞ্জ করে দিয়েছে। বন্ধুদের থেকে বিদায় নিয়ে সিয়াম এগিয়ে যায় রাইসাদের দিকে আর মনে মনে ভাবছে “তবে রিয়ার থেকেই এই কালো পরির সব ডিটেইলস জানা যাবে”।

রিয়ার সামনে গিয়ে একটা ভাব নিয়ে সিয়াম বলে ” রিয়া চল বাসায় যাবো, তোকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে একটা কাজে যেতে হবে আমার”। হঠাৎ সিয়ামের এমন আচরণে বড্ড বেশি অবাক হয় রিয়া কিন্তু রাইসার সামনে কিছুই প্রকাশ করলো না সে। রিয়া রাইসা থেকে বিদায় নিয়ে সিয়ামের পেঁছন পেঁছন হাঁটতে লাগলো।
রাইসা এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওদের যাওয়ার পথে আর ভাবছে এইরকম একটা বজ্জাত ছেলের এমন মিষ্টি বোন কিভাবে হতে পারে? রাইসাও বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

*
সিয়াম ড্রাইভ করছে, সামনের দিকে তাকিয়েই সে রিয়ার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে “তুই ওই কালো ভুতনির থেকে দেখেই এই ভেস ধারণ করেছিস তাই নাহ?”

“ছি ভাই কি বলছো তুমি এসব, ওর নাম রাইসা, খুব মিষ্টি একটা মেয়ে”
কিছুটা মুচকি হাসির সাথে কথাটা বলে রিয়া।

“ওওও তাহলে রাইসা ওই কালো পরির নাম” আনমনা হয়ে ভাবছে সিয়াম তখনই ওদের গাড়ির সামনে__________#চলবে_ইনশাআল্লাহ

#শূন্যস্থানে_তুমি_পূর্ণতা
#পর্বঃ০২
#ফারজানা_আক্তার

রিয়া চিৎকার দিতেই গাড়ি থামিয়ে অবাক হয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে তাকে সিয়াম। ওদের গাড়ির সামনে হুট করে একটা ছোট বাচ্চা চলে আসছিলো দৌড়ে, রিয়া খেয়াল না করলে হয়তো কোনো ক্ষতি হয়ে যেতো বাচ্চাটার। রিয়া আর সিয়াম গাড়ি থেকে নেমে বাচ্চাটার কাছে যেতেই ওই বাচ্চার মা দৌড়ে এসে কোলে তুলে নেয় বাচ্চাটিকে। সিয়ামের রাগ উঠে যায় বাচ্চাটির মায়ের এমন অবহেলা দেখে তাই সে রাগের মাথায় বাচ্চাটার মাকে অনেক বকাঝকা করে চলে আসে সেখান থেকে। ভাইয়ের রাগ দেখে রিয়াও চুপ হয়ে যায় কারণ সেখানে দোষটা ওই মহিলার ছিলো, ওই মহিলা নিজের বাচ্চার ঠিকমতো খেয়াল রাখতে পারেনি।
___________

রাতে সিয়াম শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকে রাইসার কথা, কিভাবে রাইসাকে নিজের করে নিবে সেই জেদ চড়ে বসেছে সিয়ামের মাথায়। সিয়াম রিয়া থেকে রাইসার সম্পর্কে সব ডিটেইলস জেনে নিয়েছে। কিন্তু এখন চিন্তা হচ্ছে কিভাবে রাইসাকে পটাবে কারণ রাইসা কোনো ছেলের দিকে তাকায় না, সিয়ামের দিকেও না।
রিয়া সিয়াম কে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য ডাকতে আসলে ও রিয়াকে হুট করে জিজ্ঞেস করে ফেলে “এই রিয়া শুন”

“জ্বী ভাইয়া বলো”

“তোর রাইসা মেয়েটাকে কেমন লাগে রে?”

ভাইয়ের মুখে এমন কথা শুনে চমকে যায় রিয়া। সিয়াম যেমনই হোক কিন্তু কখনোই সে কোনো মেয়ের সম্পর্কে বোনের সাথে কথা বলেনি। রিয়া বুঝতে পারছে সিয়াম রাইসাকে একটু একটু পছন্দ করতে শুরু করেছে, রিয়ার এটা ভেবেই বেশি খুশী লাগছে কারণ সিয়াম রাইসাকে না দেখেই পছন্দ করেছে।
খাবার টেবিলে সিয়াম, রিয়া, সিয়ামের বাবা ফজলুর রহমান, সিয়ামের মা রাহেলা খাতুন আর সিয়ামের ছোট ভাই শাহিল সবাই একসাথে বসে রাতের খাবার খাচ্ছে। খাওয়ার মাঝখানেই হুট করে
সিয়াম বলে উঠে “আমি বিয়ে করবো”

সিয়ামের এই কথায় স্তব্ধ চারপাশ। নিশ্চুপ পরিবেশে ঘড়ির কাঁটার শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ ভাসছে না। সবাই যেনো কারেন্ট লেগে শক্ত হয়ে আছে এমন অবস্থা। সিয়াম বুঝতে পারছেনা সে বিয়ের কথা বলে কি এমন অপরাধ করে ফেলেছে। সিয়াম সবার মুখের দিকে তাকাচ্ছে আর খেয়েই যাচ্ছে। হঠাৎ নিরবতা ভেঙে শাহিল হেঁসে উঠলো কুটকুট করে। শাহিলের হাঁসি দেখে ভ্যাঁবাছ্যাঁকা খেয়ে যায় সিয়াম। ফজলুর রহমান শাহিলকে থামিয়ে সিয়ামের উদ্দেশ্যে বলে “তুই যা বলছিস ভেবে বলছিস তো সিয়াম?”
বাবার এমন প্রশ্নে বিরক্তবোধ হয় সিয়ামের। সিয়াম গম্ভীর গলায় বলে “বিয়ে করবো মানে বিয়ে করবো ব্যাস”।

এটা বলেই খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে চলে যায় সিয়াম। সিয়াম ছোট থেকেই এমনই, যখন যা মাথায় আসে তা করবেই করবে সে। বাবা মাও মাঝে মধ্যে ভয় পায় সিয়ামকে, সিয়ামের কথার উপরে কথা বলার সাহস এই ঘরে কেউ পায় না, এর কারণ হলো সিয়ামের রাগ।

*
রাইসা তৈরি হচ্ছিলো কলেজে যাওয়ার জন্য তখন ওর আম্মু রোকসানা আমিন এসে বললো উনার শরীর ভালো না আজ তাই কলেজ না যাওয়ার জন্য আজ। মায়ের শরীর খারাপ দেখে আর মায়ের এমন নরম সুরের কথা শোনে রাইসা আর কলেজ গেলো না। রাইসার ছোট বোন ফাহিমা এসে বলে ওর হিজাবটা ভালো করে সেট করে দিতে ওর স্কুলের দেরি হয়ে যাচ্ছে, রাইসা বোনের হিজাব টা ঠিক করে দিয়ে রান্না ঘরে গিয়ে সবার জন্য চা আর নিজের জন্য কফি বানিয়ে নিলো। মা বাবার চা উনাদের রুমে দিয়ে এসে নিজে রান্নাবান্নার কাজে লেগে গেলো আর কাজের ফাঁকে ফাঁকে কফিতেও চুমুক দেয়। কাজ করতে করতে হঠাৎ মনে হলো সিয়ামের কথা, ছেলেটার সভাব মোটেও ভালোনা কিন্তু ওইদিনের পর আর বিরক্ত করেনি সিয়াম রাইসাকে এটা ভেবেই রাইসার মুখে মুচকি হাসির ভাব। মুহুর্তেই রাইসা নিজের আবেগ কে কন্ট্রোল করে কাজে ব্যস্ত হয়ে পরে আর মনে মনে আস্তাগফিরুল্লাহ যপে।

*
ক্লাস শেষে রিয়া গাড়িতে গিয়ে বসে আছে কিন্তু সিয়ামের আসার কোনো খবর নেই এখনো। রিয়ার মন খারাপ আজ কারণ রাইসা আসেনি আজ কলেজে। রিয়া রাইসা ছাড়া ক্লাসের আর কারো সাথে তেমন মিশেনা। অন্যদিকে সিয়াম এখনো ক্যাম্পাসে বসে অপেক্ষা করছে রাইসার জন্য। রাইসাকে না দেখে যেনো মনটা চটপট করছে বড্ড। বন্ধুরা জিজ্ঞেস করলে বলে “ওই কালো পরিকে ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারিনা রে ইদানীং। ওকে আমার চাই আর সিয়াম রহমান কোনো জিনিস চেয়েছে অথচ সে তা পায়নি এমনটা কখনোই হয়নি। ওই কালো পরিটা একদিন আমার হাত ধরেই এই কলেজে প্রবেশ করবে মিলিয়ে নিস তোরা।”

এটা বলেই সিয়াম গাড়ির কাছে চলে যায় কারণ সে জানে রাইসার সম্পর্কে রিয়া ছাড়া এই কলেজের আর কেউ ভালো জানেনা।
গাড়িতে উঠে সিয়াম রিয়াকে দ্রুত জিজ্ঞেস করে রাইসার কথা। হঠাৎ ভাইয়ের এমন আচরণে একটু অবাক রিয়া তারপর বলে “এভাবে জিজ্ঞেস করছো কেনো ভাইয়া? রাইসার আম্মু অসুস্থ তাই সে আজ কলেজে আসতে পারেনি আমাকে কল করে বলেছে আর রাইসা তো আমার ফ্রেন্ড তাহলে তুমি কেনো এতো চটপট করতেছো?”

বোনের প্রশ্নের জবাবে কি বলবে বুঝতে পারছেনা সিয়াম, কিছুটা লজ্জাও পেলো বটে। সিয়াম আর কিছু না বলে গাড়ি স্টার্ট দিলো, সামনের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভ করতে করতে সিয়াম বলে “তোর বান্ধবীর নাম রাইসা তাইনা?”

“হুম রাইসা ওর নাম সেটা তো তুমি জানোই তাহলে আাবর জিজ্ঞেস করছো কোনো?”

“রাইসাকে তোর ভাবি বানাতে কোনো আপত্তি আছে?”

সিয়ামের মুখে এই কথা শুনে যেনো আকাশ থেকে মাটিতে পরলো রিয়া। নিজেকে সামলিয়ে রিয়া প্রশ্ন ছুঁড়ে সিয়ামের দিকে “ভাবি বানাতে আপত্তি নেই আমার কিন্তু রাইসার আপত্তি থাকবে আমার ভাবি হতে।”
বোনের কথা শুনে সিয়াম হুটহাট বলে ফেলে “কেনো? কেনো আপত্তি থাকবে ওর? আমার কি টাকা পয়শার অভাব আছে নাকি আমার সৌন্দর্যের অভাব আছে?”

রিয়া মন খারাপ করে বলে “একটা কথা বলবো ভাই?”

“বল।”

“তোমার কোনো কিছুরই অভাব নেই কিন্তু চরিত্রের অভাব আছে ভীষণ। আগে চরিত্র ভালো করো দেখবে খারাপ মেয়েরা তোমার আশেপাশেই ঘেষবে না আর ভালো মেয়েরা তোমার বৈধ প্রস্তাবে কোনো আপত্তি করবেনা।”

বোনের কথায় বেশ লজ্জা লাগে সিয়ামের তবে এই লজ্জা ক্ষনিকের। একটুপর এক দল মেয়ে ফ্রেন্ড নিয়ে সে ঠিকই পার্কে আড্ডা দিতে চলে যাবে।

*
রাতের খাবার খেতে বসে সিয়াম জানিয়ে দেয় আগামীকাল ফজরুল রহমান আর রাহেলা খাতুন কে রাইসাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য।
সিয়ামের বাবা মাও সম্মতি দেয়। শাহিল বলে সে যাবে, ওকে ছাড়া যেনো না যায়। শাহিল মাত্র ক্লাস নাইনে পড়াশোনা করে তবে সিয়ামের থেকে পড়ালেখায় শাহিল খুব এক্সপার্ট।

রাতে ঘুম হচ্ছে না সিয়ামের আগামীকালের অপেক্ষায়। কবে সে রাইসাকে নিজের করে পাবে সেই অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।

রিয়ার ঘুম হচ্ছে না আজ কারণ আজ ক্লাসে রিয়া ছাড়া সবাই পড়া শিখে গেছে তাই স্যার ওকে অনেক বকাঝকা করছে তখনই একটা ছেলে দাঁড়িয়ে বলে সেও পড়া শিখে নাই যদিও রিয়া জানে ছেলেটা মিথ্যা বলছে কিন্তু এই মিথ্যা বলার পেঁছনের কারণ রিয়ার অজানা। পরে স্যার দুজনকেই ক্লাস থেকে বের করে দেয় এক পিরিয়ড এর জন্য। তখন ছেলাটা রিয়াকে বলে “প্রথম দিন যখন তোমাকে দেখেছি তখন তুমি পর্দা করোনি কিন্তু পরেরদিন থেকেই তুমি পর্দা করতেছো। কারণটা কি জানতে পারি?”

“হুম কেনো নয়। কারণ টা হলো আমি আগে বুঝিনি তাই নিজেকে প্রকাশ্যে রেখেছি আর এখন আমাকে কেউ একজন বুঝিয়ে দিয়েছে তাই পর্দা করা শুরু করেছি।”

“বেশ।”

এইটুকুই কথা হয়েছে ছেলেটার সাথে, এতেই ফিদা হয়ে গেছে রিয়া কিন্তু এভাবে পরপুরুষের কথা চিন্তা করা ঠিক না ভেবে সে ঘুমানোর চেষ্টা করতেছে তবুও যখন ঘুম হলোনা সে রাইসাকে কল দেয়। অনেকক্ষণ রাইসার সাথে কথা বলে রিয়া, কথা বলতে বলতেই একসময় ঘুমিয়ে যায় রিয়া। রাইসা হাসে আর ভাবে “মেয়েটা অদ্ভুত, কিভাবে যে এতো অল্প সময়ে তার সাথে জড়িয়ে গেলো ভাবতেই আশ্চর্য লাগে।”
এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে য়ায় রাইসা। সকালে রাইসা কলেজে যাওয়ার জন্য বের হতে যাবে তখনই রোকসানা আমিন বলে আজ একটু দ্রুত বাসায় আসার জন্য। রাইসা মায়ের কথায় কোনো প্রতিত্তোর না করে শুধু হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে বেরিয়ে যায় দ্রুত। ফারুক আহমেদ এর সাথে ফজলুর রহমান যোগাযোগ করেছে যদিও ফজলুর রহমান কে সব ডিটেইলস সিয়ামই জোগাড় করে দিয়েছে। ফারুক আহমেদ ভীষণ আনন্দিত এতো বড় ঘর থেকে মেয়ের জন্য বিয়ের সম্মন্ধ আসছে ভেবে। রাইসার ছোটভাই ফাহিম দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। সে আজ স্কুলে যেতে নারাজ কারণ আজকে বাসায় মেহমান আসবে। রাইসা না জানলেও বাসার সবাই জানে আজ রাইসাকে দেখতে আসবে।

*
রাইসা কলেজ থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসতেই ওর মা ওকে একটা গাউন দিয়ে বলে এটা পরিধান করে তৈরি হয়ে নিতে। রাইসা বুঝতে পারছেনা কেনো হঠাৎ এই অসময়ে এসব পরতে যাবে সে কারণ এসব পরে তো কখনো সে বাহিরে যায়নি, বাহিরে যখনই গেছে সে বোরকা পরিধান করেই গেছে। রোকসানা আমিন চলে গেলে সেখান থেকে ফাহিমা বলে “আপু আজকে নাকি তোমাকে দেখতে আসবে। জানো তারা নাকি অনেক বড়লোক। আব্বু আম্মুকে দেখলাম অনেক আনন্দিত।”

ফাহিমার কথা শুনে শুধু অবাকই হয়নি রাইসা বরং অনেক বেশিই অবাক হয়েছে কেননা ফারুক আহমেদ আর রোকসানা আমিন ওর সাথে সব ছোট খাটো কথা শেয়ার করে কিন্তু আজ তার জীবনের এতো বড় একটা পার্ট সে জানেইনা। মেনে নিতে পারছেনা রাইসা এটা তবুও মা বাবার সম্মানের জন্য সে তৈরি হয়ে বসে।

একটু পরেই রাহেলা খাতুন রাইসার রুমে প্রবেশ করে কারণ রাইসা পুরুষের সামনে যাবেনা বলে দিয়েছে, তাই শুধু মহিলা দেখতে এসেছে রুমে একা। এতে শাহিলের মন খারাপ হয় প্রচুর কারণ সে খুব আশা নিয়ে তার হবু ভাবিকে দেখতে এসেছে।

#চলবে_ইনশাআল্লাহ