শেষ পাতায় তুমি পর্ব-০৩

0
3105

#শেষ_পাতায়_তুমি (Revenge story)
#ফাবিহা_নওশীন

|পর্ব-৩|

কেটে গেছে এক মাস। ভার্সিটিতে ক্লাস করা, নাচের ক্লাসে এটেন্ট করা, রোজ সকালে গানের রেওয়াজ করা, বন্ধুদের সাথে রোজ আড্ডা দেওয়া, হৈ-হুল্লোড় করা এভাবেই কেটে যাচ্ছে মেহেরের দিন গুলো। ফায়াজ নামক ব্যক্তিটি স্মৃতির পাতায় থেকে একটু একটু করে মুছে যাচ্ছে। মেহের আছে নিজের মতো নেই নিজেকে নিয়ে। অপর দিকে ফায়াজও নিজের মতো আছে।
মেহের ফাইল হাতে গেইট দিয়ে ভেতরে ঢুকে চমকে যায়। ওর কিছু গড়বড় লাগছে। কেমন শোরগোল শোনা যাচ্ছে। মেহের ডান দিকে তাকাতেই ভয় পেয়ে গেল। কতগুলো ছেলে হকি খেলার ব্যাট হাতে নিয়ে এইদিকেই আসছে। সবার চোখ মুখ ভয়ংকর লাগছে। মনে হচ্ছে কারো উপর প্রচন্ড ক্ষেপে আছে। আজ তাকে পেলে হাড়-হাড্ডিও অবশিষ্ট রাখবে না। তাদের দলনেতাকে দেখে আরও ভয় পেয়ে গেল। ফায়াজ চুইংগাম চিবাতে চিবাতে টি-শার্টের হাতা গুছাতে গুছাতে এটিটিউট নিয়ে আসছে।
মেহের ভয় পেয়ে ঢোক গিলে পেছাতে লাগল। পেছাতে পেছাতে পুকুরের পাশের একটা গাছের পেছনে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। ওরা ওখান থেকে সরতেই মেহের এক দৌড়ে মাঠ পাড় করে ক্লাসরুমের বিল্ডিংয়ের বারান্দায় উঠে গেলো। সেখানে এক সেকেন্ডও না দাঁড়িয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে ক্লাসের সামনে গিয়ে ফাইল হাতে হাপাতে লাগত।

অনু মেহেরকে দেখে বলল,
“কিসে মেহু হাপাচ্ছিস কেন? দৌড়ে এসেছিস নাকি?”

মেহেরের ভেতরের অস্থিরতা কাটতেই কটাক্ষ করে বলল,
“তোরা আমাকে ফেলে এসেছিস কেন? বেয়াদব গুলা।”

অনু ভড়কে গিয়ে বলল,
“তুই তো নিজেই বাইরে দেরি করলি আমাদের কি দোষ? হয়েছে কি? কুকুরের দৌড়ানি দিয়েছে?”

মেহের অনুর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে ক্লাস রুমে ঢুকে গেল। অনু কিছুই বুঝতে পারছে না হচ্ছে টা কি।

মাহি আজকাল ভার্সিটিতে আসে না। ফায়াজ ফোন করলে নানান বাহানা দেখায়। দেখা করতে চাইলেও বাহানা করে৷ সামনের মাসে ওর বিয়ে। বিয়ের সকল ব্যবস্থা হয়ে গেছে। মাহির খুব টেনশন হচ্ছে। মাহি চায় ফাজায়ের অগোচরে ওর বিয়েটা হয়ে যাক। ফায়াজ যেন ঘূর্ণাক্ষরেও ওর বিয়ের খবর না পায়। যদি কোনো ভাবে জেনে যায় তবে অনেক বড় তামাশা ক্রিয়েট করবে। মাহি খুব ভয়ে ভয়ে থাকে মনে হয় এই বুঝি ফায়াজ সবটা জেনে যাবে।

.

মাহির ফোন বেজে চলছে। ফায়াজের ফোন। মাহির ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ফায়াজ শক্ত কন্ঠে বলল,
“মিট করতে চাই রাইট নাও।”

মাহির বুক কেঁপে উঠল। এই রাতের বেলায় দেখা কেন করতে চাইছে। মাহি ম্যাসেজ করে জানিয়ে দিল এই রাতে বের হতে পারবে না। যা বলার আগামীকাল বলবে।

ফায়াজ ওদের বাড়িতে এসে হাজির। বাগানে অপেক্ষা করছে। মাহি না চাইতেও সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বাগানে
গেল ফায়াজের সাথে কথা বলতে। না গেলে যদি বাড়ির ভেতরে ঢুকে যায়। তারপর বাবা-মা সব জেনে গেলে আরেক বিপদ। মাহির খুব ভয় করছে। ফায়াজ কেন এসেছে। কি চায়। কিছুই বুঝতে পারছে না।

.

মাহি ফায়াজের সামনে যেতেই ফায়াজ রক্তচক্ষু নিয়ে মাহির দিকে তাকাল। মাহির ভয়ের চুটে দম বন্ধ হয়ে আসছে।বারবার ঢোক গিলছে। হাত-পা কাপঁছে। ফায়াজ ওকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে চোখ-মুখ শক্ত করে বলল,
“তোমার নাকি বিয়ে?”

ফায়াজের মুখে এই কথা শুনে মাহির কলিজা শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে। ঘামছে প্রচন্ড। প্রচন্ড রোদের প্রখরতায় যেমন মাটি শুকিয়ে যায় তেমনি ভাবে ওর গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।

মাহি আমতা আমতা করে বলল,
“কে বল…ল তোমাকে? ”

ফায়াজ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
“ফায়াজের গার্লফ্রেন্ডের বিয়ে আর ফায়াজ জানবে না? সো ফানি।”

মাহি মাথা নিচু করে আছে।

ফায়াজ মাহিকে চুপ থাকতে দেখে বলল,
“তোমার কাহিনী কি বলো তো? এই যে কতদিন যাবত ভার্সিটিতে যাচ্ছো না, আমাকে এভয়েড করছো কেন বলো তো? আর ইউ ট্রায়িং টু চিট মি?”

মাহি তখনো চুপ করে আছে। আঙ্গুল দিয়ে আঙ্গুল ঘঁষছে। ফায়াজ মাহিকে চুপ থাকতে দেখে বলল,
“চলো তোমার বাবা-মার সাথে কথা বলব।”

মাহি ফায়াজের কথা শুনে আতঁকে উঠল। দ্রুত ফায়াজের সামনে দাঁড়িয়ে বাঁধা দিয়ে বলল,
“তুমি ভেতরে যাবে না। আর না কাউকে কিছু বলবে। তুমি চলে যাও প্লিজ। আমি তোমার সাথে আগামীকাল দেখা করব।”

ফায়াজও নাছোড়বান্দা। ও কিছুতেই যাবে না। মাহিকে বলল,
“আমি আজই তাদের সাথে কথা বলব।”

মাহি আতংকিত হয়ে বলল,
“কি বলবে তুমি? ”

ফায়াজ বলল,” যা সত্যি তাই। তুমি এই বিয়ে করবে না কারণ তুমি আমাকে ভালোবাসো।”

মাহি আর এই মিথ্যা সম্পর্ক, মিথ্যা ভালোবাসা মেনে নিতে পারছে না। তাই রাগের মাথায় বলল,
“আমি তোমাকে ভালোবাসি না। কোনো দিন বাসি নি। তুমি জোর করে আমাকে এই সম্পর্কে আঁটকে রেখেছো। আমি তূর্জকে ভালোবাসি। ছোট থেকে ভালোবেসেছি। আর ওকেই বিয়ে করতে যাচ্ছি।”

ফায়াজ ওর কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। মাহি ওকে ভালোবাসে না। তাহলে এতদিন কি ছিল? এই দুমাস কি ছিল?

“তূর্জ? তূর্জ কে?” ফায়াজ দ্রুত প্রশ্ন করল।

মাহি চোখের পানি মুছে বলল,” যাকে আমি ছোট থেকে ভালোবাসি। যে আমার প্রেমিক, যার সাথে আমার এনগেজমেন্ট হয়েছে। যার সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে। সেই তূর্জ।”

মাহির কথা শুনে ফায়াজ হতবাক। মাহি অন্য কাউকে ভালোবাসে। তাহলে ওর সাথে কি করেছে এতদিন?

ফায়াজ প্রশ্ন করার আগেই মাহি বলল,
“তোমার মনে অনেক প্রশ্ন জাগতে তাই তো? আমি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিচ্ছি। হিমি! হিমির জন্য এ-সব করেছি। হিমি আমাকে চ্যালেঞ্জ করেছিল। তুমি কোনো মেয়েকে পাত্তা দেও না। কোনো মেয়ে নাকি তোমাকে আকর্ষিত করতে পারবে না। আমিও পারবো না। এমন ভাবে আমার মাথায় বিষয়টি ঢুকিয়ে দিয়েছে যে আমার প্রচন্ড রাগ হয়েছিল ওর উপর। তারপর আমি ওকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেই তুমি নিজে এসে একদিন আমাকে প্রপোজ করবে। তাই তোমার নাম্বার জোগাড় করে তোমাকে ভয়েস রেকর্ডিং পাঠাই। ম্যাসেজ আকারে চিঠি পাঠাতে লাগলাম। তুমিও ইম্প্রেস হতে লাগলে। তুমি হন্ন হয়ে আমাকে খোঁজতে শুরু করলে। তারপর একদিন আমাকে খুজেও পেলে। প্রপোজ করলে। আমার প্ল্যান প্রপোজ পর্যন্তই ছিল। তুমি আমাকে প্রপোজ করেছিলে কাহিনী সেখানেই শেষ হয়ে যেত। আমি তোমাকে তখনই না করে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু হিমি আমার মুখ চেপে ধরে। তাই কিছু বলতে পারি নি। আমি তখন বুঝতে পারি নি কেন ও আমার মুখ চেপে ধরল। তাই রিয়েক্ট করি নি চুপ করে ছিলাম ঘটনা জানার জন্য।
পরে হিমির সাথে কথা বলে জানতে পারি ও চায় আমি তোমার সাথে কিছুদিন প্রেম করি, তারপর ডাম্প করি। কিন্তু আমি সেটা চাই নি। তাই পরের দিন তোমাকে বলতে যাই আমি তোমাকে ভালোবাসি না। এটা গেম ছিল। কিন্তু তুমি তার আগেই তোমার কথা বলতে শুরু করলে। তুমি আমার ভয়েস শুনে ফিদা হয়ে গেছ। আমাকে ভালোবেসে ফেলেছ। এই ভয়েস টাকে তুমি সারাজীবনের জন্য চাও। আমাকে চাও। তুমি ভাবতে যে আমিও তোমাকে ভালোবাসি। ব্লা ব্লা। আমাকে সুযোগও দিলে না। কিছু বলতে চাইলে চুপ করিয়ে দেও।
আমি তোমাকে ইগ্নোর করে যাচ্ছিলাম কিন্তু তুমি কিছুই বুঝতে পারছিলে না। সব সময় ভয় দেখাতে। ভয়ংকর কথা বলতে। আমি দিন দিন ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছিলাম। তাই কিছুই বলতে পারছিলাম না। এক প্রকার বিপদে পড়ে গেলাম। কি করব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। তার উপর হিমি আমাকে ভয় দেখিয়ে যাচ্ছিল। আমার কোনো উপায় ছিল না। নিরুপায় হয়ে পড়েছিলাম।”

ফায়াজের মাথায় আগুন ধরে গেল ধপ করে৷ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“এটা গেম ছিল? তুমি আমার সাথে,, ফায়াজের সাথে গেম খেলেছ? আমাকে লুজার বানিয়েছ? মাহি তুমি খুব ভয়ংকর খেলায় নেমেছ আর এর ফল তো তোমাকে ভোগ করতেই হবে।
অবশ্যই ভোগ করতে হবে।”

মাহি ফায়াজের দিকে ছলছল চোখে তাকাল।
মাহি হাত জোর করে বলল,”প্লিজ এই ম্যাটারটা এখানেই ক্লজ করে দেও।”

ফায়াজ বাকা হেসে বলল,” খেলা তো মাত্র শুরু হয়েছে। তুমি আমাকে লুজার বানিয়ে সুখের সংসার করবে? উহু।”

ফায়াজ হাসছে।
মেহের বারান্দা থেকে দাঁড়িয়ে ওদের দেখছে। মেহের ভাবছে তূর্জ এসেছে। কিন্তু ওদের দেখে ওর মনে হচ্ছে ওদের মধ্যে ঝগড়া হচ্ছে।
মেহের ওড়না তুলে গায়ে জড়িয়ে বাগানে আসছে।

মাহি বারবার আকুতি মিনতি করছে ফায়াজের কাছে।
“ভালোবাসার নাটক করেছ তুমি। তুমি জানো না আমি যা চাই তা আদায় করে নেই? এই ধর বিয়ের দিন এসে ভরা মজলিশে তোমার আর আমার সম্পর্কের কিছু প্রমাণ দেখালাম তাহলে তোমার ছোট বেলার প্রেমিকের মনের অবস্থা কি হবে?”

মাহির চোখে মুখে আতংক। ভয় পাচ্ছে ভিষণ। তূর্জ জানলে অনেক খারাপ হয়ে যাবে। তূর্জের জন্যই এতদিন চুপ করে ছিল। তূর্জ এটা মানতে পারবে না। মাহি হাত জোর করতেই মেহের পেছনে থেকে বলল,
“তূর্জ ভাইয়া!!”

ফায়াজ অন্য কারো গলার স্বর শুনে পেছনে ঘুরে শকড। পাশাপাশি মেহেরও শকড।
মেহের অস্ফুটস্বরে বলল,” ফায়াজ!”

ফায়াজ চোখ সরু করে মেহেরকে দেখে বলল,”তুমি মেহের না? মেহের! তুমি মানে মাহির বোন মেহু পাখি?”

মেহের ঢোক গিলে মাহিরের দিকে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকাল।
তারপর কৌতূহল চেপে না রাখতে পেরে বলল,
“আপু উনি এখানে কেন? এখানে কেন এসেছে? তুমি না সেদিন বললে তুমি উনাকে চিনো না। তাহলে এ-সব কি?”

মাহি বোনের চোখে মুখে হাজারো প্রশ্নের সাথে সাথে রাগ দেখতে পাচ্ছে। সাথে কিছুটা অবিশ্বাস, অভিমান।

মাহি জিহবা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে ঢোক গিলে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বলল,
“তুই এখন ভেতরে যা৷ আমি তোকে পরে সব জানাচ্ছি।”

মেহের বিরক্তি নিয়ে ফায়াজের দিকে একবার আরেকবার মাহির দিকে তাকাল।
ফায়াজের রাগে চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে। সারা শরীর থরথর করে কাঁপতে।ফায়াজ বাঁধা দিয়ে বলল,
“যাওয়ার আগে তোমার বোনের কীর্তির কথা শুনে যাও।”

ফায়াজের কথা শুনে মেহের বিস্ময় নিয়ে বোনের দিকে তাকাল। তারপর ফায়াজকে গলা উঁচিয়ে বলল,
“কি বাজে কথা বলছেন?”

ফায়াজ রাগের পরিমাণ কিঞ্চিৎ বাড়িয়ে বলল,
“বাজে তো তোমার বোন। চরিত্রহীন যাকে বলে। একি সাথে দু’জনকে ঘুরাচ্ছে,দুজনের সাথে প্রেম করে বেড়াচ্ছে। কত স্মার্ট মেয়ে। থার্ডক্লাশ চিপ মেয়ে।”

মেহের ওর কথা শুনে হতবিহ্বল। মেহের ফায়াজের কথা বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করছে না। কারণ জানে মাহি তূর্জকে কতটা ভালোবাসে। আর ফায়াজ কতটা বাজে ছেলে। ওর বোনের নামে বাজে কথা বলছে,বাজে অপবাদ দিচ্ছে এসব শুনেও চুপচাপ থাকা ছাড়া উপায় নেই। মেহেরের চোখ ছলছল করছে।

মেহের নরম গলায় বলল,
“আমার আপুকে নিয়ে এ-সব বাজে কথা বলবেন না। এ যুগে আমার আপুর মতো মেয়ে হয় না। তাই তাকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলবেন না। সহ্য করতে পারছি না।”

মাহির চোখ বেয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। আজ এই বোনের সামনে কি করে ছোট হবে? কি করে বোনের বিশ্বাস ভাঙবে? কি করে বোনকে আঘাত করবে? কি করে কষ্ট দিবে? মেহের কি মানতে পারবে? এই বোনকে ফায়াজের হাত থেকে বাঁচাতে এত আয়োজন। নিজের অজান্তেই মেহেরকে বিপদে ফেলে দিয়েছিল। আর মেহেরকে আড়াল করতেই সব মেনে নিয়েছে চুপচাপ।

ফায়াজ সামনে থাকা ফুলের টপে লাথি মেরে চিতকার করে বলল,
“আমি বাজে কথা বলছি? জিজ্ঞেস করো ওকে? আমার সাথে গেম খেলে আমাকেই অপরাধী সাজানো হচ্ছে? ইউ হেভ নো আইডিয়া আমি কি করতে পারি? এই প্রথম ফায়াজকে কেউ লুজার বানিয়েছে। এতবড় চিট করেছে। ও আমার ইমোশন নিয়ে,আমার ভালোবাসা নিয়ে গেম খেলেছে। আমার সাথে টক্কর নিয়েছে আর আমি ছেড়ে দেব? কাউকে ছাড়ব না। আমি সব জ্বালিয়ে দেব। তোমাদের জীবন থেকে সুখ নিশ্চিহ্ন করে দেব। প্রতিটি দিন তোমাদের আতংক নিয়ে কাটবে। আই প্রমিস।”

মেহেরের কেমন সন্দেহ হচ্ছে। তাই মাহিকে বলল,
“আপু উনি কি সত্যি বলছেন?”

মাহি নীরবে চোখের পানি মুছছে। মেহের আরেকটু জোরে বলল,”আপু কিছু জিজ্ঞেস করছি।”

মাহি মাথা উঁচিয়ে বলল,”হ্যা, সব সত্যি।”

মেহের ধপ করে বসে পড়ে মাটিতে। মাথা ঘুরছে৷ কি শুনছে এ-সব। খুব করে চাইছে সব মিথ্যে হয়ে যাক। সব দুঃস্বপ্ন হোক। ওর বোন এমন করতে পারে না।

মাহি মেহেরকে ধরতে গেলে মেহের কাদতে কাদতে বলল,
“তুমি তূর্জ ভাইকে ঠকালে? পুরো পরিবারকে, আমাদের সবাইকে ঠকিয়েছ। তুমি এটা কি করে করলে? বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ার পর আরেকজনের সঙ্গে সম্পর্ক কি করে করতে পারলে?”

ফায়াজ মনে মনে হাসছে আর বলছে আমাকে ঠকানোর ব্যাপারটা কারো চোখে পড়ছে না। সবাই সবারটা নিয়ে ব্যস্ত৷
ফায়াজ ওখান থেকে নিঃশব্দে চলে গেল।

.

ফায়াজ নিজের ঘরের বিছানায় শুয়ে আছে। আর ভাবছে মাহির করা কাজের কথা। মাহি ওর সাথে প্রতারণা করেছে। এতদিন ধোঁকার মধ্যে রেখেছে। কারো সাথে চ্যালেঞ্জ করে প্ল্যান করে প্রেমে পড়িয়েছে। ওকে ডাম্প করেছে।
ফায়াজ ঘাড় কাত করছে আর বারবার ডানে-বামে ঘোরাচ্ছে।

ফায়াজ বাকা হেসে বলল,
“ভালোবাসা মাই ফুট। আমি চাইলেই তোমাকে তুলে নিয়ে বিয়ে করতে পারি। স্বামীত্ব ফলাতে পারি। সংসারও করতে পারি৷ বাট আই ডোন্ট ওয়ান্ট দ্যাট। আমি চাই তোমার জীবন তছনছ করতে। তোমাকেও আমার অবস্থানটা বুঝাতে। আমি তোমাকে কষ্ট পেতে দেখতে চাই। তোমাকে ছটফট করাতে চাই। তোমার সাজানো সংসার ভাঙা চোখের সামনে দেখতে চাই। তোমার ভালোবাসার মানুষকে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখতে চাই। তোমাকে সব দিক দিয়ে নিঃস্ব করতে চাই। সম্পর্ক নিয়ে মজা করেছ। এই সম্পর্ক গুলো আমি কেড়ে নিব।এসব হবে আর এসব করব আমি।”

.

পরের দিন সকালে মেহের ফাইল হাতে বের হচ্ছে। চোখ মুখ ফুলে আছে। সারারাত ঘুমায় নি। কান্নার কারণে মাথাটাও ধরেছে।
মাহি মেহেরের যাওয়া দেখছে। মেহেরের সামনে দাঁড়ানোর মুখ কিংবা সাহস কোনোটাই ওর নেই।

ফায়াজ সিগারেট ফুকছে। ধোঁয়া উড়াচ্ছে মনের সুখে। তখনই চোখ গেল মেহেরের দিকে। মেহের কেমন হেলে-দুলে হাটছে। চেহারাও কেমন লাগছে।
ফায়াজ মেহেরকে দেখে বাকা হেসে বলল,
“পেয়ে গেছি আমার খেলার প্রধান গুটিকে। মেহের! মেহের! মেহের!”

চলবে….!