শেষ পাতায় তুমি পর্ব-০৪

0
3060

#শেষ_পাতায়_তুমি (Revenge Story)
#ফাবিহা_নওশীন

|পর্ব-৪|

পরীক্ষা শেষ। মেহের ক্যাম্পাসের এক কোনায় একা বিষন্ন মনে বসে আছে। অনু, ওলিদ, আলিফ ওকে বারবার ডেকে গেছে। কিছু হয়েছে কি না, কি হয়েছে জিজ্ঞেস করেছে বারবার। মেহের উত্তরে শুধু বলেছে কিছুক্ষণের জন্য একা থাকতে চায়।
মেহেরের কিছুই ভালো লাগছে না। হাজার চেষ্টা করেও মাথা থেকে ঘটনাগুলো বের করতে পারছে না। গতকাল মাহি ওকে পুরো ঘটনা জানিয়েছে। ফায়াজের সাথে কি ছিল, কেন এসব করেছে। ফায়াজকে নয় তূর্জকেই ভালোবাসে। তবে এর মধ্যে একটা কথা হাইড করে গেছে। যেটা কিছুতেই মেহেরকে জানাতে চায় না।
মেহের এখনো মাহিকে অপরাধীর চোখে দেখছে। আর গতকালের ঘটনা মনে পড়তেই অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে।

দূর থেকে ফায়াজ মেহেরকে পর্যবেক্ষণ করছে। রহস্যময় হাসি দিয়ে মেহেরের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। তখনও মেহের এক দৃষ্টিতে মাটির দিকে চেয়ে আছে। ফায়াজ মেহেরের পাশে গিয়ে বসে পড়ল। পাশে কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে মেহের চোখ তুলে তাকাল। ফায়াজকে হটাৎ দেখে ঘাবড়ে গেল। মেহের ভয় ভয় মুখ করে আশেপাশে দেখছে। আশেপাশে পরিচিত কেউ নেই। বেছে বেছে এমন এক জায়গায় এসে বিষন্নতা বিলাস করতে এসেছে কেউ নেই তেমন।

মেহের কোনো উপায় না দেখে ফায়াজের দিকে চেয়ে আছে। ফায়াজ কি বলতে কিংবা করতে চায় সেটা জানার জন্য অপেক্ষা করছে। ফায়াজ মেহেরের ভীত দিশাহীন চেহেরা দেখে মনে মনে পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে।

ফায়াজ স্বাভাবিক গলায় বলল,
“আমি কি ভেবেছি জানো?”

মেহের ফ্যালফ্যাল করে ফায়াজের দিকে চেয়ে আছে। মনে হচ্ছে ফায়াজ ওর সাথে খোশগল্প করতে এসেছে। তাই ওর ভাবনাগুলো শেয়ার করছে।

ফায়াজ ফোন বের করতে করতে বলল,
“তূর্জের সাথে মিট করব। না শুধু তূর্জ না তূর্জের পুরো ফ্যামিলির সাথে কথা বলে তাদের হবু পুত্রবধূর আসল রুপ, আসল চরিত্র তুলে ধরব। কেমন হবে বলো তো?”

মেহের ফায়াজের কথা শুনে ভয় পেয়ে গেল। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বলল,
“আপনি এ-সব কেন করবেন? আপু আপনাকে ভালোবাসে না। আপু গতকাল আমাকে সব খুলে বলেছে। আপনাকেও বলেছে। আপু তূর্জ ভাইয়াকে ভালোবাসে। প্লিজ তাদের সম্পর্কটা নষ্ট করবেন না।”

“তার মানে তুমি বলতে চাইছো তোমার আপুর কোনো দোষ নেই?”

মেহের ফায়াজের প্রশ্নে দমে গেল।
“না আপু অবশ্যই অন্যায় করেছে। খুবই খারাপ কাজ করেছে। এটা আমি মানি।”

ফায়াজ নড়ে-চড়ে বসে বলল,
“অন্যায় করলে অন্যায়ের শাস্তি পেতে হয় এটা জানো না?”

মেহের অসহায় ফেস করে ফায়াজের দিকে তাকাল।

ফায়াজ মেহেরকে আরো ভয় দেখানোর জন্য বলল,
“এই ধরো বিয়ের দিন তোমাদের বাড়িতে গিয়ে সবার সামনে আমাদের সম্পর্কের কথা বললাম। তাহলে কি হবে? আমার কাছে তোমার আপুর সাথে পিক, কল রেকর্ড, মেসেঞ্জার চ্যাটিং সব কিছুর প্রমাণ আছে। তাই বিশ্বাস করাতে সমস্যা হবে না।”

অজানা ভয়ে মেহেরের বুক কেঁপে উঠল।
“আপনি কি চাইছেন? কেন এমন করছেন? আপুকে বিয়ে করতে চাইছেন? তাতে কি লাভ হবে? আপু তো আপনাকে ভালোবাসে না।”

ফায়াজ আলতো হেসে বলল,
“ব্রিলিয়ান্ট। একদম ঠিক বলেছ। আমিও তোমার আপুকে বিয়ে করতে চাই না। যে অন্য পুরুষে আসক্ত তাকে বিয়ে করে আমার কি লাভ হবে?”

মেহের ভ্রু কুচকে ফায়াজের দিকে তাকাল। ফায়াজ কি চাইছে বুঝতে পারছে না।
“তাহলে আপনি কি চাইছেন? কেন এমন করছেন? আপনি কেন এ-সব করবেন বলে ভয় দেখাচ্ছেন? ”

ফায়াজ ফিক করে হেসে বলল,
“ভয় দেখাচ্ছি? আমি তোমাকে ভয় দেখাচ্ছি? সিরিয়াসলি, তোমার তাই মনে হচ্ছে? আমি মোটেও ভয় দেখাচ্ছি না। আমি রিভেঞ্জ নিতে চাই। রিভেঞ্জ!”(চোখ মুখ শক্ত করে)

মেহের আতঁকে উঠল।
“রিভেঞ্জ!”

“হ্যা রিভেঞ্জ। আমি ওর লাইফ হেল করে দেব। আমি বিয়ে ভাঙার পর কি হবে বলো তো? তোমার পরিবারের মান-মর্যাদা ধূলিসাৎ হবে। তোমার বাবা-মা মেয়ের কর্মকান্ডের জন্য লজ্জিত হবেন। তূর্জ তোমার বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর ছেলে তাই না? তোমার বাবা কি বিষয়টি মানতে পারবে? হয়তো লজ্জায় সমাজে মুখ দেখাতে না পেরে আত্মহত্যা করবে।”

মেহের চিতকার করে বলল,
“নাহ! কি আজে-বাজে কথা বলছেন?”

ফায়াজ বাকা হেসে বলল,
“এগুলো আজে-বাজে কথা না এগুলো রিয়েলিটি। ভেবো দেখো আজে-বাজে কথা বলছি কি না।”

মেহের ভেবে দেখল, ফায়াজ ভুল কিছু বলে নি। বাবার এতদিনের বন্ধুত্ব। এতদিনের স্বপ্ন আপুর সাথে তূর্জের বিয়ে নিয়ে। সবাই জানে ওদের সম্পর্কের কথা। বিয়েটা না হলে সব শেষ হয়ে যাবে।

ফায়াজ মেহেরকে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলল,
“আর তোমার মাহি আপু? সে তো লজ্জায়-অপমানে আত্মহত্যা করবে শিওর। নিজের স্বপ্নভঙ্গ, ভালোবাসার মানুষকে হারানো, পরিবারের অসম্মান-অপমান এগুলো মেনে নিতে পারবে? অপরাধবোধে নিজেকে শেষ করে দেবে।”

মেহেরের চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। বিয়েটা না হলে এ-সব হবে শিওর। পুরো পরিবার শেষ হয়ে যাবে।
কিন্তু ফায়াজের এ-সব করার হলে আগে থেকেই কেন বলছে?
মেহের চোখ তুলে এক পলক ফায়াজকে দেখে চোখ নামিয়ে কিছু ভাবছে।

তারপর মেহের ফায়াজের দিকে চেয়ে বলল,
“আমার কাছে কি চান? কি করতে হবে আমাকে?”

ফায়াজ মেহেরের দূরদর্শিতা দেখে মুগ্ধ হয়ে বলল,
“বাহ! বেশ। একমাত্র তুমিই পারো তোমার পুরো পরিবারকে বাঁচাতে। তুমি চাইলেই নির্বিঘ্নে তোমার বোনের বিয়ে হবে।”

মেহের অবাক হয়ে বলল,
“আমি চাইলে হবে! মানে?”

ফায়াজ মেহেরের আরেকটু কাছে গিয়ে বলল,
“এর জন্য তোমাকে তোমার পরিবার থেকে দূর হতে হবে। তোমার আমাকে বিয়ে করতে হবে।”

মেহের এক রাশ বিস্ময় নিয়ে ফায়াজের দিকে চেয়ে আছে।
কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
“বিবিবি…এ! মানে কি?আমি আপনাকে কেন বিয়ে করব?”

ফায়াজ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“কারণ তোমার বোন আমাকে চিট করে অন্য একজনকে বিয়ে করতে যাচ্ছে। তাই তুমি আমাকে বিয়ে করবে। পরিবার ছাড়বে।”

মেহেরের কান্নার মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে।
ফায়াজ মেহেরকে আরো দূর্বল করার জন্য বলল,
“তুমি তোমার পরিবার ধ্বংসের কারণ হতে চাও? তুমি চাইলেই তোমার পরিবারকে বাঁচাতে পারো। তোমার বোনকে বাঁচাতে পারো। যদি তোমার বোন কিছু করে ফেলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে?”

মেহেরের নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। ফায়াজ কেন এমন করছে বুঝতে পারছে না। ওকে বিয়ে করে কি লাভ হবে সেটাও বুঝতে পারছে না। কিন্তু ভালোবাসা কিংবা সংসার করার জন্য বিয়ে করছে না সেটুকু বুঝার মতো ক্ষমতা ওর আছে।

ফায়াজ উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“ওকে নিজের পরিবারের ধ্বংস দেখার জন্য অপেক্ষা করো।”

মেহের অস্ফুটস্বরে বলল,
“নাহহ!”

ফায়াজ দুই পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
“তাহলে?”

মেহের দৃষ্টি নত করে আমতা আমতা করে বলল,
“আমার ভাবার জন্য সময় চাই।”

ফায়াজ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,
“তাহলে ভাবো। ১০মিনিট সময় দিলাম তোমাকে।”

মেহের ফায়াজের কথা শুনে অবাক হলো। বিয়ে নামক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভাবার জন্য ১০মিনিট সময়? কি আশ্চর্যজনক কথা। ১০মিনিটে অচেনা একজন মানুষকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়? সারাজীবনের একটা ব্যাপার ভাবার জন্য ১০মিনিট কি যথেষ্ট সময়?

মেহেরের এ-সব ভাবতে ভাবতে ১০মিনিট চলে গেল।
ফায়াজ বলল,
“টাইম আপ! উঠ।”

মেহের ফায়াজের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
ফায়াজ আবারও বলল,
“যাবে না থাকবে? আমার কাছে সময় নেই।”

মেহের কিছুই বুঝতে পারছে না। কোথায় যাবে? ফায়াজ কোথায় যাওয়ার কথা বলছে?
“কোথায় যাব?”

ফায়াজ বলল,
“বিয়ে করতে মানুষ কই যায়? কাজী রেডি। বিয়ে না করলে বলো আমি উনাকে চলে যেতে বলি।”

মেহের কিছুই বুঝতে পারছে না। সব কিছু এত দ্রুত।
“আজজজ,,,!”

“হ্যাঁ আজ। নয়তো নয়। আমি তোমাকে এর বেশী সময় দিতে পারব না।”

মেহের শব্দ করে কাঁদছে। ফায়াজ মেহেরের কান্না পাত্তা না দিয়ে বলল,
“বিয়ের পর তোমার বাবা-মা জানবে। আমরা বিয়ে করে তোমাদের বাড়িতে যাব।”

ফায়াজ মেহেরকে বসে থাকতে দেখে হাত ধরে টেনে উঠিয়ে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে। মেহের কোনো বোধ পাচ্ছে না। ওর হুশ নেই। ফায়াজ যেদিকে নিয়ে যাচ্ছে সেদিকেই যাচ্ছে।

.

মেহের লেহেঙ্গা পড়ে, গায়ে ভারী গয়না পড়ে বিনা সাজে বসে আছে। ওর চোখ বেয়ে অনবরত পানি পড়ছে। চেয়ারে বসে আছে, পাশে ফায়াজ বসা। ফায়াজের পাশে সাক্ষীরা। বরাবর কাজী সাহেব বিয়ে পড়াচ্ছে। কাবিননামা, কাগজপত্র সামনে রাখা।

মেহের চুপ করে বসে আছে।
মেহেরের সামনে একটা কাগজ বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“সাইন করুন।”

মেহের কাজীর দিকে তাকাল। দু-হাতে লেহেঙ্গার ওড়না খামচে ধরে আছে। সারা শরীর কাঁপতে। বুক ঢিপঢিপ করছে৷ পরিবারের কাউকে না জানিয়ে এতবড় ঘটনা ঘটাবে? সবাই জানার পর কি রিয়েকশন দিবে? বাবা-মা, আপু সবাইকে কি বলবে?

ফায়াজ মেহেরকে চুপ দেখে চেয়ার ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে চোখ মুখ শক্ত করে বলল,
“কোনো বিয়ে হবে না৷ আমি যাচ্ছি।”

ফায়াজের বন্ধু ওকে আঁটকে বলল,
“ফায়াজ, মাথা গরম করিস না। আমি কথা বলছি।”

ফায়াজের বন্ধু তুষার মেহেরকে বলল,
“মেহের, সাইন করো। ফায়াজ ক্ষেপে যাচ্ছে। তারপর ওকে সামলানো মুশকিল হয়ে পড়বে।”

মেহের তুষারের কথা শুনে কাঁপা কাঁপা হাতে কলম নিল। ওর চোখের পানিতে পেপার ভিজে যাচ্ছে। মেহের সাইন করে চোখ বন্ধ করে নিল। একটা সাইন ওর জীবন বদলে দিল। হটাৎ করেই আজ কারো স্ত্রী হয়ে গেল। অন্য কেউ ওর উপর অধিকার দেখাবে। হাসি-খুশির জীবনকে মুহুর্তেই অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিল।

এরি মধ্যে মেহেরকে কেউ উঠতে বলল। মেহের উঠে দাড়ানোর শক্তি পাচ্ছে না। মেহের উঠে দাঁড়াল। শরীর অসার হয়ে পড়ছে। শরীরে শক্তি পাচ্ছে না। মনে হচ্ছে জ্ঞান হারাবে। মাথাটা ঘুরছে। চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। নিজেকে সামলে নিল।
ফায়াজের পেছনে পেছনে হেটে যাচ্ছে।

.

মাহি মেইনডোরের সামনে মেহেরকে ফায়াজের সাথে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমকে গেল। মেহেরের শরীরে লেহেঙ্গা দেখে অবাক হয়ে চেয়ে আছে। অজানা ভয়ে বুক কেঁপে উঠল। মাহির কেন জানি ভয় হচ্ছে। ধীর পায়ে ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।

ফায়াজের দিকে একবার তাকিয়ে মেহেরকে বলল,
“মেহের তোর গায়ে লেহেঙ্গা কেন? আর ফায়াজ তোর সাথে কেন?”
মেহের উত্তর দিচ্ছে না।

ফায়াজ উত্তর দিল,
“আমরা বিয়ে করেছি। আমি আর মেহের।”

মাহির মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। এর চেয়ে বীভৎস খবর যেন পৃথিবীতে আর একটা হয় না। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। কপালে ঘামের চিকন রেখা দেখা যাচ্ছে।
মেহেরের দিকে আরেকবার তাকাল। মাহি কেঁদে উঠল। মেহেরকে ঝাঁকিয়ে বলল,
“কি করেছিস এটা তুই? কেন করেছিস? ও তোকে ব্ল্যাকমেইল করেছে তাই না?”

ফায়াজ মুচকি হাসছে।
মাহি কাঁদতে কাঁদতে ফায়াজের সামনে বসে দু’হাত জোড় করে বলল,
“আমার বোনকে ছেড়ে দেও। ওর সাথে এত বড় অন্যায় করো না। ও এসবের কিচ্ছু জানে না। ও এসবের কোথাও নেই। ওকে ছেড়ে দেও। যা করার আমি করেছি৷ তোমার যা শাস্তি দেওয়ার আমাকে দেও। আমি সব মাথা পেতে নেব। তবুও ওর জীবনটা ধ্বংস করো না। ও অবুঝ বাচ্চা মেয়ে। তুমি বললে আমি আমার বিয়ে ভেঙে দেব। তূর্জকে বিয়ে করব না। তুমি বললে আমি তোমাকে বিয়ে করব। তবুও ওকে ছেড়ে দেও। প্লিজ। আমি হাতজোড় করছি।
দয়া করো। ওর এতবড় ক্ষতি করো না।”

ফায়াজ মাহির কথা শুনেও না শোনার ভান করছে।
মাহি উঠে দাড়িয়ে মেহেরকে ঝাকিয়ে বলল,
“পাগল হয়ে গেছিস তুই? কি করেছিস তুই? তুই ওকে কেন বিয়ে করেছিস? আমি কিছুতেই এই বিয়ে মেনে নিব না। আমি মা আর বাবাকে সবটা বলব। তারাও এ-ই বিয়ে মানবে না।”

মাহি তাদের ডাকতে উদ্ধৃত হলে মেহের ওর হাত ধরে ফেলে। তারপর বলে,
“তুমি একটা কথাও বলবে না মা-বাবার সামনে। কিচ্ছু বলবে না।”

“আমার পাপের শাস্তি তুই পাবি? এটা আমি মেনে নিব? কিছুতেই না।আমি সব বলব।”

মেহের শক্ত গলায় বলল,
“আমার মরা মুখ দেখতে চাইলে বলবে। এমনিতেই মরে গেছি এখন যদি শরীরটাকে মেরে ফেলতে চাও তবে যা খুশী করো।”

মাহি ওর কথা শুনে এক কদম পিছিয়ে গেল। তারপর পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইল।
চেচামেচি শুনে ওদের বাবা-মা চলে এসেছে। মেহেরকে একটা ছেলের সঙ্গে বিয়ের সাজে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে গেল।
কিছুক্ষণ চেয়ে থাকার পর মেহেরের মা ছুটে এসে বলল,
“মেহের, তোর এই সাজ কেন?”

“আমি বিয়ে করেছি।”

মেহেরের মা ফায়াজের দিকে তাকাল। তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
“মানে? বিয়ে করেছিস মানে কি?”

মেহের আবারও বলল,
“আমি বিয়ে করেছি কিছুক্ষণ আগে।”

মেহেরের বাবা সব শুনে মেহেরের সামনে এসে মেহেরকে একটা থাপ্পড় মারল। মাহি দ্রুত বাবার সামনে এসে বলল,
“বাবা, ওকে কেন মারছ? ও ভুল করে ফেলেছে।”

মেহেরের বাবা চিতকার করে বলল,
“ভুল! এটা ভুল? ওকে আমার চোখের সামনে থেকে যেতে বল। আমি ওকে দেখতে চাই না। চলে যেতে বল।”

মাহি কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“চলে যাবে কেন? কোথায় যাবে?”

“জাহান্নামে যাক। রাস্তার ছেলেকে বিয়ে করেছে নাকি? তাহলে রাস্তায় গিয়ে থাকুক। আমার বাড়িতে জায়গা নেই ওর। বের হয়ে যাক।”

মেহেরের মা কিছু বলতে গেলে ওর বাবা হাত উঁচিয়ে থামিয়ে দিল। তিনি কাঁদছেন। মাহিও কাঁদছে। মেহের কাঁদতে কাঁদতে বাবা বলে এগিয়ে যেতেই ফায়াজ মেহেরের হাত ধরে টানতে টানতে বাড়ি থেকে বাইরে নিয়ে যাচ্ছে।
মুচকি হাসছে আর মনে মনে বলছে,
“রাজকন্যা যখন পেয়েছি এই রাজ্যে খুব দ্রুতই পা রাখব।”

চলবে….!