শ্রাবন মেঘের বর্ষন পর্ব-০৬

0
328

#শ্রাবন_মেঘের_বর্ষন🍁
#লেখনীতে:#তানজিল_মীম
#পর্ব:০৬

“এলার্ম বাজার শব্দে ঘুম ভাঙলো তিহানের’!!চোখ বন্ধ করেই হাত দিয়ে টেবিলের উপর থাকা এলার্মটা অফ করলো সে’!!তারপর কিছুক্ষন নড়েচড়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো’!!সূর্যের ফুড়ফুড়ে আলো সাথে সকালের ফ্রেশ ঠান্ডা বাতাস বয়ে আসছে তিহানের রুমের ভিতর জানালা ভেদ করে’!!তিহান আশেপাশের সবকিছুর দিকে একবার চোখ বুলিয়ে চলে গেল ওয়াশরুমে’!!আজকে ভার্সিটি যেতে হবে তাড়াতাড়ি খুব জরুরি কাজ আছে তাঁর’!!এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুম ঘুম ভাব নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে তিহান….

.
.

“পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙল আমার’!!কালরাতে কখন যে বেলকনিতে ঘুমিয়ে পরেছিলাম বুঝতেই পারি নি’!!রোজকারের চেয়ে আজকের সকালটা খুব স্পেশাল মনে হচ্ছে আমার’!!হাই তুলতে তুলতে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম আমি’!!তারপর ঢুলতে ঢুলতে চলে গেলাম বিছানায়’!!ঘুম এখনও কমপ্লিট হয় নি আমার’!!বিছানায় শুতেই ফোনটা বেজে উঠল আমার’!!এটা নিশ্চয়ই রাএীর বাচ্চা’!!ফোনটা তুলেই চেঁচিয়ে বলে উঠলামঃ

——-“তোর কি কাজ নাই এত সকালে ফোন দিয়া ঘুম ভাঙস আমার…

——-“আরে দোস্ত সকাল ১০ঃ০০টা বাজে আর তুই এখনো ঘুমাস…

——“১০টা বাজুক বা ১১ টা তাতে কি কইছে….

——“কি হইছে মানে ভুলে গেলি আজকে আমাদের শফিক স্যারের ক্লাস আর ক্লাসে ঠিক টাইমে ঢুকতে না পারলে….

“সাথে সাথে মাথায় যেন বাজ ভেঙে পরলো’!!হতভম্ব হয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলাম আমিঃ

——“কি কশ!

——“সত্যি বলছি…

——“তাইলে তুই এত দেরিতে ফোন দিছোস কেন আরো আগে দিতে পারতি না শয়তান কোথাকার, ফোন রাখ?(রেগে)

“বলেই ফোনটা কেটে দিলাম দৌড় ওয়াশরুমের দিকে’!!

“এদিকে রাএীঃ

—–“যা বাবা একটু আগে ফোন কেন দিলাম এটার জন্য কথা শোনালো আর এখন ফোন কেন দেরিতে দিলাম তার জন্য কথা শোনাচ্ছে?এ মেয়েটা আসলেই একটা আজব চিজ…

__________________

“হতভম্ব হয়ে দৌড়ে ভার্সিটির ভিতরে ঢুকলাম আমি’!!আর ভিতরে ঢুকতেই মিতু,রাএী এসে হাজির’!!ওরা সামনে আসতেই তিনজন মিলে একসাথে চলে গেলাম ক্লাসে!’ভাগ্য ভালো ঠিক টাইমে চলে এসেছি….

.

“একের পর এক ক্লাস করে ক্লান্ত আমি’!!তার সাথে সকালে কিছু খাই নি যাতে আরো বেশি ক্লান্ত লাগছে’!!

——“দোস্ত আমায় একটু কোলে করে ক্যান্টিনে নিয়ে চল…

“ভার্সিটির করিডোর দিয়ে তিন হাঁটতে হাঁটতে কথাটা বলে উঠলাম আমি’!!আর আমার কথা শুনে রাএী, মিতু অবাক হয়ে বললোঃ

—–“কি?

—–“তোরা কি কানা নাকি আমায় কোলে নে দোস্ত আমার শরীরে একদম এনার্জি নেই…

“আমার কথা শুনে রহস্যের ছলে মিতু বলে উঠলঃ

——“ঠিক আছে দোস্ত আয় কোলে…

——“সত্যি সত্যি নিবি (মজা করে)

——“হ দোস্ত তুই বলছো আর আমি নিবো না…

——“ঠিক আছে দোস্ত নে কোলে…

“আমার কথা শুনে সত্যি সত্যি মিতু এসে কোলে তুলে নিলো আমায়’!!ওর কাজে অবাক হলাম আমি’!!ভয়ে ঘাবড়ে গিয়ে বলে উঠলাম আমিঃ

——“ওই কি করোস তুই পড়ে যাবো আমি…

——“আরে পরবি না তোর চেয়ে মোটা আছি আমি…

——“প্লিজ বোইন ছাড় আমায় আমি এহনো বিয়া করি নাই…

——“তুই এতো লাফালাফি করছিস কেন এত লাফালে সত্যি সত্যি পড়ে যাবি…

——“দোস্ত আমার খুব ভয় করছে তাড়াতাড়ি নামা আমায় প্লিজ….

——“আরে ভয় পাস না পরবি না…

——-“তুই ছাড় আমায়…

“এই বলে লাফালাফি শুরু করে দিলাম আমি’!!আর আমার কাজে মিতু বলে উঠলঃ

——“বোইন এমন করিস না সত্যি পড়ে যাবি তাহলে….

“কিন্তু কে শুনে কার কথা আমার মতো আমি লাফাচ্ছি’!!আর যার কারনে ঘটে গেল এক ভয়ংকর ঘটনা’!!আমার লাফালাফিতে হর্ঠাৎই পড়ে যেতে নিলাম আমি’ কিছুক্ষণের জন্য মিতু রাএী দুজনেই স্তব্ধ হয়ে গেল’!!আমি ভয়ে চোখ বন্ধ নিলাম’!!এমন সময় কেউ এসে ধরে নিলো আমায়’!!আমিও ভয়ে ঘাবড়ে গিয়ে গলা জড়িয়ে ধরলাম তার’!!

“কিছুক্ষণ পর….

“আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালাম আমি’!!উপরেই সামনের ব্যক্তিকে দেখে ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল আমার’!!কারন আমায় কোলে নিয়ে চোখ লাল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে তিহান ভাইয়া’!!ওনার চোখ দেখেই ভয়ে ঢোক গিললাম আমি’!!আমি কিছু বলার আগেই তিহান ভাইয়া কর্কশ কন্ঠে বলে উঠলঃ

——-“এখানে কি হচ্ছে?

——-“আসলে ভাইয়া( রাএী)

——-“এভাবে বাঁদরের মতো করিডোরে চেঁচামেচি করছিস কেন তোরা,আর এই ড্রামা কুইনকে কোলে নিয়েছিস কেন?

——“হয়েছে কি ভাইয়া আমি তো মজার ছলে ওকে কোলে নিয়েছিলাম আর কোলে নিতেই আর কি (মিতু)

——“নিজে হাঁটতে পারে না আবার আসছে আরেকজনকে কোলে নিতে…

“বিনিময়ে মিতু আর কিছু বলতে পারলো না মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো’!!মিতু চুপ হয়ে যেতেই তিহান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলঃ

——“আর তুই বা কেমন ও কোলে নিতে চাইলো আর তুইও কোলে উঠে পরলি এক্ষুনি কোমড় ভেঙে গেলে কি হতো?’

“এই মুহুর্তে আমার মনে হচ্ছে একটু আগে তিহান ভাইয়া আমায় কোলে না নিয়ে নিচে পড়ে গেলেই ভালো হতো!’আর যাই হোক এত কথা শুনতে হতো না!’ফট করেই বলে উঠলাম আমিঃ

——“আমার কোমড় ভাঙলে আপনার কি,এমনিতেই আপনি তো আর ভালোবেসে কোলে নেন নি আমায় ভুল করে কোলে নিয়েছেন তাই এত বকবক না করে নামান আমায়…

——-“এই জন্যই বলে মানুষের ভালো করতে নেই…

——“বলছিলাম কি ভাইয়া মিষ্টি করে বলুন না আই লাভ ইউ…

“ব্যস হয়ে গেল সাথে সাথে ভাইয়া আমায় কোল থেকে ফেলে দিল’!!আমিও চেঁচিয়ে বলে উঠলামঃ

——“ও মা গো আমার কোমড়….

——“তোর কোমড় ভাঙাই উচিত,এর পর উল্টো পাল্টা কথা বললে তোকে তো আমি, সর বলছি…

“বলেই আমায় টপকে চলে গেল তিহান ভাইয়া’!!আর আমি হা হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে’!!আজকে ভাইয়া একটা ইয়েলো রঙের টিশার্ট সাথে ব্লাক জিন্স পড়েছে, চুলগুলো বরাবরের মতোই খুব সুন্দর করে সাজানো,আমি তো তাকে দেখেই বুকে হাত দিয়ে বললামঃ

——“হায়,মে তো মারযাবা…

“আমার কথা শুনে রাএী, মিতু আমার পাশে বসে বললোঃ

——-“তোকে ফেলে দিয়ে চলে গেল আর তুই কিনা?

——-“ইস কোই তো পেয়ার কেহেতে হে মেরি জান…

“বলেই মিতু আর রাএীর গলা জড়িয়ে ধরলাম আমি’!!আর আমার কথা শুনে রাএী, মিতু বলে উঠলঃ

——“এ্যাঁ…

——“এ্যাঁ নয় হ্যাঁ….

…..

“এদিকে তিহান নাফিয়ার কথা শুনে মনে মনে খুব মজা পেয়েছে’!!এ মেয়ে আসলেই পাগল হয়ে গেছে’!!ভেবেই আনমনে হাসতে হাসতে সামনে এগিয়ে গেল তিহান!’

______________________

“দুপুরের কড়া রোদের মধ্যে একটা গাছের ছায়ার আড়ালে একটা বেঞ্চের নিচে বসে আছি আমি’!!আমার সামনেই রয়েছে একটা বড় খালি মাঠ’!!বিকেল টাইমে এখানে প্রচুর মানুষজন থাকে কিন্তু এখন দুপুর দেখে তেমন কেউ নেই’!!এই মুহূর্তে নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে,

—–“আচ্ছা আমার কি উচিত বারবার তিহান ভাইয়ার সামনে ছোট হওয়া,বার বার ওনার রিফিউজ শোনা,ওনার ইগনোর সহ্য করা, কিন্তু যতই চাই ওনার সামনে যাবো না,কোনো কথা বলবো না,ভালোবাসার কথা তো একদমই না কিন্তু অবাধ্য মন তো শুনতেই চায় না,যতই ভাবি তিহান ভাইয়াকে ভুলে যাবো ততই যেন বেশি করে মনে পড়ে ওনায়,দুনিয়াটা আসলে আজব চিজ মাইরি..

“এসব আনমনে ভাবছি আমি’!!আর একা নীরবে বসে আছি এখানে,আজকে ভার্সিটি শেষে আর বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করলো না,হুট করেই মনটা খারাপ হয়ে গেল আমার,তাই তো চুপচাপ নীরবে বসে আছি….

।।

—–“মন খারাপ….

“আচমকা কারো কন্ঠ শুনে পাশে থাকালাম আমি’!!সামনেই মাস্ক আর ব্লাক চশমা পরিধিত সেই ছেলেটিকে দেখে গুরুতরভাবে চমকে উঠলাম আমি’!!পরনে ছেলে ব্লাক শার্ট আর ব্লাক জিন্স’!!ভয়ংকরভাবে অবাক হয়ে বললাম আমিঃ

——“আপনি….

“আমার কথা শুনে ছেলেটি কনফিডেন্স নিয়ে বললোঃ

——-“হুম আমি, কেন আসতে পারি না বুঝি…

——“না তেমনটা হবে কেন আসলে হুট করে আসলেন তো তাই আরকি…

——“আমি হুট করেই আসি…

——“মানে…

——-“না কিছু না, এখানে কি করছো?

——“না তেমন কিছু নয় এমনি বসে আছি…

——“এমনি এমনি কেউ বসে থাকে নাকি, মন খারাপ তাই না….

—–“না তেমন কিছু নয় আসলে বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছিল না তাই আর কি এখানে এসে বসেছি…

——“ওহ আচ্ছা…

——“হুম আর আপনি এখানে…

——“আমিও তোমার মতো বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছিল তাই এসেছি আর এসেই তোমায় দেখে চলে আসলাম তোমার কাছে…

——“ওহ আচ্ছা, একটা কথা বলি কিছু মনে করবেন না তো….

——“হুম করো না…

——“আপনি সবসময় মাস্ক আর চশমা পড়ে থাকেন কেন বলুন তো…

——-“আসলে কি বলবো আমি দেখতে খুব একটা ভালো নই তাই আর কি?

——“মিথ্যা বলছেন আমার সাথে…

——“একদমই নয়…

——“😒😒😒

——-“আরে ওভাবে তাকানোর মতো কিছু বলেছি নাকি…

——-“আপনাকে আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে… (বিড়বিড় করে)

——“কিছু বললে নাকি…

——“না না কিছু বলি নি তো…

——-“ঠিক আছে তা তুমি কোন ইয়ারে…

——“আমি ফাস্ট আর আপনি…

——“আমি বলবো একদিন…

——“সেটা কেন?

——“সেটাও বলবো একদিন…

——“আপনি তো অদ্ভুত মানুষ…

—–“একটু রহস্যের হলে ক্ষতি কি..

——“মানে…

——-“মানে কিছুই নয়…

“তারপর এটা ওটা নিয়ে ওনার সাথে গল্প জুড়ে দিলাম আমি’!!একটা অপরিচিত ছেলের সাথে কথা বলছি সেটা একদমই মনেই হচ্ছে না আমার যেন কত দিনের পরিচয় আমাদের’!!মন খারাপ ভাবটা নিমিষেই চলে গেল আমার’!!

“এদিকে ছেলেটি ভাবছেঃ

“আমি জানতাম মায়াবিনী তোমার মন খারাপ তাই তো ছুটে আসলাম তোমার কাছে’!!তোমায় আমি কথা দিচ্ছি মায়াবিনী খুব তাড়াতাড়ি তোমার সব মন খারাপ পুরোপুরি ভেনিস করে দিবো!’জাস্ট একটু অপেক্ষা….🌸

__________________________________________

______________________

“সন্ধ্যা_৭ঃ০০টা….

——“ওই রুহাইনার বাচ্চা দাঁড়া কইতাছি,তুই কোন সাহসে আমার ব্যাগ দিয়া ললিপপ নিছোস…

——“ললিপপ নিয়েছি বেশ করেছি…

——“তোরে তো আমি,কালকে আম্মুর সামনে বেশি ভালো সাজা হয়েছিল না তার শাস্তিও আজকে তোরে দিমু দাঁড়া কইতাছি…

——“আপি ধরতে পারে না,..

——“ধরতে পারি না দাঁড়া তুই…

——-“ওই তোরা দুইটায় কি লাগিয়েছিস…(আম্মু)

——“ও আমার ব্যাগ থেকে ললিপপ নিছে কেন?

—–“ললিপপই তো নিছে তাতে কি হইছে…(আম্মু)

—–“কি হইছে মানে, ও না বলে নিছে কেন?

—–“ওগুলো তো আমার জন্যই আনছো..(রুহান)

—–“কে বলছে তোর জন্য আনছি…

——“আমি বলছি…(রুহান)

——“তোরে তো আমি…

“এমন সময় ফোনটা বেজে উঠল আমায়’!!ফোনটা বাজতেই রুহানকে বলে উঠলাম আমিঃ

——“তোরে তো আমি পড়ে দেখছি আগে ফোনটা কে করছে তারে দেখে নি…

“বলেই ফোনের কাছে চলে গেলাম আমি’!!ফোনটা তুলতেই উওেজিত কন্ঠে বলে উঠল রাএীঃ

——“দোস্ত মেলায় যাবি….

——“এখন…

——“হুম চল মিতুও আসছে তিনজন মিলে খুব মজা করবো চল প্লিজ….

——-“কিন্তু আম্মু কি যেতে দিবে…

——“একটু ম্যানেজ করে নে না,আর এখন তো খুব একটা দেরি হয় নি আমরা তাড়াতাড়ি গিয়ে আবার তাড়াতাড়ি চলে আসবো!’

——“আচ্ছা দেখছি…

“বলেই ফোনটা কেটে দিলাম আমি’!!

——-“দেখছি তো বলে দিলাম কিন্তু আম্মু কি যেতে দিবে আমায়….
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে……….