শ্রাবন মেঘের বর্ষন পর্ব-০৭

0
333

#শ্রাবন_মেঘের_বর্ষন🍁
#লেখনীতে:#তানজিল_মীম
#পর্ব:০৭

“রান্না ঘরে কাজ করছে আম্মু’!!এমন সময় পিছন থেকে আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলাম আমিঃ

—-“আম্মু….

—-“কি চাই…

—–“তুমি কি করে বুঝলে আমার কিছু চাই….

—–“যেহেতু অসময়ে এসে জড়িয়ে ধরেছিস এর মানে নিশ্চয়ই কিছু চাই তাই তো…

——“তুমি না খুব ভালো আম্মু, না বলতেই সব বুঝে যাও..

——“হুম বুঝেছি বেশি পাম দিতে হবে না এখন বল কি চাই তোর…

—–“আসলে আম্মু….

—–“বেশি মানে মানে না করে বলে ফেল….

—–“আম্মু মেলায় যাবো….

——“কি এই রাতের বেলা একদমই না আর তোর বাবা জানতে পারলে…

—–“প্লিজ আম্মু যাই না,তাড়াতাড়ি গিয়ে আবার তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো প্লিজ আম্মু যাই…

—–“না মানে না…

—–“প্লিজ আম্মু রাত্রি, মিতু ওরা দুজনেও যাবে!’

—–“একবার না বলছি…

—–“প্লিজ আম্মু প্লিজ প্লিজ…

——“তোর বাবা জানলে…

—–“বাবা জানবে কি করে আর আমি কথা দিচ্ছি তোমায় বাবা জানার আগেই চলে আসবো আমি প্লিজ আম্মু যাই না,…

—–“ঠিক আছে তবে তাড়াতাড়ি ফিরে আসবি কিন্তু…

—–“উম,লাভ ইউ আম্মু থ্যাংক ইউ সো মাচ…

“বলেই আম্মুর গালে একটা চুমু দিয়ে আমি দৌড়!কারন এখন তাড়াতাড়ি তৈরি হতে হবে আমায়!’

“এদিকে আম্মু আমার কাজ দেখে মুচকি হেঁসে বলে উঠলঃ

—–“পাগলী মেয়ে একটা!’

__________________

“মেলার উদ্বোধনের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মিতু আর রাত্রি’!!অপেক্ষা করছে তাঁরা নাফিয়ার জন্য কারন কিছুক্ষন আগেই নাফিয়া ফোন করে বলেছে সে আসা না পর্যন্ত কেউ ভিতরে না ঢুকতে’!!হর্ঠাৎই মিতু বলে উঠলঃ

—–“কই ও আসবে তো নাকি…

—–“আরে আসবে আসবে, না আসলে কি আর আমাদের দাঁড়াতে বলতো নাকি!

——“হুম সেটাও ঠিক…

“এরই মধ্যে নাফিয়া এসে হাজির’!!নাফিয়াকে দেখে রাত্রি বলে উঠলঃ

—–“ওই দেখ বলতে না বলতেই এসে পড়েছে…

—–“হুম…

“রিকশা থেকে নেমেই দৌড়ে মিতু আর রাত্রির সামনে চলে গেলাম আমি’!!নাচতে নাচতে বলে উঠলামঃ

—–“দোস্তরা আই এম কামিং…

——“সে তো দেখতেই পাচ্ছি…(রাত্রি)

——“রেগে আছিস আমার ওপর…

——“না চল তাড়াতাড়ি… (রাত্রি)

——“হুম চল…

——“আজকে কিন্তু খুব মজা করবো..(মিতু)

——“অবশ্যই…

“তারপর তিনজন একসাথে চললাম মেলার ভিতর’!!

.

“মেলার ভিতর ঢুকতেই আনন্দে মনটা মেতে উঠল’!!কারন মেলার ভিতর রয়েছে রঙবেরঙের দোকান-পাট সাথে অনেক মানুষজন’!!আমরা তিনজন একটা পর একটা দোকান ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম’!!তার সাথে হুড়োহুড়ি আর অনেক মজা,

—–“ফুচকা খাওয়া কিন্তু একদমই বাদ যাবে না….

——“আবার জিগায়… (রাত্রি)

——“হুম…(মিতু)

||

“রাত_১০ঃ৩০টা…..

“ল্যামপোস্টের আবছা আলোর পথ দিয়ে একলা হেঁটে চলেছি আমি’ একটু ভয় ভয় করছে!!,

—–“আর কি ভাগ্য কোনো রিকশাও পাচ্ছি না’!!আম্মুকে বললাম তাড়াতাড়ি চলে আসবো কিন্ত সেই দেরি হয়েই গেল’!!কখন যে ওদের সাথে হই হুল্লোড় করতে করতে এতটা দেরি হয়ে গেল বুঝতেই পারি নি’!!তারওপর একটাও রিকশা পাচ্ছি না’!!

“উফ একরাশ বিরক্ত নিয়ে হেঁটে চলেছি আমি’!!এরই ভিতর ফোনটা বেজে উঠল’!!উপরেই আম্মুর নাম্বার দেখে তাড়াতাড়ি ফোনটা তুললাম আমি’!!ফোনটা তুললেই চিন্তিত কন্ঠে বলে উঠল আম্মুঃ

——“কোথায় তুই এখনো আসছিস না কেন?

——“আরে আম্মু চিন্তা করো না এই তো আমি আসছি জ্যামে আটকা পড়েছি একটু…

——“ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আসবি কিন্তু….

——“হুম আম্মু আসছি আমি…

“বলেই ফোনটা কেটে দিলাম’!!তারপর বলে উঠলামঃ

——“সরি আম্মু মিথ্যা না বললে তুমি আরো চিন্তা করতে….

“এই ভেবে ফোনটা ব্যাগে নিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম আমি’!!হর্ঠাৎই সামনে চার-পাঁচটা ছেলেকে দেখে ভয়ে বুক কেঁপে উঠল আমার’!!

—–“কোনোকিছু বলবি না,আর কিছু বললেও চুপচাপ চলে যাবি নাফিয়া….

“এরকম হাজারো কথা বলে নিজের ভিতর সাহস জুগিয়ে হেঁটে যাচ্ছি আমি’!!ছেলেগুলোর সামনে দিয়ে যেতেই একটা ছেলে বলে উঠলঃ

——“সুন্দরী চলেছে একা পথে সঙ্গী হলে দোষ কি তাকে…

“ছেলেগুলোর এমন বাজে ইঙ্গিতের কথা শুনে বুক কেঁপে উঠল আমার’!!তাহলে কি যার ভয় পাচ্ছি সেটা হতে চলেছে নাকি’!!ছেলেগুলোর কথায় কোনো পাত্তা না দিয়ে হেঁটে চললাম আমি’!!একটু দূর আসতেই তুমুল বেগে দৌড়াতে লাগলাম আমি’!!ভয়ে হাত পা কাঁপছে আমার’!!কারন আমার পিছনেই ছেলেগুলো দৌড়াচ্ছে…

—-“হায় রে এখন কি হবে আমার,কে বাঁচাবে আমায়..

—–“আরে সুন্দরী এত দৌড়ালে চলে নাকি…

“ইচ্ছে করছে সবগুলোকে জুতো দিয়ে মারি’!!কিন্তু আমি একা কি আর এদের সঙ্গে পারি’!!এসব ভাবতে ভাবতে দৌড়াচ্ছি আমি,এই মুহূর্তে প্রচুর কান্না পাচ্ছে আমার’!!তবে কি আজ রাতে শেষ দিন আমার…

“হর্ঠাৎ আকাশে মেঘ ডেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল’!!যাতে আরো ভয় হচ্ছে আমার’!!হায় রে বৃষ্টিটারও কি এখনি আসার ছিল…

“বৃষ্টির ভিতর তুমুলবেগে দৌড়াচ্ছে আমি’!!আর আমার পিছনে বাজে ছেলেগুলো’!!এই মুহূর্তে আমার মনে হচ্ছে মেলায় না আসলেই ভালো হতো’!!

“বেশকিছুক্ষন দৌঁড়ানোর পর হাঁপিয়ে উঠলাম আমি’!!হর্ঠাৎই একটা অন্ধকার গলির ভিতর লুকিয়ে পরলাম আমি’!!

.

“এদিকে ছেলেগুলো…

—–“তুই ওদিকে যা,অনেকদিন পর একটা সুন্দরীকে পেয়েছি এত তাড়াতাড়ি হাত ছাড়া করলে চলবে না….

.

“এদিকে আমি..
“লুকিয়ে লুকিয়ে ছেলেগুলোর কথা শুনে ভয়ে আত্মা কেঁপে উঠল আমার’!!এখন আমায় কে বাঁচাবে…

“হর্ঠাৎই জায়গাটা চুপচাপ হয়ে গেল’!!যা দেখে আস্তে আস্তে গলির ভিতর থেকে বের হলাম আমি’!!শীতে পুরো শরীর কাঁপছে আমার…

“গলির ভিতর থেকে বের হতেই পিছন থেকে একটা ছেলে বলে উঠলঃ

——“ওই পাইছি সুন্দরীরে তোরা তাড়াতাড়ি এদিকে আয়…

“ছেলেটার কথা শোনার সাথে সাথে সামনের দিকে দৌড়াতে লাগলাম আমি’!!জীবনে এমন একটা ভয়ংকর পরিস্থিতিতে পরতে হবে একদমই ভাবি নি আমি’!!হর্ঠাৎই পায়ে কিছু একটা ঢুকে পরলো আমার’!!সাথে সাথে ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলাম আমি’!!কিন্তু এই মুহুর্তে ব্যাথাটাকে উপেক্ষা করেই দৌড়াচ্ছি আমি’….

“ওভাবেই কিছুক্ষণ দৌঁড়ানোর পর হর্ঠাৎই শরীরের সমস্ত শক্তি কমে আসতে লাগলো আমার’!!ধোঁয়াশা লাগছে সবকিছু….

“এমন সময় হর্ঠাৎই সামনে একটা গাড়ি চলে আসলো আমার’!!সাথে সাথে আমি গিয়ে পরলাম গাড়ির সামনে’!!

!!

“আচমকা গাড়ির সামনে এসে কেউ পরাতে চমকে উঠলো তিহান’!!সাথে সাথে সে গাড়ি থেকে বেরিয়ে চলে যায় সামনের ব্যক্তিটির সামনেই’!!পরক্ষণেই নাফিয়াকে দেখে চমকে উঠলো তিহান…

“নাফিয়ার এমন অবস্থা দেখে তিহান নাফিয়ার হাত ধরে বলে উঠলঃ

—–“তুই এখানে…

“তিহান ভাইয়ার কন্ঠের মতো কারো কন্ঠ শুনে চোখ তুলে তাকালাম আমি’!!কিন্তু আবছা আবছা লাগছে খুব’!!হর্ঠাৎই সামনে সত্যি সত্যি তিহান ভাইয়াকে দেখে কোনোকিছু না ভেবেই হুট করেই তিহান ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরলাম আমি’!!তারপর কান্না ভেজা কন্ঠে বলে উঠলামঃ

—–“প্লিজ ভাইয়া হেল্প মি পিছনে কিছু ছেলে তাড়া করেছে আমায় (কাঁপা কাঁপা গলায়)

——“কি বলছিস কি তুই আর এখানে কি কেন এসেছিলি তুই তাও আবার এত রাতে…

“তিহানের কথা গুলো হয়তো নাফিয়ার কান পর্যন্ত পৌছায় নি কারন আর কিছু বলা বা শোনার আগেই তিহানকে জড়িয়ে ধরেই অজ্ঞান হয়ে গেছে নাফিয়া…..

“বৃষ্টি হচ্ছে খুব,সাথে ভিজে যাচ্ছে তিহান নাফিয়া দুজনেই….

__________________________________________

______________________

“জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে একটা অন্ধকার রুমে বাঁধা অবস্থায় দেখতে পেলাম আমি’!!নিজেকে এমন অবস্থায় দেখতে পেয়ে ভয় হচ্ছে খুব?

—–”তাহলে কি তখন তিহান ভাইয়া ছিল না!

“এমন সময় দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো কেউ!সাথে সাথে কেঁপে উঠলাম আমি’!!সামনেই কিছু ছেলেকে দেখে আরো ঘাবড়ে গেলাম আমি’!!হর্ঠাৎই ওদের মাঝখান থেকে একটা ছেলে এসে আমার সামনে এসে বললোঃ

——“কি ভেবেছিলে সুন্দরী আমাদের কাছ থেকে পালিয়ে যেতে পারবে…

——“প্লিজ ভাইয়া আমায় যেতে দিন…

——“যেতে তো দিবো সুন্দরী কিন্তু এখন নয়….

“এই বলেই ছেলেগুলো ঝাঁপিয়ে পরলো নাফিয়ার ওপর’!!সাথে সাথে নাফিয়া চেঁচিয়ে বিছানা ওপর শোয়া থেকে উঠে বসলো সামনে কে আছে তাকে না দেখেই হুট করে জড়িয়ে ধরলো নাফিয়া তারপর ভয়ে ঘাবড়ে গিয়ে বলে উঠলঃ

——“প্লিজ প্লিজ আমায় বাঁচান না হলে ওরা আমায় মেরে ফেলবে…

।।

“এদিকে তিহান আচমকা নাফিয়ার এমন কাজে ভরকে গেল সে’!!পরক্ষণেই নাফিয়া যে ভয়ংকর কোনো স্বপ্ন দেখেছে বুঝতে পেরে তিহান নাফিয়ার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে উঠলঃ

——“শান্ত হ এখানে কেউ নেই, আর তোকে কেউ কিছু করবে না…

—–“সত্যি বলছো…

——“আরে হুম গুন্ডাগুলোকে কখন মেরে ভাগিয়ে দিয়েছি….

——“কি….

——“হুম আর ভয় নেই….

“সাথে সাথে তিহান ভাইয়াকে ছেড়ে দিলাম আমি’!!নিজেকে একটা মোমবাতি জ্বালানো রুমে দেখে অবাক হলাম আমি’!!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে………..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ’!!আর গল্প কেমন লাগছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে’!!]
#TanjiL_Mim♥️