#শ্রাবন_মেঘের_বর্ষন🍁
#লেখনীতে:#তানজিল_মীম
#পর্ব:১১
“শপিং মলের ভিতর দাঁড়িয়ে আছি আমি আর মিতু’!!কারন আমরা দুজনই রাত্রির জন্য সুন্দর গিফট কিনবো’!!হর্ঠাৎই মিতু বলে উঠলঃ
—–“দোস্ত রাত্রির জন্য কি গিফট কিনবো বলতো…
——“একটা সুন্দর টেডি আর ফুলের তোড়া দিলে কেমন হয়…
——“ভালো হবে তার সাথে একটা ডাইরি দিলে কেমন হবে…
—–“হুম খারাপ হবে না আর রাত্রিতো এগুলো সবই পছন্দ করে….
—–“হুম…
——“তাহলে আর কি চল দোস্ত এগুলোই কিনবো…
——“হুম চল…
“তারপর আর কি আমরা দুজন মিলে চলে গেলাম একটা সুন্দর টেডিবিয়ার সাথে, ছোট্ট একটা ডাইরি আর একটা ফুলের তোড়া কিনতে…..
“কিছুক্ষণ পর….
“রাত্রির জন্য গিফট কিনে বেরিয়ে আসলাম আমি আর মিতু’!!তারপর টেক্সি করে চললাম আমি আর মিতু রাত্রিদের বাড়ির উদ্দেশ্যে….
||
“নিজের রুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তিহান’!!সে খুব এক্সাইটিং এ আছে’!!অবশেষে সে ভেবে নিল আর ইগনোর করবে না সে নাফিয়াকে’!!আজই নাফিয়াকে তার মনে কথা বলে দিবে’!!সেও যে কবে থেকে নাফিয়াকে ভালোবাসে শুধুমাএ নাফিয়াকে জ্বালাতে ভালো লাগে তার তাই তো এতদিন বলে নি কিছু নাফিয়াকে সে’!!আনমনে মুচকি হাসলো তিহান!’তারপর নিজেই আয়নার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলঃ
—-”আর তোমায় ইগনোর করবো না,আজই তোমায় সব মনের কথা বলে দিবো,তোমার পাগলামী,আমার প্রতি ভালোবাসা,তোমার মায়াবী চোখ, মুগ্ধতায় ঘেরা মুখ সবই মায়ায় আঁটকিয়েছে কবে আমায়, শুধু তোমায় বলা হয় নি,তাই আজই বলে দিবো তোমায় সব না বলা কথাগুলো….
“এসব ভেবে আনমনে হেঁসে উঠলো সে’!!আজকে তিহান একটা ব্লাক রঙের শার্ট সাথে ব্লাক জিন্স, হাতে ব্যান্ডেড ব্লাক ঘড়ি,চুলগুলো খুব সুন্দর করে সাজিয়ে তৈরি সে’!!অপূর্ব সুন্দর লাগছে তাকে….
“না জানি নাফিয়া তাকে দেখে কতটা পাগল হয়ে যায় আজকে’!!আবারো হেঁসে উঠল তিহান’!!
হর্ঠাৎই রাত্রির চেঁচামেচিতে হকচকিয়ে উঠলো তিহান’!!পরক্ষনেই আবার খুশি হয়ে উঠলো সে’!! কারন সে বুঝে গেছে নাফিয়ারা চলে এসেছে….
“তিহান জোরে জোরে শ্বাস ফেলে আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেই নিজেকে বলে উঠলঃ
—–“অল দা বেস্ট তিহান…
“হাসলো তিহান,মনে হয় এক্সাইটেডে মাথা খারাপ হয়ে গেছে তার’!!
||
—-“উড়ে দোস্ত হেপি বার্থডে….
“রাত্রিকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলাম আমি’!!আর আমার কথা শুনে রাত্রিও খুশি হয়ে বলে উঠলঃ
—–“থ্যাংকু দোস্ত, আমার গিফট কই…
—–“কিসের গিফট…
——“তোরা আমার জন্য গিফট আনিস নি….
——“পার্টিতে আসতে হলে গিফট আনা লাগে নাকি….
“চুপ হয়ে গেল রাত্রি!ওকে মনমরা হতে দেখে আমরা দুজন মুচকি হেঁসে ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলামঃ
——“দোস্ত তোর জন্মদিনে আমরা গিফট দিবো না এটা হয় নাকি…
“বলেই ওর দিকে গিফট গুলো এগিয়ে দিলাম আমরা’!!আর ও খুশি হয়ে গেল’!!খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরল আমাদের’!!
!!
“এদিকে সিঁড়ি উপরে ওদের কান্ড দেখে মুচকি হাসে তিহান’!!
.
.
“একে একে সবাই আসতে শুরু করল রাত্রিদের বাড়িতে’!!ওদের বিভিন্ন রিলেটিভ সাথে তিহানের বন্ধু -বান্ধবীরা’!!পুরো বাড়ি জমে উঠলো মানুষে’!!আর কিছুক্ষণের মধ্যেই কেক কাটবে রাত্রি’!!এমন সময় ছোট্ট একটা ছেলে এসে দাঁড়ালো নাফিয়ার সামনে ওর হাতে একটা চিরকূট দিয়ে চলে যায় সে’!!নাফিয়া অবাক হয়ে চিরকূট হাতে নিলো যেখানে লেখা আছেঃ
—–“তাড়াতাড়ি উপরে আয় তোর সাথে কথা আছে,অনেক বড় সারপ্রাইজ দিবো তোকে…..
“তিহান….🌸
“নাফিয়া তো তিহানের কাজে চরম অবাক’!!পরক্ষণেই সে আশেপাশে তাকিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো তিহানের রুমের দিকে”!!
“অন্যদিকে সিঁড়ি উপর তিহান নাফিয়াকে আসতে দেখে তাড়াতাড়ি চলে যায় তার রুমে’!!
||
“নিজের রুমে উল্টো দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তিহান’!!এমন সময় রুমে ঢুকলো কেউ’!!তিহান কারো পায়ের প্রতিধ্বনি শুনতে পেয়ে তাকে না দেখেই বলে উঠলঃ
—–“আমি জানি না আমি এখন যে কথাগুলো বলবো সে কথাগুলো তুই কিভাবে নিবি,কিন্তু সত্যি বলছি তোকে,তুই যেদিন আমায় প্রথম ভার্সিটিতে প্রপোজ করেছিলি সেদিনই তোকে ভালো লাগে আমার কিন্তু বলি নি,তারপর নানান বার নানান জায়গায় তুই আমায় ভালোবাসার কথা বলিছিস,শাড়ি পড়ে আমায় ইমপ্রেস করতে চেয়েছিস সবই ভালো লাগতো আমার, কিন্তু তারপরও বারবার তোকে আমি ফিরিয়ে দিয়েছে, এর একটাই কারন “তোকে ফিরিয়ে দেওয়ার পরও তুই নানা ভাবে এসেছিস আমার সামনে’!!কিন্তু এখন রিয়েলাইজ হচ্ছে আমার এমনটা করা ঠিক হয় নি তাই আমি তোকে বলছি আমিও তোকে খুব ভালোবাসি,….
“তিহানের কথা শুনে হুট করেই পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো কেউ তাকে’!!তিহানও খুশি মনে তাকে জড়িয়ে ধরল…..
!!
“স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি’ তিহান ভাইয়ার রুমের দরজার সামনে’!!এত বড় একটা সারপ্রাইজ দিয়ে দিবেন উনি এটা একদমই কল্পনার বাহিরে ছিল আমার’!!আমারই চোখের সামনে তিহান ভাইয়া আর রিয়া আপু এঁকে অপরকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে এটা দেখার জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলাম না আমি’!!তাহলে সকাল থেকে যেটা ভেবে এক্সাইটিং এ ছিলাম আমি সবই মিথ্যে ছিল’!!মুহূর্তের মধ্যে আমার এতদিনে ইচ্ছে, এত দিনের ভালোবাসা, এতদিনের তিহান ভাইয়াকে নিয়ে দেখা সব স্বপ্ন নিমিষেই ভেঙেচুরে তছনছ হয়ে গেল’!!বাকরুদ্ধহীন ভাবে দাঁড়িয়ে আছি আমি যেন জমে গেছি পুরো…
”
“এদিকে তিহান…..
“হর্ঠাৎই দরজার সামনে নাফিয়াকে দেখে চমকে উঠলো সে’!!পিছ ঘুরে রিয়াকে তাকে জড়িয়ে ধরতে দেখে আরো অবাক হয় সে’!!তিহান রিয়াকে ছাড়াতে নিতেই রিয়া বলে উঠলঃ
—–“প্লিজ আমায় ছেড়ে যাস না আমি যে তোকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি,তুই আমায় এতো ভালোবাসিস সেটা তো জানতাম না….
.
“রিয়া আপুর কথা শুনে এতক্ষণ যারও আশা ছিল তাও নিমিষেই শেষ হয়ে গেল আমার’!!এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে অতিরিক্ত আশা করতে নেই তাহলে এমনটাই হবে’!!সবটা বুঝে গেছি আমি এতদিন ওনাকে বিরক্ত করতাম তার জন্য এই শাস্তি দিয়েছে আমায়’!!
—–“ঠিক আছে ভাইয়া এই নাফিয়াও আর কোনোদিন তোমায় বিরক্ত করবে না, ভালো থাকো তুমি… (মনে মনে)
“বেশি কিছু না ভেবে এক পা এক পা করে পিছিয়ে গেলান আমি’!!কারন এখানে দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি আমার নেই’!!
“এদিকে তিহান তাড়াতাড়ি রিয়াকে ছাড়িয়ে দৌড়ে চলে যায় নাফিয়ার’!!হতভম্ব হয়ে বলে উঠল সেঃ
—–“তুই যা ভাবছিস…
“আর কিছু বলার আগেই নাফিয়া তার হাত দেখিয়ে থামিয়ে দেয় তিহানকে’!!তারপর নিজেকে যথাসম্ভব শক্ত রেখে বলে উঠল সেঃ
—–“ব্যস ভাইয়া, তোমায় আর কিছু বলতে হবে না আমার যা বোঝার আমি বুঝে গেছি…
——“তুই যেটা ভাব…
——“বললাম তো ভাইয়া তোমায় কিছু বলতে হবে না আর আমি তোমার কে যে তোমাকে কইফত দিতে হবে…
——“নাফিয়া…
——“আমার শুধু একটাই কথা ভাইয়া এত নাটক না করলেও পারতে….
“বলেই ছুটে চলে আসলাম আমি’!!হয়তো আর কিছুক্ষন থাকলেই ওখানে কেঁদে ভাসিয়ে ফেলতাম….
.
“এদিকে তিহান স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো নাফিয়ার যাওয়ার পানে’!!যেন এই মাএ কি হলো সব তার মাথার উপর দিয়ে গেল…
!!
“এমন সময় পিছন থেকে কাঁধে হাত দেয় রিয়া’!!তিহান রেগে গিয়ে ধমকের স্বরে বললো তাকেঃ
—–“তুই এখানে কি করছিস….
——“আমি তো তোকে ডাকছে আসছিলাম আর আসতেই তুই আমায় প্রপোজ করলি…
——“ওহ গড মাই মিসটেক….
——“মানে…
——-“আরে আমি তোকে নয় নাফিয়াকে প্রপোজ করতে চেয়েছিলাম…
——“এসব কি বলছিস তুই….
——-“তুই কি আমার সাথে মজা করছিস কালকেই তো তোদের সবটা বললাম….
——-“কই কালকে তো তুই বলিস নি তুই নাফিয়াকে প্রপোজ করবি…
——“উফ এই মুহুর্তে আমি তোর সাথে কোনো কথাউ বলতে চাই না….
“বলেই তিহান দ্রুত গতিতে চললো নিচে!’এটা কি হয়ে গেল নাফিয়া তাকে ভুল বুঝলো এমনটা তো চায়নি সে’!!আর ভাবতে পারছে না তিহান সবকিছু এলেমেলো লাগছে তার….
”
“এদিকে রিয়া এক প্রশান্তির হাসি দিল’!!কারন সে তো এটাই চেয়েছিল’!!তবে সে ভাবে নি এত ইজিলি সবটা হয়ে যাবে!’
__________________________________________
______________________
!!
“ওয়াশরুমের দরজা আঁটকে লাগাতার কেঁদে চলেছে নাফিয়া’!!কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে তার’!!এতদিনের তার সব স্বপ্ন,তার সব ইচ্ছে, তার ভালোবাসা সব ভেঙে চুড়ে তছনছ হয়ে গেল ভাবতেই বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে তার’!!নাফিয়া আয়নার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলঃ
—–“এমন টা কেন করলে তিহান,আমি তো শুধু তোমায় ভালোইবেসে ছিলাম,ঠিক আছে মানলাম তুমি আমায় ভালোবাসো না তাই বলে সকাল থেকে এত নাটক কেন করলে তুমি তিহান ভাইয়া,সাথে চিরকূট ছিঃ ভাইয়া, তোমাকে ভালোবাসার জন্য এতবড় শাস্তি দিলে তুমি..
“বলেই হাতে থাকা চিরকূট ছিঁড়ে ফেলে নাফিয়া’!!সব কিছু এলেমেলো লাগছে তাঁর’!!সাথে পাগল পাগল লাগছে সবকিছু তাকে এখনি বাসায় যেতে হবে এখানে আর থাকা যাবে না’!!এমন সময় ওয়াশরুমের দরজায় নক করলো মিতু’!!বললো সেঃ
—–“ওই আর কতক্ষণ ওয়াশরুমের ভিতর থাকবি তারা বের হ রাত্রি তো কেক কাটবে….
“মিতুর কথা শুনে তাড়াতাড়ি নাফিয়া তার চোখ মুখ ঠিক করে নেয়’!!তারপর বলে উঠল সেঃ
—–“তুই যা আমি আসছি…
——“ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আসিস কিন্তু….
“বলেই চলে যায় মিতু!’
.
“এদিকে নাফিয়া ওয়াশরুমের আয়নায় নিজেই নিজেকে দেখে হতাশ’!!এভাবে বাহিরে গেলে সবাই সন্দেহ করবে তাকে….
“তাড়াতাড়ি চোখে মুখে পানি দেয় নাফিয়া’!!তারপর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে নিজেকে একটু গুছিয়ে চলে যায় সে নিচে’!!কারন এতক্ষণ সে রাত্রির রুমে ছিল….
____________________
“এদিকে তিহান হতভম্ব হয়ে খুঁজে যাচ্ছে নাফিয়াকে কিন্তু কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না সে’!!
—“গেল কোথায় নাফিয়া চলে গেল না তো…
“এমন সময় সিঁড়ি বেয়েই নিচে নামলো নাফিয়া’!!রাত্রি নাফিয়াকে দেখে বলে উঠলোঃ
—–“কই ছিলি তুই….
——“ওই একটু ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম কেন…
——“কেনো মানে,কেক কাটবো না…
——“হুম চল তাহলে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
——“হুম তাই তো দেখছো একদম ভুলে গিয়েছিলাম….
——“হুম চল তাড়াতাড়ি আমায় বাসায় ফিরতে হবে আম্মু ফোন করেছিল আর রাত তো কম হলো না তাই আমাকে যেতে হবে তাড়াতাড়ি কেক কাট দোস্ত…..
—–“কি বলতো, আগে তো আমাদের বাসায় আসলে যেতে চাইতি না তাহলে…
——“না মানে কিছু না আরে চল তো…
“বলেই ওর হাত ধরে চলে গেলাম আমি’!!তারপর রাত্রিও কেক কাটলো…
“একে অপরকে খাইয়ে দিল রাত্রি!
“কিছুক্ষণ পর…
——“ওঁকে দোস্ত আমাকে যেতে হবে কাল ভার্সিটিতে দেখা হবে…
——“এখনই চলে যাবি…
——“আমাকে যেতেই হবে না হলে আম্মু খুব বকবে…
——“মিতুকে সাথে নিয়ে যা…
——“না ও পরে আসবে নে আমি যাই….
“বলেই একপ্রকার পালিয়ে যেতে লাগলো নাফিয়া!’
…..
“এদিকে অনেক্ক্ষণ যাবৎ নাফিয়ার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেও লোক জনের ভিড়ে ব্যর্থ তিহান’!!হর্ঠাৎই নাফিয়াকে বেরিয়ে যেতে দেখে তিহানও চলে যায় নাফিয়ার পিছন পিছন….
!!
“রাত্রিদের বাড়ির গেটের সামনে আসতেই হর্ঠাৎ কেউ হাত ফেরলো আমার’!!পিছন ঘুরে তিহান ভাইয়াকে দেখে মুহূর্তেই মেজাজ বিগড়ে গেল আমার….
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে………..
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ’!!আর গল্প কেমন লাগছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে’!!]
#TanjiL_Mim♥️