সম্পর্কের অধিকার পর্ব-১+২+৩

0
895

#সম্পর্কের_অধিকার
#Hridita_Hridi
#পর্ব০১

একজন বয়স্ক লোককে তিনজন নেশাখোরের সাথে ধস্তাধস্তি করতে দেখে কোন কিছু না ভেবেই দৌড়ে এগিয়ে যায় ইন্দু সন্ধ্যা রাত শহরে তেমন একটা রাত মনে না হলেও এই জায়গাটা খুব শুনশান, নির্জন, একদম ফাঁকা যায়গা। এই রাস্তাটুকু পার হতে খুব ভয় লাগে।মাঝে মাঝে দুষ্ট লোকদের আনাগোনা হয় এখানে।

ইন্দুকে দৌড়ে আসতে দেখে, ইন্দু আসার আগেই লোকগুলো বয়স্ক লোকটাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে একটা ব্রিফকেস নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে।কিন্তু কিছুর আঘাতে একজন মাটিতে লুটিয়ে পরে। বাকি দুজন তাকিয়ে দেখলো পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি একটা ইটের টুকরো ছুড়ে মাথায় আঘাত করেছে।বাকি দুজনের তো রাগ চরমে উঠে যায়। টলতে টলতে ইন্দুর দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই ইন্দু তার হাতে থাকা সাইড ব্যাগ থেকে একটু শুকনো মরিচের গুঁড়ো নিয়ে ওদের চোখে মুখে দিতেই ওরা আর এগুতে পারলো না।

ইন্দু দৌড়ে গিয়ে মাটিতে পরে থাকা বয়স্ক লোকটার কাছে গিয়ে বসে পরে। উনি কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে ঠোঁট নাড়িয়ে। ইন্দু সেটা শোনার জন্য তার মুখের কাছে কান দিতেই বুঝতে পারলো লোকটা অস্পষ্ট স্বরে একটা সংখ্যা বলছে। হয়তো কোন কোড নম্বর! কিন্তু ইন্দু কিছু বুঝতে পারলো না এটা কিসের কোড হতে পারে।
ইন্দু আর দেরি না করে লোকটাকে হসপিটালে নিয়ে যায়।
সকল নিয়ম কানুন মেনে হসপিটালে এডমিট করে দিলো। ছুড়ি দিয়ে বুকে আঘাত করায় প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। পেশেন্টকে ব্লাড দিতে হবে।

ইন্দু তো পরেছে মহা ফ্যাসাদে একেতো এই অচেনা বয়স্ক লোক তার উপর আবার পরিচয় দিয়েছে পেশেন্ট তার বাবা।তা না হলে এতো রাতে এমন অবস্থায় যদি আবার পুলিশ কেস হয় তাহলে আবার আরেক ঝামেলায় পরবে ইন্দু। তাই আগে পিছে না ভেবে ফরম পূরন করে দিয়েছে বাবার পরিচয় দিয়ে। এখন তো পেশেন্টকে এভাবে ফেলে রেখেও যেতে পারবেনা। সকল ওষুধ কিনে দিলেও ব্লাডের ব্যাবস্থা করতে পারলোনা ইন্দু। তবে নিরাশ ইন্দুকে একটু আশার আলো জাগালো ডক্টর। যখন ইন্দুকে একজন সিনিয়র নার্স এসে জানালো ইন্দুর ব্লাড গ্রুপ ম্যাচ করে গেছে পেশেন্টের সাথে তখন একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে সে।কারণ আর কোথাও দৌড়াতে হবেনা ব্লাডের জন্য।

একজন সিনিয়র নার্সকে দায়িত্ব দিয়ে সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে ইন্দু হোস্টেলে ফিরে আসে।অবশ্য হোস্টেল সুপারকে ফোন করে এক্সিডেন্টের কথা বলেছিল ইন্দু, তবে সেটা যে অপরিচিত ব্যক্তি সেটা হল সুপারকে বলেনি সে।ইন্দু বলেছে তার চাচার এক্সিডেন্ট হয়েছে। তা না হলে তো রুলস ব্রেকের জন্য আবার জবাবদিহি করতে হতো তাকে।

হোস্টেলের রুমে এসে নিজের ব্যাগটা একপাশে ঝুলিয়ে রাখে। ব্রিফকেসটা বালিশের তলায় রেখে তার উপরে কাঁথা চাপা দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। সারাদিনের ধকলের পর গোসলের প্রয়োজন তা না হলে শরীর ঠিক হবেনা। এমনিতেই খুব ক্লান্ত লাগছে ইন্দুর। গোসল সেরে রুমে এসে বেডে বসে আছে। দুহাতে কপাল চেপে বসে আছে ইন্দু। মাথটা ঝিমঝিম করছে তার।সারাদিন একটানা দৌড়াদৌড়ি করে আবার এক্সিডেন্টের চক্করে নিজের শরীর থেকে ব্লাড ও দিতে হয়েছে। এখন পর্যন্ত কিছু পেটেও পরেনি তাই হয়তো এমন লাগছে।

ইন্দু অজ পাড়াগাঁয়ের মেয়ে।ইন্দুরা তিন বোন, কোন ভাই নেই। বাবা মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে ইশিকা বিন্তী ইন্দু সবার বড়। ইন্দু অনার্স ফাইনাল ইয়ারে।পড়াশোনার জন্য মূলত এই জেলা শহরে তার থাকা।মেজো বোন এশা ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। আর ছোট বোন তিশা নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।

ইন্দুর বাবা একটা এক্সিডেন্টে নিজের দুই পা হারিয়ে এখন হুইল চেয়ার তার সঙ্গী। সংসারের হাল ধরতে অক্ষম বাবা যখন একদম ভেঙে পরেছিল, তখন তার বড় মেয়েটা পাশে দাঁড়িয়ে কাঁধে হাত রেখে ভরসা দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিল।

ইন্দু পড়াশোনায় খুব ভালো থাকায় ওকে ভার্সিটি থেকে অনেক অপরচুনিটি দেওয়া হয়েছে।
ইন্দু ক্লাস শেষে দুপুরের খাবার খেয়ে বেরিয়ে যায় একটা গানের ক্লাসে। অবশ্য গান শিখতে নয় শেখাতে যায়।ছোট বাচ্চাদের গানের ক্লাস নেয় ইন্দু, সাথে দুইটা টিউশনি করে মাস শেষে বারো হাজার টাকা তার হাতে আসে।সেখান থেকে দুই হাজার টাকা নিজের কাছে রেখে বাকিটা বাড়িতে পাঠায় সংসার খরচের জন্য। কারণ ইন্দুর পারিবারিক অবস্থার কথা জেনে প্রাইভেট টিউটররা ও ইন্দুর থেকে কোন টাকা পয়সা নেয়না।

ইন্দুর মেজো বোন এশাও পড়াশোনার পাশাপাশি বাসায় কিছু বাচ্চাদের পড়ায়। যদিও গ্রামে টিউশনি করালে সেভাবে মাইনে পাওয়া যায় না। তবুও কিছুটা হলেও তো হাত খরচাটা আসে।

এসব চিন্তার মাঝেই কারও ডাক শুনে কপাল থেকে হাতটা নামিয়ে মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে রিয়া খাবার প্লেট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রিয়া হলো ইন্দুর রুমমেট, যদিও জুনিয়র তবুও ফ্রেন্ডলি চলাফেরা করে ইন্দুর সাথে।
খাবার প্লেট দেখে অবাক হয় ইন্দু। কারণ এই টাইমে হোস্টেল থেকে খাবার দেবেনা কখনোই। আর খাবার দেখে মনে হচ্ছেনা এটা হোস্টেলের খাবার। তাই ইন্দু ভ্রু কুচকে একবার খাবারের দিকে একবার রিয়ার দিকে তাকাচ্ছে।

রিয়া ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বললো আজ আম্মু এসেছিল তাই সবকিছু রান্না করে নিয়ে এসেছিল। রিয়ার কথা শুনে ইন্দু আর কিছু না বলেই খাওয়া শুরু করে। খেতে খেতে রিয়াকে সন্ধ্যায় ঘটে যাওয়া সব কথা খুলে বললো ইন্দু।

সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে একটু পড়তে বসে। সকালের খাবার খেয়ে ৮.১০ এর মধ্যে বেরিয়ে পরে হসপিটালের উদ্দেশ্যে।আজ শুক্রবার ক্লাস নেই তাই রিয়াও ইন্দুর সাথে গিয়েছে।

হসপিটালে পৌছুতেই রিসিপশন থেকে বললো আপনার পেশেন্ট তো সেন্স ফেরার পর থেকে কিছুতেই এখানে থাকতে চাইছেনা। আর আমরা যখন উনাকে বললাম আপনার মেয়ে এসে নিয়ে যাবে, তখন উনি একটু অবাক হয়েছিলেন। তবে তারপর থেকে আর বাসায় ফেরার জন্য বায়না করেনি।
ইন্দু আর দেরি না করে কেবিনে চলে যায়।কেবিনে ঢুকে সালাম দিতেই লোকটা চোখ মেলে তাকিয়ে সালামের জবাব দিলো।

ইন্দু পরিচয় দিয়ে বললো আমি ইন্দু। আপনাকে গতকাল আমিই এখানে এনেছিলাম। এই হলো আপনার ব্রিফকেস।এটা আমার কাছে ছিলো। আর এটা আমার রুমমেট রিয়া।
আসার সময় কিছু ফল কেনা হয়েছে অবশ্য টাকাটা রিয়াই দিয়েছে। ইন্দুকে দিতে দেয়নি টাকা।ইন্দু একটু ফল কেটে লোকটাকে খাইয়ে দিচ্ছে।ডক্টর বেশি নড়াচড়া করতে বারণ করেছে।

লোকটি ফল খাচ্ছে আর একভাবে ইন্দুর দিকে তাকিয়ে আছে। মনে মনে ভাবছে এমনও মানুষ আছে! চেনা নয় জানা নয় তবু ও তার জন্য এতোটা কেয়ার! এমন ভালো মন মানষিকতার মেয়ে তো আজকাল চোখেই পরেনা। চেহারা যে খুবই পরীর মতো তেমনটা নয়। ফর্সা ঠিক ই তবে দুধে আলতা রং বলা চলেনা তবে চেহারায় একটা মায়াবী ভাব আছে। যে কেউ দেখলেই মেয়েটির মায়ায় পরবে তবে শুধু চেহারায় মায়া তা নয়।মেয়োটার মনেও অনেক দয়া মায়া।

ইন্দুঃ কি হলো কি ভাবছেন?

লোকটিঃ চকিত হয়ে বললো না মা তেমন কিছু না। এই ব্রিফকেস তুমি খুলেছিলে? এতে কি আছে তুমি জানো?

ইন্দুঃ এটা আমি খুলে দেখিনি তবে আমার ধারণা এতে টাকা পয়সা থাকতে পারে। এজন্য আর খোলার ইচ্ছে হয়নি আমার। আমার কাছে যা ছিল সেটা দিয়েই আপনাকে এডমিট করিয়েছিলাম। আর বাকিটা এখন পেমেন্ট করে দিতে হবে।

লোকটিঃ ইন্দুকে উদ্দেশ্য করে বলে ব্রিফকেসটা ওপেন করো।

চলবে……

#সম্পর্কের_অধিকার
#Hridita_Hridi
#পর্ব০২

ইন্দু ব্রিফকেসটা ওপেন করে দেখে টাকা সাজিয়ে রাখা আছে তাতে। রিয়া কিছুটা অবাক হলেও, ইন্দু একটুও অবাক হলোনা। আগের মতোই বসে রইলো।

লোকটিঃ ইন্দুর দিকে তাকিয়ে বলে তুমি কোটি টাকার ব্রিফকেস কাছে রেখে, কোড জেনে তবুও খুলে দেখনি!এখন দেখেও একটুও অবাক হলেনা। কিন্তু কেন?

ইন্দুঃ ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বলে, আমার যদি ব্রিফকেসটার প্রতি আগ্রহ থাকতো তাহলে আপনাকে অচেতন অবস্থায় ওখানে রেখেই আগে আপনার ব্রিফকেস খুলে দেখতাম আর আপনাকে ফেলে রেখে ওটা নিয়েই চলে যেতাম।আপনাকে বাঁচানোর চেষ্টা কখনোই করতাম না। কিন্তু আমি সেটা করিনি কারণ আমার কাছে আপনার লাইফের থেকে অন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়নি।

লোকটিঃ তুমি কি আমায় চিনো? জানো আমি কে? কার প্রাণ বাঁচিয়েছো তুমি? আমি আশফাক খান। খান অব ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক আশফাক খান। বলো তুমি আমার প্রাণ বাঁচানোর বিনিময়ে পুরষ্কার হিসেবে আমার কাছে কি চাও?

ইন্দুঃ টাকা!টাকা দেন। হাত বাড়িয়ে ইন্দু টাকা চাইলো।

আশফাক খানঃ ইন্দুকে টাকা চাইতে দেখে একটু অবাক হয়ে বললো টাকা! কতো টাকা চাও তুমি বলো!

ইন্দু আশফাক খানের কথা শুনে ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি টেনে বলে কতো লাগবে তা তো জানি না। আমার কাছে অল্প কিছু ছিল সেটা দিয়ে আপনাকে হসপিটালে ভর্তি করেছিলাম। এখন বাকি টাকা না দিলে ছাড়পত্র দেবেনা, আর ছাড়পত্র না দিলে আপনাকে বাসায় পৌঁছে দিতে পারবোনা। রিসিপশনে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে হবে কতো টাকা আর লাগবে।

আশফাক খানঃ হো হো করে উচ্চস্বরে হেসে ওঠে ইন্দুর কথা শুনে। সে ভেবেছিল ইন্দু পুরষ্কার হিসেবে টাকা চাইছে তাইনে প্রথম অবস্থায় অবাক হলেও পরে ইন্দুর কথা শুনে হাসি চেপে রাখতে পারেনি। শব্দ করেই হেঁসে ওঠে সে।

ইন্দুঃ আরে আরে! কি করছেন টা কি। আপনি এতো জোরে হাসবেন না স্যার। বুকে চাপ পরলে প্রবলেম হবে। ডক্টর নিষেধ করে দিয়েছে বার বার করে।

আশফাক খানঃ কিছু হবেনা হাসতে দাও আমায় প্রাণ খুলে। ইট পাথরের বদ্ধ দালানে আর কাজের চাপে তো আমি হাসতেই ভুলে গিয়েছিলাম। আজ কেন জানিনা ভেতর থেকে খুব হালকা লাগছে। ভালো লাগা কাজ করছে।
শোনো,তুমি আমায় স্যার বলে ডাকবেনা।বাবার পরিচয় দিয়েছো, বাবা কিংবা আব্বু বলে ডাকতে বলবো না তবে তুমি আমায় বাবাই বলে ডাকতে পারো।

তাদের কথার মাঝেই ডক্টর আসে। আশফাক খানকে দেখে প্রেসক্রিপশন করে দিয়েছে। কিছুদিন রেস্টে থাকতে বলেছে।

হসপিটালের বিল পে করে ওষুধ নিয়ে হসপিটাল থেকে বের হতেই দেখে ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে গেটে দাঁড়িয়ে আছে।

একটা বড় বাসার সামনে এসে গাড়ি থামে। গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির ড্রাইভার গেট খুলে দিতেই রিয়া, ইন্দু আর আশফাক খান গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ইন্দু যতোটা না অবাক হয়, বাসার ভেতরে গিয়ে তার চেয়ে বেশি অবাক হয়ে যায়। এতো বড় বাড়ি এতো সুন্দর করে সাজানো অথচ বাসায় কয়েকজন সার্ভেন্ট ছাড়া কেউ নেই!

আশফাক খানকে ধরে রুমে নিয়ে বেডে আধশোয়া করে রেখে রিয়াকে পাশে রেখে ইন্দু নিচে নেমে আসে। সার্ভেন্টের সাহায্য নিয়ে কিচেন থেকে স্যুপ করে নিয়ে উপরে এসে আশফাক খানকে খাইয়ে দেয় ইন্দু।খাইয়ে দিতে দিতে আশফাক খানের পরিবার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে ইন্দু।

আশফাক খানঃ আমার পরিবার এখন ইতালিতে আছে। পনেরো দিনের জন্য গিয়েছে।
মাঝে মাঝে বিজনেসের জন্য কয়েকদিনের জন্য দেশের বাইরে যাওয়া হলেও এবার তারা অন্য কারণে গিয়েছে। রিয়নের কাজিনের (খালাতো ভাইয়ের) এনগেজমেন্ট তাই সবাই সেখানে গিয়েছে। আমারও যাওয়ার কথা ছিলো তবে আমার এখানে জরুরি কাজ পরে যাওয়াতে আমার যাওয়া হয়নি।
আমার পরিবার বলতে আমার দুই ছেলে বড় ছেলে রিয়ন আহনাফ রুপন, মেজো ছেলে রিশিত আহনাফ রুপক,আর সবার ছোট্ট একটা মেয়ে রাইমা, আমার ওয়াইফ আর আমি।
তবে আমার ফ্যামিলির মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট একটা পার্সন আছে যার কথার উপর আমি ও আজ পর্যন্ত কথা বলতে পারিনা। তিনি হলেন আমার বাবা।

ইন্দু কথার মাঝেই স্যুপ খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে দিলো আশফাক খানকে। তারপর একটা সার্ভেন্টকে ডেকে প্রেসক্রিপশনটা দিয়ে সব কিছু বুঝিয়ে দিলো। প্রায় বিকেল হতে চললো এখন ইন্দু আর রিয়াকে হোস্টেলে ফিরতে হবে তাই আশফাক খানকে বলে বিদায় নিয়ে বের হবে তখনই পিছু ডাকে আশফাক খান।
ইন্দু ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে হুম স্যার বলুন কি বলবেন।

আশফাক খান মুখটা গম্ভীর করে বলে, আবার স্যার?

ইন্দু আমতা আমতা করে বলে ঠি ঠি ঠিক আছে বা বাবাই বলবো এখন থেকে।
এবার বলুন কি বলবেন?

আশফাক খান একটু হেসে বললো বাবাই বলে ডাকবি অথচ আপনি আজ্ঞে করছিস?

ইন্দুঃ একটু সময় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থেকে ভাবলো,এতো বড় মাপের একজন মানুষ তারপর মনটা এতো ভালো! অন্য কেউ হলে তো নামটা পর্যন্ত জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন ও মনে করতোনা।

আশফাক খানঃ একটা আবদার করবো রাখবি?
ইন্দুঃ বলো বাবাই। চেষ্টা করবো রাখার।
আশফাকঃ আমি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেলে এসে আমায় দেখে যাবি? বলতে পারিস পুরো বিকেল বাবা মেয়েতে আড্ডা দিয়ে পার করবো।
ইন্দুঃ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর বলে বাবাই বিকেলে আমার গানের ক্লাস আর টিউশনি আছে।
আশফাকঃ ছেড়ে দে ওগুলো। এখন থেকে এটাই তোর জব। আর তোর স্যালারি তোর একাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তাই একটা পার্সোনাল ব্যাংক একাউন্ট করতে হবে তোকে।

ইন্দুঃ কিন্তু বাবাই তুমি সুস্থ হওয়ার পরে কি হবে?
আশফাক খানঃ হাসতে হাসতে বলে সে পরেরটা না হয় পরেই ভেবে দেখা যাবে।

ইন্দু মাথা ঝুকিয়ে হ্যা সায় দিয়ে চলে যায়।

কেটে গেছে কয়েকটা দিন। আশফাক খান এখন পুরোপুরি সুস্থ।এর মধ্যে বাবা মেয়েতে খুব ভাব জমে গিয়েছে। দুজন ই অনেকটা আপন হয়েছে।তবে আশফাক খানের পরিবারের সবাই দেশে ফিরবে দুদিন পরে। তাই ইন্দুর ডিউটি ও এই দুদিন ই তাই ও ফ্রী।
তবে ইন্দু খুশি হওয়ার পরিবর্তে মুখ গোমরা করে বসে আছে।

ইন্দুকে এভাবে বসে থাকতে দেখে আশফাক খান ইন্দুর মাথায় হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,কিরে মন খারাপ কেন?

ইন্দুঃ আর মাত্র দুদিন আমি তোমায় দেখতে আসবো তারপর থেকে তো আর আসতে পারবোনা। আচ্ছা বাবাই আমাকে তোমার মনে পরবেনা! ভুলে যাবে কি আমায়!
আমি কিন্তু তোমায় খুব মিস করবো।

আশফাক খানঃ কিছু না বলে একটু মুচকি হেসে বললো ইন্দু মা! ঘুরতে যাবি?

ইন্দু তো তার বাবাই এর কথা শুনে হা হয়ে যায়। কি প্রশ্ন করলো আর কি জবাব পেলো।ইন্দু কিছু বলার আগেই আশফাক খান বললো, চল গাড়িতে উঠে বোস। কথাটা বলে আশফাক খান ড্রাইভারকে কিছু একটা বলেই গাড়িতে উঠে বসে।উপায় না পেয়ে ইন্দুও গাড়িতে উঠে বসে।

একটা শপিংমলের সামনে গিয়ে গাড়ি ব্রেক করে ড্রাইভার।
অনেক দামী দামী শাড়ি, থ্রি পিচ, অর্নামেন্টস কিনেছে আশফাক খান আর শুধু দু একটা নয় অনেক গুলো কিনেছে। স্পেশাল কিছু স্বর্ণালংকার আর ডায়মন্ডের ও কিছু কিনেছে যেটা ইন্দু দেখেনি।

আশফাক খানকে খুশি মনে এতো কিছু কিনতে দেখে ইন্দু তাকিয়ে ভাবছে হয়তো এতোদিন পরে পরিবারের সবাই ফিরছে বলে তাদের জন্য কেনাকাটা করতে এসেছে।
এতো কিছু কেনাকাটা করেছে যে গাড়িতে জায়গা ধরছে না এমন অবস্থা।

শপিং শেষে বাসায় পৌঁছে, আশফাক খান গাড়ি থেকে নেমে যেতে যেতে ড্রাইভারকে বললো সকল জিনিস বাসার গেস্টরুমে রেখে তুমি ইন্দুকে হোস্টেলে রেখে এসো।
আশফাক খান ইন্দুকে উদ্দেশ্য করে বলে, ইন্দু মা তুই একটু জলদি করে আসিস তো কাল। আমরা একটা কাজে বেরুবো। বলে বাসার ভেতরে চলে যায় সে।

ইন্দুঃ পরদিন ক্লাসে না গিয়ে সকাল সকাল ইন্দু আশফাক খানের বাসায় চলে যায়।ইন্দু ভাবছে রিয়াটাও কাল বাড়ি চলে গেলো তা না হলে একসাথে দুজন বাবাই এর সাথে দেখা করে আসতে পারতাম। আর তো মাত্র দুটো দিনই তার বাবাই এর সাথে কাটাতে পারবে সে। তাই এই দুটোদিন ক্লাস না করলে তেমন কোন ক্ষতি হবেনা। এটা ভেবেই সে তার বাবাই এর বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।

আশফাক খান তো সকাল সকাল ইন্দুকে দেখে মহা খুশি। গতকালের সকল জিনিসপত্র নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে দুজন। তারপর রওনা হয়ে যায় গন্তব্যের দিকে।
কয়েক কিলোমিটার পথ যেতেই অবাক হয়ে যায় ইন্দু। তার বাবাই এদিকে কোথায় যাচ্ছে এটা তো ইন্দুর বাড়ির রাস্তা! জেলা শহর থেকে প্রায় পঁচিশ কিলোমিটার দুরে তার গ্রামটা।
গাড়ি গ্রামের রাস্তায় মোড় নিতেই ইন্দু আশফাক খানের দিকে কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকায়।

আশফাক খান একটু হেসে বলে আমরা গ্রামে যাচ্ছি। তোর বাড়িতে। ওখানে গিয়ে সারপ্রাইজ দিবো।

ইন্দু তো মহা বিপদে পরে যায়। এমন একজন বাড়িতে যাবে অথচ কি খেতে দেবে কোথায় বসতে দেবে এসব ভাবনায় সে অস্থির। ইন্দুর বাড়ির সামনে গাড়ি থামতেই গাড়ি থেকে নেমে ইন্দু দৌড়ে বাড়ির মধ্যে চলে যায়। গিয়ে যা দেখে তাতে তো সে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

রিয়া! রিয়া ইন্দুর বাড়িতে কি করছে? রিয়া চা নাস্তার ব্যাবস্থা করেছে। আশফাক খান ভেতরে গিয়ে সবার সাথে পরিচিত হলো।নতুন করে তেমন পরিচয় করার মতো কিছু নেই শুধু যা মুখটা চেনা বাকি ছিলো।তাছাড়া তো পুরোটাই জানে ইন্দুর মা বাবা। কারণ রিয়া তাদের সব কথাই বলেছে।

রিয়া ইন্দুকে নিয়ে অন্য রুমে চলে যায়। তখন আশফাক খান ইন্দুর বাবা আর মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে আপনাদেরকে আমার কিছু বলার আছে।

চলবে….

#সম্পর্কের_অধিকার
#Hridita_Hridi
#পর্ব০৩

আপনার মেয়েটাকে আমায় দেবেন? আপনার মেয়েটাকে আমি আমার বড় ছেলের বউ করে নিয়ে যেতে চাই।

ইন্দুর বাবা কিছু বলার আগেই আশফাক খান ইন্দুর বাবার হাত দুটি জরিয়ে ধরে বলে, ভিক্ষা চাইছি আপনার কাছ থেকে আপনার মেয়েটাকে। কথা দিচ্ছি আপনার মেয়ের কোন অসম্মান আমি হতে দিবোনা। আমি আমার নিজের মেয়ের মতো করে ওকে আগলে রাখবো। না বলবেননা প্লিজ!

আশফাক খানের কথা শুনে ইন্দুর বাবা মায়ের তো মুখে কোন কথাই সরছে না।

ইন্দু আড়াল থেকে সব শুনে মাথা নিচু করে রুমে এসে বলে। আমি জানি এখানে আমার কোন কথা বলা উচিৎ হবেনা তবুও বলতে বাধ্য হচ্ছি। বাবাই তুমি এমন আবদার করোনা যেটা আমি রাখতে পারবোনা। আমার পড়াশোনা শেষ হয়নি এখনো। আমার ছোট্ট দুইটা বোন আছে তাদের ভবিষ্যত গড়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমার।কারণ আমার বাবার বড় সন্তান আমি। আমার বাবার স্বপ্নগুলো আমাকেই পুরণ করতে হবে। আর তোমাদের উঁচুস্তরের সাথে আমাদের নিচুস্তর কখোনোই খাপ খাবেনা। তোমার পরিবার, তোমার সমাজ, তোমার বন্ধু বান্ধব আত্নীয় স্বজনরা এটা কেমন চোখে দেখবে একবার ও কি ভেবে দেখেছো? আমায় ক্ষমা করো বাবাই, আমি তোমার কথা রাখতে পারবোনা। আর আমার বাবাকেও জোর করোনা। কারণ আমি এই মুহুর্তে বিয়ে করতে চাইনা।

ইন্দুর মা নিরবতা ভেঙে বললো, সাহেব আমরা হলাম গিয়ে গরীব মানুষ। আমরা কোন চাকচিক্য বুজিনা ঠিকই তয় আমাগো একটা আত্মসম্মান আচে।আমরা গাও গেরামের মানুষ, শহরের প্যাচগোচ আমরা বুজিনা। ইট পাথরের শহরের মানুষগুলান নাকি ইট পাথরের মতোই মন নিয়ে চলাফেরা করে।আমাগো সাথে তাগো মনের মিল হওয়াডা খুব কঠিন ব্যাপার।আমরা এতো শিক্ষিত না। মানুষ সমাজে চলতি গেলি, আমাগো হুমরি খেয়ে পরার ভয় থাহে।আমাগো মাইয়া আপনাগো ঘরে মানাইতে পারবোনা।

তারপর ছলছল চোখ নিয়ে মুখটা গম্ভীর করে ইন্দুর মা আবার বলে, আমাগো টাহা পয়সা কম তয় আমার মাইয়াগুলানরে অন্নেক ভালোবাইসা মানুষ করচি সাহেব। আমার মাইয়া আমাগো ভুলের জন্য চোক্ষের পানি ফেলুক, সারাডা জীবন কষ্টে কাটাক হেইডা আমরা চাইনা। আমরা যেমন তেমন দেইখ্যা বিয়া দিমু।

আশফাক খানঃ আমার কোন কিছুর অভব দেয়নি আল্লাহ। সবকিছু উজার করে দিয়েছে।আপনাদের কাছে আমি কোন কিছু পাওয়ার আশা করি না। আমার যেটা প্রয়োজন যেটা আমার ঘরে নেই আমি সেটাই চাইতে এসেছি আপনার ছোট্ট ঘরে। তবুও ফিরিয়ে দেবেন আমায়? বাবা বলে, গ্রামের লোক সহজসরল হয়, তারা নিজের জন্য ভাবেনা। অন্যকে দিতে ভালোবাসে।এই বিশ্বাস নিয়েই এসেছিলাম। কিন্তু আপনারা আমায় শূন্য হাতে ফিরিয়ে দেবেন?

ইন্দু কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।
আশফাক খান ইন্দুর বাবা মায়ের সাথে কথা বলে তাদের রাজি করায়। তারপর মিষ্টিমুখ করে দুই বেয়াই মহা আনন্দে জরিয়ে ধরে একে অন্যকে। রিয়া, এশা আর ইন্দু খাবার এনে একটা টেবিলে সাজিয়ে রাখে।রিয়া এসে আগে থেকেই বাজার করে হাতে হাতে সবাই মিলে রান্নার কাজ শেষ করে রেডি করে রেখেছে সবকিছু।
বড়োলোকি খাবার হয়তো এটা নয় তবুও অনেক ভালোবেসে রান্না করেছে পাঁচ, সাত পদ। তবে সবগুলো পদ ই গ্রামের। গ্রামের রান্না বলতে,গ্রামের একটা নিম্নবিত্ত পরিবারে যেমনটা রান্না হওয়ার কথা আরকি। যেখানে কোন উন্নত রেস্টুরেন্টের খাবারের স্বাদ নেই।

আশফাক খান যে খুব তৃপ্তির সাথে খাবার খাচ্ছেন, সেটা তার মুখ দেখে আর খাবার খাওয়ার হাবভাব দেখেই বোঝা যাচ্ছে। খাবার খাওয়া শেষ করে গ্রামটা ঘুরে দেখে সে।

সারাদিন গ্রামে কাটিয়ে বিকেলে ফেরার আগেই সকলের জন্য আনা ড্রেসগুলো দিয়ে যায়। যাবার আগে ইন্দুকে বলে এ কয়েকটা দিন মা বাবার কাছেই থেকে যা। আমি তোর ভার্সিটিতে কথা বলে নিবো।
গাড়িতে উঠতে উঠতে ইন্দুর বাবার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলে, আমার ফ্যামিলির সবাই ফিরে এলে বিয়ের তারিখ টা জানিয়ে দিবো। আপনারা বিয়ে নিয়ে টেনশন করবেন না আমি সব সামলে নিবো।
কথাটা শেষ করেই গাড়িতে উঠে বসে আশফাক খান।

ইন্দুর বাড়ি থেকে এসে পরদিন ইন্দুর ভার্সিটি গিয়ে কথা বলে এসেছে আশফাক খান।
বাসায় সার্ভেন্টদের রান্নার প্রতিযোগিতা চলছে কারণ। আশফাক খানের পরিবারের সবাই দেশে ফিরছে আজ। আর এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি তারা এখানেই আসবে। গতকাল তারা এক্সিডেন্টের বিষয়টা জানতে পেরেছে। এতোদিন আশফাক খান ইচ্ছে করেই বলেনি। আর গতকাল নিজে থেকেই বলেছে উদ্দেশ্যটা হলো তার পরিবারকে এখানে আনা।

রাতে সবাই ড্রইংরুমে বসে আছে মুখ গম্ভীর করে কারও মুখে কোন কথা নেই। কথা থাকবে কি করে। আশফাক খানের কথা শুনে তো সবার কথার ঝুড়িই হারিয়ে গিয়েছে।
আশফাক খানের আবদার টা সবার কাছে অযৌক্তিক মনে হচ্ছে।

রিয়নঃ পাপা তুমি এমন ডিসিশন নেওয়ার আগে অন্তত একবার হলেও আমার মতামত টা জানার প্রয়োজন ছিল তোমার।আমি এখন ছোট নেই পাপা!
পাপা আমারও তো ভালোলাগা মন্দ লাগা, আমারও পছন্দ অপছন্দ থাকতে পারে। যাকে চিনিনা জানিনা হুট করে তাকে আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দেবে আমি সেটা মানতে পারবোনা।আ’ম সরি পাপা! আমার পক্ষে আনএডুকেটেড, একটা গ্রামের মেয়েকে লাইফ পার্টনার হিসেবে মেনে নেওয়া জাস্ট ইম্পসিবল।
আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি U know না পাপা! তারপর ও তুমি এমন একটা ডিসিশন কি করে নিতে পারলে। আমি সৃজাকে ভালোবাসি আর ওকেই বিয়ে করতে চাই। সৃজা স্মার্ট এডুকেটেড একটা মেয়ে। হাই সোসাইটির সকল মানুষের সাথে ওর ওঠাবসা। আমার জন্য সৃজাই পার্ফেক্ট, পাপা ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড।

আশফাক খানঃ আমি এতো কিছু বুঝিনা তোমার জন্য যে মেয়েকে আমি পছন্দ করেছি তুমি তাকেই বিয়ে করবে আর সেই মেয়েই তোমার জন্য পার্ফেক্ট বলে আমি মনে করি। তোমার জন্য কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ সেটা আমার থেকে ভালো কেউ বুঝবেনা জানবেও না কারণ তোমার ছোট্ট বেলা থেকে আমিই তোমার জন্য সবকিছু বাছাই করেছি। তাই তোমার জন্য কোনটা ভালো আর কোনটা মন সেটা তোমার থেকে ভালো আমিই বুঝবো।
আমি তোমাদের থেকে ডিসিশন জানতে চাইনি। আমি আমার ডিসিশন টা তোমাদের জানানোর জন্য এখানে ডেকেছি।তুমি ঐ মেয়েকেই বিয়ে করবে এবং সেটা আগামীকাল ই, আর এটাই ফাইনাল।

আর এর অন্যথা হলে আমি ভুলে যাবো আমার কোন পরিবার আছে। I think u better understand.
আজ ঐ মেয়েটার জন্যই আমি এখানে বসে আছি।আমি ওর কাছে চির ঋণী। সবাই এক এক করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো শুধু রিয়নে মম আর পাপা ছাড়া।

রিয়নের মমঃ আমি জানি তুমি তোমার সন্তানদের জন্য যে ডিসিশন নেবে তাতে তাদের ভালোই হবে। তবুও বলছি, এতোটা তারাহুরো করে সিদ্ধান্ত নেওয়টা কি ঠিক হলো? তাছাড়া বাবাকেও তো কিছু জানানো হয়নি। বাবা আবার যদি বেঁকে বসে তখন কি হবে বলোতো?

আশফাক খানঃ ওসব তুমি আমার উপর ছেড়ে দাও বাবাকে আমি ম্যানেজ করে নিবো। রিয়নের মম আর কিছু বললোনা।
ইন্দুর বাবাকে ফোন দিয়ে সবকিছু গুছিয়ে রাখতে বললো আশফাক খান। বললো আগামীকাল ভোরে গাড়ি যাবে। বাড়ি থেকে সবকিছু নিয়ে চলে আসতে হবে আপনাদের। শহরে শহরে আপনাদের জন্য একটা ফ্ল্যাট ঠিক করা হয়েছে এক মাসের জন্য। আর এই এক মাস আপনাদের বাড়ির কাজ চলবে তাই আর দেরি করবেন না।
আর হ্যা শুনুন, আগামিকাল ই আমি ওদের বিয়ে দিতে চাই আপনার কি এতে আপত্তি আছে?

ইন্দুর বাবাঃ না না! আপত্তি থাকবে কেন? আপনি যেটা ভালো বুঝবেন সেটাই করবেন।

তারপর সব গুছিয়ে ইন্দুর পরিবার চলে আসে ফ্ল্যাটে। এসেই তো অবাক। বিয়ের তোরজোর চলছে পুরোদমে! বড় করে আয়োজন চলছেনা ঠিক ই, তবে বিয়ের যা আচার নিয়ম সব ই পালন করা হলো। রিয়া চলে এসেছিল ভোরেই।

বিকেলে বিয়ের কাজ সম্পন্ন হলো। তবে বিয়েটাতে রিয়নের যে কোন আগ্রহ নেই, তা তার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
অন্যমনস্ক হয়ে বসে আছে রিয়ন কাজী সাহেব কনের পুরো নাম বলে কবুল বলতে বলছে রিয়নকে, রিয়নের সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। রুপক তার বাহু ধরে হালকা করে টান দিতেই চমকে তাকায় রিয়ন। তিনটা কবুল বললেও রিয়ন তখনো সৃজাকেই ভেবে যাচ্ছে।
আশফাক খান এ বাসায় থাকতে চাইলেও রিয়ন সেটা মেনে নেয়নি।রিয়ন তো এখান থেকে মুক্তি পেতে চায়। তাই রিয়ন তার ডিসিশন জানিয়ে দিয়েছে, যে থাকতে চায় থাকুক কিন্তু রিয়ন আজই ঢাকায় ফিরে যাবে।

বিদায় মুহুর্ত –

ইন্দু সবাইকে জরিয়ে ধরে কান্নাকাটি করছে। সবাইকে ছেড়ে এতোদিন থাকলেও এতোটা কষ্ট হয়নি যেটা আজ হচ্ছে ইন্দুর।রিয়াকে জরিয়ে ধরে কান্না করে বলেছে মা বাবাকে একটু দেখিস।জানিস তো আমি ছাড়া মা বাবাকে দেখার মতো কেউ নেই। এশা টা এখনো বড্ড ছোট।

সারাটা রাস্তা গাড়ির মধ্যে ইন্দু কান্না করেছে কিন্তু রিয়ন সেদিকে নজর না দিয়ে একমনে বাইরে তাকিয়ে আছে। মনে মনে হয়তো সৃজাকে ভাবছে।

অনেক রাতে গাড়ি এসে বাসার গেটে ঢোকে।গাড়ি থেকে নেমেই ইন্দু হা হয়ে যায়।

চলবে…….

( ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন। রি চেক হয়নি)

হ্যাপি রিডিং 🥰