সম্পর্কের অধিকার পর্ব-৪+৫+৬

0
464

#সম্পর্কের_অধিকার
#Hridita_Hridi
#পর্ব০৪

বিশাল বড় একটা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে ইন্দু। এটা বাড়ি তো নয় যেন রাজপ্রাসাদ। ইন্দুকে ফেলে রেখেই রিয়ন হনহনিয়ে বাসার ভেতরে চলে যায়। ইন্দু বুঝতে পেরেছে এ বাসায় টিকে থাকাটা সহজ কাজ নয়।এ বাসায় টিকে থাকার জন্য তাকে অনেক লড়াই করতে হবে।
রিয়নকে দেখে অন্তত এটুকু বুঝে গেছে যে সে নিজের ইচ্ছেতে বিয়েটা করেনি। তাকে জোর করে বিয়ে টা করানো হয়েছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বাসার ভেতরে প্রবেশ করে ইন্দু। সে জানেনা ভেতরে তার জন্য আর কি কি অপেক্ষা করছে। তবে ভালো কিছু যে নয় সেটা ইন্দু বুঝতে পেরেছে। তাই নিজেকে মনে মনে প্রস্তুত করেই বাসার ভেতরে যায়।

ইন্দুকে নিয়ে তার শ্বাশুড়ি রুমে রেখে আসে। ফ্রেশ হয়ে নিচে যেতে বলেই সে নিচে চলে যায়। ইন্দু ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে ওজু করে আসে।দু রাকআত নফল নামাজ পড়ে নেয়, রিয়ন রুমে নেই তাই একাই নামাজ পড়ে ইন্দু। তারপর নিচে চলে যায়।
ইন্দুর শ্বাশুড়ি ইন্দুকে নিয়ে রিয়নের দাদুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। পরিচয় করিয়ে ইন্দুকে রেখে রিয়নের মম নিজের রুমে চলে যায় । ইন্দু এখানে আসার আগেই আশফাক খান তার বাবার সাথে মানে রিয়নের দাদুর সাথে আগেই কথা বলে রেখেছে তাই তেমন কোন জবাবদিহি করতে হয়নি ইন্দুকে।

রিয়নের দাদু কিছু না বলে শুধু সালাম করার সময় মাথায় হাত রেখে বললো একটা কথা মনে রাখবে সবসময়, কেউ কখনো কারও জন্য জায়গা করে দেয়না। নিজের জায়গাটা নিজেই করে নিতে হয়। আর নিজের অধিকার কখনো ছেড়ে দিতে নেই নিজের অধিকার আদায় করে নিতে জানতে হয়।
এটা এখন তোমার নিজের পরিবার। পরিবারকে সবসময় ভালো রেখো আর নিজেও ভালো থেকো। এখন অনেক রাত হয়েছে উপরে যাও আগামীকাল কথা বলা যাবে।
ইন্দু মুখে কিছু না বলে শুধু ঘাড় নেড়ে হ্যা সূচক সায় দিলো।
রিয়নের দাদু সেটা বুঝতে পেরে, স্বাভাবিকভাবে ইন্দুকে বলে,আজ থেকে তুমি আমায় দাদু বলে ডাকবে।
ইন্দু বলে ঠিক আছে দাদু। দাদুর রুম থেকে বেরিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখছে ইন্দু, এতোবড় বাড়ি এতো সুন্দর করে সাজানো গোছানো এতোগুলো কাজের লোক সব কিছু দেখে ইন্দুর তো ঘোর লেগে যায়।
একজন মেড সার্ভেন্ট এসে জিজ্ঞেস করলো ম্যাম আপনার কিছু লাগবে?
ইন্দু আমতা আমতা করে বলে ন না না মানে রান্না ঘরটা কোনদিকে?

সার্ভেন্টঃ ম্যাম আপনার কি লাগবে আমায় বলুন এনে দিচ্ছি।
ইন্দুঃআমায় ওখানে নিয়ে গেলেই হবে কিছু এনে দিতে হবেনা।
মেড সার্ভেন্ট ইন্দুকে নিয়ে কিচেনে চলে যায়।
ইন্দু রান্না ঘরে গিয়ে সবকিছু দেখে নেয়। নতুন নতুন সবকিছু তার উপর আবার রান্নার জন্য মাটির চুলা নয় সকল উন্নত প্রযুক্তির কি সব চুলা যা কারেন্টে চলে। এগুলো তো ইন্দু আগে কখনো দেখেনি। তাই সবকিছু শিখে নেয় মেড সার্ভেন্টের কাছ থেকে।

রাত প্রায় তিনটে বাজতে চললো এখনো রিয়ন রুমে ফেরেনি। কোথায় আছে ইন্দু জানে না। কিন্তু রিয়ন রুমে না ফেরা পর্যন্ত ইন্দু তো ঘুমাতেও পারবেনা। তাই ছোট ছোট পা ফেলে রুমের আনাচে কানাচে কোথায় কি আছে সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে সে।সুন্দর পরিপাটি করে সাজানো রুমটা। দেখেই বোঝা যায় এ রুমের যিনি মালিক তিনি খুব রুচিসম্পন্ন ব্যক্তি। ইন্দু মনের অজান্তেই হেসে ফেলে। তারপর হাঁটতে হাঁটতে ব্যালকনির দিকে যায়।সেখান খুব একটা আলো নেই তবে রুম থেকে ঈষৎ আলো এসে কিছুটা আলোকিতো হয়েছে। সেই আলোতে পুরো ব্যালকনিটাই দেখা যাচ্ছে কোথায় কি আছে?

ব্যালকনিতে নানা ফুলের টব সাজানো আছে পুরো ব্যালকনি ফুলের ঘ্রাণে ভরে উঠেছে। ফুলগুলোর অধিকাংশ বিদেশি হলেও প্রায় দু একটা ছাড়া সব ফুলের রং ই সাদা। এটা দেখে ইন্দু একটু অবাক হয়ে গালে হাত দিয়ে ভাবছে রুমের প্রায় জিনিস ই সাদা আবার এখানে ফুলগুলোও সাদা,তবে তার সাদা রং পছন্দ!

ইন্দুঃ নিজে নিজেই বিরবির করে বলতে থাকে মুরুব্বিরা বলে যারা সাদা ভালোবাসে তাদের মনটা নাকি অনেক সুন্দর হয়, অনেক পবিত্র হয়। তাহলে আমার বরের মনটাও কি অনেক ভালো হবে? নাকি তার উল্টোটা হবে?
তবে সে যেমন ই হোকনা কেন নিজেকে অনেক শক্ত করে সব পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে। নিজের জায়গা থেকে সরে দাঁড়ালে হবেনা বরং নিজের জায়গাটা নিজেই ঠিক করে নিতে হবে। দাদুর বলা কথাটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে বারবার।

নানা ভাবনায় অনেকটা সময় পার হয়ে গিয়েছে। চারটা পার হয়ে গিয়েছে ইন্দু একটু উঁকি দিয়ে বেড রুমটা দেখে নিলো। এখনো রিয়ন রুমে ফেরেনি। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ইন্দু। বড্ড একা লাগছে আজ। বাবা মা কে খুব মনে পরছে।
হঠাৎ রুমে কিছুর শব্দ পেয়ে ইন্দু বেডরুমে তাকায়। তাকিয়ে দেখে রিয়ন ফিরেছে।

এদিকে রিয়ন রুমে এসেই সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়। রিয়নকে ওয়াশরুমের দিকে যেতে দেখে ইন্দু রান্না ঘরে গিয়ে কফি করে আনে রিয়নের জন্য।

রিয়নঃ ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ইন্দুর হাতে কফি মগ দেখে রেগে যায়।কারণ রিয়ন জানে এই সময় কোন মেড সার্ভেন্ট নিশ্চয়ই জেগে নেই আর এ মেয়েটা অবশ্যই জানাবে না যে রিয়ন চা খায় নাকি কফি খায়। রিয়ন মনে মনে এটাও ভাবছে গ্রামের মেয়ে হয়তো চা করে এভাবে নিয়ে এসেছে।মুহুর্তেই চোখমুখ শক্ত করে বলে আপনাকে পাকামি করতে কে বলেছে? আর আপনি এখনো ঘুমাননি কেন? আমি কি আপনাকে বলেছি আমার জন্য এসব করতে? বাই দ্যা ওয়ে, আমি চা নয় কফি খাই। আগে আমার পছন্দ অপছন্দ জানুন তারপর আমার জন্য কিছু করার চেষ্টা করবেন।
কথাগুলো বলে বেডে গিয়ে বসে রিয়ন।

ইন্দুঃ মাথ নিচু করে দাঁড়িয়ে বললো, ন না মা মা মানে আপনি তো রুমে ছিলেন না তাই ঘুমাইনি আমি কোথায় ঘুমাবো জানি না তো তাই। এটা চা নয় কফি।সারা রাত রুমে ফেরেন নি তার উপর এতোটা পথ গাড়ি করে এসেছেন ভাবলাম যদি একটু কফি খান তাহলে আপনার ভালো লাগবে মাথাটা হালকা হবে এজন্য নিয়ে এলাম। কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি আপনি এতোটা রেগে যাবেন।

রিয়নঃ আমি ব্ল্যাক কফি খাই।

ইন্দুঃ এটা ব্ল্যাক কফি।

ইন্দুর কথা শুনে তো রিয়ন অবাক হয়ে যায়। এ মেয়ে বলছে কি। সে কিনা রিয়নের জন্য ব্ল্যাক কফি করে এনেছে মানেটা কি! ও জানলো কি করে যে রিয়ন ব্ল্যাক কফি খায়!
ইন্দুর হাত থেকে কফির মগটা নিয়ে মগে চুমুক দিতে দিতে মনে মনে বলে এই সময়টাতে এটার খুব প্রয়োজন ছিলো।আর না চাইতেই সেটা সামনে চলে এলো!

ইন্দু রিয়নকে উদ্দেশ্য করে বলে এখন ঘুমাবেন না। আজান হয়ে গিয়েছে নামাজ পড়ে তবে ঘুমোতে যাবেন।

রিয়নঃ ইন্দুর কথা শুনে ভ্রু কুচকে ইন্দুর দিকে তাকিয়ে বলে, অধিকার দেখাচ্ছেন? অর্ডার করছেন আমায়? একটা কথা কান খুলে স্পষ্ট শুনে রাখবেন এই রিয়ন আহনাফ রুপনকে কেউ কখনো অর্ডার করে না। আর এই রিয়ন সেটা বরদাস্ত করেনা মাইন্ড ইট।
শুনুন, আমি বাধ্য হয়ে আপনাকে বিয়ে করেছি।আমার পাপার কথা রাখতে বিয়ে করেছি আপনাকে। এর বেশি কিছু নয়। আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি। সেই আমার সব। আমি আপনাকে কখনো স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারবোনা। #সম্পর্কের_অধিকার নিয়ে কখনোই আমার সামনে আসবেন না। তবে হ্যা যেহেতু আপনি এখানে আমার বউয়ের পরিচয়ে থাকবেন তাই আপনি আমার এই রুমেই থাকতে পারেন আমার সবকিছু শেয়ার করতে পারেন। এক বছরের মধ্যে আমি পাপাকে ঠিক ম্যানেজ করে আমার ভালোবাসার মানুষকে আমি এ বাসায় নিয়ে আসবো। আ’ম সরি আমি আপনাকে কিছুতেই মেনে নিতে পারবোনা।

ইন্দুঃ রিয়নের কথা শুনে যেন বোবা বনে গেলো।বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে খুব। চোখের টলমল জল জানন দিচ্ছে বাঁধটা এখন ভেঙে যাবে। এক মুহুর্তের জন্য যেন ইন্দুর মনে হলো যে পৃথিবীতে তার জন্মটাই হয়েছে শুধু কষ্ট আর অবহেলা পাওয়ার জন্য ভালোবাসা পাওয়ার জন্য নয়। কারও ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয় সে। চোখের জল আড়াল করে মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি টেনে বললো,

আমার মনে হয়না আপনি আপনার পাপাকে বোঝাতে পারবেন। তবে আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি এক বছর পর আপনি আপনার মনের মানুষকে ঠিক ই এ বাসায় নিয়ে আসতে পারবেন সে ব্যাবস্থা আমি করে দিবো। এই এক বছরের মধ্যে আমি আপনার পাপাকে ঠিকই ম্যানেজ করে নিবো। তবে আমার কিছু শর্ত আছে….

এই এক বছরে কাউকে বুঝতে দেবেন না যে, আপনি আমাকে মেনে নেননি, কেউ যেন ঘুনাক্ষরে ও বুঝতে না পারে যে আমরা স্বামী স্ত্রীর অভিনয় করছি। আর আপনার মনের মানুষের সাথে যতটা সম্ভব কম কথা বলবেন, কারণ যত বেশি কথা বলবেন ও ততো বেশি জানবে আপনার বিষয়ে। তাই আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না আপনার প্রেয়সী জানুক আপনি অন্য কাউকে বিয়ে করেছেন। এই এক বছর কোনভাবেই আপনার প্রেয়সীকে এ বাসায় আনা যাবেনা। এমনকি আপনিও যতোটা সম্ভব কম দেখা সাক্ষাৎ করবেন তার সাথে।
মাত্র একটা বছর তার পরেই তো সারাজীবনের জন্য তাকে একেবারে নিজের করে পাবেন। আশা করি আপনি এটা মেনে চললে আমি আপনার পাপাকে ম্যানেজ করতে পারবো।

রিয়নঃ সত্যি বলছেন! এসব করলে এক বছরের মধ্যে আপনি সবকিছু ঠিক করে দেবেন?

ইন্দুঃ হুম, এসব মুখের কথায় বিশ্বাস করতে নেই। তাই আমি যা যা বলেছি সেগুলো উল্লেখ করে স্ট্যাম্প করে নিয়ে আসবেন।

আর একটা কথা, আমি আপনার থেকে ছোট তাই সম্পর্কের জন্য না হোক ছোট হিসেবেও কিন্তু আমি আপনার থেকে আপনি সম্বোধন টা পাইনা। তাই আমি চাইবো হয় তুমি না হয় তুই করে কথা বলবেন আমার সাথে আর আমার সুন্দর একটা নাম আছে সেটা বলে ডাকলে খুশি হবো।যদিও জানি আমার খুশি অখুশিতে আপনার কিছু যাবে আসবেনা..

রিয়নঃ মাথায় হাত দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে বলে চেষ্টা করবো তবে একটু সময় লাগবে। কিন্তু আমি তো আপনার নাম ই জানিনা।

ইন্দুঃ সেটা আপনার ব্যাপার নাম জানেন কি জানেন না সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। কথাগুলো বলে ইন্দু ওজু করে নামাজ পড়ে নেয় আর রিয়নকেও নামাজ পড়তে বলে। রুম থেকে বের হবে তখন কেউ একজন পর্দার আড়াল থেকে সরে যায়।ইন্দু তো খুব ভয় পেয়ে যায়। তাহলে কি কেউ আড়াল থেকে তাদের সবকথা শুনে ফেললো?

চলবে…

#সম্পর্কের_অধিকার
#Hridita_Hridi
#পর্ব০৫

ইন্দু তারাহুরো করে রুম থেকে বেরিয়ে এদিক ওদিক তাকালো কিন্তু কাউকে দেখতে পেলো না। কাউকে না পেয়ে ইন্দু ভাবলো হয়তো এটা তার মনের ভুল। তাই এসব কথা মন থেকে ঝেড়ে ফেলে ওয়ার্ডরব থেকে শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নিচে চলে যায়।
দাদুর রুমে গিয়ে দেখে দাদু বসে রূপকের সাথে গল্প করছে।
কিচেনে গিয়ে ইন্দু চা করে নেয় তিন কাপ কারণ বাকিরা কেউ ঘুম থেকে উঠেনি এখনো। তারপর দাদুকে রুপককে চা দিয়ে, নিজে এককাপ চা নিয়ে বসে পরে তাদের সাথে সকাল সকাল আড্ডা দিতে। রুপক চায়ের কাপে চুমুক দিতেই অবাক হয়ে বললো ভাবি আপনি কিকরে জানলেন আমি কেমন চা খাই!

ইন্দু একটু ভাব নিয়ে শাড়ির আঁচল টা হাত দিয়ে ঘোরাতে ঘোরাতে ভাব নিয়ে বলে হুম এটা তো বলা যাবেনা। এটা সিক্রেট। ইন্দুর এমন করে কথা বলার স্টাইল দেখে রুপক আর দাদু হেসে ওঠে। তিনজনই হাসি আড্ডায় অনেক ফ্রী হয়ে যায়।

সকালে একসাথে খাবার টেবিলে বসেছে রুপক, দাদু, আর আশফাক খান। আশফাক খান নাস্তার টেবিলে বসে তারাহুরো করছে দেখে ইন্দু জিজ্ঞেস করলো, এতো তারাহুরো কেন করছো বাবাই। আশফাক খান বললো অফিস যেতে হবে রিয়নটাও এখনো নিচে আসলোনা কি করছে এতক্ষণ কে জানে।
অফিসের কথা শুনে ইন্দু সবাইকে খাবার দিয়ে রুমে গিয়ে রিয়নের সবকিছু গুছিয়ে রেখে রিয়নকে ঘুম থেকে জাগানোর চেষ্টা করে ইন্দু। কিন্তু বার বার ডেকেও জাগাতে ব্যর্থ হলো সে।

রিয়নকে অনেকক্ষণ ধরে ডেকেও জাগাতে না পেরে ধাক্কা দিতে গিয়ে থেমে যায়। কিছু একটা ভেবে একটু দুষ্টু হাসলো ইন্দু। রিয়নের দিকে একটু ঝুঁকে মাথার চুল দিয়ে নাকে মুখে সুরসুরি দিতেই রিয়ন নড়েচড়ে ওঠে। বারবার এমন হওয়ায় রিয়ন চোখ মেলে তাকাতেই লাফিয়ে উঠে বসে।

রিয়ন রেগে ইন্দুকে বলে কি হচ্ছে টা কি? কি করছেন এটা? একটু শান্তিতে ঘুমাতে তো দেবেন! নাকি আপনার জন্য সেটাও হবেনা?

ইন্দু দুই হাত কোমরে দিয়ে দাঁড়িয়ে রিয়নের কথা শুনছিল। রিয়নের কথা বলা শেষ হলে, মুখে কিছু বললোনা। কোমর থেকে একটা হাত নামিয়ে আঙুল দিয়ে ঘড়ির দিকে ইশারা করলো। রিয়ন আঙুল বরাবর তাকাতেই অবাক হয়ে যায়। বেড থেকে তারাহুরো করে নামতে নামতে বলে বলে ওহ্ শিট! কতোটা লেট হয়ে গেলো আগে ডেকে দিতে পারেন নি? এসব বলতে বলতেই কাভার্ড থেকে টাওজার আর টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে ছুটলো রিয়ন।

রিয়নের কথাগুলো শুনে ইন্দু ঠায় দাঁড়িয়ে ঠোঁট উল্টিয়ে ভাবছে যাহ্ বাবা! এটা আবার কেমন মানুষ! ডেকে দিলেও বকে, আবার আগে ডাকিনি বলেও বকে। আমি কোনদিকে যাবো?

রিয়ন শাওয়ার নিয়ে টাওজার পরে তোয়ালে গলায় ঝুলিয়ে, উদম গায়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে এসে দাঁড়ায়। ভেজা এলোমেলো চুল থেকে বিন্দু বিন্দু পানি পরছে। এমনটা দেখে ইন্দু লজ্জা পেয়ে দু হাতে মুখ ঢেকে পাশ ফিরে দাঁড়িয়ে থাকে। ড্রেসিংটেবিলের গ্লাসে রিয়ন সেটা দেখতে পেয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে ইন্দুকে জিজ্ঞেস করে এই যে, আপনার আবার কি হলো এমন করে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?

ইন্দু ও ভাবে দাঁড়িয়েই বললো তো কি করতাম? আপনি যে এভাবে দানবের মতো উদম গায়ে সামনে এসে দাঁড়াবেন সেটা কি আমি জানতাম?

ইন্দুর কথা শুনে চোখ মুখ শক্ত করে ইন্দুর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে ইন্দুর দুই হাত শক্ত করে ধরে মুখ থেকে হাত সরিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে, Hay u! What do u mean by danob?

রিয়ন রাগের মাথায় ইন্দুকে বলতে গিয়ে ইন্দুর এতোটাই কাছে চলে এসেছে যে তাদের মাঝে মাত্র সামান্য দুরত্ব আছে।
ইন্দু এমন পরিস্থিতিতে পরবে সেটা ভাবতে পারেনি। তাই একটু ইতস্ততভাব করে রিয়নের থেকে দুরে সরে এসে বলে Danob means,,, এটুকু বলেই ইন্দু জিব্বায় কেটে হাসতে হাসতে বলে দানব! দানব! ঐ যে ইয়া বড় দেহ, ইয়া বড় বড় দাঁত, দুই পাশে দুইটা শিং..

ইন্দু আর কিছু বলার আগেই রিয়ন ইন্দুর দুই বাহু শক্ত করে ধরে বলে আমি দানব? আমার ইয়া বড় বড় দাঁত? আমার মাথায় শিং আছে?

ইন্দুঃ…..

রিয়নঃ কি হলো বলুন? আমি দানব? ইন্দুর দুই বাহু শক্ত করে ধরে ঝাকিয়ে বলে কি হলো কথা বলছেননা কেন? রাগের চোটে রিয়ন ভুলেই গিয়েছে সে অজান্তেই ইন্দুর কতোটা কাছে চলে এসেছে।

ইন্দু চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে দেখে রিয়ন বললো কি হলো চুপ করে আছেন কেন বলুন?

ইন্দু ওভাবেই স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে শুধু একটা চোখ একটু খুলে বলে বলছি বলছি আগে গিয়ে শার্ট পরে নিন।

ইন্দুর কথায় রিয়নের হুশ ফেরে। রিয়ন ইন্দুকে ছেড়ে ঘুরে দাঁড়াতেই দেখে তার সব কিছু আগে থেকেই গুছিয়ে রাখা আছে। সব কিছু রেডি করে রাখা দেখে একবার ইন্দুর দিকে আর একবার ওর জন্য রাখা জিনিসপত্রের দিকে তাকায় রিয়ন।

ইন্দু রিয়নকে উদ্দেশ্য করে বলে রেডি হয়ে নিচে আসুন আপনার জন্য নাস্তার ব্যাবস্থা করছি। আর দেরি না করে ইন্দু নিচে চলে যায়।

রিয়ন শার্ট প্যান্ট কোর্ট টাই পরে তাকিয়ে দেখে পাশেই জুতো রেখে দেওয়া। একটু মুচকি হেসে জুতো পরে রেডি হয়ে নেয়। ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করতে করতে ভাবছে একজন বাইরের মেয়ে আমার পোশাক সিলেক্ট করে দিচ্ছে সেটা আমি পরেছি বাট আমার তো রাগ হওয়ার কথা। সেটা না করে বরং আমার অন্য রকম একটা ফিলিংস কাজ করছে! মনে মনে ভালো লাগা কাজ করছে এটা ভেবে যে, তার জন্য কেউ আগে থেকেই সব কিছু গুছিয়ে রেখেছে।

ইন্দু নিচে গিয়ে খাবার রেডি করে দিতেই রিয়ন নিচে নেমে আসে। খাওয়া শেষ করে রিয়ন আর আশফাক খান উঠে দাঁড়িয়েছে অফিসে যাওয়ার জন্য, তখন ইন্দু গিয়ে আশফাক খানকে জিজ্ঞেস করলো বাবাই তোমাদের দুপুরের খাবার টাইম কয়টায়?

আশফাক খান বললো একটা থেকে দুইটা নামাজ আর লাঞ্চ টাইম। কিন্তু কেন মা? এটা জিজ্ঞেস করছিস কেন?

ইন্দুঃ এমনি বাবাই। জানতে ইচ্ছে হলো তাই। কথাটা বলে ইন্দু কিচেনে চলে যায়।

আশফাক খান আর রিয়ন অফিস চলে যায়।আশফাক খান আর রিয়নের কেবিন আলাদা হওয়ায় দুজন দুই দিকে গিয়ে যার যার কেবিনে বসে পরে।

রিয়ন কেবিনে বসে একটা ইম্পর্ট্যান্ট ফাইল দেখছিল তখন তার সেলফোনটা বেজে ওঠে। রিয়ন ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে সৃজা ফেন করেছে। রিয়ন কাজের সময় কোন ধরনের ডিস্টার্ব পছন্দ করে না। সেটা যেই হোক। তাই ফোন রিসিভ না করে ফোন সাইলেন্ট মুডে রেখে দেয়। অফ করলোনা কারণ রিয়ন জানে সৃজা যদি এখন ফোন অফ পায় তাহলে তুলকালাম বাধিয়ে ছাড়বে।
রিয়ন মন দিয়ে কাজ করছে এর মধ্যে অনেকবার ফোন করেছে সৃজা। ফাইলের কাজ কমপ্লিট করে রিয়ন সৃজার সাথে কথা বলে নেয়।

এদিকে রিয়ন আর আশফাক খান অফিসে চলে যাওয়ার পরে সবাই খেতে বসে রাইমা, রিয়নের মম আর ইন্দু। খেতে খেতে ইন্দু রাইমাকে বলে আপনা নাম তো রাইমা?

রাইমা ভ্রু কচকে তাকিয়ে বলে হুম।

ইন্দুঃ আমি কি আপনাকে রাই বলে ডাকতে পারি?

রাইঃ মুখ গম্ভীর করে বলে নো নেভার।
রাইমার কথা শুনে ইন্দু চুপ হয়ে যায় আর কিছু বলে না কারণ নিজের কাছে একটু অপমানবোধ মনে হলো তার, সাথে ভিষণ লজ্জাও পেলো তাই মাথা নিচু করে বসে রইলে ইন্দু।

রিয়নের মমঃ কি বলছিস কি রাই? ঠিক করে ভদ্র ভাবে কঘা বল ও সম্পর্কে তোর ভাবি।

রাইঃ আমিও তো সেটাই বলছি মম! উনি আমার বড় ভাবি কিন্তু আমার সাথে আপনি আজ্ঞে করছে কেন? আমি এসব আপনি আপনি বলতে পারবোনা আমি তো তুমি করে বলবো আর হ্যা আমাকেও হয় তুমি না হলে তুই বলে সম্বোধন করতে হবে। তা না হলে আমি কথা বলবোনা।

রাইয়ের এমন বাচ্চা বাচ্চা টাইপের কথা শুনে ইন্দু হেসে ফেলে।ইন্দুর সাথে সবাই হাসতে শুরু করে।

একটা বাজার পাঁচ মিনিট আগে ইন্দু রিয়নকে ফোন করে বাসার ল্যান্ড লাইন থেকে। রিয়ন ফোনের দিকে তাকিয়ে বাসার নম্বর দেখে ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে ইন্দু সালাম দিয়ে বলে আমি।
ইন্দুর এমন সালাম দেওয়া আর আমি বলাতেই রিয়ন বুঝতে পেরেছে এটা ইন্দু। তাই জিজ্ঞেস করলো ফোন দিয়াছেন কেন?

ইন্দুঃ রুপক টিফিন নিয়ে গিয়েছে খেয়ে নেবেন বাইরের খাবার খাবেন না। বাবাইকে সাথে করে খেয়ে নেবেন। বাবাইয়ের শরীর খারাপ বাইরের খাবার খাওয়া ঠিক হবেনা। নিজের জন্য না হোক বাবাইয়ের জন্য অন্তত খেয়ে নেবেন বলেই ফোন রেখে দেয়।

চলবে…….

#সম্পর্কের_অধিকার
#Hridita_Hridi
#পর্ব০৬

রিয়ন কিছু বলার আগেই ইন্দু ফোন রেখে দেয়। রিয়ন রেগে ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে এই মেয়েটা এমন কেন! জাস্ট টু মাচ! নিজে যা বুঝবে সেটাই বলবে অন্য কারও কোন কথার তোয়াক্কা করে না। এসব ভাবনার মাঝেই রুপক এসে টিফিনবাক্স দিয়ে বলে এই নাও ভাইয়া বিন্তী ভাবি এটা পাঠিয়েছে।

রিয়নঃ ভ্রু কুচকে রূপকের দিকে তাকিয়ে বলে বিন্তী ভাবি মানে!
রুপকঃ হ্যা ভাইয়া, আমাদের নতুন ভাবি ই তো বিন্তী ভাবি। কেন? তুমি জানতে না?

রিয়ন রূপকের কথা শুনে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো না মানে আসলে, মমকে তো সকালে ইন্দু বলে ডাকতে শুনলাম তাই একটু গুলিয়ে ফেলেছি এই আরকি।

রুপক হাসতে হাসতে বললো ওকে ঠিক আছে ভাইয়া তোমরা লাঞ্চ করে নিও আমি আসছি বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। সারাটা বিকেল সবাই একসাথে দাদুর রুমে আড্ডা দিয়ে কাটিয়েছে। একটা দিনেই সবাই কতোটা আপন করে নিয়েছে ইন্দুকে। অথচ যাকে সবথেকে কাছে পাওয়ার কথা, যাকে খুব আপন করে পাওয়ার কথা সেই সবথেকে দুরে। ইন্দু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে কথাটা ভাবতেই ঠোঁটের কোনে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে ওঠে যেটা সবার চোখ ফাঁকি দিতে পারলেও দাদুর চোখখে ফাঁকি দিতে পারেনি।

সবাই রুম থেকে বেরিয়ে গেলে দাদু ইন্দুকে ডেকে আলাদাভাবে কথা বলে। ইন্দু কথাগুলো শুনে শুধু ঘাড় নেড়ে সায় দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।

রাতে রাই, ইন্দু, রিয়নের মম আর রুপক বসে গল্প করছে আর টিভি দেখছে তখন অফিস থেকে রিয়ন আর আশফাক খান ফিরে আসে।

রিয়ন অফিস থেকে ফিরে সোজা নিজের রুমে চলে যায়। ইন্দু ও পিছে পিছে রুমে চলে যায়। রিয়নের ফাইল, ল্যাপটপ নিয়ে ইন্দু ঠিকঠাকমতো রেখে রিয়নের কোর্টটা খুলতেই রিয়ন রেগে ইন্দুকে জোরে একটা ধাক্কা দিয়ে দুরে সরিয়ে দেয়।
রেগে গিয়ে চিল্লিয়ে উঠে বলে, আপনার প্রবলেম টা কি হ্যা! কেন বার বার নানা বাহানায় আমার কাছে আসার চেষ্টা করছেন? কেন নানা অজুহাতে আমাকে টাচ্ করার চেষ্টা করছেন? আপনি যতোই ভালো মানুষি দেখান না কেন আপনাকে আমি আমর লাইফে কখনো এলাউ করবোনা। সবসময় দুরত্ব বজায় রাখবেন আমার থেকে বুঝতে পেরেছেন আপনি? একটা কাগজ ইন্দুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে রিয়ন বলে সাইন করতে পারেন তো নাকি টিপ দেওয়ার জন্য কালির ব্যাবস্থা করবো। রিয়ন আবার বললো আপনাদের প্রতি কোন বিশ্বাস নেই, এই কাগজটায় সাইন করে দেন। পরবর্তীতে যেন এই একবছরের কথাটা ভুলে না যান।রিয়ন চোখ মুখ শক্ত করে আবার বলে ওঠে লো ক্লাস লোকদের কোন বিশ্বাস নেই স্বার্থের জন্য এরা সবকিছু করতে পারে সবকিছু।

কথাগুলো বলে রিয়ন বেডের উপর কোর্টটা ছুড়ে ফেলে ওয়াশরুমে চলে যায়।

ইন্দু এতোক্ষণ চুপচাপ কথাগুলো হজম করার চেষ্টা করলেও এখন আর পারলো না। ইন্দুর ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কান্না করতে কিন্তু সেটা তো আর এই মুহুর্তে সম্ভব নয়। কিছুক্ষণ চোখেরজল ঝড়িয়ে নিজেকে হালকা করে, চোখ মুছে কাগজটার দিকে তাকায়। তাতে স্পষ্ট করে গতরাতের কথা গুলো উল্লেখ করা আছে। যদিও এটা ডিভোর্স পেপার নয় তবুও এটাতে সাইন করতে বড্ড কষ্ট লাগছে ইন্দুর। গোটা গোটা করে বাংলায় নিজের নামটা লিখে দেয় স্বাক্ষরের জায়গায়। এই স্বাক্ষর দেখে কেউ বলতে পারবেনা, এই লো ক্লাসের মেয়েটা ইংলিশে অনার্স করছে আর সে যে ভার্সিটি টপার স্টুডেন্ট।

স্বাক্ষর করে পেপারটা বেডের উপর রেখে ইন্দু সোজা ছাদে চলে যায়। ছাদে গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠে ইন্দু। এর আগে আরও অনেকে লো ক্লাস বলে অপমান করেছে কিন্তু এতোটা খারাপ লাগেনি কখনো। যতোটা আজ খারাপ লেগেছে। আজ মা বাবাকে খুব মিস করছে ইন্দু। কান্না করতে করতে ছাদের রেলিংয়ের পাশ ঘেষে বসে পরে ইন্দু। গুটিসুটি মেরে বসে কান্না করেই যাচ্ছে করেই যাচ্ছে। এই কান্নাটা কি অপমানের জন্য নাকি পেপারে সাইনের জন্য সেটা হয়তো ইন্দু নিজেও জানেনা।

ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে রুমের কোথাও ইন্দুকে না দেখতে পেয়ে রিয়ন ভাবলো হয়তো নিচে গিয়েছে ইন্দু। তাই বেডের উপর থেকে পেপারটা নিয়ে যত্ন করে রেখে দেয়।

একচুয়েলি সৃজা কোন ভাবে জানতে পেরে গিয়েছে যে রিয়ন বিয়ে করে নিয়েছে তাই রিয়নকে ভুল বুঝে যা নয় তাই বলেছে। যার কারণে রিয়নের মুড অফ ছিলো। ইন্দু তখন রিয়নের কোর্ট খুলতে গেলেই রিয়ন রিএক্ট করে বসে।

এর মাঝে কেটে গেছে প্রায় দু মাস। ইন্দুর মা বাবা বোনেরা সবাই নিজেদের বাড়ি চলে গিয়েছে আরও একমাস আগেই। আশফাক খান ইন্দুর বাবা মা কে ম্যানেজ করে নিয়েছে কয়েকমাসের জন্য যেন ইন্দুকে তারা নিজেদের কাছে না নেয় সে জন্য।
বাসার সবাই ইন্দুর ফ্যান হয়ে গিয়েছে। সবাই ইন্দু বলতে অজ্ঞান। সবার মন জয় করে নিয়েছে সে। সবদিকেই তার নজর। কার কি প্রয়োজন কার জন্য কোনটা ভালো হবে এ সবটাই এখন ইন্দুর দায়িত্বে আছে। রিয়নের সবকিছু গুছিয়ে রাখা টাইম মাফিক কফি দেওয়া, প্রয়োজনীয় সব কিছু এগিয়ে দেওয়া, রুম গুছিয়ে রাখা টিফিন পাঠানো, প্রতিদিন টাইম অনুযায়ী ফোন দিয়ে লাঞ্চ করেছে কিনা তা খোঁজ নেওয়া সব ই করেছে ইন্দু। একি রুমে থাকে কিন্তু রিয়নের বেড শেয়ার করে নয় বরং মেঝেতে বিছানা করে ঘুমায় ইন্দু। প্রয়োজনের বাইরে একটা কথাও বলেনি সে রিয়নের সাথে। রিয়ন কথা বলতে চাইলেও ইন্দু কথা বলেনি।

সৃজাও আগের মতো রিয়নকে ফোন করেনা কারণ রিয়ন তাকে বলেছে এক বছর বিজনেস নিয়ে খুব বিজি থাকবে তাই হুট হাট যখন তখন যেন ফোন না করে। সৃজাকে এই এক বছরের কন্টাক্টের ব্যাপারটাও বলেছে রিয়ন।

এই দু মাসে সবাই বাইরে ঘুরতে গিয়েছে দু তিনবার কিন্তু ইন্দু যায়নি। সে দাদুর কাছেই থেকে গেছে।কারণ ইন্দুর সকল কথা রাখার ঐ একটাই ব্যাংক। রাই আর আশফাক খান শপিং করে দিয়েছে ইন্দুকে। রাই আর রুপকের যতো আবদার সব পুরণ করে ইন্দু। তাই ইন্দু তাদের বেস্ট ফ্রেন্ড আর বেস্ট কিউট ভাবির জায়গাটা দখল করে নিয়েছে।

বিকেলে সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে তখন রুপকের ফোন বেজে ওঠে রুপক ফোন তুলতেই ওপর পাশ থেকে বলা কথা শুনেই রুপক বলে ওঠে কিহ্! কি বলছেন টা কি! কি করে হলো এসব! আ আ আমি এক্ষুনি আসছি।

রুপকের এমন কথা শুনে সবাই চিন্তিত হয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে?

রুপক অস্পষ্ট স্বরে বললো ভাইয়ার এক্সিডেন্ট হয়েছে।

এক্সিডেন্টের কথা শুনে ইন্দুর বুকটা ধক করে উঠে। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরে। রাই ইন্দুকে শান্তনা দিয়ে বলে তুমি কান্না করোনা ভাবি। কিছু হবেনা ভাইয়ার।

সবাই হসপিটালে এসেছে। রিসিপশনে জিজ্ঞেস করায় সেখান থেকে বলে দিয়েছে রিয়নকে কেবিনে শিফট করা হয়েছে। ইন্দু ছুটে যায় কেবিনে। গিয়ে থমকে যায় ইন্দু।

রিয়ন চোখ বন্ধ করে আছে। এখনো সেন্স ফেরেনি। কপালে ব্যান্ডেজ, পায়ে ব্যান্ডেজ, হাতেও ব্যান্ডেজ। পাশে বসে আছে আশফাক খান।
ধিরে ধিরে পা ফেলে ইন্দু রিয়নের দিকে এগিয়ে যায়। ইন্দুকে দেখে আশফাক খান উঠে দাঁড়িয়ে বলে আমি রক্ষা করতে পারিনি আমার সন্তানকে। আমি যদি বুঝতে পারতাম এমনটা হবে তাহলে রিয়নকে কখনো ই একা ছাড়তাম না। আশফাক খানের এমন কথা শুনে রুপক বুঝতে পারে তার পাপা নিজের মধ্যে নেই, তাই তার পাপাকে নিয়ে কেবিনের বাইরে চলে যায়।
ইন্দু রিয়নের পাশে বসে রিয়নের ঘুমন্ত মুখটাতে হাত বুলিয়ে দেয়। অজান্তেই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরে ইন্দুর। হয়তো এই রিয়নকে সে মোটেও মানতে পারছেনা। কষ্ট হচ্ছে খুব।

চলবে…

হ্যাপি রিডিং 🥰