সম্পর্কের অধিকার পর্ব-১৬+১৭+১৮

0
457

#সম্পর্কের_অধিকার
#Hridita_Hridi
#পর্ব১৬

ইন্দুঃ প্যাকেট টা খুলে দেখে বাদাম, ডাল ভাজা,সামুচা। এগুলো দেখে রিয়নকে বলে এসব কেন?

রিয়ন ইন্দুর দিকে তাকিয়ে বলে তোমরা তো আমাদের সাথে ছিলেনা। তাই আমরা এই ঘন্টায় যা যা খেয়েছি তোমাদের জন্য ও নিয়ে এসেছি। কাগজে মোড়া একটা প্যাকেট ইন্দুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে রিয়ন বলে নাও এটাও তোমাদের।

ইন্দু কাগজে মোড়া প্যাকেটটা খুলে দেখেই লাফিয়ে ওঠে খুশিতে। একটু জোরে করে বলে ওঠে মনু মামার স্পেশাল ঝালমুড়ি! এটা তো আমার খুব পছন্দের। এটা বলেই রিয়ার হাতে একটা ঝালমুড়ির প্যাকেট দিয়ে অন্যটা নিজে খাওয়া শুরু করে।
রিয়ন ভ্রু কুচকে ইন্দুকে বলে, তুমি না খেয়ে বুঝলে কিকরে যে এটা মনু মামার দোকানের ঝালমুড়ি? আর এটা যে খুব স্পেশাল সেটাই বা জানলে কিভাবে?

ইন্দুঃ ঝালমুড়ি খেতে খেতে আরে কি বলছেন! আমি মনু মামার ঝালমুড়ি চিনবো না? ঝালমুড়ি দেখেই বুঝে গেছি এটা মনু মামার হাতে বানানো। কতো খেয়ছি মনু মামার হাতে বানানো স্পেশাল ঝালমুড়ি।

ইন্দু তো মনু মামার প্রশংসা করেই যাচ্ছে পেছনের তিনজনের তো কাঁপা-কাঁপি অবস্থা। মানে তিনজনই খুব ভয়ে আছে, মনু মামার প্রশংসা করতে গিয়ে না ইন্দু মুখ ফসকে সব বলে দেয়।
রিয়া টেনশনে বসে বসে দাঁতে নখ কেটে যাচ্ছে। এশা টেনশনে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। তিশা একবার গালে হাত দিচ্ছে আবার মাথায় হাত দিচ্ছে আবার কপালে হাত দিচ্ছে।

রিয়নঃ তুমি মনু মামার ঝালমুড়ি খেয়েছো মানে? তুমি ভার্সিটি আসো নাকি?

রিয়াঃ আরে ভাইয়া! আপু আসতে যাবে কেন? আমি তো কিনে দিতাম আপুকে। একবার কিনে দিয়েছিলাম, আপুর খুব ভালো লেগেছিল তাই আমি মাঝে মাঝেই কিনে দিতাম।

রিয়নঃ ওহ্ তাই বলো!

একটা শপিংমলের সামনে গিয়ে গাড়ি ব্রেক করে রিয়ন। সবাই গাড়ি থেকে নামতেই, রিয়ন গাড়ি পার্ক করে, ওদের নিয়ে শপিংমলে যায়। সবার জন্য শপিং করা হয়েছে। যার যার পছন্দ মতো জিনিস নিয়েছে।

ইন্দু একটা শাড়ি নিয়েছে, একটা টি শার্ট নিয়েছে, দুইটা পান্জাবি নিয়েছে নিজে পছন্দ করে। এগুলোর বিল রিয়ন ই পে করেছে বাট রিয়ন জানেনা ইন্দু কি কিনেছে রিয়ন তখন ছিলোনা সেখানে। সবার শপিং করা শেষ হলে গাড়িতে গিয়ে বসে।
রিয়ন সবাইকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে। ওয়েটারের কাছে খাবারের অর্ডার করেছে সে। খাবার আসতে একটু লেট হবে। সেই ফাঁকে কে কি কিনেছে কারটা কেমন হলো এ নিয়ে সবাই গল্পে মেতে যায়। ইন্দু কিছু না বলে চুপচাপ শুধু শুনে যাচ্ছে সবার কথা।
রেস্টুরেন্টে খেয়ে সবাই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। বাড়ি পৌঁছাতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়। বাড়ি এসে সবাই চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নেয়।

সবাই তিশার রুমে এসে বসেছে। ইন্দু সবাইকে ডেকেছে শপিং দেখানোর জন্য। ইন্দুর বাবা, মা, আর রিয়ন ও আছে সেখানে। প্রথম তিশা তার ড্রেস দেখালো। তারপর এশার ড্রেস দেখালো। এশার ড্রেস দেখালো হলে রিয়া তার ড্রেসটা সবাইকে দেখায়। সবাই সবার ড্রেসের খুব প্রশংসা করছে। এবার ইন্দুর ড্রেস দেখানোর পালা। ইন্দু একটা শাড়ি বের করে তার মায়ের হাতে দেয়। একটা পান্জাবি বের করে বাবার হাতে দেয়। ইন্দুর বাবা মা খুব খুশি হয়েছে। তাদের খুশির কারণটা এসব দামি পোশাক দেখে নয়। তাদের খুশির কারণ হলো এতো ভালো একটা ছেলেকে তারা বাড়ির জামাই হিসেবে পেয়েছে। খুশিতে চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরে ইন্দুর মায়ের।

ইন্দু এবার রিয়নের সামনে গিয়ে বলে আপনার শপিং তো দেখালেন না। দেখান আমরাও দেখি কি শপিং করেছেন?

রিয়ন গিয়ে শপিং ব্যাগটা নিয়ে আসে। সবাই দেখতে চাইলে রিয়ন বলে দেখাবো তো অবশ্যই। কিন্তু তার আগে তোমার আপুকে বলো তার হাতে যেগুলো আছে সেগুলো আগে দেখাতে। কারণ তার দেখানো তো এখনো শেষ হয়নি তাইনা?

রিয়নের কথা শুনে ইন্দু মাথা নিচু করে বলে, এর আগে আমি কখনো কোন ছেলেদের পোশাক কিনিনি। তাই তেমন কোন ধারণা নেই ছেলেদের পোশাক সম্পর্কে।
রিয়নের দিকে প্যাকেট দুটি এগিয়ে দিয়ে বলে, এটা আপনার জন্য। যদি ভালো না লাগে তাহলে কাউকে দিয়ে দেবেন।

রিয়ন প্যাকেটটা হাতে নিতে নিতে বলে সবার জন্য নিয়েছো তোমার জন্য কি নিয়েছো?

ইন্দুঃ একটু মুচকি হেসে বলে, আমার অনেক নতুন জামাকাপড় আছে। এখানে আসার আগেরদিন বাবাই অনেকগুলো কিনে দিয়েছে। তাই আজ আর নেইনি।

রিয়ন নিজের আনা প্যাকেটটা ইন্দুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, খুব ভালো করেছো এটা রাখো।
ইন্দু প্যাকেটটা হাতে নিতেই তিশা এসে ইন্দুর থেকে সেটা নিয়ে নেয়। কি আছে দেখার জন্য বের করতেই সবাই হা হয়ে যায়।
একি! এটা তো একটা শাড়ি। অনেক সুন্দর আর অনেক দামী একটা শাড়ি। শাড়িটা দেখেই রিয়া, এশা,তিশা সবাই মিলে ফাজলামো শুরু করে দেয়।

রিয়াঃ ওহহো! দুজন দুজনকে সারপ্রাইজ গিফট দেওয়া হচ্ছে!
এশাঃ তাও আবার লুকে লুকিয়ে!
তিশাঃ ভাগ্যিস আমি এটা দেখার বায়না ধরেছিলাম। তা না হলে তো জানতেই পারতাম না। সিঙ্কিং সিঙ্কিং ড্রিংকিং ওয়াটার।

ওদের সবার কথা শুনে ইন্দু একটু আনইজি ফিল করে। তাই রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
পিছে পিছে রিয়নও বেরিয়ে যায়। সবাই শব্দ করে হেঁসে ওঠে।

রাতে বেডে শুয়ে শুয়ে ইন্দু, রিয়ন আর সোহাগের ঝগড়ার কথাগুলো ভাবছে। রিয়ন কি করে সোহাগের কথাগুলো জানলো। আর সোহাগ যে আমায় পছন্দ করতো সেটা কে বললো রিয়নকে?
আর রিয়ন ই বা এসব কথা নিয়ে সোহাগের সাথে ঝগড়া কেন করতে গেল?

এখনো ঘুমাওনি? কি ভাবছো?
রিয়নের কথায় ইন্দু একটা হাসি দিয়ে সবকিছু আড়াল করার চেষ্টা করলেও সেটা আর সম্ভব হলোনা।

রিয়ন শোয়া থেকে উঠে বসে। এটাকে ঠিক বসাও বলা যায় না। আধশোয়া হয়ে ইন্দুর দিকে তাকিয়ে বলে। আমরা ঢাকা ফিরছি কবে?

ইন্দুঃ আপনি চাইলে কাল ই ফিরে যেতে পারেন।
রিয়নঃ ইন্দুর দিকে তাকিয়ে, তুমি খুব ভালো করে জানো আমি আমার একার যাওয়ার কথা বলছিনা।

ইন্দুঃ কিন্তু আপনাকে একাই ফিরতে হবে। আমি আর ফিরবোনা। বাবাইকে আমি ঠিক বুঝিয়ে নিতে পারবো। আপনি ফিরে যান।

রিয়নঃ কেন যাবেনা? সোহাগের জন্য?
সোহাগের নামটা রিয়নের মুখে শুনতেই ইন্দু বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে বসে।

“কি বলছেন আপনি? ”

রিয়নঃ কেন? ভুল কি বলেছি? তাহলে তুমি কেন যাবেনা?
ইন্দুঃ আপনার সাথে কি যাওয়ার কথা ছিল আমার?

রিয়নঃ ছিলো তো। তুমি যাবে বলেই আমি তোমার সাথে এসেছি আর এখন কিনা বলছো তুমি যাবেনা!

ইন্দুঃ হুম! আপনি ফিরে যান। ফিরে যান আপনার সৃজার কাছে। আর আপনাদের মাঝে আমাকে কখনো টানবেন না প্লিজ!

রিয়ন এবার রেগে চোখমুখ শক্ত করে ইন্দুর দিকে ঝুকে ইন্দুর মুখ চেপে ধরে বললো, এই মেয়ে এই, কি বলছো কি তুমি হ্যা! তুমি কি আমার ভালোবাসাটা বুঝতে পারোনা?

তুমি অযাচিতভাবে আমাদের মাঝে এসে সবকিছু তছনছ করে দিয়েছো। সবকিছু ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে আবার নতুন করে সাজিয়ে দিয়েছো। যখন নতুন করে সবকিছু ভাবতে শুরু করেছি। নতুন করে বাঁচতে শিখেছি তখন তুমি বলছো তোমায় এসবের মধ্যে না টানতে? কিন্তু সেটা তো কখনো সম্ভব নয়। আমি কিছুতেই তোমাকে এখানে রেখে যেতে পারবোনা। তোমাকে ছেড়ে আমি কিছুতেই থাকতে পারবোনা বিন্দু!
আমার নিজের ভালো থাকার জন্য হলেও আমার তোমাকে চাই।

ইন্দুঃ একটু তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে, আপনার ভালো থাকার জন্য এই আমাকে চান আপনি? এই গাঁইয়া, অশিক্ষিত মেয়েটাকে আপনার লাইফে কি প্রয়োজন সেটা কি আমি জানতে পারি?

রিয়নঃ আমি এতোকিছু জানিনা, জানতে চাইও না। আমি শুধু জানি তুমি ছাড়া আমার একটা মুহুর্ত ও চলবেনা। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা। ভালোবাসি আমি তোমাকে। সত্যি খুব ভালোবাসি।
দেখো! তুমি যেমন আছো আমি তেমনভাবেই তোমাকে চাই।

ইন্দু রিয়নের কথাগুলো শুনে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। নিজের কানকে যেন বিশ্বাস করতে পারছেনা। চুপ করে বসে আছে ইন্দু। তার দু চোখ বেয়ে শুধু জল গড়িয়ে পরছে।

রিয়ন উঠে গিয়ে ইন্দুর বাহু ধরে দাঁড় করিয়ে চোখের জল মুছে দেয়।
শক্ত করে বুকের সাথে জরিয়ে ধরে বলে, আমার জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপে আমি তোমকে চাই বিন্দু। আমার জীবনের সকল পরিস্থিতিতেই আমি তোমাকে আমার পাশে চাই।
তুমি ভালোবাসো কি না তা আমি জানতে চাইনা। তুমি এটা জানলেই হবে, আমি তোমায় ভালোবাসি।

চলবে…..

#সম্পর্কের_অধিকার
#Hridita_Hridi
#পর্ব১৭

তুমি ভালোবাসো কি না তা আমি জানতে চাইনা। তুমি এটা জানলেই হবে, আমি তোমায় ভালোবাসি।

ইন্দুঃ রিয়নকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে, রিয়নের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে আপনি তো সৃজাকে কথা দিয়েছিলেন তার কি হবে? আপনার এখন মনে হলো আপনি আমায় ভালোবাসেন তাই কথাগুলো বলে দিলেন। কিন্তু সৃজা যখন এসে আপনার সামনে দাঁড়াবে তখন আপনি কি করবেন?
তখনও কি বলবেন আপনি আমায় ভালোবাসেন? নাকি তখন আমাকে দুরে ঠেলে, সৃজাকে বুকে জরিয়ে নেবেন! যেমন করে এই মুহূর্তে আমায় জরালেন।

রিয়নঃ আমি জানি আমি তোমাকে যতোই ভালোবাসি না কেন! সৃজাকে নিয়ে তোমার মনে একটা সংশয় থেকেই যাবে। আর সেটাই স্বাভাবিক। কারণ এমন পরিস্থিতিটা তো আমিই তৈরি করেছি। তাই সেটা আগে ক্লিয়ার করা প্রয়োজন।
তাহলে শোনো,
আমি আর সৃজা দুজনে খুব ভালো বন্ধু। বলতে পারো ছোটো থেকে দুজন এক সাথে বড় হয়েছি। ওদের বাসা আর আমাদের বাসা পাশাপাশি ছিলো, কিন্তু আমরা যখন সবে মাত্র কলেজে উঠেছি তখন ওর পাপা ইতালিতে সেটেল হয়ে যায়। ওর ফ্যামিলিও তখন এ দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমায়। সবাই চলে গেলেও সৃজা এ দেশেই রয়ে গেলো। সৃজা ওর খালামনির বাসায় থেকে পড়াশোনা করতো। মাঝে মাঝে ছুটিতে ওর ফ্যামিলির সাথে দেখা করতে যেতো।

তবে কলেজ লাইফটা পার করে আমরা দুজনেই দেশের বাইরে চলে যাই। বিদেশে দুজন একি ইউনিভার্টিতে পড়াশোনা করেছি। সে সময়টা দুজনে একসাথে পার করেছি। আমরা দুজন দুজনের খুব ভালো বন্ধু ছিলাম। আমাদের দুজনের বাইরের কোনো বন্ধু ছিলোনা বললেই চলে। সেখান থেকে পড়াশোনা কমপ্লিট করে দেশে ফিরে আসি। তবে আমি একা আসিনি সাথে সৃজাও ফিরে এসেছিল। তার নাকি দেশের বাইরে থাকতে ভালো লাগেনা।

ও ছিলো আমার সবথেকে কাছের বন্ধু। ওর বাবা মা বাইরে থাকতো বলে ওর যখন যা বায়না সব আমি পূরণ করতাম। ওর সাথে লং ড্রাইভে যাওয়া, পার্টি করা, ক্লাবে যাওয়া রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া এগুলো ছিলো আমার নিত্যদিনের ঘটনা। আর এটা আমার পাপার কোন সময়ই পছন্দ ছিলোনা। বিশেষ করে সৃজার বিদেশি কালচারাল মনোভাবটাই আমার পাপার সবথেকে অপছন্দের ছিলো। তবে সৃজা আমার সাথে এভাবে মিশতো বলে আমার বাসায়ও সবাই ভাবতো আমি সৃজাকে ভালোবাসি।

ইনফ্যাক্ট এ ব্যাপারে আমায় জিজ্ঞেস ও করেছিলো দাদু, তবে আমি কোনো জবাব দেইনি। কি জবাব দিবো বলোতো? আমি নিজেই বুঝতে পারছিলামনা, একচুয়েলি আমি সৃজাকে ভালোবাসি কিনা।
তবে ওর সাথে এতোটা সময় কাটানোর পরেও ওর জন্য আমার মনে তেমন কোন ফিলিংস ছিলোনা। তোমার সাথে এতো অল্প সময় কাটানোর পরে যে ফিলিংসটা হয়েছে সেটা সৃজার সাথে এতোটা সময় কাটানোর পরেও হয়নি।

ইন্দুঃ আপনি তো বিয়ের প্রথম রাতে বলেছিলেন অন্য কাউকে ভালোবাসেন। ইনফ্যাক্ট সারারাত বাইরে কাটিয়ে ভোর রাতে রুমে ফিরেছিলেন। যদি সৃজাকে ভালোই না বাসতেন তাহলে এমনটা কেনো করেছিলেন?

রিয়নঃ ইন্দু তোমাকে তো আমি বললাম আমি বিদেশি কালচারে বড় হয়েছি। আমার পড়াশোনা আমার স্ট্যাটাস সবকিছু একটা গ্রামের মেয়ের সাথে কখনো খাপ খাবেনা। আমার ধারণা ছিল একটা গ্রামের মেয়ে কখনো আমার যোগ্য হতে পারেনা। একটা আনএডুকেটেড মেয়েকে নিয়ে❤️ আমি কিভাবে আমার ফ্রেন্ডসার্কেলের সামনে গিয়ে দাঁড়াবো। সবার সামনে আমার মাথাটা হেট হয়ে যাবে। আমার লাইফটা পুরো স্পয়েল হয়ে যাবে। কখনো আমার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবেনা সে।
বুঝতেই তো পারছো আমার তখন মাইন্ড সেটআপ টা তেমনই ছিলো।
তাই বিয়েটা ভেঙে দিতে পাপাকে আমি বলেছিলাম, আমি সৃজাকে ভালোবাসি। আমি জানতাম সৃজাকে জরিয়ে এমন কথা বললে সবাই মেনে নেবে কারণ আগে থেকেই সবাই সৃজাকে নিয়ে আমায় সন্দেহ করতো। আমি পাপার সাথে কথা বলে রুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে সৃজাকে জানাই সবটা।আমার কথায় সৃজাও রাজি হয়ে যায় গার্লফ্রেন্ড হওয়ার অভিনয় করতে, তাই আর তেমন ঝামেলা ও হয়নি।
কিন্তু পাপাকে কিছুতেই রাজি করাতে পারিনি। পাপা বলেছিলো আমার কিসে ভালো হবে কোনটা আমার জন্য পার্ফেক্ট সেটা নাকি আমার থেকে পাপাই ভালো জানে। এটা শুনে পাপার উপর আমি একটু রেগে গিয়েছিলাম। তাই পাপাকে দ্বিতীয়বার বোঝানোর চেষ্টাও করিনি। কারণ আমি জানতাম পাপা একবার যেটা ডিসাইড করেছে সেটা হাজারবার বললেও আর চেঞ্জ করা সম্ভব নয়। একপ্রকার মানষিক চাপের মধ্যে আমি তোমায় বিয়ে করেছিলাম। তাই সারারাত ছাঁদে বসে ভেবেছি কিভাবে আমি পাপাকে বোঝাতে পারবো। আমি সৃজাকেও ফোন করেছিলাম ও যেন আমায় হেল্প করে এ ব্যাপারে। সৃজাই আমাকে পরামর্শ দিয়েছিল আমি যেন তোমায় ঐ কথাগুলো বলি। আমি এজন্যই সেদিন রাতে তোমাকে ঐ কথাগুলো বলেছিলাম।

আর তোমাকে সেদিন যে সৃজা অপমান করেছিল, আমি জানতাম না এভাবে হুট করে ও আমার বাসায় চলে আসবে। আর তোমাকে ইনসাল্ট করবে। সত্যি বলতে সৃজা সেদিন তোমায় ওভাবে ইনসাল্ট করায় আমার ও খুব খারাপ লেগেছিলো।
তবে তখনও বুঝতে পারিনি এই খারাপ লাগার কারণটা। এটা ভালোবাসায় রুপ নেবে সেটা কি জানতাম বলো!

রিয়নের এসব কথা শুনে ইন্দু রিয়নকে বলে আমি তো এখনো অশিক্ষিত। এমনটা নয় এই কয়েক মাসের মধ্যে আমি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শিষ্য হয়ে গিয়েছি, যে আমাকে নিয়ে আপনার স্ট্যাটাসে আপনি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবেন। আমার মাঝে এমন কোন পরিবর্তন হয়নি যে আমি আপনার যোগ্য হয়ে গিয়েছি এই কয়েক মাসের মধ্যে।

রিয়নঃ আমার হয়েছে। আমার পরিবর্তন হয়েছে বিন্দু!
আমি এই কয়েকমাসে তোমার সবকিছুতেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। আমি তোমাকে ছাড়া একটা মুহুর্ত ও ভাবতে পারিনা।
কে কি ভাবলো সেটা নিয়ে আমি আর এখন ভাবিনা আর ভাবতেও চাইনা। আমি কেমন থাকবো সেটা আমার কাছে সবথেকে বেশি ইম্পর্ট্যান্ট। আমার ভালো থাকার জন্য এই আনএডুকেটেড গাঁইয়া মেয়েটাকেই চাই।

আজ বুঝতে পেরেছি পাপা কেন তোমায় আমার জন্য পছন্দ করেছিলো। তুমি আমার জীবনে এসেছিলে বলেই আমি খুঁজে পেয়েছি জীবনের এক নতুন মানে।
হয়তো হাই সোসাইটিতে চলতে তোমার প্রবলেম হবে। হয়তো তাদের সাথে তাল মিলিয়ে ঝুড়ি ঝুড়ি ইংরেজি ওয়ার্ড তুমি বলতে পারবেনা। কিন্তু তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। আমার তেমন সোসাইটি চাইনা যা আমার ভালো থাকায় বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে।
আমি তোমায় পরিবর্তন করতে গিয়ে নিজেকেই বদলে ফেলেছি। অবশ্য এর পুরো ক্রেডিট তোমার।

এতোটা সময় ধরে ইন্দু শুধু রিয়নের কথাগুলো শুনছিলো। ইন্দু ভাবছে এটাও কি কখনো সম্ভব? একটা মানুষ এতোটা পরিবর্তন কিকরে হতে পারে। সত্যিকারের ভালোবাসার কাছে নাকি সবকিছু তুচ্ছ হয়ে যায়! সারাজীবন এটাই শুনেছি। তাহলে কি রিয়ন সত্যি সত্যি আমার প্রেমে পরেছে?

ইন্দুর এই মুহুর্তে দাদুকে মনে পরছে খুব। আর মনে পরবেনা ই বা কেন? ঐ একটা মানুষই তো সবসময় ভরসা দিয়ে এসেছে। সবসময় বলতো, ইন্দু একটু ধৈর্য্য ধর। দেখবি একদিন ঠিকই আমার দাদুভাই তোকে বুঝতে পারবে। ইন্দুর যতো কথা সবটা তো তার কাছেই বলতো।

ইন্দুর ফোন বেজে চলেছে। ইন্দু ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে দাদু ফোন করেছে। ইন্দু ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরে বলে দাদু! দাদু একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে কিন্তু ইন্দু কিছু বলছেনা। ইন্দু কি বলবে কিছু বুঝতে পারছেনা শুধু চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরছে। দাদু বুঝতে পেরেছে ইন্দু কান্না করছে তাই অস্থির হয়ে ওঠে খুব কেন কান্না করছে সেটা জানতে।
রিয়ন ইন্দুর কান্না দেখে ফোনটা নিয়ে নিজে কথা বলে।

দাদুঃ কি হলো দাদুভাই তোমরা সবাই ঠিক আছোতো? ইন্দু দাদুভাই কাঁদছে কেন? কি হয়েছে ওর? তুমি কিছু বলেছো?

রিয়নঃ হুম দাদু আমি কিছু বলেছি বলেই তো এতো কান্না করছে।
দাদুঃ কি বলেছো দাদুভাই? যে মেয়েটা এতো কান্নাকাটি করে ভাসাচ্ছে?
রিয়নঃ I Love U.
রিয়নের কথা শুনে দাদু চমকে উঠে ফোনটা সামনে এনে কিছু একটা ভেবে আবার ফোনটা কানে ধরে বললো কি বললে দাদুভাই?
রিয়নঃ হুম দাদুভাই ঠিকই শুনেছো। আমি তোমার ইন্দু দাদুভাইকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি। আমি আগামীপরশু ওকে নিয়ে ফিরে আসছি দাদু।

রিয়নের কথা শুনে দাদুতো খুশিতে লাফাতে থাকে আর চিল্লিয়ে সবাইকে ডাকতে থাকে। রুপক আর রাই দৌড়ে এসে দাদুকে এভাবে লাফাতে দেখে বলে ওঠে, কি করছো দাদু? এবার এই বয়সে কি কোমরটা ভাঙার খুব শখ হয়েছে নাকি হ্যা!
তারপর ফোনটা রেখে সবাইকে রিয়নের বলা কথাগুলো বলতে থাকে দাদু।
এটা শুনে আশফাক খান তো মহা খুশি। মনে মনে ভাবছে আমি ঠিক জানতাম, খাঁটি সোনার কদর একদিন ঠিকই বুঝতে পারবে আমার ছেলেটা।

চলবে……

#সম্পর্কের_অধিকার
#Hridita_Hridi
#পর্ব১৮

রিয়ন কথা বলা শেষ করে ফোনটা ইন্দুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে সবকিছু গুছিয়ে নাও। আমরা আগামী পরশু ঢাকায় ফিরে যাবো।

ইন্দুঃ না মানে বলছিলাম কি!
রিয়নঃ কোন কিছু আর শুনতে চাইনা। বেশ কয়েকদিন তো হলো গ্রামে এসেছো এখন ফিরে চলো। তবে হ্যা, বাবা মায়ের জন্য মন কেমন করলে কিংবা তাদের দেখতে ইচ্ছে করলে আমায় বলবে আমি নিয়ে আসবো।
ইন্দুর বালিশ ঠিকঠাক করে দিয়ে রিয়ন বলে অনেক রাত হলো এবার ঘুমিয়ে পরো।

ইন্দু কিছু না বলে চুপচাপ ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। কিছু ভাবছে আনমনে। রিয়নের কথায় তার কোন ভাবান্তর হলো না।
রিয়নঃ বুঝতে পেরে বলে কি এতো ভাবছো বলোতো! এখনো পুরো একটা দিন দুটো রাত থাকতে পারবে মন খারাপের কি হলো! আমি তো তোমায় বলিনি এক্ষুনি নিয়ে যাবো তোমায়। এখন ঘুমিয়ে পরো।

ইন্দু দুচোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না। ইন্দু ভাবছে এটা স্বপ্ন নয়তো! ঘুম থেকে উঠলে কি সব আবার আগের মতো হয়ে যাবে? নাকি এটা বাস্তব হয়েই রয়ে যাবে! এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পরে ইন্দু।

ইন্দু নামাজ পড়ে এক কাপ চা করে নিয়ে বারান্দায় চেয়ারে বসলো। গতরাতে কথাগুলো ভাবছে সে। রাতে ঘুম হয়নি ঠিকভাবে তাই মাথাটা একটু ঝিমঝিম করছে তার। ইন্দু বিশ্বাস করতে পারছেনা গতরাতের কথা। গতরাত তার কাছে স্বপ্ন মনে হচ্ছে।

রিয়ন নামাজ পড়ে ইন্দুকে রুমে না দেখতে পেয়ে রুমের বাইরে চলে আসে। বাইরে আসতেই রিয়নের চোখ পরে বারান্দার একপাশে বসে ইন্দু চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে আর কিন্তু একটা ভাবছে। রিয়ন একপা দুপা করে এগিয়ে গিয়ে ইন্দুর পাশের চেয়ারটা টেনে বসে পরে।

ইন্দুঃ চেয়ার টানার শব্দে ইন্দু মাথা তুলে তাকায় রিয়নের দিকে। কফি খাবেন?
রিয়নঃ এক কাপ হলে মন্দ হয়না।
ইন্দুঃ বসুন, এক্ষুনি নিয়ে আসছি। চায়ের কাপ টা রেখে রিয়নের জন্য কফি করে নিয়ে এলো ইন্দু।

রিয়নঃ খুব ভোরে বউয়ের পাশে বসে কফি খাওয়াটা একটা অন্যরকম অনুভূতি।

রিয়নের মুখে বউ কথাটা শুনে ইন্দুর বুকের ভেতরটা কেমন যেন অস্থির লাগছে। আবার খুব লজ্জাও লাগছে।
প্রসঙ্গ পাল্টাতে ইন্দু রিয়নকে বলে আজ আমরা একটু বের হবো।
রিয়নঃ কোথায় যাবে?
ইন্দুঃ সেটা গেলেই বুঝতে পারবেন। নাস্তা করে বেরিয়ে পরবো।
রিয়নঃ ওকে ঠিক আছে।

নাস্তা করে ইন্দু সবাইকে রেডি হতে বলে।ইন্দুর কথা শুনে কেউ বুঝতে পারছেনা তারা যাবেটা কোথায়। আজ তো কোথাও যাওয়ার প্ল্যান নেই। আর কোথাও যাওয়ার হলে তো ইন্দু তাদের আগেই বলে রাখতো কিন্তু ইন্দু তো কিছু বলেনি!

রিয়ন রুমে যায় রেডি হতে। তখন ইন্দুকে একা পেয়ে রিয়া জিজ্ঞেস করলো, আমরা কোথায় যাচ্ছি আপু?

ইন্দুঃ কোথায় যাচ্ছি সেটা গেলেই জানতে পারবি। এখন যা জলদি রেডি হয়ে নে। আর শোন, গতকাল যে ড্রেস নিয়েছিস সেটা পরবি সবাই। আমরা আগামীকাল ঢাকা ফিরে যাবো। তাই আজ ঘুরতে যাবো,এবার যা সবাই রেডি হয়ে নে জলদি জলদি।
ইন্দু ও নিজের রুমে চলে যায়। ওয়ার্ডরোব থেকে রিয়নের দেওয়া শাড়িটা বের করে তিশার রুমে চলে যায় কারণ ইন্দুর ওয়াশরুমে রিয়ন আছে।

তিশার রুমে গিয়ে ইন্দু ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে তারপর শাড়ি পারতে শুরু করে। রিয়া রেডি হয়ে ইন্দুকে সাহায্য করছে। সিল্কি খোলা চুলগুলো পিঠ ছেয়ে আছে। গলায় সিম্পল একটা নেকলেস। কানে স্টোনের বড় দুল। হাতে স্টোনের কিছু চুড়ি। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। চোখে হালকা কাজল টেনে দেওয়া। নেভিব্লু কালার শাড়িতে অসম্ভব সুন্দর লাগছ ইন্দুকে দেখতে। বিশেষ করে আজ হালকা মেকআপে সিম্পল অর্নামেন্টস এ এক নতুন অনন্যা হয়েছে সে।

রিয়ন রেডি হয়ে গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ইন্দু বাকি তিনজনকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গাড়ির দিকে আসতেই রিয়নের তো বিশাল একটা ঝটকা লাগে। ইন্দুকে দেখে রিয়ন হতবাক। রিয়ন ভাবছে বিন্দু যে এতোটা সুন্দরী সেটা তো আগে খেয়াল করিনি। বিন্দুর অনেক গুণ আছে জানতাম কিন্তু তার রূপটা যে এতোটাই নজরকাড়া সেটা তো জানতাম না। রিয়ন তো একমনে এসব ভেবেই যাচ্ছে ওদিকে ইন্দু রিয়নের পাশ কেটে রিয়নের হাত থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে, সোজা গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পরে।

রিয়নের হাত থেকে চাবি নেওয়াতে রিয়নের হুঁশ ফেরে। ইন্দুর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ইন্দু তার তোয়াক্কা না করে সোজা ড্রাইভিং সিটে বসে পরে। ইন্দুকে ড্রাইভিং সিটে বসতে দেখে তো রিয়নের প্রাণ যায় যায় অবস্থা। দৌড়ে গিয়ে ইন্দুকে বলে এই মেয়ে এই! তোমার কি মাথাটা পুরোই গেছে নাকি হ্যা! এখানে এসে বসলে কেন? যাও তোমার সিটে গিয়ে বসো।

ইন্দুঃ আমার সিটে তো আমি বসেই আছি আর সুস্থ মস্তিষ্কে,সজ্ঞানেই বসে আছি। এবার কাইন্ডলি আপনার সিটে আপনি বসে পরুন প্লিজ!

ইন্দুর এমন কথাবার্তা শুনে তো রিয়নের হুমড়ি খেয়ে পরার জোগাড়। নিজেকে সামলে নিয়ে রিয়ন ইন্দুকে বলে যা বলছো ভেবে বলছো তো? I mean, Are you sure? U can do it!

ইন্দুঃ Yea i can.
ইন্দুর কথা শুনে রিয়নের চোখ দুটো রসগোল্লার মতো বড় বড় হয়ে যায়।

রিয়নের এমন অবস্থা দেখে ইন্দু বলে কি হলো যান! গিয়ে নিজের জায়গায় বসুন। রিয়ন উপর নিচ মাথা ঝাকিয়ে হ্যা জবাব দিলো। রিয়ন ইন্দুর পাশের সিটে গিয়ে বসে পরে।রিয়ন তার বিন্দুকে এই রুপে দেখে তো গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।
ইন্দু গাড়ি স্টার্ট দিয়ে রওনা হলো জেলা শহরের দিকে।
ইন্দুর এমন কার্যকলাপে শুধু রিয়ন একা নয় সবাই হতবাক। রিয়ন তো জানেনা ইন্দু ড্রাইভ করতে পারে এজন্য অবাক হয়েছে।
আর বাকিরা ভাবছে ভাইয়া তো এসব কিছু জানেনা তাহলে আপু এসব কেন করছে! ভাইয়া তো সব জেনে যাবে!

এশা ফিসফিস করে রিয়াকে বলে আপু কি রিয়ন ভাইয়াকে সবকিছু বলে দিয়েছে?

রিয়া এশাকে বলে, বোকার মতো কথা বলিসনাতো! আপু যদি রিয়ন ভাইয়াকে সবকিছু বলে দিতো তাহলে অবশ্যই আমাদের জানাতো।

সবার মনে হাজারো প্রশ্ন কি করতে চাইছেটা কি ইন্দু?

রিয়ন তো এক দৃষ্টিতে ইন্দুর দিকে তাকিয়ে আছে। অনেকটা বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। তার বিন্দু গাড়ি ড্রাইভ করতে পারে? কই কখনো বলেনি তো! তার থেকে বড় কথা ইন্দু রিয়নের প্রশ্নের জবাব ইংলিশে দিলো কিকরে। সে তো পড়াশোনাই জানেনা। তেমনটা হলে তো রিয়নের কথাগুলো তার বোঝার ই কথা নয়।

এসব ভাবনার মাঝেই রিয়নের হঠাৎ মনে হলো ইন্দু এমন কাজ তো এর আগেও করেছে। আজই যে প্রথমবার এমন করেছে তেমনটা তো নয়।
বিয়ের দিন থেকেই ইন্দুকে যতো কথাই বলা হোকনা কেন, প্রতিটা কথাই ও বুঝতো। ইনফ্যাক্ট এমন আচরণ ওর মধ্যে কখনো লক্ষ করিনি যে কোন একটা ইংলিশ ওয়ার্ড না বুঝে ও জিজ্ঞেস করেছে। কিংবা না বুঝে দাঁড়িয়ে আছে।

রিয়নের মনে পরে গেল সেদিনের কথা যেদিন সৃজা এসে ইন্দুকে আনএডুকেটেড, গাঁইয়া বলে অপমান করেছিল। আরও অনেক কথা শুনিয়েছিল। আনএডুকেটেডের মিনিং তো ওর জানার ই কথা নয়। কিন্তু ইন্দু তো সবটাই বুঝতে পেরেছিল। সেদিন রিয়া কেন বললো যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখিও তাই পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন। সকল কেন ই যেন আজ একসাথে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এসবের কিছুই রিয়নের মাথায় আসতো না, যদি না ইন্দুর এই রুপটা সামনে আসতো।
রিয়ন ভাবছে বিন্দুকে কি এসব জিজ্ঞেস করবে? জিজ্ঞেস করাটা কি ঠিক হবে?
রিয়ন মনে মনে ভাবছে আজ বাসায় গিয়ে সে ইন্দুকে জিজ্ঞেস করবে সবটা।

ইন্দুর গাড়ি ভার্সিটির গেট দিয়ে ক্যাম্পাসে যায়। ক্যাম্পাসে আসতে দেখে রিয়া ভাবে হয়তো ইন্দু ক্লাস করতে এসেছে। কাল তো চলে যাবে তাই হয়তো এসেছে।

গাড়ি ব্রেক করায় রিয়নের ধ্যান ভাঙে। রিয়ন তাকিয়ে দেখে ইন্দু মনু মামার দোকানের সামনে গাড়ি ব্রেক করেছে। রিয়ন আরেকদফা অবাক হলেও মুখে কিছু বললোনা।

ইন্দু গাড়ি থেকে নামতেই মনু মামা হেঁসে বললো আরে ইন্দু মামনী তুমি? তোমার নাকি বিয়ে হইছে এক সাহেবের সাথে?
তা মনু মামার কথা মনে পরেছে তোমার?

রিয়ন ইন্দুকে যতো দেখছে শুধু অবাক হয়ে যাচ্ছে। মনে মনে ভাবছে এই মেয়েটা আর কি কি যে করবে আজ, তা শুধু এই মেয়েটাই জানে।

ইন্দু মনু মামার সাথে কথা বলে ঝালমুড়ি নিয়ে ফিরে এসে নিজের ডিপার্টমেন্টে যায়। সবার সাথে কথা হয়। ইন্দু রিয়নের সাথে স্যারদের পরিচয় করিয়ে দেয়। বাকিটা স্যারেরাই বলে দিয়েছে। ইন্দুকে আর কিছু বলতে হয়নি।

কলেজে জুনিয়ররা সবাই ইন্দু দেখে মহা খুশি। অনেক প্রশংসা করেছে ইন্দুর। যা হচ্ছে সবটাই রিয়নের সামনেই।
রিয়ন নিজের চোখকে তো বিশ্বাস করতে পারছেনা সাথে যেন নিজের কানকেও বিশ্বাস হচ্ছে না তার। রিয়ন নিজের চোখে যা দেখছে নিজের কানে যা শুনছে তা কি সত্যি! এটা যেন তার বিশ্বাস ই হচ্ছে না। তার বিন্দু কিনা ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট! আর শুধু তাই নয় ভার্সিটি টপার স্টুডেন্ট!
কিন্তু এসব শুনে রিয়নের খুশি হওয়ার কথা হলেও রিয়ন খুশি হতে পারলোনা।

চলবে….