সম্পর্কের বাঁধন পর্ব-০৬

0
227

#সম্পর্কের বাঁধন
#_Writer_মারিয়া_
#_Part : 6

জারিফা নিজের রুমে আনমোনা হয়ে বসে আছে। মিসেস. জেসমিন ( জারিফার আম্মু ) জারিফর রুমে এসে দেখে জারিফার কোনো দিকে খেয়াল নাই। মিসেস. জেসমিন জারিফার পাশে বসে জারিফার কাধে হাত রাখতেই জারিফা যেনো খানিকটাহ চমকে উঠে। তাড়াতাড়ি পাশে তাকিয়ে দেখে তার আম্মু। জারিফা মিসেস. জেসমিনের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। মিসেস. জেসমিন বলে ওঠে,
–” জারিফা!”

–” হুম!”

–” আজ বাইরে গেলি নাহ যে?”

–” ভালো লাগছ নাহ, মাম্মাম। তাই যাই নি।”

–” জারিফা! দেখ মা! বলছি যে।”

–” মাম্মাম! আমার রাতে একটুও ঘুম হয় নি। আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিবা? একটু ঘুমাতাম।”
মিসেস. জেসমিন আর কিছু বলেন নাহ। জারিফার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। জারিফাও ঘুমিয়ে যায়।

★★★
কবিতা শাওয়ার নিয়ে বারান্দায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে চুল মুছে নিচ্ছে। চুলের পানিতে কবিতার শাড়ি কোমরের দিকে, পিঠের দিকে, কাধের দিকে কিছুটাহ করে করে ভিজে গেছে। কেউ একজন কবিতাকে এইভাবে দেখে খুব বাজে ভাবে পর্যবেক্ষন করছে। আর সেইটা হলো আসিফ। আসিফ আবিরের পাশের রুমেই আছে আর আসিফের বারান্দা থেকে আবিরের বারান্দাটাহ ভালো ভাবে দেখা যায়। আসিফ খুব নোংরা ভাবে কবিতাকে পর্যবেক্ষন করছে। কবিতা চুল মুছতে মুছতে হঠাৎ পাশে তাকাতেই, পাশের বারান্দা থেকে আসিফ কে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে খানিকটা চমকে উঠে। কবিতা আসিফের দিকে হালকা ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই আসিফ রুমে চলে যায়। কবিতা কিছু সময় তাকিয়ে থেকে রুমে চলে যায়।
কবিতা রুমে যেতেই দেখে আবির ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে। আবিরও কবিতার দিকে তাকাতেই যেনো চোখের পলক ফেলতে পারছে নাহ। কবিতা একটা হালকা লাল শাড়ির সাথে ভেজা চুুল সব মিলিয়ে কবিতাকে বড্ড আবেদনময়ী লাগছে, আবিরের কাছে। আবির কবিতার দিকে এগিয়ে এসে শাড়ির আঁচল তুলে কবিতার মাথার উপর দিয়ে দেয়। কবিতা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আবিরের দিকে। আবির কিছুসময় কবিতার দিকে তাকিয়ে থেকে রুম থেকে বের হয়ে যায়। আর কবিতার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।

★★★
কবিতা রান্নাঘরে কিছু কাজ করছিলো। হঠাৎ আসিফ এসে পেছন থেকে বলে ওঠে,
–” কবিতা!”

কবিতা পিছনে তাকিয়ে দেখে আসিফ দাড়িয়ে আছে। আসিফের চাহনি কবিতার কাছে খুব একটা ভালো লাগছে নাহ। কবিতা আসিফের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আসিফ ভাইয়া, আপনি এখানে? কিছু লাগবে?”

–” হ্যা! তোমাকে লাগবে।”

–” মানে?”

–” কফি! কফি লাগবে। এক কাপ কফি দিতে পারবা?”

–” জি! দিচ্ছি।”
কবিতা কফি বানাচ্ছে আর আসিফ কবিতার কে মাথা থেকে পা পর্যন্ত স্কান করছে। কবিতা বুঝতে পারছে আসিফ তার দিকে তাকিয়ে আছে। কবিতার কেমন যেনো অসোয়াস্তি লাগছে।
–” আরে, আসিফ তুই কিচেন রুমে সামনে কি করিস?”

কারো আওয়াজ পেয়ে আসিফ আর কবিতা পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখে আবির। মাত্র বাহির থেকে এসেছে আবির, আর আসিফ কে কিচেন রুমের সামনে দেখে এগিয়ে আসে আবির। আসিফ আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আসলে! মাথায় একটু পেইন করছিলো, তাই কবিতাকে বললাম এক কাপ কফি দিতে।”

–” ওহ আচ্ছা! কবিতা আমাকেও এক কাপ দিও। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

–” হুম!”
আবির চলে যেতেই আসিফ একবার কবিতার দিকে তাকিয়ে সোফায় বসে টিভি দেখতে থাকে। কিছু সময় পর আবির আসলে, আবিরের সাথে গল্প করতে থাকে। কবিতাও কফি নিয়ে আসে, এক কাপ কফি আবিরের হাতে দিয়ে আর এক কাপ কফি আসিফের দিকে এগিয়ে দিতেই, আসিফ কবিতার হাত ছুয়ে নিতেই কবিতা তাড়াতাড়ি কাপ ছেড়ে দেয়। আর কাপ টাহ নিচে পড়ে ভেঙে যায়। আবির তাড়াতাড়ি আসিফ আর কবিতার দিকে তাকায়। আবিরের কাছে কবিতাকে একটু অস্থির অস্থির লাগছে। আবির কবিতার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আরে কফি টাহ পড়লো কিভাবে?”

আসিফ আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কি জানি? আমি ধরার আগেই কবিতা কাপ টাহ ছেড়ে দিলো। বুঝলাম নাহ।”

আসিফের কথা শুনে কবিতা যেনো অবাকের চরম পর্যায়ে চলে যায়। কি বলছে এইসব ওনি? আবির কবিতার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কেউ কাপ টাহ ধরার পর কাপ টাহ ছাড়া উচিত, তার আগে নাহ।”

আসিফ আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আচ্ছা, ইয়ার বাদ দে। ছোট মানুষ বুঝতে পারে নি। আচ্ছা, দাড়া একটা সার্ভেন্ট কে বলি এইগুলো পরিষ্কার করে দিতে।”

কবিতা আর কিছু নাহ বলে দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়। আবির কবিতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আর আসিফ কবিতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসি দেয়।

★★★
গতকাল জারিফার সাথে আবিরের দেখা হয় নি। তাই আজ সকাল হতেই আবির ভাবলো জারিফার সাথে দেখা করবে। আবির আয়নার সামনে দাড়িয়ে রেডি হচ্ছে।
কবিতা নিজের রুমে আসতে যাবে, এমন সময় কেউ একজন কবিতার হাত টান দিয়ে ভেতরে নিয়ে যায়। কবিতা মারাত্মক ভয় পেয়ে যায়। লোকটা কবিতাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। কবিতা সামনে তাকাতেই দেখে আসিফ তার দিকে বাঁকা হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে। কবিতা আসিফকে একটা ধাক্কা দিয়ে বলে ওঠে,
–” কি করছেন কি, আপনি এইসব?”

–” Oh! Come on Kobita. তুমি এতোটাহও ছোট নাহ যে কিছুই বুঝো নাহ। আমার তোমাকে কিছু সময়ের জন্য চাই।”

–” আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? খবরদার, সাবধান করে দিচ্ছি আমার থেকে দুরত্ব বজায় রেখে চলুন। নাহ হলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।”
কবিতা কথা গুলো বলেই চলে আসতে নিলে আসিফ কবিতাকে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে ওঠে,
–” খুব দেমাগ দেখতেছি। তোমার এই দেমাগ আমি ভেঙে গুড়িয়ে দিবো।”

কথাটাহ বলেই কবিতার সাথে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে কবিতার হাত লেগে একটা ফুলদানি পড়ে ভেঙে যায়। দরজা খোলা থাকায় আওয়াজ বাহিরে চলে যায়। কোনো কিছু ভাঙার আওয়াজ পেয়ে আবির, মায়া চৌধুরী, জিহাদ চৌধুরী, তুলি সবাই আসিফের রুমে এসে সবাই অবাক হয়ে আসিফ আর কবিতার দিকে তাকিয়ে থাকে। কবিতা কিছু বলার আগেই আসিফ বলে ওঠে,
–” এইটা কেমন মেয়েকে বিয়ে করে এনেছিস আবির?”

কবিতা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আসিফের দিকে। আবির আসিফের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কি হয়েছে? কি করেছে কবিতা?”

–” মামা, মামানির সামনে কিভাবে বলবো? তাও বলতে বাধ্য হচ্ছি, তোর বউ আমার সাথে নোংরামি করতে চাইছিলো?”
কথাটাহ শুনতেই সবার যেনো মাথায় বাজ ভেঙে পড়ে। আর কবিতার মনে হচ্ছে যেনো পৃথিবীতে তার কোনো অস্তিত্বই নেই। আসিফ আবার বলে ওঠে,
–” তোর বউ কে গিয়ে বোঝা। যাহ করতে যাচ্ছিল। ছিহ!”

সবাই যেনো মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। আবির কিছু নাহ বলে কবিতার হাত ধরে টেনে নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। আর আসিফের মুখে ফুটে উঠে শয়তানি হাসি।
আবির কবিতাকে রুমে এনে বিছানায় ছুড়ে ফেলে দিয়ে, দরজা লক করে দিয়ে, কবিতার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কি কবিতা? এইসব করছো? আজ আমি তোমাকে ছুঁই নাহ জন্য, আমার ভাইয়ের কাছে গেছো, নিজের জ্বালা মেটাতে। লজ্জা লাগলো নাহ। এতই যদি সহ্য করতে নাহ পারো তোহ আমার কাছে এসে বলতে, আমি আর পারছি নাহ। চলো, দেখি কত সহ্য করতে পারো তুমি?”

কথাটাহ বলেই আবির কবিতাকে বিছানার সাথে চেপে ধরতেই কবিতা কান্না কান্না করতে করতে বলে ওঠে,
–” আবির, কি করছেন?”

–” কেনো? এইটায় তোহ চাও। তাহলে?”
কবিতা আবিরের দিকে তাকিয়ে কান্না করতে থাকে। কারন কবিতা বুঝতে পারছে নাহ কি বলা উচিত। কিই বা বলবে, আসিফ যে বলার মতো কিছুই রাখে নি। সবার সামনে, তাকে যে একটা নোংরা মেয়ে বানিয়ে দিয়েছে। আবির আর কিছু নাহ বলে, কবিতার উপর থেকে উঠে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।

চলবে…………….🌹