সাঁঝেরবেলায় তুমি আমি পর্ব-১২

0
453

#তাসনিম_তামান্না
#সাঁঝেরবেলায়_তুমি_আমি
#পর্ব_১২

🍁🍁🍁

তিনদিন হলো আরমান, প্রমি, আশা, আসাদ বাসায় এসেছে। আগের মত সবাই লাইফ রিড করছে। সাব্বিরের বিয়ের দিনের পর থেকে আরমান সবসময় প্রমিকে চোখে চোখে রেখেছে। সাব্বিরের রিসিপশনের ১ দিন পরেই ওরা বাসায় চলে আসছিলো আসাদের অফিসে মিটিং থাকায় ওরা চলে আসছিলো। আসার সময় নিশি বাচ্চাদের মতো করে কান্না করছে নিশির কান্না দেখে প্রমিও কান্না করছে। ওখান থেকে আসার পর নিশির সাথে ফোনে কথা বলছে কয়েক’বার। এই তিনদিন প্রমি কলেজে না গেলেও আরমান গিয়েছে। প্রমি আজ কাল আরমানের বিহেভিয়ার দেখে খুব অবাক হয়। আগে আরমান প্রয়োজন/দরকার ছাড়া উবজে কথা বলতো না এখন প্রায় কোনো দরকার ছাড়া উদ্ভট প্রশ্ন করে। এইতো কাল যখন প্রমি ড্রাইংরুমে বসে টিভিতে কার্টুন দেখছিলো তখন আরমান কোথা থেকে এসে প্রমির পাশে বসে জিজ্ঞেসা করলো

-প্রমি তোমার ফিউচার প্লান কি? মানে তোমার কেমন ছেলে পছন্দ হাসবেন্ড হিসাবে? (আরমান)

প্রমি কিছুক্ষণের জন্য অবাক হয়ে যায় আরমানের প্রশ্নের তারপর নিজেকে সামলিয়ে বলল

-আমি সেসব নিয়ে ভাবি নাই ভাইয়া তাই বলতে পারছি না (প্রমি)

-গুড গার্ল! ওসব কথা ভাববা না ভাবলে তোমার মাথা ফাটিয়ে দিবো (আরমান)

কথাটা বলে আরমান নিমেষেই হাওয়া হয়ে গেলো আর প্রমি বেকুব বনে গেলো সব জেনো ওর মাথার উপর দিয়ে গেলো এমন অবস্থা। আরমান এরকম অনেক প্রশ্ন করে ইদানীং প্রমি অবাক না হয়ে পাড়ে না।
.
.
সাঝেঁরবেলায় প্রমি সাদে দাঁড়িয়ে আছে। চারিদিকে ইট-পাথরের দালান-কোঠার বাড়ির জন্য সাঝেঁরবেলার সূর্য্যের রক্তিমআভা আলোটা ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে না। পাখিদের নীড়ে ফেরার তাড়া। তাও যতটুকু দেখা যাচ্ছে প্রমি একমনে তাকিয়ে আছে। প্রমির মনটা খারাপ কিছু ভালো লাগছে না। প্রমির নানুমনি, নিশিকে বড্ড মিস করছে। কেমন একটা অস্থিরতা কাজ করছে ওর মাঝে মন বলে কিছু একটা হবে হয়তো খারাপ হয়তো বা ভালো। প্রমি নিজের পাশে কারোর অস্তিত অনুভব করতে পরে পাশে তাকিয়ে দেখলো আরমান প্যান্টের পকেটে হাত গুঁজে সামনে দিকে তাকিয়ে আছে। প্রমি তাকাতেই সামনের দিকে চোখ রেখেই বলল

-মন খারাপ? (আরমান)

প্রমি আরমানের কথায় চমকালো বুঝতে পারছে না আরমান কেমন ভাবে বুঝলো।

-কই না তো! (প্রমি)

-মিথ্যা বলছো কেনো আমি জানি তোমার মন খারাপ (আরমান)

-আপনি কেমন করে জানলেন (প্রমি)

আরমান বাঁকা হেসে প্রমির দিকে ফিরে বলল

-আমার জন্য এটা কোনো ব্যাপার না আর এটা যে কেউ একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবে (আরমান)

প্রমি আরমানের কথার আগামাথা বুঝতে না পেরে বলল

-মানে? (প্রমি)

-কিছু না! ওখান থেকে আসার পর থেকে দেখছি পড়াশোনা করছো না কলেজেও যাচ্ছো না কেনো? (আরমান)

প্রমির আরমানের কথায় খেয়াল হলো ও সত্যিই পড়াশোনা করছে না। আশাকেও কাজে সাহায্য করেছে না। কোনো দিকে খেয়াল নাই ওর মন খারাপে এতোটাই ডুবে আছে ও। প্রমি একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলল

-কাল থেকে যাবো কলেজে (প্রমি)

-দরকার নাই! একেবারে পিকনিকের পর থেকে যেও (আরমান)

-মানে কলেজে পিকনিক (প্রমি)

-না কলেজ থেকে নিয়ে যাচ্ছে কাল ৩ দিনের জন্য এন্ড তুমি আর আমি যাচ্ছি (আরমান)

-মানে আমি? (প্রমি)

-হুম (আরমান)

-আমি না গেলে হয় না? না মানে এই তো ক’দিন আগে ঘুরে আসলাম আবার পিকনিক না না যাবো না আমি (প্রমি)

-যাবে না মানে আম্মু পারমিশন দিয়ে দিয়েছে আর টাকাও জমা দেওয়া শেষ এখন তুমি যাবে না বলছো (আরমান)

আরমানের জোরে কথা বলা শুনে প্রমি চুপসে গিয়ে মিনমিন করে বলল

-আমাকে না বলে টাকা দিতে গেলেন কেনো? (প্রমি)

-তুমি আজ-কাল একটু বেশি কথা বলছো না আগে তো মুখ দিয়ে কথায় বের হতো না (আরমান)

প্রমি এবার একেবার চুপ হয়ে গেলো “সত্যিইও আজকাল বেশিই কথা বলছে। কিন্তু কিভাবে? নিশির বকবক করা ভুত কি আবার ওর ঘাড়ে এসে বসলো না-কি” কথাটা ভাবতেই চোখ গুলা বড়বড় হয়ে গেলো ওর। ওর ভাবনার মাঝেই আরমান আবার বলে উঠলো

-নিচে যাও এখুনি আজান দিবে আর কাল সময় মতো রেডি হয়ে থেকো সেকেন্ড টাইম যেনো বলা না লাগে। (আরমান)

প্রমি মাথা নাড়িয়ে নিচে চলে গেলো। আরমান আকাশে দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বললো

★’সাঝেঁরবেলায় তুমি আমি মিলে করবো সূর্য্যস্তর রক্তিম আলোর স্নান! প্রতিধ্বনি শব্দ তুলে বলবো ভালোবাসি সাঝেঁরকন্যা, ভালোবাসি! চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে সাঝেঁরকণ্যার রক্তিম লাজুক আভা। জড়িয়ে নিবো আমার ভালোবাসার চাদরে মিশে যাবো তোমাতে আমি শুনবো না কোনো মানা’★🕊️

#তাসনিম_তামান্না

আরমান আরো কিছুক্ষণ থেকে নিচে চলে আসলো। প্রমি একেবার ছাদ থেকে নিচে এসে দেখলো আশা বসে টিভি দেখছে। প্রমি আশার পাশে বসে আশার কাঁধে মাথা রাখলো। আশা টিভি বন্ধ করে একহাতে আগলে নিয়ে বলল

-কি হইছে রে তোর? শরীর টরীল ঠিক আছে তো? (আশা)

প্রমি চোখ বন্ধ করে ছোট করে উত্তর দিলো

-হুম (প্রমি)

-হুম কি হ্যাঁ? কি হইছে বলতো? (আশা)

প্রমি চোখ খুললো কিন্তু মাথা না উঠিয়ে বলল

-মামনি আমি নানুমনিকে খুব মিস করছি প্লিজ আমাকে ও বাড়িতে রেখে আসো (প্রমি)

আশা প্রমির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল

-তোর নানুমনি তোকে ওদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য এখানে পাঠালো আর তুই ঔ নড়কে যেতে চাইছিস কেনো? আমরা বুঝি খুব খারাপ? (আশা)

প্রমি এবার মাথা তুলে আশার দিকে তাকিয়ে ব্যস্ত গলায় বলল

-না না মামনি এমন কেনো ভাবছো আমি নানুমনিকে ছাড়া কখনো থাকি নাই এই ক’দিন ভালোই ছিলাম কিন্তু হঠাৎ কেনো জানি তীব্র ভাবে নানুমনিকে মিস করছি। এখানে আসার পর একটি বারের জন্য ফোনেও কথা হয়নি। কেমন আছে? তাও জানি না। ঔষধ টা ঠিক মতো খাই কি না….. (প্রমি)

-এতো টেনশন করছিস কেনো কিছু হইছি তোর নানুমনি একদম ঠিক আছে সুস্থ আছে দেখিস (আশা)

-তাই যেনো হয় মামনি। কিন্তু তাও মন মানছে না (প্রমি)

-আচ্ছা তোরা পিকনিক থেকে আই তার পর না হয় নানুমনির সাথে দেখা করে আছিস (আশা)

-সত্যি নিয়ে যাবে (প্রমি)

-হুম রে বাবা নিয়ে যাবো তোর মামার সাথে কথা বলে দেখি (আশা)

-আচ্ছা (প্রমি)

-হুম যা নামাজ পড়ে পড়তে বস অনেক পড়ালেখায় ফাঁকি দিছিস আমি আসছি তোর লাগেজ গুছিয়ে দিবানি (আশা)

-তোমার কষ্ট করে গুছিয়ে দিতে হবে না মামনি আমি পারবো (প্রমি)

-সবসময় এতো পাঁকা পাঁকা কথা বলিস কেন হ্যাঁ যা পড়তে বস (আশা)
.
আশা প্রথমে প্রমির ব্যাগ গুছিয়ে দিতে দিতে অনেক সাবধানবানি দিলো একা একা কোথাও যাবি না, ঠিক মতো খাবি, কোনো সমস্যা হলে আরমানকে বলবি, আরও কত কি! আর প্রমিও সেগুলা মন দিয়ে শুনেছে।

আশা আরমানের ব্যাগ গুছিয়ে দেওয়ার সময়ও অনেক সাবধান করে দিলো প্রমির ব্যাপারে আরমান আসাশ দিয়ে বললো ‘আমি আছি সব সামলিয়ে নিবো তুমি টেনশন করো না’
.
.
ডিনারের সময় আসাদ ভাত মাখতে মাখতে বলল

-শুনলাম তোমরা নাকি পিকনিকে যাচ্ছো (আসাদ)

-হ্যাঁ (আরমান)

-হুম সাবধানে থাকিস প্রমির খেয়াল রাখিস ঠিক মতো নো প্রোবলেম হলে সাথে সাথে আমাকে ফোন দিবি (আসাদ)

-আমি তোমার ছেলে সমস্যা সামলিয়ে নেওয়া আমার বা হাতের খেল (আরমান)

-বড় বড় লেকচার শুধু দিতেই পারিস কাজে প্রমান পেলাম না কখনো (আসাদ)

-তুমি কি আমাকে অপমান করলে? (আরমান)

-তা কেনো হবে আমার ঘাড়ে ক’টা মাথা যে তোকে অপমান করবো? আর অপমান করেও লাভ নাই কারণ তোর অপমানবোধটাই নাই তাই অপমান তোর গায়ে লাগবে না গন্ডারের চামড়া কি না (আসাদ)

-তুমি আমাকে এভাবে বলতে পাড়লা আমি…(আরমান)

-আরে থাম তো তোরা বাপ বেটা। আমার কথা শোন..(আশা)

প্রমি এতোক্ষণ ওদের কান্ড দেখে হাসছিলো। আশার কথা শুনে মনযোগী হয় সেদিকে

-হ্যাঁ বলো (প্রমি)

-তোরা দুইটা এখানেই আছিস আগেও বলছি এখনো বলছি সাবধানে থাকবি, ফোনে চার্জ রাখিস জেনো ফোনে পাই, ঠিক মতো খাবি, প্রমি একা একা কোথাও যাবি না আরমানের সাথে সাথে থাকবি, আর শরীরের দিকে খেয়াল রাখিস (আশা)

-আচ্ছা মামনি (প্রমি)

-ওফ্ফ আম্মু তোমার কথাগুলো মুখুস্ত হয়ে গেছে আমি সব দিক সামলিয়ে নিবো এতো টেনশন করো না (আরমান)

-কিসের টেনশন আশা? এমন তো নয় আরমান এই প্রথম বার যাচ্ছে? আরমান আছে ও সামলিয়ে নিবে? (আসাদ)

-হুম (আশা)

#চলবে
#Tasnim_Tamanna

[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠন মূলক কমেন্ট করবেন। রি-চেক করি নাই]