সাঁঝেরবেলায় তুমি আমি পর্ব-০৬

0
496

#তাসনিম_তামান্না
#সাঁঝেরবেলায়_তুমি_আমি
#পর্ব_৬

🍁🍁🍁

আরমান সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে এসে দেখে প্রমি নাই। অন্যদিন প্রমি থাকে আজ নাই বলে আরমান মনে করলো কালের ঘটনার জন্য হয়তো আজ কলেজে যাবে না। তাই ওর মার কাছে সিওর হওয়ার জন্য শুনলো

-আম্মু প্রমি আজ কলেজে যাবে না? (আরমান)

-কেনো? ওতো এমন কিছু বলে নি? তোকে কিছু বলছে? (আশা)

-না আসলে অন্য দিন তো সবার আগে এসে তোমাকে কাজে হেল্প করে আজ নাই তাই মনে করলাম যাবে না (আরমান)

-ও ওতো একটু আগে আমাকে কাজে হেল্প করে রেডি হতে গেছে মনে হয়! (আশা)

আশার কথা শেষ হতে না হতে প্রমি এসে হাজির হয়। সেটা দেখে আশা বলে উঠল

-ঔ তো প্রমি এসে গেছে আয় আয় খেয়ে নে কলেজের সময় হয়ে যাচ্ছে (আশা)

প্রমি মাথা নাড়িয়ে খেতে বসলো। আসাদের আজ অফিসে মিটিং থাকায় তাড়াতাড়ি চলে গেছে।
.
.
আরমান কলেজে যাওয়ার সময় বলল

-আমি তো ভাবলাম তুমি আজ কলেজে যাবা না (আরমান)

-কেনো (প্রমি)

-কালকের ঘটনাটার জন্য (আরমান)

-সেই তো একদিন না একদিন কলেজে যেতেই হতো তাই যাওয়াই শ্রেয় (প্রমি)

-হুম তা ঠিক (আরমান)

→কিছুক্ষণ পর….

-তোমার যদি স্টাডিতে হেল্প লাগলে আমাকে বলো (আরমান)

-আচ্ছা (প্রমি)
.
.
প্রমি ক্লাসে বইয়ের মধ্যে ডুবে বসে আছে। ক্লাস শুরু হতে এখনো ১৫ মিনিট বাকি তাই কোনো কাজ না পেয়ে বইয়ের মধ্যে ডুবে আছে। অনেকেই প্রমিকে নিয়ে নানান রকমের কথা বলছে।

১ম মেয়ে-কালের মেয়েটা না দেখছিস ভাব কত

২য় মেয়ে-ভাব তো হবেই আরমানের সাথে কলেজে আসে..

৩য় মেয়ে-আমি তো ভাবলাম কালকের অপমানের পর ক্লাসে আসবে না

৪র্থ মেয়ে-আমি হলে তো মরে গেলেও আসতাম না

এমন নানা ধরনের কথা বলছে প্রমি সেগুলো শুনে কিছুক্ষণ আগে পাত্তা দিয়ে কষ্ট পেলেও এখন আর ওদের কথায় পাত্তা দিচ্ছে না। জীবনে সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে হলে অন্যর খারাপ কথায় কান দিলে চলবে না! নিজের লক্ষ্যর দিকে কন্সানট্রেশন করতে হবে তার জন্য চায় কঠোর পরিশ্রম আর ইচ্ছাশক্তি!

প্রমি পড়ছিলো তখন কেউ ওর পাশে এসে জোরে ব্যাগটা রেখে ধপাস করে বসে পড়লো। এমন ভাবে বসলো যে ব্রেঞ্চটা নড়ে উঠলো। প্রমি সেদিকে তাকিয়ে দেখলো গলুমলু মেয়েটা নিজে নিজে বকবক করছে আর রাগে ফুসছে আর বার বার নিজের চশমা ঠিক করছে সেদিকে একবার তাকিয়ে নিজের কাজে মন দিলো। কিছুক্ষণ পর মেয়েটা প্রমির বই বন্ধ করে দিয়ে বলল

-এই তুমি পড়ছো কেনো আমি রেগে আছি কই সেলুয়েশন দিবে তা না

প্রমি মেয়েটার মতিগতি বুজতে পারছে না।

-আপনি আমাকে চিনেন? (প্রমি)

-হ্যাঁ না চেনার কি আছে? তুমি ভাবি! আরমান ভাইয়ার ব…..

-হা! ভাবি? আমার তো এখনো বিয়ে হয়নি (প্রমি)

-হে হে হে আসলে রাগে উল্টো পাল্টা বলে ফেলছি। যাই হোক আমি সাবিহা! সাদিক শয়তানের ছোট বোন (সাবিহা)

-ও আচ্ছা আমি জানতাম না আপু। কেমন আছেন? (প্রমি)

সাবিহা চশমার ফাঁক দিয়ে প্রমির দিকে তাকিয়ে বলল

-কিহহ! আপু! আপু কে! (সাবিহা)

প্রমি ভয় পেয়ে গেলো সাবিহার এমন ভাবে কথা বলায় তাই তুতলিয়ে বলল

-ক কেনো আ আপনি? (প্রমি)

সাবিহা চশমা ঠেলে ঠিক করে পড়ে কাঁদো কাঁদো মুখে বলল

-দেখো সকাল থেকে মেজাজ খারাপ আর তুমি আর মেজাজ খারাপ করো না (সাবিহা)

-কেনো আপু আমি আবার কি করলাম (প্রমি)

সাবিহা এবার রেগে বলল

-কি করলি মানে তুই আমাকে আপু ডাকছিস কেনো? তুই আর আমি এক ডিপার্টমেন্টে এক ক্লাসে পড়ি! সেখানে তুই আমাকে আপনি আগ্গে আবার আপুও বলছিস? এখন থেকে যদি সাবিহা আর তুই করে না ডাকিস তাহলে তোর ঘার মটকাবো আমি (সাবিহা)

প্রমি ড্যাবড্যাব করে সাবিহার দিকে তাকালো। সাবিহার কথা আর কাজ কর্মে সাবিহাকে চটপটে আর মিশুক মনে হলো প্রমির কাছে আর সাবিহার কথা শুনে প্রমির হাসি পেলেও সেটা প্রকাশ করলো না।
-আচ্ছা তা আপনি মানে তুই আমাকে কেমন ভাবে চিনলি? (প্রমি)

-ভাইয়া আসার সময় দেখিয়ে দিয়েছিলো (সাবিহা)

-আচ্ছা তা তোমার থুক্কু তোর কি হইছে? (প্রমি)

-কি হইনি সেটা বল? আমি ঔ হারামি রে প্রতিদিন প্রপোজ করি আর ঔ হারামি আমারে প্রতিদিন রিজেক্ট করে রাগটা কার হবে না বল….(সাবিহা)

প্রমি প্রশ্ন করতে গিয়েও আর কিছু বলতে পারলো না তার আগে ক্লাসে স্যার চলে আসলো।
.
.
ব্রেকটাইমে প্রমি আর সাবিহা কেন্টিনে গিয়ে বসলো। এইটুকু সময়ের মধ্যে ওদের মধ্যে অনেকটাই ভাব জমে গেছে। একটু পর আরমান, কণা, নয়ন, সাদিক, মিলন আসলো। সাবিহা মিলনকে দেখে মুখটা কালো করে ফেললো।

-কি রে মুটকি গিলার জন্য চলে আসছিস? (সাদিক)

-হ্যাঁ আইছি তো তোর টাকায় খাই নাকি একদম মুটকি মুটকি করবি না তুই মুটকি তোর বউ মুটকি তোর চোদ্দৌ গুষ্টি মুটি যা এখান থেকে (সাবিহা)

-তোর সমস্যা হলে তুই যা আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না (সাদিক)

সাবিহা রাগী চোখে তাকিয়ে ফোঁস ফোঁস করে দুইটা শ্বাস নিলো।

-শ্বাসকষ্ট রুগীর মতো করছিস কেনো? ফুপির বাড়ি ছিলি ভালোই ছিলি ওখান থেকে এসে বাড়িও জ্বালাছিস কলেজেও জ্বালাছিস (সাদিক)

-আমি তোর কি করছি আমি তোর কাছে গিছি নাকি তুই আইছোস ছেঁচড়া (সাবিহা)

আরমান রেগে বলল

-থামবি তোরা অনেক হইছে (আরমান)

-তোমাদের ক্লাস কেমন হলো কোনো প্রবলেম হয়নি তো (নয়ন)

-না ভাইয়া (প্রমি)

-ইশ তোমরা দুজন একসাথে অনেক মজা হয় তাই না আমিও যদি তোমাদের সাথে থাকতাম তাহলে আরো মজা হতো আচ্ছা এবার আমি ফেল করে তোমাদের সাথে পড়বো (কণা)

কণার কথায় প্রমি অবাক হয়ে যায়। সবারই জানা কণা মাঝে মাঝে উদ্ভট কথা বলে তাই ওরা বেশি অবাক হয়নি কিন্তু মুখ টিপে হাসছে। নয়ন মাথার চুল টেনে বলল

-এ কে রে কবে জানি আমাকে মাডার করে দেই (নয়ন)

-কই কে তোমাকে কি করবে একবার বলো আমিই তাকে মাডার করে দিবো (কণা)

নয়ন হাত জোর করে বলল

-মাফ চাই বোন তোমার কিছু করা লাগবে না আপাতত মুখটা বন্ধ রাখলেই চলবে (নয়ন)

বোন বলায় কণা রেগে বলল

-আমি তোর কোন মায়ের পেটের বোন লাগি (কণা)

-আব আরে সব কথা ধরতে আছে নাকি ওটা তো কথার কথা তাই না গাইস (নয়ন)

সবাই মাথা নাড়ালো।

-আচ্ছা আর কথা না বলে বল কে কি খাবি (আরমান)

-আমি বার্গার খাবো (সাবিহা)

-মুটকি কি ওমনি সাধে বলি (সাদিক)

-আরমান ভাইয়া দেখছো আমি একটু খাই বলে কি বলে সব সময় (সাবিহা)

-একটু!! (সাদিক)

-হুম দেখছি (আরমান)

ওরা বাকি টাইম কলেজ করে যে যা বাসায় চলে গেলো।

#চলবে
#Tasnim_Tamanna
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠন মূলক কমেন্ট করবেন।]