সাঁঝেরবেলায় তুমি আমি পর্ব-০৫

0
481

#তাসনিম_তামান্না
#সাঁঝেরবেলায়_তুমি_আমি
#পর্ব_৫

🍁🍁🍁

ব্রেকটাইমে বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই পিছন থেকে কেউ জোর ধাক্কা মারলো প্রমিকে….! ক্লাসে সবাই প্রায় অধিক সময় প্রমির দিকে তাকিয়ে ছিলো কেউই কথা বলতে আসেনি কিন্তু প্রমিকে নিয়ে ঠিকি সমালোচনা করেছে।

আচমকা ধাক্কায় টালসামলাতে না পেরে বেঞ্চে সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলো প্রমি। প্রমি হাতের কনুইতে ব্যাথা পেয়ে চোখ মুখ কুচকে ফেললো। প্রমি আস্তে আস্তে উঠে দাড়িয়ে পিছনে ফিরে একটা মেয়েকে রাগনীত অবস্থায় ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখলো কিন্তু কি বলবে বুঝতে পারছে না। ক্লাসের স্টুডেন্ট গুলো উঠে দাড়িয়ে ভীতু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। প্রমি কি করবে বা বলবে বুঝতে পারছে না তাই নিজের বা হাত চেপে ধরে ব্যাথাতুর দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটি রেগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বলল

-এই কে তুই? যে-ই হস না কেনো আরমানের থেকে দূরে থাকবি! আর আরমানের বাইকের পিছনেও উঠবি না যদি আমার কথা না শুনিস তাহলে তোকে এ কলেজ থেকে বের করে দিবো। জানিস আমি কে? জানিস না তো? ব্যাপার না এখন জানবি… আমি এই কলেজের প্রিন্সিপালের মেয়ে সাথে আরমানের হবু বউ সো ওর ধারের কাছেও যেনো তোকে না দেখি (মিলি)

মিলির কথা শুনে প্রমি অনেক ভয় পেয়ে যায়। তখনি বলে উঠলো

-বাহ বাহ আমার হবু বউ তুমি আর আমি-ই জানি না লাইক সিরিয়াসলি বাহ কি দিন আসলো হাহ নিজেকে বিশ্বসুন্দরী আর আমার বউ ভাবা বন্ধ করো তুমি প্রিন্সিপালের মেয়ে বলে যা খুশি তাই করবা? ওকে ডান তোমার যা ইচ্ছে তুমি তাই করো বাট আমাকে কেনো তোমার সাথে জড়িয়ে উল্টো পাল্টা কথা বলে বেড়াছ এগুলা আমার একদম সহ্য হয় না (আরমান)

মিলি রেগেমেগে ছুটে এসে আরমানে দুবাহুর শার্ট খামছে ধরে বলল

-কি বললে? তোমার আমাকে সহ্য হয় না? তুমি জানো না আমি তোমাকে ভালোবাসি তাও কেনো বার বার এমন ভাবে দূরে সরিয়ে দাও? আমার খুব কষ্ট হয় বুঝ না কেনো তুমি (মিলি)

আরমান নিজেকে মিলির থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রেগে বলল

-তোমার এসব নেকামি দেখতে আসেনি আমি, আমি তোমার বাপের টাকায় খাই ও না পড়িও না তাই ভয়ও পাই না তোমার এসব আজাইরা হুমকির। আর হ্যাঁ প্রমির সাথে আর লাগতে এসো না এটাই ফাস্ট আর এটাই লাস্ট যেনো হয়! এরপর যদি এমন কিছু দেখি তোমাকে ছেড়ে দিবো ভেবো না এটা ফাস্ট টাইম বলে কিছু বললাম না মাইন্ড ইট! (আরমান)।।। আসল লেখিকা-তাসনিম তামান্না।।।

কথাগুলা বলে আরমান প্রমিকে নিয়ে চলে আসলো একটা ফাঁকা ক্লাস রুমের পিছনে পিছনে মিলন, সাদিক, নয়ন, কণা ও আসলো। আরমান প্রমিরকে একটা বেঞ্চে বসিয়ে রেগে তাকিয়ে বলল

-এই মেয়ে তোমার কোনো কমন সেন্স নেই! একটা মেয়ে এসে চেনা নেই জানা নেই তোমাকে ধাক্কা মারলো আর তুমি কিছু বললেও না? (আরমান)

প্রমি ড্যাবড্যাব করে আরমানের দিকে তাকিয়ে আছে। মুখের কথা যেনো হারিয়ে ফেলছে। তাই বোকার মতো প্রশ্ন করে বসলো

-কি বলতাম (প্রমি)

আরমান বিরক্তি লুক দিয়ে বলল

-আমার মুন্ডু (আরমান)

প্রমি কিছু না বুঝেই বলল

-ওওওও (প্রমি)

ওদের কথার ধরণ শুনে সাদিক, মিলন, নয়ন, কণা ফিক করে হেসে দিলো। আরমান ওদের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল

-ফাস্ট এডবক্স আন (আরমান)

-আমি আনছি (মিলন)

মিলন হাসতে হাসতে ফাস্ট এডবক্স আনতে গেলো। আরমান রাগী চোখে তাকাতেই ওরা তিনজন হাসি বন্ধ করে দিলো। প্রমি শুধু বোকার মতো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।

-এই এভাবে তাকিয়ে তাকিয়ে কি দেখছো? কিছু বুঝো না তুমি? আগে জানতাম গ্রামের মেয়েরা কম বুঝে এখন দেখছি একটুও বুঝে না পুরাই মেড (আরমান)

আরমানের কথা শুনে প্রমি কষ্ট পেলো কিন্তু কিছু বললো না যাদের খাচ্ছে, যাদের পড়ছে, তাদের উপরে গলা বাজি করবে কি ভাবে? এতোটুকু বুঝে প্রমি। সারাজীবন-ই শুধু অন্যের ঘাড়ে বসে খেয়েছে নিজের কিছু নাই বলে খুব আপসোস হয় প্রমির। এরি মাঝে মিলন ফাস্ট এডবক্স নিয়ে হাজির হলো। সেটা নিয়ে আরমান প্রমির হাতটা নিয়ে তুলা দিয়ে সেভলোন লাগিয়ে দিয়ে ওয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিলো। প্রমি ব্যাথায় চোখ মুখ কুচকে ফেললো। আরমান সেদিকে তাকালো একবার।

-আর ক্লাস করা লাগবে না চলো বাসায় (আরমান)

প্রমি মাথা নাড়িয়ে ওঠে দাড়ালো।

-চল আমরাও ক্লাস করবো না (সাদিক)

-হ্যাঁ চল (মিলন)

-আচ্ছা আমিও ক্লাস করবো না (কণা)

-চড় খাইছিস না খাবি? যা ক্লাসে যা! (নয়ন)

কণা আর নয়নের বাসা থেকে বিয়ে ঠিক। নয়েনর বাবা আর কণার বাবা বন্ধু হওয়ার ওদের সম্পর্ক আরো ভালো করার জন্য ওদের এনগেজমেন্ট করিয়ে রাখছে। নয়নের পড়াশোনা শেষ করো অফিসে বসলে ওদের বিয়ে হবে। নয়ন চাই না কোনো কারণে কণার পাড়াশোনার ক্ষতি হোক। তাই তো বেশির ভাগ সময় ধমকের উপর রাখে। এটা কণাও জানে তাই কিছু না বলে ক্লাসে চলে গেলো। কণা এবার অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্রী।
.
.
আরমান বাইক চালাছে আর প্রমি পিছনে বসে। হাতের কাটা জায়গাটা দেখে মুখে একটা তাড়ছিলের হাসি ফুটিয়ে নিজ মনেই বলল ‘কোথাও সুখ নেই তোর সুখ জিনিসটা কখনো উপলব্ধি করতে পারলি না সারাজীবন অন্যের দূর ছাই আর মার খেয়েই তোর জীবন যাবে, আচ্ছা তুই কি কখনো কোনো ভালো কাজ করিস নি যার জন্য একটু সুখ পাবি, তুই বড্ড সুখ, ভালোবাসা কাঙ্গাল রে প্রমি সে জন্যই তোর কপালে সুখ নাই আর কখনো হবেও না’ কথাগুলো ভেবে দীর্ঘ শ্বাস নিলো প্রমি। কিছু কথা থাকে যেগুলো ভেবে শুধু দীর্ঘ শ্বাস নেওয়া ছাড়া আর কিছুই থাকে না। যার মা নেই বাবা থেকেও নেই তার মতো অসহায় কেউ নাই। তারা না পারে মন খুলে কারোর সাথে কথা বলতে আর না পারে সহ্য করতে।

প্রমি বাসায় গিয়ে গোছল করে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিচে এসে দেখে আশা টেবিলে খাবার গোছাছে প্রমিও গিয়ে কাজ করতে লাগলো।

-প্রমি তোকে এতো পাকামি করতে কে বলেছে বলবি একটু? (আশা)

-পাকামি কখন করলাম শুধু তো কাজ করছি তুমি একা একা কাজ করছো কষ্ট হচ্ছে বলতো তোমার(প্রমি)

-হ্যাঁ রে আজ কলেজ কেমন করলি? (আশা)

প্রমির কলেজের কথা মনে পড়তেই মুখ মলিন হয়ে যায়। মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলে বলল

-হ্যাঁ অনেক ভালো লেগেছে মামনি (প্রমি)

আশা প্রমির হাতের দিকে চোখ যেতেই বলল

-প্রমি তোর হাতে কনুইয়ের নিচে ওটা কি হইছে ওমা কতটা কেটে গেছে দেখি জামার হাত উঠা এতোটা কেমন করে কাটলি ইশ (আশা)

প্রমি আশাকে ব্যস্ত হতে দেখে বলল

-ও কিছু হবে না মামনি একটু কেটেছে সেরে যাবে (প্রমি)

আশা রাগী চোখে তাকিয়ে বলল

-কেমন করে কাটলি (আশা)

প্রমি চোরের মতো এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল

-ইটের সাথে লেগে পড়ে গেছিলাম (প্রমি)

আরমান নিচে এসো প্রমির মুখে মিথ্যা শুনে ওর দিকে তাকালো কিন্তু কিছু বললো না। এটা ব্যাপারটা আশা, আসাদকে জানালে তুলকালাম করে ফেলবে তাই না জানানোই শ্রেয় মনে করলো আরমান তাই আসার সময় প্রমিকে কথাটা বলেছিল।

#চলবে
#Tasnim_Tamanna
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠন মূলক কমেন্ট করবেন রিচেক করি নাই]