সাঁঝেরবেলায় তুমি আমি পর্ব-০৯

0
462

#তাসনিম_তামান্না
#সাঁঝেরবেলায়_তুমি_আমি
#পর্ব_৯

🍁🍁🍁

আজ সবাই মিলে ওরা কিছুক্ষণ আগে শপিং করতে এসেছে। সবাই যে যার মতো শপিং করছে বর, বউয়ের ড্রেস ওয়াডার দিয়েছে। নিশি আর প্রমি ড্রেস দেখছিলো তখন আরমান প্রমির পিছনে এসে দাড়ায় প্রমি সেটা না দেখলেও নিশি সেটা দেখে ভ্রু নাচিয়ে বলল

-কি হইছে তুই মেয়েদের শপে কেন? কোনো লাভ কেস আছে নাকি থাকলে নিশ্চিতে বলতে পারিস তার সাথে গিফট পছন্দ করে দিবো! (নিশি)

নিশির কথা শুনে প্রমি পিছনে ফিরে আরমানকে দেখে। আরমান বিরক্তি নিয়ে নিশির মাথায় চাটি মেরে বলল

-এইটুকু বয়সে তুই কিন্তু বড্ড পেকে গেছিস? (আরমান)

-এইটুকু বয়স মানে ১৭+ আর কয়দিন পর আঠারোতে পড়বো আমি এখন আর ছোট নেই বুঝলি ভাইয়া (নিশি)

-হ বুঝছি। আর আমি এখানে ফালতু কাজে আসিনি। চল প্রমি (আরমান)

-চল প্রমি মানে কি? প্রমি মানে আপু কই যাবে? (নিশি)

-প্রমির সাথে আমার দরকার আছে! (আরমান)

-কি দরকার? (নিশি)

-তোকে বলবো কেনো? চুপচাপ নিজের কাজ করতে লাগ চলো (আরমান)

কথাটা বলে আর এক সেকেন্ড ও দেরি করলো না আরমান। প্রমির হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। প্রমি কিছু বুঝতে পারছে না আরমান কি করতে চাইছে। নিশি আরমান আর প্রমির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি কেটে নিজের কাজে মন দিলো।
.
লিফটে এসে নিজের কৌতূহল দমাতে না পেরে প্রমি এবার আরমানকে প্রশ্নটা করেই ফেললো

-কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে? (প্রমি)

আরমান ফোন টিপতে টিপতে নিরলিপ্ত গলায় বলল

-তোমাকে মার্ডার করতে (আরমান)

আরমানের কথাটা শুনে প্রমি চমকে উঠলো। প্রমি ভয়ার্ত চোখে আরমানের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিললো। আরমান প্রমির মুখ ফোনের স্কিনে আবছা দেখে সরাসরি তাকিয়ে হু হা করে হেসে উঠলো। প্রমি আরমানের হাসি দেখে বেকুব হয়ে গেলো। আরমান হাসি কন্ট্রোল করে বলল

-লাইক সিরিয়াসলি! তুমি এটা সত্যি মনে করে ভয় পাচ্ছো? (আরমান)

বলে আরমান আবারও হাসতে লাগলো। প্রমি ফ্যালফ্যাল করে তাকালো আরমানের দিকে! লিফট খুলতে আরমান প্রমির হাত ধরে আবার হাটা দিলো প্রমিও আর কিছু বললো না আরমানের সাথে চুপচাপ হাঁটতে লাগলো।আরমান আর প্রমি রাস্তা পাড় হয়ে ফোন সপে ডুকলো। প্রমি বুঝতে পারলো আরমন ওর ফোন কিনে দেওয়ার জন্য আনছে। প্রমি এবার নিজের অজান্তেই আরমানের হাত টেনে ধরে আরমানকে নিচু করে কানের কাছে গিয়ে নিচুশ্বরে বলল

-আপনি এখানে এসেছেন কেনো? আমার ফোন টোন লাগবে না? চলুন! (প্রমি)

আরমানের দৃষ্টি নিচের দিকে দেখে প্রমিও দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালো। প্রমি হাতের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে হাত সরিয়ে নিলো আর মানে বাহু থেকে। আরমান সেটা দেখে গম্ভীর কণ্ঠে বলল

-তোমার কাছে আমি কিছু শুনতে চাই নি! এতোদিন টাইম পাই নি তাই কিনে দেই নি এখন টাইম পাইছি এখন কিনবো (আরমান)

প্রমি আরমানের গম্ভীর কণ্ঠে কথা বলতে দেখে আর কিছু বললো না।
.
ফোন কিনে নিয়ে বাইরে আসতেই আরমানের ফোনে কল আসলো। প্রমি আনমনে হাটায় রাস্তায় চলে আসে প্রমি খেয়াল করে নি। আরমান প্রমির অবস্থা দেখে মুখ দিয়ে কথা বের করতে পারলো না দৌড়ে এসে প্রমির হাত ধরে টান দিয়ে বুকে আনলো। প্রমি হতভম্ব হয়ে গেলো। প্রমি আরমানের স্পন্দন স্পষ্ট শুনতে পারছে। কয়েক সেকেন্ড নিজের অবস্থা বুঝতে পেরে আরমানের থেকে সরে আসলো প্রমি। প্রমির মুখে ছড়িয়ে পড়লো লাল আভা। প্রমি লজ্জা, সংকোচ নিয়ে আরমানের দিকে তাকালো আরমানের মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে কতটা ভয় পেয়েছে। আরমানের ভয়ার্ত মুখটা আস্তে আস্তে বদলে রাগী লাল চোখে বলল

-ইউ স্টুপিট মেয়ে দেখে চলতে পারো না আর একটু হলে কি হয়ে যেতো যানো তুমি! কোনো কমসেন্স নাই তোমার রাস্তা পাড় হতে গেলে দু’পাশে দেখে পাড় হতে হয়! বাচ্চা তুমি কিছু বুঝো না? (আরমান)

প্রমি চুপসে গিয়ে মাথা নিচু করে নিলো। আরমান বার কয়েক শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলল

-আব সরি! আসলে বেশি হাইপার হয়ে গেছিলাম! (আরমান)

প্রমি কিছু বললো না আগের মতোই রইলো। আরমান প্রমির হাত ধরে নিয়ে গেলো শপিং মলে।
.
.
সন্ধ্যায় আরমান সাব্বিরের রুমে শুয়ে আছে। সাব্বির ফ্রেশ হতে গেছে। শপিং শেষ করে সাব্বির (পেশায় একজন ডক্টর তাই) হসপিটালের চলে গেছিলো আর সন্ধ্যা দিকে বাসায় আসছে। সাব্বির ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে আরমান শুয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে কি যেনো ভাবছে।

-কি রে কি এতো ভাবছি? মনে হচ্ছে দিলমে লাড্ডু ফুটা! (সাব্বির)

আরমান প্রমির কথা ভাবছিলো সাব্বিরের কথায় ভাব না থেকে বেরিয়ে এসে বলল

-ওমন কিছুই না (আরমান)

-আমার কাছ থেকে লুকিয়ে লাভ নাই। আমি কিন্তু সব দেখছি! (সাব্বির)

আরমান সাব্বিরের কথার মানে বুঝতে না পেরে বলল

-মানে? (আরমান)

সাব্বির তোয়ালেটা রেখে আরমানের পাশে বসে আরমানের বাহুতে চাপড় মেরে বলল

-কিছু বুঝো না তুমি ছোট বাচ্চা! রাস্তায় জড়িয়ে ধরা, লুকিয়ে লুকিয়ে আড়চোখে দেখা সব বুঝতে পারছি আমি (সাব্বির)

আরমান চোরের মতো এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল

-তেমন কিছু না ভাইয়া (আরমান)

-আর ঢং না করে ফটাফট বলে ফেলতো এসব কবে থেকে চলছে, বললে তোদের একটা হিল্লে হয়ে যেতে পারে (সাব্বির)

-কিসের হিল্লে হয়ে যাবে? (আরমান)

-এই যে আমার বিয়ের সাথে সাথে তোর টাও দিয়ে দিবো (সাব্বির)

-এক্কেবারে ফালতু হিল্লে (আরমান)

-আচ্ছা বল কেমনে কি? কবে থেকে বলা শুরু কর (সাব্বির)

আরমান একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলল

-জানি না ভাইয়া, আমার হঠাৎ কি হলো, সেদিন রাত থেকে যে কি থেকে কি হয়ে গেলো বুঝতেই পারছি না শুধু ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে মন চাই (আরমান)

-মানে কি ভাই? কি বলতাছিস তুই একটু ভালো করে গুছিয়ে বল (সাব্বির)

-এখানে আসার সময় কখনো আমি ড্রাইভ করছি তো কখনো আব্বু ড্রাইভ করছে। তো আম্মু ঘুমিয়ে পড়ছিলো আর আব্বু ড্রাইভ করছিলো আমি ফ্রোন সিটে বসে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছিলাম। হঠাৎ যখন প্রমির দিকে চোখ গেলো সে দিন আমি দ্বিতীয় বারের মতো ওকে দেখে থমকে গেছিলাম। চাঁদের স্নিগ্ধ আলো কখনো বা পাতার ছায়ার ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলো কি যে অপরূপ মায়ার সৌন্দর্য্যেরের মধ্যে তখন হারিয়ে গেছিলাম। সেই মায়া ভরা মুখ থেকে বের হতে পারছি না শুধু তাকিয়ে থাকতে মন চাইছে। আগে কখন ওভাবে প্রমিকে দেখা হয় নি কেনো জানি এখন মন চাই ওকে দেখতে। মাঝে মাঝে ওর মুখে মায়া যেনো উপচে পড়ে চোখ ফেরানো বড়দায় হয়ে যায় (আরমান)

আরমান একটানা কথা গুলো বলে দম নিলো সাব্বির অবাক হয়ে আরমানের কথা শুনেছিলো আরমানের কথা শেষ হতেই অবাক নিয়েই বলল

-ওরে বাস এতো দেখছি তুই শুধু প্রেমেই পড়িস নি রীতিমতো প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস (সাব্বির)

আরমান হাসলো। তারপর বলল

-হুম আমারটা তো শুনলি তা তুই যে তলে তলে ট্রেন চালাস আমাকে তো কখনো বলিস নি হুহ কেনোই বা বলবি আমি তোর কে হা (আরমান)

-আর বলিস না আমাদের প্রেমটা খুবই স্বাভাবিক প্রথমে বন্ধুতো তারপর কিভাবে কিভাবে জানি হয়ে গেলো (সাব্বির)

-থাক থাক হইছে আর লজ্জা পেতে হবে না মেয়েদের মতো (আরমান)

-আচ্ছা ছাড় এসব বাদ দিয়ে কাজের কথায় আই হাতে কিন্তু আর বেশি সময় নাই তাড়াতাড়ি সব কাজ শেষ করতে হবে? (সাব্বির)

-হ্যাঁ চল কিছু লিস্ট করতে হবে (আরমান)
.
.
-আপু তুমি কি হ্যা? আমার থেকে বড় হয়ে ফোন চালাতে পারো না (নিশি)

প্রমি ঠোঁট উল্টে বাচ্চাদের মতো দু’দিকে মাথা নাড়ালো। সেটা দেখে নিশি বলল

-এমন করো কেনো আরো কিউট লাগে (নিশি)

প্রমি হাসলো শুধু মুখে কিছু বললো না।
#চলবে
#Tasnim_Tamanna

[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠন মূলক কমেন্ট করবেন।]