সাঁঝেরবেলায় তুমি আমি পর্ব-০১

0
998

#সাঁঝেরবেলায়_তুমি_আমি
#সূচনা_পর্ব
#Tasnim_Tamanna

🍁🍁🍁

-এই মেয়ে কে তুমি? আমাদের বাসায় কি করো? (আরমান)

প্রমির এমনিতেই সামনে এতোগুলো ছেলেকে দেখে বেশ ঘাবড়ে আছে আর আরমানের প্রশ্ন শুনে কি বলবে বুঝতে পারছে না ভীতু দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে নিলো। প্রতিটা ছেলে প্রমির দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রমি অসস্তি লাগছে। প্রমি কথা বলছে না দেখে আরমান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে ধমকে প্রশ্ন করলো

-এই মেয়ে, এই তোমাকে বলছি কথা বলতে পারো না নাকি শুনতে পারছ না তোমাকে একটা প্রশ্ন করছি এন্সার দিচ্ছ না কেনো (আরমান)

আরমানের ধমক দিয়ে কথা বলায় প্রমি কেঁপে উঠল ঢোক গিলে কাপাকাপা গলায় বলল

-আ আমি মা মামনির কা কাছে যাবো (প্রমি)

বলে সবার পাশ কাটিয়ে একছুটে নিচে চলে গেলো। প্রমির যাওয়ার পানে সবাই চেয়ে রইলো। প্রমি দৃষ্টির বাইরে চলে যেতেই ৩ জোড়া প্রশ্নসূচক দৃষ্টি আরমানের দিকে তাকিয়ে রইলো

-এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো আমার কি রূপ বেয়ে বেয়ে পড়ছে (আরমান)

নয়ন চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো

-তুই সত্যি জানিস না এই মেয়েটা কে? (নয়ন)

নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে মিলন বলল

-আরে ও জানে নাইলে এতো তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে চাই আমি সিউর তুই কিছু করতেছিস আর আমাদের কাছ থেকে লুকাছিস (মিলন)

-আরে আমি সত্যি জানি না মেয়েটা কে আর আমি বাসায়ই ছিলাম এই এক সপ্তাহ আর তোদের কাছ থেকে লুকানোর কি আছে ভাই আম্মু বাসায় আসতে বলছে তাড়াতাড়ি সেজন্য আসছি (আরমান)

ওদের কথার পিঠে সাদিক বলল

-যাই বলিস মেয়েটা কিন্তু খুব ভয় পাইছে মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল আরমান তুই যে ভাবে ধমক দিলি আমার আগে ভয় লাগতো এখন অভাস হয়ে গেছে কিন্তু বাচ্চা মেয়েটা বেচারির…. (সাদিক)

-মেয়েটা বিনা আটা ময়দায় থুক্কু মেকাপেই কিউট আছে আমাদের আরমানের সাথে ভালোই মানাবে মানে ভাবি হিসেবে (মিলন)

-একদম উল্টোপাল্টা কথা বলবি না সব মেয়েগুলা আমার গলায় ঝুলিয়ে বলিস ভাবি বিয়াদ্দপ (আরমান)

-তো আর কি করবো বল সব মেয়েগুলো তোর দিকেই তাকিয়ে থাকে আমাদের দিকে ওদের চোখ পড়ে না (নয়ন)

-কণাকে বলতে হবে দেখছি একটা নিয়ে তার বফের মন ভরে না আরো চাই তার (সাদিক)

-ওরে শালা তাহলে তুই খবর সাপলাই দিস আজ তোর একদিন কি আমার একদিন… (নয়ন)

কথাটা বলে নয়ন সাদিকের উপর ঝাপিয়ে পড়ে মারপিট করতে লাগলো। মিলন আর আরমান ও যোগ দিলো এর মধ্যে প্রমির কথা ওদের মাথা থেকে বেরিয়ে গেলো।
.
.
প্রমি নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বুকে হাত দিয়ে হাঁপাতে হাপাতে বেড সাইডের পাশ থেকে পানির গ্লাস নিয়ে ঢক ঢক করে খেয়ে নিলো। কখনো এতোগুলো ছেলের মাঝে যায় নি প্রমি বাইরের ছেলেদের সাথে তেমন কথাও বলতো না। প্রথমে ডাকাত দল ভেবে ভয়ে গুটিয়ে ছিলো কিন্তু আরমানকে দেখার পর ওর ভুল ধরনা বুঝতে পারলো। ভয়ের কারণে আরমানের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি। প্রমি তখনকার সময়ের কথা আর না ভেবে কিচেনে চলে গেলো।
.
★★★
.
#ফ্ল্যাসব্যাক

গোধূলি বেলা সাদে দাড়িয়ে উপভোগ করছিলো প্রমি। আর নিজের ভাগ্য চক্র কথা ভাবছিলো আজ কোথা থেকে কোথায় চলে এলো? যদি আজ ওর মা বেঁচে থাকতো তাহলে জীবনটা অন্য রকম হতো আর পাঁচটা মেয়ের মতো ওর জীবনটাও সুন্দর স্বাভাবিক হতো হেসে খেলে বেড়াত। মা বেঁচে থাকলে বাবাও পাল্টে যত না। মা-বাবার কাছে হুটহাট করে আবদার করতো ভাবতে ভাবতে চোখের কোনে পানি জমলো প্রমির সেটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মুছে নিলো। ভাগ্য চক্রের মতো ঘুরতেই থাকে।

তখনই কাণে কানে ভেসে আসলো কয়েকটি পায়ের শব্দ, আর কথার আওয়াজ প্রমি মাথার ওড়নাটা টেনে নিয়ে পিছনে ফিরে নয়ন,মিলন,সাদিকে দেখে ভয় পেয়ে যায় এই বাড়িতে আজ তিনদিন আসছে প্রমি নিজের বড়মামাকে ছাড়া আর কোনো ছেলেকে দেখেনি এবাড়িতে আর ও জানে ওর একটা মামাতো ভাই আছে তার নাম আরমান সাথে ছবিও দেখছে বাসার অনেক জায়গায় আরমান সহ মামা, মামনির ছবি টানানো আছে আরমানের সম্পর্কে অনেক কিছু শুনছে ও। ওরা তিনজন অবাক হয়ে যখন প্রমির দিকে তাকিয়ে ছিলো আরমান ফোন টিপতে টিপতে ওদের পাশে এসে দাড়িয়ে ফোনের দিকে তাকিয়েই বলল

-কি হলো স্ট্যাচু হয়ে গেলি কেনো ক….(আরমান)

আরমান আর কিছু বলতে পারলো না প্রমির দিকে চোখ যেতেই আরমান থমকে গেলো। কিছুক্ষণ পর প্রমিকে কি প্রশ্ন করলো জানেনই তো।

#বর্তমান

প্রমি কিচেন এসে আরমানের মা (আশা) প্রমির মামনির পাশে এসে দাড়িয়ে আশার কাজ দেখতে লাগলো এই তিনদিনে আশার সাথে ফ্রী হয়ে গেছে প্রমি।

-তুই আবার এখানে আসছিস কেনো তোকে না বললাম টিভি দেখতে (আশা)

-টিভি দেখতে ভালো লাগছিলো না মামনি তাই ছাদে গেছিলাম কিন্তু….(প্রমি)

-কিন্তু কি…(আশা)

-আমি তোমার সাথে থাকি একা ভালো লাগছে না আর তোমাকে একটু সাহায্য ও করি (প্রমি)

-মার একটার মাটিতে পড়বে না (আশা)

-এমন করো কেনো দেখো তো তোমার কত কষ্ট হচ্ছে রুটি বেলছো ছেঁকছ ও একা (প্রমি)

-শোন আমাকে দেখলে বয়সক মনে হলেও আমি মটেও বয়সক নই আমার গায়ে এখনো শক্তি আছে আর আমি এটা প্রতিদিনই করি আমার অভাস আছে (আশা)

-আচ্ছা হইছে (প্রমি)

বলে জোর করে কাজ করে দিতে লাগলো। আশার স্বামী আসাদ ডায়বেটিসের রুগি তাই আশা প্রতিদিন নিজের হাতে রান্নার কাজ গুলো করেন আর বাকি কাজগুলো কাজেরলোক করে দেই। কাজের মধ্যে ওরা দুজন গল্প করতে লাগলো।
.
এদিকে আরমানের ফেন্ডরা কিছুক্ষণ থেকে চলে গেছিলো। আরমান নিজের রুমে থেকে সন্ধ্যার সময় নিচে নেমে এলো। তখন প্রমি চা আর বিস্কিট খাচ্ছিলো আর টিভিতে মোটু-পাতলু কার্টুন দেখছিল কিছুক্ষণের জন্য নিজের কষ্ট গুলো ভুলে খিলখিল করে হাসছিলো প্রমি, ফাঁকা শব্দহীন বাড়িতে হাসির শব্দ যেনো দেওয়ালে বারি খেয়ে ফিরে আসছে। আরমান সেদিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে এগিয়ে এসে প্রমির পাশে দাঁড়িয়ে প্রমির বাচ্চামো গোলাপি ঠোঁটের হাসি দেখছিলো। প্রমি নিজের পাশে কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে আশা মনে করে বাচ্চাদের মতো করে বলল

-মামনি মামনি দেখো মোটুর পেটটা কত বড় মনে হচ্ছে ওর পেটে বাবু আছে হা হা হা আচ্ছা সত্যি কি বাবু আছে নাকি হওয়া হি হি হি সিংগাড়া দেখছো একবারে কতগুলা করে খাই মনে হয় রাক্ষস হি হি তুমি ওমন করে খেতে পারবে? (প্রমি)

বলে মাথা উঁচু করে রিয়াকশন দেখার জন্য কিন্তু আরমানকে দেখে লাফিয়ে উঠে দাড়িয়ে মাথার ওড়না দিয়ে নেই। আরমান গলা ঝেড়ে বলল

-এই তুমি কে বলো তো? তোমার নাম কি? (আরমান)

প্রমি কাঁপা গলায় বলল

-প্রমি, পরিনীতা প্রমি (প্রমি)

-তা তুমি এখানে কি করো? আর আম্মু কই হ্যা?আম্মু আম্মুহ আম্মুউউউ (আরমান)

প্রমি ভয় পেয়ে যায় আরমানের সম্পর্কে প্রমি আশার কাছ থেকে শুনেছে আরমান রাগি বাট সহজে রাগে না। প্রমি নিজের মনে ভাবছে কিছু ভুল করেছে কি না কিন্তু কিছুই পেলো না ওর ভাবনার খাতা শুন্য তাই চুপচাপ কিছু না বলে ভয়ে ভয়ে দেখতে লাগলো আরমান কি করে।

আশা নিজের রুমে সন্ধ্যার কিছু মেডিসিন ছিলো সে গুলো খেতে গিয়েছিলো আরমানের ডাকে এসে বিরক্ত হয়ে বলল

-কি হইছে ষাঁড়ের মতো চেচাচ্ছি কেনো? আর ছাগলের মতো ম্যা ম্যা করছিস কেনো? (আশা)

আশার কথা শুনে প্রমি মুখ টিপে হাসলো আরমান সেটা দেখে দাঁতে দাঁত চেপে বলল

-কি উল্টোপাল্টা বলছো তাও একটা বাইরের মেয়ের সামনে? আর ইউ ম্যাড আম্মু (আরমান)

-সাট আপ আরমান কাকে কি বলছো তুমি আসো আমার সাথে… প্রমি মা তুই কার্টুন দেখ আমরা আসছি (আশা)

প্রমির আরমানের কথায় খারাপ লাগলো কিন্তু কিছু বললো না কি ই বা বলবে ও তো এবাড়ির আশ্রিতা মাত্র নিজের বলে কোনো বাড়ি জুটেই নি কপালে ইনফেক্ট নিজের বলে কিছুই নেই ওর প্রমি ছোট শ্বাস ফেলে মাথা নাড়ালো। আশা আরমানকে নিয়ে নিজের রুমে হাটা দিলো।

আরমান ও আর কিছু বললো না আশা যখন রেগে যায় তখন তুমি করে বলে সেটা বুঝতে পেরে বরাবরের মতো চুপ হয়ে গেলো আরমান।

#চলবে