সাঁঝেরবেলায় তুমি আমি পর্ব-০২

0
617

#তাসনিম_তামান্না
#সাঁঝেরবেলায়_তুমি_আমি
#পর্ব_২

🍁🍁🍁

-হোয়াট আম্মু তুমি ঔ বাড়িতে গিয়েছিলে কেনো আর আব…..(আরমান)

আরমানের কথা শেষ করতে না দিয়ে আশা রেগে ধমক দিয়ে বলল

-চুপ আমার পুরো কথা না শুনে ষাঁড়ের মতো চেচাচ্ছিস কেনো বিয়াদ্দপ (আশা)

আরমান তপ্তশ্বাস ফেলে বলল

-আচ্ছা বলো (আরমান)

-কি বলবো হ্যাঁ আমার কথার মাঝে একটা কথাও বলবি না (আশা)

আরমান আর কিছু বললো না। আশা বলতে শুরু করলো

-তুই বন্ধুদের সাথে ট্যুরে গিয়েছিলি তাই ভাবছিলাম কি করবো তোর বাবাও বাসায় থাকতো না তারপর তুই যাওয়ার দু’দিন পরে তোর দাদুবাড়ি থেকে ফোন আসলো তোর ছোটদাদি ফোনটা করেছিলো লুকিয়ে খুব কাঁদছিলো জানিস তোর চাচুর (আজাদ) সাথে আমাদের সম্পর্ক ভালো নাই থাকলো কিন্তু তোর ছোটদাদি মানুষটা তো ভালো তোর দাদু দাদি মারা যাবার পর তো তোর বাবাকে সেই মানুষ করছে…(একটু থেমে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলল) ফোনে প্রমির কথা বলে প্রমির নাকি অনেক বিপদ। প্রমিকে টুম্পা (চাচি) টাকার লোভে একটা বুড়া লোকের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে। আমি বুঝতে পারছিলাম না প্রমিকে? তখন তোর ছোটদাদি বলল প্রমি পপির মেয়ে আমার বুকটা কেঁপে উঠল! পপি যে আমাকে আর তোর বাবাকে একসাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য অনেক সাহায্য করেছে ও আমার শুধু ননদ নই বোনের মতো আমাকে সাপোর্ট করেছে কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না তোর বাবা সবটা জানিয়ে সেদিনই রওনা দি ও বাড়ি সকালে গিয়ে পৌছে দেখি….

#ফ্ল্যাসব্যাক

-মামনি প্লিজ আমাকে আর মেরো না আমি সব কাজ করে দিবো আর কোনো কাজে ভুল হবে না দয়া করো মামি (কাঁদতে কাঁদতে বলল প্রমি)

কিন্তু টুম্পার মায়া হলো না চুলার ওপরের তরকারি থেকে গরম খুন্তিটা প্রমির জামার ওপর দিয়ে চেপে ধরে প্রমি জোরে চিৎকার দিয়ে ওঠে। চাঁদনী বেগম (ছোটদাদি) আটকাতে চাইছে কিন্তু ওনি উTamanna
ছে না ওনাকে বেঁধে রাখছে টুম্পা আশার কাছে ফোন দিয়েছিলো বলে তাই বসে কাঁদছে আর বিলাপ করছে। আশা এসে এসব দেখে দৌড়ে গিয়ে টুম্পার থেকে প্রমিকে ছাড়িয়ে নিয়ে বুকে জড়িয়ে নেই আসাদ অবাক হয়ে যায় টুম্পা এতোটা খারাপ হতে পারে আসাদের ধরনার বাইরে ছিলো আশা রেগে বলল

-টুম্পা একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে এমন ব্যবহার তুমি কেমন করে করতে পারছো তোমার মনে কি দয়া মায়া নাই (আশা)

টুম্পা আশা আর আসাদকে দেখে অবাক+ভয় পেয়ে যায় পরক্ষণে রেগে বলে উঠলো

-আপনারা এখানে কি করতে আইছেন? (টুম্পা)

টুম্পার এমন কথায় আশা কি বলবে খুঁজে পেলো না তাই চুপ করে রইলো। আশাকে চুপ থাকতে দেখে আসাদ বলল

-আমার বাড়ি কখন আসবো কখন জাবো সেটার কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নয় (আসাদ)

এবার চুপ হয়ে যায় সব সম্পত্তি লিখে নিতে পারলেও এবাড়ির অর্ধেক সম্পত্তি এখনো আসাদের নামে। আশা প্রমিকে ঘরে নিয়ে গিয়ে শুয়িয়ে দিলো। আসাদ চাঁদনী বেগমের হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিলো চাঁদনী বেগম আসাদকে পেয়ে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেই নিজের পেটের ছেলের চেয়ে এই ছেলের প্রতি টান অনুভব করে চাঁদনী বেগম কিন্তু আজাদের সরযন্ত্রে আসাদ এখান থেকে গিয়ে শহরে ব্যবসা শুরু করে আস্তে আস্তে সাফল্য অর্জন করে গাড়ি বাড়ি সব কিনেন চাঁদনী বেগমকে নিয়ে যেতে চাইলে তিনি নিজের স্বামীর ঘর থেকে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কোথাও যাবেন না বলে আসাদ আশা জোর করেও তাকে নিয়ে যেতে পারে নি।
.
প্রমি উবুড় হয়ে শুয়ে আর ব্যাথায় চোখের পানি ফেলছে আশা পোড়া আর কাটা জায়গায় গুলো অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিচ্ছে চাঁদনী বেগমের বুকটা ফেটে যাচ্ছে মা হারা নাতনির এমন অবস্থা দেখে প্রমির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর চোখের পানি ফেলছে চাঁদনী বেগম। প্রমির আস্তে আস্তে চোখ লেখে আসলো তলিয়ে গেলো ঘুমের রাজ্যে। আশা বুদ্ধি করে ব্যাথার ঔষধের সাথে তখন ঘুমের ঔষধ টাও দিয়ে ছিলো তখন। প্রমি ঘুমিয়ে যাওয়ার পর আশা চাঁদনী বেগমকে বলল

-চাচিমা প্রমিকে নিয়ে আপনার ছেলে আজই রওনা দিতে চাইছে আপনার কি কোনো আপত্তি আছে (আশা)

-আজই জাইবা? আজ থেইক্কা কাল জাইও (চাঁদনী)

-না চাচিমা আপনার ছেলের অফিস আছে আর আরমানও বাড়ি নাই যেতে হবে (আশা)

-জেডা ভালা বুজো সেইডা কর শুধু আমার নাতিনডারে ভালা রাইখো বউমা ওরে এতোদিন মেলা কষ্ট করে মানুষ করছি ওরে দেইখা রাইখ তোমার ওপরে আমার বিশ্বাস আছে (চাঁদনী)

-চাচিমা দোয়া করবেন আমাদের জন্য (আশা)

-হ্যাঁ মা সেইডা সব সময় করি (আশা)

সন্ধ্যার দিকে টিকিট কেটে ট্রেনের আসাদ প্রমির চাঁদনীকে ছেড়ে যাবে না বলে কান্নাকাটি জুড়ে দিয়ে ছিলো আশা অনেক বুঝিয়ে নিয়ে আসছে। এর মধ্যে টুম্পা আর আজাদ অনেক চেষ্টা করছে প্রমিকে যেনো না নিয়ে যেতে পারে কিন্তু পারে নি। প্রমিকে আনার সময় ট্রেনেই অনেক জ্বর আসছিলো অনেক কষ্টে বাসায় নিয়ে আসছে।

#বর্তমান

আরমান আশার পুরা কথা শুনে থ বনে যায় একটা মেয়ে কতই না কষ্ট পেয়েছে। আরমান এবার আশাকে প্রশ্ন করলো

-টুম্পা চাচি কেনো মারছিলো প্রমিকে (আরমান)

-তরকারিতে লবণ বেশি হয়ে গেছিলো বলে (আশা)

-ব্যস এটুকুর জন্য (আরমান)

-হুম তাইলে ভাব মেয়েটা এইটুকু বয়সে কত কিছু সহ্য করছে (আশা)

-আচ্ছা পপি মানে ফুপি কেমন করে মারা গেছিলো আর কবে মারা গেছিলো (আরমান)

-পাঁচ বছর আগে যখন প্রমি সেভেনে পড়ত আর কেমন করে মারা গেছিলো সেটা চাচিমা বলতে পারে নি প্রমি জানে ওর কাছে শুনবো পরে (আশা)

-ওহ (আরমান)

-হুম আর শোন মেয়েটাকে কাল তোর সাথে কলেজে নিয়ে যাস ওকে ভর্তি করে দিস আর ওর জন্য শপিং করে দিস আর…..(আশা)

এই টুকু বলে থেমে গেলো আশা। আরমান ভ্রু কুচকে বলল

-আর কি? (আরমান)

-আর আর আর চাইলে প্রেমও করতে পারিস আমি মাইন্ড করবো না কেননা প্রমি মেয়ে হিসেবে পার্ফেক্ট (আশা)

কথাটা বলে মুখ টিপে হাসলো আশা। আরমান বিরক্তি নিয়ে বলল

-মিসেস আশা আপনি আমার আম্মু হন আম্মু হয়ে এসব কি কথা বলেন একটুও লজ্জা করলো না (আরমান)

-চড়িয়ে গাল লাল করে দিবো বিয়াদ্দপ যা বের হ (আশা)

আরমান হাসতে হাসতে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল

-তোমার ঘরে ডেকে নিয়ে গিয়ে আবার বের করে দিচ্ছ আসবো না আর তোমার রুমে (আরমান)

-আসা লাগবে না (আশা)

আরমান ড্রাইংরুমে এসে দেখলো প্রমি নেই তাই ওখানে বসে ফোন টিপতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর আফিস থেকে আসাদ আসলো। ফ্রেশ হয়ে ওরা চারজন মিলে গল্প করলো প্রমি বেশি কিছু বলেনি কিন্তু ওদের কথা শুনে ওর ও মন চাইছিলো ওর মা-বাবা মিলে এমন গল্প করতে মনে মনে ঘৃণা দিতে লাগলো ওর চাচাকে ঔদিন ওমন না করলে সবঠিক থাকতো!
.
.
রাতে খাবার টেবিলে সবাই চুপচাপ খাচ্ছে। আশা প্রমিকে বলল

-প্রমি কাল রেডি হয়ে থাকিস তোকে কলেজে ভর্তি করে দিতে নিয়ে যাবে আরমান (আশা)

প্রমি মাথা নাড়ালো। আরমান আড়চোখে প্রমিকে দেখছে বার বার আশা বুঝতে পেরেও কিছু বললো না।

প্রমিকে আশা আগেই বলছিলো আরমান আসলে কলেজে ভর্তি করে দিবে সেদিন অবাক হয়ে খুশিতে কেঁদেছিলো কতটা ভালো মানুষ হলে মানুষ এমনটা করে।

#চলবে
#Tasnim_Tamanna