সুদর্শন শঙ্খচিল পর্ব-২০+২১

0
275

সুদর্শন শঙ্খচিল’
[২০]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

রনিতের আম্মু উঠানে বসে আঁচলে মুখ ডেকে শব্দ করে কাঁদছেন। রনিতকে ফোন দিলে ধরছেনা আর ধরলেও ভাল করে কথা বলছে না। বাড়ি ফিরতে বললে রনিত সরাসরি উনাকে না করে দিয়েছি। ছেলের এমন ব্যবহারে উনি কষ্ট পেয়ে কাঁদছেন। কয়েকজন মহিলা উনার কান্না শুনে স্বান্ত্বণা দিতে এসেছেন। দিশা একবার উনাদের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে উঠে চলে গেল। এসব প্যানপ্যানি ওর মোটেও সহ্য হয়না, মনে হয় শাশুড়িতে কড়া কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিতে। শুধু স্বামীর ভয়ে কিছু বলতে পারেনা। দিশা রুমে যেতে যেতে বিরবির করে বলল, “এই বুড়ি মরেও না ঘাটাও ছাড়ে না।”

শাশুড়ি বলেই সে হয়তো এমন কথাটা মুখে বলতে পারল। নিজের মা হলে বলার আগে ওর বুক কেঁপে উঠত। স্বামী মা তার তো আর নয়। মনের রাগ মনে রেখে দিশা আঙ্গুর নিয়ে রুমে চলে গেল।পৃথিবী উচ্ছন্নে গেলে যাক সে এখন মুভি দেখতে বসবে, পুরো মুভি দেখে তবেই রুম থেকে বের হবে। শাশুড়ির নাকে কান্না দেখার সময় ওর নেই। রনিতের আম্মুর পাশে বসা মহিলারা উনাকে স্বান্ত্বণা দিচ্ছেন। একটুপরে রনিতের আম্মু কান্না থামিয়ে চোখ মুছে বললেন, ” মাকে পর করে ছেলের কাছে বউই আপন হল।”

কথাটা শুনে পাশে বসা দাদী দাঁতে দাঁত চেপে বললেন, “তোর খচ্চর ছেড়া ওই ছেড়ির মধ্যে কি পাইছে কে জানে? দ্যাশে কি ছেড়ির অভাব পড়ছে নি?”

উপস্থিত একজন চাচী পানের পিক ফেলে বললেন, “বাবারে বাবা, এতটুকুই মাইয়ার প্যাটে এত শয়তানি বুদ্ধি দেইখা বুছার উপায়ই নাই।”

আর একজন খালা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আফসোসের সুরে বললেন,” বিয়ার পর পোলা পর হইয়া যায় রে বুবু। তখন মাকে লাগে তিতা আর বউকে লাগে মিঠা। আমার প্যাটের ছেড়াডাও তো ওই ঘাটেরই মাঝি। এত কষ্ট কইরা পোলা মানুষ কইরা বউ আসার পর মা হয় পর।”

চাচীরা একে একে উনাদের মনগড়া যুক্তি দিয়ে অভিযোগ জাহির করতে লাগলেন। পরের ঘরে মেয়ে অর্থাৎ ছেলের বউদের নিয়ে উনাদের অভিযোগের অন্ত নেই। কিন্তু উনারা হয়তো ভুলে গেছেন উনারাও পরের ঘরের মেয়ে। উনারাও পূর্বে বউ থেকে এখন শাশুড়ি হয়েছেন। আর শাশুড়ি হয়ে উনাদের পূর্বের অবস্থান ভুলে এখন ছেলের বউয়ের বদগুন খুঁজে জাহির করছেন।

রনিত ওর বাবার থেকে বাড়ির সবার খোঁজ খবর নিয়েছে। সেও চেয়েছিল সুখের সংসার গড়তে, কিন্তু পলককে নিয়ে বাড়ির সবার খুব সমস্যা। তাকে কেউ সহ্য করতেই পারেনা ছোট হিসেবে একটুও ছাড়ও দেয় না। রনিত শুরু থেকে ব্যাপারটা সহজ ভাবে নিলেও পরিস্থিতি এখন উল্টো দিকে ঘুরেছে। এজন্য আর সহ্য করতে না পেরে সে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রনিততে যে বাড়ি ছাড়তে কষ্ট হয়নি তা কিন্তু নয়। বাড়ি ছেড়ে ঠিকই কিন্তু বাবার থেকে সব খবর সময় মতো ঠিকই নিচ্ছে।

রনিতের আম্মুর উচিত ছিল পলক ছোট মেয়ে হিসেবে ওকে মানিয়ে গুছিয়ে নেওয়া। সামান্য একটা শাড়ির জন্য অশান্তি সৃষ্টি না করা। কিন্তু হিংসার কবলে পড়ে বিবেকহীন হয়ে ছেলের দিকে আঙ্গুল তুললেন। একবারও ভাবলেন না একথা গুলো শুনলে উনার ছেলেই কষ্ট পাবে। বউকে শখ করে কিছু দিলে, সেটা নিয়ে বাড়িতে অশান্তি সৃষ্টি হলে ব্যাপারটা খুব দৃষ্টিকটু দেখায়। বাইরের মানুষ শুনলে তো অবশ্যই ভাববে, ‘মাকে কিছু দেয়ই না বউয়ের কথায় চলে।’ আর এই অপবাদটা একটা ছেলের জন্য খুবই লজ্জাজনক ব্যাপার।

তবে আমাদের সমাজে মা আর বউয়ের দ্বর্ন্দের মাঝে প্রায় ছেলেদের পড়তে হয়। এই দ্বর্ন্দের মাঝে ছেলেকে পরীক্ষা দিতে হয় ,”মা আগে নাকি বউ আগে?” তাকে যে কোনো একজনকে বেছে নিতে বলা হয়। আর পরিস্থিতি অনুযায়ী ছেলেটা বউ অথবা মাকে বেছে নেয়। আর এর ফলস্বরূপ সংসার আলাদা হয় নয়তো সম্পর্ক ছিন্ন হয়। এই সমস্যার একটা উদাহরণ হচ্ছে রনিতের পরিবার।

**!!

সকালে প্রত্যয়ের আব্বু তুয়া আর চাঁদকে নিয়ে আশেপাশে ঘুরতে বের হয়েছেন। কেউ ওদের কথা জিজ্ঞাসা করলে উনি হাসি মুখে বলছেন, “এরা আমার লক্ষী পূত্রবধূ।”

শশুড় বউরা মিলে আশেপাশে ঘুরছে আর এটা ওটা কিনে খাচ্ছে। ওদের কেউ দেখে মনে হচ্ছে বাবা উনার দুই মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছেন। ঘুরতে ঘুরতে উনারা তিনজনে বাজি ধরে আঁখের রস খাওয়ার প্রতিযোগিতা করলেন। এবং প্রত্যয়ের আব্বু বিজয়ী হলেন এখন ওদের দু’জনকে উনাকে উপহার দিতে হবে। পূত্রবধূদের গোমড়া মুখ দেখে প্রত্যয়ের আব্বু মাঝে মাঝে শব্দ করে হাসছেন আবার হাসি থামিয়ে আফসোসের সুরে বলছেন, “আহারে আমার মায়েরা।”

প্রিয়ম কালকে রাত থেকে বাসায় ফিরেনি। তবে জানিয়েছে এক বন্ধুর বাসায় আড্ডা দিচ্ছে, রাতে ওখানেই থাকবে। তুয়ারা বেড়িয়ে এখনও বাসায় ফিরেনি। তাই প্রত্যয়ের আম্মু উনার কাজ সেরে চাচী সঙ্গে গল্প করছেন।

প্রত্যয়ের আম্মু প্রত্যয়কে নিয়ে চিন্তামুক্ত আছেন। উনার জানামতে প্রত্যয় ব্যস্ত তবে সময় মত ঠিকই ফোন করবে। আর ডাক্তারদের ব্যস্ততার শেষ নেই একথাটাও মাথায় রাখতে হবে। উনি ছেলেকে চিনেন এবং তার দায়িত্ববোধ সম্পর্কে অবগত। তাই উনি অকারণে চিন্তা করে কেঁদে আবেগে গা ভাসাননি। তবে প্রত্যয় আজ সকালে উনাকে মেসেজ করেছে, “আম্মু, আমি ঠিক আছি আর সবাইকে নিয়ে সাবধানে থেকো।”

ছোট্ট একটা মেসেজে সে বেশ কয়েকটা কথা বুঝিয়েছে। আলাদা ভাবে তাকে কিছু জিজ্ঞাসা বা বলার প্রয়োজন হয়নি। তবে প্রত্যয়ের মেসেজের কথা উনি তুয়াকে বলতে ভুলে গেছেন। আর তুয়া প্রত্যয়ের প্রতি অভিমানের পাহাড় জমিয়ে কাল সারারাত কেঁদে কাটিয়েছে। প্রিয়ম অনেক চেষ্টা করে প্রত্যয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। সে অজানা একটা ভয়ে কুঁকড়ে আছে।

ওইদিকে প্রত্যয়ের স্যারের বাইপাস সার্জারি করা হয়েছিল এবং সব ঠিকই ছিল। কিন্তু অপারেশনের আটচল্লিশ ঘন্টা পর উনি সাইলেন্ট হার্ট এ্যার্টাক করেন। তখন থেকেই উনার বেঁচে থাকাটা আরো বিপদজনক হয়ে উঠে। ওই মুহূর্ত থেকে প্রত্যয় ঠান্ডা মস্তিষ্কে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে। সেও জানেনা এর ফল কি হবে? তবে ওর সর্বচ্চো চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখছেনা। প্রত্যয়ের কথা অনুযায়ী মেডিকেল বোর্ড বসিয়ে ডক্টররা আলোচনায় বসেছেন। সবার সিদ্ধান্তেই স্যারের পরবর্তী চিকিৎসা ধাপ প্রয়োগ করা হবে।

প্রত্যয় আধঘণ্টা জন্য ওর কেবিনে ফ্রেশ হতে এসেছে। কোনো রকমে ফ্রেশ হতে না হতেই কল আসে স্যার হার্ট এ্যার্টাক করেছেন। প্রত্যয় তখন ক্ষুধার্থ থাকলেও খাওয়ার সময়টুকু পেল না বরং টাওজার আর টির্শার্ট পড়েই দৌড়ে বের হল। আইসি ইউ এর বাইরে স্যারের সহধর্মিণী কাঁদতে কাঁদতে প্রত্যয়ের পায়ের কাছে বসে পড়লেন। প্রত্যয় ওই মুহূর্তে উনাকে দাঁড় করিয়ে,”ম্যাম, দোয়া করুন” বলে দ্রুত পায়ে আই সি ইউ রুমে ঢুকে পড়ল।

বাইপাস সার্জারি তার উপরে হার্ট এ্যার্টাক উনি ভাগ্যক্রমে কোনোমতে সামলে উঠেছেন, তবে এখনও বিপদমুক্ত নন। এসব ব্যস্ততা নিয়ে প্রত্যয় তুয়া সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। শুধু ওর আম্মুকে মেসেজ করে সবাইকে চিন্তামুক্ত করেছে। ওটিতে কিংবা আইসি ইউ রুমে উচ্চ শব্দে ফোনের রিংটোন রাখা নিষিদ্ধ। ওটি আর আইসি ইউতে থাকার ফলে ফোনটাও ওর কাছে রাখছেনা।

তবে সত্যি বলতে প্রত্যয় ইচ্ছে করে তুয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করছেনা। কারণ কল করলেই তুয়া মন খারাপ করবে অথবা সে কাঁদবে। তুয়ার কান্না শুনে প্রত্যয় ওর মনটাকে শান্ত রেখে কাজ সারতে পারবেনা। তাই সে ভেবেছে ফিরে তুয়ার একেবারে অভিমান ভাঙ্গাবে।

**!!

বিকালে তুয়ার আব্বু আম্মু বসে ছাদে বসে গল্প করছেন। উনারা প্রত্যয়ের খোঁজ নেওয়া জন্য কল করেলেন কিন্তু ফোন বন্ধ পেল। উনারা তুয়ার সঙ্গে কথা বললেন এবং মেয়ে ওখানে ভাল আছে শুনে খুশি হলেন। তুয়া কষ্ট পেলেও হাসি মুখেই মা বাবার সঙ্গে কথা বলল। তারপর প্রত্যয়ের ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনাকে লাটিমের মত না ঘুরাতে পারলে, আমিও তুয়া নই।”

কথাটা বলে তুয়া মন ভার করে জানালার পাশে বসল। চাঁদ আমসত্ত্ব খেতে খেতে তুয়ার পাশে বসে গান ধরল, “কোথায় গেলেন, কোথায় গেলেন ওহ্ ভাসুর গো? আপনার বউটা কেঁদে চোখ দু’টো বন্যা বানাইছে।”

তুয়া চাঁদের বেসুরে গুনে শুনে ফিক করে হেসে দিল। চাঁদ ওর হাতের আমসত্ত্ব মুখে পুরে তুয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, “প্রিয়মকে কেবল জ্বালিয়ে আসলাম। যদিও থাপ্পড়ও দিল তবুও সেই শান্তি লাগছে।”

কথাটা বলে চাঁদ নিজেই হাসল তুয়াও চাঁদের সঙ্গে তাল মিলালো। তারপর দু’জন ছাদে গেল প্রত্যয়ের আম্মু তেল নিয়ে ওদের পেছনে গেলেন। পাশের বিল্ডিংয়ের কয়েকটা ভাবি গল্প করছিলেন। প্রত্যয়ের আম্মু উনার সঙ্গে কথা বলতে বলতে চাঁদ তুয়ার চুলে তেল দিয়ে বিনুণী করে দিল। তুয়া চাঁদ মিটিমিটি হেসে প্রত্যয়ের আম্মুর চুলে তেল দিয়ে বিনুণী করছে। একটুপরে, প্রত্যয়ের আব্বু এসে প্রত্যয়ের আম্মুকে দেখে উচ্চশব্দে হেসে দিলেন। উনাকে হাসতে দেখে প্রত্যয়ের আম্মু হাসির কারণ জানতে চাইলেন। তুয়া চাঁদ সহ ভাবিটাও শব্দ করে হাসছে। প্রিয়ম ছাদের দরজায় দাঁড়িয়ে এসব দেখে ওর আম্মুর ছবি তুলে উনাকে দেখালেন। চাঁদ আর তুয়া উনাকে দুই পাশে দু’টো বিনুণী করে দিয়েছে, গল্পের তালে ব্যাপারটা উনি খেয়ালই করেন নি। উনি পেছনে ঘুরে কাউকে পেলেন ততক্ষণে ওরা দৌড়ে পালিয়েছে।

**!!

ইচ্ছে আজকে আবারও প্রত্যয়দের ফ্ল্যাটে এসেছে। বেশ কিছুক্ষণ দরজার দিকে তাকিয়ে মন খারাপ করে নিচে চলে গেল। ঠোঁট ফুলিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ওর আম্মুকে গিয়ে বলল, “ওলা কুথায়, কবে আছবে?”

ইচ্ছের আম্মু ইচ্ছের চোখ মুছে দিয়ে বললেন, “ওরা চলে আসবে মা।”

ইচ্ছে উপুড় হয়ে শুয়ে মুখ ডেকে কাঁদতে লাগল। ইচ্ছের আম্মু খাওয়াতে গেলে ইচ্ছে জেদ করে সব ভাত মেঝেতে ফেলে দিল। এতটুকুন মেয়ের এত জেদ উনারও আর সহ্য হচ্ছে না। প্রত্যয়রা যাওয়ার পর থেকে ইচ্ছে উনাকে একটু বেশিই জ্বালাচ্ছে। কালকে রাতেও একটুও ঘুমাতে দেয়নি। চোখ বন্ধ করলেই চোখে গুঁতো মেরে বলেছে,”আম্মু, ধুমাচ্ছে?”

ইচ্ছে এত জ্বালাতন সহ্য করতে না পেরে ইচ্ছের আম্মু রেগে ইচ্ছেকে কয়েকটা মারলেন। মার খেয়েও চিৎকার করে কেঁদে বলছে, “প্রত্তুয়! প্রিউুম দাব।”

মার খেয়ে ইচ্ছের ঠোঁট কেটে রক্ত বেরিয়ে গেল। তবুও তার একটাই কথা সে প্রত্যয় আর প্রিয়মের কাছে যাবে। মেয়েকে মেরে ইচ্ছের আম্মু নিজেই কেঁদে দিলেন। রেগে মারতে গিয়ে ঠোঁটে লেগে গেছে উনিও ইচ্ছে করে মারেনি। একটুপরে, রনিত এসে ইচ্ছেকে কোলে তুলে ইচ্ছের ঠোঁটে ওয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিয়ে রেগে বলল, “আর একবার বাচ্চাটাকে এভাবে মারলে তোর খবর আছে।”

ইচ্ছের আম্মু কেঁদে বলল, “সারাটাদিন জ্বালিয়ে মারে, আমাকে ভাতটুকু শান্তিতে খেতে দেয় না। ওর জ্বালা আমার আর সহ্য হচ্ছেনা।”

রনিত দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “সহ্য না করলে বনবাসে যা তবুও মারবি না। দাঁত আছে তাই দাঁতের মর্ম বুঝছ না।”

কথাটা বলে রনিত ইচ্ছেকে নিয়ে ওদের ফ্ল্যাটে চলে গেল। মার খেয়ে কেঁদে ক্লান্ত হয়ে ইচ্ছে রনিতের কোলেই ঘুমিয়ে গেল। ইচ্ছের ঠোঁট ফুলেও লাল হয়ে আছে এজন্য রনিত রেগে কথাটা বলল। সে আবার কোনো বাচ্চার কান্না সহ্য করতে পারেনা। আর প্রত্যয় আর প্রিয়মের অজানা থেকে গেল, ওদের জন্য ছোট্র একটা প্রান ব্যাকুল হয়ে কাঁদছে।

**!!

ভিডিও কলের মাধ্যমে দুই ভাই মুখোমুখি বসে আছে। প্রিয়মকে মাথা নিচু করে থাকতে দেখে প্রত্যয় বলল,” প্রিয়ম কাঁদছ কেন?”

প্রিয়ম বাহুর শার্টে চোখ মুছে কান্নারত গলায় বলল, “আমি চাঁদকে একটা সুযোগ দিতে চাই। তুমি ফিরে এসে কথা সবাইকে জানাও।”

কথাটা শুনে প্রত্যয় প্রিয়মকে সরাসরি বলল, “আমার ভালোর জন্য এই সিদ্ধান্তটা নিলে? তবে জেনে রেখো, তোমার ভাই এতটাও সুবিধাবাদী নয়।”

প্রিয়ম ধরা পড়ে কান্নারত গলায় মুচকি হেসে বলল, “কবে ফিরবে ভাইয়া? তুমিহীন তোমার তুয়া ভাল নেই। আর আমিও নতুন করে আবার শুরু করতে চাই। তুমি এসে আমাকে আরেকটা পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করো।”

প্রত্যয় শান্ত হয়ে প্রিয়মকে বুঝিয়ে বলল,” ভেবে সিদ্ধান্ত নাও। জীবনটা খুব সুন্দর, তাড়াহুড়োই ভুল পদক্ষেপ নিয়ে পরে আফসোস করো না।”

প্রিয়ম কম্পিত কণ্ঠে অকপটে বলল, “না, তুমি ফিরে এসো আর ব্যাপারটা সবাইকে জানাও।” প্রত্যয় প্রিয়মের কথা শুনে মৃদু হেসে বললে,” হুম, আমি যথাশীঘ্রই ফিরছি।”

দুই ভাই বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে কল কাটল। প্রিয়ম মাথার চুল মুঠো করে ধরে অশ্রু ঝরিয়ে বলল, “শুধু ভালবাসার দাফন নয়, তোমার জন্য মরতেও দুইবার ভাববো না, ভাইয়া।”

ওইদিকে প্রত্যয় রেডি হয়ে ওর ট্রলি নিয়ে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গেল। ওর এখানকার কাজ আপাতত শেষ সে এখন যাচ্ছে নতুন আরেকটা পদক্ষেপ নিতে।

‘সুদর্শন শঙ্খচিল’
[২১]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

পাখি ডাকা সিগ্ধ সকালে তুয়া ছাদের গিয়ে দাঁড়াল। বিশুদ্ধ বাতাসে চারপাশে চোখ বুলিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য অনুভব করছে। এত সকালে মানুষজন, গাড়িঘোড়া, চেচাঁমেচি হট্টগোল নেই শুধু আছে, একরাশ নিস্তব্ধতা। প্রত্যয়ের আম্মু নামাজ পড়ে ছাদে এসেছেন গাছে পানি দিতে। তুয়াকে দেখে উনি মুচকি হেসে বললেন, ” একা ছাদে কি করছিস?”

তুয়া ঘাড় ঘুরিয়ে উনাকে দেখে মুচকি হেসে বলল, “পাখিদের কাছে তোমার ছেলের নামে অভিযোগ জানাচ্ছি। আর আকাশকে বলছি, তাকে ফিরে আসার কথা মনে করিয়ে দিতে।” তুয়ার কথা শুনে উনি গাছে পানি দিতে দিতে বললেন, “তা পাখি আর আকাশ কি খবর পৌঁছে দিয়েছে?” তুয়া মুখ ভার করে ঠোঁটে উল্টে বলল, “হুম তা তো দিয়েছেই।”

প্রত্যয়ের আম্মু হেসে তুয়ার মাথা হাত রেখে বললেন,”আমার ছেলের উপর অভিমান করিস না, দেখবি সে দ্রুত ফিরে আসবে।” তুয়া প্রত্যুত্তরে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল, “অভিমান করতে আমার বয়েই গেছে।” তুয়ার কথা উনি উচ্চশব্দে হেসে বললেন, “তাহলে প্রত্যয়কে আসতে নিষেধ করি।” তুয়া দোলনাতে বসে অভিমানী গলায় বলল, হ্যাঁ এখন তা তো করবেই। আর আমি কে, আমার কথা হয়তো ওর মনেও নেই?””

তুয়ার কথা শুনে প্রত্যয়ের আম্মু হেসে বললেন, “আমার ছেলেটাও হয়তো ওখানে তোর জন্য ছটফট করছে। চিন্তা করিস কাজ সেরে দ্রুত চলে আসবে।” এসব নিয়ে কথা বলতে বলতে প্রত্যয়ের আম্মু তুয়াকে নিয়ে নিচে চলে গেলেন।

কালকে প্রত্যয়ের সঙ্গে কথা বলে প্রিয়ম সারারাত মেঝেতে বসে কাটিয়েছে। রাতের আঁধারে ওর জীবনের কিছু অপ্রাপ্তির হিসাব মিলিয়েছে। প্রিয়ম বেড়াতে যাওয়ার আগে তুয়াকে ওর মনের কথা জানিয়েছিল। নীল রংয়ের চিরকুটে ভালবাসার কথা লিখে ইচ্ছের হাতে পাঠিয়েছিল। কিন্তু ইচ্ছে সেটা তুয়াকে দেয় নি বরং নিজের কাছেই রেখে দিয়েছিল। তুয়া চিরকুট দেখে ইচ্ছেকে জিজ্ঞাসাও করেছিল,” ওর হাতে এটা কিসের চিরকুট?” কিন্তু প্রিয়ম দিয়েছে বলে ইচ্ছে
চিরকুট টা তুয়াকে ধরতেও দেয়নি। পরে খেলার ছলে ইচ্ছে চিরকুট টাই হারিয়ে ফেলেছে। প্রিয়ম চাঁদকে নিয়ে আসার পর ইচ্ছেকে আড়ালে জিজ্ঞাসা করেছিল চিরকুটের কথা। কিন্তু ইচ্ছে বলেছিল, “ওতা আমাকে দিসো আমি তুয়া আপুকে দিব কেনু?”

প্রিয়ম তখনই বুঝেছে ইচ্ছে তুয়াকে চিরকুটটা দেয়নি আর তুয়াও জানতে পারেনি ওর মনের কথা। প্রিয়ম এজন্যই বাসের সিটে হেলান দিয়ে তুয়ার উত্তর জানার কথা বলেছিল। আর পরের জার্নিটা একলা নয় তুয়াকে নিয়ে দুকলা করতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রিয়মের সব ভাবনা, ইচ্ছে, স্বপ্ন, ভালবাসা, এক নিমিষেই ধূলিসাৎ হয়ে গেল। অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে চাঁদের আগমন হল ওর জীবনে আর সবটা ধীরে ধীরে বদলেও গেল। তুয়া হয়তো আর জানবেও না প্রিয়ম আড়ালে আবড়ালে ওকে প্রচন্ড ভালবেসেছিল আর এখনও বাসে।

**!!

রনিত আর পলক সকালে একসঙ্গে খেতে বসেছে। আজকে পলকের খুশি যেন আর ধরছেনা। সে বেশ কিছুদিন ধরে ওর বাবাকে দেখার বায়না ধরেছে। এজন্য রনিত দুই দিনের ছুটি নিয়ে পলকদের ওর বাবাকে দেখাতে নিয়ে যাবে। দুই দিন থাকতে পারবে শুনে পলক তো খুশিতে লাফিয়ে উঠল। পলকের অবস্থা দেখে রনিত হেসে বলল, “লাফিয়ে পা ভেঙ্গে ফেলো না তখন কিন্তু আর যাওয়া হবে না।”

গল্প করতে করতে দু’জনে খেয়ে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ল। যথাসময়ে দু’জনে পৌঁছে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করল। রনিত পলকের রুমে চলে গেল আর পলক সবার সঙ্গে গল্পে মেতে উঠল। অনেকদিন পর সে বাড়িতে এসেছে তাই গল্পের ঝুলি নিয়ে বসেছে। জামাইয়ের আপ্যায়নের কথা ভেবে
পলকের বাবা বাজারে গেলেন আর ওর মা রান্নাঘরে চলে গেল। তখন কথার ছলে পলককে ভাবি হাসতে হাসতে খোঁচা মেরে বলল, “তা কয়দিনের জন্য আসলে গো ননদিনী, এক সপ্তাহ নাকি একমাস?”

পলকের মুখের হাসিটা মিলিয়ে গেল। ভাবি পলককে চুপ থাকতে দেখে আবারও হেসে বললেন, “বেশিদিন থাকার জন্যই বরকে নিয়ে এসেছ নাকি? আমি ভেবেছিলাম বাপের বাড়ি যাব তোমার জন্য আর যাওয়া হল না।”

বিয়ের পর বাবার বাড়িতে দিন গুনে আসতে হয় পলকের জানা ছিল না। পলক ঢোক গিলে ছলছল চোখে ওর ভাবির বলল, “না ভাবি আজকেই বিকেলেই চলে যাব। কালকে তুমি তোমার বাবার বাড়ি যেও।” পলককের ভাবি কথাটা শুনে যেন খুব খুশিই হলেন। পলক মুচকি হেসে আড়ালে চোখ মুছে রুমে গিয়ে রনিতকে বলল, “অনেকদিন পর বাড়িতে এলাম কিন্তু এখানে এসে আর মন টিকছেনা। আজকে বিকালেই চলে যাব আমার নিজের সংসারই ভাল।”

রনিত পলকের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল, “যেমনটা বলবেন মহারাণী।” পলক কথাটা শুনে জোরপূর্বক হেসে রুম ত্যাগ করল। রনিত কিছুক্ষন আগে রুম থেকে হতে গিয়ে পলকের ভাবির কথাটা শুনেছে। সে ভেবেছিল কোনো বাহানা দেখিয়ে পলককে নিয়ে চলে যাবে। কিন্তু ওর কিছু বলার আগেই পলক খুব সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে একটা বাহানা হাজির করল।

**!!

তুরাগ বাইকের চাবি হাতের আঙ্গুলে ঘুরাতে ঘুরাতে নিচে নামছে। ইচ্ছে ওদের রুমের বাইরে ছোট্ট একটা টুলে বসে পুতুলের চুল আঁচড়ে দিচ্ছিল। তুরাগ ইচ্ছের গাল টেনে বলল, “জানপাখি তোমার মন খারাপ কেন?”

ইচ্ছে তুরাগকে কিছু না বলে ওদের রুমে ঢুকে দরজা আঁটকে দিল। তুরাগ হতবাক হয়ে ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে ওর কাজে চলে গেল। ইচ্ছের আম্মু ইচ্ছেকে কোলে বসিয়ে নুডুলস খাইয়ে দিলেন। ইচ্ছে কালকের মার খেয়ে ভয়ে টু শব্দ করল না। জেদ না করে একদম ভদ্র মেয়ের মতো খেয়ে টিভিতে কার্টুন দেখতে বসল। ইচ্ছের আম্মু অবাক হলেও কিছু বললেন না বরং খুশি হলেন। তবে মেয়ের মনে যে ভয়ের সৃষ্টি করছেন, উনি একথা আন্দাজ করতেও পারলেন না। কিছু বললে আম্মু মারবে ভেবে ইচ্ছে নুডলসের ঝালে ঠোঁটে জ্বলার কথাও বলল না। শুধু মারের ভয়ে পানি দিয়ে নুডুলস গিলে খেল।

ইচ্ছে ওর বাবাকে কাছে পায়না। প্রত্যয় আর প্রিয়মের কাছে যা আবদার করে তারাও হাসি মুখে সেগুলো পূরণ করে। বাচ্চারা যাদের কাছে ভালবাসা পায় তাদের কাছেই যেতে চাই। ইচ্ছেরও ছোট্ট মনে প্রত্যয় আর প্রিয়মের জন্য একটা মায়া জন্মেছে। এজন্য তাদের কাছে যাওয়া জন্য সে এতটা জেদ ধরেছিল। কিন্তু ওর কথাটা কেউ বুঝলই না, বরং মার খেয়ে ছোট্ট মনে ভয়ের সৃষ্টি হল।

**!!

প্রত্যয়ের স্যার এখন কিছুটা সুস্থ আছে। এজন্য প্রত্যয় অন্য ডক্টরদের সঙ্গে কিছু কথা বলে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গেছে। প্যারিসের লা- দিফেন্স গিয়ে সে নিজের কাজ সেরে এয়ারপোর্টের দিকে রওনা হয়েছে। লা-দিফেন্স প্যারিসের প্রানকেন্দ্র আর এখানে রয়েছে বিলাশ বহুল পন্যের দোকান। এখানে বছরে প্রায় এক কোটি সত্তর লাখ পর্যটক বেড়াতে আসেন এবং কেনাকেনা করেন। আর এজন্য প্যারিসকে কেনাকাটার স্বর্গও বলাও হয়।

জার্নির সময়টুকু প্রত্যয় কারো সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। এত লং জার্নিতে সে বই পড়ে, কখনও তুয়ার ছবি দেখে, কখনও গেম খেলে, আবার কখনও ঘুমিয়ে কাটাল। তারপর দীর্ঘ জার্নি সমাপ্ত করে যথাসময়ের সে বাংলাদেশে পৌঁছাল। তারপর একটা রেস্টুরেন্টে ডুকে ফ্রেশ হয়ে হালকা কিছু খেয়ে রাজশাহীর বাসে উঠে বসল। রাজশাহীতে যাওয়ার ফ্লাইট আছে, তবে চার ঘন্টা পর ততক্ষণ অপেক্ষা করা সম্ভব নয়। প্রত্যয় বাসের সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসল। একটুপরে, বাস তার নিজস্ব গতিতে চলতে শুরু করল।
ওর দুই সিট পরে একটা বাচ্চা একটাই গান অনবরত বাজিয়েই যাচ্ছে। কেউ বন্ধ করতে বললেই বাচ্চাটা চিৎকার করে উঠছে। এজন্য বাসের অনেকেই বিরক্ত হয়ে বাচ্চার দিকে তাকাচ্ছে। প্রত্যয় না বাচ্চাটার দিকে একবার তাকিয়ে কানে ইয়ারফোন গুঁজে বসে রইল।

বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ প্রত্যয়ের ইচ্ছের কথা মনে পড়ল। ফোন বের করে ইচ্ছের আম্মুকে বেশ কয়েকবার ফোন করল, কিন্তু উনি ধরলেন না। তাই ফোনটা পকেটে রেখে প্রত্যয় চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলল, “ইচ্ছেমণি বোধহয় মেলা দুঃখু পেয়েছে।” কথাটা বলে প্রত্যয় মৃদু হাসল।

দুপুরে সবাই একসঙ্গে খেয়ে তুয়া রুমে গিয়ে ঘুমিয়েছে। আসরের আজানের সময় প্রত্যয়ের আম্মু তুয়াকে একবার দেখে গেলেন। কাজ কাম নেই ডেকেই বা কি হবে ভেবে উনি চাচীদের বাসায় গেলেন। চাঁদ এক বাটি নুডলস নিয়ে টিভিতে সিরিয়াল দেখছে আর খাচ্ছে। প্রিয়ম ওর রুম থেকে চেচিঁয়ে ওর আম্মুকে বলল, “আম্মু একমগ কফি দাও, প্লিজ। আমার প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে।”

প্রিয়মের চিৎকার শুনে চাঁদ ওর মুখে নুডলস পুরে বিরক্ত হয়ে বলল,” এই বলদা খালি ষাড়ের মত চেচাঁতেই জানে। আমার কাছে এসে একটু জানু মনু বলবে না তা না, সারাটাদিন ম্যা ম্যা করবে নয়তো আমাকে খ্যাচ খ্যাচ করতেই থাকবে।”

চাঁদ কফি বানানোর জন্য উঠতে গেলে তখন কলিংবেল বেজে উঠল। সে দরজা খুলে প্রত্যয়কে দেখে অবাক হয়ে বলল, “ভাইয়া আপনি?”

প্রত্যয় মুচকি হেসে বলল, “হুম, কেমন আছো চাদঁ?” চাদঁ ‘ভাল আছে’ বলে কে কোথায় আছে গড়গড় করে বলে হাফ ছাড়ল। তুয়ার কান্নার কথা সহ আরও খবরও প্রত্যয়কে জানিয়ে দিল। প্রত্যয় চাঁদের কথা শুনে হেসে ওর রুমের দিকে পা বাড়াল। আর চাদঁ প্রিয়মকে বকতে বকতে কফি বানাতে রান্নাঘরে চলে গেল।

প্রত্যয় রুমে ঢুকে তুয়াকে ঘুমাতে দেখে মুচকি হাসল কিন্তু ডাকল না। ওর শরীরে এখন ধুলাবালি লেগে আছে এজন্য আগে ফ্রেশ হয়ে আসল। তুয়া একটা বালিশ জড়িয়ে ধরে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। প্রত্যয় মিটিমিটি হেসে টাওয়াল বেলকনিতে মেলে দিয়ে তুয়ার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ল। তারপর কিছু একটা ভেবে প্রত্যয় ওর মাথা ঝাকিয়ে ভেজা চুলের পানি তুয়ার ঘুমন্ত মুখের উপরে ফেলল।

তুয়া বিরক্তকর শব্দ করে নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে গেল। প্রত্যয় মিটিমিটি হেসে একই কাজ আবারও করল, তুয়া রেগে চোখ খুলে প্রত্যয়কে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকল। তুয়া ভাবছে এটা সত্যি নাকি স্বপ্ন দেখছে? তবে সে মনে প্রাণে চাচ্ছে এটা যেন সত্যি হয়। তুয়ার মনে হচ্ছে সে বেশ কয়েক বছর পর প্রত্যয়কে দেখছে। তাই সে প্রত্যয়ের মুখ পাণেই তাকিয়ে আছে। তুয়াকে এভাবে তাকাতে দেখে প্রত্যয় তুয়ার নাক টেনে বলল,”স্বপ্ন নয় পাগলি সত্যিই এসেছি।”

কথাটা শুনে তুয়া প্রত্যয়ের গলায় মুখ ডুবিয়ে কাঁদতে লাগল। সে ভেবেছিল, প্রত্যয়ের সঙ্গে কিছুতেই কথা বলবেনা। কিন্তু প্রিয় মানুষটাকে দেখে সে নিজেকে সামলাতে পারলনা। বরং অভিমান ভুলে তার বুকেই নিজের জায়গাটা বুঝে নিল। আর প্রত্যয় মিটিমিটি হেসে তুয়াকে ওর বুকে আবদ্ধ করে নিল।

চলবে।