সুদর্শন শঙ্খচিল পর্ব-৮+৯

0
243

‘সুদর্শন শঙ্খচিল’
[০৮]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

“বাপের বাড়িতে কি ঘি মধু আছে যে দু’দিন পর পর বাপের বাড়ি যাওন লাগব? আমিও তো শ্বশুরবাড়িতে থাকি, সংসার করি। কই আমি তো দু’দিন পর পর বাপের বাড়ি যাওয়ার লাইগ্যা ঘ্যান ঘ্যান করি না।”

“আসলে আম্মুর খুব জ্বর এসেছে, তাই যেতে চাচ্ছিলাম।”

“জ্বরে কেউ মরে না। যাও, গিয়ে দুপুরের রান্না শুরু করো।”

পলকের শাশুড়ি কথা গুলো বলে চলে গেলেন। পলক চোখের পানি মুছে তরকারি কাটতে বসল। শাশুড়ির কঠিন কথাগুলো শুনে ওর খুব কষ্ট হয়। তবুও মুখ ফুটে কিছু বলতে না সে। কালকে রাত থেকে ওর মায়ের খুব জ্বর এসেছে। এজন্য একটাবার মাকে দেখার জন্য সে বাপের বাড়ি যেতে চেয়েছিল। পলক একবুক কষ্ট হজম করে মনে মনে বলল, “মা গো! আমি যেতে না পারলেও আল্লাহর কাছে তোমার সুস্থতা কামনা করছি।”

বিয়ের আগে পলক সিনেমা দেখে ভাবত শ্বশুরবাড়ি মানে সুখের আরেক রাজ্য। সেই রাজ্যের রাজকুমারের সঙ্গে খুব সুখে তার দিন কাটবে। ওর কোনো কষ্ট থাকবে না; শুধু সুখ আর সুখ। গল্পের হিরোইনের মতো সেও সব সমস্যার সমাধান করতে পারবে। সবার মন জয় করে সে ভালবাসা কুড়াতে পারবে। শ্বশুরবাড়িতে থেকেও নিজের ইচ্ছামতো চলাফেরা করতে পারবে। পড়াশোনা করে শিক্ষিত একজন মা হবে। সে সবার ভালবাসা নিয়ে বাঁচবে। কিন্তু বিয়ের পর সে অল্পতেই বুঝে গেল বাস্তবতাটা কি!

“নারী তোমার জন্ম হয়েছে পিষ্ট হতে, মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে নয়।”
আমাদের বাস্তব জীবন সিনেমা বা গল্পের মতো এতো টা সাজানো গুছানো হয় না। প্রতিটা মানুষের জীবনে কিছু না কিছু কমতি থাকেই। বিয়ের আগে পলক কল্পনা রাজ্যতে যা ভেবেছিল, সেগুলো সব মিথ্যা, বানোয়াট; মনের কল্পনা দিয়ে চোরাবালির উপর যত্ন করে গড়ে তোলা এক টুকরো স্বপ্ন। যে স্বপ্নটা তলিয়ে যেতে একটুও সময় লাগে না। এজন্য প্রতিটা মানুষের উচিত কল্পনাতে সুখের রাজ্য না গড়ে, বাস্তবতার সাথে লড়াই করার মনোবল তৈরী করা। যাতে বাস্তবতার চোরাবালিতে তলিয়ে যাওয়ার আগে সে আঁকড়ে ধরে বাঁচার মতো নিজের সম্বলটুকু পায়।

প্রত্যয় পেশেন্টের সঙ্গে কথা বলতে বলতে কয়েক বার ইচ্ছের দিকে তাকায়। ইচ্ছে খেলতে খেলতে বেডের উপর ঘুমিয়ে পড়েছে। ওর হাতে পায়ে কলমের কালির আঁকিবুঁকি করা। প্রত্যয় মুচকি হেসে পেশেন্ট দেখা শেষ করল। জামিল এসে জানাল এখন আর কোনো পেশেন্ট নেই৷ প্রত্যয় ইচ্ছেকে কোলে নিয়ে তুয়ার কেবিনে গেল। তুয়া বেডে শুয়ে ছিল, কিন্তু চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছিল। প্রত্যয় ইচ্ছেকে পাশের বেডে শুইয়ে দিল। তুয়ার আব্বু বাসায় গেছেন আর তুয়ার আম্মু কেবিণের এক কোণে যোহরের নামাজ পড়ছিলেন। প্রত্যয় তুয়ার পাশে বসে বলল, “বোকারা সব সময় যুদ্ধের ময়দান থেকে পালায়। আর বুদ্ধিমানরা প্রাণের পরোয়া না করে প্রাণহীন হওয়া অবধি লড়াই করতে থাকে। কারণ তাদের একটাই লক্ষ্য থাকে, মারবে না হয় মরবে। প্রকৃত যোদ্ধারা জীবন্ত লাশ হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যুটাকে শ্রেয় বলে মনে করে। কিন্তু আমি চাই তুমি প্রকৃত লড়াকু যোদ্ধা হও।”

তুয়া প্রত্যয়ের কথাটা মনোযোগ দিয়ে শুনল। প্রত্যয় তুয়ার চোখে চোখ রেখে কথাগুলো বলল। তুয়া ওর আম্মুর দিকে একবার তাকাল। উনি নামাজ পড়ে কেবিনের বাইরে চলে গেলেন। কারণ উনি জানতেন প্রত্যয় তুয়াকে ভালো কিছুই বলবে। তুয়া প্রত্যয়ের সোজাসুজি বসল। প্রত্যয় বুঝতে পারছে তুয়া ওকে কিছু বলতে চায়। এজন্য প্রত্যয় তুয়াকে সাহস দেওয়ার জন্য বলল,”তুমি আমাকে যা বলতে চাও, বলতে পারো।”

তুয়া চোখ দু’টো মুছে একটা বড় ঢোক গিলে বলল, “আপনি দেখতে খুব সুদর্শন। আপনাকে সুদর্শন শঙ্খচিলের উপাধি দিলেও ভুল হবে না।”

তুয়ার কথা শুনে প্রত্যয় অবাক হলো না। সে একদম স্বাভাবিক ভাবে তুয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। প্রত্যয়ের মুখে অবাক, বিষ্ময়, হাসি, কষ্ট, কোনো ছাপই দৃশ্যমান নয়; সে একদম স্বাভাবিক। প্রত্যয় এখন বোকাদের মতো মাঝখানে কথা বলে তুয়ার কথা আটকাতে চায় না। সে তুয়ার পুরো কথাটা শুনতে চায়। তুয়া প্রত্যয়কে চুপ থাকতে দেখে বলল, “আপনি এতবড় একজন কার্ডিওলজিষ্ট। আপনি সব দিকে থেকে পারফেক্ট একজন মানুষ।”

প্রত্যয় এখনও চুপ করে আছে। সে এখন তুয়ার কথার মানে আঁচ করতে পেরেছে৷ তবুও প্রত্যয় টু শব্দ করল না। তুয়ার চোখ দিয়ে অঝরে পানি ঝরছে। সে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে কান্না আটকে বলল, “একজন ডক্টর, সুদর্শন ছেলে, সমাজের উচ্চ শ্রেণীর একজন মানুষ আপনি। এবার বলুন, আপনি এত বড় মাপের মানুষ হয়ে কি একজন ধর্ষিতাকে বিয়ে করতে পারবেন?”

প্রত্যয় কোনো কথা বলল না। তুয়া প্রত্যয়কে চুপ থাকতে দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল, “ডক্টর প্রত্যয়! সান্ত্বনার বাণী বিনামূল্যে দেওয়া যায়। এজন্য সান্ত্বনার বুলি ছড়াতে কেউই কম করেন না। তখন কথাগুলো কত্ত সহজে বলে দিলেন। কিন্তু করাটা কি আদৌও সম্ভব? একজন ধর্ষিতাকে সান্ত্বনার বাণী দিয়ে নিজেকে বড় করতে চাচ্ছেন? নাকি সবাইকে বোঝাতে চাচ্ছেন, আপনি বৃহৎ মনের মহৎ একজন মানুষ?”

তুয়া কথাগুলো শান্তভাবে বললেও, কথার গভীরতা গুলো প্রত্যয় ঠিকই বুঝে নিচ্ছে। তুয়ার চোখ দু’টো লাল বর্ণ ধারণ করেছে। ফোলা ফোলা চোখ দু’টোতে রাগের ফুলকি দেখা যাচ্ছে। প্রত্যয় বলল, “সান্ত্বনার বাণী দেই নি। আমি শুধু তো… ।”

তুয়া প্রত্যয়কে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে চিৎকার করে বলল, “একজন ধর্ষিতাকে একবেলা খেতে দেওয়া যায়, তাকে সান্ত্বনার বাণী দেওয়া যায়, হাসাহাসি করা যায়, কটু কথা বলা যায়, গালমন্দ করা যায়। মানবতার খাতিরে তার কাছে এক দন্ড বসা যায়। কিন্তু তাকে বিয়ে করে বউ বলে স্বীকার করা যায় না। এই শিক্ষিত সমাজে তাকে নিয়ে ঘোরাফেরা করা যায় না। কারণ কি জানেন? তার কারণ সে ধর্ষিতা! হ্যা ধর্ষিতা! একজন ধর্ষিতার ভাগ্যে এতকিছু জোটে না। আপনি কি বুঝেছেন আমি কি বলছি? বুঝেছেন আপনি? আপনাকে মহৎ সেজে আমাকে এত সান্ত্বনা দিতে কে বলেছে? কে চেয়েছে আপনার ভাষণ? আমি? আমি চেয়েছি আপনার সান্ত্বনা? আমাকে করুণা করতে এসেছেন? একজন ধর্ষিতাকে করুণা করতে এসেছেন?”

তুয়ার আম্মু দৌড়ে এসে মেয়েকে ধরলেন। তুয়ার শরীর থরথর করে কাঁপছে। উনি তুয়াকে ধরে বললেন, “মা! আমার সোনা মা, শান্ত হ। তোর ভালোর জন্যই তো প্রত্যয় কথাগুলো তোকে বলেছে, মা। সে ভালো মানুষ বলেই তো তোর ভালো চায়।”

তুয়া ওর আম্মুর দিকে তাকিয়ে তাকাল। তুয়ার কাছে সবাইকে অসহ্য লাগছে। কারো কথা ওর সহ্য হচ্ছে না। ভালো কথাও ওর কাছে তিক্ততায় পরিণত হচ্ছে। তুয়া ওর আম্মুর কথা শুনে নিজেকে উনার থেকে ছাড়িয়ে চিৎকার করে বলল, “আমার ভালো কেন চাইবে? কেন চাইবে? কে উনি? কোনো পুরুষই ভালো না। বলো! তুমিই বলো, পুরুষ মানুষ এত ভালো হলে আমি কেন ধর্ষিতার কালিমা পেলাম? কেন আমার শরীরে নোংরা, অপবিত্রের অপবাদ এসে লাগল? বলো! বলো আম্মু! কেন এই কালিমা আমার শরীরে লাগল? পুরুষ ভালো হলে কেন তাদের কাছে মেয়েদের ধর্ষণ হতে হয়? উত্তর দাও! কি হলো উত্তর দাও আমাকে, আম্মু?”

তুয়া আবারও উত্তেজিত হয়ে গেছে। ওর চিৎকারে নার্সরা ছুটে এসেছে। প্রত্যয় এর মাঝে একজন নার্সকে ঘুমের ইনজেকশন রেডি করতে বলেছে। তুয়া আবারও পাগলামি শুরু করার আগেই প্রত্যয় তুয়ার হাতে ইনজেকশন পুশ করে দেয়। তুয়া ছোটাছুটি করে উঠতে গেলে প্রত্যয় ওকে বাঁধা দেয়। ইচ্ছে তুয়ার চিৎকারে ভয় পেয়ে গুটিশুটি হয়ে বসে আছে। তুয়া চিৎকার করে বলছে, “বলুন! বলুন! কেন আমাকে করুণা করছেন? কেন? আমি করুণা নিয়ে বাঁচতে চাই না। আমি মরে যাব। মুক্তি চাই! আমি মুক্তি চাই।”

তুয়া কথাগুলো আওড়াতে আওড়াতে ঘুমিয়ে গেল। তুয়ার শরীরে স্যালাইন দেওয়া হলো। প্রত্যয় অন্য সিরিঞ্জ দিয়ে ব্যথা কমানোর লিকুয়িড মেডিসিন স্যালাইনে যুক্ত করে দিল। যাতে স্যালাইনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে ব্যথার মেডিসিন ওর শরীরে গিয়ে হাতের ব্যথাটা কম হয়। তুয়াকে একটু কড়া ডোজের ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। সে এখন বেশ কয়েক ঘন্টা নিশ্চিন্তে ঘুমাবে। প্রত্যয় ইচ্ছেকে নিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে গেল। জামিলকে সন্ধ্যা আটটায় ওটি রেডি করতে বলে সে বাসায় চলে গেল। তুয়ার আম্মু বসে বসে চোখের পানি ফেলতে লাগলেন।

তুরাগকে প্রত্যয়ের আম্মু বাসায় ‌ডেকে খাইয়েছেন। তুরাগ এখন ঘুমাচ্ছে। তুরাগের শরীরে জ্বর চলে এসেছে। প্রত্যয়কে বাসায় ফিরতে দেখে প্রত্যয়ের আব্বু-আম্মু তুয়াকে দেখতে গেলেন। ইচ্ছে প্রত্যয়দের ফ্ল্যাটে আসেনি। সে দেখেছে প্রত্যয় তুয়াকে ইনজেকশন দিয়েছে। এজন্য ইচ্ছে কিছুতেই আর প্রত্যয়ের কাছে আসবে না। প্রত্যয়ের গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গে সে দৌড়ে পালিয়েছে।

প্রত্যয় ফ্রেশ না হয়েই উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল। পুরো বাসায় এখন সে একা আছে। প্রত্যয়ের কষ্টমিশ্রিত চোখের পানিতে ওর বালিশ ভিজে যাচ্ছে। ওর কান্নার কোনো শব্দ নেই। শুধু অঝরে নোনা পানি ঝরে বালিশ ভিজে যাচ্ছে। সে কাঁদছে কেন? তুয়ার কষ্ট দেখে নাকি তুয়ার প্রশ্নে ক্ষত বিক্ষত হয়ে? প্রত্যয় বালিশটা আঁকড়ে ধরে চোখের পানি ফেলতে থাকল। এভাবে কিছুক্ষণ থাকতে থাকতে প্রত্যয় ঘুমিয়ে গেল।

সন্ধ্যার একটু আগে প্রত্যয় উঠে ফ্রেশ হয়ে হসপিটালে গেল। ওর আব্বু-আম্মু তখনও হসপিটালেই ছিলেন। এখানে থাকলে তুয়া বেশি হাইপার হয়ে যাচ্ছে, এজন্য প্রত্যয় তুয়াকে রিলিজ করার পারমিশন দিল। তুয়া ভুল করেও একবার প্রত্যয়ের দিকে তাকায় নি। তুয়ার আব্বু-আম্মু মেয়েকে নিয়ে বের হলেন। প্রত্যয় উনাদের গাড়িতে তুলে দিয়ে ওটির ড্রেস পড়ে ওটিতে ঢুকে গেল। সে রাত তিনটার আগে বাসায় ফিরতে পারবে কিনা সন্দেহ। কারণ রাতেই ওর দু’টো অপারেশন করতে হবে।

পরেরদিন সকালে প্রত্যয় ওর আব্বু-আম্মুর সঙ্গে নাস্তা করতে বসেছে। প্রত্যয়ের আব্বু টুকটাক যা জিজ্ঞাসা করছেন, প্রত্যয় তার উত্তর দিচ্ছে। তখন কলিংবেল বেজে উঠল। প্রত্যয়ের আম্মু দরজা খুলে দেখে প্রিয়ম এসেছে। উনাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে প্রিয়ম দ্রুত পায়ে হেঁটে ওর রুমে গিয়ে, শব্দ করে রুমের দরজা আঁটকে দিল। কাউকে কিছু বলার সুযোগটুকুও সে দিল না। প্রত্যয়ের সামনে প্রিয়ম কখনও অভদ্র আচরণ করে না। কারণ সে সাহস প্রিয়মের বুকে নেই। এজন্য ওর এমন অাচরণে সবাই খুব অবাক হলো।

প্রত্যয়ের আম্মু দেখলেন একটা মেয়ে দরজার সামনে মুখ কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রত্যয়ের আম্মু মেয়েটি জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কে? তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না।”

মেয়েটা মাথা নিচু করে নিল। প্রত্যয় আর ওর আব্বু দরজার সামনে এসে দাঁড়াল। মেয়েটি উনাদের দেখে মাথাটা আরো নিচু করে বলল,

“আমার নাম চাঁদ! আমি প্রিয়মের বিয়ে করা বউ।”

চলবে।

‘সুদর্শন শঙ্খচিল’
[০৯]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

–“আমার নাম চাঁদ! আমি প্রিয়মের বিয়ে করা বউ।”

কথাটা শুনে সবার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। প্রিয়মের বউ মানে? সে আবার কখন বিয়ে করল? প্রত্যয়ের আম্মু কথাটা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলেন। উনি কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। প্রত্যয়ের আব্বু অবাক হয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছেন। সকালবেলা যে এত বড় শক পাবেন তা উনাদের ধারনার বাইরে ছিল।

প্রত্যয় ধীর কন্ঠে মেয়েটিকে বলল, “তুমি ভেতরে এসো।”

মেয়েটি ভয়ে ভয়ে ভেতরে প্রবেশ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকল। প্রত্যয় চাঁদকে সোফাতে বসতে বলে দরজা আটকে দিল। প্রত্যয়ের আব্বু-আম্মু শব্দহীন ভাবে এখনও দাঁড়িয়ে আছেন। প্রিয়ম যে উনাদের ছাড়া এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিবে, তা উনারা কল্পনাও করতে পারেন নি। প্রত্যয়ের আম্মু প্রিয়মের এমন কাজে কষ্ট পেয়ে রুমে গিয়ে কাঁদতে লাগলেন। প্রত্যয়ের আব্বুও ওখানে দাঁড়িয়ে না থেকে স্থান ত্যাগ করলেন। উনাদের আর কিছু বলার নেই।

প্রত্যয় এক গ্লাস পানি এনে চাঁদকে দিল। চাঁদ বিনাবাক্যে গ্লাসের সবটুকু পানি শেষ করল। এই পানিটুকু চাঁদের জন্য খুব বেশি প্রয়োজন ছিল। প্রত্যয় চাঁদের সামনে বসে মুচকি হেসে বলল, “আমি প্রিয়মের বড় ভাইয়া। তুমিও আমাকে ভাইয়া বলে ডাকবে।”

চাঁদ প্রত্যয়ের কথা শুনে নিচের দিকে তাকিয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল। প্রত্যয় চাঁদকে গেস্টরুম দেখিয়ে দিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিতে বলল। প্রিয়ম এখন কিছুতেই দরজা খুলবে না। ওর রাগ কমা না অবধি সে দরজা খুলবে না। এজন্য প্রত্যয় ইচ্ছে করে চাঁদকে গেস্ট রুমে ফ্রেশ হতে বলেছে। চাঁদ প্রত্যয়ের কথামতো রুমে ঢুকে গেল।

প্রত্যয় ওর আম্মুর রুমে গিয়ে ওর আম্মুর হাত দু’টো ধরে বলল,

–“আম্মু কেঁদো না। প্রিয়ম বের হোক, ওর রাগ কমুক। তখন না হয় ওর এই কাজের কারণটা জানবে। আমরা চোখে যা দেখি সেগুলো তো সব সময় সত্যি হয় না। সত্যির পেছনেও কখনও কখনও কারণ লুকিয়ে থাকে। আম্মু, পুরো ঘটনাটা না জেনে প্রিয়মকে ভুল বুঝো না। আর ওই মেয়েটা খুব ভয় পেয়ে আছে। তুমি একটু শান্ত হও! আমরা সবাই ঠান্ডা মাথায় আগে পুরো ঘটনাটা শুনি।”

প্রত্যয়ের আম্মু প্রত্যয়ের হাত ধরে কেঁদে উঠলেন। উনার এই ছেলেটা সত্যিই খুব বুঝদার। সে যে কোনো সমস্যাকে সহজ পন্থায় সমাধান করার পথ খুঁজে।
উনার নিজের কাছেই মনে হয় উনি রত্নগর্ভা। কারণ তিনি দু’টো হিরের টুকরো ছেলেকে জন্ম দিয়েছেন। প্রিয়ম আর প্রত্যয় দু’জনে আলাদা ধাঁচের মানুষ হলেও তারা যথেষ্ট ভদ্র ছেলে। হঠাৎ কি এমন হলো যে প্রিয়ম এমন সিদ্ধান্ত নিলো? একটা বার কি উনাদের বলা যেত না? প্রিয়মের এমন কাজে ওর আব্বু-আম্মু খুব কষ্ট পেয়েছেন। কারণ উনারা সব সময় ছেলেদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশে এসেছেন। তারা চায় ছেলেরা উনাদের কাছে ফ্রি হয়ে সব কথা শেয়ার করুক। তাদের সব ভাল-মন্দ অনুভূতির কথাও নিজে থেকে উনাদের জানাক। এতদিন তো সেইভাবেই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ভরসার জায়গাটুকু প্রিয়ম নিজে হাতে ভেঙে চুরে তছনছ করে দিল।

প্রত্যয় ওর আব্বু-আম্মুকে অনেক কথায় বলল। এটা উনাদের কাছে নতুন কিছু না। ছোট থেকেই প্রিয়ম ভুল করলে প্রত্যয় নিজে সেই ভুলে সমাধান খুঁজে বের করে। প্রত্যয় আর পাঁচটা ভাইয়ের মতো ভুল বুঝে রেগে প্রিয়মকে মারধর করে না। গালমন্দ করে কটু কথা বলে ভাইয়ের মনটা বিষিয়ে দেয় না। বরং সে মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করে। প্রত্যয় আজও প্রিয়মকে সাপোর্ট করল। প্রত্যয়ের আম্মু প্রত্যয়ের কথা শুনে কান্না বন্ধ করলেও, উনি কিছুতেই রুম থেকে বের হলেন না। প্রত্যয় ওর আব্বু-আম্মুকে চেচাঁমেচি করতে নিষেধ করল। সে ব্যাপারটা ঠান্ডা মাথায় ম্যানেজ করতে চায়। প্রত্যয় মনে করে, অহেতুক চেচাঁমেচি করে লোক জানালে দেখা যাবে, ঘরের কাহিনী বাইরে গিয়ে আরো বিশ্রীভাবে ডালপালা ছড়াবে।

তুয়া চুপটি করে ওর রুমে শুয়ে আছে। তুয়ার খবরটা চারদিকে ছড়িয়ে গেছে। এতবড় একটা ঘটনা ঘটল, মিতু তবুও তুয়ার কাছে একবারও আসেনি। তুয়া মিতুর কথা ভেবে বলল, “সুসময়ের বন্ধু অসময়ে নাই। বিপদে পড়িলে কেউ কাহারো নয়।”

প্রবাদটা বেশ কয়েকবার তুয়া মনে মনে আওড়ালো। ওর ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠল৷ কালকে থেকে বেশ কয়েকজন এসে ওকে সান্ত্বনা দিয়ে গেছে৷ কেউ বা আফসোস প্রকাশ করেছে। কেউ কেউ তো জানতেও চেয়েছে, “ছেলেগুলো কতজন ছিল? কয়জন মিলে ধর্ষন করেছে?”
এগুলো শুনে তুরাগ উনাদের বাসা থেকে বের করে দিয়েছে৷ কিন্তু সে কতজনের মুখ আঁটকে রাখবে? কতদিন বোনকে ঘরবন্ধী করে রাখবে? তুয়া ঘূর্ণায়মান সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে বলল, “এসব শুনেই আমাকে জীবন কাটাতে হবে৷ কারণ আমি ধর্ষিতা।”

রনিতদের বাসায় কয়েকজন প্রতিবেশী এসেছেন। পলক উনাদের সালাম দিয়ে নাস্তা আনতে গেল। দিশা সোফাতে বসে মুভি দেখছিল। পলকের শাশুড়ি পান চিবুতে চিবুতে গল্প জুড়ে দিলেন। উনাদের পাড়ায় কে কি করেছে, কার কি হয়েছে -এসব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। দিশার ফোন বাজছে বলে সে ছাদে চলে গেল। পলক এসে উনাদের নাস্তার ট্রেটা রাখতেই একজন মহিলা বলে উঠলেন, “নতুন বউ এখন পদ্ধতি-টদ্ধতি আর কইরো না।”

উনার কথাটা পলক ঠিক বুঝতে পারল না। তাই বোকার মতো প্রশ্ন করল,” পদ্ধতি মানে?”

পলকের কথা শুনে ওই মহিলা পলকের শাশুড়িকে ঠ্যালা দিয়ে হাসতে হাসতে বললেন, “ওমা! বউ দেখি এহনও কিছু বুঝে না। রণিত কি বউকে আদর-আহ্লাদ করেনি গো রনিতের মা?”

মহিলার মাথায় বুদ্ধির ছিটেফোঁটা থাকলেও ছেলের মাকে এসব কথা জিজ্ঞাসা করতেন না। কথাটা বলে উনি সহ বাকিরাও হাসতে লাগলেন। মনে হচ্ছে উনারা নতুন কোনো ইতিহাস রচনা করে ফেলেছেন। রনিতের আম্মু আপন মনে পান চিবুতে ব্যস্ত। পলক লজ্জায় মাথা নিচু করে দ্রুত ওখান থেকে চলে গেল। প্রথম দেখায় যে কাউকে সরাসরি এসব কথা বলা যায় তা পলকের জানা ছিল না। পলক রুমে যেতে যেতে শুনল, এক মহিলা বলছেন, “ক্যা গো রনিতের মা, তোমার পোলা আর বউরে কি সকালে গোসল দিতে দেখো না?”

রনিতের আম্মু পানের পিক ফেলে বললেন, “মা হয়ে এসব দেখতে যাব? তোমরাও যে কি কও না গো বু।”

আরেকজন মহিলা আঙ্গুলে লেগে থাকা পানের চুন টুকু মুখে দিয়ে বললেন, “ওই মকবুল্ল্যা আছে না? ওই পোলা বিয়া কইরা হ্যানিমুন না কি জানি কয় ওইসব কইরা, বউরে নিয়া রং ডং কইরা আমোদ ফূর্তি কইরা বেড়াইতো। এত এত দামি দামি খাওয়ার গিলাইতো। সে বউ এখন ধুমসি হইয়া প্যাটে চর্বি জইমা গেছে। এহন হাজার চেষ্টা কইরাও ছালপাল হইতাছে না। তাই কইতাছি দিশা আর পলককে বাচ্চা লইতে কও।”

“আমি বাচ্চা নিলে তো আপনি এসে আমার হয়ে ডেলিভারি করে দিয়ে যাবেন না। আমাকেই আমার ডেলিভারি করতে হবে। তাই আমি আমার সময় মতো সিদ্ধান্ত নিব। আপনি এখন তেল মারা বন্ধ করুন।”, কথাটা বলে দিশা হনহন করে চলে গেল। দিশার কথা শুনে কেউ কিছু বলার সাহস পেল না। পলক কিছু বলল না দেখে ওকে নিয়ে সবাই হাসাহাসি করল। আর দিশার কড়া জবাবে তাদের মুখ বন্ধ হয়ে গেল। একেই বললে, ‘শক্তের ভক্ত নরমের যম।’

চাঁদ গেস্ট রুমে চুপটি করে বসে আছে। প্রিয়ম এখনো ওর রুম থেকে বের হয়নি। প্রত্যয়ের জরুরী কল এসেছে। সে রেডি হয়ে দ্রুত বের হয়ে গেল। যাবার আগে সে আম্মুকে বলে গেল চাঁদকে কিছু খেতে দিতে। প্রত্যয় এক তলাতে যেতেই ইচ্ছের মুখোমুখি হলো। ইচ্ছে ওদের দরজার সামনে রান্নাবাটি খেলছিল। প্রত্যয় ইচ্ছের কাছে গিয়ে মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করল, “ইচ্ছেমণি, কি করছ?” ইচ্ছে পেছনে তাকিয়ে প্রত্যয়কে দেখেই দৌড়ে পালাল। প্রত্যয় এত ডাকল তবুও সে শুনল না। প্রত্যয় আর না দাঁড়িয়ে স্থান ত্যাগ করল।

তুয়া একা একা রুমে বসে কান্না করে। ওকে জোর করে খাওয়ালে খায়। আর নাহলে টু শব্দও করে না। তুরাগ নিজে হাতে তুয়ার জন্য পাস্তা বানিয়ে তুয়াকে বলল, “তুলা, খেয়ে দেখতো কেমন হয়েছে?”

তুয়া তুরাগের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। বোনকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তুরাগ বলল, “এত কষ্ট করে বানালাম, খেয়ে দেখ।”

তুয়া চোখের পানি মুছে তুরাগকে সরাসরি বলল, “ভাইয়া, দয়া দেখাচ্ছিস? কই আগে তো পাস্তার জন্য তোর পেছনে ঘুরলেও বানাতি না। বরং বাইরে থেকে এনে খাওয়াতি। আজকে আমার প্রতি এত ভালবাসা দেখাচ্ছিস কেন? তোদের এত ভালবাসা আমাকে ভালো থাকতে দিচ্ছে না। আমার প্রতি তোদের এতটা কেয়ার আমাকে বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছে, আমি অন্য কেউ।”

তুরাগ আর একটা কথাও বলতে পারল না। চোখের পানি মুছতে মুছতে সে চলে গেল। বোনের করা প্রশ্নের উত্তর তার জানা নেই। তুয়ার আম্মু-আব্বু পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে অশ্রু ঝরাতে লাগলেন। তুয়া পাশফিরে শুয়ে কাঁদতে লাগল। চোখের পানিটাই যেন এখন ওর নিত্যদিনের সঙ্গী।

তুয়ার সঙ্গে যে এমন কিছু ঘটবে, এটা ওর ধারণার বাইরে ছিল। সে তো শার্ট আর জিন্স পরে রাস্তায় বের হয়নি। ওর শরীরে মার্জিত সালোয়ার কামিজ আর মাথায় হিজাব পরা ছিল। দেহের প্রতিটা ভাঁজ বোঝা যায়, এমন পোশাক তো ছিল না ওর শরীরে। তাহলে কেন তাকে ধর্ষিতা হতে হলো? যুক্তিবাদীরা অনেকে বলে, “মেয়েদের পোশাকের মাধ্যমে মেয়েরা ধর্ষণকে আহবান জানায়।” তাহলে তুয়ার মতো মার্জিত পোশাকের মেয়ে গুলো ছাড় পায় না কেন? এসব প্রশ্নের উত্তর কখনও মিলে না, আর মিলবেও না।

প্রত্যয়ের আম্মু সারাদিন তুয়াদের বাসায় আসেন নি। উনার বাসায় যা ঘটে গেছে, তা তিনি কাউকে বলতেও পারছেন না। অন্যদিকে চাঁদ বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে গেছে। প্রত্যয়ের আব্বু বাইরে চলে গেলেন। সন্ধ্যার পর প্রত্যয় বাসায় ফিরল। প্রিয়ম এখনও দরজা খুলেনি৷ চাঁদ মাথা নিচু করে কাঁদছে। প্রত্যয়ের আম্মু চাঁদকে খেতে দিয়েছেন, সে একটুও কিছু খায়নি। প্রত্যয় ফ্রেশ হয়ে এসে প্রিয়মের রুমের দরজায় নক করে বলল, “প্রিয়ম, আমি ছাদে যাচ্ছি। দশ মিনিটের মধ্যে ছাদে এসো।”

কথাটা বলে প্রত্যয় ছাদে চলে গেল। প্রত্যয় যাওয়ার তিন মিনিট পর প্রিয়ম রুম থেকে বের হলো। ওর আম্মু ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন। প্রিয়মের চোখ দু’টো লাল হয়ে ফুল আছে। প্রিয়মকে দেখে চাঁদ এসে বলল, “এমন করছ কেন তুমি? প্লিজ কথা বলো।”

প্রিয়ম চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলল, “আগামী এক সপ্তাহ তোমাকে আমার চোখের সামনে যেন না দেখি। যদি ভুলেও আমার সামনে পড়ো, তাহলে তোমার কপালে মারাত্মক দুঃখ আছে।”
কথাটা বলে প্রিয়ম ছাদে চলে গেল। সে সবাইকে এড়িয়ে গেলেও, প্রত্যয়কে এড়িয়ে যেতে পারে না। প্রত্যয় যেমন প্রিয়মের ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয় না। তেমনি প্রিয়মও ভাইয়ের জন্য প্রাণ বির্সজন দিতে দু’বার ভাববে না। ওদের দুই ভাইয়ের সম্পর্কের বাঁধনটা এতটাই মজবুত! প্রত্যয় রেগে গেলেও প্রিয়মকে তুই বলে না। সে সব সময় বিনয়ী ভাবে তুমি বলেই ডাকে, প্রিয়ম যতই অপরাধ করুক না কেন।

প্রত্যয় ছাদে এসে দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয়ম গিয়ে মাথা নিচু করে প্রত্যয়ের পাশে দাঁড়াল। প্রত্যয় ঘার ঘুরিয়ে প্রিয়মে মাথা নিচু করে থাকতে দেখে জড়িয়ে ধরল। প্রিয়ম ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। প্রত্যয় প্রিয়মের পিঠে হাত রেখে বলল, “সব সমস্যার একটা হলেও সমাধান আছে। শুধু খুঁজে বের করার অপেক্ষা। আমি আছি আমার ভাইয়ের পাশে।”

এই আশ্বাসটুকু প্রিয়মের জন্য যথেষ্ট। প্রত্যয় বেশ কিছুক্ষণ প্রিয়মকে জড়িয়ে ধরে থাকল। কারণ সে প্রিয়মকে স্বাভকবিক করতে চায়। সে স্বাভাবিক হলে তবেই তো পুরো কাহিনীটা খোলাসা হবে। প্রত্যয় একটু পর প্রিয়মকে ছেড়ে ওর মুখ মুছে দিল। দুই ভাই ছাদের কিনারে পাশাপাশি বসল। প্রত্যয় পাশে থাকা ট্রে থেকে স্যান্ডুইচ আর কফির মগ প্রিয়মকে দিয়ে বলল, “এটা ধরো, আগে স্যান্ডউইচ খেয়ে পানি খাবে। তারপর কফিটা খাবে, নাহলে গ্যাস্টিকের সমস্যা হবে। আমি জানি, তুমি সারাদিন কিছু খাও নি। এখন কোনো অজুহাত চলবে না। দ্রুত স্যান্ডুইচ ফিনিশ করে কফি খাবে। তাহলে মাথা ব্যথা কমে যাবে।”

চোখের পানি পড়ার কারণে সত্যিই প্রিয়মের মাথা ব্যথা করছিল। প্রিয়ম অন্য দিকে ঘুরে চোখ মুছে নিলো। সে আব্বু-আম্মু আর ভাইকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। একথা ভাবলে ওর মরে যেতে ইচ্ছে করছে। প্রত্যয়ের কথা মতো প্রিয়ম স্যান্ডউইচ খেয়ে পানি পান করে কফির মগ হাতে নিলো। প্রত্যয় ওর মগে একটা চুমুক দিয়ে শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল, “চাঁদের সঙ্গে কি তোমার সত্যি বিয়ে হয়েছে?”

প্রিয়ম মাথা নিচু করে বলল, “জ্বি ভাইয়া। ”

To be continue…!!