স্বপ্নছায়া ২ পর্ব-২২+২৩

0
298

#স্বপ্নছায়া (কপি করা নিষিদ্ধ)
#দ্বিতীয়_খন্ড
#২২তম_পর্ব

আদালত থমথমে। বিচারক তার চশমাখানা ঠিক করে বললেন,
— “শাফায়াত সাহেবের কি কিছু বলার আছে?”

শাফায়াত কিছু বলতেই যাবে ঠিক তখন ই অভ্র তাকে ইশারা করে। ফলে সে অন্যভাবে কথাগুলো সাজায়। তার কাছে প্রমাণের স্বল্পতার জন্য সে বলে,
— “মাননীয় আদালত আমার উকিল বন্ধুটি তিলকে তাল বানাচ্ছেন, সেদিন যা ঘটে ছিলো তা সম্পুর্ণ কাকতালীয় একটি ঘটনা। আমাদের থানায় অজস্র কেস থাকে যেখানে নিজ বাবা-মার কাছ থেকেই সন্তান হারিয়ে যায়। তাহলে কি সেই সন্তানদের জন্য তার বাবা-মা যোগ্য নয়? অবশ্যই না। সেদিন দিশানের হারিয়ে যাওয়ায় আমার মক্কেলের কোনোই দোষ নেই। আমার মক্কেল দিশানকে সেই আড়াই বছর থেকে মানূষ করে যাচ্ছে। দিশানের যত্নের যেনো ত্রুটি না হয় সেজন্য আমার মক্কেল বাচ্চা নেবার জন্য ও প্রস্তুত ছিলেন না। তার নিজের সন্তান হবার পর ও সে সর্বপ্রথম দিশানকেই রাখে। তাই আমার বন্ধু উকিলের যুক্তি খারিজ করার আবেদন আমি আদালতের কাছে করবো। ধন্যবাদ”

বিচারক বেশ কিছুক্ষণ ভাবলেন। আদালতে তখন পিনপতন নীরবতা। কোনো শব্দ নেই। ঐন্দ্রিলা এসে বেঞ্চে বসলো। তার বুকে এক তীক্ষ্ণ যন্ত্রণা করছে। প্রচন্ড ভয় তার বুককে ঝাঝড়া করে তুলেছে। অভ্র একবার আড়চোখে ঐন্দ্রিলার দিকে চাইলো। ঐন্দ্রিলার থমথমে মুখখানা তার অশান্ত চিত্তের আয়নার স্বরূপ। অভ্র আলতো হাতে ঐন্দ্রিলার হাতটি শক্ত করে ধরল। অভ্রের স্পর্শ পেয়ে কাতর দৃষ্টিতে চাইলো ঐন্দ্রিলা অভ্রের দিকে। অভ্র তখন ও সামনের দিকেই তাকিয়ে আছে। তার মুখে কোনো পরিবর্তন হলো না, যেনো সে জানে এখন কি ফলাফল বের হবে। বিচারক কোনো বিচার করলেন না, উলটো সামনের শুনানীর সময় দিলেন। এই মাসের উনত্রিশ তারিখ পুনরায় মামলা কোর্টে শুনানী হবে। অভ্র এটাই চাচ্ছিলো। ততদিনে এই জ্যানেটের সকল রহস্যের উম্মোচন সে করবে। জ্যানেট বেশ হাসি হাসি মুখ করেই বের হলো। কোর্ট থেকে বের হবার পর সে অভ্রের কাছে এসে দাঁড়ালো। প্রফুল্ল কন্ঠে ইংরেজীতে বলল,
— “”Don’t worry, I’m winning the case. Evidence is a big thing, not just an unreasonable argument” (চিন্তা করবেন না, মামলা আমি ই জিতছি। অহেতুক যুক্তি দাঁড় করালেই হয় না, প্রমাণই বড় জিনিস)

বিদ্রুপমাখানো উক্তির উত্তর দিলো না অভ্র। শুধু অপলক শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। সে নিশ্চিত, জ্যানেট পুনরায় এমন কিছু করবে যার জন্য কোর্টে ঐন্দ্রিলা এবং অভ্রকে দোষী প্রমাণ করা যায়। কিন্তু সেই সুযোগ অভ্র দিবে না। দাবার গুটিতে একটা সামান্য সৈন্যও বড় খেলা খেলে। সেই সৈন্যের অপেক্ষায় আছে অভ্র। এর মাঝে ঐন্দ্রিলা শীতল কন্ঠে বলে উঠে,
— “আমরা যা দেখি সর্বদা কি তা সত্য হয়! আবার অনেককিছুই পঞ্চম ইন্দ্রিয়ের অপ্রকটে ঘটে যা কল্পনাতীত। তবুও আমরা সত্য মিথ্যের গোলাকধাধায় ঘুরপাক খাই, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মারাত্মক খেলা খেলি। তাই কাঘজের প্রমাণকে চোখ বুঝে ভরসা করবেন না, মাঝে মাঝে তা ধোকাও দেয়”

জ্যানেটের হাসি মিয়ে গেলো। ঐন্দ্রিলার কথাটা সে বুঝলো না ঠিক। মেয়েটি কি তাকে বিদ্রুপ করছে? করতেই পারে। এই মেয়েটিকে বিশ্বাস নেই। জ্যানেট হনহন করে হেটে তার উকিলের নিকট গেলো। বাংলা ইংরেজী মিশিয়ে বললো,
— “এই মেয়েটা অনেক চালাক আছে। খেয়াল রাখবেন”

গাড়িতে উঠেই গা এলিয়ে দিলো ঐন্দ্রিলা। প্রচন্ড মাথা ধরেছে তার। গতরাতে চিন্তার দরুন এক বিন্দুও ঘুমায় নি সে। তাই মাথার শিরা লাফাচ্ছে। ঠিক সেই সময় অভ্র বলে উঠলো,
— “ঐন্দ্রিলা, আমাদের এই সপ্তাহেই কিছু করতে হবে। এই এক দু সপ্তাহ জ্যানেট দিশানের ক্ষতি করার জন্য উঠে পড়ে লাগবে”
— “বেশ তবে আজকেই নাটকের সূত্রপাত হোক”
— “সেটাই ভালো, কারণ আগামী সপ্তাহ আমি কানাডা যাবো”

কানাডা যাবার কথায় প্রশ্ন তুললো না ঐন্দ্রিলা। সে জানে কেনো অভ্র কানাডা যাচ্ছে। কিন্তু তার ভয় হচ্ছে জ্যানেট তাদের পরিকল্পনা ধরে না ফেলে!

১১.
থমথমে পরিবেশ নীলাদ্রিদের বাড়িতে, হুটকরেই সকাল সকাল দিশান এবং অদ্রিকে নিয়ে হাজির হয়েছে ঐন্দ্রিলা। ফোন ট্যাপ করার ভয়ে কাউকে ফোনেও জানায় নি সে। তার এরুপ আগমনে শরীফ সাহেবের মুখখানা চিন্তায় কালো হয়ে উঠলো। নীলাদ্রি প্রশ্ন করে উঠলো,
— “সব ঠিক আছে তো?”

তখন বাধ্য হয়ে সকল ঘটনা খুলে বলতে হলো ঐন্দ্রিলার। সকল ঘটনা শুনবার পরে চিন্তা দূর হবার বদলে আরোও ঘনীভূত হলো। তাদের আশঙ্কা হচ্ছে ওই ধূর্ত মহিলাকে নিয়ে। কিন্তু ঐন্দ্রিলা তাদের আশ্বস্ত করলো যে কিছুই হবে না। এদিকে নীলাদ্রি চিন্তা বাড়লো অন্যদিকে। বোন হুট করে এসেছে বাচ্চাদের নিয়ে ডাল ভাত তো খাওয়ানো যাবে না। এদিকে তার কাছে খুব একটা টাকাও নেই যে এলাহী কান্ড করবে। পিউ নীলাদ্রির বসা মুখটা দেখে কিছু একটা ভাবলো। সে কিছু একটা ভেবেছে কিন্তু নীলাদ্রিকে বললেই সেই লোক আত্মসম্মানের রেডিও চালাবে। তাই যা করতে হবে তাকেই করতে হবে। তাই সে বললো,
— “ঐন্দ্রি তুই রুমে রেস্ট কর, আমি মামীমার সাথে দেখা করে আসছি”
— “আমিও যাবো, দাঁড়া”

ঐন্দ্রিলাকে বাধা দিলো না পিউ। বরং সে সাথে থাকলে কাজ করতে সুবিধা হবে। এদিকে শরীফ সাহেব রয়েসয়ে বললেন,
— “নীল, বাজার করতে হবে যে?”
— “আমি সেটাই ভাবছিলাম। তুমি চিন্তা করো না, সব হয়ে যাবে”
— “তোর চাকরির কিছু হলো?”
— “তুমি চিন্তা করো না, সব হয়ে যাবে”

শরীফ সাহেব বুঝলেন ছেলে তার কথা এড়িয়ে যেতে চাচ্ছে। তাই কথাটা বাড়ালেন না। নীলাদ্রি বাজারের ব্যাগটা নিয়ে বের হলো, সাথে ব্যাংকের কার্ডটাও। খরচ বাড়ছে, টাকা কমছে। কোথায় গিয়ে ঠেকে কে জানে?

দিশা সবে ঘুম থেকে উঠলো, কদিন তার শরীর ভালো না বিধায় ভার্সিটি মুখো হয় নি সে। গেলেই শরীর আরোও খারাপ হবে। সেই আহাশ তার নতুন ম্যাডামকে নিয়ে ঢ্যাং ঢ্যাং করবে নয়তো তার পিছু লাগবে। এর থেকে বাসায় থাকে ঢের ভালো। বসার ঘরে আসতেই ঐন্দ্রিকে দেখে জড়িয়ে ধরলো।
— “আজ কলেজ নেই নাকি?”

ঐন্দ্রিলার প্রশ্নে মিনমিন স্বরে বললো,
— “তোমার দেবর আমার জীবন তেজপাতা করে দিচ্ছে আর কলেজ”
— “কিছু বললি?”
— “না গো, শরীরটা ভালো নেই বিধায় এই তিন দিন যাই নি”
— “জ্বর?”

দিশা কিছু বলতে যাবে তখন পিউ বলে উঠলো,
— “প্রেমজ্বর”

ঐন্দ্রিলা মুখ চেপে হাসলো কিছু সময়। পিউ এর ফাযলামিতে মুখে রক্তিম হয়ে উঠলো দিশার। মুখ ভেঙ্গে বললো,
— “ধ্যাত, পিউ আপু ভালো হচ্ছে না”

ঐন্দ্রিলা তখন বললো,
— “দিশা আমাদের বড় হয়ে গেছে রে, তাই তো বিয়ের সম্মন্ধ নিয়ে আসলাম”

দিশার মুখের রঙ সাথে সাথেই উড়ে গেলো। অবাক নয়নে তাকিয়ে রইলো ঐন্দ্রিলার দিকে। পিউ জিজ্ঞেস করলে ঐন্দ্রিলা বললো,
— “অভ্রের অফিসের একটি ছেলে রয়েছে, ভালো বেশ। দিশার সাথে সব দিক থেকে ভালো যায়। খালুর সাথে সেই ব্যাপারেই কথা বলতাম। দিশারানীর বিইয়ে বলে কথা”

দিশা কোনো উত্তর দিলো না। কিন্তু অনুভব করলো তার বুকটা প্রচন্ড জ্বালা করছে। কেমন দম বন্ধ লাগছে! এ এক অদ্ভুত অশান্তি। সত্যি কি সে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে?

ঐন্দ্রিলা পিউ এর কথাই বলছিলো ঠিক সেই সময় তার ফোনটি বেজে উঠে। অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসছে। ঐন্দ্রিলা কিছুক্ষন ভেবে ফোনটি রিসিভ করে। তখন……………

চলবে

#স্বপ্নছায়া (কপি করা নিষিদ্ধ)
#দ্বিতীয়_খন্ড
#২৩তম_পর্ব

দিশা কোনো উত্তর দিলো না। কিন্তু অনুভব করলো তার বুকটা প্রচন্ড জ্বালা করছে। কেমন দম বন্ধ লাগছে! এ এক অদ্ভুত অশান্তি। সত্যি কি সে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে?

ঐন্দ্রিলা পিউ এর কথাই বলছিলো ঠিক সেই সময় তার ফোনটি বেজে উঠে। অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসছে। ঐন্দ্রিলা কিছুক্ষন ভেবে ফোনটি রিসিভ করে। তখন অপরপাশ থেকে তীক্ষ্ণ নারী কন্ঠ কানে ভেসে আসে,
— “হ্যালো মিসেস চৌধুরী”

কন্ঠটি কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই ঝংকার তোলে। স্নায়ু কোষগুলো উত্তেজিত হয়ে উঠে। ঐন্দ্রিলার মুখভাব বদলে যায়। সে পিউ এবং দিশা থেকে দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। শক্ত কন্ঠে বলে,
— “আপনার কি সত্যি ই কোনো কাজ নেই মিস জ্যানেট? Do you like to annoy someone all the time?” (সারাক্ষণ কাউকে বিরক্ত করতে কি খুব ভালো লাগে আপনার?)
— “Are you very angry? But I called for your benefit. (খুব রেগে আছেন নাকি? আমি কিন্তু আপনার উপকারেই ফোন দিয়েছি)
— “কি বেনেফিট?”
— “বলছি, বলছি। I heard you went to your father’s house? So I called to give you important news. Your husband wants to meet me. Surely you can understand why? Now there is no obstacle to fulfill my desire, you can do nothing even if you want to.”
(শুনলাম, আপনি নিজের বাবার বাড়ি চলে গিয়েছেন? তাই আপনাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ খবর দিতে ফোন করেছি। আপনার স্বামী আমার সাথে সাক্ষাত করতে চায়। বুঝতে নিশ্চয়ই পারছেন কেনো? এখন আমার মনোবাঞ্চা পূরণ হতে কোনো বাধা নেই, আপনি চাইলেও কিছুই করতে পারবেন না)
— “অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস পতনের কারণ হয়, আপনি হয়তো খরগোশের গল্পটি শুনেন নি, খরগোশের আত্মবিশ্বাস আর অহংকার ই তাকে ডুবিয়েছিলো। যাক গে, চেষ্টা করুন। সম্পর্কে খুটাখুটি থাকেই তার মানে সেই সম্পর্ক ভেঙ্গে যাবে সেটা ভুল ধারণা”
— “হোয়াট?”
— “Try your best” (সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন)

বলেই ফোনটা খট করে কেটে দিলো ঐন্দ্রিলা। একজন নারী এতোটা বেহায়া এবং নিচ মানসিকতার হতে পারে ভাবতেই বিরক্তিতে মস্তিষ্ক ছেয়ে যায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী জ্যানেট তাদের ফাঁদে পা দিয়েছে। তার বিশ্বাস অভ্র এবং ঐন্দ্রিলার মাঝে ঝগড়া, মান-অভিমানের পালা চলছে। ঐন্দ্রিলা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। কেনো যেনো মনে হচ্ছে সকল ঝামেলার অন্ত হতে যাচ্ছে। অজানা প্রশান্তি মনমন্দিরের আঙিনায় লহর তুললো। আজ নিশ্চিন্তে ঘুমাবে সে। কতকাল ঘুমানো হয় না। প্রশান্তির ঘুম।

বদরুল সাহেবের সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে পিউ। বদরুল সাহেবের কপালে চিন্তার ভাঁজ, একই বাড়িতে থাকা স্বত্তেও তারা জানেন না কিছুই। নীলাদ্রি চাকরি ছেড়ে দিয়েছে এক মাসের অধিক হবে। অথচ তারা কেউ ই জানেন না। গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
— “এতোকাল জানালে না কেনো?”
— “তোমাদের অহেতুক চিন্তায় ফেলতে ইচ্ছে হয় নি”
— “ছেলেমেয়েগুলো কষ্ট করবে আর আমরা চিন্তা করবো না? শরীফ ভাই জানেন?”
— “জানেন, এক সপ্তাহ পূর্বে নীলাদ্রি জানিয়েছে। বিশ্বাস করো ও চেষ্টা করছে। কিন্তু চাকরির বাজার তো তুমি জানোই। উপরন্তু গত চাকরি ছাড়ার কারণটা এতো অদ্ভুত যে সবাই হা করে তাকিয়ে থাকে”
— “নীলাদ্রি এতোটা গর্দভের মতো কাজ করবে আশা করি নি, আরে ভাই চাকরি কি মোয়া নাকি! মন চাইলো ছেড়ে দিলাম? নাহ! এতো বুদ্ধিমান ছেলের দ্বারা এতো গাধামী কি মানা যায়। এখনকার ছেলেপুলেদের এতো ইমোশন? আরে ভাই বাচ্চা হচ্ছে বলে কি চাকরি ছেড়ে দিবি? আমরা কি মরে যাচ্ছিলাম?”

বদরুল সাহেবের মেজাজ সম্পর্কে পিউ এর জানা। তিনি যে হুটহাট রেগে যান সেটা নতুন কিছু না। কিন্তু আজ কেনো জানে মামুর মুখে নীলাদ্রিকে গালমন্দ করাটা সহ্য হলো না পিউ এর। কেনো জানে রাগ হচ্ছে, নীলাদ্রি তো ইচ্ছে করে চাকরি ছাড়ে নি। ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। বলা নেই কওয়া নেই সিলেটে পাঠিয়ে দিচ্ছিলো তারা তাকে। বেচারার করার কিছুই ছিলো না। পিউ খানিকটা ঝাড়া গলায় বললো,
— “বেয়াদবী ক্ষমা করো, কিন্তু আমি তোমার কাছে নীলাদ্রির গাধামীর বিশ্লেষণ শুনতে আসি নি। এসেছি একটা সাহায্য চাইতে। তুমি কি করবে?”
— “আর উপায় রেখেছে তোমার স্বামী?”
— “মামু, প্লিজ”
— “আচ্ছা, আচ্ছা। বল কি সাহায্য?”

পিউ এবার দমলো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বদরুল সাহেবকে নিজের পরিকল্পনা বললো। সব কিছু শোনার পর বদরুল সাহেব ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো পিউ এর দিকে। তার চোখে এক রাশ জিজ্ঞাসা। সেই ছোট্ট পিউটা এতো বড় করে হয়ে গেলো সেটাই বুঝতে পারছেন না তিনি। অবাক কন্ঠে শুধালেন,
— “তুই পারবি?”
— “আলবত পারবো, এটা শুধু ঘর চালানোর নয়। আমার নিজের জন্য। যতদিন না ভালো একটা চাকরি নীলাদ্রি পায়, ততদিন পর্যন্ত না হয় ঠেকটা দিলো। আর তারপর আমি সেটা আমার শখ পূরণের জন্যই না হয় করবো”
— “যেমন তোর ইচ্ছে”

বদরুল সাহেবের কথায় নতুন প্রভাতের কিরণ দেখতে পেলো পিউ। তার পথচলা তো কেবল শুরু। এখনো অনেক দূর যেতে হবে। সুনিপুন ভাবে ছোট নিঃশ্বাস গোপন করে পিউ বললো,
— “ধন্যবাদ মামু”
— “সে সব ঠিক আছে, কিন্তু নীলাদ্রি ছেলেটা আসলে একটা গর্দভ। উন্নত পর্যায়ের গর্দভ”

পিউ কিছু বললো না। শুধু নিঃশব্দে হাসলো।

বিকেল পাঁচটা,
পড়ন্ত রোদ অভ্রের মুখে আছড়ে পড়ছে। সোনালী তেজহীন রোদ, শীতল বায়ু মুখ ছুড়ে যাচ্ছে। গায়ে কাটাও লাগছে। নভস্থলে সাদা মেঘের ভেলা দলবদ্ধভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পশ্চিমে থালার ন্যায় কমালা সূর্যটি অস্তের যাত্রায় প্রস্তুত। কিয়তকালের ব্যাবধানেই সূর্যটা অস্ত যাবে। নেমে আসবে ঘোর আঁধার। অভ্র দিয়াবাড়ির রাস্তার পাশের ফুচকার দোকানে বসে আছে। এই কদিন গরম পড়ায় আজ আর সোয়েটার পড়ে নি অভ্র। কিন্তু এই সিদ্ধান্তটা ভুল ছিলো। এখন যত বিকেল ঘন হচ্ছে তত যেনো ঠান্ডা বাড়ছে। আর দিয়াবাড়ির ফাঁকা কোলাহল বিহীন পরিবেশে ঠান্ডাটা যেনো একটু বেশি। অবশ্য হবে না কেনো! মাঠের পর মাঠ শুধু কাশফুলের মাঠ। যদিও শীতের জন্য কাশবন এখন ঝড়ের পরের কাঙ্গাল জমির মতো লাগছে। তবুও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সর্বদাই অভ্রকে মুগ্ধ করে। আজ এখানে আসার কারণটি হলো জ্যানেট। জ্যানেট তার সাথে দেখা করার প্রস্তাবে রাজী হয়েছে কিন্তু সে কোনো ক্যাফে বা রেস্টুরেন্টে বসতে মানা করে দিয়েছে। তাই দিয়াবাড়ি বেছে নিয়েছে অভ্র। মহিলার সময়জ্ঞান নেই বলে ধারণা অভ্রের। তাইতো এখানে আসার কথা চারটা হওয়া স্বত্তেও মহিলাটি এখনো আসে নি। অভ্র এক রাশ বিরক্তি নিয়ে একটা বেনসন জ্বালালো। সিগারেট খাবার প্রবণতা বাড়ছে। দিনে এক প্যাকেট শেষ হয়ে যায় অথচ অভ্রের কাছে সেটাও কম মনে হয়। এই জ্যানেট নামক আপদটি বিদায় হলে হয়তো এই অশান্তি দূর হবে।

অভ্র হাওয়াইয় নিকোটিনের জ্বলন্ত ধোঁইয়া ছাড়ছিলো ঠিক সেই সময়েই কানে আছে নারী কন্ঠ।
— “সরি, মিস্টার চৌধুরী। দেরি হয়ে গেলো”

আধো ইংরেজীর টানে কথাটা বললো জ্যানেট। জ্যানেটের কন্ঠ কানে যেতেই সিগারেট ফেলে উঠে দাঁড়ালো অভ্র। কিন্তু কিছুই বলতে পারলো না। শুধু অবাক নয়নে তাকিয়ে রইলো জ্যানেটের দিকে। মেয়েটি একটা সাদা শাড়ি পড়েছে। ব্রাউন চুলগুলো খোঁপায় বেধেছে। ঘোলাটে চোখে গাঢ় কাজলের প্রলেপ, ঠোঁট রাঙ্গিয়েছে গাঢ় লাল রঙ্গে। মেয়েটিকে দেখে এক মূহুর্তের জন্য তার মনে হয়েছে জ্যানিফার দাঁড়িয়ে আছে। জ্যানিফার ও ঠিক এভাবেই সেজেছিলো এই পড়ন্ত বিকেলে। সেদিন অভ্র বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলো তাকে। অভ্র চেষ্টা করেও নিজের দৃষ্টি সড়াতে পারলো না। বুকের প্রস্তরে চিনচিন ব্যাথা করছে। মস্তিষ্ক বারংবার বলছে এটা একটা ফাঁদ, মহিলা তোকে ঘোরে ফেলতে এভাবে সেজেছে। কিন্তু দূর্বল চিত্ত অতীতের সম্মুখে নড়েচড়ে উঠছে। জ্যানেট তখন ধীর গলায় বললো,
……………

চলবে

[ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন৷]
মুশফিকা রহমান মৈথি