স্বপ্নছায়া ২ পর্ব-২৮ এবং শেষ পর্ব

0
811

#স্বপ্নছায়া (কপি করা নিষিদ্ধ)
#দ্বিতীয়_খন্ড
#অন্তিম_পর্ব

উকিলের কথা শেষ হবার পর শাফায়াত দাঁড়ায়। মৃদু হেসে বলে,
— “আমার প্রতিপক্ষের উকিল বন্ধু একটু ভুল বললেন, মিস মার্টিন দিশানের ঠিকভাবে যত্ন কিংবা মানুষ করার জন্য তার কাস্টেডি চান না। তার মূল উদ্দেশ্য হলো মিস্টার রবার্ট মার্টিনের সম্পত্তি। রবার্ট মার্টিন জ্যানেট মার্টিনের পিতা। জ্যানিফার মার্টিনের মৃত্যুর পর কানাডিয়ান আইন অনুযায়ী তার সকল সম্পত্তি মালিক হবার কথা জ্যানেট মার্টিন। কিন্তু হঠাৎ এমন কিছু ঘটলো যার কারণে রবার্ট মার্টিন হুট করেই তার সম্পত্তির উইল বদলালেন। জ্যানেট মার্টিনের নাম বদলে সকল সম্পত্তির মালিক করা হয় জ্যানিফার মার্টিনের ছেলে দিশান চৌধুরীকে করা হয়। ব্যাপারটা খানিকটা সন্দেহজনক হলেও সত্যি। আমার কাছে রবার্ট মার্টিনের পূর্বের এবং বর্তমানের দুটো উইল ই আছে। আমি মাননীয় আদালতের কাছে উভয় উইল ই পেশ করতে চাচ্ছি”

শাফায়াত দুটো উইল ই পেশ করে। জ্যানেটের মুখের প্রফুল্লতা কোথাও যেনো উবে গেছে। বরং কৃষ্ণ ভয়ের একটা সূক্ষ্ণ রেখা পরিলক্ষিত হলো। শাফায়াত এবার আত্মবিশ্বাসের সাথে বললো,
— “আমি আমার যুক্তি প্রমাণের জন্য মিস জ্যানেট মার্টিনকে কাঠগড়ায় ডাকার জন্য অনুমতি চাইছি”
— “অনুমতি দেওয়া হলো”

বিচারকের সম্মতি পেতেই জ্যানেটকে কাঠগড়ায় ডাকা হলো। শাফায়াত হাস্যজ্জ্বল মুখে জ্যানেটকে ইংরেজীতে প্রশ্ন করলো,
— “আচ্ছা মিস মার্টিন মিস্টার রবার্ট মার্টিন হুট করেই তার উইলটি বদলালেন, এই ব্যাপারটি কি আপনার জানা ছিলো? কারণ আপনি বারোংবার এই দাবীটি ই করেছেন দিশার মার্টিন বংশের উত্তরাধিকারী”
— “জ্বী আমি জানতাম”
— “আপনি সেই সিদ্ধান্তে আপত্তি করেছিলেন কি?”
— “জ্বী না, বাবার সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত”

জ্যানেটের কন্ঠ বেশ শুকনো ঠেকলো। শাফায়াতের হাসি দীর্ঘস্থায়ী হলো, সে এবার তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো,
— “এখনো মিথ্যে বলবেন জ্যানেট ম্যাডাম?”
— “আমি মিথ্যে বলছি না”
— “হ্যা, আপনি মিথ্যে বলছেন। আপনি মোটেই স্বাভাবিক ছিলেন না এই সিদ্ধান্তটি জানার পর। আপনি পাগলপ্রায় হয়ে উঠেন দিশানকে খোঁজার জন্য”

তীব্র স্বরে কথাটা বলে শাফায়াত। জ্যানেট খানিকটা নড়ে চড়ে উঠে। শাফায়াতের আক্রমনে সে খানিকটা ভয় পেয়ে যায়। তখন জ্যানেটের পক্ষের উকিল “অবজেকশন” বলে উঠে। এবার বিচারক অবজেকশন গ্রান্ট করলেন না। শাফায়াত এবার ব্যাখ্যা করা শুরু করলো,
— “রবার্ট মার্টিন অসুস্থ হবার পর থেকেই তার ব্যবসার সকল দায়িত্ব মিস জ্যানেটের উপর পরে। জ্যানেট ম্যাডার কোম্পানির সকল দায়ভার নেয়। কিন্তু সেটা খুব একটা লাভ জনক হয় নি মিস জ্যানেটের জন্য। তিনি প্রতিনিয়ত নানা বিলাসিতা এবং নিজের ক্ষতিকারক আসত্তির জন্য অর্থের অপচয় করতে থাকেন। মাত্র এক বছরেই কোম্পানির রেভেনিও বদলে যায়। ফলে রাবার্ট মার্টিন সিদ্ধান্ত নেন তিনি জ্যানেটকে নিজের সম্পত্তি থেকে বিতারিত করবেন। দিশানের কথাটা তিনি জানতেন। ফলে উকিলের সাথে যোগাযোগ করে তিনি উইল বদল করেন। তার সকল কোম্পানি দায়িত্ব থেকে জ্যানেটকে বরখাস্ত করেন। মিস জ্যানেট এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেন নি। তাই তিনি ছক কষেন। দিশানের পুরো বৃত্তান্ত তিনি খুজে বের করেন। তিনি জানতেন মিস্টার অভ্র দিশানকে দত্তক নিয়েছিলেন। তাই সেই বাহানায় তিনি খালা রুপে দিশানের কাস্টেডি নিতে চান। তার উদ্দেশ্য দিশানকে একটি সুস্থ পরিবার দেওয়া নয়, বরং এই তাকে নিজের স্বার্থের জন্য ব্যবহার করা। রবার্ট সাহেব অসুস্থ হওয়ায় তিনি প্রতীক্ষায় আসেন কবে তিনি পরলোক গমন করবেন। তখন মিস মার্টিন দিশানের লিগাল গার্ডিয়ান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করবেন। নাবালক হবার কারণে দিশানের হয়ে তিনি ই সকল সম্পত্তি ভোগ করবেন। কিছুক্ষণ পূর্বে মিস মাহফুজা যা বলেছে সব ই বানোয়াট। মিস মার্টিনের সাজানো স্ক্রিপ্ট এ সে শুধু বয়ান দিয়েছেন। মাননীয় আদালত, মিস জ্যানেট একজন লোভী ই নন, বরং অতি জঘন্য মহিলা। তিনি দিশানের অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে তাকে নানাভাবে প্রলোভিত করার চেষ্টা করেছেন, যখন সেটা হয় নি তখন তিনি আমার মক্কেলদের সম্পর্কে ফাটল ধরাতে চেয়েছেন”
— “ইউ আর লাইয়িং”

জ্যানেট চেচিয়ে উঠলো। কিন্তু শাফায়াত থামলো না। বিচারক ও আদেশ করলো জ্যানেটকে সংযত বজায় রাখতে। শাফায়াত এবার অনুরোধ করলো,
— “আমি এজন্য আমার দ্বিতীয় সাক্ষী মিস্টার রবার্ট মার্টিনকে ভিডিও কলের মাধ্যমে আদালতে সাক্ষী প্রদান করার অনুমতি চাচ্ছি”

বিচারক সাহেব অনুমতি দিলে রবার্টের সাথে ভিডিও কলের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলো। জ্যানিফারের বাবা সাক্ষী দিলেন। রবার্ট মার্টিনের সাক্ষীতে কেসের ফলাফলের দ্বন্দতা শেষ হলো। পানির মতো স্বচ্ছ হলো সবকিছু। জ্যানেটের উকিল চাইলেও কিছুই করতে পারলো না। কারণ যার উত্তরাধিকার দাবি করছে জ্যানেট সেই দিশানের দাবি ছেড়ে দিয়েছে। পুরো কোর্টের মাঝে জ্যানেট অপব্যায়ী, নেশাখোর, জুয়ার নেশায় মত্ত একজন নারী প্রমাণিত হলো। এমন কাউকে কখনোই বাচ্চার অভিভাবক করা সম্ভব নয়। ঐন্দ্রিলা সপ্তপর্ণে দীর্ঘশ্বাস ফেললো, মনের কোনে জমে থাকা মেদুর মেঘের দল সরে গেলো। উচ্ছ্বাসের লহর উঠলো মন সমুদ্রে। বিচারক কিছুক্ষণ থামলেন। তারপর তিনি গম্ভীর ভাবে বললেন,
— “সব সাক্ষী এবং প্রমানের সাপেক্ষে এই আদালত এই সিদ্ধান্তে উত্তীর্ণ হল, দিশান চৌধুরীর কাস্টেডি অর্থাৎ ভরণপোষণ এবং যাবতীয় সকল দায়িত্ব মিস্টার অভ্র চৌধুরী এবং মিসেস ঐন্দ্রিলা চৌধুরীর কাছেই থাকবে। মিস জ্যানেট অহেতুক একজন পরিবারের শান্তি ব্যাঘাত করতে চেয়েছেন। নিজের স্বার্থের জন্য একজন বাচ্চার ব্যাবহার করতে চেয়েছে। এই দেশের নাগরিকত্ব না থাকায় তাকে কোর্ট কোনো শাস্তি দিবেন না, তবে তার ভিসা ক্যান্সেল করা হলো। আগামীকাল সন্ধার ভেতর তাকে কানাডা পাঠানোর ব্যাবস্থা করা আদেশ দেওয়া হলো। দ্যা কোর্ট ইজ এডজার্ন্ড”

অবশেষে সকল ঝামেলার অবসার ঘটলো। জ্যানেটের মুখটা হেরে যাওয়া সৈনিকের মতো লাগছিলো। ক্রোধ, অপমানে লাল হয়ে রয়েছে। কিছুই বলার সাহস যোগাতে পারছে না সে। ঐন্দ্রিলার ইচ্ছে হলো না তাকে টিটকারি দিয়ে কিছু বলার। প্রচন্ড ঘৃণা জন্মেছে তার। এতো ঘৃণ্য মানসিক্তার মানুষের সাথে কথা বলা মানে নিজের সময় নষ্ট। সে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

কোর্ট রুম থেকে বের হতেই দেখলো একটা কালো গাড়ির সামনে হেলান দিয়ে অভ্র দাঁড়িয়ে আছে। কালো একটা শার্ট শরীরে, জিন্সের প্যান্টে ইন করে রেখেছে। চুলগুলো এলোমেলো কপালে পড়ে আছে। সে এক মনোযোগে ঘড়ি দেখছে। ঐন্দ্রিলা কিছু সময় অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তার স্বামীর দিকে। ক্লান্তির ছাপ রয়েছে তার মুখে, হয়তো আজ ই ল্যান্ড করেছে। সেখান থেকেই কোর্টে এসেছে। ঐন্দ্রিলা ছুটে গেলো অভ্রের দিকে। কিছু না ভেবেই অভ্রকে জড়িয়ে ধরলো। ঐন্দ্রিলার আকস্মিক কাজে প্রথমে থ হলেও নিজেকে সামলে নিলো অভ্র। আরোও নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরলো ঐন্দ্রিলাকে। ঐন্দ্রিলা তার বক্ষে বুক লুকিয়ে চাপা স্বরে বললো,
— “আমরা জিতে গেছি অভ্র”

অভ্র উত্তর দিলো না। সে কানাডাতে গিয়েছিলো জ্যানেটের আসল রুপের উম্মোচন করতে। আবহাওয়ার জন্য ফ্লাইট ডিলে হওয়ায় সব ডকুমেন্ট আগ থেকেই শাফায়াতকে পাঠিয়ে দেয় অভ্র। রবার্ট মার্টিনকে অতি কষ্টে সাক্ষী দেবার জন্য প্রস্তুত করে সে। অসুস্থ হবার দরুন ডাক্তার পারমিশন দিচ্ছিলো না। অভ্র চাপা নিঃশ্বাস ছাড়লো। বেষ্টনী শক্ত করে বলে,
— “ফ্লাইট ডিলে হবার জন্য আসতে পারি নি, ভয় পাও নি তো?”
— “একেবারেই না”

ঐন্দ্রিলা সেভাবেই রইলো। আশেপাশের মানুষ যেনো তাদের খেয়াল ই নেই। এদিকে জ্যানেট এক নজরে তাকিয়ে রইলো অভ্রের দিকে। সে হেরে গেছে। উদ্দেশ্য সঠিক না হলে স্বপ্নছায়াগুলো অপূর্ণ ই থেকে যায়। আজ এই কথাটার মর্মার্থটি বুঝেছে সে। তাই না পাওয়ার আক্ষেপ তার রয়েই গেলো। পুলিশের ডাকে তার ধ্যান ভঙ্গ হয়। বাধ্য হয় তাদের সাথে ভিসা অফিসে যেতে। অবশেষে এই লড়াই টার জিতেই গেলো অভ্র ঐন্দ্রিলা। তাদের পরিবার রইলো অক্ষুন্ন__________

১৪.
দেখতে দেখতে এক মাস কেটে গেছে।
আয়নার সামনে সাজছে দিশা। ঐন্দ্রিলা এবং পিউ মিলে তাকে সাজাচ্ছে। কিন্তু দিশার মুখে হাসির বালাই নেই। সে উদাস চাহনীতে তাকিয়ে রয়েছে নিজের প্রতিবিম্বের দিকে। অশান্তি লাগছে সবকিছু। এই শাড়ি, সাজ সব বৃথা। এই জমাট বাধা বিষাদ কাউকে বলতেও পারছে না সে। কিন্তু সব তছনছ করতে ইচ্ছে হচ্ছে। আজ পাত্রপক্ষ আসবে তাকে দেখতে। ছেলে দেরি করতে করতে অবশেষ আজ সময় পেয়েছে। বদরুল সাহেব তাকে ছেলের ছবি এবং সকল বিবরন ঐন্দ্রিলা থেকে শুনতে বলেছিলো। কিন্তু দিশার ইচ্ছে হলো না। বিয়ে হলেও তো জানবেই, তাড়া কি? আজ নাকি তারা একেবারে পাকাপাকি কথা বলে আংটি পড়িয়ে যাবে। দিশার পড়ালেখা শেষ হলে বিয়ে। কারণ ছেলের মতে দিশার পড়াশোনা বেশি জরুরি। সংসারের চাপে তার রেজাল্ট খারাপ হোক সেটা সে চায় না। দিশার খুশি হওয়া উচিত। কিন্তু হতে পারছে না। কারণ হৃদয়ে যে এখনো আহাশ নামক ব্যাক্তির রাজত্ব। এমন সময় আসমা বেগমের কন্ঠ শোনা গেলো,
— “পাত্রপক্ষ এসেছে, তোদের হলো?”

বুকটা ধক করে উঠলো দিশার। পিউ নীলাদ্রির কাছে চলে এলো। তার এখন পাঁচমাস চলে, শরীর ভারী হয়েছে বেশ। তার জমজ পুত্র হবে আল্ট্রাসোনোতে ধরা পড়েছে। তাই শরীর আরোও বেশী ক্লান্ত থাকে। ক্যাফেটা এই মাসের শুরুতে উদ্ভোধন করেছিলো সে। বেশ ভালোই চলছে। কর্মচারীরা দেখাশোনা করে। পিউ মাঝে মাঝে যায়। নীলাদ্রি তাকে সিড়ি বাইতে বারণ করেছে। নীলাদ্রি তার অফিস করে সকল হিসেব দেখে, শরীফ সাহেব এবং বদরুল সাহেব ও দেখাশোনা করে ক্যাফের। এখন প্রতীক্ষা নতুন সদস্যের আগমনের।

পাত্রপক্ষ বসলে আসমা বেগম দিশাকে চা নিয়ে আসতে বলে। দিশাও পুতুলের ন্যায় ট্রে নিয়ে প্রবেশ করে। বসার ঘরে প্রবেশ করতেই পা আটকে যায় তার পাত্রের মুখটি দেখে। বিস্ময়ে চোখ বিস্ফোরিত হয়।

ছাঁদের এক কোনায় বসে আছে আহাশ এবং দিশা। করিম দুটো কফি এনে দিয়েছে। আহাশ মনোযোগ দিয়ে কফিতে চুমুক দিলো। দিশা চোখ মুখ কুচকে তার দিকে ক্রোধিত দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে। কিন্তু আহাশের কিছুই যায় আসে আসে না। সে তার মতো কফি খাচ্ছে। এবার কিছুতেই নিজেকে শান্ত রাখতে পারলো না দিশা। তীব্র স্বরে বলে উঠলো,
— “এসব কি হচ্ছে?”
— “কি হবে?”
— “এই সম্বন্ধ আপনি এনেছেন?”
— “আর কি কেউ আছে আসে পাশে?”
— “কিন্তু ঐন্দ্রিলা আপু যে বললো……”
— “তোমাকে মিথ্যে বলতে আমি ই বলেছিলাম। বেশি বোঝা পাবলিকের কম জানাই ভালো”

সেদিন যখন দিশা তার প্রেম নিবেদন ফিরিয়ে দেয় তখন আহাশ সিদ্ধান্ত নেয় সে সরাসরি সম্বন্ধ পাঠাবে। তাই সে ঐন্দ্রিলাকে এই ব্যাপারটা খুলে বলে। এই ক বছরে বেশ ভালোই সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তার ঐন্দ্রিলার সাথে। তাই ঐন্দ্রিলাকে বুঝিয়ে বললে ঐন্দ্রিলা এই প্লান বের করে। তারপর খুব কাঠখড় পুড়িয়ে নীলাদ্রি এবং বদরুল সাহেবকে আহাশ রাজী করায়। নীলাদ্রি তো তাকে মারতেও গিয়েছিলো। কিন্তু এবার কাপুরুষত্ব দেখায় না সে। সাহসের সাথে সব কিছু সহ্য করে। যার জন্য আজ এখানে আহাশ পাত্র রুপে বসে আছে। দিশা এবার ঈষৎ রাগী গলায় বললো,
— “আমি আপনাকে বিয়ে করবো না”
— “কেনো?”
— “আপনার মতো ক্যারেক্টর লেস মানুষকে কেনো বিয়ে করবো? ডিপার্টমেন্টে ইভা ম্যাডামের সাথে ঢলাঢলির কাহিনী কি আমার অজানা নাকি?”

দাম্ভিক স্বরে কথাটা বলে দিশা,
— “এজন্যই তোমাকে বেশি বোঝা পাবলিক বলি। জানো দুই লাইন ভেবে নাও দশ পাতা। আর ইভার সাথে আমার কি ঢলাঢলি শুনি? আমার খালাতো বোন ও। নতুন ওই কলেজে এসেছে। আর বাই দ্যা ওয়ে, ও বিবাহিত। একটা বাচ্চাও আছে। পরকীয়া করার কোনো শখ নেই আমার। আর একটা মেয়েকেই বিগত ছয় বছর ধরে ভালোবেসে এসেছি। তাকে ছাড়া অন্য কাউকে নিয়ে ভাবার প্রশ্নই উঠে না। এখন সে একটু বেশি বুঝে কি করবো আমি? তবুও তাকেই ভালোবাসি আমি”

আহাশের সোজাসাপ্টা বক্তব্যে লজ্জায় লাল হয়ে উঠে দিশা। শ্যাম মুখখানা রক্তিম হয়ে উঠে সাথে সাথেই। অস্বস্তিতে সে অশান্ত হয়ে উঠে। তাই ঝটপট উঠে দাঁড়ায়। যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেই আহাশ হাত টেনে ধরে। খানিকটা সিনেমার মতো হাটু গেড়ে বসে। তারপর বলে,
— “এবার অন্তত ফিরিয়ে দিও না। অনেক কষ্টে তোমার বাবা-ভাইকে রাজী করিয়েছে। এবার ফিরিয়ে দিলে যে হেরে যাবো গো। জানি তোমার অভিমান হয়েছে। কি করবো বলো, তোমার ভাইকে যে কথা দিয়েছিলাম তোমার সাথে সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দিবো। এবার আমাকে ফিরিয়ে দিও না দিশা, খুব ভালোবাসি তোমাকে”

দিশা কিছু বলতে পারলো না। লজ্জায় মাটির দিকে তাকিয়ে রইলো, অনেক কষ্টে বললো,
— “নিচে সবাই অপেক্ষা করছে, চলুন”
— “উত্তর পাবো না এবারো?”
— “ভালোবাসি কথাটা বললে দাম কমে যায়, মাঝে মাঝে বুঝে নিতে হয়। চলুন আংটি পড়ানোর কার্যক্রম শুরু হবে”

এতোটুকু বলেই দৌড়ে নিচে চলে যায় দিশা। আহাশ প্রশান্তির হাসি হাসে। বউটি যে তার বড্ড লাজুক।

সন্ধ্যের দিকে আংটি পরানো হলো। বিয়ের ডেট পড়লো আগা্মী মাসে, আকত হবে। বউ উঠাবে আগামী বছর। শারমিন বেগমের ধারণা বিয়ে শাদীতে ফারা পড়ে বেশি। তাই যত তাড়াতাড়ি হবে ততই ভালো। তখন আহাশ বাধ সাধলো, তাই দুজনের মন রক্ষার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। দিশা লজ্জায় লাল হয়ে উঠে। অবশেষে তার স্বপ্নছায়া পূর্ণতা পেলো।

ঐন্দ্রিলা আজ একটি লাল শাড়ী পড়েছে। হুট করে কোথা থেকে অভ্র তার পেছনে দাঁড়ালো। একটা গোলাপ গুজে দিলো তার খোঁপায়। আবেগী কন্ঠে বললো,
— “লালে আমার বাঘিনীকে যে খুব ভালো লাগে। ইচ্ছে করে আবার বিয়ে করে নেই”

ঐন্দ্রিলা লজ্জায় মুখ লুকায় তার বক্ষে। অবশেষে স্বপ্নছায়া গুলো হাতছানি নয়, পূর্ণতা পেলো_____

।।সমাপ্ত।।

[আসসালামু আলাইকুম, অবশেষে #স্বপ্নছায়া #দ্বিতীয়_খন্ডের ইতি টানলাম। কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না। ইনশাআল্লাহ আবারো কোনো গল্প নিয়ে ফিরে আসবো। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং আমার জন্য দোয়া করবেন।]

মুশফিকা রহমান মৈথি

স্বপ্নছায়া সিজন-০১ পড়তে লেখাটি উপর ক্লিক করুন।