স্বামী পর্ব-০৭

0
187

#স্বামী
পর্ব : ০৭
#মেঘা_মেহেরাব

কেউ অন্তত মেয়ের শরীর থেকে কাপড় তো আর খুলতে পারবে না।নুরাইসা একরাশ ভয় জড়তা নিয়ে বসে থাকে ঘরের জমিনে। খেজুর পাতায় বোনা পাটি বিছিয়ে তার উপর একটা নতুন চাদর বেছানো মাথার কাছে রাখা একটি বালিশ। এই ঘরে নেই কোন ফুলের গন্ধ আর নেই কোন সজ্জা। তবে তাদের সামনে একটা ল্যাম্পো আছে যা নিভু নিভু করছে, যখন তখন তা নিভে যেতে পারে।নুরাইসা ভয়ে কান্না করে দিবে এমন অবস্থা হচ্ছে, যে মানুষটাকে এত ভয় পাই সেই মানুষটার সাথে সারারাত কিভাবে কাটাবে ভাবতেই নুরাইসার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। নুরাইসা মাথা নিচু করে রেখেই আড়চোখে একবার রাসেল কে দেখে নেয়। রাসেল তার দিকেই তাকিয়ে আছে। এবার নুরাইসার ভয় টা আরো বৃদ্ধি পায়। একটু একটু করে পিছিয়ে যেতে থাকে সে আর রাসেল শুধু তাকিয়ে নুরাইসা কি করছে সেটা দেখছে । মনে মনে খুব হাসি পাচ্ছে তার তবুও ঠোঁটের কোনে হাসি টা লুকিয়েই নুরাইসা কে দেখছে। নুরাইসা ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে দিবে এমন সময় রাসেল আঙ্গল দিয়ে ইশারা করে চুপ করতে, পাশের ঘরে তার বাবা। নুরাইসা মাথা নিচু করে হাঁটু ভাঁজ করে বসে। রাসেল বেড়ার দরজা টা দিয়ে বিছানার উপর বসতেই ভয়ে লাফিয়ে ওঠে। এটা দেখে রাসেল বলে

– ভয় পেয়ো না তোমার অনুমতি ছাড়া আমি তোমাকে স্পর্শ করেও দেখব না‌। আজ তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চাই তুমি কি শান্ত হয়ে আমার কথা গুলো শুনবে?

নুরাঈসা কাঁদো কাঁদো মুখ করে হালকা মাথা কাত করে বোঝায় সে শান্ত ভাবে শুনবে।

– পাশের ঘরে তোমার বাবা, তাই আস্তে কথা বলছি। আমি তোমার দিকে একটু এগিয়ে আসি? ভয় নেই আমি আগেই বলেছি তোমার অনুমতি ছাড়া আমি তোমাকে ছুঁয়ে ও দেখবো না।

নুরাইসা মাথা নাড়িয়ে আবার ও সম্মতি দেয়। রাসেল আর একটু নুরাইসার দিকে এগিয়ে বসে তার পর বলে

– আমার বিয়েটা যে এভাবে হবে কখনও কল্পনাও করিনি । কিন্তু কপালে হয়তো এভাবেই বিয়ে করা লেখা ছিল। আমার বর্তমান অবস্থা কি সেটা তুমি খুব ভালো করে জানো। তোমাকে বিয়ের বেনারসি কিনে দিবো এতটুকু সামর্থ আমার এখন ও হয়ে উঠে নি। যত টুকু পেরেছি করেছি তোমার জন্য। এই জন্য তুমি আমার ওপর অসন্তুষ্ট হয়ো না ।

নুরাইসা চুপ করে হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে। মাঝে মাঝে শুকনো ঢোগ গিলে গলা ভিজিয়ে নিচ্ছে।

-আমাকে কিছুদিন সময় দাও আমি তোমার প্রয়োজনীয় সবকিছু এনে দিব। এতটুকু ভরসা আমি তোমাকে দিতে পারি। দুপুরে মেহেদী বেটেছিলে দেখলাম, হাতে দাও নি?

নুরাইসা রাসেলের দিকে মাথা নিচু করে ই তাকায়। সে মেহেদী বেটেছে এই লোক টা কি করে জানলো?

– শুনেছি বিয়েতে মেহেদির রং গাঢ় হলে নাকি সেই দম্পতির ভালোবাসা অনেক গভীর হয় । কথা টা কতটা সত্যি জানিনা তবে তোমার হাতের মেহেদি টা ধরে দেখতে ইচ্ছে করছে আমাদের ভালোবাসা কতটা গভীর হবে তাও জানতে খুব মন চাইছে। আচ্ছা তোমার হাতের মেহেদীর রং টা কি গাঢ় হয়েছে নাকি ফেকাসে?

নুরাইসা রাসেলের কথায় হাঁটুর উপরে রাখা হাত টা মেলে দেখলো মেহেদীর রং টা পুড়ে লালে কালোর মাঝে সবুজ আবরন মনে হচ্ছে। তার মানে কি তাদের ভালোবাসাটাও খুবই গভীর আর গাঢ় হবে? কিন্তু যে লোকটাকে যমের মত ভয় পায় নুরাইসা সেই লোকটা প্রতি তার ভালোবাসা কিভাবে জন্মাবে? রাসেল নুরাইসার হাতে উঁকি দিয়ে দেখতে গেলে নুরাইসা ফট করে হাতের মুঠো বন্ধ করে নেয়। রাসেল হালকা হেসে বলে

– মেহেদির রং যেমনই হোক আমার ভালোবাসায় বিন্দু পরিমান খাদ থাকবে না এতটুকু গ্যারেন্টি আমি তোমাকে দিতে পারি।

বুক পকেট থেকে রাসেল একটা ছোট কৌটা বের করে নুরাইসার সামনে রেখে বলে।

– বিয়ের রাতে স্বামী নাকি তার স্ত্রীকে কাবিননামার স্বরূপ কিছু না কিছু দেয়। আমার তোমাকে দেওয়ার মতো তেমন কিছু আপাতত নেই মুখের কথা ছাড়া তাই কিছু দিতে পারছি না। গত কাল গঞ্জের থেকে এই কাজল টা কিনেছিলাম তোমার জন্য। রাতে তোমাকে এটা পড়তে বলবো বলে। একবার চোখে দিবে এটা?

নুরাইসার কাজল পড়তে খুব ভালো লাগে। সে স্কুলে যাবার সময় প্রতিদিন এটা পড়তো এটা নিয়ে তার আম্মা প্রায় তাকে বলতো

– জামাইকে বলবো গঞ্জের থেকে বউয়ের জন্য কিছু আনুক বা না আনুক, হাতে করে যেন কাজল টা কিনে আনে মনে করে ।

নুরাইসা হেসে বলতো

-কিনে আনার কথা তোমার বলতে হবে না , তার বৌকে সে ভালোবাসলে নিজের থেকে ই কিনে এনে বলবে ,নেও বৌ এটা পরে জলদি আসো তো তোমাকে কাজল চোখে দেখে নয়ন টা জুরাই।

তার পর দুজনেই হেসে দিতো

নুরাইসার পুরনো কথা মনে পড়তেই চোখের পানিতে টলমল হয়ে যায়। কাপা কাঁপা হাতে রাসেলের হাত থেকে কাজল টা নিলে রাসেল পেছনে বেড়াতে গোঁজা ছোট আয়নার কাঁচের টুকরো নুরাইসার সামনে ধরে। নুরাইসা রাসেলের দিকে একবার তাকিয়ে ছোট কৌটার মুখ খুলে ডান হাতের কোনার আঙুলের মাথায় কাজল তুলে তা চোখে পড়ে নেয় একে একে দুই চোখে।

রাসেল : ইশশ নয়ন জুড়িয়ে গেল আমার।

শোনো হে কাজল চোখের মেয়ে
আমার দিবস কাটে বিবশ হয়ে
– তোমার পানে চেয়ে

‌‌ ( সাহাদাত হোসেইন )

নুরাইসা এবার খুব লজ্জা পেয়ে যায়। নিজের চোখ লুকিয়ে নেয় নুরাইসা।

– যদি কিছু মনে না করো তোমার হাতটা একটু ধরতে পারি? তবে তোমার সমস্যা হলে হাত দিতে হবে না।

নুরাইসা এবার চিন্তায় পড়ে , সে কি করবে এবার? হাত দিবে না দিবে না ভাবতে থাকে। তার পর কি মনে করে হাঁটুর উপর থেকে ডান হাত টা একটু নিচে নামিয়ে নেয়। একটু এগিয়ে দিতেই রাসেল নুরাইসার হাত ধরে নেয়। দুই হাত দিয়ে ধরে নুরাইসার হাতের মুষ্টি মেলে দেখে রাসেল গারো লাল রঙের গোল ছোট বৃত্ত আঁকা হাতের তালুতে আর প্রতি টা আঙ্গুলের মাথায় মেহেদী দিয়ে একটা কড় ঢেকে রাখা।

– মাশাআল্লাহ !

নুরাইসার হাতে একটা চুমু এঁকে দেয় রাসেল।‌এক অদ্ভুত শিহরণ খেলে যায় নুরাইসার শরীরে।নুরাইসা হাত কেড়ে নিতে গেলে রাসেল হাত টা শক্ত করে ধরে নেয়। নুরাইসা এতোক্ষণ একটু স্বাভাবিক হলেও এবার পুরো শরীর ভয়ে কাঁপতে থাকে।

– তোমার অনুমতি নিয়ে হাত টা ধরেছি , এখন সরিয়ে নিচ্ছো কেন? এই হাত টা ধরেছি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আর ছাড়বো না তার জন্য ‌, আর তুমি ছাড়িয়ে নিচ্ছো? একদিন দেখো এই হাত ভয়ংকর কাজ করতে ও দ্বিধা করবে না আমার জন্য। এতোটা ই ভালোবাসতে চাই আমি তোমাকে। আচ্ছা বাদ দাও এসব , তুমি কি আরো পড়তে চাও ?

মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝায়

– তুমি যে স্কুলে পড়ছিলে সেই স্কুলে আমি গিয়েছিলাম ,তারা কোন ভাবেই তোমাকে আর সেই স্কুলে এলাউ করবে না বলছে। তুমি কষ্ট করে দূরে যেয়ে পড়তে পারবে? সমস্যা নেই আমি নিজে তোমাকে দিয়ে আসবো ?

নুরাইসার কাঁপতে থাকা হাত থেমে যায় অবাক হয়ে রাসেলের দিকে তাকিয়ে থাকে নুরাইসা। সত্যি এই ভয়ংকর মানুষের কথায় জাদু আছে , কেমন আপন আপন মনে হচ্ছে নুরাইসার। কিন্তু শরিরে এমন কাঁপন ধরছে কেন এই ভয়ঙ্কর লোকের ছোঁয়ায়? এই কাপন কি ভয়ের জন্য হচ্ছে নাকি ভালো লাগার জন্য অজানা নুরাইসার।

– আমি একা একা সব কথা বলে যাচ্ছি তোমার বলার কিছু নেই?

নুরাইসা মাথা ডানে বামে মাথা নেড়ে না বোঝালো , রাসেল মৃদু হাসলো।মাথার কাছে একটা বালিশ দেখে বলল

– একটা বালিশ দিয়ে আমাদের জীবন শুরু করতে হবে এটা কিন্তু ভালোবাসার একটা স্তরে পরে। তুমি আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে পারো আমার খুব ভালো লাগবে।

নুরাইসা নিজেকে গুটিয়ে নেই । এটা দেখে রাসেল বলে।

– আচ্ছা থাক তোমাকে আমার বুকে ঘুমাতে হবে না এক কাজ করো, দুপুর থেকে মাথাটা খুব ধরেছে আমার একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দাও

রাসেল বালিশে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে নেয়,নুরাইসা আস্তে আস্তে তার কাঁপা কাঁপা হাত এগিয়ে দেয় রাসেলের মাথার উপর। রাসেল মুসকি হেসে কিছু ক্ষণ পর ঘুমিয়ে পরার ভান করে। নুরাইসা মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে রাসেলের কপালের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরে কখন সে জানে না। রাসেল খুব সাবধানে নুরাইসাকে ধীরে ধীরে নিজের হাতের উপর নিয়ে নেয় নুরাইসা ছোট পাখির ছানার মতো রাসেলের বুকে পরম আবেশে ঘুমিয়ে লেপ্টে যায় অজান্তেই।

সকালে ঘুম থেকে উঠে নুরাইসা নিজেকে রাসেলের বুকে আবিস্কার করে। ছ্যাত করে ওঠে তার বুক। নুরাইসা সরে যেতে গেলে রাসেল ঘুমের মধ্যে নুরাইসা কে আসটে পাসটে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু এঁকে দেয় নুরাইসার । লজ্জায় মরো মরো অবস্থা হয় নুরাইসার। তাহলে কি সারা রাত এই ভয়ংকর মানুষের বুকে ঘুমিয়েছিল সে? ভাবতেই গলা শুকিয়ে আসে তার।এক অদ্ভুত অনুভূতি নিয়ে নুরাইসা নিজে রাসেলের বুকের বা পাশে হাত রাখে, রাসেলের হৃদয় স্পন্দন যত দ্রুত গতিতে চলছিল নুরাইসার মন ততই রাসেলের সাথে মিশে যেতে চাইছিল। নুরাইসার অনুভূতি বুঝতে পেরে রাসেল আপন করে নিয়েছিল নুরাইসা কে , কোন বাধা ছাড়াই নুরাইসা নিজেকে সঁপে দেয় রাসেলের কাছে।

এভাবে কাটছির নুরাইসা আর রাসেলের দাম্পত্য জীবন । রাসেলের ছোট ছোট কথার মায়ায় পরে যায় নুরাইসা‌ , রাসেল ধীরে ধীরে নুরাইসা কে স্বাভাবিক করে নেয়। রাসেলের প্রতিটা কাজে নুরাইসা রাসেল কে ভালোবাসতে বাধ্য হয়। দুই গ্ৰাম দূরে যেয়ে বিকালে বাচ্চাদের পড়াতো আর সকালে এই দালান কাজ ঐ দালানের কাজে শ্রমিক দের সহায়তা করতো‌ এর থেকে যা টাকা পেত তা দিয়েই বেশ ভালো ই সংসার চলছিল তাদের। অভাব থাকলেও ভালোবাসার কমতি ছিল না রাসেল নুরাইসার ছোট সংসারে। দুই তিন গ্ৰাম দূরে গঞ্জে দুজন একসাথে যেত চুরি,ফিতা প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে। রাতের অন্ধকারে দুজন একসাথে বসে চন্দ্র বিলাস করত ঘরের পেছনে পুকুর পাড়ে। নুরাইসা কে দুই গ্ৰাম দূরে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয় রাসেল। রোজ স্কুলে নিয়ে যাওয়া আবার বিকাল চারটার মধ্যে রাসেলের টিউশনি শেষ করে একসাথে বাড়িতে আসতো তারা। রাতে রাসেল নুরাইসা কে নিজে পড়াতো।

একঘরে করে দেওয়ার পরও রাসেল হাওলাদার বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাইরে গ্ৰামে যেত পারতো। কারণ সে মাতব্বরের ছোট ছেলে হওয়ায় মানবতার খাতিরে কেউ রুষ্ট আচারণ করতো না তার সাথে। গ্ৰাম থেকে মাতব্বর সাহেব ও বের করতে পারেন নি কারণ নুরাইসার বাবা যে জমির উপর ঘর করে থেকেছেন সেটা ছিল সরকারি খাস জমি। রাসেলের দাদা নুরাইসার বাবাকে বলেছিল এখানে ঘর তুলে কিছু দিন থাকার পর তিনি সরকারি ভাবে দরখাস্ত করবেন যেন ঐ টুকু খাস জমি অসহায় নুরাইসার বাবা কে দেন। মাতব্বর সাহেব যখন নুরাইসার বাবা কে জোর করে নামিয়ে দিতে যায় তখন ই রাসেল ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে গ্ৰামের সবার সামনে বলে এই খাস জমির উপর যারা বসত করে তারা ছাড়া আর কারোর অধিকার নেই সরকার ছাড়া। এই কথা রাসেলের দাদি কোন ভাবে রাসেল কে জানাই তাই রাসেল জোর দিয়ে ই থাকতে পারে সেখানে। তাছাড়া রাসেলের জাবতীয় প্রয়োজনী জিনিস সে নিজের গ্ৰামের থেকে নয় অন্য গ্ৰাম থেকে সংগ্রহ করতো।নুরাইসা রাসেল নুরাইসার বাবা তারা তিন জন গ্ৰামে কারোর সাথে কথা বলতো না। আর গ্ৰামের মানুষ একঘরে করে দেওয়ার ভয়ে তাদের সাথে ও কথা বলতো না। প্রথম প্রথম নুরাইসার বাবা কারোর সামনে গেলে তারা মুখ ঘুরিয়ে নিত এটা দেখে রাসেল কড়া ভাবে নিষেধ করলো তার শশুর মশাই কে , যেন মারা গেলেও কারোর সাথে কথা না বলেন তিনি। নিজের গ্ৰামে কারোর সহায়তা না পেলেও নিজের যোগ্যতা দিয়ে কর্মের পথ ঠিক খুঁজে বের করে রাসেল। রাসেল ইতি মধ্যে একটা ছোট কাজ পেয়ে যায়, তিন গ্ৰাম দূরে এক নতুন দালান তোলা হয় সেখানকার সব সরঞ্জাম আনা নেওয়া দায়িত্ব দেয় রাসেল কে সেই দালানের মালিক। যাতায়াতের জন্য তারা একটা সাইকেল ও কিনে দেন রাসেল কে। সুখে দিন কাটতে থাকলো রাসেলের। কিন্তু এই সুখ সহ্য হলো না গ্ৰামের কিছু মানুষের নুরাইসা যে স্কুলে পড়াশোনা করতে যেত সেখানে কোন না কোন ভাবে সবাই জানতে পারে নুরাইসা একটা ধর্ষিতা মেয়ে। বিয়ের আগে প্রতি রাতে এক একটা ছেলের সাথে দেখা করতো। একদিন খারাপ কিছু করতে গিয়ে ধরা পড়ে মাঝ বয়সি লোকের কাছে ‌ বাজে প্রস্তাব দেয় ঐ মাঝ বয়সি লোক টাকে। সেও রাজি হলে খারাপ কাজে লিপ্ত হতে গিয়ে যখন ধরা পড়ে মেয়েটা সবার সামনে বলে ঐ লোকটা তাকে ধর্ষণ করেছে। তার পর কোন ভাবে মাতব্বরের ছোট ছেলে কে ফাঁসিয়ে বিয়ে করে নুরাইসা।তাই তো নিজের গ্ৰামে কেউ ঠাঁই দেয়নি বলে দূরের গ্ৰামে পড়ার নামে ধান্দা করতে এসেছে নুরাইসা এমন গুজব ছড়িয়ে পরে।

গ্ৰামের স্কুল থেকে শুরু করে প্রায় মানুষের কাছে এই কথা পৌঁছে যায়। খারাপ চোখে দেখতে থাকে তারা নুরাইসাকে। এক পর্যায়ে নুরাইসাকে সবার সামনে অপমান করে ছোট করে আর বের করে দেয় স্কুল থেকে। এমন মেয়ে স্কুলে থাকলে বাকি ছেলে মেয়ে রা খারাপ হয়ে যাবে এটা বলে।

রাসেল এসব শুনে যেতে চাই সেই স্কুলে । নুরাইসা রাসেলের হাত ধরে বলে।আমি আর পড়াশোনা করবো না। এত দূর থেকে যেয়ে পড়াশোনা করতে ভালো লাগেনা। তাছাড়া সবাই যে চোখে তাকে দেখে সেই চোখের সামনে নুরাইসা আর যেতে চাই না। সে সংসার করতে চায় মন দিয়ে সংসার করবে‌ সে। রাসেল নুরাইসার এমন কথার উপেক্ষা করে যেতে চাইলে নুরাইসা বলে, এই নিয়ে রাসেল কারোর সাথে বাড়াবাড়ি করলে নুরাইসা নিজেকে শেষ করে দিবে। সেদিন প্রথম রাসেল নুরাইসার গালে একটা চড় মেরে বসে। এটা নিয়ে আর কোন কথা বাড়ায় না রাসেল।নুরাইসা সংসার করায় মন দেয় পড়াশোনো সে আর করবে না।দের বছর যেতে না যেতেই খুশির সংবাদ পায় রাসেল,সে বাবা হতে যাচ্ছে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায় সে।

#চলবে..