স্মৃতির আড়ালে পর্ব-০১

0
211

#স্মৃতির_আড়ালে
#১ম_পর্ব
#ইয়াসমিন_খন্দকার

আমার বাসর ঘরে অন্য একজন নারী এসে শুয়ে পড়লেন। এই নারীটি আর কেউ নন। আমার স্বামীর প্রথম স্ত্রী। আমি শুধু নির্বিকার চিত্তে সবটা দেখে গেলাম। যথেষ্ট চেষ্টা করলাম নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার।

আমার বাসর ঘরে শুয়ে ঐ মহিলা আমার দিকে তাকিয়ে বিকট হেসে বললেন, “এটা আমার ঘর, তুই যাকে বিয়ে করেছিস সেও আমার। তোর কোন অধিকার নেই। কোন অধিকার না।”

আমি শুধু হালকা একটা নিঃশ্বাস নিলাম। আগে থেকেই এমন পরিস্থিতিতে পড়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। অপেক্ষা করতে লাগলাম আমার স্বামী নামক মানুষটার আগমনের। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। কিছুক্ষণের মধ্যেই গম্ভীর মুখে ঘরে প্রবেশ করলেন আকাশ মির্জা। যিনি সম্পর্কে আমার স্বামী। আকাশ ঘরে আসতেই আমি তার দিকে নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে তাকালাম। নরম অথচ দৃঢ় কন্ঠে বললাম,“এই মহিলা এখানে কি করছেন? আমি তো আপনাকে এই শর্তেই বিয়ে করেছিলাম যেন যেদিন আমার সাথে আপনার বিয়ে হবে সেদিন আপনি এই আপদটাকে বিদায় করবেন। তাহলে কেন করলেন না এমন?”

আকাশ তাকালেন তার প্রথম স্ত্রীর দিকে। বেশ করুণার চোখেই তাকালেন। যেই দৃষ্টি দেখে আমার হাসি পেলো। আসলেই কি এই মানুষটার মনে বিন্দুমাত্র করুণা রয়েছে? যদি থাকত তাহলে শুধুমাত্র সন্তান হচ্ছে না জন্য কেন নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীকে ছেড়ে অন্য একটা বিয়ে করে নিলেন অনায়াসে? আমার অবশ্য এসব নিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই। শহরের বিখ্যাত মির্জা পরিবারের বউ হয়েছি এতেই আমি খুশি। বাকি কার সাথে ন্যায় হলো, কার সাথে অন্যায় সে নিয়ে আমার বিশেষ কিছু যায় আসেনা।

আকাশ মির্জা তাঁর প্রথম স্ত্রী অনিতাকে আদেশ দিলেন,“নিজের সব ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নিয়ে এখনই এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাও।”

আকাশ মির্জার কথা শুনে উন্মাদের মতো আচরণ করতে লাগলেন অনিতা। ফুল দিয়ে সজ্জিত বাসর ঘরটা একেবারে এলোমেলো করে দিলেন। সব কিছু এদিক ওদিক ছু*ড়লেন। উঠে এসে আকাশ মির্জার কলার চেপে ধরে বললেন,“তুমি আমাকে এভাবে ছেড়ে দিতে পারো না আকাশ। আমি তোমার স্ত্রী। তুমি কিভাবে পারো শুধুমাত্র আমি বাচ্চা জন্ম দিতে অক্ষম জন্য আমাকে ছেড়ে দিতে! কিভাবে?”

আকাশ মির্জা আমার দিকে একপলক তাকালেন৷ এরপরই দ্রুত অনিতাকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বললেন,“তোমার আমার মধ্যে সব সম্পর্ক শেষ। আমি ইতিমধ্যেই তোমাকে মৌখিক তালাক দিয়ে দিয়েছি। ইসলাম মতে তিন তালাক দিলেই সম্পর্কের সমাপ্তি ঘটে। এখন শুধু কাগজে কলমে সম্পর্কটা শেষ হওয়া বাকি।”

অনিতা আকাশ মির্জার পায়ের কাছে বসে পড়লেন। অসংখ্য আকুতি মিনুতি করলেন শুধুমাত্র নিজের সংসার বাঁচানোর জন্য। কিন্তু আকাশ মির্জার কোন ভ্রুক্ষেপ দেখা গেল না। তিনি এবার বেশ গর্জে উঠে বললেন,“এসব নাটক করা বন্ধ করো। হয় ভালোয় ভালোয় বিদায় হও আর নয়তো আমি সিকিউরিটি ডেকে তোমাকে বাড়ি থেকে বের করতে বাধ্য হবো।”

সহসা আকাশ মির্জার পায়ের কাছ থেকে উঠে দাঁড়ালেন অনিতা। তারপর একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটিয়ে ফেললেন। থু থু ছু*ড়ে দিলেন আকাশ মির্জার মুখে। ঘটনার আকস্মিকতায় আকাশ মির্জা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার মুখ ভর্তি হয়ে গেল অনিতার থুথু দিয়ে। আমার কাছে দৃশ্যটা বেশ মজাদার লাগল। তবে একটু পরেই অনিতা আমার দিকে এসে আমার গালে ঠা*টিয়ে একটা চ*ড় মা*রলেন। হতবিহ্বল আমি রাগী দৃষ্টিতে তাকাতেই উনি আরো একটা চ*ড় বসিয়ে দিলেন। এরপর আমাদের থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে বললেন,“তোমরা কখনো সুখী হবে না দেখে নিও। এক নারীর চাপা আর্তনাদ কখনো বৃথা যাবে না।”

বলেই তিনি কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে। আমি ওনার যাওয়ার দিকে তাকালাম৷ আকাশ মির্জা আমার কাছে এসে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলেন আমার গালে। তার প্রতিটা স্পর্শে কেপে উঠলাম আমি। উনি ঠিক সেই জায়গাতেই হাত বুলিয়ে দিলেন যেখানে অনিতা চ*ড় মে- রেছিল। উনি বেশ মায়ামাখা কন্ঠে আমার উদ্দ্যেশ্যে বললেন,“তুমি একদম কষ্ট পেয়ো না। আমার মুখে থু দেয়ার, তোমাকে চ*ড় মা*রার উপযুক্ত শাস্তি ঐ অনিতা পাবেই। আমি শুধু আর ঝামেলা বাড়াতে চাই না জন্য কিছু বললাম না। আজ রাত তোমার জন্য চিরস্মরণীয় করে তোলার ব্যবস্থা করছি আমি।”

অনিতার চ*ড় খেয়ে যতটা না খারাপ লাগছিল তার থেকে কয়েকগুণ ভালো লাগল ওনার মুখে এমন মধুবর্ষী বয়ান শুনে। উনি আমাকে রেখে গেলেন দরজার শিক লাগিয়ে দিতে। এরপর পুনরায় ফিরে এলেন আমার কাছে। আমাকে আপাদমস্তক ভালো করে পরখ করে নিয়ে বললেন,“তুমি যাও এই সব ভাড়ী গহনাগাঁটি খুলে সাধারণ কিছু পড়ে নাও। এসবে মনে হয় তুমি অভ্যস্ত নও।”

“এখন অভ্যস্ত না হলেও ধীরে ধীরে ঠিকই অভ্যস্ত হয়ে যাব। মির্জা বাড়ির বউ হয়েছি বলে কথা। একটু তো এসবের সাথে মানিয়ে নিতেই হবে।”

আচমকাই আকাশ মির্জা নিজের গভীর আলিঙ্গনে শিক্ত করলেন আমাকে। ওনার এই গভীর আলিঙ্গন আমার মনে ভালো লাগার বীজ বপন করল। যদিও উনি আমার জীবনে প্রথম পুরুষ নন। এর আগেও আমি আরো অনেক পুরুষের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়েছি। তবে ওনার স্পর্শে আলাদাই একটা মাদকতার গন্ধ পেলাম। ওনার শরীর থেকে ভেসে আসা পুরুষালি গন্ধ আমাকে মাতাল করে তুলল। আমি ক্রমশ হারিয়ে যেতে লাগলাম ভিন্ন এক দুনিয়ায়। ক্রমশ ওনার স্পর্শ গভীর থেকে গভীরতর হতে লাগল।

আমাকে খাটে শুইয়ে দিলেন উনি। আমার হৃদস্পন্দন দ্রুত বাড়তে লাগল। উনি নিজের পরনের পাঞ্জাবিটা খুললেন। আমায় গলার মধ্যে মুখ ডুবিয়ে দিলেন। ধীরে ধীরে তার স্পর্শ আরো গভীর হতে লাগল। আমাদের মধ্যকার এই সম্পর্ক চূড়ায় উপনীত হতে যাবে এমন সময় হঠাৎ দরজা ধাক্কান্নোর আওয়াজ কানে এলো। আমাদের দুজনেরই অবস্থা এখন বেশ নাজুক। চরম উত্তেজিত হয়ে আছি দুজনেই। অপরদিকে দরজা ধাক্কানো বাড়তে লাগল।

কোন উপায় না পেয়ে ক্ষিপ্ত মেজাজ নিয়ে উঠে পড়লেন আকাশ মির্জা। পাঞ্জাবিটা গায়ে জড়িয়ে দরজাটা খুলে দিলেন। সাথে সাথেই ঘরে প্রবেশ করলেন এক মধ্যবয়সী নারী। যিনি সম্পর্কে আমার শাশুড়ী মা। আকাশের মা শেফালী মির্জা। উনি এই বাড়ির কর্তি। শুনেছি ওনার মুখের উপর এই বাড়িতে কেউ কোন কথা বলতে পারেন না। ওনার কথাই নাকি এখানে শেষ কথা। উনি বাসর ঘরে এসেই প্রথমে আমার দিকে তাকালেন। এরপর আকাশকে বললেন,“তুমি একটু আমার সাথে চলো আকাশ। অনেক বড়ো ঝামেলা হয়ে গেছে।”

“কি ঝামেলা হয়েছে আম্মু?”

“তুমি জানো না আমি কৈফিয়ত চাওয়া একদম পছন্দ করি না। যদি ভালো চাও তো আমার সাথে এসো। আর এই যে মেয়ে তুমি নিজের ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিয়ে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাও।”

আমি হতবাক হয়ে গেলাম শেফালি মির্জার কথা শুনে। উনি তো নিজেই আমাকে পছন্দ করে এই বাড়ির বউ করে এনেছিলেন। তাহলে এখন কি হলো যে উনি আমায় তাড়িয়ে দিতে চাইছেন? নিজের ভাবনার মধ্যেই আমি শুনতে পেলাম উনি আবারো গলা খাকারি দিয়ে বললেন,“কি হলো শুনতে পারলে না আমি কি বললাম? যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তৈরি হয়ে বিদায় নাও এই বাড়ি থেকে।”

আমি করুণ দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকালাম। উনি আমার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে বললেন,“আম্মু যা বলছে তাই করো।”

আমি তাজ্জব বনে গেলাম। এই লোকটা কি তাহলে মাম্মাস বয়? সবসময় মায়ের কথাতেই উঠবস করেন। প্রথমে মায়ের কথায় নিজের প্রথম স্ত্রীকে ফেলে আমায় বিয়ে করলেন আর এখন আমাকেই চলে যেতে চাইছেন। কিন্তু আমি তো ঐ অনিতার মতো অবলা নই। তাই নিজের অধিকার ছাড়তে আমি নারাজ। সকলকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আমি বললাম,“এটা আমার শ্বশুর বাড়ি। এখান থেকে আমি কোথাও যাব না।”

সাথে সাথেই শেফালি মির্জা আকাশকে আদেশ দিলেন,“এই মেয়েটাকে এক্ষুনি এখান থেকে বের করে দে।”

আকাশ তার মায়ের বাধ্যগত ছেলের মতো কাজ করল। আমার অনিচ্ছাসত্ত্বেও টানতে টানতে আমায় ঘর থেকে বের করতে লাগল।

To be continue…