স্মৃতির আড়ালে পর্ব-১০ এবং শেষ পর্ব

0
809

#স্মৃতির_আড়ালে
#Tahmina_Akther

১০.(অন্তিম)

সকালে ঘুম থেকে জাগার পর তুলি তাড়াহুড়ো করে এতিমখানার বাচ্চাদের জাগিয়ে তুললো। এরপর, ওদের ফ্রেশ করিয়ে, নাশতা খাইয়ে, তৈরি করে নিজেও তৈরি হয়ে নিলো।

তারপর,একটি মিনি বাস এতিমখানার গেটের কাছে এলে তুলি এবং ইয়াছমিন খালা মিলে বাচ্চাদের নিয়ে রওনা হয় এতিমখানার ম্যানেজার কামরুল হাসানের বাড়িতে।

চলন্ত বাসে বসে জানালা দিয়ে সিলেট শহরের অকৃত্তিম সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ তুলি।চট্টগ্রাম শহরের সবুজাভ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন সিলেট শহরের সৌন্দর্যের মাঝে বিদ্যমান।তুলিকে একবার ইয়াছমিন খালা বলেছিল বিছানাকান্দি নামক একটি জায়গা আছে যদি একবার সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তুলি দেখে তবে মুগ্ধ হয়ে আর সেখান থেকে আসতেই চাইবে না।

অবশেষে, বাস এসে থামলো একটি বাংলো বাড়ির সামনে।এতিনখানার ট্রাস্ট থেকে নাকি এই বাড়িতে থাকতে দেয়া হয়েছে কামরুল হাসানকে। উনি পরিবার নিয়ে থাকেন এই বাড়িতে। এক ছেলে পড়াশোনা করছে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে। আর মেয়ে অর্নাস দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে।সেই মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে এখানকার স্থানীয় থানার পুলিশ এসআইয়ের সাথে।সেই বিয়ে উপলক্ষে আজ তুলি,ইয়াছমিন খালা সহ এতিমখানার বাচ্চাদের নিয়ে আজ এই বাড়িতে এসেছে।

তুলি আর ইয়াছমিন খালার সাহায্যে একে একে পনেরোজন বাচ্চা বাস থেকে নেমে বাড়ির গেট দিয়ে ঢুকে পড়লো।বাচ্চাদের দেখতে পেয়ে কামরুল হাসান হাসিমুখে এগিয়ে এলো গেটের কাছে। এরপর, সব বাচ্চাদের বাড়ির ভিতরে যেতে বলে তুলির সামনে এসে দাঁড়ালেন কামরুল হাসান।তুলি আর ইয়াছমিন খালা কামরুল হাসানকে সালাম দিলে, কামরুল হাসান সালামের উওর দিয়ে বললেন,

-কোনো সমস্যা হয়নি তো?আর তুলি কেমন অনুভূতি হচ্ছে বাচ্চাদের সাথে কাজ করতে পেরে?

-অনেক দামী অনুভূতি অনুভব করছি স্যার। চাইলেও আপনাকে এক্সপ্লেন করতে পারব না। বাচ্চারা অনেক ভালো এবং প্রাণবন্ত। ওদের সাথে দেখা হবার পর থেকে জগতের এক নতুন পৃথিবী আবিষ্কার করতে পেরেছি। ওদের জন্য যেন আল্লাহ তাআ’লা আলাদা এক পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন।

-আমি বুঝতে পারছি।তোমার ম্যাডামের অনুরোধে তোমাকে এরকম একটা জবে আমি হায়ার করেছি,তুলি। বাচ্চাদের হ্যান্ডেল করতে গেলে একজন ধৈর্যশীল নারীর প্রয়োজন ছিল এবং তোমার ম্যাডামের কারণে হোক আমি বাচ্চাদের জন্য একজন যোগ্য মানুষ খুঁজে পেয়েছি। ওরা তোমাকে একয়েকদিনে ভালোবেসে ফেলেছে এবং তুমিও ওদের ভালোবেসে আগলে রাখছো।

-সবই আপনাদের দোয়ায় স্যার। দোয়া করবেন আমি যেন ওদের আগলে রাখতে পারি।

-তা তো বটেই। তোমরা ভেতরে যাও। তোমাদের আন্টি এবং সোমা তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

তুলি আর ইয়াছমিন খালা একসাথে বাড়িতে প্রবেশ করলো।বাড়িতে প্রবেশ করতেই তুলির সাথে সর্বপ্রথম দেখা হয়ে গেলো কামরুল স্যারের মেয়ে সোমার সাথে। সোমার তুলিকে দেখো হাসিমুখে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে বললো,

-এত দেরিতে এলে কেন?

-কোথায় দেরি করে এলাম। মাত্র তো সকাল নয়টা বাজে। বাচ্চাদের ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে তৈরি করিয়ে,খাবার খাইয়ে এরপর আমি আর ইয়াছমিন খালা মিলে চলে এলাম।

-যাই হোক চলে এসেছো ভালো হয়েছে।এখন চলো আমার সাথে একজন আছে যার সঙ্গে আমি তোমাকে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি তার সঙ্গে তোমার দেখা হলে মোটেও খারাপ লাগবে না।

-কিন্তু, কে সে?

-আছে একজন চলো তুমি আমার সাথে আর ইয়াছমিন খালা তুমি ড্রইংরুমে বসো আমরা আসছি কিছুক্ষণের মাঝে।

সোমা তুলির হাত ধরে বাড়ির বাইরে বের হয়ে এলো। এরপর,বাড়ির ডানদিকে গার্ডেন এরিয়া হেঁটে যাচ্ছে। সোমা অনেক নাম না জানা ফুলের গাছ লাগিয়ে রাখা এরিয়ায় এসে তুলি হাত ছেড়ে
দিলো।তুলি এত ফুলের গাছ একসাথে দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলো। সোমা ছাড়াও যে কেউ একজন এই জায়গায় উপস্থিত এটা টের পায়নি তুলি।

এই সুযোগে সোমা এই জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো। তুলি যখন ফুল দেখতে ব্যস্ত ঠিক তখনি কেউ এসে তুলির কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলে,

-নতুন বিয়ে করা স্বামীকে ফেলে কিভাবে চলে এসেছিস তুলা?

তুলি চট করে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো শিমুল ওর খুব কাছে দাঁড়িয়ে আছে। তারমানে কি সত্যি সত্যি শিমুল ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে!
তুলি মনকে বোঝানোর জন্য কাঁপা কাঁপা হাতে শিমুলের গাল স্পর্শ করলো। তুলির হাত শিমুলের গাল স্পর্শ করতেই তুলি বুঝতে পারলো সত্যিই সত্যিই শিমুল ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

-কি চমকে গেলি তো আমাকে দেখে?কি ভেবেছিলি তুই আমাকে ফেলে চলে আসবি আর আমি তোকে খুঁজে পাবো না?

-তুমি জানলে কি করে আমি সিলেট শহরে আছি?

-আমি শিমুলকে জানিয়েছি ভাবিজান।

তুলি তাকিয়ে দেখলো শাকিল দাঁড়িয়ে আছে। শাকিল ভাই তো শিমুল ভাইয়ের বন্ধু।

-আপনি এই শহরে থাকেন শাকিল ভাই।

-হ্যা, আর কামরুল হাসান মানে তোর স্যার আমার হবু শ্বশুর।

-মানে সোমা আপুর সাথে আপনার বিয়ে ঠিক হয়েছে!

শাকিল হাসিমুখে মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো। তুলি মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো মিনিট পাঁচের মতো। শিমুল তুলির মনের অবস্থা বুঝতে পেরে তুলির সামনে গিয়ে মুখোমুখি দাঁড়ালো এরপর তুলির মুখ দু’হাতের আজলে নিয়ে বললো,

-তুই তো সব রকমের রাস্তা বন্ধ করে এসেছিস যেন আমি তোকে কোনোভাবে খুঁজে না পাই। ভাগ্যিস গতকাল রাতে শাকিলের সাথে তোর ব্যাপারে আলাপ করেছিলাম। তোর ছবি শাকিলের ওয়াট’স অ্যাপে দেয়ার কিছুক্ষণ পর শাকিল আমাকে জানায় সিলেটে আসতে। আমি চলে এলাম এখানে। বাসস্ট্যান্ডে নামার পর শাকিল আমাক নিয়ে আসে এই বাড়িতে। সোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। সোমা আমাকে জানায় তুই তিনদিন আগে এখানকার এক এতিমখানায় বাচ্চাদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব নিয়েছিস। গতকাল শাকিল কথার ছলে সোমাকে তোর ছবি দেখিয়েছিল আর সোমা তোর ছবি দেখে চিনতে পারে।শাকিল আমাকে গতকাল যখন বললো সিলেটে চলে আসতে তোকে পাওয়া গেছে জানিস না আমি যেন পারছিলাম না পাখির মতো উড়ে এই শহরে চলে আসি। আজকের সকালটা আমার কাছে অন্যরকম তুলি। কারণ, আজ সকালে তোকে খুঁজে পেয়েছি আর কোনোদিনও তুই আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারবি না।

-কিন্তু, আমি যে চাই না তোমার কাছে ফিরে যেতে।

তুলির মুখ থেকে এমন কথা শুনে শিমুল ইশারায় শাকিলকে বললো এই জায়গা থেকে চলে যেতে। শাকিল শিমুলের ইশারা পেয়ে এই স্থান ত্যাগ করে।

শিমুল তুলির হাত ধরে বলে,

-কিছু কথা বলব শুনবি?তোর জীবনের কিছু আনসলভ ম্যাথ আজ আমি সলভ করে দিব। তুই শুধু আমার কথা গুলো মনোযোগ দিয়ে শোন।

তুলি মাথা নাড়িয়ে সায় জানিয়ে মাথা নিচু করে বসে পড়লো পাশে রাখা বেতের চেয়ারে।শিমুল দীর্ঘশ্বাস ফেলে দাঁড়িয়ে তুলির উদ্দেশ্য বলতে শুরু করলো,

-কোনো এক ষোড়শী কন্যাকে সাদা শাড়ি পড়নে দেখে তার প্রেমে মজেছিলাম। সে গান গাইবে বলে সেদিন সাদা শাড়ি,চোখে কাজল আর খোঁপা বাঁধা চুলে বেলিফুলের মালা জড়িয়ে ছিল।সেদিন অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আমার ছোট বোন নাতাশাকে বলেছিলাম তোর সাথে স্কুলে যাব। বোন আর আমাকে বারণ করেনি সেদিন। স্কুলে যাবার পথিমধ্যে আমার বোন একজনকে স্কুলে নিয়ে যেতে হবে বলে জানায়, আমি বুঝতে পারি নাতাশা কার কথা বলছে। রাস্তায় দাড়িয়ে অপেক্ষা করি সেই মেয়েটির জন্য। আমার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সে আমার সামনে আসে তার চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য নিয়ে। সেদিন তাকে দেখে জীবনে প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করলাম, জীবনে খুব ভালোভাবে বেঁচে থাকার সাথে, কাউকে খুব কঠিনভাবে ভালোবাসতে না পারলে এই জীবনের কোনো লক্ষ্য থাকতে পারে না।দামী ড্রেস,আলিশান বাড়িতে থাকা,ভালো স্যালারির বেতনে চাকরি করা যদি কারো জীবনের লক্ষ্য হয় তবে আমি বলব এরসাথে আরও একটি লক্ষ্য থাকা প্রয়োজন আর তা হলো ভালো মনের একটা মানুষকে ভালোবেসে আগলে রাখা।
সেদিন সে একটা গান গায়। সবাই মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় ওর গান শুনেছিল আমিও শুনেছিলাম কিন্তু সবার আড়ালে, লুকিয়ে। তার গান শেষ করার পর বোধহয় আমি সবচেয়ে বেশি হাতে তালি দিয়েছিলাম আর বলেছিলাম তুই গান অনেক সুন্দর করে গেয়েছিস। কিন্তু সবার করতালিতে আমার উচ্ছসিত স্বর চাপা পরে গিয়েছিল। আমি যে ওর গান শুনে মুগ্ধ হয়েছি এই কথাটা ওকে বলতে লজ্জা পাবো বলো মিথ্যা বলেছিলাম যে আমি একটা কাজে স্কুল থেকে বের হয়ে গিয়েছিলাম।
এরপর, নানান বাহানায় ওর সাথে আমার দেখা হচ্ছিল আর আমি নানান বাহানায় ওর প্রেমে পড়েছিলাম। একবার নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার সময় ওকে বলেছিলাম আগামী পাঁচবছর পর ঠিক একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমি আর তুই ফানুস উড়াবো। সে এটা শুনে কি বলেছিল জানিস, বলেছে তোমার বৌ কি আমাকে তোমার সাথে দাঁড়িয়ে ফানুস উড়াতে দিবে?কতটা বোকা হলে একটা মানুষ এমন সোজা কথার উল্টা মিন করতে পারে!
একদিন আমার পুলিশের চাকরির এপয়েন্টম্যান্ট এলো। সবার থেকে বিদায় নিয়ে বান্দরবান চলে গিয়েছিলাম। যাবার আগে ওকে একটা আংটি দিয়ে এসেছিলাম আর বলে এসেছিলাম যেন এই আংটি ওর কাছে সবসময় রাখে। ও রেখেছিল কিন্তু এই আংটিটার জন্য সে তার আঙ্গুল হারায়। অথচ,আমি জানতে অব্দি পারিনি তার সাথে কি হয়েছিল?এরপর,থেকে আস্তে আস্তে ওর সাথে আমার যোগাযোগ কমতে লাগলো।ওর বড়ো বোন একদিন আমার হাতে আংটি তুলে দিয়ে বলেছিল, তুলিকে ভুলে যেতে। আমি মনে করেছি তুলি আমাকে এই আংটি ফেরত দিয়েছে। বড়ো মামা মারা গেলো, এরপর আমার বন্ধুর সাথে ওর বিয়ে হলো।
আমি কিছু বলতে পারিনি কাউকে, আমি বলতে পারিনি আমি ওকে ভালোবাসি।আমি শুধুই ওকে ভুল বুঝেছি যে ও ইচ্ছা করে আমার সাথে যোগাযোগ রাখেনি। ভাগ্যর পরিহাসে ওর বিয়ের দিন রাতে কার এক্সিডেন্টে ওর স্বামী মারা যায়।ওর স্বামীকে কেন রক্ত দিলাম না কেন এইটা নিয়ে ও আমার সাথে প্রায়ই মনোমালিন্য করেছে। আমার ভুল ভাঙল অতঃপর তাকে বিয়ে করলাম ভয় দেখিয়ে এই বলে যে আমি সুইসাইড করবো। বিয়ে হবার পর তাকে আধঘন্টার জন্য চোখের আড়াল করেছিলাম ব্যস অমনি তিনি আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলেন। আর আজ চারদিন পর তাকে খুঁজে পেয়েছি আমি। তুই বুঝতে পারছিস তুলা আমি কার কথা বলছি?

শিমুল কথাটি বলে তুলির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তুলি মাথা নিচু করে হিচকি তুলে কাঁদছে। তুলি ভাবতেও পারছে না যে এই মানুষটা তাকে কতসময় ধরে ভালোবেসে আসছে!এই মানুষটাকে সে কতই না গালমন্দ করেছে অথচ সেই মানুষটা হাসিমুখে সব সহ্য করেছে!

শিমুল তুলির পাশে গিয়ে বসে পড়লো।হাত বাড়িয়ে তুলির চোখের পানি মুছে দিয়ে শিমুল বললো,

-আমি কিন্তু স্বামী হিসেবে খারাপ মানুষ হব না। চাইলে তুই আমার হাত ধরে জীবনের বাকি পথ চলতে পারিস?

-কিন্তু, আমার তো যোগ্যতা নেই তোমার স্ত্রী হবার।

-যোগ্যতা দিয়ে সংসার বা ভালোবাসা হয় না। তোর মনের সাথে আমার মনের মিল হলেই চলবে। যোগ্যতা দিয়ে বরং কম্পেয়ার করা যায়। তোকে আমি ভালোবাসি তুই আমার স্ত্রী এটাই আমি জানি। তোর যোগ্যতা আমার কাছে আকাশচুম্বী। কে কি বললো সেটা আমার কানে নেবার সময় নেই, তুলা। চল না জীবনের বাকি সময়টুকু দুজন দুজনের জন্য জন্য উপভোগ করি?একটিবার আমার হাত ধরে দেখ অভিযোগ করার সুযোগ দিব না তোকে।

শিমুলের কথাগুলো শুনে তুলির মনে হলো শিমুল সত্যি বলছে। আর আজ যদি এই মানুষটাকে সক ফিরিয়ে দেয় তবে তুলির জীবন থেকে আজ আবারও মূল্যবান কিছু হারিয়ে যাবে। চাইলেও আর ফিরে পাওয়া যাবে না। তুলি শিমুলের বাড়িয়ে দেয়া হাতে হাত রেখে বললো

-এই হাত কখনো ছেড়ে দিবে না তো?

-না, কখনো ছাড়ব না। তুই শুধু শক্ত করে আমার হাত ধরে রাখিস বাকিটা আমি সামলে নিব।

শিমুল তুলির হাত মুঠোয় নিয়ে বললো।তুলি শিমুলের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো অনিমেষ দৃষ্টিতে। শিমুল তুলির চাহনি বুঝতে পেরে তুলির কানে কানে ফিসফিস করে বললো,

-তোর স্বামী আমি চাইলে বলতে পারিস দরজা আঁটকে দিনরাত তোর চোখের সামনে বসে থাকব। বাট,এইখানে বিয়ে বাড়িতে এসে আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকলে লোকে ভাববে তুই তোর স্বামীকে সন্দেহ করে চোখে চোখে রাখছিস।

তুলি শিমুলের মুখ থেকে এহেন কথা শুনে লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে ফেললো। শিমুল তুলার লজ্জিত মুখ দেখে হা হা করে হেসে উঠলো।

সোমা এসে শিমুলকে কামরুল হাসানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। কামরুল হাসান মেয়ের কাছ থেকে তুলির সিলেট আসার ঘটনা সংক্ষেপে বুঝিয়ে বলে। সবটা শুনে অবাক হন কামরুল হাসান এবং ইয়াছমিন।

কামরুল হাসান শিমুল এবং তুলিকে সোমার বিয়ের উপলক্ষে উনাদের বাড়িতে থাকার আমন্ত্রণ জানায়।

শাকিল-সোমা নবদম্পতির বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে শিমুল আর তুলি। দুদিন পর চট্টগ্রামের পথে রওনা হবার দিন ভোরে শিমুলের মোবাইলে কল করে শিমুলের মা। শিমুল রিসিভ করতেই শিমুলের মা বলে উঠে,

-হ্যালো, শিমুল কেমন আছিস বাবা?

-ভালো আছি মা। একটা গুড নিউজ আছে,শুনবে?

-বল

-তুলির খোঁজ পেয়েছি।

-সত্যি, কোথায় পেয়েছিস?

-আমার বন্ধু শাকিল আছে না ওর মাধ্যমে পেয়েছি। একটু পর রওনা দিব আমি আর তুলি। বাকি সবাইকে সুসংবাদ জানিয়ে দিও।

-আচ্ছা, দিব।শোন শিমুল একটা কথা বলব বাবা তুই আবার তুলিকে বলিস না ও এলেই শুনতে পারবে?

শিমুল ভ্রু কুঁচকে ফেললো ওর মায়ের কথা শুনে। ঘুমন্ত তুলির পাশ থেকে উঠে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে শিমুল মোবাইলে ওর মা’কে বলল,

-বলো, খারাপ কিছু হয়েছে?

-কণা ওর স্বামীকে গতকাল রাতে খুন করেছে। ওর স্বামী না-কি গতকাল রাতে কোন এক মেয়েকে নিয়ে ওদের ফ্ল্যাটে গিয়েছিল কণা উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও। কণা এসব সহ্য করতে না পেরে রান্নাঘরে দা ছিল ওটা দিয়ে ওর স্বামীকে কুপিয়ে মেরে ফেলেছে। পরে আশেপাশের লোকজন পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে সুমনের লাশ আর কণাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।

-মা পাপ বাপকেও ছাড়ে না। কণার স্বামী মানুষ নামের জানোয়ার ছিল।নিজের স্ত্রীর বোনের দিকে খারাপ দৃষ্টি দিয়েছিল। আর কণার কথা কি বলব বোনের কথা বিশ্বাস না করে স্বামীর কথা বিশ্বাস করেছিল। বড়ো মামীকে সামলাও আমরা আসছি।

শিমুল কল কেটে দিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে আনমনে বলে উঠলো,

-একদিন আমরা সবাই আমাদের কৃতকর্মের শাস্তি পাবো। তাই জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো।

#সমাপ্ত

(আসসালামু আলাইকুম। অবশেষে #স্মৃতির_আড়ালে গল্পটা শেষ হলো।অনেকেই হয়তো বলবেন গল্পটা আরও বড়ো করতে পারতাম কিন্তু আমি ঠিক এতটুকুই ভেবে রেখেছিলাম।সমাজের কিছু অংশ আমি এই গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমার গল্পে হয়তো তুলির জন্য শিমুল আছে কিন্তু বাস্তবে এমন একটি শিমুলের অভাববোধ করে হাজারোও তুলিরা। তাই এরচেয়ে বাড়িয়ে লিখলাম না।সবাই ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ)