স্রোতস্বিনী পর্ব-৩০

0
118

#স্রোতস্বিনী
#মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা
পর্ব ৩০

ঐদিন রাতেই গা কাঁপিয়ে জ্বর আসে রায়হানের,হাতের অবস্থাও নাজেহাল।দু’দিনেও সেই জ্বর কমার নাম নেই।নাওয়া-খাওয়া সব বন্ধ।সে বালিশ থেকে মাথাই তুলতে পারে না,এমন অবস্থা।ডাক্তার জানায় অবস্থা এমন থাকলে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।জাহানারা বেগম বিপাকে পড়ে যান ছেলের অবস্থা দেখে।বলা বাহুল্য,তিনি শুরু থেকেই সবটা জানেন।বনলতা বেগমের বাড়িতে যতবারই মান্ধবী এসেছে,তিনি তাকে নজরে রেখেছিলেন। ছেলের মান্ধবীর প্রতি করুণ দৃষ্টি, কথা বলতে চাওয়া,মান্ধবীর এড়িয়ে যাওয়া সবটাই তিনি খেয়াল করেছেন।মান্ধবী মেয়েটাকে তার প্রথমদিন থেকেই পছন্দ। কিন্তু মান্ধবীর সাথে তার ছেলে যা করেছে,তারপর মান্ধবীর জন্য প্রস্তাব পাঠাতে বাধছিল তার।তবে দিনের পর দিন ছেলের এই অবনতি,দুর্দশা তিনি দেখতে পারছেন না।আজ তো ছেলের মুমূর্ষু অবস্থা দেখে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন।তিনি মান্ধবীর সাথে দেখা করবেন,যা হওয়ার হবে পরে দেখা যাবে।দরকার হলে মান্ধবীর বাবার কাছে মেয়েকে ভিক্ষে চাইবেন।

ঐদিকে স্রোত-মেহরাদের জীবন প্রতিদিনকার মতোই কাটছে।মেহরাদ এখন অনেকটা সুস্থ। হাত-পা ঠিক হতে যতদিন লাগবে ততদিনই একটু কষ্ট করতে হবে।তবে ডাক্তার জানিয়েছে বেশি ক্ষতি হয় নি।আর এক-দেড় মাসের মধ্যে মেহরাদ নিজের পায়ে হাটতে পারবে।এখন হুইল চেয়ার ব্যবহার করতে হয়।স্রোত এখন পাকা গিন্নি হয়ে উঠেছে।সংসারের কাজ করা থেকে শুরু মেহরাদকে খাবার খাওয়ানো,ওষুধ দেওয়া,গোসল করানো,কাপড় পরিবর্তন করে দেওয়া,ওয়াশরুমে নিয়ে যাওয়া সবকিছুই এখন সে করে।শুধু রান্না করে না।বাসায় আসার পর রান্না করতে গিয়েছিলো।মেহরাদ নিষেধ করেছে।সারাদিন এতো কাজ করে রান্না করে নিজে অসুস্থ হওয়ার দরকার নেই।রান্নার জন্য আলাদা লোক রাখা ছিলো সেই করে।

বসুন্ধরায় আঁধার নেমেছে ঘটা করে।স্রোত মেহরাদকে রাতের খাবার খাইয়ে দিচ্ছিলোমেহরাদের ইচ্ছে করছে রাত্রীবিলাস করতে,ছাঁদে যেতে।কিন্তু সারাদিনের কাজ শেষে স্রোতের ক্লান্ত চেহারাটা দেখে তার ইচ্ছে করছে না স্রোতের কাছে আবদার করতে,স্রোতকে বিরক্ত করতে।কিন্তু চারদেয়ালের মধ্যে চব্বিশ ঘন্টা থাকতে বিরক্ত সে।যদিও স্রোত তাকে নিয়ে প্রতিদিন বিকালে পার্ক থেকে ঘুরে আসে।মেহরাদের মুখ ভার দেখে স্রোত জিজ্ঞেস করে,
“কি হয়েছে?মুখ ভার কেনো?”
“ভালো লাগছে না।কতদিন যাবৎ বিছানায় শুয়ে বসে আছি।এক ঘেয়ে লাগছে।তোমাকে বিরক্ত করছি প্রতি মুহুর্তে। এটা আমাকে অপরাধবোধে ভোগায়।”
“হঠাৎ কি হলো?কি করতে ইচ্ছে করছে এখন?”
“আমার এখন রাতের আকাশ দেখতে ইচ্ছে করছে।”
“এটা বললেই হয়।আমি নিয়ে যাচ্ছি ছাদে।এতে অপরাধবোধে ভোগার কি হলো?”
“তুমি সারাদিন কত পরিশ্রম করো।সারারাত জেগে থাকো আমার জন্য।এখন তোমাকে কি করে বলি এতো রাতে আমায় ছাঁদে নিয়ে যেতে?”

স্রোত কিছু না বলে খাওয়া শেষ করে মেহরাদের মুখ মুছে দিয়ে চলে যায় কিচেনে।সেখান থেকে ফিরে এসে মেহরাদকে হুইল চেয়ারে করে লিফ্টের দিকে নিয়ে যেতে যেতে বলে,

“পৃথিবীতে যে আপনার অস্তিত্ব আছে,এটাই আমার কাছে অনেক।আমি মনে করি,আমি সারাজীবন যদি কোনো ভালো কাজ করে থাকি,তার পরিবর্তে আমি আপনাকে আবার ফিরে পেয়েছি।আপনি যে সিচুয়েশন,কমপ্লিকেশনস্ থেকে ফিরে এসেছেন, সেখান থেকে সচরাচর কোনো পেশেন্ট ফিরে আসে না।আপনাকে আগেও বলেছি,এখন আবার বলছি,আপনি আমার কাছে সবকিছুর উর্ধ্বে।”

বলতে বলতে তারা ছাঁদে পৌছে যায়।মেহরাদের মন মেজাজ আবার ফুরফুরে হয়ে যায়।এই অবস্থায় মানসিক হীনমন্যতায় ভোগা স্বাভাবিক।মাথায় কত রকমের খারাপ চিন্তা আসে।এমন অবস্থায় কত মানুষ সুই সাইড করে।সেইদিক দিয়ে মেহরাদ অনেক স্ট্রং।

শীতল হাওয়া ছুয়ে দিচ্ছে এই যুগলকে।চারিদিক আলো দিয়ে ঘেরা।এখান থেকে আলোক ঝলমলে শহরটা অনেক সুন্দর লাগছে।রাতের আকাশে এক ফালি চাঁদ দেখা দিয়েছে।তার অনেক দূরে কয়েকটি তারা মিটমিট করে ঝলছে।
অনেকসময় পর মেহরাদ মুখ খুললো।
“স্রোত!”
“বলুন!”
“আমি মনে হয় বুড়ো হওয়ার আগেই ম রে যাবো।বুড়ো বয়সে তোমার যেই যত্ন পাওয়ার কথা তা আমি এখনই পেয়ে যাচ্ছি।”

কথাটা শোনা মাত্রই স্রোতের রাগ লাগলো।অসম্ভব রাগ লাগছে।এতোবার বুঝানোর পরেও মানুষটা এসব উলটা পালটা কথা কেন বলে!সে মেহরাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে শক্ত গলায় চেঁচিয়ে বলে,

“একটা থাপ্পড় মারবো বেয়াদব লোক।কত্তবার বলেছি এমন কথা বলবেন না?কত্তবার বলেছি?একটা ধাক্কা দিয়ে ছাঁদ থেকে ফেলে দিবো এখন।তারপর আমিও ঝাপ দিবো।আপনার সাথে সাথে আমিও পৃথিবী ছাড়বো।”

মেহরাদ শব্দ করে হেঁসে ফেললো।তার তেজস্বীনি আবার রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে।এতোদিন কোমলতার আবরণে ঢাকা পরে গিয়েছিলো এই রূপ।মেহরাদকে হাসতে দেখে স্রোতের রাগ আরো বেড়ে যায়।মেহরাদ হাসতে হাসতে বলে,
“কুল বউ কুল,আমি তো মজা করছিলাম।দেখতে চাইছিলাম কি করো তুমি।আমি তোমাকে এতো সহজে এতো তাড়াতাড়ি ছাড়ছি না।বুঝেছো?কাছে আসো পা গলী বউ আমার।”

মেহরাদের বলতে দেরী, স্রোতের কাছে আসতে দেরী হয় নি।সে মেঝেতে বসে মেহরাদের কোলে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে।মেহরাদ বাঁধা দেয় না।এটা তো তার প্রতি ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ।সে স্রোতের চুলের ভাজে আঙ্গুলের বিচরণ ঘটাতে ঘটাতে আকাশের তাকায়।মনে মনে বলে,
“এই মানবী যেনো আমৃত্যু আমার হৃদয়ারণ্যে স্রোতস্বিনী হয়ে তার প্রবাহ অব্যাহত রাখে।

স্রোত এখনো কোলে মাথা রেখে আছে।অনেকসময় পর সে স্রোতকে ডাকলো,
” স্রোত!”
“হুম?” মাথা না তুলেই বলে জবাব দেয় স্রোত।
“তুমি আমার মন আকাশের ঐ এক ফালি চাঁদ।”

এবারও মাথা না তুলে স্রোত বলে,
“পা গ ল লোক।”।

মেহরাদ হেঁসে ফেলে বলে,
“আমার পাগ লামীতে তুমি বিরক্ত?”

এবার মাথা তুলে চাইলো স্রোত।মেহরাদ স্রোতের চোখে নজর দিলো।ঐ চোখ ঝলঝল করছে,ঐ দৃষ্টিতে উন্মত্ততা,প্রমত্ততা।মানবী তৎক্ষনাৎ বলে উঠলো,

“আপনার পাগ লামীতে আমি আসক্ত।”

পরদিন বিকালে মান্ধবী ঘরের টুকটাক কাজ করছিলো।আজ ল্যাব না থাকায় তাড়াতাড়িই বাসায় ফিরেছে সে।বাবা বাসায় নেই।কোনো এক কাজে শহরের বাহিরে গিয়েছে।তখনই কলিংবেল বেজে উঠে।মান্ধবী বুঝে উঠতে পারে না এই অসময়ে কে এসেছে!ঐদিকে কলিংবেল অনবরত বেজেই চলেছে।মান্ধবীর বিরক্ত লাগছে,অপরপাশের মানুষটার যেনো তর সইছে না।সে ভেবে নেয় এই অসামাজিক মানুষকে কয়েকটা কথা শুনিয়ে দেবে।ফোসফাস করতে করতে দরজা খুলে সে অবাক হয়ে বলে,

“আন্টি আপনি?”

জাহানারা বেগম হেঁসে বললেন,
“কেনো আসা নিষেধ? ”

লজ্জায় পড়ে যায় মান্ধবী।লজ্জিত স্বরে বলে,
“ছি ছি আন্টি তা কেনো হবে!আমি বুঝতে পারিনি।স্যরি,ভেতরে আসুন।”

মান্ধবী জাহানারা বেগমকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে নিয়ে বসায়।জাহানারা বেগম জিজ্ঞাসা করলেন,
“তোমার বাবা কোথায়? দেখছি না যে?”

বাবার কথা জিজ্ঞাসা করায় মান্ধবী ভয় পেয়ে যায়।তবুও জানায় বাবা বাড়ি নেই।তারপর উনাকে বসিয়ে রেখে রান্না ঘরে চলে যায় সে।আপ্যায়ন তো করা লাগবে,যতই হোক বোনের চাচী শাশুড়ী বলে কথা!

মান্ধবী চা বানাতে ব্যস্ত।তখন জাহানারা বেগম পেছন থেকে বলে উঠলেন,
“তুমি এতো ব্যস্ত হইয়ো না।তোমার সাথে জরুরি কথা আছে আমার।”

মান্ধবী বুঝতে পারে কি বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছন তিনি!সে বলে,
“আপনি বসুন, আমি আসছি।”

জাহানারা বেগম চা পান করতে করতে বললেন,
“আমি তোমার আর রায়হানের ব্যাপারে সবটা জানি।”

মান্ধবী যথেষ্ট অবাক হয়।নিজেকে ধাতস্থ করে বলে,
“আমার উনার সাথে কিছু নেই।”
“জানি আমি।কিছু যাতে হয় তার জন্যই আসা।”

মান্ধবী অবাক হয়ে শোধায়,
“মানে?”
“শোনো তাহলে!
ইরা আমার বড় বোনের মেয়ে।রায়হান ইরার থেকে কয়েক মাসের বড়।আমাদের বাবা চেয়েছিলেন আমাদের দুই বোনের সম্পর্ক আরো বেশি জোরালো করতেন।তিনি চেয়েছিলেন রায়হান এবং ইরার বিয়ে হোক।আমরাও আর দ্বিমত করিনি।সেই হিসেবে ছোট থেকেই ওরা জানতো ওদের বিয়ে হবে,একসাথেই ওদের বড় হয়ে উঠা।”

এতোটুকু বলে জাহানারা বেগম থামলেন।মান্ধবী মনোযোগ দিয়ে শুনলো।সে অবাক হয়েছেই বটে!সে এই বিষয়ে অবগত ছিলো না। সে প্রসঙ্গ এড়াতে বলে,
“আন্টি এগুলো আমাকে কেনো বলছেন?”
“কারণ এগুলো তোমার জানা দরকার।”

তিনি আবার বলতে শুরু করলেন,
“বিয়ে ঠিক হলেও ওরা দুজন দুজনকে কখনোই ভাই-বোন ছাড়া অন্যকিছু ভাবতে পারে নি।অনেকভাবে আমাদের বুঝানোর চেষ্টা করতো, যেনো বিয়েটা ভেঙে দিই।কিন্তু বাবার ইচ্ছেকেই আমরা প্রাধান্য দিয়েছিলাম।

একবছর আগের কথা।প্রায় অনেকদিন ধরে রায়হান হাতে ফুল নিয়ে বাসায় আসতো।জিজ্ঞাসা করলে বলতো কোন স্টুডেন্ট নাকি দিয়েছে,প্রতিদিনই দেয়।তবে সে সরাসরি দেয় না,ক্লাসরুমের টেবিলে রেখে দেয়।ইন্টারেসটিং ব্যাপার না?আমার ছেলের চোখেমুখে এতো উৎফুল্লতা আমি এর আগে কখনো দেখি নি।তারপর প্রায়ই খেয়াল করতাম,ফোনের দিকে চেয়ে চেয়ে হাসতো,একপ্রকার লজ্জা পেতো।প্রেমে পড়লে যেমনটা হয়।আমি ভেবেছিলাম ইরার সাথে বুঝি এতোদিন একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং এ এসেছে।প্রায় কয়েকদিন দেখলাম মন খারাপ করে বসে থাকে,খাওয়া-দাওয়াও ছেড়ে দিছে।ভাবলাম ওর সাথে কথা বলা প্রয়োজন।গেলাম কথা বলতে,
” মন খারাপ কেনো?ইরার সাথে কিছু হয়েছে?”
ছেলে আমার দু হাত ধরে জবাব দিলো,
“মা,এই বিয়েটা করলে কেউ সুখী হবে না।বিয়েটা ভেঙে দাও।”
এতোবছরের ঠিক করা বিয়ে!আমি তখন রেগে গিয়ে বলি,
“কি যা তা বলছিস? মাথা ঠিক আছে?”
“ঠিক নেই মা।এতোবছর চেষ্টা করেও ইরাকে আমি ভালোবাসতে পারি নি,আর না ইরা পেরেছে।তোমরা জোর করে নিজেদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছো।আমি এই বিয়ে করতে পারবো না।আমার মনে অন্য একজন ঠাঁই করে নিয়েছে।আমি তাকে ভালোবেসে ফেলেছি মা।”

রায়হানের কথা শুনে আমার মাথায় আগুন জ্বলে উঠে।আমি কোনোকিছু না ভেবেই ওকে থাপ্পড় মেরে দেই।রাগে গিজগিজ করতে বলি,
“এই কথা দ্বিতীয়বার যেনো তোর মুখে না শুনি।তুই শুধু ইরাকে ভালোবাসিস।”

আর কথা হয় না,চলে যাই আমি।পরদিন রাতে ওর ঘর থেকে ভাঙচুরের আওয়াজ পাই।গিয়ে দেখি ঘরের অবস্থা শোচনীয়।ওর হাতে একটা কাটা দাগ আছে দেখো।ঐদিনই হাত কাটে।শান্ত করে যখন জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে!তখন বলে কি জানো?পা গলের মতো বিলাপ বকতে শুরু করলো,
“মা জানো,আজ আমি আমার ভালোবাসার মানুষকে সবার সামনে অপমান করেছি,সবার সামনে থাপ্পড় মেরোছি।ওর জ্বালানো আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না মা।ও আমাকে ওর ভালোবাসার জালে আটকে ফেলছিলো।কিন্তু আমার কাছে তো সুযোগ নেই ওকে পাওয়ার! তাই ও যেনো আমাকে ঘৃণা করে তাই এমন টা করেছি।কিন্তু আমার তো সহ্য হচ্ছে না মা।অনেক কষ্ট হচ্ছে,কলিজা ফেটে যাচ্ছে মা।”

সেদিন আমি আমার ছেলেকে কাঁদতে দেখেছিলাম।দুধের শিশুরা যেমন কান্না করে তেমন।আমার মায়া হয়েছিলো।সিদ্ধান্ত নিলাম আপার সাথে কথা বলবো।নিজের ছেলের প্রতি এতো নিষ্ঠুর আমি হতে পারবো না।গতকাল মেরেই সারাদিন অনুতপ্তায় ভুগছি।কিন্তু কিভাবে বড়আপার কাছে প্রকাশ করবো তা বুঝতে পারছিলাম না।এই সপ্তাহের মধ্যেই খবর পাই,ইরার অন্য একটা ছেলের সাথে চার বছরের রিলেনশিপ!সে ভয়ে কাউকে জানায় নাই।ঐ ছেলের বাড়ি থেকে বিয়ের চাপ দেওয়ায় ইরা এতোদিনে প্রকাশ করে।
সত্যি বলতে কি!ঐদিন নিজেকে নিজের সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি মনে হয়েছিলো।

তারপর থেকে আমার ছেলে চুপ করে গেলো।দু-একটা কথা ছাড়া কথা বলে না।আমাকে যথেষ্ট এড়িয়ে চলতো।মেহরাদের বিয়ের দিন আমি ওকে এতো খুশী দেখি।ভেবেছিলাম ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে হয়তো এতো খুশী।কিন্তু আমার ভাবনা ভুল হয় মেহরাদের বউভাতের দিন।তুমি আর রায়হান যে ঘরে কথা বলছিলে ঐটা আমি শুনে ফেলছিলাম।তখনই আমার কাছে স্পষ্ট হলো সেই একবছর আগের মেয়েটা তুমিই!

জাহানারা বেগম থামলেন।দেখলেন মান্ধবী শক্ত হয়ে বসে আছে।তিনি জিজ্ঞাসা করলেন,
“তুমি কিছু বলবে না?”
“কিছু বলারও নেই,করারও নেই।” দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে মান্ধবী।
জাহানারা বেগম হয়তো বুঝলেন।তিনি মান্ধবীকে বললেন,
“তুমি ভাবো।সময় নাও।আমাকে তোমার সিদ্ধান্ত জানিয়ো।আমি চাই আমার ছেলেটা এবার তার ভালোবাসার মানুষটাকে পাক।তুমি রাজি থাকলে আমি নিজে স্রোত আর তোমার বাবার সাথে কথা বলবো।আজ আসি।”

জাহানারা বেগম চলে যান।রেখে যান এক ভঙ্গুর,তৃষ্ণার্ত প্রেমিকাকে।যে এতোদিন আকাশ সমান ঘৃণার আবরণে ভালোবাসাকে চাপা দিয়ে রেখেছিলো।সব কিছু জানার পর নিজের মাথা কেমন শূন্য শূন্য লাগছে মান্ধবীর।একটা সময় পর পুরনো ব্যাথা জেগে উঠলে তার চোখ দিয়ে অশ্রুর বর্ষণ নামে।সারাটারাত এভাবেই কাটে।

#চলবে….