সৎ মা পর্ব-৩+৪

0
330

#সৎ_মা
#পর্বঃ০৩
#রূপন্তি_রাহমান

সেদিনের পর আজ তিনদিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। এখনো সোলাইমান সাহেব আমার প্রস্তাবের উত্তর দেননি। দিবে কি করে ওনার সাথে তিনদিন দেখাই নেই। তিনি আর পার্কে আসেন না। অথচ ওনার উত্তরের আশায় এবং আরজাকে একটা নজর দেখার আশায় রোজ আমি সেখানে যাই। তীর্থের কাকের ন্যায় গেইট পানে তাকিয়ে থাকি এই তারা আসবে। কিন্তু তারা এলো না। নিজের প্রতি নিজের রাগ হতে লাগলো সব শুনে কেন সেদিন ওনাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে গেলাম। ওনার মোবাইল নাম্বার বা বাড়ি ঠিকানা কোনোটাই আমার কাছে নেই। সেজন্য আরো বেশি রাগ হতে লাগলো।

বৃহস্পতিবার দিন হাফ স্কুল ছিলো।ছুটির পর আর বাড়ি যাইনি।ক্লান্ত শরীরটা নিয়ে স্কুল থেকে সোজা সেই পার্কে চলে এলাম। গলাটা কেমন শুকিয়ে গিয়েছে। বেঞ্চে বসেই ঢকঢক করে পানি খেলাম। দূরে ওই কৃষ্ণচূড়া গাছটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো টেরই পেলাম না। পেটে খিদেটাও মাথা চারা দিয়ে উঠলো। বাড়ির উদ্দেশ্যে বসা উঠে দাঁড়ালাম। গেইটের দিকে নজর বুলাতেই আমার চোখ দুটো খুশিতে চকচক করে উঠলো। সোলাইমান সাহেব আরজাকে নিয়ে এসেছে। দৌড়ে গেলাম ওনার কাছে। টুক করে ওনার কোল থেকে আরজা কে কোলে নিলাম আমি । চোখে মুখে চুমু চুমুতে ভরিয়ে দিতে লাগলাম আমি। কতদিন পরে দেখলাম জান বাচ্চাটাকে। এই কয়দিনে চোখ মুখ কেমন শুকিয়ে গিয়েছে। আরজা মিশে রইলো আমার বুকের সাথে। আরজা কে পেয়ে খিদের কথাটা বেমালুম ভুলে গেলাম আমি । ওনাকে বললাম,

“আমার প্রস্তাবে আপনি রাজি না সেদিন বলে দিলেই পারতেন।”

ওনি শুকনো হাসলেন। হেসে উত্তর দিলেন,

” আমার মেয়েটা জন্মলগ্ন থেকেই না পাওয়া নিয়েই বড় হচ্ছে।ওকে দেখে বোঝা না গেলেও জন্মের পর থেকেই ওর শারীরিক দূর্বলতা দিন বাড়ছে।টাইম মেইনটেইন করে সময় নিয়ে খাওয়াতে হয়। সেদিন মা ফোন করেছিলো। মাগরিবের পর ওর খাওয়ার সময়। মোবাইলে সময় দেখে তাই দৌড়ে চলে গিয়েছি কিছু না বলে। সেদিনই ওর শরীর কাঁপিয়ে জ্বর আসে। মেয়েটা আমার এতোদিন জ্বরের সাথে লড়াই করেছে। কিছুই মুখে দিতে পারতো না, শুধু বমি করতো। হাসপাতালেই ছিলাম এতোদিন। আপনাকে খবর দিতে চেয়েছিলাম। পরে মনে পড়লো আপনার বাড়ির ঠিকানা বা মোবাইল নাম্বার কোনোটাই আমার কাছে নেই। আজ ও একটু সুস্থ তাই নিয়ে এলাম।আপনি নিশ্চয়ই রোজ আমাদের জন্য অপেক্ষা করতেন?”

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, “হুম।”

নিজের চোখ থেকে চশমা নামিয়ে সেটা মুছলেন যত্নসহকারে। তারপর বললেন,

” জানেন এতটা দিন মেয়েটাকে আমি একাই সামলেছি। মা তো এমনেতেই অসুস্থ। তবে সেদিন আপনার বলা কথা গুলো তারপর আরজার অসুস্থতা সেদিন আমার সত্যি মনে হয়েছে আমার আরজার জন্য একটা মা প্রয়োজন। বাবা যত যাই করুক না মা তো মাই হয়। আপনি সত্যি আমার মেয়েকে নিজের মেয়ে মনে করবেন তো?”

“আপনি তাহলে আমার প্রস্তাবে রাজি?”

” আগে আমার কয়েকটা প্রশ্ন আছে। অনুমতি দিলে প্রশ্ন গুলো করবো।”

“জ্বি করতে পারেন।”

“আপনি তো সুদর্শনা, ওয়েল এডুকেডেট তার উপর আবার চাকরি করেন। আপনি কেন আমার মতো বিবাহিত আর এক বাচ্চার বাবা কে করতে চাইছেন? আপনি তো আনম্যারিড আর আমার থেকেও বেটার কাউকে ডিজার্ভ করেন।”

“আমার চারপাশে এমন অনেক মানুষ আছে যারা বোঝায় তারা আমাদেরকে ভালোবাসে
খুব ভালোবাসে। একেবারে নিজের থেকেও বেশি। কিন্তু প্রকৃত অর্থে আমরা তাদের চক্ষুশূল। আমিও এমন অনেককিছু দেখেছি। আমার অনেক আগে থেকেই ইচ্ছে জন্ম না দিয়েও কোনো এক ফুটফুটে শিশুর মা হবো। আরো কারণ আছে তবে সেগুলো অন্য কোনোদিন বলবো।”

” আপনার পরিবার কি রাজি হবে?”

“জীবনটা আমার পরিবারের নয়। সো আমি আমার ইচ্ছেটাকেই প্রাধান্য দিবো। তাছাড়া আমার পরিবার সামলোর দায়িত্ব আমার। আপনি রাজি কি না বলুন?”

“আচ্ছা ঠিক আছে আপনি আপনার পরিবারের সাথে কথা বলেন। দেখেন ওনারা কি বলে।”

____________________________________________

ক্লান্ত শরীরটা নিয়ে কলিং বেল চাপলাম আমি। সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে অনেক আগেই। পেটে খিদে চুঁচুঁ করছে। দাঁড়িয়ে থাকার কোনো শক্তিই পাচ্ছি না। চার থেকে পাঁচবার কলিং বেল চাপার পর দরজা খুলল। দরজা খুলে আমাকে দেখে মায়ের মুখে আঁধার নেমে এলো। ঠোঁট নড়া শুরু হলো ওনার। ওনার বকাবকি কানে জায়গা দিতে ইচ্ছে হলো না। ফ্রেশ হয়ে আগে কিছু খাওয়া প্রয়োজন।

জীবনের একটা পর্যায়ে আসার পর মেয়েরা তাদের বাবা মায়ের কাছে বোঝা হয়ে যায়। তখন তাদের মূল লক্ষ্যই থাকে বিয়ে দেওয়া। যতদিন বিয়ে না করবেন ততদিন আপনি তাদের চোখের বি’ষ। আমি যখন চৌদ্দ শেষ করে পনেরো বছরে পা দেই তখন আমার জীবনের এক চরম সত্যি জানতে পারি। তখন থেকেই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি। এতটুকু বুঝেছিলাম আমার আমি ছাড়া দুনিয়ায় আমার কেউ নাই কেউ না।

ডিনার টেবিলে বসে খাবারের প্লেট নাড়াচাড়া করছি। যে যার মতো খেয়েই যাচ্ছে। বিয়ের কথাটা বাবাকে সেটাই ভেবে পাচ্ছি না। বাবা কিভাবে নিবেন আমার কথাটা। আচমকা বাবার, “খাচ্ছো না কেন?” কথায় ভয় পেয়ে যাই আমি। লজ্জা আর জড়তা একপাশে রেখে বাবাকে বললাম, “বাবা আমি বিয়ে করবো।”

সবাই খাওয়া বন্ধ করে চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বাবা গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,

“সত্যি বলছো বিয়ে করবে। পাত্র দেখবো? যাক যাক এক বাচ্চার বাবাকে বিয়ে করার ভূত মাথা থেকে নামলো শেষে।”

বাবার কথার জবাবে বললাম, পাত্র আমি পছন্দ করেছি বাবা। সে এক বাচ্চার বাবা। আর এক বাচ্চার বাবা বলেই আমি ওনাকে বিয়ে করবো।”

খাবারের প্লেটটা একটু দূরে সরিয়ে বাবা কিছুটা রাগান্বিত স্বরে বললেন,

“তুমি তোমার কথাতেই থাকবে? আমার মান সম্মানটার কথা একবার ভাবলে না? সমাজের মানুষ কি বলবে? যে বিবাহিত পুরুষের কাছে মেয়ে বিয়ে দিচ্ছি। তুমি দিনকে দিন এমন অবাধ্য কেন হচ্ছো?

“আমার জীবনটা যেমন পাওয়া না পাওয়া দিয়ে পূর্ণ, সেই বাচ্চা মেয়েটারও এমন। তাই ওই মেয়েটার ঢাল হতে চাইছি। আর একটা কথা সমাজের মানুষের কথা ভেবে নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে করে জীবনে অসুখী হই তাহলে সমাজ এসে আমায় সুখ দিয়ে যাবে না।”

“তোমার জীবনটা কি না পাওয়া দিয়ে পূর্ণ বলে? আজ অব্দি কোনো কিছুর অভাব পেয়েছো না দিয়েছি, কোনটা?”

“মানুষের জীবনে যা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আমি সেটাই পাইনি। বাকি পাওয়া না পাওয়া গুলো সেদিন বলবো যেদিন এই বাড়ির চৌকাঠ মাড়িয়ে অন্য সংসারে পা দিবো। আমার শুধু তোমার অনুমতি প্রয়োজন। রিসিপশন করতে হবে না। আমি শুধু ঘরোয়াভাবে বিয়ে করবো।সেখানে শুধু দুই লোক ছাড়া কেউ থাকবেনা”

____________________________________________

“হ্যা রে বাবু সত্যি বলছিস তো? মেয়েটা তোকে সত্যি আরজার জন্য বিয়ে করবে তো?”

সেলিনা বেগমের কথায় পিছন ফিরে তাকায় সোলাইমান। ঘুমন্ত আরজা কে বিছানায় শুইয়ে মায়ের কথা প্রেক্ষিতে সোলাইমান উত্তর দেয়,

“আপন মাই তো দশমাস পেটে ধরে এতো কষ্ট করে জন্ম দিয়ে ফেলে চলে গেছে। সেখানে অন্য একটা মেয়ের কাছে এসব আশা করা বোকামি। তারপরও ভাগ্যকে একটা সুযোগ দিয়ে দেখি না আমার মেয়েটার কপালে কি আছে। আর কি আছে আমার কপালে। সবাই তো আর রিংকি না তাই না।”

____________________________________________

পার্কের সেই বেঞ্চে বসে আছে সোলাইমান। অপেক্ষা করছে ইনসিয়ার জন্য। ইনসিয়ার পরিবার কি বলেছে তা জানার জন্য। আরজা কে বেঞ্চে বসিয়ে বাম হাত দিয়ে আগলে রেখেছে। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে ইনসিয়া একটি ছেলের সাথে গেইট দিয়ে পার্কে প্রবেশ করছে। ইনসিয়াকে হাঁটাচলার চিনতে পারলেও ছেলেটার মুখ অস্পষ্ট। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি পাত করে মেয়ে কোলে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো সে।

চলবে,,,

বানান ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

#সৎ_মা
#পর্বঃ০৪
#রূপন্তি_রাহমান (ছদ্মনাম)

সোলাইমান সাহেব কে দেখলাম আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। ওনার দৃষ্টি আমাদের মাঝেই নিবদ্ধ। ওনার কাছাকাছি গিয়ে মুচকি হেসে বললাম ,

“চলে যাচ্ছেন বুঝি? আমি আরো খুুব শখ করে একজনকে নিয়ে এলাম আপনার সাথে দেখা করানোর জন্য।”

সোলাইমান সাহেবের দৃষ্টি আরো তীক্ষ্ণ থেকে তীক্ষ্ণতর হলো।ছেলেটা মাস্ক দিয়ে মুখ আবৃত করে রেখেছে। বোঝাই যাচ্ছে না বয়স কত হতে পারে।

সোলাইমান সাহেবকে অন্যমনস্ক দেখে হাত নেড়ে বললাম,

“আপনাকে কি বললাম শুনতে পাচ্ছেন? একজন দেখা দেখা করতে এসেছে আপনার আর আরজার সাথে। মেইন হচ্ছে আরজা।

ওনি অপ্রস্তুত হেসে উত্তর দিলেন,

“ওহহ! কে ওনি?”

আমি ইরফানের এক হাত জড়িয়ে বললাম,

“আমার সাহস আর অনুপ্রেরণা দেওয়া এবং বয়সে ছোটো হওয়ার পরও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আগলে রাখার মানুষ। কেই কখনো সাপোর্ট না করলে ও আমাকে সব সময় সাপোর্ট করে গেছে। আর বলবে মনে বল রাখো আমি তোমার সাথে আছি। আমি জানি আমার আপু কখনো ভুল করতেই পারে না। আমার ছোট ভাই “ইরফান”।

খুব সন্তর্পণে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সোলাইমান। যেন বুকে এতোক্ষণ পাথর চাপা দিয়ে রেখেছিল।সোলাইমানের মনে হয়েছিল এই বুঝি তার মেয়েটা সব পেয়েও আবার হারিয়ে ফেললো। ইরফান মুখের মাস্ক খুলে। খোঁচা খোঁচা চাপ দাঁড়িতে আবৃত তার গাল। আর চুল গুলো খাঁজকাটার ন্যায় একদম সোজা। সোলাইমান হাত বাড়ালো ইরফানের দিকে হ্যান্ডশেক করার জন্য। ভালো মন্দের কথা বলে ইরফান হাত বাড়িয়ে দিলো আরজার দিকে। আরজা অপরিচিত কাউকে দেখে বাবার দিকে তাকালো। তারপর আরো গুটিয়ে নিলো নিজেকে। বাবার বুকের সাথে একবারে মিশে রইলো।

আরজার নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া দেখে ইরফান কে বললাম,

” আসলে ও সবার সাথে সহজে মিশতে চায় না। আমারো অনেক সময় লেগেছে ওর সাথে মিশতে।”

সোলাইমান সাহেব কে বললাম,

“আসলে হয়েছে কি কাল সবাই কে আপনার কথা বলেছি। তাই আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ও আমার রুমে বসে আছে। ও নাকি আরজার সাথে দেখা করবে।কিউট পরীটাকে দেখবে।”

সব শুনে সোলাইমান সাহেব বললেন, “কি বললেন আপনার পরিবার?

ইরফান বললো, ” আরজা কে আমার কাছে দিয়ে আপনারা কথা বলেন। আমি এদিক ওদিক ঘুরে আসি।”

আরজাকে ইরফানের কোলে দিতে সোলাইমান ইতস্ত বোধ করতেই ওনাকে বললাম,

“বাবা হিসেবে ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক। কারণ এখন সময় ভালো না। তবে আমাকে তো চিনেন?আমাকে যদি বিশ্বাস করেন তো আমার ভাইকেও চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারেন।আমার যেমন বাচ্চা পছন্দ ওর তেমন বাচ্চা পছন্দ। ভয় পাবেন না।”

ইরফান আরজাকে নিয়ে যেতেই বললাম,

“হঠাৎ করে একটা অবিবাহিত মেয়ের একটা বিবাহিত এবং সাথে একটা বাচ্চা আছে এমন পুরুষকে বিয়ে করতে চায় শুনলে যেমন রিয়েক্ট করার কথা তেমনই রিয়েক্ট করেছে।”

“তো এখন আপনার মতামত কি? বিয়ে করবেন আমাকে?”

” আল্লাহ যদি দুজনের ভাগ্য একসাথে করে রাখে তো অবশ্যই বিয়ে করবো। আমি আগেও বলেছি আমি আরজার মায়ায় পড়েছি। আপনাকে বিয়ে করার একমাত্র কারণ হলো আরজা। আমি আমার সিদ্ধান্তে অনড়। বাবা রাজি হয়ে যাবে তবে একটু কষ্টকর আর সময় সাপেক্ষ। আমি জানি আপনার ব্যাক্তিত্ববোধ খুব প্রখর। আপনি প্লিজ আপনার সিদ্ধান্ত থেকে অনড় থাকবেন। প্রস্তাব নিয়ে গেলে যদি বাবা কিছু বলে তাহলে প্লিজ আরজার জন্য হলেও একটু সহ্য করে নিয়েন। যদিও খারাপ ব্যবহার করবে না আশা করি। এর আগেই বাবাকে মানিয়ে নিবো।তারপরও আগে আগে বলে রাখলাম। তবে আমার একটা কথা হলো, আমি খুব সাধারণভাবে ঘরোয়াভাবে বিয়ে টা করতে চাই। শুধু আপনার আর আমার পরিবার থাকবে আর কেউ না। কিছু কিছু মানুষ পাত্র পাত্রীকে দোয়া কম খুঁত ধরতে আসে বেশি। তার উপর এই বিয়েতে কিন্তু কথা শুননোর মানুষের অভাব থাকবে না।”

আমার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে সোলাইমান সাহেব বলল,

“যথাআজ্ঞা, হাজার হউক আল্লাহ চাইলে দুইদিন পরে আপনি আমার মেয়ের মা হবেন আপনার কথা তো শুনতেই হবে।”

ওনার কথা শুনে ফিক করে হেসে উঠলাম আমি।

____________________________________________

আজও খাবার টেবিলে আজও বাবাকে আমতা আমতা করে বললাম,

“বাবা কি ভাবলে?”

“কোন বিষয় টা নিয়ে?”

“বিয়ের কথাটা যে বললাম।”

“তুমি সত্যিই ওই ছেলেকে বিয়ে করবে?”

” বাবা আমি কেমন ছেলে বিয়ে করবো আরো আগে বলেছি। এখন যেমন চাই তেমন কাউকেই পেয়েছি। বলতে পারো একদম মনের মতো। সেজন্য কোনো রকম লজ্জা বা জড়তা ছাড়াই তোমাকে আমি নিজেই নিজের বিয়ের কথা বলেছি। সচরাচর এমনটা কোনো মেয়ে করে না।আর তাছাড়া আগের কথা কি ভুলে গেছো বাবা?”

আমার বলা কথাটা কর্ণগোচর হওয়া মাত্রই আঁতকে উঠলেন বাবা। একেবারে ভীত এবং তটস্থ কন্ঠে বললেন,

“আগের কোন কথা? আগের কোন কথার কথা বলছো তুমি?”

মা আরো আতংক নিয়ে বললেন, “তোমার বাবা তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছে। উত্তর দিচ্ছো না কেন?”

ইরফান আর ইকরা কিছু না বুঝে আমাদের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। আমি কিছু না বলে না খেয়ে চলে আসলাম। আগের কথা গুলো মনে হলে ভিতরটা জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। শারীরিক যন্ত্রণার চেয়ে মানসিক যন্ত্রণাটা যে বেশি কষ্টদায়ক। নিজেকে কোনোরকম শান্ত করে সোলাইমান সাহেবকে কল করলাম। সেদিন কথা শেষ করে ওনার নাম্বার নিয়ে এসেছিলাম। দুবার রিং হওয়ার পর রিসিভ করলেন ওনি। হ্যালো না বলেই সরাসরি বললেন,

“ইনসিয়া এতোরাতে কল করলেন?কোনো সমস্যা হয়েছে?”

“আরজা কি ঘুমিয়ে গেছে?”

“হুম মাত্রই ঘুমালো সে। বললেন না তো কি হয়েছে।”

“আমি কাল স্কুল থেকে ছুটি নিয়েছি। আপনি কাল সারাদিনের জন্য আরজা কে আমার বাড়িতে দিয়ে যাবেন? আমি চাই আরজা আমার মতো এবাড়ির সবাইকে নিজের মায়ায় জড়াক।”

“আচ্ছা আমি মায়ের সাথে কথা বলে আপনাকে জানাচ্ছি।”

আমিও “আচ্ছা” বলে কল কেটে দিলাম। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি ইরফান আমার রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। ওকে বললাম, “আয় ভেতরে আয়।”

“আপু তোমাকে একটা প্রশ্ন করি?”

“খাবার টেবিলে যে কথাটা বললাম সেটাই জানতে এসেছিস তো তুই?”

“হুম।”

” বলবো সব বলবো।যেদিন এ বাড়ির চৌকাঠ মাড়িয়ে চলে যাবো, সেদিন নিজের ভেতরের সকল কষ্ট বলে যাবো। ততদিন অব্দি আমার ভেতরেই সকল কষ্ট জমা থাক।”

____________________________________________

পরদিন সোলাইমান সাহেব আরজাকে রাস্তায় মোড়ে এসে দিয়ে গেলেন। ড্রয়িং রুম ক্রস করতেই মা বললেন, “এই বাচ্চা কার? আর কখন এলো?”

আমি উত্তর দেওয়ার আগেই ইরফান উত্তর দিলো,

“এই সেই বাবু যার বাবাকে আপু বিয়ে করবে বলেছে।”

ইরফান কে দেখেই এক গাল হাসলো আরজা। মা চোখ মুখ লাল করে বললো, “বাব্বাহ্ তুমি চিনো দেখছি।তাহলে জল এতো দূর এগিয়েছে?”

আর আমার দিকে তাকিয়ে বললো, “যত্তসব ঢং।” বলেই চলে গেলো রান্না ঘরে।

বাবার রুমে নিয়ে গেলাম ওকে। বাবা রকিং চেয়ারে বসে পেপার পড়ছেন। আজ তিনিও অফিস যাননি। কোল থেকে নামিয়ে দিলাম ফ্লোরে। ও হামাগুড়ি দিতে দিতে বাবার পায়ের সামনে। আচমকা একটা বাচ্চাকে দেখে বাবা ভয় পেয়ে গেলেন। তারপরই পলকহীন তাকিয়ে ওর দিকে। আমার উপস্থিতি টের পেয়ে বাবা একবার আমার দিকে তো আরেকবার আরজার দিকে তাকাচ্ছেন। ওদিকে আরজা বাবার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। বাবা আমাকে বললেন, ” ও কে? ”

মাথা নিচু করে জবাব দিলাম, ” ওই সে মেয়ে যার জন্য ওর বাবাকে আমি বিয়ে করবো আমি।”

কথা টা শোনা মাত্রই বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো বাবা,,

চলবে,,,

বানান ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।