সৎ মা পর্ব-৫+৬

0
332

#সৎ_মা
#পর্বঃ০৫
#রূপন্তি_রাহমান (ছদ্মনাম)

বাবা কোনো প্রকার প্রতিক্রিয়া দেখালেন না। নিঃশব্দে রুম থেকে প্রস্থান করলেন। আমি ভেবেছিলাম খুব রাগারাগি করবে, চিল্লাচিল্লি করে পুরো বাড়ি মাথায় উঠাবে। নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি আরজা আমার কাপড় ধরে টানাটানি করছে। একটানে কোলে তুলে নিলাম। কোলে উঠে ও আমার কানের দুল নিয়ে খেলতে লাগলো আর নিজে নিজে খিলখিল করে হাসতে লাগলো।

রুমে বসে আরজা কে খাওয়াচ্ছি সাথে ইরফান বসে আছে। এর মাঝে আরজার বাবা ফোন করলো,

– আরজা কি করছে, ইনসিয়া?

– এইতো খাওয়াচ্ছি।

– আপনাকে খুব জ্বালাচ্ছে তাই না, ইনসিয়া? ও না সহজে খেতে চায় না। একটু সময় নিয়ে খাওয়াতে হয়। বেশি বিরক্ত করলে বলবেন আমি গিয়ে নিয়ে আসবো।

-বাচ্চারা তো একটু-আধটু জ্বালাতন করবেই। তাছাড়াও ইরফান আছে। ওর সাথে খেলার ছলে খাইয়ে দিচ্ছি।

-আচ্ছা এখন তাহলে রাখি। মা ফোন করেছিলো তাই আপনার থেকে ওর খবর নেওয়া। এমনিতে আমি জানি আমার মেয়ে আপনার কাছে সেফ জোনে থাকবে।

– আচ্ছা রাখছি। আমিও ওকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিবো।

ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে মাথার উপর ঘুরতে থাকা ফ্যানের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে চলেছে ইনসিয়ার বাবা। কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে ধরফর করে মাথা তুলে তাকান ওনি। ওনাকে এমন হন্তদন্ত হতে দেখে রাবেয়া বেগম বললেন,

“আরে আরে আমি ভয় পেয়ে না। এমন অন্য মনস্ক হয়ে কি ভাবছো?”

ইকবাল সাহেব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,

“কি করবো কিছুই বুঝতেছি না। মেয়ের সিদ্ধান্ত মেনে নিবো নাকি জোর করে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দিবো। আমি নিজেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি। মেয়েটার কি হয়েছে কিছু বুঝতে পারছি না। কেমন একরোখা হয়ে যাচ্ছে।”

রাবেয়া বেগম মুখ বাঁকিয়ে বলে,

“তোমার মেয়ের সিদ্ধান্ত মেনে নিবে কি নিবে সেটা তোমার ব্যপার। তবে তোমার মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর যেন তোমার মেয়ে স্বামীর টাকা নাই, এই স্বামীর সংসার করবো না হেনতেন বলে এখানে এসে না থাকে। পরে এতো নাটক সহ্য করবো না। আমরা তাকে জোর করে বিয়ে দিচ্ছি না।”

আরজা ঘুমোচ্ছিলো না বিধেয় ওকে কোলে এইদিকেই আসছিলাম আমি এসেই মায়ের বলা সব কথা শুনে ফেললাম।

“আল্লাহ যদি আরজার বাবার সাথে আমার জোড় মিলিয়ে রাখে তো বলবো, ওর বাবার যথেষ্ট আছে। এখানে এসে পড়ে থাকতে হবে না। তাছাড়া মাথায় দু’কলম হলেও বিদ্যা আছে। বেশি বিপদে পড়লে সেই বিদ্যাকেই না হয় কাজে লাগালাম। এখন যেমন চাকরি করছি পরেও না হয় করবো।”

রাবেয়া বেগম ফুস ফুস করতে করতে বলে,

“কিছুই বলা যায় না সবকথার জবাব একেবারে ঠোঁটের কোণে থাকে।”

ওনার কথাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম,

“বাবা তুমি না আগে ডায়েরি লিখতে? এখন লিখো না কেন?”

ডায়রির কথা শুনে ঘাবড়ে গেলেন তিনি। তড়িঘড়ি করে বললেন,

“আমার ডায়রি কোথাও পেয়েছো? নীল মলাটের মোটা ডায়েরি ।”

“না তোমার ডায়রি আমি পাবো কোথায় বলো? এমনি জিজ্ঞেস করলাম লিখো না কেন?

বাবা কেন জানি একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললান। ফেলে বললেন,

” লিখতাম তবে এখন আর লিখি না। ডায়েরি এমন একটা জিনিস যেখানে মানুষ তার আবেগ, দূর্বলতা, নিজের গোপন অপরাধ সযত্নে লিখে রাখে। এসব একবার কারো হাতে পড়লে তোমাকে ব্ল্যাকমেইল করবে। দূর্বলতায় আঘাত করবে। সেজন্য আর লিখি না। আর তাছাড়া সময় কোথায় বলো?”

আমি “ওহ” বলেই সেখান থেকে চলে এলাম। প্রচন্ড পেটে মোচড় দেওয়ায় ফ্লোরে আরজাকে কোনোরকম বসিয়ে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। ওয়াশরুম থেকে এসেই দেখি রুমের কোথাও আরজা নেই। তখন তড়িঘড়ি ওয়াশরুমে যাওয়াতে রুমের দরজা আটকাতেও ভুলে গিয়েছি। কোথাও পড়ে টরে ব্যথা পেলো না তো? নাকি ইরফান নিয়ে গেলো? দৌড়ে ওর রুমে গিয়ে দেখি ওর রুমে কেউ নেই। ভয়টা যেন বাড়তে লাগলো। কত বিশ্বাস করে ওর বাবা আমার কাছে ওকে দিয়েছে যদি ওর কিছু হয়ে যায় তো কি জবাব দিবো? ছাদের যাওয়ার জন্য বাবার রুম ডিঙিয়ে সিঁড়িতে এক পা দিয়ে আবার ফিরে এলাম রুমের সামনে। ভেতরের চিত্র দেখে আমার চোখ ছানাবড়া। বাবার কোলে আরজা বসে বসে দাঁড়ি টানছে আর বাবা বিভিন্ন রকম মুখভঙ্গি করছে।তা দেখে আরজা খিলখিল করে হাসছে। কি আশ্চর্য আরজা তো সবার সাথে সহজে মিশতে চায় না। কিন্তু বাবার সাথে কিভাবে? এসবই ভাবছিলাম আর আমার নজর আটকে গেলো বাবার পায়ের কাছে। বাবার পছন্দের ফুলদানি টা ভেঙে চুরমার হয়ে পড়ে আছে সেখানে । যা বাবা নিজের প্রথম ইনকামের টাকা দিয়ে কিনেছিলেন। বুঝতে আর বাকি রইলো না এটা কে ভাঙে ফেলেছে।এটা বাবা আমাদের কাউকেই ধরতে দিতেন না অথচ অন্য কেউ এটা ভেঙে ফেললো বাবা টু শব্দও করলোও না। এজন্যই বোধ হয় বাচ্চাদের ফেরেস্তা বলা হয়। এদের অদ্ভুত মায়া থাকে যা দিয়ে এরা সবাই কে নিজের মায়ায় বশ করতে পারে। বাবা আমাকে দেখা মাত্র নিজের মুখভঙ্গি পরিবর্তন করে ফেললেন। গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,

“কোথায় থাকো বাচ্চাটা হামাগুড়ি দিতে দিতে সিঁড়ির কাছে চলে আসছিলো। তার উপর এক পা পা করে নতুন হাঁটা শিখছে যদি পড়ে যেতো? অন্যের বাচ্চা নিজের কাছে এনে রেখেছো দেখেশুনে রাখবে না। তার বাবাও তো তোমার কাছে বিশ্বাস করেই দিয়েছে তাই না?”

আমি তটস্থ গলায় আমতাআমতা করে বললাম,

“বাবা তোমার ফুলদানি টা?”

বাবা আরজা কে নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন আমার কাছে এসে আরজা কে আমার কোলে দিয়ে বললেন,

“হুম ভেঙে গেছে তো কি হয়েছে? এই রুমে এসে ও এটা নিতে চাইলো তাই দিলাম। ভেঙে যাবে কে জানতো?”

“বাবা এটা তো তোমার খুব প্রিয় ছিলো।”

“এ বাসায় কি ফুলদানির অভাব? নাকি মার্কেটে? এরকম দেখে আরেকটা কিনে নিবো। এতো বছর যাবৎ এটা অক্ষত ছিল সেটাই অনেক। ভালো হয়েছে না এটা ভেঙে গেছে আরেকটা কিনে নিয়ে আসবো।একেবারে লেটেস্ট মডেল দেখে।”

বাবার উত্তর শুনে অবাক নেত্রে বাবার দিকে তাকিয়ে রইলাম। বাবা আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

“যাও অনেক বেলা হয়েছে ওকে কিছু একটা খাইয়ে দাও। সারাদিন খেললে হবে না। মুচকি হেসে চলে এলাম সেখান থেকে। কয়েকটা খেলনা দিয়ে ওকে ড্রয়িং রুমের ফ্লোরে বসিয়ে দিলাম। সোফায় বসালে যদি নিচে পড়ে যায়। রান্নাঘরে এলাম ওর জন্য সুজি রান্না করার জন্য। রান্না ফাঁকে ফাঁকে ওর দিকে নজরও রাখছি যদি আবার এদিক সেদিক চলে যায়। হঠাৎই দেখলাম মা ওর কাছে এসে দাঁড়ালো এদিক ওদিক তাকিয়ে টুক করে কোলে তুলে নিলো আরজা কে শব্দহীন ভাবে ঠোঁট নেড়ে কথা বলতে লাগলো। আর আরজা মায়ের নাকফুল খোলার জন্য ব্যর্থ চেষ্টা করতে লাগলো। অনেকটা ইচ্ছে করে পায়ে শব্দ করলাম। যেন মা বুঝে আমি আসছি। দেখি সে কি করে। মা আরজাকে তাড়াতাড়ি করে কোল থেকে নামিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করলেন। সত্যি কথা হলো মানুষ যেমনই হোক না কেন নব্বই শতাংশ মানুষ বাচ্চাকে অগ্রাহ্য করতে পারে না। বেশির ভাগ মানুষই বাচ্চা ভালোবাসে। তবে কয়েকজন আছে ব্যতিক্রম। হাতের পাঁচ আঙুল তো আর সমান না।

সন্ধ্যায় আরজার বাবা এসে আরজা কে নিয়ে গেলো। মেয়েটা আমার কোল থেকে যেতেই চাই ছিলো না। আমিও দিন দিন কেমন মেয়েটার প্রতি আসক্ত হয়ে যাচ্ছি। নেওয়ার আগে বললেন,

” আজ সারাদিন আপনাদের সবাইকে প্রচুর জ্বালিয়েছে তাই না?”

আমি মুচকি হেসে কিছু না বলে চলে এলাম বাড়িতে।

দুইদিন পার হয়ে গেছে। নাস্তা করে রুমে এসে রেডি হচ্ছি স্কুলে যাওয়ার জন্য। সেই মুহূর্তে বাবা আমার রুমে এলেন দুটো শপিং ব্যাগ আর দু’বক্স চকলেট নিয়ে। আমার হাতে দিয়ে বললেন,

“এগুলো সেদিনের সেই বাচ্চা মেয়েটার জন্য। আমার তরফ থেকে দিয়ে দিও।”

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমি শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।

বৃহস্পতিবার রাতে সারারাত পরীক্ষার খাতা কে’টে শেষ রাতে ঘুমিয়েছি। সকালে অনবরত কলিং বেলের আওয়াজে মেজাজ গরম গরম হয়ে গেলো। বাড়িতে কেউ নাই নাকি? আর এতো সকালে কে এলো? মোবাইল হাতরে সময় দেখলাম সাড়ে দশটা বাজে। না বেলা কম হয়নি।নাক মুখ ফুলিয়ে এলোমেলো চুল দরজা যাকে দেখলাম তাতে আমার চোখ দুটো কোটর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো।

চলবে,,,

বানান ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

#সৎ_মা
#পর্বঃ০৬
#রূপন্তি_রাহমান (ছদ্মনাম)

আমার সামনে আর কেউ না স্বয়ং আরজা বাবা মানে সোলাইমান সাহেব ফর্মাল ড্রেসআপে আরজা কে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাথে একজন বয়স্ক ভদ্র মহিলা। ওনি নিশ্চয়ই আরজার দাদি। তাদেরকে দেখে মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিলো। আমার ঠিক কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবো সেটাই বুঝতে পারছি না। ওইদিকে আরজা দরজায় আমাকে দেখা মাত্র তার সদ্য উঁকি দেয়া দাঁত দুটো দেখিয়ে কিটকিটে হাসি দিয়ে আমার দিকে লুটিয়ে পড়লো। তড়িঘড়ি করে ওকে ধরলাম। উড়না টেনে যে ঘোমটা দিবো সেই সুযোগ টুকু আর পেলাম না।

সোলাইমান ইনসিয়ার এমন অবাক হওয়া মুখ দেখে মিটিমিটি হাসছে। সে আগেই জানতো সকাল সকাল ওদের দেখলে ইনসিয়া এমন রিয়েক্টই করবে।

কারো গলা খাঁকারির শব্দে আমি সম্বিত ফিরে পেলাম। পিছন থেকে বাবা বললেন,

“সেই কখন থেকে ওনাদের দরজায় দাঁড় করিয়ে রেখেছো। এবার ভেতরে আসতে দাও।”

বাবার কথা শুনে আমার মুখ আপনা আপনি হা হয়ে গেলো।তাই বাবা কে জিজ্ঞেস করলাম,

“তারমানে তুমি ওনাদের এখানে আসতে বলেছো?”

বাবা গম্ভীর গলায় উত্তর দিলেন,

“হুম আমিই আসতে বলেছি। এবার দরজা ছাড়ো ওনারা ভেতরে আসবে।”

বাবার কথা শুনে কেমন জানি লজ্জা পেলাম আমি। ইশ! কতক্ষণ বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছি আমি ওনাদের। আরজা কে কোলে নিয়ে একপাশে দাঁড়ালাম আমি। ওনারা ভেতরে এলেন। সোলাইমান সাহেব কে ইশারা করলাম একটু পরে ভেতরে যাওয়ার জন্য। এখানে কেন এসেছে সেটা জানবো। কিন্তু ওনি ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখিয়ে ভেতরে চলে গেলেন।আমি আহাম্মক হয়ে ওনার মুখভঙ্গির দিকে তাকিয়ে রইলাম।বাবা আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

“ইনসিয়া তোমার রুমে যাও।গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।”

আমি চুপচাপ আরজা কোলে নিয়ে আমার রুমে চলে আসলাম। আর ভাবতে লাগলাম কেন এসেছে ওনারা আর বাবাই বা কিভাবে ওনাদেরকে চিনলেন। ভাবনার মাঝেই ইকরা আমার হাতে বেবি পিংক কালারের শাড়ি দিলো। শাড়ি হাতে নিয়ে আমি ওর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম। আরজা কে আমার কোল থেকে নিয়ে ও উত্তর দিলো,

“আমাকে এটা মা দিয়ে বলেছে তোমাকে দিতে এবং বলতে যে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে যেতে।”

বলেই আরজা কে কোলে নিয়ে নিচে চলে গেলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। আর কিছুটা হলেও বুঝলাম ওনারা কেন এসেছে। তবে বাবা যে এতো তাড়াতাড়ি ওনাদের ডাকবেন সেটা বুঝিনি।

ড্রয়িং রুমের সোফায় আমি আর সোলাইমান সাহেব মুখোমুখি বসেছি। আরজা আমার কোলে বসে শাড়ির পাড়ে থাকা স্টোন গুলো তুলার জন্য ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আরজার দাদি চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে তা টি-টেবিলে রাখলেন। বাবাকে বললেন,

“ছেলে মেয়ে দু’জনেই যখন রাজি সেখানে আমাদের তো কিছু বলার নাই। এখন আপনি যদি চান তো আমাদের সম্পর্কে আরো ভালো করে খোঁজখবর নিতে পারেন। আরজার জন্মদাত্রী চলে যাওয়ার বিষয়টিও খুঁটিয়ে দেখতে পারেন।”

বাবা জবাব দিলেন,

“আমার মেয়ে যেহেতু নিজে পছন্দ করেছে সেখানে আমার কিছু বলার নেই। সে নিজের জন্য ভালো কাউকেই সিলেক্ট করেছে। তাছাড়া আমি টুকটাক খবর নিয়েছি এতেই হবে।”

” তা ভাইজান বিয়ের ডেট?”

“ওরাই না হয় ঠিক করুক কবে বিয়ে করবে। যাও তোমরা নিজেরা আলোচনা করে এসো।”

আরজা সহ সোলাইমান সাহেব কে নিয়ে হাঁটা ধরলাম ছাদের দিকে।

____________________________________________

“ভাইজান যদি কিছু মনে না করেন একটা প্রশ্ন করি?” সেলিনা খাতুনের কথায় ওনার দিকে তাকালো ইকবাল সাহেব। ওনি মাথা নেড়ে সায় জানালেন। তিনি আবারও বললেন,

“না মানে মেয়ের বাবা হয়ে একজন বিবাহিত এক সন্তানের বাবা কাছে বিয়ে দিচ্ছেন আপনি মন থেকে রাজি তো? আর আপা আপনি?”

ইকবাল সাহেব চোখ থেকে চশমা নামিয়ে রাখলেন। তারপর বললেন,

” রাজি ছিলাম না আমি প্রথমে। সেদিন যখন ইনসিয়া আপনার নাতনি কে এবাড়িতে নিয়ে এলো আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।কেউ খেয়াল না করলেও আমি খেয়াল করেছি। ইনসিয়াও ছোটবেলায় ঠিক এমনই দেখতে ছিলো। তফাৎ একটাই ইনসিয়ার কপালের বামপাশে তিল আছে আপনার নাতনির নেই। আপনার নাতনির চেহারায় আসলেই মায়া আছে। আপনার নাতনির মায়াভরা মুখ দেখলে যে কেউ তার মায়ায় পড়ে যাবে।তাছাড়া আপনার নাতনির মতো আমার মেয়েও,,,,,,

কথা অসমাপ্ত রেখেই স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে গেলেন ওনি।সেলিনা খাতুন ভ্রুকুটি করে পুনরায় প্রশ্ন করলেন,

“আমার নাতনির মতো কি?”

ওনি থতমত খেয়ে বললেন,

“না কিছু না। আসলে মেয়ে আমার একটা ছোট্ট বাচ্চা মেয়ের মা হতে চাইছে সেখানে বাবা হয়ে অনুমতি দিলে ক্ষতি কি? একটা বাচ্চা মেয়ে মা পাবে।”

সেলিনা খাতুন রাবেয়া বেগম কে উদ্দেশ্য করে বলে,

“আপা আপনার মতামত?”

ওনি ইকবাল সাহেবের দিকে চোখমুখ শক্ত করে বলেন,

” যেখানে মেয়ের বাবা তার মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছে সেখানে আমি কিছু বলার কে? মেয়ে তো নিজে পছন্দ করেই বিয়ে করছে।”

____________________________________________

ছাদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি আমি। আঁচল টেনে দেওয়া ঘোমটা টা সেই কখন মাথা থেকে সরে গেছে। সেই আঁচলের কোণা ছাদ ছুঁয়েছে।এই সময়ে রোদের তাপ ধীরে ধীরে বাড়ে। কিন্তু রোদের তেজে আমার দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছে। কেন ভালো লাগছে জানি না। মনে হচ্ছে রোদের তাপ আমার শরীর কে ছুঁতে পারছে না। মনে হচ্ছে এখানে দাঁড়িয়েই থাকি। ঘোর কাটে সোলাইমান সাহেবের ডাকে। ওনি দাঁড়িয়ে আছেন জাম গাছটার ছায়ায়। ওনি আবারও ডাকলেন,

” আরে ইনসিয়া পাগল হয়ে গেলেন নাকি? এতো রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন।এইদিকে ছায়ায় আসুন। আর কিছুক্ষণ থাকলে কিন্তু জ্বর আসবে।”

আমি এগিয়ে গেলাম ওনার দিকে আরজার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে বললাম,

“মানুষের অনেকদিনের মনের ইচ্ছে পূরণ হলে বোধহয় খুশীতে পাগল হয়ে যায়।আমিও তেমনটাই হয়েছি।ভেবেছিলাম বাবা রাজি করাতে কাঠখড় পোড়াতে হবে। বাবা যে এতো তাড়াতাড়ি রাজি হয়ে যাবে কল্পনাও করিনি।

ওনি আমার কথা শুনে মুচকি হাসলেন। হেসে বললেন,

“এখনো কিন্তু বললেন কেন আমাকে বিয়ে করতে চাইছেন।”

“একবার বললাম তো আরজার কারনে। আরজা কে ভালোবাসি বলে।”

তারপর মুখ বাঁকিয়ে আবার বললাম,

“আপনি দেখতে আহামরি কিছু না যে আপনাকে দেখে প্রেমে পড়ে যাবো। আপনার রূপ দেখে গদগদ হয়ে আপনাকে বিয়ে করবো।”

আমার উত্তর শুনে জোরে জোরে হাসতে লাগলেন ওনি। বন্ধ করে বললেন,

“অথচ দেখতে আহামরি কিছুই না লোকটার পরিচয়ই হবে আপনার পরিচয়। ব্যপার টা দারুণ না? তারপর মাঝরাত অব্দি আমার জন্য খাবার টেবিলে বসে থেকে বলবেন, আরজার বাবা আপনি খান নি বলে আমিও খাইনি। মাঝে মাঝে বলবেন, আরজা বাবা আপনি ওই মেয়েটার দিকে তাকালেন কেন?”

আমি মুখ ভেঙচিয়ে বললাম,

” শুধু বলবো না আমার স্বামী আমি ব্যতীত অন্য কাউকে চোখ দিয়ে দেখলে একেবারে চোখ গে’লে দিবো।”

“ওরে বাপরে তাই নাকি?”

“হুম তাই।”

“তা বিয়ের পরও কি চাকরি করবেন?”

“কেন চাকরি না করলে কি আপনার বাড়িতে ভাত দিবেন না আমাকে?”

ওনি আবারও হা হা করে হাসতে লাগলেন।

“আপনি আমার মেয়ের মা হবেন এটাই তো অনেক। একটু আগলে রাখবেন প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে তাতেই হবে। আমি বাবা কতক্ষণ থাকবো বাসায় বলেন? তাছাড়া আপনি শিক্ষিত মেয়ে চাকরি করতেই পারেন। আমার তাতে আপত্তি নেই। এমন তো আপনি সারাদিন রাত বাইরে থাকবেন।”

” আপনি তো দেখছি সিরিয়াস হয়ে গেছেন। না বিয়ের পর চাকরি ছেড়ে দিবো। তখন পুরো ফোকাস আমি আরজার দিকে দিতে চাই। আমি আগে আরজার আদর্শ মা হয়ে উঠতে চাই। এরপরেও যদি কখনো চাকরির দরকার হয় তখন করবো। আমার অর্জিত জ্ঞান তো কেউ নিয়ে নিবে না।”

“ইনসিয়া আমি না আপনাকে যত দেখি তত অবাক হই। আজকাল মেয়েরা এমন হয়? অন্যের মেয়ের জন্য নিজের সবকিছু স্যাক্রিফাইজ ক’জন করে?”

“আচ্ছা এই টপিক বাদ দেন।ভালো কথা বাবা আপনাকে পেলো কই?”

“ইরফান কল করেছিলো। তারপর বলল আপনার বাবা নাকি আমার সাথে কথা বলতে চায়।তারপরই বিয়ে নিয়ে কথা বললো। আরজার মার সম্পর্কে জানতে চাইলো। আচ্ছা ইরফান কই? ওকে তো দেখলাম না।”

“মহারাজ কাল বন্ধুদের সাথে ট্যুরে গেছে।

____________________________________________

ছাদ থেকে নেমে এলো দু’জনেই। সবাই যখন জিজ্ঞেস করলো কবে নাগাদ দু’জনেই উত্তর দিলো আগামী শুক্রবার। ইকবাল সাহেব বললেন,

“এতো তাড়াতাড়ি সব আয়োজন করা সম্ভব না তো।”

সোলাইমান বলল,

“আমরা দু’জনেই চাই কোনোরকম আয়োজন ছাড়াই বিয়ে করতে। বাইরের কেউ থাকবে না। দুই পরিবারের মানুষ আর কাজী।”

উপস্থিত সবাই ওদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।

চলবে,,,

বানান ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।