হক নিবাস পর্ব-১৫ এবং শেষ পর্ব

0
381

#গল্প
#হক_নিবাস
#পর্ব_১৫ (অন্তিম পর্ব)

ওপাশ থেকে সমুদ্র ভাইয়া কী বলল আমি শুনতে পেলাম না। কিন্তু আপু হঠাৎই মাটিতে বসে হুহু করে কাঁদতে লাগলো। আমি কেঁপে উঠলাম!
আপুর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে কানে লাগালাম।

সমুদ্র ভাইয়া বলে যাচ্ছে, হ্যালো! মৌ শুনতে পাচ্ছ? ওকে হসপিটালে নেওয়া হয়েছে। জ্ঞান নেই! হ্যালো! মৌ…
আমি ধীরে ধীরে বললাম, ভাইয়া, আমি। আমরা আসছি।

ফোন রেখে আপুকে ধরলাম!

আপু হড়বড় করে, চোখ বড় বড় করে বলে, মধু! ও ঠিক হয়ে যাবে তো? ওর কিছু হবে না তো?
আমি মাথা নেড়ে বললাম, আপু! সব ঠিক হয়ে যাবে। এবারে চল।

ঠিকানাটা একটা হসপিটালের। আপু আর আমি সেই হাসপাতালে পৌঁছে, একেবারে সামনেই সমুদ্র ভাইয়াকে দেখতে পেলাম। একজন পুলিশের সঙ্গে কথা বলছে।

ইন্সপেক্টর সাহেব বললেন, আপাতত উনার জ্ঞান আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এরপর উনি স্ট্যাবল হলে আমরা উনার জবানবন্দি নেব। আর প্লাবনকে আজ রিলিজ করা হচ্ছে। আমরা ওর বাসায়ও যাব। আমি আপনাকে জানাব।
সমুদ্র ভাইয়া বলল, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ স্যার।
ইন্সপেক্টর সাহেব বললেন, ঠিক আছে। আমরা আসছি এখন।
যাওয়ার আগে আমাদেরকে দেখে উনি প্রশ্ন করলেন, আপনারা?
আপু উদ্বিগ্ন গলায় উত্তর দিল, আমি মজনুর স্ত্রী। মজনু ভালো আছে?
– জ্ঞান ফেরেনি এখনো।

আপু হঠাৎই কাঁপতে শুরু করে। আমি আপুকে ধরে রাখলাম।

সমুদ্র ভাইয়া বলে, মৌসুমী, এভ্রিথিং উইল বি ফাইন। মাধুরী, ওকে নিয়ে বসাও।

ইন্সপেক্টর সাহেব বিদায় নিলে আমি সমুদ্র ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম, ভাইয়া মজনু ভাইয়ের কী হয়েছিল?
ভাইয়া বলল, সেদিন মজনু কিছুতেই তোমাদের দুইবোনের ক্ষতি করতে রাজি হচ্ছিল না। অনেকক্ষণ ঝগড়াঝাটি, কথা কাটাকাটির পর, প্লাবন আর নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারেনি। সে গিয়ে আচমকাই মজনুর পেটে ঘুষি মারে। মজনু পাল্টা মারতে গেলে প্লাবন রাহাতকে ইশারা করে। প্লাবন আর রাহাত মিলে ওকে আহত করে। মজনু চেতনা হারালেও বেঁচে ছিল। এটা বুঝতে পেরে ওরা ওকে বাড়ি থেকে বেশ খানিকটা দূরে একটা ঝোপের আড়ালে পুরোনো, পরিত্যক্ত, ভাঙা একটা গ্যারেজের মধ্যে ফেলে রেখেছিল।
আপু আঁতকে উঠে জিজ্ঞেস করে, আল্লাহ! তারপর?
– প্লাবন, ওই থার্ড ক্লাস ছেলে রাহাতকে টাকার লোভ দেখিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বলেছিল। বাসায় গিয়ে ওরা সব গুছিয়ে বা লুকিয়ে রাখার সময় পায়নি। অনেক দেরী হয়ে গেছিল আর ওরা অনেক টায়ার্ড ছিল। প্লাবন ভেবেছিল, সকালে গুছিয়ে রাখবে। প্রমাণ লোপাট করে দেবে। কিন্তু সকালে সে আগে তোমাদের বাসায় যায় আর এরপর মানিক তার মাথা ফাটিয়ে দেয়!
প্লাবন বা রাহাত কেউ-ই চায়নি যে মজনু মারা যাক। কিন্তু ওকে নিয়ে ওরা কী করবে, সেটা নিয়েও ওরা চিন্তিত ছিল। ওরা বুদ্ধি করেছিল, আপাতত ওকে ওখানেই রাখাবে, ওই ভাঙা গ্যারেজে। রাহাত আর প্লাবন ফোন বন্ধ করে রাখে। আর রাহাত প্রতিদিন মজনুর কাছে গিয়ে তাকে খাবার আর পানি দিত। মজনু একটা ঘোরের মধ্যে ছিল। তার জ্ঞান কখনো আসতো, কখনো থাকতো না। গতকাল রাতে রাহাত গিয়ে দেখে মজনু একেবারেই কোনো রেসপন্স করছে না। বেশ ক’বার ডাকার পরেও লাভ হলো না। মজনু কোন সাড়া দেয়নি। রাহাত পালস চেক করে দেখে মজনু বেঁচে আছে কিন্তু তার অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। বাঁচিয়ে রাখতে হলে তাকে যে করেই হোক, হসপিটালে নিতে হবে। এদিকে প্লাবনও হাসপাতালে ছিল। রাহাত তখন তার ফোন অন করে। প্লাবনকে ফোন করে, মজনুকে কী করা হবে সেটা জানতে। কিন্তু প্লাবনের ফোন তো বন্ধ ছিল। আর এদিকে আমি আর মানিক পুলিশকে সব জানিয়ে এসেছিলাম। রাহাত ফোন অন করায় পুলিশ তার লোকেশন জানতে পারে।
প্লাবনকে ফোনে না পেয়ে, কী করবে বুঝতে না পেরে, রাহাত পালিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু তার আগেই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে, মজনুকে উদ্ধার করে।

সব শুনে আপু আবার ফুঁপিয়ে ওঠে।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, এসব তোমাকে কে বলেছে ভাইয়া?
– রাহাত গ্রেফতার হওয়ার পুলিশ আমাকে জানিয়েছেন। আমি থানায় গেলাম। রাহাত-ই ভয়ের চোটে এসব কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে।

আমি চুপ করে রইলাম। আর কী-ই বা করার আছে এই পরিস্থিতিতে! আমাদের জীবনগুলো এভাবে ওলটপালট হয়ে যাবে, কখনো চিন্তাও করিনি।

কিছুক্ষণ পরে নার্স এসে বললেন, আপনাদের পেশেন্টের জ্ঞান ফিরেছে। তাকে ১০৫ নম্বর কেবিনে শিফট করা হয়েছে।

আপু তড়াক করে উঠে দাঁড়াল। এরপর পড়ি কী মরি করে দৌড় দিল।
*

আমি মনে হয় ঝড়ের বেগে দৌড়ে এসেছি। কিন্তু কেবিনে ঢুকে আর এগোতে পারছি না। আমি মজনুর দিকে তাকাতে পারছি না! কী হাল হয়েছে তার! সে শুকিয়ে আমসি হয়ে গেছে। তার হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ, ক্ষতের চিহ্ন! ধীর পায়ে আমি তার দিকে এগিয়ে চলেছি। আমার পায়ের শব্দ শুনে মজনু চোখ খুলে তাকাল। এরপর মাথা ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকাল। আমার চোখ উপচে জল গড়িয়ে পড়ে। দ্বিতীয়বার না ভেবে আমি তার পাশে বসে তার হাত ধরলাম!

মজনু চমকে উঠে বলে, বউ!

ইশশ! কতদিন পরে তার মুখে আমি ‘বউ’ ডাকটা শুনলাম! আগে বিরক্ত হতাম! কিন্তু আজ মনে হচ্ছে, আমার কান যেন তৃষিত হয়ে ছিল তার মুখ থেকে এই ডাকটা শোনার জন্য!

মজনু আমাকে জিজ্ঞেস করে, কেমন আছ বউ?

আমি কোন জবাব দিলাম না।

আমার হয়ে মজনু-ই উত্তর দিল, নিশ্চয়ই ভালো আছ। তোমাকে জ্বালানোর জন্য তো আমি নেই!

আমি একবুক কষ্ট নিয়ে মজনুর দিকে তাকালাম! আমাকে দেখে তার মনে হচ্ছে আমি তাকে ছাড়া ভালো আছি!

মজনু আবার ধীরে ধীরে বলে, কিন্তু বউ তোমাকে দেখে কেন মনে হচ্ছে না তুমি ভালো আছ? জানো, তুমি যে আমার হাত ধরে আছ, আমার খুব শান্তি লাগছে।

আমি মজনুর দিকে তাকিয়ে রইলাম।

সে এবারে বলল, না না! তুমি ভেব না! আমি সুস্থ হয়ে তোমাকে মুক্তি দিয়ে দিব। তুমি চাইলে এখন ডিভোর্সের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারো।
আমাকে একইভাবে নিশ্চুপ থাকতে দেখে মজনু বলে, বউ এত রাগ করছ যে কথা-ই বলবা না? জানো, আমি ভেবেছিলাম এবার আর ফেরত আসতে পারব না। ওরা আমাকে অনেক মারছে! তবুও আমি খারাপ কাজ করতে রাজি হই নাই। কোন একটা অন্ধকার জাগায় ফেলে রাখছিল। কীসব খাবার, পানি জানি দিত। সাথে কীসব ওষুধ জোর করে খাওয়ায়ে দিত! আমি ঘোরের মধ্যে থাকতাম, বউ! কখনো জাগতাম, কখনো ঘুমাইতাম! ঘোরে থাকতাম!

আমি মজনুর হাতটা জড়িয়ে ধরে হাউহাউ করে কেঁদে দিলাম!

মজনু হতভম্ব হয়ে তাড়াতাড়ি বলে, কী হল তোমার? আমি কী এমন বললাম? আমি কি তোমাকে কষ্ট দিলাম? আমার কোনো কথা শুনে তুমি কষ্ট পাইছ?
আমি কান্না জড়িত কণ্ঠে বললাম, হ্যাঁ। তুমি আমাকে সবসময় কষ্ট দিয়ে এসেছ! এখনো দিচ্ছ!
মজনু বিষন্ন কণ্ঠে বলে, আগে অনেক দুঃখ দিয়েছি জানি! কিন্তু বিশ্বাস করো, আমি এখন শুধরে গেছি। নিজেকে বদলাচ্ছি। তোমাকে কোন কষ্ট এখন আর দিতে চাই নাই!
আমি জোর গলায় বললাম, তাহলে কেন আমাকে মুক্তি দিতে চাইছ? ডিভোর্সের কথা কেন টানছ? তোমার মুখে কি কিছু আটকায় না?

মজনু বিস্ফারিত নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে!

দেখতে দেখতে তার চোখ দু’টো জলে ভর্তি হয়ে গেল!

সে আমার হাতের ওপর তার আরেক হাত রেখে বলে, তু.. তুমি মুক্তি চাও না, বউ?
আমি ফোঁপাতে ফোঁপাতে মাথা নেড়ে জবাব দিলাম, চাই না!
– কিন্তু… কিন্তু.. আগে তো…
– আগে তো তুমিও খারাপ পথে ছিলে। তুমি তো ভালো পথে এসেছ এখন! আমাকে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছ! তাহলে আমার ডিসিশন কি বদলাতে পারে না?

মজনু হাসছে! অতি আনন্দে তার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে!

সে আমায় জিজ্ঞেস করে, তুমি আমাকে ভালোবাসো, বউ?
আমি আবার মাথা নেড়ে বললাম, না! একটুও না!
হেসে মজনু বলে, আচ্ছা। ভালোবাসতে হবে না! আমি তোমাকে এত ভালোবাসবো যে তুমি বাধ্য হবে আমাকে ভালোবাসতে!

আমি মজনুর একহাত জড়িয়ে ধরে রেখে কেঁদেই যাচ্ছি। মজনু আরেক হাত দিয়ে আমার চোখ মুছে দেয়!
*

সমুদ্র ভাইয়া হাসপাতালে মজনু ভাইয়ের কেবিনে ঢুকতে গিয়েও থেমে গেল। দরজাটা অর্ধেক খোলা রেখে সে দাঁড়িয়ে গেল। আমি তার পেছনেই ছিলাম।

জিজ্ঞেস করলাম, কী হয়েছে?

সমুদ্র ভাইয়া সরে গিয়ে আমাকে দেখার সুযোগ করে দিল। দেখলাম আপু মজনু ভাইয়ের হাত জড়িয়ে ধরে কাঁদছে! তারা দু’জন দু’জনার মধ্যে এতই ডুবে গেছে যে আমাদের দরজা খোলার শব্দ তারা শোনেনি। তাদেরকে একসাথে ছেড়ে দিয়ে আমি সরে আসলাম।

সমুদ্র ভাইয়ার সামনে দাঁড়িয়ে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সে হাসিমুখে বলে, আজ অনেকদিন পরে মৌসুমীকে হাসিখুশি, আনন্দিত দেখে খুব ভালো লাগছে, তাই না?

আমি মাথা নাড়লাম।

এরপর প্রশ্ন করলাম, তোমার কষ্ট হচ্ছে না?
হাসিমুখেই সমুদ্র ভাইয়া বলে, আমি তো রোবট নই মধু। কষ্ট লাগছে, কিন্তু মৌকে হাসতে দেখে ভালো লাগছে।

আমি কিছু বললাম না। বুঝতে পারলাম, সমুদ্র ভাইয়ের মনটা সমুদ্রের মতোই বিশাল!

সমুদ্র ভাইয়া কিছুক্ষণ ইতস্তত করে বলে, ইয়ে… মধু… দেখো! মানে ইয়ে… আমি আসলে ক’দিন আগে একটা কথা বলেছিলাম। আমাদের পরিবার আমাদের নিয়ে একটা বিষয় ভেবেছিল। আমি জানি না, তাদের এই সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে কী হবে, তারা কী নির্ণয় করবেন! তবে তুমি যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই হবে। আমি সবসময় তোমার সিদ্ধান্তকে সম্মান করব। তোমাকে সাপোর্ট করব।

আমি খুব ধীরে ধীরে মাথা নাড়লাম।
*

প্লাবন আজই ছাড়া পেয়েছে। বিকেলে পুলিশসহ আমরা সবাই প্লাবনদের বাসায় গেলাম। প্লাবন প্রথমে সব অস্বীকার করল। সে বলল, রাহাত নামের কাউকে নাকী সে চেনেই না! মজনু ভাই নাকী গতকাল তার বাসায় এসেছিল, কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই বেরিয়ে গেছে! এখন কী হয়েছে, কোথায় আছে সে কিছুই নাকী জানে না। ইন্সপেক্টর প্লাবনের কথা শুনে হেসে দিলেন!

এরপর বললেন, সত্যি কথাটা বল প্লাবন। তোমার বিরুদ্ধে আমাদের কাছে সব প্রমাণ আছে। তোমার বাসা থেকে পাওয়া গেছে। আর মজনু নিজেই তোমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে। আর রাহাতকে তুমি চেন না? রাহাত আমাদের হেফাজতে আছে এবং সব স্বীকার করেছে। তোমার আর তোমার বাবার যৌথ ব্যাংক একাউন্ট থেকে তুমি যে টাকা তুলেছ, আর রাহাতকে দিয়েছ, সেই খবরও আমরা জানি। মজনুকে বলেছিলে টাকা দিয়ে বই ছেপে দেবে। তোমার নিজস্ব পরিচিত প্রকাশক আছে। কি বলেছিলে না?

প্লাবন মুখ শক্ত করে বসে থাকে।

আমি শান্ত কণ্ঠে বললাম, কেন এরকম করলি প্লাবন?
সমুদ্র ভাইয়া বলে, প্লাবন তুমি ধরা পড়ে গেছ। তোমার বয়স কম। এই বয়সে তুমি অনেক বিপদজনক কাজ করেছ। তুমি যে প্ল্যান করেছ, সেটাতে অনেক ফাঁক রয়ে গেছে। তুমি ছোট বলেই এত গভীরে ভাবনি। কিন্তু তুমি অত্যন্ত বাজে কাজ করেছ প্লাবন।

প্লাবন থমথমে মুখে বসে ছিল।

এবারে সে হঠাৎ চিৎকার করে ওঠে, তো কী করব আমি? আমার রাগ হয়েছিল। ভীষণ রাগ!
মানিক জিজ্ঞেস করে, ডায়েরি পড়ে?
প্লাবন মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ। খালামণির ডায়েরিটা পড়ে আমি ঘুমোতে পারিনি।
ইন্সপেক্টর সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, ডায়েরিটা কোথায় পেয়েছিলে প্রথম?
– আলমারিতে একটা ড্রয়ার আছে। সব পুরনো কাগজপত্র থাকে। কখনো খোলা হয় না। ওই ড্রয়ারটা একদিন পরিষ্কার করতে গিয়ে পেয়েছি।
খালামণির ডায়েরি পড়ে আমার কাছে সব পরিষ্কার হয়েছে। কেন আমার মামারা আমাদের থেকে বিমুখ সেটা জানতে পেরেছি!
ছোটবেলায় বন্ধুদের মুখে শুনতাম, ছুটিতে ওরা নানাবাড়ি যায়, মামাবাড়ি যায়। ওদের মামাতো ভাইবোন বেড়াতে আসে। কিন্তু আমাদের কখনো এমন হয়নি। বাবাকে অনেক জিজ্ঞেস করেও কোন সদুত্তর পাইনি।
ইন্সপেক্টর সাহেব বললেন, তাই বলে তুমি এরকম করবে?
– একদম না। আমার খালাকে আহসান শফিক হক এবং তার মা যেই আঘাত দিয়েছেন তার শোধ তুলছিলাম।
এনাম চাচা শক্ত গলায় বললেন, কিন্তু জোহরা তোর খালা ছিলেন, তোর মা নন।
প্লাবন স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে, আমি জানি। কিন্তু খালার জন্য লড়াই করার, উনার প্রতিশোধ নেওয়ার তো কেউ ছিল না। মায়ের স্মৃতি আমার মাথায় নেই! খালার স্মৃতিও যে খুব আছে তা নয়। কিন্তু উনাকে এভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে না দিলে কেউ একজন আজ থাকতো আমাদের আদর করার, আগলে রাখার।
প্রতীক ভাইয়া বলল, প্লাবন, তুই পাগল হয়ে গেছিস! এই শিক্ষা পেয়েছিস তুই? আজ আমার মনে হচ্ছে, মা থাকলে তোর এই কাহিনী শুনে এখানেই মারা যেতেন। আর খালামণিও।
প্লাবন হেসে বলে, উনারা বেঁচে থাকলে এই ধরনের কিছু ঘটতোই না!
এরপর সে এনাম চাচার দিকে তাকিয়ে বলে, খালামণি বেঁচে থাকলে আজ আমি এরকম খারাপ হয়ে যেতাম না!
ইন্সপেক্টর সাহেব বললেন, তোমার কোন যুক্তিই ধোপে টিকছে না। যেই অন্যায়টা জোহরা বেগমের সাথে হয়েছিল, তার বিচার তখন কেউ চায়নি। তাই বলে তুমি এভাবে হক সাহেবকে শাস্তি দেওয়ার জন্য যা ইচ্ছে করতে পার না। যাই হোক, প্লাবন, আমাদের তোমাকে গ্রেফতার করতে হবে।
এনাম চাচা হতবিহ্বল হয়ে বললেন, কিন্তু ও আজ মাত্র বাসায় এলো।
– আমাদের ওখানে ডক্টর আছেন।

প্লাবন এতক্ষণ চুপ করে ছিল। এবারে হুহু করে কান্না শুরু করল।

এরপর বাবার দিকে তাকিয়ে বলে, আপনি এবারে বুঝতে পেরেছেন কেমন লাগে? আমি ধরা না পড়ে গেলে আরো একটু বুঝতে পারতেন।

এনাম চাচা তাকে ঠাশ করে একটা চড় মেরে দিলেন।

গালে হাত দিয়ে প্লাবন জিজ্ঞেস করে, মজনু ভাই বেঁচে আছে?
ইন্সপেক্টর সাহেব জবাব দিলেন, হ্যাঁ, বেঁচে আছে।
প্লাবন দাঁতে দাঁত চেপে বলে, শয়তানটা সবাইকে সবকিছু বলে দেওয়ার হুমকি না দিলে আজ এসব কিছুই হতো না। আমার প্রতিশোধটাও নেওয়া হত!
সমুদ্র ভাইয়া জিজ্ঞেস করে, তুমি কি পাগল, প্লাবন?

প্লাবন মুখ শক্ত করে রাখল।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী পেলি এসব করে?
প্লাবন হিসহিস করে বলে, আহসান শফিক হক সাহেবকে তীব্র যন্ত্রণা দিয়েছি!
*

আপু আর মজনু ভাই হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরল তিনদিন পর। এই ক’দিন বাবা কারো সঙ্গে একটা কথাও বলেননি। মানিক বলল, গতকাল রাতে নাকী মানিক ঘুমিয়ে গিয়েছে ভেবে বাবা অনেকক্ষণ তার মাথার কাছে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছেন। মানিকও জানান দেয়নি যে সে জেগে আছে।
আজ আপু বাসায় ফিরে সব শুনল।

এরপর সে বাবার সামনে দাঁড়িয়ে বলল, আমাকে দু’টো দিন সময় দাও। আমি আর মজনু ওর বাসায় চলে যাব। মজনু এখনো একটু দুর্বল। তাই একটু সময় নিচ্ছি।
বাবা থেমে থেমে বললেন, আমার কাছে সময় নেই!
আপু হঠাৎই জ্বলে উঠে বলে, মানে কী বাবা? তুমি আমাদের চলে যেতে বলছ?
বাবা মাথা নেড়ে বললেন, নাহ!
– তবে?
বাবা ধীরে ধীরে বললেন, কিছু না।
আপু কঠিন কণ্ঠে বলতে থাকে, বাবা জানো, এইসব কিছুর জন্য তুমি দায়ী। যেই ঝড়টা আমাদের পরিবারের ওপর দিয়ে গেল তার জন্য একমাত্র দাদী, তার বংশের জন্য আত্মঅহমিকা আর তুমি দায়ী। দাদীকে নিয়ে আর কিছু বললাম না কারণ তিনি পরপারে চলে গেছেন। তবে আমি কখনো বিশ্বাসই করতে পারিনি তুমি এরকম করতে পারো! ছি! তোমার সঙ্গে কথা বলতে, চোখ মেলাতে আমার রুচিতে বাঁধে আজকাল!

বাবা একটা কথারও জবাব দিলেন না। হেঁটে হেঁটে ধীর পায়ে চলে গেলেন।
*

সকালে ঘুম ভাঙলো মানিকের চিৎকার-চেঁচামেচিতে। বেরিয়ে এসে দেখি সে হাউহাউ করে কেঁদে যাচ্ছে!

আপু তাকে ধরে জিজ্ঞেস করে, কী হয়েছে, ভাই?
মানিক কাঁদতে কাঁদতে বলল, আপু বাবা!
– কী হয়েছে? কী করেছেন বাবা?

মানিক কথা না বলে একটা কাগজ আপুর হাতে ধরিয়ে দিল। তার কান্নাকাটিতে কাগজটা ভিজে গেছে। আপু সাবধানে ধরে জোরে জোরে পড়া শুরু করে।

” আমার স্ত্রী, আমার দুই মেয়ে, আমার পুত্র মানিক, এবং আমার পরিবারের বাকী সদস্যরা, তোমাদের সকলকে আমি অনেক ভালোবাসি। হয়তো কখনো বলতে পারিনি, বোঝাতে পারিনি। অনেক বছর পর তোমরা সবাই এক কঠিন সত্যের মুখোমুখি হয়েছ। সেই সত্যি আমাদের পরিবারকে তছনছ করে দিয়েছে। তোমরা সবাই না বললেও, মনে মনে সবাই আমাকেই দোষী ভাবো। আমি তোমাদের কথা মেনে নিচ্ছি। আমি পাপ করেছি, আমি অন্যায় করেছি। আমি আমার মায়ের কথার বিরুদ্ধে যেতে পারিনি। অন্যায় আমার মা-ও করেছেন। তিনি কিন্তু পৃথিবী থেকে অনেক কষ্ট আর সবার চোখে তার জন্য তীব্র ঘৃণা নিয়েই বিদায় নিয়েছেন!
আমার কর্মের জন্য আমি লজ্জিত। তোমাদের সামনে দাঁড়ানোর সাহস আমার নেই। তোমাদের চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস আমার নেই। আমি জানি আমার পাপের ক্ষমাও নেই। তাই আমি চলে যাচ্ছি। কোথায় যাচ্ছি আমি নিজেও জানি না। আমার সাথে আর কখনো দেখা হবে না। আমাকে খোঁজার চেষ্টাও করো না। আমার অংশের সম্পত্তি আমি অনেক আগেই তোমাদের মায়ের নামে করে দিয়েছি। আমার ঘরের আলমারিতে সব কাগজ আছে। তবে সেখানে এও উল্লেখ আছে, আমার স্ত্রীর প্রয়াণের পর আমার তিন সন্তান সেই সম্পত্তি পাবে।
শেষে বলব, আমি আমার কর্মের জন্য লজ্জিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী। পারলে আমাকে ক্ষমা করো। আর আমি তোমাদের সকলকে অনেক অনেক অনেক ভালোবাসি।”

লেখাটা পড়ে আপু থরথর করে কাঁপতে লাগলো। আমিও কাঁদতে কাঁদতে গিয়ে আপুকে জড়িয়ে ধরলাম।

আপু আমার হাত খামচে ধরে বলে, আমি কি বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি বাবার সাথে? বাবা চলে গেলেন?
মানিক ভেউ ভেউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলে, আমার ওপরের ছায়াটা চলে গেল! বাবা অনেক খারাপ, তবুও আমাকে আগলে রেখেছিলেন! আমার এখন কী হবে? কে দেখবে আমাকে? কে নেবে আমার দায়িত্ব?

মানিককে আমরা কিছু বলার আগেই মা এসে হঠাৎ মানিকের মাথায় হাত রাখলেন! মানিক অবাক হয়ে তাকাল!
মা তাকে জড়িয়ে ধরেন!

মানিক হুহু করে কাঁদতে লাগলো মায়ের বুকে মাথা রেখে!

মা তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন, কখনো হয়তো কাছে টেনে নিয়ে আদর করিনি, কিন্তু ফেলেও কিন্তু দেইনি, বাবা। তোমার বাবা তোমাকে ছেড়ে চলে গেছেন, কিন্তু আমি আছি। যতদিন বেঁচে আছি, আমি তোমার সঙ্গে থাকব, তোমাকে আগলে রাখব।

মা এবারে ফিসফিস করে বললেন, মানুষটা চলে গেল! জীবনের প্রথমদিকেই সে পাপ করে আমাকে একা করে দিয়েছিল। আজ আবার আমাকে একা করে দিয়ে চলে গেল!
*

চার বছর পর…

আমার আর সমুদ্রের বিয়ে।

এই চার বছরে বদলেছে অনেক কিছুই। মায়ের আচরণ পরিবর্তন হয়েছে মানিকের প্রতি। মা এখন মানিককে আমার আর আপুর মতই ভালোবাসেন। উনি উপলব্ধি করেছেন যে মানিকের এতে কোন দোষ নেই। তারও আদর, ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার আছে।
মানিক এবারে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।

আপু আর মজনু ভাই, মজনু ভাইয়ের বাসায় চলে গিয়েছিল। মজনু ভাইয়ের বাবা ব্যবসা করতেন। মজনু ভাই এবারে সেই ব্যবসার হাল ধরলেন। প্রথমদিকে একটু উল্টেপাল্টে গেলেও, মজনুভাই এখন বেশ সামলে নিয়েছেন। কবিতা লেখা বাদ দিয়ে মজনুভাই ব্যবসা বাড়িয়েছেন বহুগুণ! আপু পড়ালেখা শেষ করেছে।
আপু বছর দু’য়েক আগে একটা অনেক বড় নামকরা এনজিওতে চাকরি পেয়েছে। অসহায়, দুঃস্থ নারী-পুরুষ এবং বাচ্চাদের পাশে দাঁড়ানো এই এনজিওর কাজ। তবে আপুর অফিস অন্য জেলায়। তাই আপু আর মজনুভাই দুই বছর আগে এখান থেকে নিজেদের ব্যবসা গুটিয়ে ওই জেলাতেই ব্যবসা বাড়িয়েছে।

প্লাবন আর রাহাতের শাস্তি হয়েছে। তারা এখন জেলের ঘানি টানছে। আমার খারাপ ছবিগুলোও ডিলিট করা হয়েছে। তবে এনাম চাচাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক চিরতরে নষ্ট হয়ে গেছে।

চাচা-চাচী বিরাট একটা ধাক্কা খেয়েছেন যখন রেহনুমা পালিয়ে একটা ছেলেকে বিয়ে করে ফেলেছে! চাচী বারবার করে বলেছেন এটা নাকী চাচা যে তার ভাইয়ের পাপাচারে সাহায্য করেছিলেন তার ফল! রেহনুমা আর ফিরে আসেনি।

আর এই ক’বছরে আমি আর সমুদ্র একটু একটু করে কাছে এসেছি। সবকিছু মিটে যাওয়ার পর আমি আর সমুদ্র অনেক ভালো একটা বন্ধু হয়ে গিয়েছিলাম। তার সাথে সব ঘটনা শেয়ার না করলে আমার ভালো লাগতো না। আমাকে ভার্সিটিতে দেওয়া-নেওয়ার দায়িত্বটি সে নিল। আমার পড়া শেষ হওয়ার পর, ফুপু আর ফুপা যখন আবার মায়ের কাছে আমাদের বিয়ের কথা তুললেন, মা আপত্তি করেননি।

সমুদ্র আমাকে ডেকে একদিন জিজ্ঞেস করে, মধু, তোমার মন কী বলে? আমি কিন্তু অনেকদিন আগেই বলে দিয়েছি তুমি যে সিদ্ধান্ত নেবে, আমি সেটাই মেনে নেব।
আমি বললাম, আমি যদি ‘না’ বলি?
মৃদু হেসে সমুদ্র বলল, মেনে নেব। আরেকবার ধরে নেব, আমার ভাগ্যে আমার ভালোবাসার মানুষগুলো থাকে না!
আমি হেসে প্রশ্ন করলাম, তাহলে আমাকে বাঁচানোর দায়িত্ব নিতে তুমি প্রস্তুত?
হেসে সে উত্তর দিল, বাঁচানোর দায়িত্ব তো অনেকদিন আগেই নিতে প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু সেটা পরিস্থিতির চাপে। আর এখন বাকীটা জীবন তোমার হাত ধরে চলার জন্য প্রস্তুত। তোমার পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমি তৈরি। শুধু তুমি সুযোগ দেওয়ার অপেক্ষায় আছি।
আলতো করে তার হাতটা ছুঁয়ে আমি বললাম, আমিও সুযোগ দিতে তৈরি।
*

আমাদের বিয়ের শপিং করব আপুর সাথে। কিন্তু আপুর এখন ছুটি নেই। আরো কয়েক সপ্তাহ পর ছুটি। আর মজনু ভাইও প্রচন্ড ব্যস্ত। ব্যবসা একটু না গুছিয়ে উনিও আসতে পারবেন না।

আপু একদিন ফোন করে বলে, মধু, তুই আর সমুদ্র এখানে এসে শপিং কর। তাহলে আমিও সময় দিতে পারব। আর আমি এমনিও তোদের আসতে বলতাম। একটা জরুরি দরকার আছে।
– কী দরকার?
– সে এসে দেখবি। আসার সময় সবাইকে সাথে করে নিয়ে আসবি।

যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু আপু এমন জোরালো ভাবে বলল, যে যেতেই হল। সবাই মিলে গেলাম।
পৌঁছে আপুর এনজিওতে আগে গেলাম।
মজনু ভাই আমাদের যথেষ্ট খাতিরযত্ন করে নিয়ে এল আপুর অফিসে।

অভ্যর্থনার পর আপু আমাদের বলল, তোদের একজনকে দেখাব।
– কাকে?

আপু কথা না বলে আমাদেরকে এনজিওর একটা খোলা মাঠে নিয়ে এল। এরপর আরেকটু এগিয়ে গিয়েই আমরা থমকে গেলাম! আমার পা মাটির সাথে আটকে গেল! আমার সামনে বাবা বসে আছেন! উনি বসে আছেন হুইলচেয়ারে! ঘাড়টা একদিকে কাত করা! মুখ দিয়ে পানি পড়ছে। এনজিওর একজন কর্মী সেটা মুছে দিল।

আমাদের চোখ ফেটে পানি পড়তে থাকে।

মানিক অস্ফুটস্বরে বলল, বাবা!

সে দৌড়ে গেল বাবার কাছে।

সে বাবার কাছে গিয়ে তাকে ধরে বলল, তুমি এই অবস্থায় কেন বাবা? তোমাকে আমি কত খুঁজেছি। তুমি কেন হারিয়ে গেলে? আমাকে রেখে যেতে কষ্ট হল না?

কিন্তু বাবা কোন কথা-ই বললেন না। একদিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।

আপু এগিয়ে এসে কর্মীটিকে বলে, আপনি যান।

উনি চলে গেলে আপু মানিককে ধরে বলল, বাবা আর কথা বলতে পারবেন না মানিক। আর কখনোই না!

আমরা সবাই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম!

আপু হঠাৎই কাঁদতে শুরু করে।

মজনু ভাই আপুকে ধরে রেখে বলে, আসলে বাবা একটা এক্সিডেন্ট করেছিলেন, আজ থেকে চার বছর আগে। আমরা ধারণা করেছি, হয়তো বাবা বাসা থেকে বেরিয়ে এই জেলায় চলে আসেন, আর কোন না কোনভাবে তার এক্সিডেন্ট হয়। এরপর থেকেই উনি এরকম হয়ে গেছেন। কাউকে চেনেন না, কথা বলতে পারেন না। মাঝেমধ্যে হাত নাড়াতে পারেন একটু-আধটু। ডাক্তার বলেছেন, এই অবস্থার উন্নতি হবে না।
যাই হোক, বাবা এক্সিডেন্ট করার পর স্থানীয় লোকজন তাকে হসপিটালে ভর্তি করায়। এরপর বাবার আর পরিচয় পাওয়া যায়নি। কারণ উনার কাছে মানিব্যাগে কোন ঠিকানা ছিল না, উনার ফোনটাও পাওয়া যাচ্ছিল না। ট্রিটমেন্টের পর উনাকে এলাকার স্বেচ্ছাসেবক দল একটা বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে দেয়। আগের সব ঘটনা আমি সেই বৃদ্ধাশ্রমের অফিস থেকে শুনেছি। মৌ-য়ের এনজিও সপ্তাহ দুই আগে একটা কাজে ওই বৃদ্ধাশ্রমে সার্ভে করতে গিয়েছিল। মৌ তখন বাবার সাক্ষাৎ পায়। মৌ আমাকে ফোন করে জানায়। আমিও গিয়ে তাকে এই অবস্থায় পাই। এরপর আমরা বাবাকে নিয়ে এসেছি আমাদের সাথে। মাঝেমধ্যে আমাদের বাসায়ও নিয়ে যাই।

মা বিড়বিড় করে বলে, কর্ম! তোমার প্রতি ভালোবাসা অনেকদিন আগেই চলে গিয়েছিল, ঘৃণা জায়গা করে নিয়েছিল। তবে তোমাকে এই অবস্থায় কখনোই দেখতে চাইনি!

সমুদ্র মাকে বলল, আমরা কেউ মামাকে এই অবস্থায় দেখতে চাইনি মামী।
মজনু ভাই বলে, বাবাকে তোমাদের বিয়েতে নিয়ে যাব ভেবেছি।

মানিক, আমি আর আপু বাবার কাছে হাঁটুগেড়ে বসে তার কোলে মাথা রাখলাম!

[সমাপ্ত]