হঠাৎ তুমি এলে পর্ব-০৫

0
561

#হঠাৎ_তুমি_এলে
#লেখিকা-শারমিন আচঁল নিপা
#পর্ব-৫

নিলয় ঘরে এসেই আমার পাশে বসে পড়ল। নিলয়কে দেখে তখন খুব ঘৃনা হতে লাগল। কতটা পাশবিক আচরণ আমার সাথে করেছিল।
কিন্তু ঐদিন নিলয়কে একদম অন্য একটা মনুষ হিসেবে আবিষ্কার করলাম। সেদিন নিলয় আমার পাশে বসেই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। আমি তার এরকম আচরণে চমকে গেলাম। কারণ এতটা ভালো সে কখনো হতে পারে বলে আমার মনে হয় না। তার উপর নতুন বাসায় নিয়ে এসেছে। কারণ ছাড়া এরকম করার মানুষ নিলয় ছিল না ব্যাপারটা খুব গোলমেলে মনে হয়েছিল। আমি নিলয়ের দিকে তাকিয়ে উঠে বসতে নিয়েও পারছিলাম না শরীরের ব্যথায়। নিলয় আমার হাতটা ধরে বলল-

– আরে আরে তোমাকে কষ্ট করে উঠতে হবে না। দেখো তুলি আমি তোমাকে এভাবে আঘাত করে ঠিক করে নি। তোমার দিক টা আমার ভাবা উচিত ছিল। ইশ! দেখি তো তোমার পিঠটা।

এ বলে নিলয় আমাকে টান দিয়ে তুলে বিছানায় বসিয়ে আমার পিঠটা দেখে নিজের কপালে নিজের হাত দিয়ে চাপরাতে চাপরাতে বলল-

– হায় আল্লাহ্ এ আমি কী করলাম। এতটা কষ্ট তোমাকে কী করে দিলাম। দাঁড়াও আমি মলম নিয়ে আসতেছি।

এ বলে নিলয় মলম আনতে গেল। আমি নিলয়ের এমন ব্যবহারে কিছুটা ভয় পাচ্ছিলাম এটা ভেবে যে আবার কী করে বসে কে জানে। কারণ নেশাগ্রস্ত মানুষদের কোন বিশ্বাস নেই।

“নেশা মানুষের মনকে ব্যধিতে রুপান্তর করে।শরীর নেশাগ্রস্ত থাকলে মানুষ কখন কি করে সেটা তার নিজের আয়ত্ত্বে থাকে না”

তাই মনে মনে অনেক ভয় পাচ্ছিলাম। তখন ভয়ে ভিতরটা বারবার কম্পন দিতে লাগল। ভয়টা বেশি লাগত শারীরিক নির্যাতনের জন্য। কারণ আমার শরীরটা কোন আঘাত সহ্য করার অবস্থায় ছিল না ।খানিকক্ষণ পর খেয়াল করলাম নিলয় এসেছে হাতে মলম নিয়ে। এসেই আমার পাশে বসে আমার পিঠটা বের করে মলম লাগাতে লাগাতে বলল-

– এভাবে আঘাত করা সত্যিই ঠিক হয় নি।
আগেই বলেছিলাম মেয়েরা আবেগের মোম একটু সহানুভূতি পেলে গলে যায়। আমিও নিলয়ের এমন ব্যবহারে গলে গেলাম। তবুও নিলয়কে ব্যপারটা বুঝতে দিলাম না। চুপ করে বসে রইলাম। নিলয় মলম লাগিয়ে শেষ করে আবার রুম থেকে বের হয়ে গেল। নিলয় রুম থেকে বের হওয়ার পর আরও বেশি ভয় লাগতে শুরু করল। মনে হতে লাগল এখন না কিছু করে বসে। ভয়ে ভয়ে বিছানার এক কোণে বসে রইলাম। পিঠে মলমটা লাগানোর পর বেশ আরাম পাচ্ছিলাম।
খানিকক্ষণ পর খেয়াল করলাম নিলয় আমার রুমে আবার প্রবেশ করেছে আর হাতে ভাতের প্লেট নিয়ে।প্লেট টা হাতে নিয়ে আমার পাশে বসল। আমার পাশে বসে ভাত মাখাতে লাগল আর বলতে লাগল-

– সারাদিন হয়ত কিছু খাও নি। আর নতুন বসায় হয়ত কোথায় কি আছে সেটাও জানো না।

এবার বাসার কথা জিজ্ঞেস করার মুখ্য সময় পেলাম।আমি দেড়ি না করেই নিলয়কে জিজ্ঞেস করলাম-

– আমি এ নতুন বাসায় কী করে আসলাম? আর আগের বাসাটা কি হয়েছে?

প্রশ্নটা করার পর নিলয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে বেশ ভয় পেয়ে গেলাম। কারণ নিলয়ের চোখগুলো লাল হয়ে গেল। মনে মনে ভাবতে লাগলাম এখন মাইর দিলে সহ্য করতে পারব তো? ভয়ে ভয়ে আবারও নিলয়ের দিকে তাকালাম। এবার তাকিয়ে অনেক অবাক হলাম। কারণ নিলয় তার রাগটা দমিয়ে নিয়ে একটা হাসি দিল।নিলয়ের হাসিটা দেখে দ্বিতীয়বার প্রশ্ন করার সাহস পেলাম। তাই পুনরায় নিলয়কে জিজ্ঞেস করলাম-

– বললে না তো এ নতুন বাসায় কী করে আসলাম।

নিলয় ভাতের দলা মাখিয়ে মুখের কাছে ধরে বলল-

-আগে খেয়ে নাও তারপর সবটা বলতেছি। না খেতে খেতে শরীরের অবস্থা খারাপ করে ফেলেছ। এখন খেয়ে নাও তো।

আমিও এর বেশি জোরাজোরি করার সাহস পেলাম না। ভাতের লোকমাটা মুখে নিয়ে চিবাতে লাগলাম।একের পর এক ভাতের লোকমা দিতে লাগল আর আমি খেতে লাগলাম। অনেকদিন পর মনে হলো এক প্লেট ভাত খেলাম। নিলয় হাসতে হাসতে বলল-

– একটু নিজের যত্ন তো নিতে পার। আর পানিটা দিয়ে এ ঔষধটা খেয়ে শুয়ে পড়ো। এ ঔষধটা খেলে ব্যথা কমে যাবে।

আমি নিলয়ের কথা মত ঔষধ টা খেয়ে শুয়ে পড়লাম।কিছুক্ষণ পর নিলয় আমার মাথার কাছে বসে বলল-

– তুমি না জানতে চেয়েছিলে ঐ বসাটা কেন ছেড়েছি।

– হ্যাঁ বলো। এ নতুন বাসায় আমি কখন আসলাম।
নিলয় তখন আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল-

– এটা আমার আরেকটা বাসা। এ বাসায় খালা থাকে।এতদিন তো খালা বিয়ের কথা জানত না। তাই খালাকে জানিয়েছি। জানানোর পর খালা বলল তোমাকে নিয়ে চলে আসতে। তুমি আমার ফোন দিয়ে তোমার মাকে কল করেছ কিনা সেটাও তো আমি জানি না। কারণ ফোনটা ভেঙ্গে গুড়া করে দিয়েছ। আমার কাছে মনে হল তুমি তোমার মাকে হয়ত বলেছ আমার কথা আর তোমার মা হয়তো তোমাকে নিতে চলে আসবে । তাই সকালে তোমার জ্ঞান চলে যাওয়ার পরেই এ বাসায় নিয়ে এসেছি। কারণ তোমাকে আমি হারাতে পারব না।
আর ওয়াদা করছি তোমার সাথে আমি উল্টা পাল্টা ব্যবহার করব না। শুধু একটায় অনুগ্রহ যে, তুমি তোমার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করো না। কারণ এতে আমি তোমাকে হারানোর অনিশ্চয়তায় ভুগি।

নিলয়ের এরকম কথায় আমি আবারও গলে গেলাম।নিলয়ের হাতটা বুকের কাছে এনে বললাম –

-আমি শুধু চাই তুমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসো।

নিলয় ভরসা দিয়ে বলল-

– একদম সব ঠিক করে নিব। চিন্তা করো না।আর কালকে খালা আসবে। খালা অনেক ভালো মানুষ তোমার অনেক যত্ন নিবে। তোমার আর একা লাগবে না। আর কোন মেয়ের সাথে ও কথা বলব না কথা দিচ্ছি।
নিলয়ের এ কথাগুলো শুনে একটা ভরসা পেয়ছিলাম সেদিন। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই খেয়াল করলাম একজন মধ্যবয়স্ক ভদ্রমহিলা ড্রয়িং রুমে বসে আছে। আমি ড্রয়িং রুমের কাছে যেতেই নিলয় বলে উঠল-

– আরে তুলি শরীর খারাপ নিয়ে আসলে কেন? আমাকে ডাক দিতে পারতে।

অপরদিকে পাশের মহিলাটা আমাকে দুচোখ বড় বড় করে দেখে নিলয় কে বলল-

– কী রে নিলয় বউ এর যত্ন নিস না নাকি। এত শুকনা হইলে চলব বল। শরীরে তো হাড় ছাড়া কিছু নেই।

উনার একথা শুনেই আমি বুঝলাম উনি নিলয়ের খালা।উনাকে দেখে মনে একটা শান্তি পেলাম। যাইহোক কথা বলার মানুষ পেয়েছি একজন।

অপরদিকে খালার কথার জবাবে নিলয় আমতা আমতা করে বলল-

– সত্যি বলতে খালা ও একটু অসুস্থ। তুমি চিন্তা করো না একটু যত্ন নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।

খালা নিলয়ের প্রত্যুত্তরে বলল-

– ফের যেন যত্নের ত্রুটি না হয়। আর আমি তো এসেছি।বউমার চেহারায় বদলে দেব যত্ন করে।
নিলয় লজ্জা মাখা মুখে নীচের দিকে তাকিয়ে রইল।আর খালা আমার দিকে তাকিয়ে বলল-

– এদিকে আসো তো।

আমি আস্তে আস্তে হেঁটে খালার কাছে গিয়ে বসলাম।

চলবে।