হঠাৎ তুমি এলে পর্ব-০৬

0
547

#হঠাৎ_তুমি_এলে
#লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-৬

খালার কাছে বসার পর মনে হলো খালাকে সালাম করা দরকার। সেদিন প্রথম আমি আমার শ্বশুর বাড়ির মানুষ দেখলাম। তাই খালাকে সালাম করতে নিলাম।কিন্তু সালাম করতে নেয়ার সময় পিঠে টান পড়ে পিঠের ব্যথা এবং জ্বলুনিটা বেড়ে যায়। তাই ব্যথায় আঃ করে উঠলাম। খালা আমার এমন বিকট শব্দ শুনে আমাকে ধরে বলল-

– কী হয়েছে তোমার? এরকম বিকট শব্দ করলে যে?

– মনে হয় কোমরের রগে টান দিয়েছে।

– দেখিত কোমরটা। এখানে এসে আস্তে করে বসো আমি কোমর মালিশ করে দেই।তাহলে রগে টান ভালো হয়ে যাবে।

আমি খালাকে কোমর মালিশ করতে দিতে চাচ্ছিলাম না। কারণ কোমর মালিশ করতে গেলেই খালার নজর আমার পিঠে পড়বে। কিন্তু খালা খুব নাছোরবান্দা আমি যতই না করতেছিলাম খালা ততই জিদ ধরতেছিল। ভয়ে ভয়ে নিলয়ের দিকে তাকালাম।নিলয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম নিলয় খুব স্বাভাবিক ভাবে বসে আছে। অপরদিকে খালা জোরাজোরি করতেই থাকল। খালার জোরাজোরিতে নিলয় আমার দিকে তাকিয়ে বলল-

– খালা চাচ্ছে যেহুত মালিশ করতে দাও। এত লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই।

নিলয়ের কথা শুনে খালাকে মালিশ করতে দিলাম।মালিশ করতে নিয়েই খালা বলে উঠল-

– কী গো বউমা তোমার পিঠে কি হয়েছে। জামাটা একদম পিঠের সাথে লেপ্টে চট লেগে আছে যে?

আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। আমতা আমতা করতে লাগলাম আর নিলয়ের দিকে তাকালাম। খেয়াল করলাম নিলয় উঠে পাশের রুমে চলে গেল। তখন আমার ভয়টা আরও বেশি কাজ করল খালাকে কী জবাব দিব এটা ভেবে। এর মধ্যে খালা আমার পিঠে হাত দিল। পিঠে হাত দেওয়ার সাথে সাথে এত ব্যথা হল আমি “ওমাগো” বলে চিল্লানি দিয়ে উঠলাম। খালা আমার চিল্লানি শুনে আস্তে আস্তে জামাটা উপরে তুলে পিঠ দেখে মাথায় হাত দিয়ে বলল-

– কী গো বউমা তোমার পিঠে পুড়ল কিভাবে?

বিবেকবুদ্ধি হারিয়ে খালাকে হুট করে জাবাব দিলাম-

– রান্না করতে গিয়ে আগুনের ছ্যাঁকা লেগেছে।

খালা আমার মুখটা উনার দিকে ফিরাল আর চোখ গুলো বড় বড় করে বলল-

– আমাকে কি তোমার বোকা মনে হয়?

– নাহ মানে খালা।

খালা রাগী গলায় বললেন-

– রান্না করতে গিয়ে পিঠে ছ্যাঁকা লাগে এরকম আজব কাহিনী কখনও শুনে নি। নিশ্চয় এটা নিলয় করেছে।কিছু নিয়ে হয়তো ঝগড়া লেগেছিলে আর তখন হয়তো রাগের মাথায় খুন্তি লাগিয়েছে পিঠে। ঠিক বলেছি কি না বলো।

– ঠিক তা না খালা।

– আর বুঝাতে হবে না।যা বুঝার আমি বুঝে গিয়েছি।আমি নিলয়কে গিয়ে এখনেই জিজ্ঞেস করতেছি এরকম কেন করল।

এ বলে খালা উঠে নিলয়ের রুমে চলে গেল।আর এদিকে আমি ভয়ে শুকিয়ে যাচ্ছিলাম এটা ভেবে যে হয়তো নিলয় ভেবেই নিবে যে আমি খালাকে ইচ্ছা করে নালিশ করেছি।

কিছুক্ষণ পর লক্ষ্য করলাম খালা নিলয়ের রুম থেকে বের হচ্ছে আর সাথে নিলয় ও। নিলয়কে দেখে তখন তীব্র ভয় কাজ করতেছিল কি করে বসে এটা ভেবে।তবে নিলয় তেমন কিছুই করল না। বেশ শান্ত হয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেল। আর খালা আমার কাছে এসে বলল-

– তুমি চিন্তা করো না। নিলয় ঔষধ আনতে গিয়েছে। ঔষধ লাগালে তোমার ব্যথা কমে যাবে। তুমি জামাটা পাল্টে একটা ঢিলাঢালা জামা পরে নাও। আমি রান্না ঘরে গিয়ে কিছু রান্না করি।

এ বলে খালা রান্না ঘরের দিকে রওনা দিল। আর আমি রুমে এসে যখনই জামাটা খুলতে নিলাম তখনই পিঠে টান পরল, সাথে সাথে মনে হল আমার কলিজাটা বের হয়ে যাচ্ছে। এতটা অসহ্য জ্বলুনি হচ্ছিল বলে বুঝানোর ক্ষমতা নেই । জামাটা খোলার পর জামাটার পিঠের অংশ দেখে গা টা শিউরে উঠল। কারণ জামাটার পিঠের অংশে ফুসকার গলে যাওয়া পানি আর রক্ত লেগেছিল। জামাটা খুলে খালি গায়ে কিছুক্ষণ বসে রইলাম পাখার নীচে। পিঠে বাতাস লাগাতে একটু জ্বলাটা কমেছে আর ভিতরে শান্তি শান্তি ভাবও লাগছিল। খানিকক্ষণ পর নিলয় দরজা ধাক্কা দিতে লাগল জোরে জোরে। নিলয়ের এরকম দরজা ধাক্কানোতে আমি বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তারাহুরা করে জামাটা পড়ে ভয়ে ভয়ে দরজা খুললাম। দরজা খুলার পর নিলয় আমার হাতটা শক্ত করে ধরে বলল-

– হঠাৎ দরজা লাগিয়েছিলে কেন? তুমি তো কখনো দরজা লক করো না। আজকে দরজা লক করে কী করছিলে?

আচমকা নিলয়ের এমন কথা শুনে বিস্মিত না হয়ে পারলাম না। এত শান্ত গলায় নিলয় কথা বলছে এটা যেন মানতে একটু হিমশিম খাচ্ছিলাম। আমি নিলয়ের হাতটা ধরে বললাম-

– আরে আমি তো কাপড় বদলাতে দরজা লাগিয়েছিলাম। আগের বাসায় তো একা ছিলাম তাই দরজা লাগানোর প্রয়োজন পরত না, এ বসায় তো খালা আছে তাই দরজা লাগিয়ে নিয়েছিলাম।

– অহ! তাই বলো।আমি তো বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ভাবলাম রাগ করে কি থেকে কি করে বসো।

– কেন কি ভেবেছিলে? আমি মরে যাব?

নিলয় আমার মুখটা চেপে ধরে বলল-

– এমন কথা মুখেও আনবে না।

নিলয়ের এরকম আচরণে আমি মোটেও অভ্যস্ত ছিলাম না। সেদিন যতই নিলয়কে দেখেছি ততই বিস্মিত হয়েছি। এর মধ্যে নিলয় আমার গালে হাত বুলাতে বুলাতে বলল-

– পিঠটা দেখাও দেখি মলম লাগিয়ে দিই। এ মলমটা লাগালে জ্বলা কমে যাবে। ব্যথাও কমে যাবে।
এবলে নিলয় আমার পিঠের কাপড়টা তুলে পিঠে মলম লাগিয়ে দিল। তারপর আস্তে করে আমাকে শুইয়ে দিয়ে মাথার চুলে আলতো আলতো হাত বুলাতে বুলাতে বলল-

– আমি তোমার মাথাটা হাত বুলিয়ে দিচ্ছি তুমি একটু বিশ্রাম নাও।

আমি শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলাম আমি কোন স্বপ্ন দেখছি না তো? একজন মানুষ একদিনে এত পরিবর্তন কী করে হতে পারে? প্রশ্নগুলো মনে ঘুরপাক খেতে লাগল। কোনভাবেই কোন ঘটনার মানে বুঝতে পারছিলাম না। আজকে যেন নতুন একটা নিলয়ের পরিচয় পেলাম। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম টেরেই পাই নি।

কানে হালকা আওয়াজ আসছে কেউ একজন ডেকে বলছে-

– কি গো উঠবে না? উঠে দুপুরের খাবার খাও। না খেতে খেতে তো শরীর অবস্থা খারাপ করে দিয়েছ। এভাবে মরার মত পড়ে থাকলে হবে।

ঘুম ঘুম চোখে কন্ঠটা চিনার চেষ্টা করলাম। ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম খালা ডাকছে। কিন্তু চোখে ঘুমের এত তীব্রতা ছিল যে তাকাতে পারছিলাম না। বরাবরের মত ব্যথার ট্যাবলেট খাওয়ার পর আমার তীব্র ঘুম হলো।এ ঘুমের জগৎ থেকে বের হয়ে আসতে মন চাচ্ছিল না।তাকাতে চাইলেও তাকাতে পারছিলাম না। তবে খালা অনবরত ডেকেই যাচ্ছিল। আমি খালার ডাকে শরীরের সমস্ত শক্তি খাটিয়ে চোখ দুটো খুললাম। চোখ খুলেই খালার হাস্যজ্জ্বল মুখটা দেখলাম। খালার হাসি মাখা মুখটা দেখে মায়ের কথা মনে পড়ল। মা ও ঠিক এমন করে খাবারের জন্য ডাকত। আমিও খলার দিকে হেস বললাম-

– হ্যাঁ খালা উঠতেছি। ব্যথার ঔষধ টা খাওয়ার পর কড়া ঘুম হলো। তাই ইচ্ছা করলেও উঠতে পারছিলাম না

– সব সেড়ে যাবে। এখন উঠে খাও। তারপর আবার ঘুমিও।

আমিও খালার কথায় উঠতে নিলাম। কিন্তু ঘুমের তীব্রতায় শরীরটা এত দুর্বল হয়ে গিয়েছিল যে উঠার শক্তি পাচ্ছিলাম না। উঠতে নিলেই মাথাটা চক্কর দিতেছিল আর শরীর অবশ অবশ লাগতেছিল।খালাকে ঘুম ঘুম চোখে বললাম-

– খালা উঠার শক্তি পাচ্ছি না।

– দাঁড়াও আমি ধরে বসাই।তারপর ভাত এনে খাইয়ে দিচ্ছি। ভাত খেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।

এ বলে খলা আমাকে দুহাত ধরে তুলল। আমি ঘুম ঘুম চোখ নিয়েই খাটে হেলান দিয়ে বসে রইলাম। কিছুক্ষণ পর খালা প্লেট ভর্তি ভাত নিয়ে আসলো। আর আমার মুখে লোকমা তুলে দিতে লাগল আর বলতে লাগল-

– না খেয়ে নিজের কি অবস্থা করেছ দেখেছ? সবসময় বেশি বেশি করে খাবে।

খালার কথাগুলো শুনে মায়ের কথা বেশি মনে পড়ছিল। তবুও কিছু করার নেই মাকে কল দিতে পারব না। তবে খালা আসার পর একটু স্বস্তি পাচ্ছিলাম।নিলয়ের পরিবর্তনটাতে যদিও সন্দেহ আছে তবে খালার ভালোবাসাতে কোন সন্দেহ নেই।খেতে খেতে খালাকে বললাম-

– খালা নিলয় কোথায়?

– মিস করতেছ নাকি?

আমি শুধু খালার কথা শুনে একটু মৃদু হাসলাম। খলা আমার হাসি দেখে বলল-

– আমি তোমার মায়ের মতো লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই।নিলয় একটু বাইরে গিয়েছে।।

এর মধ্যে খালা খাওয়ানো শেষ করে পুনরায় বলল-

-এখন ঘুমাও আরাম করে।

আমার চোখে এত ঘুম ছিল যে আমি আবার ঘুমিয়ে গেলাম।হুট করে কারও স্পর্শ অনুভব করলাম।

চলবে।