হলদে প্রজাপতি পর্ব-১২+১৩

0
203

#হলদে_প্রজাপতি
(প্রাপ্তমনস্কদের জন্য )
— অমৃতা শংকর ব্যানার্জি ©®

বারো

ভেবেছিলাম পরেরদিনই গিয়ে মেয়েটির বাবা বা ঠাকুমা যিনি ঘরে থাকেন, তাঁর সঙ্গে দেখা করে সেদিন সন্ধ্যার ঘটনা বলে আসবো । আর, সেদিন যে তাড়াহুড়োতে দেখা করে যেতে পারিনি সেটাও বলে আসবো । একটা বাচ্চা মেয়েকে ঐরকম ফাঁকা জায়গা থেকে পিক আপ করে বাড়ির বাইরে ছেড়ে দিয়ে আসা রীতিমতো অশিষ্ট আচরণের মধ্যে পড়ে। এমনকি নিজের দায়িত্ব ঠিকঠাক করে পালন করা বলেই না সেটাকে। সেই খুঁতখুঁতানিটা রয়েই গেছিল । এমন কিছু তাড়া তো সেদিন ছিল না, বা সেরকম কিছু দেরিও হয়ে যায় নি বাংলোয় ফিরতে । যে, পাঁচটা মিনিট আমি সেখানে নামতে পারতাম না । কিন্তু , সমস্তটাই মুডের ওপর নির্ভর করে । সেদিন কেন যে মুড ছিল না , কে জানে। যাইহোক, তারপরে সেটা আমাকে যথেষ্ট অস্বস্তিতে ফেলেছে । তারপরের কয়েকটা দিন কাজের কিছু বেশি চাপ ছিল। তাছাড়াও মা ফোন করে বলেছিল, বাবার শরীরটা বেশ খারাপ হয়েছে। সেটা নিয়ে দু তিনটে দিন ভালো রকম টেনশনে কাটলো । মাঝে মনে হচ্ছিল, হয়তো বা আমাকে দু তিনটে দিন সিএল নিয়ে যেতে হবে বাবা-মার কাছে। সেই রকম অনুযায়ী মেন্টাল প্রিপারেশনও নিয়ে ফেলেছিলাম । সবে মাত্র চাকরীতে জয়েন করার এক মাসের মধ্যেই ছুটিগুলো নিতে চাইছিলাম না । তবে এমার্জেন্সি প্রয়োজনে তো ছুটি নিতেই হবে । যাইহোক , ছুটি নেওয়ার আর প্রয়োজন পড়েনি। দুটো দিন পরেই মা জানাল বাবার শরীর ঠিক আছে অনেকটা । আপাতত আমার সেখানে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এই সমস্ত কাজ আর টেনশন নিয়ে সপ্তাহটা কাটলো । শনিবার মা-বাবা দুজনের সাথে কথা বলে মনটা খুব হালকা লাগছিল । বুঝতে পারলাম , বাবা এখন যথেষ্ট ভালো আছে । মাথার মধ্যে চিন্তা থাকলে ঘুমের ব্যাঘাত হয় । গোটা সপ্তাহ তাই আমি খুব ভালো করে ঘুমোতে পারিনি । তবে শনিবার রাতের ঘুমটা একেবারে জম্পেশ হয়েছিল। এক ঘুমে সকাল ।

রাতে ঘুম ভালো হলে সকাল সকাল ঘুম ভেঙেও যায়। আমারও তাই হল । রবিবার ভোর ছটা নাগাদ ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম ভাঙতেই মনে পড়ে গেল আজ রবিবার। কর্ম ব্যস্ততা নেই । অগোছালোভাবে দিনটা কাটানো চলবে । তাই ঘুম ভেঙেও বিছানাতেই শুয়ে থাকলাম। আমার বেডরুমটা দক্ষিণের দিকে । বড় বড় দুটো জানালা রয়েছে। হু হু করে হাওয়া ঢোকে । দক্ষিণের হাওয়া । শরীর জুড়িয়ে যায় । এপ্রিল মাসের শেষ দিন আজকে। বাপরে বাপ ! এই সময় কলকাতার গরম ভাবলেও ভয় করে। কালবৈশাখী ঝড়-জল না হলে তিস্টোনো দায়। এসি না চালিয়ে বাবা-মা একটা দিনও দুপুরে বা রাতে ঘুমোতে পারছেনা। আমি সেখানে, সন্ধ্যেবেলা বাংলোয় ঢুকে পড়ার পরে দক্ষিণ খোলা এই ঘরটায় নিজের শরীরটাকে এনে একবার বিছানায় ফেলে দিতে পারলে- আহা, আহা ! কি শান্তি ! হু হু করে হাওয়া দেয়। ঠান্ডা হওয়া। কোথায় গরম? একটু রাত বাড়ার সাথে সাথে আলতো করে গায়ের ওপর একটা চাদর টেনে নিয়ে শুতে হয় ।

ডান পাশ ফিরে শুয়ে দক্ষিণের জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছিলাম । ঠিক আমার বাউন্ডারির বাইরে একটা পেয়ারা গাছ হয়েছে। নিশ্চয়ই পাখির ঠোঁটে করে বয়ে আনা বীজ পড়ে হয়েছে । তাই সেই গাছটার ওপর এখনও সম্পূর্ণ স্বত্বাধিকার একমাত্র প্রকৃতির । কোন মানুষ গাছটাকে এখনো নিজের অধিকারে নিতে পারেনি । যদিও গাছটার অঘোষিত মালিক আমিই। এখনও সমস্ত শাখা প্রশাখা মেলে পূর্ণাঙ্গ গঠন পায়নি বটে। মাটি থেকে দেড় মিটার উচ্চতা হয়েছে গাছটার । এই জানলাটা থেকে চোখ মেললে এই গাছটাই সর্বপ্রথমে নজরে আসে। তবে, গাছের ডালগুলো বেশিরভাগ আমার বাংলোর বাউন্ডারির ভেতরে ঢুকে এসেছে। কয়েকটা ছাতারে পাখি অনবরত এ’ডাল সে’ডাল ওড়াউড়ি করছিল । তার সাথে কিচ কিচ , খিচ খিচ , কিচিরমিচির , ঝগড়াঝাঁটি, হই-হট্টগোল। কিছুক্ষণ পর তারা দল বেঁধে উড়ে গেল । একটা মৌটুসী পাখি এসে খানিক ওড়াউড়ি করে বাংলোর সামনের দিকে উড়ে গেল । বোধহয় ফুল গাছগুলোর দিকে। কিছু পরে দুটো ফিঙে এল কোথা থেকে। কিছুক্ষণ আমার সামনে লেজ নাচিয়ে তারাও উড়ে পালালো । সকাল থেকে এই প্রকৃতির মাঝে তাকিয়ে বসে থাকলে কোথা দিয়ে সময় কেটে যায় খেয়াল থাকে না । কোন ক্লান্তি আসে না । চোখ, প্রাণ, মন, শরীর সব জুড়িয়ে যায় । ঘন্টাখানেক ওইভাবে বিছানায় শুয়ে থাকতে থাকতে দেখলাম পাখিদের কিচিরমিচির বেশ কিছুটা কমে এসেছে। একেবারে ঘুম ভাঙা ভোরে পাখিরা যতটা স্বক্রিয়তা দেখায়, বেলা বাড়ার সাথে সাথে সে সক্রিয়তা কমে আসে ।

তখন কটা হবে, সকাল সাতটা কি সাড়ে সাতটা বাজে । শুনলাম , সদর দরজার কাছ থেকে বেশ কিছুটা শোরগোলের শব্দ আসছে। ঝগড়াঝাঁটি হচ্ছে। একটি পুরুষ কন্ঠ, আরেকটি নারী কন্ঠের সম্মিলিত ঝগড়া। টগর আবার কার সঙ্গে ঝগড়া লাগালো? ওহো , দুদিন হল আমার বাংলোয় আবার একজন গেটকিপার কাজে জয়েন করেছে- যদু মল্লিক । অনেক ইম্পর্ট্যান্ট নথিপত্র থাকে আমার কাছে, তাই মালিকপক্ষ একজন গেটকিপার রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদু ছেলেটি বেশ গাঁট্টাগোঁট্টা , তাগড়াই, দশাসই চেহারা। পাহারা দেওয়ার যোগ্য বটে । তবে মুখে বেশি কথা বলে না, চুপচাপ থাকে। ওর তো এভাবে টগরের সঙ্গে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ার কথা নয়। যে কারণেই বা ওরা ঝগড়া করুক, আমার সকাল বেলার শান্তি ভঙ্গ হলো। কয়েক মিনিটের মধ্যে ঝগড়া থামলো বটে । তবে সুন্দর যে রেশটা শরীরে-মনে লেগেছিল ভোরবেলা থেকে, সেটা আর রইল না। বিছানা ছেড়ে উঠলাম। বাথরুমে গিয়ে প্রাতঃকর্ম সেরে মুখ হাত ধুয়ে বেরিয়ে এলাম । বাইরের লনে নরম সোনালী রোদ পড়ে প্রতিটা ঘাস ঝকঝক করছে। হারানদা মুখ বুজে কাস্তে হাতে আগাছা সাফ করছে।

আমি বেরিয়ে আসতেই , আমার নতুন দারোয়ান যদু ছুটে এসে আমাকে নালিশ করল, দিদিমণি ওই হতচ্ছারী টগর এখানে থাকলে আমি কাজ করতে পারবোনা।

আমি এক ঝলক ওর মুখের দিকে চোখ ঘুরিয়ে নিয়ে অন্যমনে হারান দা’র কাজ দেখতে দেখতে বললাম, তবে কি কাজ ছেড়ে দেবে বলছো?
চমকে উঠল যদু। সে কোথায় টগরের নামে খানিক নালিশ করার ধান্দায় ছিল, ভাবতে পারেনি আমি এক বাক্যে তাকে কাজ ছেড়ে দেওয়ার কথা বলব।
হাত কচলাতে কচলাতে মুখ নামিয়ে আমতা আমতা করে সে বলল, ন্নাহ .. দিদিমণি তা বলিনি । তবে ওই টগরকে আপনি একটু খেয়াল করে রাখবেন । ভালো মেয়েছেলে নয় ।
আমি ভেতরে ভেতরে বেশ অসন্তুষ্ট হয়ে উঠলেও মুখে তার প্রকাশ না করে শুধু কেটে কেটে বললাম , মেয়েছেলে কথাটা আমার সামনে আর কোনদিন বলোনা যদু । শুধু মেয়ে বলবে । ঠিক আছে ? এখন যাও। সাত সকালে উঠেই নালিশ আমার ভালো লাগেনা । তোমার কিছু বক্তব্য থাকলে পরে শুনবো ।
যদু একেবারে নিভে গেল । সাততাড়াতাড়ি আমার কাছ থেকে পালিয়ে বাঁচল সে । আমি লনের ওপর বেতের চেয়ারে গিয়ে বসলাম । টগর ঠিক দুটো চেয়ার আর একটা টুল এই সময় লনে এনে রাখে। কিছুক্ষণ পরে সে এলো , গরম ধোঁয়া ওঠা দু কাপ চা নিয়ে। সাদাটা আমার, লালটা হারানদার। চায়ের কাপ দুটো টুলের ওপর রেখে ট্রে’টা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল, গেল না।
আমি তার দিকে আড়চোখে একবার তাকিয়ে নিয়ে বললাম , কিছু বলবে নাকি ?
ঠোঁট ফুলিয়ে নালিশ করার ভঙ্গিতে সে বলল, মেম , ওই দারোয়ানটা হেব্বি বদমাশ । ও থাকলে আমার কাজ করতে পোবলেম হবে ।
আমি শান্ত গলায় বললাম , নিজের কাজ করো গে যাও। সকালবেলা এই সমস্ত কথা শুনতে আমার ভালো লাগছে না । আর হ্যাঁ , এইরকম সাতসকালে ঝগড়া কোরো না । বিশ্রী লাগে। কথাটা মনে রেখো । এরকমভাবে তোমাদের ঝগড়া শুনে যেন কখনো ঘুম থেকে উঠতে না হয় । যাও এখন । খবরের কাগজটা এখানে এনে দিয়ে যাও ।
টগর বিশেষ সুবিধা করতে না পেরে চলে গেল ।

এভাবেই শুরু হল একটা ছুটির দিনের । কয়েকটাই মাত্র ছুটির দিন পেয়েছি জয়েন করার পর থেকে । তবে, ছুটির দিনগুলো মোটামুটি একই রকম কাটে । ব্রেকফাস্টে টগর বেশিরভাগ ছুটির দিনেই লুচি-আলুরদম বানায় । বাঙালি খাবার দিয়ে দিন শুরু । লাঞ্চে থাকে পাতলা করে মটনের ঝোল, সাদা ভাত , তার সাথে টুকটাক , শেষপাতে দই , এইরকমই কিছু।
দুপুরবেলা ঘন্টাখানেক গড়িয়ে নেওয়ারও সময় পাই সপ্তাহে এই একটা দিনই। ভালো করে বেশ অনেকক্ষণ সময় ধরে স্নান করি । চুলে শ্যাম্পু-ট্যাম্পু করি । টগর প্রতিদিন চান করার ঘন্টাখানেক আগে রান্নাবান্না সমস্ত সেরে উবু হয়ে বসে অনেকক্ষণ ধরে মাথায় তেল লাগায় । ওর মাথা ভর্তি কালো চুল। পাছা ছাড়িয়ে নেমে গেছে । চুলের গোছ এখনো যা, একহাতে কষ্ট করেই ধরতে হবে। ভাবা যায় ! এই ছুটির দিনটাতে আমি ওর অনেকক্ষণ ধরে তেল মাখা দেখি । ও পেছনদিকে মাথাটা হেলিয়ে আঙ্গুলের ডগায় অল্প অল্প করে তেল নিয়ে মাথায় সিঁথি করে চুলে তেল লাগায় । ধীরেসুস্থে । অনেকক্ষণ ধরে ।

আজকে আমি ওর চুলে তেল মাখা দেখছি যে, তা দেখে টগর বললো, মেম, আপনাকে তেল লাগিয়ে দিব ?

অল্পক্ষণ ভাবলাম। তারপর বললাম, আচ্ছা দিও ।

ও নিজের তেল মাখা হতে, অনেকক্ষণ ধরে আমার মাথা মেসেজ করে করে তেল লাগিয়ে দিল । বহুদিন হলো মাথায় তেল মাখার পাট চুকিয়ে ফেলেছি। সেই যে ভামিনী কাকিমা মাথায় তেল লাগানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন, তারপর থেকেই বলা যায়। যখন পুরুলিয়ায় থাকতাম, তখন ছোটবেলায় ঠাকুমা , পরে কিছুটা বড় হওয়ার পরে মা, সপ্তাহে অন্তত দুটো দিন এইভাবে অনেকক্ষণ ধরে যত্ন করে মাথায় তেল লাগিয়ে দিত। তবে তারা মেসেজ করতে জানতো না। টগরের মেসেজ করার হাতটা অসাধারণ। সকালবেলায় টগর আর যদুর ঝগড়াটুকু বাদ দিলে, সারাটা দিন বেশ ভালোই কাটলো।
দুপুরবেলা খেয়েদেয়ে উঠে কিছুটা ভাতঘুম দিলাম । বিকেল বেলায় একটা বেতের চেয়ার নিয়ে লনে বসেছিলাম । চারিদিকে সবুজে সবুজে ছয়লাপ। সোনালী রোদ কিছুক্ষণ পরে গোধুলী রঙের সাজে সেজে রাঙিয়ে দেবে প্রতিটা ঘাসের ডগা, গাছের পাতা, ফুলের পাপড়ি । তারপরে একসময় ঝুপ করে সন্ধ্যা নেমে আসবে। পাখিদের কলকাকলি থেমে গিয়ে ঝিঁঝিঁ পোকার অবিশ্রান্ত ঝিঁ-ঝিঁ ডাক শুনতে পাওয়া যাবে ।

আজকে বিকেলে হালকা প্রসাধন করেছিলাম । ইচ্ছে ছিল চারপাশে একটু ঘুরে বেড়ানোর । প্রসাধন বলতে কিছুই নয় , ঘরের নাইটিটা ছেড়ে একটা আয়রন করা পেঁয়াজ রঙের কুর্তি, সাদা লেগিন্স, দুটো ছোট ছোট ঝুমকো পড়েছিলাম কানে । শ্যাম্পু করা চুলটা আঁচড়ে ছিলাম যত্ন করে । খোলা ছিল। বাঁধিনি । একটা সময় কোমর ছাড়ানো চুল ছিল । তখন ভামিনী কাকিমা চুল কাটানো করিয়েছিলেন । সেদিন কষ্ট হয়েছিল। আর আজকে চাইলেও চুল রাখার উপায় নেই । চুলের গোছ সরু হয়ে গেছে । সরু বিনুনি দেখতে বিশ্রী লাগে। চারপাশটা ঘোরার ইচ্ছা থাকলেও শেষমেষ আর কোথাও যাইনি। লনেই চেয়ার নিয়ে বসেছিলাম।

টগর বাংলোর সদর দরজার সিঁড়ির কাছে বসে চুল আঁচড়াচ্ছে । লম্বা চুলটাকে দু’ভাগে ভাগ করে ডানদিক বাঁদিক যত্ন করে ধরে ধরে আঁচড়াচ্ছে । শরীরটাকে দুলিয়ে কখনো চুলের গোছাকে ডানদিকে নিয়ে আসছে , কখনো বাঁদিকে । ওর শরীরের অসম্ভব বাঁধুনি । আমার থেকে বয়সে হয়তো দু তিন বছরের বড় হবে। কিন্তু, ওর বয়স না জানলে কারোর পক্ষে সেটা আন্দাজ করা সম্ভব নয় । কালো চিকন চামড়ায় যেন কুঁদে বসানো একটা মূর্তি । যেমন সুগঠিত বুক, তেমন কোমরের খাঁজ, তেমন নিতম্বের গড়ন। আটপৌরে করে শাড়িটা পরে একেবারে আঁটোসাঁটো করে গাছকোমর আঁচলটা গুঁজে ছুটে ছুটে যখন কাজ করে বেড়ায়, তখন তাকে দেখে যেকোনো পুরুষ বলবে ‘সেক্সি’ । মহিলারাও বলবে বটে। তবে, মহিলাদের বলার সঙ্গে কামনা থাকবে না । কিন্তু, বেশিরভাগ পুরুষ এই ধরনের একটা নারী-শরীর কামনা করে বসতেই পারে । ওর চুল আঁচড়ানোর ভঙ্গিমার সাথে সাথে দেহে যেরকম হিল্লোল উঠছে, তা দেখেও সেই একই কামনার বশবর্তী হওয়া যায় বটে । হঠাৎ করে কেমন যেন একটা অনুভুতি হল । এই অনুভূতিটা যেকোন মেয়ের একটা স্বতঃসিদ্ধ অনুভূতি । তারা তার নিজের দিকে বা কাছে থাকা কোন মহিলার দিকে কোনো পুরুষ যদি লুব্ধ দৃষ্টি দেয়, তা কেমন করে যেন বুঝতে পারে। চোখের সামনে না দেখলেও বুঝতে পারে । আমার এই অনুভূতি থেকেই সেই অস্বস্তিটা হলো । পিছন দিকে চোখ ঘুরিয়ে দেখলাম, লনের ওপাশে গেটের ঠিক পাশটাতে টুলের ওপর বসে বসে যদু একদৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছে টগরের দিকে। দৃষ্টিতে লুব্ধতা । দেখে কি ঈর্ষান্বিত হলাম আমি ? আমিও মহিলা, টগরও মহিলা । অথচ , টগর আজও পুরুষদের আকর্ষণ করার ক্ষমতা রাখে । আমি কি তবে –
ইস্! এসব কি ভাবছি আমি ? মনটাকে এত ছোট হতে দেওয়া উচিত নয় ।
ওদের থেকে চোখ ফিরিয়ে আশেপাশে তাকালাম। মানুষ আর তার ক্ষুদ্র স্বার্থের গণ্ডির বাইরে চোখ রাখাই ভালো । চারিদিকে শুধু চা-গাছ আর চা-গাছ । দিগন্তরেখা ছুঁয়েছে । এই চা বাগানের সঙ্গে আমার যে সত্যিকারের সম্পর্ক কি, তা বুঝতে পারিনা । শত্রুতা নাকি বন্ধুত্ব । কত কিছু দিয়েছে জীবনে , কত কিছু কেড়েও নিয়েছে ।

কিছুটা আনমনে বিভিন্ন পাঁচমিশালী ভাবনাচিন্তা আসছিল মনের আঙিনায় । হঠাৎ করে দেখলাম, একটা স্কুটার ভটভট্ করে শব্দ তুলে এসে দাঁড়ালো আমার বাংলোর লনের গেটটার সামনে । স্কুটারটা থেকে একজন ভদ্রলোক নামলেন । তার সাথে একটি মেয়ে । আরে, এ তো উপমা !
দুজনে গেটের সামনে স্কুটার থেকে নামতে , যদু এগিয়ে গিয়ে ভদ্রলোককে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলো । তারপরে খুব সম্ভবত ওদের ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে আমার কাছে এগিয়ে এলো। আমি সবটাই দেখেছি , কিন্তু কোন ব্যস্ততা দেখাই নি ।
যদু আমার কাছে এগিয়ে এসে বলল, দিদিমণি একজন ডাক্তার বাবু আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন ।
আমি চোখ তুলে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, নাম কি বলেছেন?
–কি যেন –
মাথাটা চুলকিয়ে নিয়ে বললো, ইন্দ্র না কি যেন একটা –
–বুঝেছি । ওনাদের এখানেই নিয়ে এসো । আর টগরকে গিয়ে বলো, ও যেন দুটো চেয়ার দিয়ে যায় এখানে ।
— আচ্ছা দিদিমনি ।
যদু ওদের কাছে ফিরে যাওয়ার আগেই দেখলাম উপমা আমাকে দেখতে পেয়েছে । দেখেই তাড়াহুড়ো করে প্রায় ছুটে আমার কাছে আসতে গেল । কিন্তু দু’চারটে পা ফেলেই ‘উফ্!’ বলে দাঁড়িয়ে পড়ে, তারপর আস্তে আস্তে এগিয়ে এল আমার দিকে। বুঝলাম ওর পা-টা এখনো সম্পূর্ণ সারেনি । ছুটতে গিয়েছিল , তাই পায়ে লেগেছে ।

দেখলাম , আজকে ওকে বেশ ফ্রেশ লাগছে । উপমাকে এর আগের দিন সন্ধ্যায় অন্ধকারে ঢাকা চা বাগানের মধ্যে দেখেছিলাম । সেখানে ধুলোমাখা উপমাকে দেখে একেবারেই ভাল লাগেনি । আজকে বেশ ভালো লাগলো । বড় বড় দুটো উজ্জ্বল চোখ মেলে আমার দিকে তাকিয়ে আমার একেবারে গা ঘেঁষে এসে দাঁড়াল ও । আমি ওকে আজ প্রথম দিনের আলোয় দেখলাম। বাহ্, ভারী মিষ্টি তো মুখটা ! শুধু চোখ দুটোই নয় , মুখের প্রত্যেকটা অংশই ভারী সুন্দর, কাটা কাটা । মনে পড়ল টগর বলেছিল বটে , ওর মাকে খুব সুন্দর দেখতে । তবে ও যে ওর মাকে পায় না, ওর মায়ের যত্ন ভালোবাসা পায় না, অযত্নে অবহেলায় বড়টি হচ্ছে , তার ছাপ এর আগের দিন ওর চেহারায় থাকলেও, আজকে নেই । বুঝলাম মধ্যে এই দু তিনটে দিন সে তার পায়ে ব্যথা লাগার কারণে বাড়ি থেকে বেরোতে পায়নি। তাই হয়তো তার ঠাকুরমা তাকে বেশ মানিয়ে গুছিয়ে রেখেছে ঘরে । ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম তার দিকে । বয়স হয়তো ন’-দশ বছর হবে । মাজা মাজা গায়ের রং । হাইটটা একটু শর্ট বলে মনে হল বয়সের তুলনায় । অবশ্য আমার দেখার ভুলও হতে পারে । এখন তো বাড়ার বয়েস । ঠিক হয়ে যাবে । তবে উচ্চতা কম হওয়ায় তার চেহারার মধ্যে একটা পুতুল পুতুল ভাব রয়েছে । ঘাড় পর্যন্ত চুল আজকে মাঝে সিঁথি করে দুদিকে দুটো ঝুঁটিতে বাঁধা । তার মাথা নাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁটি দুটো যেনো কলকল করে হেসে উঠছে । ভারী মিষ্টি দেখাচ্ছে । পরনে একটা ফ্রিল দেওয়া, ঘটি হাতা কমলা রঙের ফ্রক । বেশ অনেকটা ঘের । পিছনে বেল্ট বাঁধা ।

সে আমার দিকে তার কালো কালো চকচকে দুটো মণি তুলে বললো, তুমি আমাকে চিনতে পেরেছো ?

আমি তার প্রশ্নের উত্তরে অল্প হেসে তাকে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলাম, তখন ‘নমস্কার’ শুনে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলাম, তার সঙ্গের ভদ্রলোকটি কখন আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন , এবং দুটো হাত জোড় করে ‘নমস্কার’ করার ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকিয়ে নমস্কার’টি জানিয়েছেন। আমি বুঝলাম, ইনিই ডক্টর ইন্দ্রাশিষ গাঙ্গুলী । টগরের ভাষায় ‘ইন্দোর ডাক্তার’ বা ‘পাগলা ডাক্তার’ । যদু আগেই এসে পরিচয় দিয়ে গিয়েছিল, তবে না দিলেও বুঝতে পারতাম । আমি উঠে দাঁড়িয়ে প্রতি-নমস্কার জানালাম।

ক্রমশ..

#হলদে_প্রজাপতি
(প্রাপ্তমনস্কদের জন্য )
— অমৃতা শংকর ব্যানার্জি ©®

তেরো

আমি উঠে দাঁড়িয়ে প্রতি-নমস্কার করার পরে একটু গলা তুলে টগরকে ডাকলাম, টগর ! দুটো চেয়ার দিয়ে যাও তাড়াতাড়ি।
— ব্যস্ত হওয়ার দরকার নেই ।
অল্প হেসে ভদ্রলোক বললেন ।
আমি মুখ ফিরিয়ে তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম , এখন আপনার এখানে এই বাইরের লনে বসতে ভালো লাগবে বলে মনে হল । তাই এখানে চেয়ার দিতে বললাম । তবে আপনি চাইলে ভেতরে গিয়েও আমরা বসতে পারি ।
ভদ্রলোক অল্প হেসে মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন, আরে না না, একদম যা ভেবেছেন ঠিক ভেবেছেন । আমার এখানেই বসতে ভাল লাগবে ।
পরক্ষণেই টগর দুটো বেতের চেয়ার, একটার ওপর আরেকটা চাপিয়ে নিয়ে দেখা দিল বাংলোর সদর দরজার সিঁড়ির কাছে । সেগুলো নিয়ে তাড়াতাড়ি করে এসে সে আমার চেয়ারের সামনে দুটো পেতে দিল।
আমি বললাম , চেয়ার দুটো কিছুটা সরিয়ে পাতো, আর ছোট বেতের টেবিলটা এখানে দিয়ে যাও ।
টগর ততক্ষণে আগন্তক দুজনের দিকে পর্যায়ক্রমে একবার করে চোখ ঘুরিয়ে দেখে নিয়েছে। তারপরেই জিভের ডগাটা দাঁতে করে কেটে লজ্জা লজ্জা মুখে ঘাড় হেঁট করে বলল, ওমা ! ডাক্তারবাবু যে !
ডক্টর ইন্দ্রাশিষ গাঙ্গুলী তার নত মুখের দিকে চেয়ে বললেন , তুমি আমাকে চেনো নাকি?
টগর জিভটাকে আরও একটু বাইরে বার করে শব্দ করে কেটে বললো , ওমা ! আপনাকে একিনে তো সবাই চিনে, সব্বাই –
— তাই বুঝি?
— হ্যাঁ ডাক্তারবাবু ।
— তুমি কি আমার চেম্বারে গেছো কোনদিন ? তোমাকে কখনো দেখেছি বলে তো মনে করতে পারছিনা।
— আমি নয়, তবে আমার দাদার ছেলেটা তো এই এত্তটুকুন আয়ুতেই এক্কেবারে মরতে বসেছিল কিনা । এত্ত পইসা দিয়ে ডাক্তার দেখানোর কি সাদ্দ আছে আমাদের, বলুন ডাক্তার বাবু ? আপনিই তো তাকে ওষুধ দিই এক্কেবারে পরাণে বাঁচালেন। দাদার আমার এমন একটা দিনও কাটেনা, যেদিন আপনার নাম না করে । তাদের ওই একটাই ছেলে কিনা? বাকি তো সবই মেয়ে , এই তিন-তিন’টা । তপন গো ডাক্তারবাবু । আমার দাদার ছেলের নাম। মনে আছে আপনার?
তিনি হাসলেন। বললেন, তা কি হয়েছিল তোমার দাদার ছেলের?
— ওই যে, ডাক্তারবাবু, জ্বর হয়েছিল না-। সে কি জ্বর! কি জ্বর। চোখ এই লাল টকটকে। রাতে জ্বর আসে, ছাড়ে, আবার আসে, ছাড়ে আর আসে। সেই ভুতে পাওয়া জ্বর তো আপনিই ছাড়ালেন কিনা?
টগর আরো নানাভাবে ডাক্তারবাবুর সুখ্যাতি করে যেতে লাগলো। হাসি পেল আমার। ওর ডাক্তারবাবু সম্পর্কে আমাকে বলা কথাগুলো মনে পড়ে গেলো । আমি সেই অবসরে ডাক্তার ইন্দ্রাশিষ গাঙ্গুলীর প্রতি একবার ভালো করে চোখও বুলিয়ে নিলাম । ভদ্রলোকের সেভাবে বিশেষ কোনো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নেই । সাদামাটা বাঙালি কাঠামো । না রোগা, না মোটা । তবে ভুঁড়ি নামক বাঙালি-সুলভ বৈশিষ্ট্যটি গরহাজির । গায়ের রং মাজা মাজা । ঠিক যেমনটা উপমার । মাথার চুল সামনের দিকে বেশ পাতলা হয়ে এসেছে, ফাঁক ফাঁক । অর্থাৎ এখন টাক না থাকলেও, অদূর ভবিষ্যতে সেটা দৃশ্যমান হওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা । উচ্চতা গড়পড়তা বাঙালি পুরুষের মতোই । না দীর্ঘ না খর্ব , পাঁচ ছয়-সাত হবে । মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি । চোখ মুখ বেশ কাটা কাটা । নাকটা টিকালো । পরনে একটা ক্যাসুয়াল সাদা আর হলুদ চেক কাটা শার্ট , তার সাথে নীলরঙা একটা ক্যাসুয়াল ট্রাউজার ।
টগর একনাগাড়ে কি সব বকেই যাচ্ছিল । মুখ একবার খুললে ও মোটে বন্ধ করতেই চায় না ।
আমি ওকে আস্তে করে বললাম, টগর এখন যাও এখান থেকে । টেবিলটা এখানে দিয়ে যাও। চায়ের ব্যবস্থা করো গিয়ে।
বলে ইন্দ্রাশিষ বাবুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার কি র’চা চলে, নাকি দুধ চা?
— দুটোই চলে , যেটা খুশি । তবে এত তাড়াতাড়ি করার তো-
— আরে না না, হাতে একটা চা বা কফির কাপ না থাকলে কি কথাবার্তা জমে, বলুন ?
বলে হাসলাম।
উনিও হাসলেন । বললেন, তা ঠিক অবশ্য ।
আমি টগরকে বললাম, দুধ চা’ই করে আনো ।
উপমা ততক্ষণে লনের ওইপাশের ধারে গিয়ে বেড়াগাছগুলোর ওপরে ঝুঁকে কি যেন দেখছে । আমি তার দিকে তাকিয়ে ডাক্তারবাবুর উদ্দেশ্যে বললাম , কিন্তু আমাদের উপমা নিশ্চয়ই চা খায় না?
— না না, শুধু চা কেন? বাচ্চা মানুষ, চায়ের প্রমোশন এখনই পাবে কি করে ? তবে দুধও খেতে চায় না । ইভেন কোন হেলথ ড্রিংকসও না। মুশকিল।
আমি প্রত্যুত্তরে অল্প হেসে হাত বাড়িয়ে বললাম, আসুন, বসুন । তবে, উপমার জন্য কি করা যায় আমি দেখছি ।
টগরকে বললাম, আপাতত দু’কাপ চা করে আন।
টগর চলে গেল ।
উনি চেয়ারে বসে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনি দাঁড়িয়ে রইলেন যে । বসুন ।
আমি বসলাম।
উনি বললেন, একচুয়ালি আমার আগেই আসা উচিত ছিল। কিন্তু, আসা হয়নি।
বলে উনি পায়ের স্যান্ডেলটা খুলে পাশে রেখে ঘাসের লনে মা পা রেখে ডান পা ক্রস করে বাঁ পায়ের হাঁটুর ওপর তুলে বললেন, এমন সুন্দর লন ছেড়ে কেউ ঘরের ভেতরে গিয়ে বসে?
আমি অল্প হেসে বললাম , আপনার বুঝি প্রকৃতি দেখার বা ফিল করার সময় আছে ?
চোখ কুঁচকে উনি জিজ্ঞাসু ভঙ্গিতে তাকালেন আমার দিকে ।
আমি বললাম , আসলে টগরের কাছে আপনার ব্যাপারে অনেক কিছু শুনেছি । উপমা যে আপনারই মেয়ে , সে তো আমায় টগরই বলেছে । ওর কথা শুনে মনে হল আপনি ভীষণ রকম ব্যস্ত । কাজের মানুষ । তাই বলছিলাম, এই সমস্ত প্রকৃতি দেখার সময় কি আপনার হয় ?
— সেটা ঠিক । সময় হয় না । বা আরো ভালো করে বলতে গেলে, আমি সময় বার করার চেষ্টা করি না । তবে সময় পেলে যে দেখবো না বা ফিল করবো না , তেমনটা নয় ।
বলে হাসলেন।
আমিও অল্প হেসে বললাম, দেখুন ভুলটা আমারই হয়েছে। আমি তার জন্য ক্ষমাও চাইতে যাবো ভেবেছিলাম আপনাদের বাড়িতে। একচুয়ালি , এই উইক এ কাজের চাপে আমার একদম যাওয়া হয়নি । তবে উপমাকে সেদিন ওইভাবে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে আসাটা আমার একদম উচিত হয়নি।

আমার কথা শুনে তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। বললেন, আমি সেদিন ফিরে এসে সবটাই শুনলাম মায়ের কাছে । সেদিন আপনি যদি পাতা’কে ঘরের সামনে নামিয়ে দিয়ে না যেতেন , ইনসিডেন্ট যা ঘটেছিল, ঘটনাটা সত্যিই চিন্তার। আপনি সেদিন লাকিলি ফিরছিলেন ওই রাস্তা দিয়ে। সে কারণেই আপনার সঙ্গে পাতার দেখা । তবে দেখা না হলে যে কি হত ! একচুয়ালি আমার মা বাতের ব্যথায় একেবারেই সেভাবে হাঁটাচলা করতে পারেন না । মেয়েটা যে কোথায় কোথায় খেলে বেড়ায় –
আমি বললাম, বাঃ, উপমার ডাকনামটা তো ভারি মিষ্টি- পাতা । বেশ একটা নেচার-নেচার গন্ধ আছে ।
— হ্যাঁ , আমি ওকে ওই নামেই ডাকি । মা বলে তুয়া ।
আমি উপমাকে ডাকলাম , উপমা ! একবার এদিকে এসো তো । দেখি তোমার পা’টা কেমন আছে ।
উপমা ছুটে এসে আমার কোলের কাছে দাঁড়ালো । ও পা থেকে চটি খুলে ফেলেছে । নরম ঘাসের ওপর ছুটতে ওর অসুবিধা হচ্ছে না, যা বুঝলাম । আমার কাছে এসে বাঁ পা’টা ডান হাতে করে তুলে দেখালো । দেখলাম , শুকিয়ে এসেছে বটে, তবে একেবারে সারেনি ।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, পায়ের তলায় কিভাবে কাঁটা ফুটল উপমা ? তুমি কি খেলার সময় চটি খুলে ফেলেছিলে?
রিনরিনে গলায় সে বলল, ছুটছিলাম যে । পা থেকে কখন খুলে গেছিল । তারপরেই , দেখতে পাইনি , কাঁটা ফুটে গেছে ।
— তুমি বাড়ি থেকে অতদূরে খেলতে কেন গেছিলে ?
— আমার তো কোনো বন্ধু নেই –
একেবারে আমার গা ঘেঁষে , প্রায় আমার চেয়ারের সঙ্গে মিশে গিয়ে দাঁড়িয়ে মুখ নামিয়ে বলল , বন্ধু থাকলে বাড়িতেই খেলতাম। আমি তো গাছগুলোর সঙ্গে খেলি ।

হেসে ফেললাম ।
— গাছগুলোর সঙ্গে খেলো কিরকম ? ওরা তোমার সঙ্গে খেলতে পারে ?
— হ্যাঁ পারে তো । ওরা তো সবাই আমায় স্টুডেন্ট। আমি ওদের পড়াই।
আমার চোখের দিকে তাকিয়ে মুখ তুলে বললো সে ।
— বাব্বাহ্! এই এত্ব স্টুডেন্ট তোমার !
আমি উপমাকে দুহাতে করে জড়িয়ে নিলাম । বললাম , স্টুডেন্টরা পড়াশোনা করে কিনা বোঝো কি করে ?
— বাহ্, আমি ওদের পড়া ধরি, না ?
— পড়া পারে ওরা?
— না পারলে আমি ওদের বকে দিই । হাতে লাঠি থাকে-
–ওমা! মারো নাকি ?
বিজ্ঞের মতো সে বললো, কাউকে কাউকে মারতে হয় ।

আমি কিছুক্ষণ স্মিতমুখে তাকিয়ে দেখলাম উপমার মুখের দিকে । মেয়েটা বন্ধুর অভাবে নিজের মতো করে অদ্ভুত অদ্ভুত সমস্ত খেলা উদ্ভাবন করেছে । কল্পনাপ্রবণ । শিশু-কিশোর মন তো কল্পনাপ্রবণই হয়।
জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি স্কুলে যাওনা?
— যাই তো । বাবা যে আমাকে প্রতিদিন সকালে স্কুলে পৌঁছে দেয়।
— কোন ক্লাসে পড়ো তুমি ?
— ক্লাস ফাইভ । এবার আমি ক্লাস ফাইভে উঠে গেছি ।
— বাঃ, তুমি প্রতিদিন স্কুলে পড়া পারো ?
— হ্যাঁ পারি তো ।
আমার দিকে বড় বড় দুটো চোখ মেলে সে বলল , আমি তো স্কুলে ফার্স্ট হই।
— বাব্বা, ফার্স্ট হও! ইউ আর এ গুড গার্ল । কার কাছে পড়াশোনা করো তুমি ?
— ঠাম্মার কাছে ।
মেয়েটির বাবা বললেন, হ্যাঁ ওর পড়াশোনার খুব ঝোঁক । তবে মা আর পড়াতে পারবে বলে মনে হয় না । ক্লাস ফাইভ হয়ে গেল তো ।
আমি তাঁর দিকে তাকে বললাম , আপনার বোধ হয় মেয়েকে পড়ানোর সময় হয় না একেবারেই?
ভদ্রলোক কিভাবে আমার কথাটা নিলেন জানিনা, মনে হলো, উনি ভাবলেন , আমি ওনাকে কোন অনুযোগ করছি ।
উনি কৈফিয়ৎ দেওয়ার ভঙ্গিতে বললেন, হ্যাঁ পাতাকে একেবারেই দেখা হয় না ঠিক । কিছু একটা অল্টারনেটিভ ভাবতে হবে ।
আমি উপমাকে বললাম, আচ্ছা স্কুলের কথা পরে হবে । তুমি এখন বলোতো কি খাবে ?
বলতে বলতেই টগর চায়ের ট্রে হাতে দেখা দিল ।
উপমার চটপট জবাব, আমি মোমো খাই । আমার মোমো খেতে খুব ভালো লাগে ।
— তাই নাকি ?
টগর চায়ের ট্রে-টা সিঁড়ির ধারের সিমেন্টের কার্নিশে নামিয়ে রেখে ভেতর থেকে একটা বেতের ছোট টেবিল নিয়ে এসে আমাদের চেয়ারগুলোর মাঝখানে রাখল । তারপরে চায়ের ট্রে নিয়ে এসে টেবিলের ওপরে চায়ের কাপ দুটো নামিয়ে রাখল ।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, টগর তুমি মোমো বানাতে পারো নাকি ?
— করতে পারি মেম , কিন্তু মোমো করার বাসন-কোসন নেই কিনা ?
আমি উপমাকে বললাম, উপমা মোমো তো হবেনা মনে হচ্ছে । তুমি আর কি খাও বলো । চাউমিন খাও তুমি ?
ঘাড় কাত করে সে বলল , হ্যাঁ।
আমি ইন্দ্রাশিষ বাবুর দিকে তাকিয়ে বললাম, কি মেয়ের সঙ্গে একটু চাউমিন খেতে অসুবিধা নেই তো ?
তিনি বললেন, ছেলেমানুষের সঙ্গে আবার আমাকে টানা কেন ? এই চা’ই ঠিক আছে।
অল্প হেসে বললাম , শুধু উপমা নয় । উপমার মাসীমণিও ছেলেমানুষ । সে’ও খাবে যে ।
উনিও হেসে উত্তর দিলেন, তাহলে উপমা আর তার মাসীমণিই খান । আমার এই বেশ ।
বলে চায়ের কাপটা তুলে দেখালেন ।
— বা রে! তা বললে কি হয় ? আমি যে শিং ভেঙ্গে বাছুরের দলে ঢুকছি । আর আপনি অমনি গোটাগুটি শিং নিয়ে বসে থাকবেন, তা কি হয় ? আপনাকেও নাম লেখাতে হবে আমাদের দলে।
হাসি হাসি মুখে মাথার মধ্যে দিয়ে একবার আঙুল চালনা করে তিনি বললেন , বেশ, তাই হোক তবে ।
আমি টগরকে বললাম, বেশি করে চাউমিন বানাবে। তুমি আর যদুও নেবে । ঠিক আছে?
— আচ্ছা মেম ।
ঘাড় কাত করে টগর চলে গেল ।
উপমাকে সেই যে জড়িয়ে ধরেছিলাম , এখনো দুহাতে করে ধরেই রয়েছি । সেও আমার বুকের কাছটাতে মাথা ঘেঁষে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
হাত ছেড়ে দিয়ে বললাম, যাও উপমা, খেলা করবে তো করো গিয়ে।
উপমা এক অদ্ভুত প্রশ্ন করল। অদ্ভুত নয় হয়তো, খুবই সাধারণ । আমার সঙ্গে শিশুমনের খুব বেশি পরিচয় নেই বলে অদ্ভুত শোনালো ।
ও বললো, তুমি খেলবে আমার সঙ্গে ?
আমি তার উজ্জ্বল আশা ভরা চোখের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলাম , আজ নয় উপমা । আজকে তুমি একা একাই খেলো। আমি তোমার বাবার সঙ্গে একটু কথা বলে নিই । পরের দিন যখন আসবে, আমি খেলবো তোমার সঙ্গে ।
— আচ্ছা ।
ঘাড় নেড়ে ছুটে চলে গেল সে ।
ইন্দ্রাশিষ বাবু বললেন, আমার মেয়ের ভারি পছন্দ হয়েছে আপনাকে। সেদিন আপনার সঙ্গে বাড়ি ফেরার পর থেকে ও যে কতবার আমাকে, আর ওর ঠাকুমাকে আপনার কথা বলেছে, তার ঠিক ঠিকানা নেই ।
আমি বললাম, আচ্ছা ও তো আমাকে চেনে না। সেদিনই প্রথম দেখলো । ও বলতে পারল , মানে আমি কে সেটা জানলেন কেমন করে? সেটাই আর কি-
তিনি অল্প ঠোঁট টেনে হেসে বললেন, না না, সে তো কিছু বলতে পারেনি। শুধু বলল, আপনি ওকে গাড়িতে করে ড্রাইভ করে পৌঁছে দিয়ে গেছেন। তা , এই তল্লাটে আর কেই বা গাড়ি চালাবে? নতুন কেউ এলেই আমরা সঙ্গে সঙ্গেই খবর পাই । চা বাগানে নতুন জয়েন করা ম্যানেজার ম্যাডাম, তিনি যে গাড়ি চালান সেটাও কারোর জানতে বাকি নেই। তাই ও বলার সঙ্গে সঙ্গেই বুঝতে পেরেছিলাম ।
কেমন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হল । মনটা একটা আমেজে ভরে উঠলো । আমার সাথে পরিচিত হওয়ার আগেই, শুধু একজন মহিলা ম্যানেজার জয়েন করেছেন, তিনি ড্রাইভ করতে জানেন, এই খবর এখানে ছড়িয়ে পড়েছে । অনেকেই এ খবর জানেন, যারা আমাকে আদৌ দেখেননি । আমিও যে স্পেশাল, আমিও যে খবর হতে পারি, লোকে যে আমার ব্যাপারেও আলোচনা করতে পারে, এই অনুভূতি জীবনে প্রথমবার হল ।
— আচ্ছা আচ্ছা-
একটু থেমে বললাম, একচুয়ালি শুধু উপমা’র নয়, আমারও উপমাকে খুব ভালো লেগেছে । আমিও সেদিনের ঘটনার পর থেকে সময়ে-অসময়ে আপনার মেয়ের কথা বহুবার ভেবেছি । যাব যাব করেও যাওয়া হয়নি আর কি । খুব ভালো লাগলো আপনারা এলেন যে ।
— দেখুন, আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানাতে এসেছি বটে । কিন্তু, সেটা জানাতেও আমার খুব সংকোচ হচ্ছে ।

বলে ভদ্রলোক মাথা নিচু করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, বাবা হিসেবে কোনো দায়িত্বই যে ওর প্রতি আমি নিতে পারি না , সেটা জানি আমি ।
ওনার দিকে তাকিয়ে সরাসরি বললাম , জানেন যখন , তখন দায়িত্ব নেন না কেন? একচুয়ালি ওকে ঐভাবে অন্ধকার চা বাগানের মধ্যে সন্ধ্যেবেলায় দেখে আমার খুবই খারাপ লেগেছিল। কত ধরনের বিপদ হতে পারে । তার ওপর মেয়ে , না ? ছেলে হলেও বা কথা ছিল। আমাদের দেশ, তার মানুষজন , কি আর বলব বলুন?
— একচুয়ালি ওই ঘটনাটা আমারও চোখ খুলে দিয়েছে। মেয়েটাকে এইভাবে ঠিক যেন গার্জেন-লেস্ হিসেবে ছেড়ে দেওয়া খুবই অন্যায় ।
— এগজ্যাক্টলি সো। দেখুন আমি আনম্যারেড । কোনো সন্তান নেই । হয়তো আমার কথাটা বলা ঠিক হচ্ছে না । কিন্তু , আমার মনে হয়, সন্তানকে পৃথিবীতে আনলে , তাদের প্রতি মিনিমাম কিছু কর্তব্য আমাদের থেকেই যায় । তাই না ?
ভদ্রলোক লজ্জিত ভাবে মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ বসে রইলেন। আমি ওনাকে বেশ কিছুক্ষণ ধরে লক্ষ্য করে যেটুকু বুঝেছিলাম, চেহারার মধ্যে একটা খুব সাদামাটা ভাব থাকলেও ওনার চেহারাকে ছাপিয়ে যেটা প্রকট হয়েছে সেটা ওনার ব্যক্তিত্ব । অদ্ভুত একটা ব্যক্তিত্ব ওনার । সমস্ত সত্তাটাকে যেনো বাকি পাঁচটা মানুষের থেকে ঘিরে রেখেছে । চাইলেও সেই শান্ত ব্যক্তিত্বটুকুকে অতিক্রম করে ওনার মনের কাছাকাছি পৌঁছানো যেকোনো মানুষের পক্ষে দুষ্কর। জানিনা কি করে এখানকার মানুষজন ওনাকে ‘পাগল ডাক্তার’ বলে। হয়তো, ওনার ওই অত সংখ্যায় রোগী দেখার পাগলামির কারণে । ওনার ভয়েস-টাও খুব সুন্দর । একেবারে ভরাট । আমি নিশ্চিত , উনি আবৃত্তি করলে খুব সুন্দর আবৃত্তি করতেন । জানিনা অবশ্য সে নেশা ওনার আছে কিনা । তবে এই মানুষটার সম্পর্কে যতটুকু আমি শুনেছি , মানুষের রোগ বালাই সারিয়ে তোলার অদ্ভুত নেশা রয়েছে । প্রায় বিনামূল্যে শ’য়ে শ’য়ে হাজারে হাজারে রোগগ্রস্ত মানুষকে দেখতে ওনার ভালোলাগে । কি জানি, আমার তো বাবার এই কয়েক মাসের অসুস্থতাই কেমন যেন দমবন্ধ অবস্থা করে দিয়েছে । নিজে ঘুরে ঘুরে যে রোগী দেখে বেড়ান, তার ছাপ ওনার চেহারাতেও রয়েছে । আমি লক্ষ্য করে দেখছিলাম , ওনার পায়ের পাতার উপরে যে অংশটা জুতোয় ঢাকা থাকে, সেই অংশটা যথেষ্ট ফর্সা । যে অংশটা এক্সপোজড থাকে সেটা তামাটে রং হয়ে গেছে । অর্থাৎ , ট্যান পড়েছে শরীরে । সারাদিন ধরে ঘুরে বেড়ালে এমনটাই হওয়ার কথা ।

ধীরে ধীরে দিনের আলো কমতে লাগলো । টুকটাক বিভিন্ন কথাবার্তার মধ্যে দিয়ে সময় গড়াতে গড়াতে আকাশে সন্ধ্যারাগ ছড়িয়ে পড়ল। টগর এসে তিন প্লেট চাউমিন দিয়ে গেল । আমি উপমাকে ডেকে একটা প্লেট তার হাতে ধরিয়ে, খালি চেয়ারটা আমার পাশে টেনে নিয়ে তাকে বসতে বললাম । সে বসে পা দোলাতে দোলাতে চাউমিন খেতে লাগলো । এই নতুন পরিবারটির সঙ্গে আলাপ হয়ে মনটা বেশ ভালো লাগছে । নতুন কারো সঙ্গে আলাপ হলে ভালোলাগে । তবে , এই ভালোলাগাটা যেন একটু অন্যরকম । কিভাবে ‘অন্যরকম’ , ঠিক জানি না আমি । তবে অন্যরকম । ছন্নছাড়া ভাবে ইতস্তত খেলে বেড়ানো মেয়েটার আমার গা ঘেঁষে এসে দাঁড়ানো , একজন রোগী দেখার নামে পাগলপারা ডাক্তার কোনো দিকে যার কোনো খেয়াল নেই, নিজের সংসারের প্রতি খেয়াল না থাকলেও শয়ে শয়ে অনাত্মীয় মানুষজনের কি অপরিসীম সেবা করে চলেছেন -! এদের এই আপাত ছন্নছাড়া জীবন যাত্রার সঙ্গে আমার এই আপাত গোছানো অথচ কোথাও যেন প্রবলভাবে অগোছালো জীবনের কোনো সূক্ষ্ম মিল রয়েছে । মেয়েটির কমলা রঙের জামার ওপর সন্ধ্যারাগ ছড়িয়ে পড়ে তার মুখখানাকেও যেন জামার কিছুটা রং ধার নিয়ে রাঙিয়ে দিল ।
ইন্দ্রাশিষ বাবু চাউমিনের প্লেট শেষ করে টেবিলের ওপরে রেখে বললেন , পাতা আপনার কাছে এসে ভারী আনন্দ পেয়েছে । আমি ওর মুখ দেখেই বুঝতে পারছি ।
আমি হঠাৎই ফস করে বলে ফেললাম , এমন আনন্দ আপনি ওকে বারবার দিতে পারেন ।
উনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে অল্প হাসলেন। বললেন, হ্যাঁ মাঝে মাঝে আপনার কাছে অবশ্যই নিয়ে আসা যায় । এটুকু তো করতেই পারি ।
দিনের আলো মিলিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে উপমাও তার বাবার হাত ধরে আমার চোখের সামনে থেকে মিলিয়ে গেল । যাওয়ার আগে সে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল , তুমি আমাদের বাড়ি যাবে তো ?
— হ্যাঁ , যাবো তো ।
— ঠিক যাবে?
— হ্যাঁ , ঠিক যাব ।
এরপরে সে যখন তার বাবার স্টার্ট দেওয়া স্কুটারটায় চেপে বসে বাবাকে একহাতে খামচে ধরে , আর একহাত নেড়েছিল আমার উদ্দেশ্যে , তখন আমি হঠাৎই ডাক্তারবাবুর উদ্দেশ্যে বলে ফেলেছিলাম ,
— উপমার তো মর্নিং স্কুল । তারপরে তো ঘরেই থাকে –
— ঘরে মানে ওই আর কি। আপনি তো দেখেছেন কেমন ঘরে থাকে ।
— আমার বাংলোর সামনের লনটায় ও তো বেশ ভালই খেলছিল । আমার যে কাজের মেয়েটি টগর, ওর যে কোনো ব্যাপারে খুব দায়িত্বজ্ঞান রয়েছে । আপনি যদি অনুমতি দেন, আমি তাহলে মাঝে মাঝে আপনার বাড়িতে গাড়ি পাঠিয়ে দিতে পারি । দুপুর-বিকেল করে চলে এল আমার বাংলোয় । তারপরে তো আমি বিকেলবেলা কাজ শেষ করে চলেই আসি । তখন ওর সঙ্গে গল্প করতে পারবো । আবার সন্ধ্যে হলে পৌঁছে দিয়ে আসবো আপনার বাড়িতে ।
উনি সৌজন্যমূলক হেসে বললেন, প্রস্তাব তো খুবই লোভনীয় । পাতা যদি আসতে চায়, আমি অবশ্যই পাঠিয়ে দেবো ।
আমি এগিয়ে গিয়ে উপমার মাথায় গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম, আবার এসো , ঠিক আছে ?
একগাল হাসল মেয়েটা, ঝুঁটি দুলিয়ে দুলিয়ে। মনটা ভরে গেল।

ক্রমশ..