হিমির নাকফুল পর্ব-০৩

0
1847

#হিমির_নাকফুল(৩য় পর্ব)
লেখাঃ Md. Nazmul Huda

যে ছেলেটিকে খুনের দায়ে আপনার বোন জেলখানায় বন্দি আছে আমিও একসময় সেই ছেলেটির গার্লফ্রেন্ড ছিলাম। আসলে অনিক আমার সাথে রিলেশন করার পরে আমাকেও ফাঁসিয়ে দিয়েছিল। এবং আমার কাছ থেকেও অনিক পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়েছিল। অনিক আমাকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার পর এবং আমার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার পরে আমি অনিকের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে থাকি এবং খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারি এটাই অনিকের ব্যবসা। অনিক বিভিন্ন মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করে এ ভাবে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিতো।

অনিক যখন খুন হয় তখন আমি আসলে অনিক এর ব্যাপারে জানতাম না। আমি ছিলাম দেশের বাহিরে। আমি আমার বাবার সাথে দেশের বাইরে বেড়াতে গিয়েছিলাম। তাই আমি অনিকের খুনের ব্যাপারে কিছুই জানতে পারিনি। যখন আমি দেশে ফিরি এবং জানতে পারি অনিক খুন হয়েছে তখন আমি জানি যে আরও এক মাস আগে অনিক খুন হয়ে গেছে। এবং আমি এটাও জানতে পারি যে অনিককে খুনের দায়ে একটি মেয়ে জেলখানায় এখন বন্দি। আমি আস্তে আস্তে সব কিছুর খোঁজ নেই এবং খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আপনার বোন হিমি এখন জেলখানায় বন্দি আছে।

আমি আপনার জন্য সাহায্য করতে পারি যাতে আপনি আপনার বোনকে জেলখানা বন্দি থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন তবে একটা শর্ত আছে সে শর্তটি হলো আমি কে এবং আমি আপনাকে যে ডকুমেন্টগুলো দিব সেই ডকুমেন্ট গুলা আপনি কাউকে জানাতে পারবেন না। আপনি জানাবেন যে আপনি কোন না কোনভাবে এই ডকুমেন্টগুলো সংগ্রহ করেছেন এখন আপনি যদি চান যে আপনি আপনার বোনকে বাঁচাবেন তাহলে আপনি আমার সাথে যোগাযোগ করবেন। আমি যথাসম্ভব চেষ্টা করব আপনার বোনকে ফিরিয়ে আনার জন্য।

এই মেসেজগুলো দেখার পরে আমি সেই নাম্বারে ফোন দেই ফোন দেওয়ার কিছুক্ষণ পরে সেই মেয়েটি ফোন রিসিভ করে। রিসিভ করে বলল…

– এতদিন পরে আপনি আপনার মেসেজগুলো চেক করলেন? আমিতো আপনাকে সাহায্য করার জন্য আগেই আপনার অপেক্ষায় ছিলাম। হয়তো আপনি আপনার ফোনের কাছে ছিলে না। আমি আপনার নাম্বারে অনেকবার ফোন দিয়েছি কিন্তু আপনার নাম্বারটা আমি বন্ধ পেয়েছি। যে কারনে আমি আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি।

– আচ্ছা আপনি কে আপনার নামটা একটু বলা যাবে?

– আমি আপাতত আমার পরিচয় আপনাকে দিব না। তবে আপনি যদি চান যে আপনি আমার সাথে দেখা করবেন তাহলে আপনি একটা আমাকে ঠিকানা দেন। আমি আপনার সেই ঠিকানা মত পৌঁছে যাবো

– আপনি যদি আমার নিজ বাড়িতে আসেন তাহলে আমার খুব ভালো হতো। আসলে আপনি বুঝতেই পারছেন যে আমি মানসিকভাবে কতটা ভেঙে পড়েছি আমার বোনের এই খুনের ব্যাপারটা আমার মা জানতে পারার পরে সেও অভিমান করে আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে। এখন আপনি বলুন যে আমি কি করতে পারি

– আচ্ছা আমি আপনার বাসায় আসবো কিন্তু কখন আসব সেই সময়টা আমি আপনাকে জানাতে পারবো না। তবে আমি হুটহাট করে আমি আপনার বাসায় পৌঁছে যাব।

– আপনি আমার একটা কথা শুনুন। আমি দু’একদিনের মধ্যে ভাল একটা উকিলের সাথে যোগাযোগ করব এবং আমি আমার মামাদের সাহায্য নিব তো আপনি যদি এর আগে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন তাহলে আমার পক্ষে আরও অনেক ভালো হতো।

– তাহলে আমি আপনাকে একটা ঠিকানা দিচ্ছি সেই ঠিকানা মত আপনি ঠিক সময় চলে আসবেন।

– জি বলুন আমার কোথায় আসতে হবে?

– আপনার বোন যে ভার্সিটিতে পড়াশোনা করে সেই ভার্সিটির পাশে একটা লেক আছে আপনি সেই লেকে আগামীকাল ঠিক সন্ধে বেলায় চলে আসবেন। আর হ্যাঁ আপনি কিন্তু একাই আসবেন আপনার সাথে কাউকে নিয়ে আসতে পারবেন না। এবং আপনি সেখানে গিয়ে অপেক্ষা করবেন আমি সময় মত আপনার সামনে এসে হাজির হব।

– অসংখ্য ধন্যবাদ। আসলে আপনাকে আমি কি বলব বুঝতে পারতেছি না। আমার বোন যে খুনের দায়ে জেলখানা বন্দী আছে তার জন্য কেউ আমার সাপোর্ট করেনি। আমি আসলে কোন ভাবেই প্রমাণিত করতে পারতেছি না যে আমার বোন এই খুনটা করেনি। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমার বোন এমনটা কখনোই করতে পারবে না। আমি তো তার ভাই আমি তো তাকে বুঝি।

– আমি সবই জানি এবং অনিকের যতগুলো দুর্বল পয়েন্ট ছিল সব কিছুই আমার জানা আছে। তো আপনি চিন্তা করবেন না আপনার বোন এক সময় ঠিকই আপনার কাছে চলে আসবে। এখন রাখছি আপনার সাথে আমি কালকে যা বলার বলব।

মেয়েটির সাথে কথা বলে আমি কিছুটা ভরসা পেয়েছি। হয়তো এনার মাধ্যমে আমি আমার বোনকে এই শাস্তি থেকে বাঁচাতে পারবো।

এ মেয়েটির ব্যাপারে আমি আমার কাকাকে জালাবো কিনা ভাবছি কিন্তু মেয়েটি তো বলেই দিল যে এই ব্যাপারে যেন কাউকে কিছু না জানাই। আমি মেয়েটির সাথে রুমে বসে কথা বলতেছিলাম হয়তো আমার কাকা আমার কথাগুলো শুনতে পারছিলো যার কারণে তিনি আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন…

– হাবিদ কার সাথে কথা বললি? তুই হিমির ব্যাপারে কথা বলছিস আমি কিছুটা শুনলাম।

– আসলে কাকা হিমির একটা বান্ধবী ফোন দিয়েছিল ফোন দিয়ে আমার কাছে জিজ্ঞেস করলো হিমির ব্যাপারে।এছাড়া আর কিছু না।

– আচ্ছা আমি তোকে একটা কথা বলি তুই আবার রাগ করিস না বাবা।

– জি আপনি বলুন আমি রাগ করবো কেন।

– আসলে দেখ আমরা তো এখানে বেশি দিন থাকতে পারব না। আমার বাড়িতেও তো তোর ভাই বোনেরা রয়েছে আমাদেরও তো যেতে হবে। আমি একটা কথা বলি কি তুই ঘরোয়াভাবে একটা মেয়েকে বিয়ে কর। তাহলে আমি আর তোর কাকি মিলে মেয়ে দেখি তারপরে না হয় আমাদের পছন্দ হলে তোকে জানাবো।

– আপনি কি বলতেছেন এসব? আমার বোন একা একা কাটাচ্ছে জেলখানায় বন্দি হয়ে।আর আপনি আমাকে বলতেছেন বিয়ে করতে? আপনাদের চিন্তাধারা তো বাহঃ বেশ ভালোই। আচ্ছা আমার কাছে আপনাদের কারো থাকতে হবেনা আমি তো আছি। আমি আসলে আপনাদের কাছে এমন কথা না আশা করি নি কখনো।আমি বুঝি যে, হ্যাঁ আপনার একটা ফ্যামিলি আছে আপনাদের চলে যেতে হবে এখান থেকে। সারাটা জীবন তো আর থাকতে পারবেন না। কিন্তু তাই বলে যে আমাকে আপনি এভাবে বিয়ে করতে বলবেন?

– আচ্ছা শোন! রাগিস কেন রাগ করিস না।আমি তো তোর ভালোর জন্যই বললাম। দেখ তুই মানসিক ভাবে আরো দুর্বল হয়ে পরতেছিস। তোর তো দেখাশোনা করার জন্য একটা মানুষ দরকার। কেউ তোকে সাহস দেওয়ার জন্য একটা মানুষের প্রয়োজন তাই না? আমরা তো এটা বলতে পারি?

– তার চাইতে আপনি একটা কাজ করুন আমাদের যে জমি গুলো আছে না সেই জমিগুলো পারলে একটু বিক্রি করার ব্যবস্থা করে দিন। তাহলে আমি কিছু টাকা পাবো।আর সেই টাকা দিয়ে আমি উকিল নিয়ে আমার বোনের কেস নিয়ে লড়তে পারবো। আপনি বুঝতে পারছেন ব্যাপারটা? আর আমি তো বলছি যে আমি আমার মামাদের সাথে যোগাযোগ করব তারা যদি আমাকে সাহায্য করে তো করবে। আর যদি না করে তাহলে আমার সেভাবে আগাতে হবে। তারপরেও যদি না পারি তাহলে বাবার এই শেষ সম্বলটুকু মানে আমাদের বসবাসের বাড়িটাও দরকার হলে বিক্রি করে দিব।

আমার কথায় না পেরে আমার কাকা আমার কাছে চলে গেছে চুপচাপ ভাবেই। তিনি আর কিছু আমাকে বলতে পারলেন না তবে আমাদের জমি গুলো বিক্রি করা নিয়ে একটা ঝামেলা হতে পারে। কারণ আমার বাবা কাকাদের সম্পত্তি সবই একসাথে। জানি না তারা আমাকে সাহায্য করবে কিনা।

পরেরদিন বিকেল বেলা আমি সেই মেয়েটির উদ্দেশ্যে হিমির ভার্সিটির পাশের লেকটায় এসে পৌছালাম। পৌঁছে আমি প্রায় এক ঘন্টার মতো অপেক্ষা করলাম কিন্তু সেই মেয়েটির আসার কোনো সাড়াশব্দ নেই। আরো বেশ কয়েক সময় অপেক্ষা করার পরে একটা মেয়ে আমার কাছে আসলো। মেয়েটির মুখ সম্পূর্ণভাবে আটকানো চেনা জানার কোন উপায় নাই। ওই মেয়েটা শুধু আমার কাছে এসে একটা পেনড্রাইভ আমার হাতে দিলো এবং হাতে দিয়ে বললো..

– এই পেনড্রাইভ এর মধ্যে অনিকের অনেক ডকুমেন্ট রয়েছে। যেটা আপনি চালু করলেই বুঝতে পারবেন। তবে হ্যাঁ এই পেনড্রাইভ আপনি একাই দেখবেন সঙ্গে আর কাউকে রাখবেন না। আমি আপনার সাথে যোগাযোগ করব সময় করে আমি আপনাকে ফোন দিবো। কিন্তু আপনি আমাকে ফোন দিলে আমাকে পাবেন না। আপনি চেষ্টা করুন কিভাবে আপনার বোনকে ফিরিয়ে আনার। আমি আপনার জন্য যথেষ্ট পরিমান সাহায্য করবো।

আমি আর সেখানে একটা মুহূর্ত দেরি না করে বাসায় ফিরলাম বাসায় ফিরে এসে দেখি আমার কাকা তার বাসায় যাওয়ার জন্য কাপড়চোপড় গোছাচ্ছে এবং গোছাতে গোছাতে বলল…

– হাবিব আমরা কালকে চলে যাব। তুমি তোমার বোনের জন্য ভালো একটা উকিল দেখো। আর তোমার মামাদের সাথে কথা বলে দেখো কি করে। আর হ্যা তোমার বাবার জমি বিক্রি করতে হবে না তোমার যদি বেশি টাকার প্রয়োজন হয় তুমি আমাকে জানিও আমি তোমাকে টাকা ম্যানেজ করে দেবো। ঠিক আছে চিন্তা করো না।

আর হ্যাঁ একটা কথা তোমার বাবার যে সম্পত্তি সেই সম্পত্তির দিকে……..

[চলবে……..]