হৃদমাঝারে তুমি ছিলে পর্ব-১৩+১৪

0
502

#হৃদমাঝারে_তুমি_ছিলে❤
#পর্ব ১৩+১৪
#কায়ানাত_আফরিন❤

–”আমার প্রতি তোমার দুর্বলতাটির কি নাম তুমি বলতে পারবে?বলতে পারবে বারবার আমায় আড়চোখে দেখার কারন? তোমার বন্ধুদের কথায় বোঝা যায় চরম আত্নমর্যাদাসম্পন্ন মেয়ে তুমি। তবে আমায় দেখলে এসব কাজকর্ম করো কেনো? এর উত্তর জানো? লোকে তো বলে প্রেম নাকি মানুষের স্বাভাবিক বুদ্ধিকে কল্পনাপ্রবণ করে তোলে।তবে কি আমার প্রতি প্রেম অনুভূতি তোমার? কানের কাছে নুপুরের ন্যায় কি বেজে ওঠে যে #হৃদমাঝারে_তুমি_ছিলে?”

বৃষ্টির অবাধ্য ধারায় এক অন্য আয়াতকে দেখতে পেলো মাইশা। এ যেন এক তৃষ্ণার্থ প্রেমিক পুরুষ।এই প্রখর চাহিনী এড়ানো সম্ভব নয় মাইশার পক্ষে।চুপটি করে তাই আয়াতের বুকে মিশে ঠায় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। পঞ্চগড়ের সেই রাতের মত অনুভব করতে থাকলো আয়াতের দেহের নেশাজড়ানো ঘ্রাণ।
.
.
.
এভাবে কতক্ষণ পার হয়ে গিয়েছিলে তা জানেনা দুজনে। দুজনের প্রাণপাখিই অনুভব করছে একে অপরের নীরব বাকশূণ্য ছোয়া। তবে এতক্ষণ ঘোরে থাকা মাইশার স্নায়ু হুট করে যেন সক্রিয় হতে শুরু করলো। মাইশা বুঝতে পারছে এভাবে আয়াতের বুকে মিশে থাকাটা অন্যায় ; ঘোরতর অন্যায়। এভাবে একজন পরপুরুষের সান্নিধ্যে থাকাটা ওর পরিবার শিক্ষা দেয়নি। আর না কখনোও এই আরহাম আয়াতের সাথে ওর সম্পর্কের কোনো সমাপ্তি থাকবে।আয়াতের বুকে জোরালো এক ধাক্কা দিয়ে মাইশা সরে এলো ওর থেকে। ঘটনাচক্রে দু কদম পিছিয়ে গেলো আয়াত। চোখের চাউনি আগের মতোই দৃঢ় মাইশার মুখমন্ডলে আবদ্ধ। তবে মাইশার শরীর কাপছে এক অজানা উত্তেজনায়, আতঙ্কে। আশপাশে মাথা ঘুরিয়ে পরখ করে নিলো যে কেউ ওদের দেখেছে কি-না। তবে ভাগ্যের সঙ্গক্রমে এই বৃষ্টিস্নাত পথে কোনো মানবকে দেখা গেলো না।

মাইশা নিজের কাঁপাকাঁপা ঠোঁট নাড়িয়ে আয়াতকে বললো,

–”আমি……………..আমি গেলাম !”

এখানে আর একমুহূর্ত অপেক্ষা করলো না মাইশা। দ্রুত হেটে বলতে গেলে একপ্রকার দৌড়েই বাড়ির দিকে রওনা হলো।
.
.
.
——————————————————-

বৃষ্টির গতি কমেছে মৃদুভাবে। জানালা দিয়ে এখনও বাতাসের দাপটে বৃষ্টির বিন্দু বিন্দু কণা ঘরের ভেতরে ঢোকে টেবিলে থাকা বইগুলোকে আংশিক ভিজিয়ে দিতে মগ্ন। মাথার ওপরের স্থির ফ্যানটির দিকে একমনে তাকিয়ে আছে মাইশা। গোসলের জন্য চুলের পানি দিয়ে ভিজে যাচ্ছে সবুজ কভারে আবৃত কোমল বালিশ।মনে পড়ছে আয়াতের সেই আবেগমিশ্রিত কথা। আচ্ছা , আয়াত কি মজা করছিলো নাকি কোনো দেওভূত ধরেছিলো? নাহলে যেই মেয়ের সাথে পরিচয়টি হয়েছিলো এক তুমুল ঝগড়া দিয়ে সেই মেয়ের অনুভূতি নিয়ে ছেলেটা এত গভীরভাবে ভাবছে কেনো?

এমনিতেও কিছুক্ষণ আগে আম্মুর কড়া ধমক খেয়েছে বৃষ্টিতে এভাবে ভিজে আসার কারনে। তাই রুম থেকেও বের হওয়া যাচ্ছেনা আয়াতের ঘোরলাগা কথোপকথন ভোলার জন্য। হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজে ধ্যান ভাঙলো ওর।

নুহাশ ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। মাইশা উঠে বসে একটা মলিন হাসির সহিত বললো,

–”ভাইয়া…………..আসো।”

নুহাশ সরাসরি অফিস থেকে জামাকাপড় না পাল্টেই মাইশার ঘরে এসেছে। তাই চেহারা খানিকটা দুর্বল। এই দুর্বল মুখশ্রীতেও একপ্রকার স্নিগ্ধতা আছে। গলার টাইটি হালকা ঢিল দিয়ে ঘরে প্রবেশ করতে করতে বললো,

–”কিরে মাইশা? আম্মু বললো তুই নাকি বৃষ্টিতে ভিজে এসেছিস? কেনো বলতো? এমনিতেও দুদিন ঠান্ডা পানি খেলে তোর মাথা ধরে যায়। তবে এই অবেলায় বৃষ্টিতে ভিজতে গেলি কেনো?”

–”আসলে ভাইয়া………….রাস্তায় রিক্সা না পাওয়ার জন্য…….

–[মাইশাকে থামিয়ে] না পাওয়ার জন্য মানে? তুই কি অতদূর থেকে হেঁটে হেঁটে এসেছিস?”

–”তা কেনো আসবো। আমি তো বাইকে…………….

এতটুকু বলেই মুখে হাত দিলো মাইশা। সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে । মুখ ফসকে কেনো যে বাইকের কথাটা বের করলো? নুহাশের ভ্রু কুচকে এলো মাইশার কথা শুনে। অবাকস্বরে বললো,

–”বাইকে মানে? তুই বাইকে এসেছিস? কার সাথে?”

এবার কি বলবে মাইশা? এমনিতেও ভার্সিটিতে এত ছেলেবন্ধু আছে বিধায় আম্মুর কটুক্তির কোনো শেষ নেই। আর এবার আয়াতের নাম বললে পঞ্চগড়ের সেই দেখা থেকে শুরু করে সব বলতে হবে যা মাইশা মোটেও কাউকে বলতে চাচ্ছে না। ইনিয়ে বিনিয়ে তাই বললো.

–”আনানের সাথে…………”

চোখে রাগী ভাব ফুটে ওঠলো নুহাশের। ঠোঁট দুটো চেপে মাইশার কথায় বিরক্তির ভঙ্গি প্রকাশ করেছে। বিক্ষোভ সুরে বললো,

–”ওই আনান শয়তানটার সাথে এসেছিস ! বাপ রে বাপ ! জীবনে অনেক ছেলে দেখেছি কিন্ত ওর মতো গবেট শয়তান জীবনেও দেখিনি। কেমন বন্ধু তোর? বৃষ্টি পড়ছিলো এক জায়গায় বাইক থামিয়ে ক্যাফেতে বা দোকানে তোর সাথে ঢুকে গেলেই পারতো। কিন্ত ওই মহাশয়ের পুচকে মাথায় তো এই বুদধি কখনোই ঢুকবে না। সাথে তোর মাথাটাও খেয়েছে।”

কাচুমাচু করে মাইশা বসে থাকলো মাইশা। নুহাশ এদিকে রাগে ফোস ফোস করছে। তা কেনই বা করবে না? আনান যে পুরাই একটা খাপছাড়া স্বভাবের, এটা সবাই জানে। এর আগে আনান অর্পিকে দিয়ে নুহাশকে প্রোপোজ করিয়েছিলো বিধায় অর্পি আর আনানকে কি ঠাসিয়েই না চড় মারলো নুহাশ। এরপর থেকেই সবাই নুহাশের সামনে ভয়ে দাঁড়াতেই চায় না। নীরবতা কাটিয়ে নুহাশ বললো,

–”ওই হারামখোরটারে কল দে।”

শুকনো ঢোক গিললো মাইশা। ভয়ার্ত কন্ঠে বললো, ”কেনো?”

–”আমি কল দিতে বলেছি না……….কল দে।”

নুহাশের কথায় স্পষ্ট তেজের আভাস। মাইশার মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে। যদি ভাইয়া আনানকে বাইকের কথা বললে আনান না করে তবে তো……………আর ভাবতে পারলো না মাইশা। মনে মনে আয়াতুল কুরসি পড়তে পড়তে আনানকে কল দিলো। নুহাশ বললো,

–”স্পিকার অন কর।”

–”ক-করছি………..”

দু’তিনবার রিং হওয়ার পর কল রিসিভ করলো আনান। ঘুমুঘুমু কন্ঠে বলে ফেললো,

–”এই অসময়ে কল দিলি ক্যান মাইশা? কি সুন্দর স্বপ্ন দেখতাছিলাম। বউ বৃষ্টি বাদলা দিনে আমারে খিচুড়ি খাওয়ায়………………”

–”নুহাশ বলছি।”
হুড়মুড়িয়ে খাট থেকে উঠে বসলো আনান। ভুল শুনলো না তো? হতভম্ব গলায় বললো.

–”ক-ক-কে?”

–”নুহাশ !”

আনানের গায়ে রীতিমতো হিম ধরে গিয়েছে। এমনিতেও নুহাশকে আনান যমের মতো ভয় পায়। আবার মাইশার কলে নুহাশের কন্ঠ পেয়ে আরও যেন মুখ কালো হয়ে গিয়েছে। আনান বলে উঠলো,

–”আসসালামু আলাইকুম ভাই? কোনো দরকারে কল দিয়েছেন? আপনার সিম থেকে আমার নাম্বারে মিসকল দিলেই তো পারতেন। আমি ছুটে চলে আসতাম।”

–”তোমারে দিয়ে কাজ যেদিন করাবো সেদিন বুঝে নিবা যে এই দুনিয়ায় সব ভালো কাজের মানুষ মরে গিয়েছে। এবার আসল কথায় আসি। কবে ঠিক হবে তুমি?”

আনান অপরপাশে বোকার মতো হেসে পড়লো,

–”আমি ঠিক হবো কবে মানে? আমি তো সবসময় ঠিক আছি। বলতে গেলে পয়দা থেকেই ঠিক । তাইতো আন্টিরা আমায়…………”

আনানের প্যাচাল শুনে বিরক্ত হয়ে গেলো নুহাশ।আনানকে থামিয়ে বললো,

–”আমার চড় খাওয়ার ইচ্ছে জেগেছে?”

–”না তো? তা জাগবে কেনো?”
মলিন সুরে গালে হাত দিয়ে আনান কথাটি বললো। নুহাশ এবার বললো,

–”তাহলে আল্লাহর ওয়াস্তে থামো আর আমারে কথা বলতে দাও।”

–”জ্বি ঠিকাছে।”

–” (নিঃশ্বাস ফেলে) মাইশাকে এভাবে কাকভেজা করে বাসায় এনেছো কেনো?”

মাইশার বুক এবার দুরুদুরু করতে থাকলো। না জানি আনান কি উত্তর দিবে। এদিকে আনানও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে। যেন নুহাশের কথার আগামাথা কিছুই বুঝেনি। আনান একটা বোকাসুলভ হাসি দিয়ে বললো,

–”বুঝলাম না নুহাশ ভাই? আপনার আদরের বোনকে আমি কেন কাকভেজা করে বাসায় দিয়ে আসবো?”

নুহাশ কিছু বলতে যাবে তার আগেই মাইশা আনানকে বললো,

–”তুই বুঝলিনা ব্যাটা? ভাইয়া বললো যে আমি তোর বাইকে করে ভার্সিটি থেকে বাসায় আসলাম না? তো বৃষ্টি পড়াতে ভিজে ভিজে কেনো আসলাম।”

আনান বাকশূণ্য হয়ে পড়লো। হয়তো কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে যে মাইশা ওর নাম করে কোনো একটা বড় সত্য লুকানোর প্রচেষ্টায় আছে।তাই আনান আমতা আমতা করে মাইশার কথায় সায় দিলো। ব্যস ! নুহাশকে আর পায় কে। একপ্রকার হুংকার দিয়ে বললো,

–”আজ যদি তোমার জন্য আমার বোনের জ্বর আসে একেবারে খবর করে দিবো কিন্ত। শয়তান ছোকরা পারো তো শুধু বড় বড় শয়তানি করতে। নেক্সট টাইম যদি……..”

নুহাশকে বলতে না দিয়ে আনান তড়িঘড়ি করে বলে ফেললো,

–”নেক্সট টাইম এমন হবেনা ভাই। আপনার বোনরে তুলুতুলু করে রাখবো। আমার ভবিষ্যত বউয়ের কসম।”

–”কথাটা মনে থাকে যেনো।”

নুহাশ আনানকে দু চারটে ধমক দিয়ে খাটে রাখলো মোবাইলটা। কলটা এখনও কাটেনি। হালকা ঠোঁট কাপিয়ে মাইশাকে বললো,

–”নে কথা বল্ তোর শয়তান দোস্তের সাথে। আমি গেলাম !”
এই বলে গটগটিয়ে রুম থেকে প্রস্থান করলো নুহাশ। মাইশাও সাথে সাথে যেন এক স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। ভয়-ত্রাস-উদ্বিগ্নতা এতক্ষণ সবকিছুর ভীড়ে হারিয়ে ফেলেছিলো নিজেকে। মোবাইলটা নিয়ে আনানের উদ্দেশ্যে বললো,

–thank you দোস্ত । আজ তোর জন্য বড়জোড় বেঁচে গেলাম।

–”তোর thank you তোর পুটলির মধ্যে রাখ। হারামখোর কোথাকার ! আমারে ছাড়া আর কারও নাম তুই পাইলি না ****

–”দে দে ! যত্ত ইচ্ছে গালি দে। আজ আমি আর কিছু বলমু না।”

–”সেটা বলবি ক্যান। তোর বজ্জাত ভাই যে আমারে দু’চারটা রামধমক দিয়ে গেলো তখন ও তো কিছু বলবি না। হালায় রাগ সবসময় বস্তা নিয়া ঘুরে।”

–”আচ্ছা হইসে। আর আমার ভাইয়ের বদনাম করতে লাগবো না। কল রাখলাম।”

–”আচ্ছা ! কিন্ত কি হয়েছিলো রে?”

মুখ মলিন করে ফেললো মাইশা। আয়াতের কথাগুলো অদ্ভুতভাবে কানে বেজে চলছে। মিহি কন্ঠে মাইশা এজন্য বললো,

–”কাল ভার্সিটিতে বলছি। এখন তাহলে রাখলাম।”

–”ওকে। আল্লাহ হাফেজ।”

–”আল্লাহ হাফেজ !”

মোবাইলটা উদাসীন ভঙ্গিতে টেবিলে রেখে পুনরায় খাটে শুয়ে পড়লো মাইশা। অনুভূতিতে জর্জরিত হয়ে সবকিছু কেমন যেনো গোলমেলে মনে হচ্ছে।আয়াতের সেই মোহনীয় গলায় সেই বলা কথাগুলো কি আদৌ সত্যি ! নাকি শুধুমাত্র মোহ ? ইসস ! এই জীবনটি যদি সাহিত্যের পাতার মতো সরল থাকতো?
.
.
.
————————————————-
গতকাল যেমন ঝুমিয়ে বৃষ্টি নেমেছিলো , আজ তেমনি প্রখর গরম। ক্যাম্পাসের সর্বত্র রৌদ্দুরে ঠা ঠা করছে। ক্লাস শেষ করে নির্বিকারচিত্তে মাইশা এগোতে থাকলো অডিটোরিয়ামের দিকে। আজ সেখানে ছোটোখাটো একটা মিটিং হবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইভেন্টে যাদের দায়িত্ব পড়েছে তাদের নিয়ে। তবুও মাইশার মনে অবাধে খেলা করছে কিছু অবাধ্য আবেগ। যার হয়তো কোনো নামকরণ নেই। আয়াতকে দেখলেও যে মাইশা প্রবল অস্বস্তিতে পড়ে যাবে , মাইশার এ নিয়েও যেনো কোনো দ্বিধা নেই।

খানিকটা বিভ্রান্ত হয়েই অবশেষে অডিটোরিয়ামে প্রবেশ করলো মাইশা। আশেপাশে বহুসংখ্যক ডিপার্টমেন্টের মানুষের সমন্বয়ে পরিবেশটা কেমন যেনো গমগম করছে। অদূরেই ব্যস্ত ভঙ্গিতে শাওনের সাথে এদিক ওদিক বিচরণ করতে দেখা গেলো আয়াতকে। আজ ছেলেটা একটা বেগুনি টিশার্ট পড়েছে। গরমের জন্য কপালের কাছে দেখা গেলো বিন্দু বিন্দু ঘাম।
হঠাৎ শাওনের ডাকে ধ্যান ভাঙলো মাইশার। ইশারায় শাওন মাইশাকে টেবিলের সামনে আসতে বলছে। খানিকটা দ্বিধা নিয়েই মাইশা সেদিকে এগোলো। বিনয় ভঙ্গিতে শাওনকে বললো,

–”কেমন আছেন ভাইয়া?”

–”কেমন আর থাকবো? এমন কাজের চাপে কি আর ভালো থাকতে পারি। আমাদেরকে তো সবাই বিনা বেতনের কর্মচারী পেয়েছে।”

আয়াত এদিকে থাকলেও মাইশার দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে তিথির সাথে গুরুত্বপূর্ণ আলাপনে মশগুল আছে। মাইশা আয়াতের দিকে একনজর চোখ বুলিয়ে সেখান থেকে সরে নিজ কাজে চলে গেলো। মূলত পুরো ইভেন্টের উপস্থাপনার দায়িত্ব নিয়েছে মাইশা আর অন্য ডিপার্টমেন্টের একজন স্টুডেন্ট। আয়াত আড়চোখে বারবার সেই ছেলেটিকে আর মাইশাকে কথা বলতে দেখছে। একপ্রকার হেসে হেসেই কথা বলছে দুজনে। আয়াত সেখানে গিয়ে ধমকের সুরে বললো,

–”এখানে কি হাসাহাসি করার জন্য তোমাদের দুজনকে নিয়ে আসা হয়েছে?”

আয়াতের চোখে মুখে স্পষ্ট রাগ আর গাম্ভীর্য দুটোই ফুটে উঠেছে। আয়াত ছেলেটার উদ্দেশ্যে বললো,

–”শাওনের কাছে যাও তো। কিছু কাজ আছে।”

ছেলেটা চলে যেতেই আয়াত রাগী দৃষ্টিতে মাইশার দিকে তাকালো। কিন্ত মাইশা নির্বিকার। যেন আয়াতের রাগী দৃষ্টি ওর কাছে কোনো বিষয়ই না। আয়াত দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

–”এতো হাসি পাচ্ছিলো ওই ছেলেটার কথা শুনে? তো কি বলেছে আমিও একটু শুনি।”

–”আপনি শুনবেন কেনো?এটা আমার আর ছেলেটার পার্সোনাল ম্যাটার !”

আয়াতের এবার যেন রাগের সীমা অতিক্রম হয়ে যাচ্ছে। এতটা ইগ্নোরেন্স কখনোই কোনো মেয়ের থেকে আয়াত পায়নি যতটা না এই বজ্জাত মেয়েটা ওকে জ্বালিয়েছে। গতকাল হুট করে ওকে ধাক্কা দিয়ে চলে যাওয়াতে মনে যেই রাগটাই না পুষে রেখেছিলো যেন এখন আগ্নেয়গিরির মতো উপচে পড়ছে।

সবার দৃষ্টি উপেক্ষা করে আয়াত মাইশার একহাত চেপে অডিটোরিয়ামের একেবারে জনশূণ্য কোণায় নিয়ে আসলো। মাইশা ঘটনাচক্রে খানিকটা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। মাইশার কাছাকাছি এসে একটা বাকা হাসি হাসলো আয়াত। মনে চলছে হয়তো কোনো শয়তানি পরিকল্পনা।মাইশার কানের কাছে হালকা ঝুঁকে এলো আয়াত। মাইশা চাইলেও পেছাতে পারলো না কারন পেছনে দেয়ালের সাথে মিশে আছে। আয়াত এবার মাইশার কানের লতিতে ঠোঁট ছুয়িয়ে মিনমিনিয়ে বললো,

–”তুমি জিনিসটা না ; একেবারেই অন্যরকম। হুট করে রাগ, দুঃখ , হাসি, তামাশা সব পাগল করে দেয় আমাকে। তো তোমার হাসিটা অন্যদের কেন্দ্র করে কেন হবে? তোমার পার্সোনাল ম্যাটার জাস্ট আমি মাইশুপাখি ; অন্য কেউ না। ”
.
.
.
.
.
.
#চলবে………..ইনশাল্লাহ