হৃদমাঝারে শুধুই তুই পর্ব-১৫

0
439

#হৃদমাঝারে_শুধুই_তুই
#লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্ব-১৫

লোকটাকে দুচোখে দেখতে পারিনা,সহ্য হয় না,আর এরই কোলে উঠে বাসায় ফিরতে হচ্ছে আমাকে!বিষয়টা সম্পুর্নই আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ঘটছে।তাই নয় কি?নিজের মনকে প্রশ্ন করে একবার আরমানের দিকে তাকালাম।তার টলোমলো চাওনি আর বাচ্চাসুলভ হাসি দেখে চোখ সরিয়ে পিছনে তাকালাম।মামাও একটু বেসামাল হয়ে নিচদিক তাকিয়ে পথ দেখে হাটতে হাটতে পিছন পিছন আসছেন।আর বলছেন,

-আরমান তুমি এগিয়ে যাও,আমি আছি তোমার পাশে।

এটুকো সময়ে তার এই একটা কথা হাজারবার জপ করা শেষ তা আমি নিশ্চিত।তার অবস্থা দেখে ভিতর থেকে একটা ছোট শ্বাস বেরিয়ে এলো।কি থেকে কি হয়ে গেলো!

শিমুলের বিয়ের ওখানে নাচগানের পর্ব শেষে ওরা সবাই শিমুলকে নিয়ে ঘরের দিকে চললো।বর নাকি সেরাত ওখানেই থাকবে এমনটাই নিয়ম।রাহাত বাসা যাওয়া নিয়ে বায়না করছিলো বলে মামী ওকে নিয়ে বেরিয়ে গেছেন।বাকিসব মেয়েগুলোর সাথে আমিও শিমুলের ঘরে ঢুলাম।মেয়েগুলো সবাই মিলে খুব পচাচ্ছে ওকে তা দেখে মিটমিটিয়ে হেসে চলেছি শুধু।এরমধ্যে আরমান আর কয়েকটা ছেলে বরকে নিয়ে এসে দরজা ধাক্কিয়ে বললো,

-এইযে মেয়ের দল!দরজা খুলেন।আমার বউ নিতে এসেছি।

বউ?ওখানের সবাই একপলক আমার দিকে তাকিয়ে হোহো করে হেসে দিলো।আমি ভাবলাম,রেগে গেছি আমি,দাতে দাত চেপে কথাটা হজমের চেষ্টা করছি।কিন্তু মেয়েগুলোর হাসিতে রাগটা না এসে লজ্জা কাজ করা শুরু করে দিলো।চেহারাটা লুকানোই বড় কথা হয়ে দাড়ালো।নুইয়ে গিয়ে শিমুলের আড়ালে মুখ লুকালাম।দিদা এসে আমাকে বললো,

-দিখেছিস,কুপাল কুরে সুহাগটো পেয়েন্ছিস তু!

ওভাবে থেকেই বললাম,

-উ্ উনি কেউ হন না আমার।

দিদা হাসলো,যার কারন বুঝলাম না আমি।দরজার ওপার থেকে আরমান আবারো চেচিয়ে বললেন,

-ওপস্ সরি।গালতি সে মিসটেক হয়ে গেছে।বউ নিতে না,বরকে পৌছে দিতে এসেছি।অবশ্য অনুমতি থাকলে হবু বউও নিয়ে যাবো।শিমুল,তোমার বর এখানে অপেক্ষা করতে করতেই অর্ধমৃত হয়ে গেলো কিন্তু!

হবু বউ?কি শুরু করেছেন উনি?এসব কাকে বুঝাচ্ছেন?কি বুঝাচ্ছেন?মেয়েরা আবার হাসতে লাগলো।একটা ছোট বাচ্চা সবার মাঝ থেকে বেরিয়ে দৌড়ে গিয়ে দরজাটা খুলে দিতেই সবগুলো ছেলে হুর হুর করে ভিতরে ঢুকে পরলো,সাথে আরমানও।ছোট কুড়েঘরটা একদম টুইটুম্বর হয়ে গেছে ছেলেমেয়ে দিয়ে।মেয়েগুলো বাচ্চাটাকে দরজা খোলা নিয়ে খুব করে বকতে শুরু করে দিলো।আরমান এগিয়ে এসে আমাকে মুখ লুকিয়ে থাকতে দেখে বললেন,

-কি গো?নতুন বউয়ের মতো মুখ লুকাচ্ছো কেনো?

আমি নিজেকে স্বাভাবিক করে বললাম,

-ক্ ক্ কই?ন্ নাতো!

-হুহ!মিথ্যেবাদী একটা।লজ্জা পেয়েছো?গালগুলো ওমন লাল কেনো?

উঠে তার সামনে দাড়ালাম।শক্ত গলায় বললাম,

-লজ্জা কেনো পেতে যাবো?আর পেলেও আপনার কি?নান অফ ইউর বিজনেস!

-আমারই তো বিজনেস।ওই গালদুটো..

কথা শেষ না করেই আরমান ঠোট টিপে হাসলেন,যা দেখে আবারো চোখ নামিয়ে নিলাম আমি।উনি বললেন,

-যাক!এই প্রথম মেয়েসুলভ আচরন দেখলাম তোমার।

রাগ হলো বরাবরের মতো।কিছু বলার আগেই দিদা গলা উচিয়ে বললো,

-ই,সব শিমুল আর আসিকটোকে ছেড়ে দে।উয়ারা কুথাটো বুলুক।বাইরে চল সব।

মেয়েরা স্বীকার করলো,বাইরে যাবে।দরজার কাছে ছেলেগুলো থাকায় আগে ওরা সবাই বেরিয়ে যেতে লাগলো।আরমান আমাকে বললেন,

-চলো,এবার ফিরতে হবে তো নাকি?

-আমি একাই যেতে পারি।

-একা তোমাকে ছাড়ছি না আমি।কে জানে কখন মনে কোন কুবুদ্ধি উদয় হয় তোমার!

-কি?আমার মনে কুবুদ্ধি উদয় হয়?

-না না,সরি সরি।ভুল বললাম তো।উদয় হয় না,সর্বদাই কুবুদ্ধির বিচরন তোমার মাথায়।আর মনটা তো নাইই তোমার।

-আপনি কিন্তু…

-যাবে তুমি?নাকি তুলে নিয়ে যাবো?

-আপনার সাথে কেনো যাবো?আর তুলে নিয়ে যাবেন মানে?মিথির সাথে গুন্ডামো দেখাতে আসবেন না একদম,বলে রাখলাম।

উনি দু পা এগোলেন আমার দিকে।একটু বেশিই কাছে চলে আসায় আবারো দম বন্ধ লাগছিলো আমার।পিছিয়ে গেলাম আমি।উনি বললেন,

-তো কার সাথে যাবে?

-ম্ মামার সাথে।

উনি একটু জোরে শব্দ করে হেসে বললেন,

-ভুলেই গেছিলাম ওনার কথা।ভালো কথায় শুনলে না।এবার তুলেই নিয়ে যাবো তোমাকে।এন্ড তুমিও বাধ্য মেয়ের মতো সেভাবেই যাবে যেভাবে আমি তোমাকে নিয়ে যাবো।

ভ্রুকুচকে তাকালাম ওনার দিকে।দিদা গলা ঝাড়তে ঝাড়তে বললো,

-ই!তুয়াদের কি সুযোগটো পেলেই রাসলীলাটো কুরতে হুবেক?বাড়িটো গিয়ে ঘরকে উঠে দুয়ারটো লাগায়ে…

আমি দিদার মুখ চেপে ধরে চেচিয়ে উঠলাম,

-দিদা!

আরমান ঘাড়টা চুলে দিদাকে বললেন,

-ভালোই বলেছো দিদা।এ মেয়েকে ঘরে তোলা ছাড়া বশে আনার আর কোনো উপায় দেখছি না।দাড়াওনা,ব্যবস্থা করছি আমি।

কথাটা বলে আমার দিকে একপলক তাকিয়ে উনিও বেরিয়ে গেলেন।সাথেসাথেই ঘরের দরজা লাগিয়ে দিলো একটা মেয়ে।ছেলেরা সব বাইরে,ওরা নাকি বর বউয়ের সাথে বাসর জাগবে।আরমান বাইরে থেকে দরজা ধাক্কিয়ে বললেন,

-এই যে মেয়েরা,আমার যামিনীকে রেখে যাচ্ছি।বেশি সময় লাগিও না তোমরা।পনেরো মিনিট সময় দিলাম।এরমধ্যে দরজা খুলে মিথি বাইরে না বেরোলে এ দরজা ভেঙে ফেলবো আমি।আসছি।

মেয়েগুলো সব আমার দিকে তাকালো।এমনভাবে তাকিয়েছে যেনো সবাই বলতে চেয়েও পারছে না বলতে,এ আবার কোন আপদ!শিমুলকে দেখলাম ও আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।

-তুই হাসছিস?

-তু ফেসেন্ছিস!

ওরা সবাই আবারো হাসতে লাগলো।দিদা আমার কাছে বসে নানা কথায় আরমানকে নিয়ে জ্বালাচ্ছে আমাকে,যদিও আমি বলেছি উনি আমার বর না,বিশ্বাস করে নি।কিন্তু এবার আর কিছু মনে হচ্ছে না আমার।মাথার মধ্যে পনেরো মিনিট ঘুরপাক খাচ্ছে।অস্থির লাগছে কেমন যেনো।হাতের মোবাইলে তেরো মিনিট হওয়ার সাথে সাথে ওখান থেকে উঠে দরজা খুলে বেরিয়ে আসলাম।আমি বেরোনোর পর আবারো সবাই হাসতে লাগলো।

নিজের উপর নিজেরই রাগ হচ্ছে এবার!উনি বললেন,আর আমিও বেরিয়ে এলাম।ওনার থ্রেটে ভয় পেয়ে গেলাম।এটা কি আমাকে মানায়?থাক!যা হবার হয়েছে।মামাকে খুজে এখন তার সাথে বাসায় ফিরলেই ঝামেলা শেষ।উকি ঝুকি দিয়ে খুজতে লাগলাম মামাকে।কুপির আলো দিয়ে উঠানটা আলোকিত,সবাই আছে এখানেই।মামা আর আরমান বাদে।উঠান পেরিয়ে একটু আড়ালে আসতেই যা দেখলাম তাতে চোখ কপালে আর হাত মাথায় চলে গেলো আমার।

মামা,সাথে আরো দুজন বয়স্ক লোক,দুটো অল্পবয়স্ক ছেলে আর আরমান মিলে সেখানে টালমাটাল হয়ে বসে আছে।সামনে দু তিনটে মাটির হাড়ি,সাদা কাচের তিনচারটে বোতল আর গ্লাস।দুর থেকে দেখে যা বুঝলাম আরমান আর ওদেরমধ্যে একজন লোক মামাকে অতিআদর করেই হাড়ি থেকে কিছু ঢেলে খাইয়ে দিচ্ছে,বাকি দুজন নিজের মতো খাচ্ছে আর এ ওর গায়ে পরছে।

বুঝতে বাকি রইলো না ওখানে কি হচ্ছে।এগিয়ে গিয়ে কোমড়ে হাত গুজে রাগী চোখে তাকালাম সবগুলোর দিকে।আমাকে দেখে ওরা সবাই খাওয়া বাদ দিলেও মামা এখনো খেয়েই চলেছেন,দেখেনই নি আমাকে।আরমান একটা মেকি হাসি দিলো।তারপর মামার হাতে ধাক্কা দিতেই মামা হেলতে দুলতে বলে উঠলেন,

-হেই,ডোন্ট ডিস্টার্ব!আজকে তো আমি খাবোই।এই পুলিশ বলে আর তোমার আন্টির জন্যে সুযোগ হয়ে ওঠে না।আজ কোনো কথা হবে না।

-আঙ্কেল,কথা তো হবেই।আজ তো আরো….

-উহুম।কোথাও কেউ নেই।হু হা হা!

-আপনিই থাকবেন না কিছুক্ষন পর।

-বেটা,আমি এখনো নেই!আহা!মনে হচ্ছে আম আউট অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড!

আরমান আমার দিকে তাকিয়েই ফোকলা হাসছেন।আমি সরু চোখে একবার তার দিকে,একবার মামার দিকে তাকাচ্ছি।উনি আবারো মামার বাবু হয়ে বসা পায়ে তার কনুই দিয়ে গুতো দিতে লাগলেন।মামা বিরক্তি নিয়ে বললেন,

-কি হচ্ছে টা কি?এবার কি তুমিও শামীমার মতো…..

বলতে বলতেই আমার দিকে তাকিয়ে আটকে গেলেন মামা।আমি রাগের জন্য জোরে জোরে শ্বাস ফেলছি শুধু।কথা বেরোচ্ছে না।মামা নিজের চোখ ডলে হাতে চিমটি কেটে আরমানকে বললেন,

-ডোন্ট টেল মি,মিথি এখানে।

আরমান দাতে দাত চেপে বললেন,

-এতোক্ষনে পৃথিবীতে ফিরলেন?আপনি না আউট অফ দা ওয়ার্ল্ড?

-ভ্ ভয়ে আমি জমে যাচ্ছি,মজা পরে করিও আরমান।

-মজা?গেট রেডি ফর সাজা আঙ্কেল!হ্যাঁ,মিথি এখানেই!

মামা স্লো মোশনে ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালেন।আমতা আমতা করতে করতে বললেন,

-ইয়ে,মানে,মিথি।হয়েছে কি….

আমি হাত দিয়ে থামিয়ে দিলাম ওনাকে।বললাম,

-এখনো কিছুই হয়নি মামা।বাসায় চলেন।আজ ভুমিকম্প,ঘুর্নিঝড়,টর্নেডো,সাইক্লোন,সুনামি,জ্বলোচ্ছাস,আগ্নেয়গিরি সব হবে।

মামা একটা শুকনা ঢোক গিলে আরমানের দিকে তাকালেন।সে মানুষটা চোরের মতো নিচদিক তাকিয়ে চোখ পিটপিট করছেন।আমি ধমকে বললাম,

-চলুন বাসায়!

ভদ্র শিশুর মতো উঠে দাড়াতে গিয়ে পরে যাচ্ছিলেন মামা।আরমান ধরে নিলেন ওনাকে।আমার দিকে তাকিয়ে কোনোমতে সোজা হয়ে দাড়িয়ে টলতে লাগলেন মামা।আরমান ওভাবেই বসা।বুকে হাত গুজে বললাম,

-আপনার জন্য কি স্পেশাল এয়ারওয়ে করে দিবো?

উনি গর্বের আওয়াজে বললেন,

-আ’ম নট ড্রাংক!এসব বাজে স্বভাব নেই আমার।

-ও রিয়েলি?

ইয়া বড় হাসি দিয়ে বললেন,

-হুম।

-উঠে দাড়ান তো দেখি?বাসায় তো যেতে হবে নাকি?

আরমান তার পাশে থাকা এক ছেলের কাধে হাত রেখে উঠে দাড়ালেন।দাড়াতে তো পারছেনই না ঠিকমতো,মনে হচ্ছে চোখটা খোলা রাখতেও কষ্ট হচ্ছে তার।সেইম অবস্থা মামারও।আরমান বললেন,

-দেখে নিয়েছো?এট লাস্ট!আমি দন্ডায়মান পরীক্ষায় সফল!আ’ম দ্যা ওয়ান।

ইয়া আল্লাহ,এনারও তো অবস্থা খারাপ!শুধু মামা হলে না হয় এই খাম্বাটার সাহায্যেই বাসায় নিয়ে যেতাম।মিনিট পাচেকেরই তো পথ।কিন্তু এখানে তো দুটোই…!কি করবো আমি এখন?

-আমাকে ড্রাংক ভাবার মতো ভুল করো না মিথি!

বিরক্তি নিয়ে তাকালাম তার দিকে।উনি আধখোলা চোখে দুলে দুলে কথা বলছেন।মামা এতোক্ষনে পাশেরই এক গাছ জরিয়ে ধরে দাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছেন।পরেই যাচ্ছিলেন!আমি দৌড়ে গিয়ে তার হাতটা কাধের উপর নিয়ে সামলে নিলাম।উনি হাত সরিয়ে নিয়ে বললেন,

-আ’ম ফাইন!আ’ম ফাইন!আ’ম টোটালি ফিট এন্ড ফাইন!

কথাটা বলে আবারো দুলতে লাগলেন মামা।কতোটা ফাইন তা তো বুঝতেই পারছি।কপাল চাপড়ে আবারো এগিয়ে ধরতে যাবো মামা বললেন,

-আমি যেতে পারবো।চলো চলো।

-জানি কতো যেতে পারবেন।

আরমান এগিয়ে এসে বললেন,

-আরেহ্!এটুকো তো রাস্তা!ঠিক পারবে!

কটমটে চোখে তাকিয়ে বললাম,

-ইউ বেটার কিপ কোয়ায়েট!

-হুশ!তা কেনো?

-কজ ইউ আর ড্রাংক!

-ধুউউর!দেখবে আমার নেশা হয়নি?দেখবে?

সম্পুর্নভাবে তার দিকে ঘুরে বললাম,

-কি দেখাবেন?

উনি আচমকাই আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বললেন,

-তোমার আমাকে হ্যান্ডেল করতে হবে না।আমি এভাবেই তোমাকে বাসা অবদি নিয়ে যাবো।

বড়বড় করে তাকালাম ওনার দিকে।কি বলে কি এ?নড়াচাড়া করতে করতে বললাম,

-নামান আমাকে!কি বলছেন কি আপনি?আর কি করছেন?এসব কি ধরনের অসভ্যতামি?ছাড়ুন!ছাড়ুন বলছি!

ওনার হেলদোল নাই।মামাকে বললেন,

-আঙ্কেল?উইল ইউ মাইন্ড?

মামা এগিয়ে এসে আরমানের কাধে হাত রেখে দাত বললেন,

-আরমান তুমি এগিয়ে যাও,আমি আছি তোমার পাশে।

আমি শুধু হা করে তাকিয়ে ছিলাম মামার দিকে।এইটা কোনো কথা?তারপর থেকে ওই একই বচন বলে চলেছেন মামা।আমি হাত পা ছুড়েছি,কয়েকটা কিলও বসিয়েছি আরমানের বুকে।বিনিময়ে উনি শুনিয়েছেন,

-ফেলে দি তোমাকে?একদম পাহাড়ের নিচে গিয়ে পরবা!বাট সোজা উপরে চলে যাবা!

তার কথায় মৃত্যুভয়টা মাথায় চেপে বসেছিলো।আজেবাজে জিনিস খেয়ে রেখেছেন।যা বললেন তা করতে কি এতোটুকো বাধবে তার?তাই মোটামুটি আরেকটু শক্ত করে দুহাতে তার গলা জাপটে ধরেছিলাম।প্রতিউত্তরে আরমান অন্যদিক তাকিয়ে হেসেছেন শুধু।পুরো রাস্তা ওভাবে নিয়ে এসে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে নিজের মাথার চুলগুলো উল্টাতে লাগলেন উনি।যেনো কিছুই হয়নি!ওনাকে এখন কিছু বলাটা বেকার গলা খেকানো হবে,কিছুই কানে যাবে না ওনার।তাই কিছু না বলে বেল বাজাতে যাবো তখনই মামা বলে উঠলেন,

-এই মিথি!বেল বাজিও না!

-তো এখন আপনাদের কি বাসার বাইরে দাড়িয়ে রাত কাটানোর প্লান?

-আরে না।এই চাবি দিয়ে ঢুকবো।

-চাবি দিয়ে কেনো?

-তোমার মামী তো ডিনার সেরেই এসেছে।হয়তো ঘুমিয়েও গেছে রাহাতকে নিয়ে।

-হুম,তো?

মামা বিরবির করে বললেন,

-উঠে পরলে সব শেষ।

-আর আমি সেটাই চাই!

বলে আবারো বেল বাজাতে যাবো আরমান হেচকা টানে জরিয়ে ধরলেন আমাকে।তারপর মামাকে বললেন,

-এ সোজা কথার মানুষ না আঙ্কেল।আপনি চাবি দিয়েই দরজা খোলেন।

মামা খুশি হয়ে বললেন,

-থ্যাংকস্ বেটা।

বেটা?এতো আদর?বেটা না এটা আস্ত খাটাশ ব্যাটা!দম আটকে আসছে আমার।লোকটা নিজে নেশা করেছে তবে ভোগান্তিটা হচ্ছে আমার।দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলেন মামা।আরমান ওভাবেই আমাকে ধরে রেখে বললেন,

-আঙ্কেল,আপনি আপনাদের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেন।নইলে এইটা গিয়ে কিন্তু শামীমা আন্টিকে জাগিয়ে দিবে।

আমি ঠিক এই কাজটাই করতাম।মামাকে আটকাবো,মামীকে জাগাবো।কিন্তু আরমান এমনভাবে ওনার বুকের সাথে জাপটে ধরে আছেন যে,মুখ লেগে শুধু উম উম শব্দটাই বেরোচ্ছে।মামা‌ যেনো আকাশের চাদ হাতে পেয়েছেন।হাতের কিছু একটা সেন্টার টেবিলে রেখেই একদৌড়ে রুমে ঢুকে দুম করে দরজা লাগিয়ে দিলেন।আরমান আমাকে ছেড়ে দিয়ে দাত কেলিয়ে বললেন,

-এবার???

#চলবে…..