হৃদয় দহন পর্ব-০৬

0
349

#হৃদয়_দহন
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:০৬
🍁🍁
চারিদিকে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে বাড়ির ভেতরে হরেক রঙের বাহারি বাতি যা সন্ধ্যায় জ্বলে উঠবে। বিয়ের জন্য বরযাত্রী রওনা দিয়েছে, ঐশানিও তাদের সঙ্গে গেছে। ঐশানি একটা ভারি কাজের মিষ্টি রঙের ল্যাহেঙ্গা পড়েছে, ল্যাহেঙ্গা সাদিক তাকে দিয়েছে বিয়েতে পড়ার জন্য গতকালের ঘটনা মন থেকে মুছে সেও সাদিকের মন মতো সাজগোজ করে মুখে কৃত্রিম হাঁসি ফুটিয়ে রেখেছে। সাদিকের জোরাজুরিতে সবাই বিয়েতে গেছে সাবিনা আহসানও গিয়েছেন ছেলের জোরপূর্বক আবদারে।

গাড়িতে বসে ঐশানির কানের কাছে মুখ নিয়ে সাদিক বললো,

– তোকে আজ পরীদের মতো লাগছে মনে হচ্ছে বাস্তবে আজ পরী দেখলাম কিন্তু চোখের নিচে কালি পড়েছে কেন ঘুমাস না নাকি?

– আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না তোমার বউকে হয়তো আরো সুন্দর লাগছে।

সাদিকের মনটা খারাপ হয়ে গেল অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।

বাড়ির সামনে বরযাত্রীর গাড়ি থামতেই সবাই দৌড়ে এসেছে নতুন বরকে বরণ করে নিয়ে যাওয়ার জন্য। রাইশার বাবা-মা সাদিক এবং সাদিকের পরিবারকে আপ্যায়ন করে তাদের জন্য নির্ধারিত জায়গায় নিয়ে বসালেন। রাইশা এখনো পার্লার থেকে সেজে আসেনি। বরযাত্রীদের খাওয়ার জন্য বসানো হলো কিন্তু সাদিক কিছু একটা বলে সরে গেল সেই জায়গা থেকে।

খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হওয়ার পরেই রাইশা বধূবেশে হাজির হলো। রাইশা ঐশানির কাছাকাছি গিয়ে,

– বিয়ে দেখতে এসেছো? কি আর করার বিয়েই দেখো। তোমার চোখের সামনে এখন সাদ আমার হয়ে যাবে।

ঐশানি মুখে হাঁসি ঝুলিয়ে তাকিয়ে আছে কিন্তু তার মনে আছে এক আকাশ সমান কষ্ট। রুম্পা এসে রাইশাকে নিয়ে তার আসনে বসিয়ে দিলো। কাজী সাহেবও বিয়ে পড়ানোর জন্য বসে পড়লেন কিন্তু সাদিকের দেখা মিলছে না কিছুক্ষণের জন্য বলে যে কোথায় গেল কেউ বুঝতে পারছে না। সবাই সাদিকের জন্য অপেক্ষা করছে।

একটু পরেই সাদিক চলে আসলো, সাদিককে সকলে নানা ধরনের প্রশ্ন করলো, সাদিক জবাব দেওয়ার আগে রাইশা এসে,

– কোথায় চলে গিয়েছিলে কতক্ষণ অপেক্ষা করছিলাম।

রাইশার বাবা এসে তাড়া দিয়ে,
– সাদিক বাবা তাড়াতাড়ি আসো কাজী সাহেব বসে আছেন বিয়ে হয়ে যাক তারপর বাকি কথা।

রাইশা সম্মতি দিয়ে আবারো নিজের আসনে গিয়ে বসলো। সাদিক আগের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে, সাদিকের বাবা এগিয়ে,

– কি ব্যাপার গিয়ে বস।

সাদিক হেসে,
– এতো তাড়া কিসের?

রাইশা বিরক্ত হয়ে,
– সাদিক মজা না করে এসো তো আমি আর বসে থাকতে পারছি না।

– আর একটু অপেক্ষা করো তারপর তোমাদের সবার কষ্টের অবসান হবে।

সবাই চমকিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাদিকের দিকে। সাদিক মেইন গেটের দিকে তাকিয়ে,

– ভেতরে আসুন সবাই।

সাদিক ডাকতেই ভেতরে কিছু পুলিশ এবং দু’জন সাধারণ পোশাকের লোক প্রবেশ করে। সাদিকের বাবা-মা প্রশ্ন করে,

– কি হচ্ছে সাদিক পুলিশ কেন এখানে কি করতে চাইছো?

– উফ বাবা-মা তোমরা শুধু দেখতে থাকো।

রাইশা রেগে,
– কি দেখবে আমরা বিয়ে করবো কখন?

সাদিক হেসে রাইশার কাছে গিয়ে,
– এখনো তোমার মাথা থেকে বিয়ে করার ইচ্ছে যায়নি ভাবলে কি করে ঐশিকে রেখে তোমার মতো মেয়েকে বিয়ে করবো আমি?

ঐশানি কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে সেও বাকিদের মতো অবাক হয়ে সবটা দেখছে।সাদিক গিয়ে লোক দু’টো কে ইশারা করতেই তারা মোবাইল লাউড স্পিকারে দেয়। একটা মেয়েলী কন্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে, যার মধ্যে তাদের করা সকল কুকর্মের রহস্য ফাঁস হচ্ছে। কন্ঠ চিনতে কারো সমস্যা হলো না কেননা কন্ঠস্বরটা রাইশার। রাইশা চেঁচিয়ে,

– এগুলো কি হচ্ছে সাদিক তুমি আমাকে এইভাবে ঠকালে?

সাদিক রাইশার কথায় কর্ণপাত না করে সকলের উদ্দেশ্যে,

– ভাবীকে প্রথম দেখেই আমার একটা বন্ধু চিনতে পেরে গিয়েছিল সেদিন তার কাছ থেকে অনেক কিছু জানতে পেরেছি প্রথমে বিশ্বাস না করলেও অনেক প্রমান দেখায় সে আর তারপর সবকিছু প্লান করেই এতো দূর এগিয়েছি, ভাবী ভাইয়াকে কখনো ভালোবাসেনি বরং ভাইয়ার মাধ্যমে এই বাড়িতে ঢুকেছে টাকা পয়সা লোট করার জন্য এর আগেও অনেক ছেলেকে ঠকিয়ে এসব কাজ করেছে দুই বোন মিলে আর তাদের সহায়তা করেছে তাদের বাবা-মা, তাদের টার্গেট হচ্ছে ধনী পরিবারের ছেলে। ওদের নামে বিভিন্ন থানায় অনেক মামলাও আছে কিন্তু পরিচয় পাল্টে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে এসব কাজ করে মানুষ ঠকায়।

শিহাব ক্ষিপ্ত স্বরে,
– কি বলছিস সাদ তোর ভাবীর নামে মিথ্যে কেন বলছিস?

– মিথ্যে নয় সব সত্য উনাদের কাছে প্রমাণ আছে দেখে নে।

পুলিশ কিছু কাগজপত্র এবং ছবি সবাইকে দেখাতেই সবার সামনে সবটা প্রমাণ হয়ে গেছে। শিহাব রেগে রুম্পার দিকে এগিয়ে,

– কেন এমনটা করলে তোমার টাকার দরকার হলে আমায় বলতে কেন ঠকালে।

সাদিক শিহাবকে টেনে ধরে,
– শান্ত হো ভাইয়া ওদের ব্যবস্থা পুলিশ করবে।

ওয়াহিদ আহসান জিজ্ঞেস করলেন,
– সাদ তুমি সব জেনেশুনে কেন রাইশাকে বিয়ে করতে চাইলে?

– আমি ওদের নিজেদের মুখ থেকে সবকিছু শিকার করাতে চেয়েছিলাম তাই এতো কিছু করলাম রাইশাকে শরবতের নাম করে ড্রিংক খাইয়ে সব সত্য বের করে রেকর্ড করেছিলাম যা আজ শুনলে।

রাইশা সাদিকের দিকে এগুতে যাবে ঠিক সেই মুহূর্তে দু’জন মহিলা তাকে ধরে ফেললো। রাইশা,রুম্পা এবং তাদের বাবা-মাকে পুলিশ গ্ৰেফতার করে নিয়ে গেল।

ওয়াহিদ আহসান সবাইকে উদ্দেশ্য করে,
– যা হয়েছে ভালোর জন্যই হয়েছে কি আর করার চলো বাড়িতে যাই।

সাদিক বাবার সামনে গিয়ে,
– ছেলেকে বিয়ে না করিয়েই চলে যাবে?

– বিয়ে কিভাবে?

– আমি ঐশিকে ভালোবাসি ওকেই বিয়ে করতে চাই ঐশিও আমাকে ভালোবাসে।

ওয়াহিদ আহসান চমকে,
– কি!

– হ্যা বাবা দিবে আমার হাতে ঐশিকে?

ওয়াহিদ আহসানের চেহারা পরিবর্তন হলো মুখে রাগ স্পষ্ট,
– কালকের ঘটনাটা কিন্তু আমরা কেউ ভুলিনি।

সাদিক বাবার পায়ে পড়ে,
– তোমাকে কথা দিচ্ছি বাবা এমনটা কখনো হবে না তখন একটা কারণে রাগ উঠে গিয়েছিল মাথা ঠিক ছিল না,কখনো ওকে কষ্ট দিবো না।

ওয়াহিদ আহসানের মন একটু গললো তিনিও চান ঐশানি যেন তার বাড়িতেই তার চোখের সামনে ভালো থাকে।

– ঐশি যদি রাজি থাকে তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই, তুই কি রাজি ঐশি?

ঐশানি এতক্ষণ সবকিছু নিঃশ্বব্দে দেখছিল কিন্তু এখন সে দুটানায় পড়ে গেল। তার এখন খুশি হওয়ার কথা থাকলেও সে চুপ। সাদিক তার দুই বাহু ধরে,

– পরী কি হলো বলো তুমি আমাকে বিয়ে করবে না?

সাদিকের মুখ থেকে তুমি শব্দটা শুনে ঐশানির ভেতরে অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছে কিন্তু পরক্ষনেই কিছু একটা মনে হতে,

– এতকিছু করলে কিন্তু আমায় তো একটাবার বলতে পারতে।

– তখন এসব মাথায় আসেনি মনে হয়েছিল যদি ওরা তোমার কোনো ক্ষতি করে দেয়, ভুল হয়ে গেছে ক্ষমা করে দাও না।

– এখন আর সময় নেই আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই না, চাই না নিজের সঙ্গে জড়াতে।

– পরী!

সাবিনা আহসানও ঐশানির কাছে এসে,
– রাজি হয়ে যা‌ মা আমারও অনেক ইচ্ছে ছিল তোকে সাদিকের বউ করে আনার আজ আশাটা পূরণ কর।

ঐশানির চোখে পানি টলমল করছে নিজেকে শক্ত করে,
– তোমার এ কথাটা রাখতে পারলাম না আন্টি ক্ষমা করে দিও।

বলেই দৌড়ে বের হয়ে গেল ঐশানি তার অনেক কষ্ট হচ্ছে সে তার প্রিয় মানুষটিকে পাওয়ার সুযোগ পেয়ে গেছে কিন্তু তার যেন আয়ু ফুরিয়ে এসেছে। বাইরে বের হয়ে কিছুদূর যেতেই একটা গাড়ি পেয়ে সেইটায় উঠে বাড়িতে চলে গেল ঐশানি। সাদিকও সাথে সাথে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল এই ভয়ে যদি রাগের মাথায় ঐশানি কিছু ঘটিয়ে ফেলে।

সাবিনা আহসান স্বামীর কাছে গিয়ে,
– কি হচ্ছে এসব বলো তো বড় ছেলেটার সাথে কি একটা অঘটন ঘটে গেল এখন আবার ছোট ছেলের সাথেও।

ওয়াহিদ আহসান শান্ত গলায়,
– ওদের মধ্যে মান অভিমান চলছে ঐশির এমন ব্যবহার স্বাভাবিক সাদ যা করেছে তবে এখন বুঝতে পারছি এর পিছনে বড় একটা কারণ ছিল তবে চিন্তা করো না খুব শিঘ্রই ওদের মান অভিমান ঠিক হয়ে যাবে।

– তাই যেন হয়।

চলবে……..