হৃদয়ের ছোঁয়া পর্ব-০৮

0
234

#পর্ব৮
#হৃদয়ের_ছোঁয়া
#অর্ষা_আওরাত

রাত্রি না হয়েও দিনের আধারেই চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার! সজল দৃষ্টি যতোদূর যায় ততোদূরই কেবল ঘুটঘুটে কালো অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে আছে চারদিক। অন্ধকারের মাত্রা এতোই বেশি নিজের হাতটুকুও বোঝা যাচ্ছে না। এই কালো নিকষ অন্ধকারের মাঝেই কারো পদধ্বনির আওয়াজ ক্রমশ ভেসে আসছো সোহার কানে! সোহা কিয়ৎক্ষন নির্বাক হয়ে বোঝার চেষ্টা করলো অন্ধকারে আগন্তুককি তার দিকেই এগিয়ে আসছে? কর্নকুহুর জানান দিলো হ্যাঁ আগন্তুক তার দিকেই এগিয়ে আসছে। পদধ্বনির আওয়াজ সোহার দিকেই এগিয়ে আসছে। সোহা কিছু বলবে তার আগেই আলো জ্বেলে ওঠলো সারা ঘরময়! এতোক্ষণ কালো নিকষ অন্ধকারে থেকে এখন আচমকা আলো আসায় না চাইতেও নেত্রপল্লব বন্ধ হয়ে গেছে! আলোর ঝলকানি ফুটে ওঠেছে গলির মোড়ো অন্ধকার দোকানটি! আস্তে আস্তে চোখ খুললো সোহা! সারা ঘর খুঁজলো কোথায় আগন্তুক? সেহা অবাক দৃষ্টিতে তাকালো সারা ঘরময়! দোকানটিতে এক কোনে একটি চৌকি ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। কিয়ৎক্ষন দৃষ্টি সেই চৌকির দিকেই আবদ্ধ হয়ে রইলো! হঠাৎই ধ্যান ভাঙলো কারো কন্ঠস্বরের আওয়াজে! সোহা চমকে ওঠলো কর্নকুহুরে কারো শব্দ শুনে! আওয়াজের উৎস অনুযায়ী যেই পিছনে তাকিয়েছে তখনি সেই আগন্তুক আর পুরুষ অবয়বটি দেখে বিস্ময় নিয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে! ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ কুঁচকে তাদের দিকে দৃষ্টিপাত করলো কিছুক্ষণ। তারপর অস্ফুট স্বরে তাদের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠলো,

–“শেষমেষ কিনা তোমরা এখানে?”

অন্ধাকার থেকে আলোয় রেখায় এসে ছোঁয়া আর হৃদয় দু’জনেই বলে ওঠলো,

–“হ্যাঁ আমরাই এনেছি তোমাকে এখানে।”

—সোহা বিস্মিত হয়ে তাদের দিকে কতোক্ষন তাকিয়ে রইলো! তার কিছুতেই বোধগম্য হচ্ছে না হৃদয় আর ছোঁয়া কেনো তাকে এই ভাবে টেনে আনলো এখানে। মনের কৌতুহল মিটানোর জন্য ছোঁয়া আর হৃদয়ের দিকে প্রশ্ন নিক্ষেপ করলো,

–“আমাকে এভাবে এখানে ধরে এনেছে কেনো তোমরা দু’জন মিলে?”
সোহার প্রশ্নের উত্তর দিতে ছোঁয়া বলে ওঠলো,

–“তোকে কিছু প্রশ্ন করতে এখানে ডেকেছি। বাড়িতে থাকলে তো তুই বলতি না কোনোকিছু আর সবার সামনেও তোকে বলতে পারি না কিছু। তাই এখানে আনা হয়েছে তোকে।”

–“বেশ তাহলে বল কি বলবি তুই?”

–“তাহলে সবার আগে বল তুই আমার বিয়ের দিন কনে সেজে বসেছিলিস কেনো?”

সোহা ঘাবড়ে যায় ছোঁয়ার কথা শুনে। এখন কি বলবে সে? মাথা ঠান্ডা রেখে জবাব দিলো,

–“আমি আগেই বলেছিলাম আমি হৃদয়কে ভালোবাসি আর সেই কারনেই সেদিন বউ সেজে বসেছিলাম।”

সোহার হৃদয়কে ভালোবাসার কথা বলতে দেরি হলো না এর আগে জোরে একটা থাপ্পড় পড়লো সোহার গালে! থাপ্পড় টা বেশ জোরেই ছিলো সোহা বাঁধা না থাকলে হয়তো মাটিতে ছিটকেছ পড়তো এতোক্ষনে। গালে হাত দিয়ে হৃদয়ের দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

–“তুমি আমাকে মারলে হৃদয় ভাইয়া?”

–হৃদয় রাগান্বিত স্বরে সোহার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে ওঠলো,

–“লজ্জা করে না তোমার এসব বলতে সোহা? এই তো এখন নিজের মুখেই আমাকে ভাইয়া বলে ডাকলে আবার সেই মুখেই একটু আগে আমাকে ভালোবাসার কথা বলছো তুমি! ছিহঃ তোমার কি রুচি বলেও কিছু নেই সোহা? তাও তো ছোঁয়া অনেক সহ্য করেছে তোমার এই কীর্তি কারখানা আমি হলে এমন বোনকে চাপটে সোজা করে দিতাম! লজ্জা নেই বিন্দু পরিমান ও তোমার? নিজের বোনের স্বামীকে ভালোবাসার কথা বলছো? তারই বিয়ে ভেঙে দিতে চাইছিলে? কিরকম বোন তুমি? নিজের আপন বড়ো বোনের সঙ্গে এতো কিছু করে আবার বুক উঁচু করে হাটছো? লজ্জা বলেও তো একটা জিনিশ আছে আমার মনে হয় তোমার ভিতরে সে লজ্জাও মনে হয় নেই! আমি হলে তো এতো কিছু করার আগে হয়তো****

আর কিছু বলতে পারলো না হৃদয় এর আগেই সোহা বলে ওঠলো,

–“হয়তো কি? মরেই যেতেন তাই না হৃদয় ভাইয়া? হ্যাঁ আমারো মনে হচ্ছে আমি এবার মরেই যাই! নিজের বাবা, মা ফ্যামিলির মানুষের সকলের কাছে আমি ছোটো হয়ে গেছি। চোখ তুলে কথা বলতে পারছি না কারো সঙ্গে! সবাই আমাকে দেখলে এখন দুঃছাই করে। এর চেয়ে ভালো হতো তো আমি মরেই যেতাম! কি ভুল করেছি আমি আপনারর ভাই সামাদকে ভালোবেসে? কি ভূল করেছিলাম? তার জন্য ইতো এতোকিছু। তাকে পাবো বলেই তো এই এতোকিছু করলাম আমি । আর সেই দিনশেষে আমিই খারাপ হলাম সবার কাছে? বলুন কি ভূল করেছি আমি আপনার ভাইকে ভালোবেসে?”

শেষোক্ত কথাটি একটু জোরেই বললো সোহা! কথা বলা শেষ করে নিরবে নিচের দিকে তাকিয়ে অশ্রু বির্সজন দিচ্ছে সোহা! সোহার কথা শুনে হৃদয় আর ছোঁয়ার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো এরুপ অবস্থা! ছোঁয়া ধারনা করেছিলো খানিকটা কিন্তু সেটা যে এভাবে চরম সত্যি তে রুপান্তর হবে সেটা কখনোই ভাবতে পারেনি। ওদিকে হৃদয় বিস্মিত হয়ে সোহার দিকে তাকিয়ে রয়েছে! তার ভাই সামাদই এতোকিছু করতে বলেছিলো তাহলে? কিন্তু সামাদ এর এসবের পিছনে কি উদ্দেশ্য আছে? আর সোহার সাথে সামাদেরই বা কতোদিনের সম্পর্ক? প্রশ্নগুলো যেনো সব দলা পাকিয়ে এক দিকেই ইঙ্গিত করছে! আর সেটা হলো সবকিছুর পিছনে হয়তো সামাদই লুকিয়ে আছে। আর আজও হয়তো সত্যি টা জানকে পারতো না হৃদয় যদি না ছোঁয়া তাকে আজকে সকালবেলা সোহা ভার্সিটি যাবার পর সবটা খুলে বলতো। ছোঁয়ার কথা শুনে হৃদয় কোনো ভুল বুঝেনি ছোঁয়াকে। উল্টে ছোঁয়ার পাশে থেকে সোহার কাছে এসেছে সব প্রশ্নের জট খুলতে হৃদয় সোহার দিকে চেয়ে বলে ওঠলো,

–“এসব কি বলছো তুমি সোহা? সামাদ ভাইয়া তোমাকে এসব করতে বলেছিলো? আর কেনোই বা বলেছে? আর তোমার সাথে সামাদের সম্পর্কই বা কতোদিনের?”

-অশ্রু বর্ষন কিয়ৎক্ষন এর জন্য বন্ধ করে সোহা বলে ওঠলো,

–“সামাদের সাথে আমার সম্পর্ক প্রায় আট মাসের মতন হবে। এর বেশি দিন হবে না। আপুর সাথে ভার্সিটি যাবার পথেই সামাদের সাথে আমার দেখা হতো আর সেখান থেকেই আমাদের সম্পর্কের সূত্রপাত।”

–ছোঁয়া আর হৃদয় বিস্মিত হয়ে সোহার সব কথা শ্রবন করছে! ছোঁয়া সোহাকে বললো,

–“ভার্সিটি তো সবসময়ই আমি তোর সাথে থাকতাম তুই আমাকে লুকিয়ে কখন এসব করেছিস? আর তুই সম্পর্কে গেছিস তাও সামাদের সাথে সে কথা একটিবারের জন্যও আমাকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করিস নি?”

–“হ্যাঁ তোকে লুকিয়েই আমি সবকিছু করেছি। তোকে বলিনি কারন যদি তুই কাউকে বলে দিস আর সামাদ আমাকে বলেছিলো যাতে কাউকে কিছু না বলি। কিন্তু বিশ্বাস কর আপু আমি চাইনি তোর আর হৃদয় ভাইয়া মাঝখানে কোনো দুরত্ব তৈরী হউক।”

হৃদয় বললো,

–“তাহলে তোমার ছোঁয়ার জায়গায় নিজে কনে সেজে বসার কারন কি সোহা? তুমি তো সামাদ ভাইয়াকে ভালোবাসো তাহলে হঠাৎ আমাকে ভালোবাসো, আমি তোমাকে ভালোবাসি এসব কিছু বললে কেনো ওইদিন?”

–হৃদয়ের কথায় ছোঁয়ার কান্নার গতি যেনো আরো বেড়ে গেলো! কান্নারত স্বরেই বলে ওঠলো,

–“এসব কিছুই আমি করেছি কারন হলো***

#চলবে
বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।